প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৩

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৩
নিশাত জাহান নিশি

“চাঁদ? আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে? প্রচণ্ড ব্যথা করছে মাথাটা। আম্মু রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। তাই আম্মুকে এখন ডাকতে ইচ্ছে করছে না।”

চাঁদ থমকালো! চক্ষুজোড়া অঢেল বিস্ময় নিয়ে পেছন ফিরে নূরের দিকে তাকাল। এই মুহূর্তে চাঁদের আকাশ থেকে টুপ করে মাটিতে পড়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নূর আদৌতে চাঁদকে এই কথা বলেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নূরের কোথাও কোনো ভাবান্তর হলো না। ঘুম জড়িত চোখে সে শান্ত চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। দেখে মনে হচ্ছে যেন তার মতো শান্ত-শিষ্ট মানুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই! হুট করেই মায়া জন্মালো চাঁদের! আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নূরের দিকে নির্বাক গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“আপনি আমাকে বললেন, আপনার মাথা টিপে দিতে?”
নূর বড় করে একটি হাই তুলল। নড়েচড়ে স্থির হয়ে বসল। সন্দিহান গলায় বলল,,
“হ্যাঁ তোমাকেই বললাম। কেন? কোনো আপত্তি আছে?”
ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদ দ্রুত গতিতে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো! নূর যন্ত্রণায় কপাল ঘঁষতে লাগল। ধৈর্য্যহীন গলায় বলল,,

“আচ্ছা? গতকাল রাতে কি আমি ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম? তুমি জানো কিছু এই বিষয়ে?”
ধীর পায়ে হেঁটে চাঁদ নূরের দিকে এগিয়ে এলো। কপাল কুঁচকে প্রত্যত্তুরে বলল,,
“উঁহু। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। কারণ আমি আপনার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে সাদমান ভাইয়া বা আপু হয়তো এই বিষয়ে কিছু জানেন। আপনি চাইলে তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”

কপালটা খড়তড়ভাবে কুঁচকালো নূর। আন্দাজে বলল,,
“আমার কী মনে হচ্ছে জানো? গতকাল রাতে আমাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছিল। আর এ কারণেই আমার মাথাটা প্রচণ্ড রকম ব্যথা করছে। চোখগুলো জ্বালা-পোড়া করছে। নিজেকে স্থির করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কী করছি না করছি কিছুই বুঝতে পারছি না। দুনিয়াটা চরকির মতো ঘুরছে!”

চাঁদ এবার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল! নূরের দিকে আরও একটু এগিয়ে এলো। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে আপনার? খালামনিকে ডাকব?”

ধপাস করে নূর বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। মনটা হঠাৎ তার খুব বিষন্ন হয়ে উঠল! রোজের কথা মনে পড়তেই দুনিয়াটা ঝাপসা হয়ে এলো! বুকটা অপ্রকাশ্য যন্ত্রণায় ভারী হয়ে উঠল। শারীরিক যন্ত্রণা যতই গাঢ় হোক না কেন মানসিক যন্ত্রণার কাছে তা কিছুই না। তার স্থায়ীত্বও খুব কম।

তবে যদি একবার কেউ এই মানসিক যন্ত্রণায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে তবে মৃত্যুর আগ অবধি এই যন্ত্রণার স্থায়ীত্ব থেকে যায়! তা গোড়া থেকে নির্মুল করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এসব ভাবতে ভাবতেই নূর চাপা শ্বাস ছাড়ল! দ্বিমত পোষণ করে বলল,,

“কাউকে ডাকা লাগবে না। আমি ভালো আছি। প্লিজ তুমিও আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও! আর বাকিদেরও বলবে এই রুমে যেন ভুলেও প্রবেশ না করে। আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও! নিজের মতো করে থাকতে দাও।”
মাথার উপর বালিশ চেপে ধরে নূর শারীরিক এবং মানসিক উভয় যন্ত্রণায় গোঙাতে লাগল! চাঁদ অস্থির হয়ে উঠল!

কী করবে না করবে তা ভেবে উতলা হয়ে উঠল। অনেক ভেবে-চিন্তে চাঁদ মনোস্থির করল নূরের মাথা টিপে দেওয়ার! বুকে অদম্য সাহস জুগিয়ে চাঁদ নূরের মাথার ঠিক উল্টোপিঠে হাত ছোঁয়ানোর পূর্বেই রুমের দরজা ঠেলে বাড়ির সব অতিথিরা এসে হানা দিলো!

নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি, জায়মা, আয়মন, সাব্বির সবাই হৈ-হুল্লোড় করে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল। চাঁদ আকস্মিক দৃষ্টিতে তাদের প্রত্যেকের দিকে তাকাতেই খিলখিলিয়ে হেসে তারা চাঁদের দিকে ছুটে এলো। চাঁদের সব খালাতো বোনরা এসে চতুর্পাশ থেকে চাঁদকে ঘিরে ধরল। শুধু আয়মন এবং সাব্বির বাদে।

তারা দুজনই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। এই মুহূর্তে চাঁদ অনুভূতিশূণ্য! খুশিতে হাসবে নাকি নূরের জন্য ভাববে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। অন্যদিকে চাঁদের সব বোনরা খুশিতে উত্তেজিত হয়ে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে লাফাচ্ছে। জায়মা প্রফুল্ল গলায় বলছে,,

“কতদিন পর তোর সাথে দেখা হলো বল? কীভাবে ছিলি এতদিন আমাদের ছাড়া?”
চাঁদ জোরপূর্বক হাসল! প্রাণহীন গলায় বলল,,
“কই আর ভালো ছিলাম তোদের ছাড়া বল? খুব খারাপ দিন কাটছিল আমার। তোরা এসে গেছিস, এখন আমার ভালো থাকার পালা!”

প্রত্যেকে মৃদু হাসল। চাঁদকে আরও জোরালোভাবে আঁকড়ে ধরল। সমস্বরে বলল,,
“আজ থেকে আমাদেরও ভালো থাকার পালা। বিয়ে বাড়ি এখন থেকেই জমল বলে! বাড়িতে ঢুকে মনে হচ্ছিল যেন বিয়ে বাড়িতে নয়, মরা বাড়িতে এসেছি আমার! এত নীরব থাকে বুঝি বিয়ে বাড়ি?”

এরমধ্যেই সাবরিনা আবরার এবং সোহানী ব্যস্ত ভঙ্গিতে রুমে প্রবেশ করল। চারজনের মুখের কথা টেনে নিয়ে শুকনো হেসে সাবরিনা আবরার বললেন,,

“হ্যাঁ এজন্যই তো বিয়ের দশদিন আগেই জোর করে তোদের এই বাড়িতে আনা! আমার মরা বাড়িটাকে বিয়ে বাড়িতে পরিণত করবি বলে! আমার চাঁদ মা তো একাই আস্ত একটা বিয়ে বাড়ি! এখন তোদের অভয় পেলে তো আর কথাই নেই।”
উপস্থিত সবাই খুশিতে হেসে উঠল। জায়মা চাঁদকে ছেড়ে এবার এগিয়ে গেল সাবরিনা আবরারের দিকে। প্রাণোচ্ছ্বল হেসে সাবরিনা আবরারকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“কত বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো খালামনি। তোমাকে এতটা কাছ থেকে পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।”
সাবরিনা আবরারও জায়মাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। তব্ধ শ্বাস ছেড়ে ক্ষীণ গলায় বললেন,,
“সত্যিই এতগুলো বছর ধরে তোদের খুব মিস করছিলাম রে! আজ তোদের কাছে পেয়ে ষোল কলা পূর্ণ হলো আমার। খুশিতে মনটা ভরে গেল। বাড়িটা যেন আবার আগের মতো প্রাণ ফিরে পেল।”

নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহিও আবেগে আপ্লুত হয়ে সাবরিনা আবরারকে জড়িয়ে ধরল। খুশিতে সবাই ভেসে যাচ্ছিল। চাঁদ এবং সোহানী তাদের ভালোবাসা দেখে মলিন হাসল। এরমধ্যেই চাঁদের হঠাৎ নূরের কথা মনে পড়ল! ছটফট দৃষ্টিতে সে পাশ ফিরে বিছানায় শুয়ে থাকা নূরের দিকে তাকাল।

নূর কাত হয়ে শুয়ে প্রায় গভীর ঘুমে মগ্ন। ছোটো বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। কিছুক্ষণ পর পর হঠাৎ কেঁপে ও উঠছে। হয়তো কিছুটা ঠাণ্ডার অনুভূতি হচ্ছে। তবে এই একটু সময়ের মধ্যে যে নূর গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবে তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো চাঁদের! স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল চাঁদ।

নূরের উদোম শরীরটা ঢাকার জন্য কাঁথা টেনে দিলো নূরের গাঁয়ে! আরাম পেয়ে নূর কাঁথাটাকে ভালোভাবে শরীরে জড়িয়ে নিলো। গাঢ় গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল। আয়মন দরজার বাইরে থেকে বুকে হাত বেঁধে ট্যারা চোখে চাঁদ এবং নূরের সব কার্যকলাপ দেখছিল! নূরের প্রতি এত সচেতনতা দেখে আয়মনের পাশাপাশি সাব্বির ও বেশ অবাক হলো! আয়মনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বিস্মিত গলায় বলল,,

“ভাই? তুই কি কিছু বুঝছিস? চাঁদের হঠাৎ নূরের প্রতি এত সহানুভূতি?”
আয়মন মাথা নাঁড়িয়ে না বুঝালো। অবুঝ গলায় বলল,,
“কিছুই তো বুঝলাম না রে। রাতারাতি এত পরিবর্তন? অনেকক্ষণ তো হলো আমি এলাম। একটিবারের জন্যও চাঁদ আমার কাছে এলো না! অদ্ভুত না?”

আয়মনের অভিব্যক্তি শেষ হতেই চাঁদ এবার আয়মনের দিকে মনঃসংযোগ করল! প্রাণোচ্ছ্বল হেসে আয়মনের দিকে এগিয়ে এলো। আয়মন যেন প্রাণ ফিরে পেলো! স্মিত হেসে চাঁদের দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে চাঁদকে তার বাহুডোরে ডাকল। চাঁদ ও আয়মনের ডাকে সাড়া দিলো! দ্রুত পায়ে হেঁটে আয়মনকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল। আবেগি গলায় বলল,,

“কেমন আছো ভাইয়া?”
আয়মন শুকনো হাসল! গম্ভীর গলায় বলল,,
“এখন কি আর এই ভাইটার কথা মনে আছে তোর? এখন তো নিজের খালাতো ভাই-রা আছে! এই হতভাগা আয়মনকে কি আর মনে আছে?”

চাঁদ নাক ফুলালো! খানিক রেগে বলল,,
“সবার আগে আমার এই ভাইটা বুঝলে? তাকে ছাড়া আমার অন্য ভাইরা আমার কাছে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তুমিই প্রথম, তুমিই সেরা বুঝলে? এর মাঝখানে আর কেউ নেই। আর কেউ আসবেও না। আমি তাদের আসতেই দিব না!”
আয়মন মৃদু হাসল। আদুরে গলায় বলল,,

“মানে কীভাবে আমাকে পটাতে হয় খুব ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছিস তাই না? এত পাঁকা কেন তুই হ্যাঁ?”
চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো। আয়মনের বুকের পাঁজর থেকে মাথা তুলে বলল,,
“তোমার বোন যে তাই এত পাঁকা!”

পাশ থেকে সাব্বির তেড়ে এলো চাঁদের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে চাঁদের নাক টিপে বলল,,
“এই আমি কি ভেসে এসেছি হ্যাঁ? আমার কোনো গুরুত্বই নেই? সবার সাথে মিশছিস, কথা বলছিস অথচ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিস না?”

চাঁদ বিরক্ত হলো। সাব্বিরের হাতটা তার নাক থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। অস্পষ্ট গলায় বলল,
“ভাইয়া নাকটা ছাড় বলছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। তোর এই বদঅভ্যেস গুলোর জন্যই তোর সাথে আমি কম মিশি বুঝেছিস?”

চাঁদের নাক ছেড়ে সাব্বির এবার চাঁদের মাথায় গাড্ডা মারল! চাঁদের মুখের সামনে জিভ কেটে বলল,,
“তোর মত বাঁচাল এবং ধূর্ত একটা মেয়ের সাথে মিশতে আমার বয়ে গেছে বুঝলি? তোকে পাত্তা দেওয়ার সময় আছে নাকি আমার?”

চাঁদ ফোঁস করে সাব্বিরের দিকে তাকাতেই সাব্বির বাঁকা হেসে পাশের রুমে ছুট দিলো! চাঁদ গম্ভীর মুখে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“দেখেছ ভাইয়া? সাব্বির ভাইয়া আমার সাথে কতটা অবিবেচকের মত কাজ করে? তুমি কখনই তোমার ভাইকে কিছু বলো না। সবসময় তোমার ভাইকেই সাপোর্ট করো।”

আয়মন অট্ট হেসে কিছু বলার পূর্বেই সোহানী তাদের মাঝখানে চলে এলো। আহ্লাদ করে চাঁদের কান টেনে বলল,,
“সাব্বির আপন ছোটো ভাই আয়মন ভাইয়ার। তো আয়মন ভাইয়া উনার ছোটো ভাইকে সাপোর্ট করবে না তো কি তোকে করবে?”

চাঁদ কপাল কুঁচকালো। সোহানীর হাতটা কান থেকে ছাড়িয়ে দিলো। ভেংচি কেটে বলল,,
“তুমিও হয়েছ ঠিক ঐ সাব্বিরটার মতো! তোমার চেয়ে আমার আয়মন ভাইয়া ঢেড় ভালো বুঝতে পেরেছ?”

চাঁদ এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না! নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি এবং জায়মাকে নিয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডায় মশগুল হয়ে উঠল। বেহুদা বিষয় নিয়ে হাসতে হাসতে একেকজন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল! আয়মন, সাব্বির এবং হাবিব আবরার ডাইনিং টেবিলে বসে বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনা করছিল।

মাঝে মাঝে তাদের বোনদের কাহিনী দেখে মিটমিটিয়ে হাসছিল! নীড় অনেকক্ষণ আগেই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে! আগে থেকেই অফিসের কাজ গুছিয়ে রাখছে। নীড়ের সাথে সাদমানও তার বাড়ি ফিরে গেছে। বাড়িতে কিছু জরুরী কাজ আছে তাই।

অন্যদিকে সাবরিনা আবরার এবং সোহানী মিলে সকালের নাশতা ডাইনিং টেবিলে সাজাতে ব্যস্ত। কারোর দিকে তাকানোর সময় নেই তাদের। নূর গভীর ঘুমে মগ্ন! দিন-দুনিয়ার খবর নেই তার। ঘুমের রেশ কখন কাটবে তারও নিশ্চয়তা নেই। যতক্ষণ অবধি নূর ঘুমিয়ে থাকবে, ততক্ষণ অবধি বাড়িটা নিবিড়ে থাকবে! বাড়ির সবাইও নিশ্চিন্তে থাকবে। নূর ঘুম থেকে জেগে ওঠা মানেই পরিস্থিতি গরম হয়ে ওঠা! আবারও সবার মধ্যে দুঃশ্চিন্তা কাজ করা।

সাবরিনা আবরার এবং সোহানী ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে সবাইকে ডেকে দিলেন। চাঁদ ও তাদের সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার টেবিলে চলে এলো। চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসতে যাবে অমনি সোহানী চাঁদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,,

“এই? দাঁত ব্রাশ করছিস তুই? ঘুম থেকে উঠেই তো লাফাতে লাফাতে এখানে চলে এলি। দিন দিন তুই কিন্তু খাটাশ হয়ে উঠছিস চাঁদ!”

উপস্থিত সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল! চাঁদ ভীষণ লজ্জা পেল। দৌঁড়ে জায়গা পরিত্যাগ করল। নিজের রুমে ফিরে এলো। নূরকে এখনো একই অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখল। নূরের বিবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসল! নূরের দিকে খানিক এগিয়ে এলো। কিছুক্ষণ নূরের দিকে একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে আনমনেই নূরের কপালে হাত বুলিয়ে দিলো! মিনমিনে গলায় বলল,,

“খুব তাড়াতাড়ি আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন ভাইয়া। সব ধরনের শোক কাটিয়ে উঠুন। আপনাকে এভাবে প্রাণশূণ্য দেখতে আমার একদমই ভালো লাগছে না ভাইয়া। কিছু একটা মিসিং মিসিং লাগছে।”

নূরের কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো চাঁদ। দ্রুত পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। দাঁত ব্রাশ করে এবং ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। সবার সাথে খাবার টেবিলে যোগ দিলো।

চারদিকে সন্ধ্যা নেমে আসতেই চাঁদ, সোহানী, নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি এবং জায়মা মিলে কিছু স্ন্যাক্সস নিয়ে ছাদে চলে এলো আড্ডা দিতে! আয়মন এবং সাব্বির গেল বাড়ির পাশের দোকানে। বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠছিল তারা। তাই একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য বের হওয়া।

অন্যদিকে নূরের মাত্র ঘুম ভাঙল! ঘুম থেকে উঠেই সে অস্থির হয়ে উঠল! পাগলের মতো রুমে ছুটোছুটি আরম্ভ করল। চুল টেনে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করতে লাগল! সাবরিনা আবরার উদ্বিগ্ন হয়ে ড্রয়িংরুম থেকে দৌঁড়ে এলেন নূরের রুমে। নূরকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে উনি কেঁদে উঠলেন। উত্তেজিত গলায় নূরের রক্তিম চক্ষুজোড়ায় তাকিয়ে বললেন,,

“কী হয়েছে বাবা? এমন করছিস কেন তুই?”
নূর চোয়াল উঁচু করে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো! ঘাড়ের রগ টান টান করে বলল,,
“তুমি বুঝতে পারছ না আমি কেন এমন করছি হ্যাঁ? বুঝতে পারছ না? তুমি জানো না আজ রোজের গাঁয়ে হলুদ?”
নূরের এই ভয়ংকর রূপ দেখে সাবরিনা আবরার শুকনো ঢোক গিললেন! কম্পিত গলায় বললেন,,

“তুই আমার সাথে এভাবে চোখ লাল করে কথা বলছিস কেন নূর? কী হয়েছে তোর?”
সাবরিনা আবরারের করা প্রশ্নে নূরের কোনো রূপ ভাবান্তর হলো না। বদ্ধ উন্মাদের মতো সে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গেল। বালিশের তলা থেকে তার সেলফোনটি বের করল।

কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো টেনে ধরল। রোজের নাম্বারে বেহায়ার মতো ডায়াল করতে লাগল। ঐ পাশ থেকে রোজ কল রিসিভ করছিল না! হলুদের সাজে সাজতে ব্যস্ত সে! নূরের কল তার ফোনে যতোবার বেজে উঠছিল ততোবারই সে ডুকরে কেঁদে উঠছিল! তবে এই অবস্থায় সে নিরুপায়।

হৃদয় কেঁদে উঠলেও কিছু করার নেই তার! নূর আরও অস্থির হয়ে উঠল। হাতে থাকা ফোনটি ফ্লোরে ছুড়ে মারল। হ্যাংগার থেকে কালো রঙের টি-শার্টটি গাঁয়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হতেই সাবরিনা আবরারের মুখোমুখি পড়ে গেল। উদ্বিগ্ন হয়ে সাবরিনা আবরার নূরের পথ আগলে দাঁড়াতেই নূর চোয়াল শক্ত করে আবারও সাবরিনা আবরারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“চাঁদ কোথায় মা? চাঁদ কোথায়?”
সাবরিনা আবরার ঘাবড়ে ওঠা গলায় বললেন,,
“আগে বল কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
নূর অধৈর্য্য গলায় বলল,,

“মা প্লিজ বলো চাঁদ কোথায়?”
সাবরিনা আবরার রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,,
“চাঁদ ছাদে।”

নূর আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না! দ্রুত পায়ে হেঁটে ছাদে উঠে গেল। আড্ডার আসর থেকে চাঁদকে টেনে হেছড়ে এক সাইডে নিয়ে এলো। উত্তেজিত হয়ে সামনের চুলগুলো টেনে বলল,,
“তোমার ফোন কোথায়?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১২

চাঁদ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। কাঠ কাঠ গলায় বলল,,
“কেন?”
“রোজকে ফোন দাও। জাস্ট একবার ওর সাথে কথা বলিয়ে দাও।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৪