প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১২

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১২
নিশাত জাহান নিশি

রোজ উপরে উপরে কথাগুলো বললেও ভেতরে ভেতরে সে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল! নূরকে চূড়ান্ত আঘাত করা ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না! মাত্র এক বছরের ভালোবাসার জন্য সে ২৪ বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারবে না! শীঘ্রই জায়গা পরিত্যাগ করল রোজ!

একটিবারের জন্যও পিছু ফিরে নূরের দিকে তাকালো না। নূর এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। একই জায়গায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদ এবং সাদমান ব্যাকুল হয়ে নূরের দিকে এগিয়ে আসতেই নূর সেন্সলেস হয়ে সাদমানের কাঁধে লুটিয়ে পড়ল!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদমান হতবাক দৃষ্টিতে নূরের অবচেতন মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরের অকেজো শরীরটাকে আগলে ধরার মতো সামান্যতম জ্ঞানটুকুও নেই তার! অপরদিকে চাঁদ নিবার্ক ভঙ্গি কাটিয়ে বর্তমানে ফিরে এলো। শীঘ্রই উল্টো দিকে ঘুরে এসে নূরকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরল! চাপা আর্তনাদ করে সাদমানকে বলল,,

“মানুষটা অজ্ঞান হয়ে গেছে সাদমান ভাইয়া। প্লিজ উনাকে ধরুন। আমি তো একা পারছি না উনাকে সামলাতে।”
সাদমানের ধ্যান ভাঙল। উদ্বিগ্ন হয়ে নূরকে আষ্টেপৃষ্টে ধরল। চাঁদকে উদ্দেশ্য করে তৎপর গলায় বলল,,
“চাঁদ শক্ত করে ধরো নূরকে। আমাদের এক্ষণি এখান থেকে বের হতে হবে।”

নূরের মাথাটা চাঁদ তার কাঁধের উপর সযত্নে রাখল। উত্তেজিত গলায় সাদমানকে বলল,,
“আমরা কি এখন হসপিটালে যাব সাদমান ভাইয়া?”
“না চাঁদ। আমরা এখন বাড়ি ফিরব। সামান্য অজ্ঞান হয়েছে নূর। প্রাথমিক চিকিৎসাতেই ঠিক হয়ে যাবে।”

দুজনই নূরকে নিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো। চাঁদ এবং নূরকে রিকশায় বসিয়ে সাদমান হন্ন হয়ে পাশের দোকান থেকে একটি পানির বোতল কিনল। অনেকক্ষণ যাবত নূরের চোখে-মুখে পানি ছিটানোর পরেও নূরের জ্ঞান ফিরছিল না! চাঁদ সাংঘাতিক ঘাবড়ে গেল। শঙ্কিত গলায় সাদমানকে বলল,,

“ভাইয়া আমার না খুব ভয় করছে। নূর ভাইয়া ঠিক আছে তো? আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে গেল না তো?”
সাদমান রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,

“ভয় পাওয়ার কিছু নেই চাঁদ। সব ঠিক আছে। তুমি এক কাজ করো নূরকে নিয়ে এই রিকশাটা করে বাড়ি ফিরে যাও। আমি পেছনে নূরের বাইক নিয়ে আসছি। বাড়িতে পৌঁছেই তুমি ওকে বিছানায় শুইয়ে দিবে। রুমে কোনো চিৎকার চ্যাঁচামেচি বা হৈ-হট্টগোল করা চলবে না। আঙ্কেল এবং আন্টিকে বুঝাবে। আর আমি এদিকে বাড়ি ফেরার পথে নূরদের ফ্যামিলি ডক্টর হায়াত আঙ্কেলকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছি ওকে?”

চাঁদ শুকনো গলায় মাথা ঝাঁকালো। নূরকে তার কাঁধের সাথে অতি যত্নে এবং সাবধানে চেপে ধরল। রিকশাওয়ালাকে বলে সাদমান তাদের দুইজনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। অন্যদিকে সাদমান নূরের বাইকে করে প্রথমে ডক্টরের চেম্বারে গেল। ওখান থেকে ডক্টরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ডক্টরসহ নূরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

প্রায় দুঘন্টা পর। নূরের মাত্র জ্ঞান ফিরল। চারিদিকে পরিবারের সবাই ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবরিনা আবরার মুখ চেপে কাঁদতে ব্যস্ত। হাবিব আবরার মাথা নুইয়ে শোক ঢাকতে ব্যস্ত! চাঁদ এবং সোহানী রুমের দরজায় উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।

চাঁদের চোখে এখনও আতঙ্কিত ভাব উদীয়মান। সাদমান অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে নূরের হাতের স্যালাইনের নলটি খুলে দিলো! পিটপিট চাহনিতে নূর বিস্তীর্ণ রুমটিতে চোখ বুলালো। পরক্ষণে আবার চোখ জোড়া বুজে অব্যক্ত যন্ত্রণায় চোখের জল ছেড়ে দিলো! সাবরিনা আবরার এবার ভীষণ চটে বসলেন।

চোখ জোড়া লাল করে উনি নূরের পাশে বসলেন। বিনাশব্দ প্রয়োগে ঠাস করে নূরের গালে এক চড় বসিয়ে দিলেন! পরিবেশ তাৎক্ষণিক গরম হয়ে উঠল। হাবিব আবরার, চাঁদ, সোহানী এবং সাদমান উদগ্রীব ভঙ্গিতে সাবরিনা আবরারের দিকে এগিয়ে এলো। নূর টলমল দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকাতেই সাবরিনা আবরার নূরের গালে পুনরায় আরও একটি চড় মেরে বসলেন! শক্ত গলায় বললেন,,

“ঐ বাইরের মেয়েটা এখন তোর লাইফে এতটাই ইম্পর্টেন্ট হয়ে গেল নূর? যে ঐ একটা মেয়ের জন্য আজ তোর শরীরের এই দশা? নিজেকে এভাবে শেষ করে দিচ্ছিস তুই হ্যাঁ? আমি তো বলব ঐ মেয়েটা একদম ঠিক কাজ করেছে! তোকে ছেড়ে গেছে। পরিবার থেকে সে ভালো শিক্ষা পেয়েছে বলেই সে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। আফসোস, তোকে আমরা সেই সুশিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে পারি নি!

আর এই কারণেই তুই আগে পরিবারের কথা না ভেবে একটা বাইরের মেয়ের কথা ভাবছিস! এই যে তোর বাপ, ভাই এবং আমি মিলে সেই ছোটোবেলা থেকে তোকে এত যত্নে, এত ভালোবেসে বুকে আগলে রেখে বড়ো করেছি সেই ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই?

এতটাই মূল্যহীন আমাদের ভালোবাসা? ভেবে দেখেছিস কখনো? তোর বাপ যে এখন চাকরি বাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আছে এই গোটা সংসারটা এখন চলবে কীভাবে? কখনো মনে হয় না বাইরের মানুষদের কথা না ভেবে ভালোভাবে পড়াশোনা করে একটা ভালো পজিশনে যাই? বড় ভাইয়ের মতো নিজেও ঢাল হয়ে বাবার পাশে দাঁড়াই? একটু পরিবারের কথা ভাবী?”
নূর চোখ বুজে চোখের জল ছাড়ছে। হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না। হাবিব আবরার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাবরিনা আবরারের কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

“বাদ দাও না এসব সাবরিনা। ছেলে বড়ো হয়েছে এখন, নিজের ভালো নিজে বুঝে। এখন তাদের গাইডলাইন দেওয়ার মতো বয়স আমাদের নেই! সময় ফুরিয়ে আসছে আমাদের। তবে আমার এই ছেলের থেকে আমি অনেক কিছু আশা রাখি! জানি না আদৌ সেই আশা পূর্ণ হবে কি-না! তার আরেক ভাই মাহিনের মতো এই ছেলেটাও কিছু একটা করে দেখাতে পারবে কি-না।”

হাবিব আবরার বিষন্ন মনে নূরের রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। সাবরিনা আবরার ফুঁপিয়ে কেঁদে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। উনি ও হাবিব আবরারের পিছু পিছু রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। তবে উনি আবারও ফিরে এলেন! চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তটস্থ গলায় বললেন,,

“খবরদার বলছি। নূরকে আর কোনোভাবে উস্কাবি না! তার কোনো অন্যায় আবদারকেও প্রশ্রয় দিবি না তুই! সাবধান করলাম তোকে। মনে থাকে যেন!”

চাঁদ কেঁপে উঠল! তাৎক্ষণিক মাথা নুইয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। সাবরিনা আবরার প্রস্থান নিলেন। ইতোমধ্যেই সোহানী চাঁদকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রাগে গজগজ করে চাঁদের হাত শক্তভাবে চেপে ধরল! চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“খালামনি কি বলে গেছে মাথায় আছে তো? নেক্সট টাইম যেন না দেখি নূরকে কোনোভাবে উস্কাতে। দয়া করে নিজের কুবুদ্ধিগুলোকে নিজের কাছেই রাখ। বাইরে প্রকাশ করিস না।”

চাঁদ কিছু বলল না। পিছু ঘুরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল! এক ছুটে বিছানার উপর ধপ করে শুয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল। অন্যদিকে সোহানী নূরের রুমে প্রবেশ করে সাদমানকে বলে আজকের রাতটা সাদমানকে নূরের কাছেই থাকতে বলল।

সাদমানও এক কথায় রাজি হয়ে গেল। কিচেন থেকে খাবার দাবার সাজিয়ে এনে সোহানী নূরের রুমে রেখে গেল। সাদমান দায়িত্ব নিয়ে নূরকে জোর করে দু, এক লোকমা খাবার খাইয়ে দিলো। এরপর নূরকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো!

আজ রাতে বাড়ির অন্য সদস্যরা মুখে কিছু তুলল না। অভুক্ত অবস্থাতেই সবাই মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘড়ির কাটা রাত প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। নীড় আজ বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছে! অফিসে কাজের খুব চাপ ছিল তাই। সোহানী সজাগ ছিল বিধায় সদর দরজাটা আজ সোহানীই খুলে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই নীড়ের ক্লান্ত-শ্রান্ত এবং ঘর্মাক্ত মুখমন্ডল দেখে সোহানী বেশ ভাবুক হয়ে উঠল! নীড়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“আজ ফিরতে এত দেরি হলো যে? কাজের চাপ কি খুব বেশি ছিল?”
নীড় মলিন হাসল। অফিসের ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,
“বাড়ির সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”

সোহানী মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। নীড় তব্ধ শ্বাস ছেড়ে বলল,,
“নূর? নূরের কী অবস্থা?”
সোহানী মাথা নুয়ালো! ভার গলায় বলল,,
“এখন ভালো। তবে সন্ধ্যার দিকে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল!”
“মানে? কী বলছ কী তুমি?”

নীড় মরিয়া হয়ে উঠল! এক ছুটে সোহানীকে পাশ কাটিয়ে নূরের বেডরুমের দরজায় কড়া নাড়ল। উত্তেজিত হয়ে নূরের নাম ধরে বারংবার ডাকতে আরম্ভ করল। নীড় যেন এই মুহূর্তে বড্ড অধৈর্য্যে হয়ে পড়েছে! দুঃশ্চিন্তায় সে ভেঙে পড়েছে। ভাতৃত্বের টান অনুভব করছে খুব গাঢ়ভাবে!

নীড়ের অবাধ্য হাঁকডাকে সাদমান উৎন্ঠিত হয়ে বিছানা থেকে উঠে এসে দৌঁড়ে দরজা খুলে দিলো। সাদমানকে দেখামাত্রই নীড় স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। অস্থিরমনা হয়ে সাদমান কিছু বলার পূর্বেই নীড় সাদমানকে পাশ কাটিয়ে ঘুমন্ত নূরের পাশে বসল।

কয়েক দফা বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে নীড় নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। নিস্তেজ হয়ে থাকা নূরের বিবর্ণ মুখমন্ডলে তাকিয়ে নীড় আরও ব্যথীত হয়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে! চোখে জল নিয়ে সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“একটু খেয়াল রাখিস ওর। খাবার দাবার খেয়েছে তো?”

সাদমান নীড়ের দিকে এগিয়ে এলো৷ নীড়ের হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে তাকে অভয় দিয়ে বলল,,
“খেয়েছে ভাইয়া। ঘুমের ঔষধও খাইয়ে দিয়েছি। আই থিংক সকালে উঠে একটু বেটার ফিল করবে। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন ভাইয়া। আমি ওর খেয়াল রাখব।”

নীড় আশ্বস্ত হলো। সাদমানের দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকালো। আবারও চোখ ঘুরিয়ে নূরের নেতিয়ে যাওয়া মুখমণ্ডলে তাকালো। বুকটা আবারও কেঁপে উঠল তার। তাৎক্ষণিক রুম থেকে প্রস্থান নিলো সে! পুনরায় সে সোহানীর সম্মুখীন হয়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় সোহানী থমকালো। নীড়ের অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো। শুকনো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কাঁদছেন আপনি?’
নীড় তাড়াহুড়ো করে চোখের জল মুছে নিলো। ধীর গলায় প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,
“বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেয়েছে?”

সোহানী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। নীড় হতাশ হলো৷ বিষন্ন শ্বাস ছাড়ল৷ জায়গা পরিত্যাগ করতে করতে বলল,,
“অনেক রাত হয়েছে সোহানী। এবার ঘুমিয়ে পড়ো।”

সোহানী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল! নীড়ের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর নীড়ের কথামতো তার বেডরুমে প্রবেশ করল। ঘুমন্ত চাঁদের পাশে সেও চুপটি করে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে অঢেল আদর নিয়ে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল!

পরেরদিন সকাল প্রায় নয়টা ছুঁইছুঁই। ঘুমের মধ্যেই চাঁদ হঠাৎ তার গাঁয়ে ঠাণ্ডা কিছুর অনুভূতি পেল! ফটাফট চোখ জোড়া খুলে সে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল! শঙ্কিত চোখে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই সে উদোম শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা নূরকে দেখতে পেল! টলমল শরীরে নূর চাঁদের গাঁয়ে হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে!

চাঁদ অবাক হলো! ভ্রু যুগল সরু করে নূরের দিকে তাকালো। দৃষ্টি তার বিস্ফোরিত। নূর অর্ধখোলা চোখে পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে এখনও চাঁদের চোখে-মুখে ছিটাচ্ছে! চাঁদ এবার ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। মুখে লেগে থাকা পানির ছিঁটা গুলো দুহাত দিয়ে মুছে সে তেজী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হচ্ছেটা কী এসব? কী করছেন কী আপনি?”
নূর এবার পূর্ণ চোখ মেলে চাঁদের দিকে তাকালো। সম্বিত ফিরে পেতেই মাথা ঝাঁকালো। শক্ত গলায় বলল,,
“জায়গা দাও আমি ঘুমাব!”
চাঁদ তাজ্জব দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। গভীর এক ঘোরে তলিয়ে গেল সে। মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“আশ্চর্য! হলোটা কী এই লোকের? রাতারাতি এত পরিবর্তন? অতি শোকে লোকটা পাগল হয়ে গেল না তো?”
নূর রাগী দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“কী হলো? এখনও বসে আছো কেন? বললাম তো আমি ঘুমাব। কানে শুনছ না?”

চাঁদ এবার প্রচণ্ড ক্ষেপে গেল। চোখ লাল করে নূরের দিকে তাকালো। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আশ্চর্য তো! আপনি আমার বিছানায় ঘুমাবেন কেন? বিছানাটা কি আপনার?”
চাঁদের কথায় কোনোরূপ ভাবান্তর হলো না নূরের! বিনাশব্দ প্রয়োগে চাঁদকে টেনে হেছড়ে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলো! চাঁদের দিকে আঙুল তাক করে বলল,,

“কোনো রকম ডিস্টার্ব করার চেষ্টাও করবে না আমাকে। বুঝতে পেরেছ?”
চাঁদ তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজে কিছু বলার পূর্বেই নূর সটান হয়ে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল! চোখ বুজে বোধ হয় গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল! দেখে যেন মনে হচ্ছে কত রাত ঘুমায় না সে। চাঁদ ঘোর থেকে বের হয়ে এলো! চোয়াল উঁচু করে কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা নূরের দিকে তাকিয়ে সে তেড়ে এলো নূরের দিকে। ভাবুক গলায় বলল,,

“আমার রুমে এসে আমার সাথেই ফাফর? এ তো দেখছি চোরের মায়ের বড় গলা!”
চাঁদ আর এক মুহূর্ত ব্যয় করল না। নূরের করা সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে সেও ডেক্সের উপর থেকে আরও একটি পানির বোতল নিয়ে নূরের গাঁয়ে পানি ছিটাতে শুরু করল!

নূর এবার নড়েচড়ে উঠল। পিটপিটে চোখে এদিক ওদিক তাকালো। অতঃপর মুখ উঁচিয়ে রক্তিম বর্ণের চোখ জোড়ায় পিছু ঘুরে চাঁদের দিকে তাকাল। তিক্ত গলায় বলল,,
“আবার শুরু করেছ না? আবার আমাকে জ্বালানো শুরু করেছ? বারণ করেছিলাম না আমাকে ডিস্টার্ব না করতে? তবুও কেন ডিস্টার্ব করলে?”

চাঁদ গর্জে উঠল। ক্ষীণ গলায় বলল,,
“কে কাকে জ্বালানো শুরু করেছে হ্যাঁ? আমি না আপনি? কে আগে কার রুমে এসেছে বলুন? কে আগে কাকে পানি ছিটিয়েছে? কে আগে কাকে নিয়ে টানা হেছড়া করেছে বলুন?”
নূর হুট করে শোয়া থেকে উঠে বসল। পা ভাজ করে বিছানার উপর বসল। কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সেট করল। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে নাক টেনে তিক্ত গলায় বলল,,

“তোমার সব ভাই-বোনরা এসে আমার রুম দখল করে রেখেছে! আমি কোথায় ঘুমাব বলো? আমার তো চোখের ঘুম এখনও ফুরায় নি। খুব জ্বলছে চোখগুলো। মাথাটাও ব্যথায় টনটন করছে। শরীরে একরত্তি শক্তিও পাচ্ছি না।”
চাঁদ খুশিতে মৃদু হাসল। নূরের দিকে পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী বললেন আপনি? কে এসেছে?”
নূর ঘুমে বুদ হয়ে বাঁ দিকে মাথাটা বাঁকিয়ে ধীর গলায় বলল,,
“আয়মন ভাইয়া এসেছে। সাব্বির ভাইয়া এসেছে। নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি, জায়মা সবাই এসেছে। ওরা এসেই আমার রুমে অ্যাটাক করেছে! আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওরা নিজেই আমার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে।”

চাঁদ আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না! খুশিতে আত্নহারা হয়ে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিতেই নূর পেছন থেকে চাঁদকে মিনমিনে গলায় ডেকে বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১১

“চাঁদ? আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে? প্রচণ্ড ব্যথা করছে মাথাটা। আম্মু রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। তাই আম্মুকে এখন ডাকতে ইচ্ছে করছে না।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৩