প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৩

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৩
নিশাত জাহান নিশি

“এভাবে ফ্যাল ফ্যাল চোখে আমার দিকে তাকিও না প্লিজ! ভুলভাল কিছু ঘটে গেলে কিন্তু তখন আমায় খুঁজে পাবেনা! তোমাকে বদনাম করে আমি নিরুদ্দেশ হবো। যেনো তোমার খুঁজে আমি নই…তবে তুমি আমার খুঁজে দিশেহারা হয়ে ওঠো!”
তৎক্ষনাৎ চাঁদের মাথা ঘুরে এলো!

নিষ্ক্রিয় দৃষ্টিতে নূরের নেশালো দু’চোখে তাকালো। এক নিমিষেই ভেতরটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেওয়ার মতো মারাত্নক নেশাভরা চাহনি নূরের! ক্রমশ নূরের সেই নেশাক্ত চাহনি গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল। চাঁদ যেনো ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছিল সেই গহীন চাহনিতে! তক্ষণি হঠাৎ চারিদিকে মাগরিবের আযান পড়ে গেল। আযানের মধুর ধ্বনিতে চাঁদ সম্বিত ফিরে পেলো। শুকনো ঢোক গিলে নূরের দিকে তাকালো। ঢুলুঢুলু শরীরে দেয়ালের সাথে আরও ঘেঁষে দাঁড়ালো। দুড়ুদুড়ু বুকে দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি পেল। মনে মনে আওড়ে বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হলো কী এই লোকটার? এমন মজনু টাইপ কথাবার্তা বলছে কেন? হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেনো আজও আবার দু’ঘোট মেরে এসেছে!”
চাঁদের মায়াবিনী দু-চোখ থেকে এতক্ষণে দৃষ্টি সরলো নূরের। সেই চঞ্চলা দৃষ্টি এখন স্থির হলো চাঁদের কপালের ভাজে পড়ে থাকা বেহায়া চুলগুলোর দিকে! বারে বারে চুলগুলো চাঁদের চোখে-মুখে উড়ে পড়ছিল।

যার কারণে চাঁদের মনোহরা দু’চোখে তাকাতে নূরের বেশ ডিস্টার্ব হচ্ছিল! দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে নূর জোরে শ্বাস নিলো। মন্থর গতিতে চাঁদের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলোতে ফুঁ দিলো। অমনি চুলটা উড়ে মাথায় তার জায়গা গ্রহণ করে নিলো। মুখে তপ্ত শ্বাসের হাওয়া পেয়ে চাঁদ ঝট করে চোখজোড়া বুজে নিতে বাধ্য হলো।

গাঁয়ের প্রতিটা লোমকূপ তার হুড়হুড় করে দাঁড়িয়ে পড়ল। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে ডুবে গেল। সহসা সেই অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে পারছিল না সে। চোখ মেলেও কোনোদিকে তাকাতে পারছিল না। উত্তেজনায় যেনো ভেতরে ভেতরে দুমড়ে-মুচড়ে ম’রছিল সে। চাঁদের এই নিমগ্ন অবস্থা দেখে নূর তৎক্ষণাৎ জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো। সরু চাহনিতে চাঁদের উতলা মুখমণ্ডলে তাকালো। গলা খাঁকিয়ে শ্লেষাত্মক হেসে বলল,,

“ক্লাইমেক্স তো অলরেডি শেষ মিস চাঁদ! সো এবার আপনি ফিল নেওয়াটা বন্ধ করুন। আপনার ফিল নেওয়া দেখে এবার আমারও সাংঘাতিক ফিল হচ্ছে!”

নূরের এহেন বেহায়াপূর্ণ কথাবার্তায় চাঁদ সম্বিত ফিরে পেলো। তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তবে হয়রানির বিষয় হলো নূর তার সামনে থেকে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেল! ছটফটিয়ে ওঠে চাঁদ বুকে এক গাঁধা থুঃথুঃ ছিটালো। অধীর দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালো। কম্পিত গলায় বলল,,

“মাতালটা কি আবার হাওয়া হয়ে গেল?”
এই মুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য চাঁদ কয়েক মিনিট সময় নিলো। অতঃপর আর এক মুহূর্তও ব্যয় না করে ধুকপুক বুকে দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। অস্থিরমনা হয়ে সিঁড়ি টপকে দু’তলায় ওঠে গেল। কম্পিত হাতে দু’তলার কলিংবেল চাপতেই কেউ এসে দরজাটা খুলে দিলো। ব্যাকুল চাহনিতে চাঁদ অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ভয়ে আবারও দু’কদম পিছিয়ে গেল! দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নূর! ঠোঁটে তার অফুরান বাঁকা হাসির রেখা। নূরকে আবারও সামনে দেখে চাঁদ তাজ্জব বনে গেল। মনে মনে আওড়ে বলল,,

“এই লোকটা আবার এখানে কখন এলো? এর সাথে কী জ্বিন-ভূত আছড় করল না-কি?”
চাঁদের মৌনতা দেখে নূর মনে মনে খুব হাসল। তবে তা বাইরে প্রকাশ করল না। দু’কদম এগিয়ে এসে চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালো৷ এই প্রথম চাঁদের সাথে দেখা হয়েছে এমন একটা ভাব নিলো। মিষ্টি হেসে বলল,,

“হায়।”
চাঁদ শুকনো ঢোক গিলল। কাঠ কাঠ গলায় বলল,,
“আআআপনি এএখানে ককখন এলেন?”
“এখানে কখন এলাম মানে? আমি তো প্রথম থেকেই এখানে ছিলাম!”
“তাহলে ওখানে কে ছিল?”
“কোনখানে?”

“আরেহ্ নিচতলায়।”
“কই আমি তো ছিলাম না!”
“ছিলেন না মানে? আপনি-ই তো নিচের গ্রাউন্ডে আমার গাঁয়ের সাথে একদম ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন। অদ্ভুত চাহনিতে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। কানে কানে কীসব আজগুবি কথা বলেছিলেন। আমার চুলে ফুঁ দিচ্ছিলেন। আজব আজব আচরণ করছিলেন।”

নূর অবুঝ ভাব নিলো! ভ্রু জোড়া সরু করল। নির্বোধ গলায় বলল,,
“সিরিয়াসলি? আমি তোমার সাথে এসব করছিলাম? সত্যিই কি ওটা আমি ছিলাম? তুমি ঠিক দেখেছ তো?”
চাঁদ শুষ্ক মুখে নূরের দিকে তাকালো। ভয়ার্ত গলায় বলল,,

“হ্যাঁ আপনি-ই তো ছিলেন। একটুও ভুল হয়নি আমার। হলফ করে বলতে পারি ওটা আপনি-ই ছিলেন।”
ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে নূর চাঁদের মাথায় গাড্ডা মারল। হেয়ালি কণ্ঠে বলল,,
“তোমার মাথাটা গেছে বুঝলা? সেই কখন-ই তো আমি আয়মনের সাথে দেখা করে উপরে ওঠে গেছি! তো নিচতলায় তুমি আমাকে কীভাবে দেখবা বলো?”

মাথায় চক্কর এলো চাঁদের! আলুথালু চোখে সে নূরের দিকে তাকালো। চাঁদের বর্তমান অবস্থা দেখে নূর মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসল! চাঁদ উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠল। কী হচ্ছে না হচ্ছে এসব ভেবে চিন্তিত হয়ে উঠল। অমনি সিঁড়ি বেয়ে আয়মন এবং মাহিনের আগমন ঘটল। তারা দুজন এসে চাঁদ এবং নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। হাঁপানো গলায় আয়মন নূরকে বলল,,
“কীরে? সেই কখন তো উপরে ওঠে এলি। এখনও নামার নাম নিলি না।”

আয়মনের কথায় চাঁদ বিষম খেলো! তবে তো নূর সত্যিই বলছিল। অনেক আগেই নূর উপরে ওঠে গেছে। তাহলে ঐ সময় চাঁদের সামনে কে ছিল? কোনোভাবে মাহিন চাঁদের সাথে ঐসময় দুষ্টুমি করেছিল না তো? চাঁদ এবার সন্দেহজনক দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“মাহিন ভাইয়া। আপনি-ই কি তাহলে ঐ সময় আমার সাথে ব’জ্জাতিগুলো করছিলেন?”
মাহিন ভড়কে উঠল। বোকা দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। উজবুক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“মানে? আমি কখন কী করছিলাম?”

ধরা পড়ার ভয়ে নূর এবার প্রসঙ্গ পাল্টাতে মরিয়া হয়ে উঠল! আয়মনকে লক্ষ্য করে অনর্গল বলল,,
“আরেহ্ ভাই, তোর বোনের মাথাটা গেছে! একে তাড়াতাড়ি বিয়ে দে না হয় ভালো কোনো সাইকোলজিস্ট দেখা। কখন থেকে কীসব ভাট বকছে! একে একে সবাইকে বিভ্রান্ত করছে।”

চাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে নূর একচোখ টিপল! ফটাফট মাহিনের কাঁধে হাত রেখে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“তোমার কোনো পছন্দের পাত্র থাকলে বলতে পারো চাঁদ। আমরা দেখে-শুনে বিয়ে পড়িয়ে দিব। তবে-ই যদি তোমার একটু আগের বলা ফিলিংস গুলো কমে! আই মিন কারো তোমার গাঁ ঘেঁষে দাঁড়ানো, চোখে চোখ রাখা, কানে কানে কথা বলা, চুলে ফুঁ দেওয়া। এসব আর কী!”

আয়মন এবং মাহিন দুজনই বেকুব দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। তার কথার আগা মাথা কিছুই খুঁজে পেলনা তারা। তবে চাঁদ এবার বিপুল জিদ্দি হয়ে উঠল। হাত-পা কচলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মনের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“ভাইয়াআআআআ… ঐ নূরের বাচ্চাকে বলো চুপ করতে। একদম আমার সাথে হিটলারি না করতে।”

আয়মনকে প্রত্যত্তুর করার সুযোগ দিলো না চাঁদ। হনহন করে দরজা ঠেলে ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়ল। সামিয়া আহমেদের রুম থেকে সাবরিনা আবরার এবং হাবিব আবরারের হাসি-ঠাট্টার আওয়াজ কানে এলেও চাঁদ সেদিকে মনযোগ দিলো না! গুমরো মুখে ঝট করে তার রুম ঢুকে পড়ল। দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে ফাইলটা বিছানার উপর ছুড়ে মারল। গাঁ থেকে হিজাবটা খুলে রাগে গজগজ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। আয়নায় তার রাগী প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“নূরের বাচ্চা নূর! কুমিল্লা বয়ে এসেছিস আমার সাথে ফস্টি-নস্টি করতে? আমার সাথে মজা নিতে এসেছিস তুই? আর একবার আমার সাথে মজা করতে আসিস তুই, ঠিক ঠেং ভেঙে রেখে দিব তোর!”
উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে চাঁদ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে প্রথমে তার খালামনি এবং আঙ্কেলের সাথে দেখা করবে এরপর হালকা জাতীয় কিছু খাবার খাবে তারপর নিশ্চিন্ত মনে পড়ার টেবিলে পড়তে বসবে। পরের এক্সামটা খুবই কঠিন তার। তাই যার প্রিপারেশন তাকে আজ রাত থেকেই খুব ভালোভাবে নিতে হবে।

তখনি চাঁদের রুমের দরজা ঠেলে নূর ধীর পায়ে হেঁটে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল! পুরো রুমে একবার সূক্ষ্ম দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। কদাচিৎ হেসে ধপ করে চাঁদের বিছানায় শুয়ে পড়ল। মাথায় এক হাত রেখে উপরে তাকালো। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলল। সম্মোহনী গলায় বলল,,

“তোমার মনকে হয়রান করে তুলতে-ই আমি ফিরে এসেছি চাঁদ! এতো সহজে আমি তোমার কাছে ধরা দিবনা! প্রয়োজনে সারাজীবনভর তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি অপেক্ষা করব। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আশায় নিজেকে প্রতিনিয়ত দ্বগ্ধ করব। সেই দ্বগ্ধের আগুনে জ্বলে পুড়ে নিজেকে খাঁটি সোনায় পরিণত করব! তবেই যেনো তোমার মন গলে আমার ভালোবাসায়।”

রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে সোহানী বিছানার উপর বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে! তার কান্নার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো নীড়। নীড়ের আজ এই বাড়িতে আসার কথা ছিল। সোহানীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাবার্তা ভাঙ- চূড়ের কথা ছিল। কিন্তু আজ সে আসেনি! কাজের বাহানায় খুব সূক্ষ্মভাবে সোহানীকে উপেক্ষা করে গেছে।

বিয়ের এতোগুলো মাস পরেও নীড় সোহানীকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেনি বলে সোহানীর ধারণা। তাই তো বিয়ের এতোগুলো মাস পরেও বউয়ের প্রতি তার নেই কোনো যত্ন, ভালোবাসা, টান বা মায়া। সোহানী এই বিষয়টাতে খুব বেশি আ’হত। যার কারণে তার কান্নার মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলছে।

কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে সোহানী এক পর্যায়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। নীড়ের জন্য ঘটা করে পড়া লাল শাড়িটা একটানে গাঁ থেকে খুলে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে ঠিক হেচকি তুলে ফেলল। চোখ জোড়া অসম্ভব লাল হয়ে উঠল তার। তুখার জেদ দেখিয়ে সে হাত থেকে লাল চুড়ি জোড়া খুলে নিতেই হঠাৎ তার রুমের দরজায় টোকা পড়ল।

অবিশ্বাস্যভাবেই নীড়ের গলার আওয়াজ তার কানে তীক্ষ্ণভাবে বিঁধে গেল! তব্ধিত দৃষ্টিতে সে দরজার দিকে তাকালো। না হাসল না কাঁদল। কোনোরকম প্রতিক্রিয়া-ই করল না। পুরোপুরি থম মেরে গেল। পকেটে হাত গুজে নীড় ধীর গলায় সোহানীর নাম ধরে ডাকল। দরজায় টোকা মেরে বলল,,
“সোহানী শুনছ? দরজাটা খোলো।”

অনুভূতিশূণ্য হয়ে সোহানী অর্ধ ন’গ্ন অবস্থাতেই দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। রুদ্ধকর শ্বাসে এক ঝলক নীড়ের দিকে তাকালো। ঘটনার আকস্মিকতায় নীড় বেচারা শুকনো ঢোক গিলল! সোহানীর অর্ধন’গ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলো! সঙ্গে সঙ্গেই নীড় সোহানীর শরীরের উপর থেকে গোল গোল চোখজোড়া সরিয়ে নিলো। অবিলম্বেই মাথা নুয়াতে বাধ্য হলো। অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে এড়াতে শার্টের কলার ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। থমথমে গলায় বলল,,

“এর আবার কী হলো? ফার্স্ট নাইটের প্রিপারেশন কি এখন থেকেই নিচ্ছে?”
নীড়ের মিনমিনিয়ে বলা কথাগুলো সোহানীর খাড়া কান অবধি কথাগুলো পৌঁছাতে বেশি সময় নিলো না! নীড়ের কুচুটে কথায় এতক্ষণে সোহানীর ঘোর কাটল! রিয়েক্ট করতে গিয়েও বেচারি থেমে গেল। কারণ, এই মুহূর্তে নীড়ের সাথে তার কথা বাড়াতে একদম ইচ্ছে করছে না।

সম্বিত ফিরে পেয়েও সে নীড়ের অস্বস্তিবোধ কাটাতে অস্বীকৃতি জানালো! বিষাদ ভুলে বেশ ভাব নিয়ে পিছু ঘুরে রুমে ঢুকে পড়ল। নীড়কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। ডান হাতে থাকা বাকি চুড়িগুলো এক এক করে খুলতে লাগল। নীড়কে এই মুহূর্তে সে বেশ ব্যস্ততা দেখালো। নীড় তার আশেপাশে আছে বলেও গ্রাহ্য করল না। এমনকি নীড়কে রুমে ঢুকতেও বলল না।

নাক টেনে কেঁদে তার নিজস্ব কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ব্যাপারটায় নীড় বেশ অবাক হলো! সোহানীর দিক থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে সে বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকে পড়ল। দরজা আটকে ভীতু গলায় বলল,,
“তাওয়া বেশ গরম হয়ে আছে! কখন গাঁয়ে ফোঁসকা পড়ে আল্লাহ্ মালুম।”

সোহানীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নীড় শার্টের কলার থেকে টাই-টা খুলল। ধীর পায়ে হেঁটে এসে সোহানীর পেছনে দাঁড়ালো। আয়নায় সোহানীর কান্নায় এবং রাগে লাল হয়ে থাকা ফোলাফালা মুখমণ্ডলের দিকে তাকালো। শার্টের কলারটা ঠিক করে ইতস্তত গলায় বলল,,
“এক গ্লাস পানি দেওয়া যাবে?”

সঙ্গে সঙ্গেই সোহানী হাতে থাকা চুড়িগুলো ফ্লোরে ছুড়ে মারল! রক্তিম চোখে পিছু ঘুরে দাঁড়ালো। অবিশ্বাস্যভাবেই নীড়ের শার্টের কলার চেপে ধরল! মৃদু চিৎকার করে বলল,,
“কেন বাইরে থেকে পানি খেয়ে আসিস নি? অফিসের হ’ট স্টাফরা তোকে ঠিকঠাকভাবে পানি খাইয়ে আমার কাছে পাঠায়নি? এখন কেন আমার কাছে এসেই তোর পানির পিপাসা পেয়ে বসল হ্যাঁ?”

নীড় ভড়কে উঠল! শান্ত-শিষ্ট সোহানীর এহেন আক্রমনাত্নক রূপ দেখে শুকনো ঢোক গিলল। নির্ভীক গলায় বলল,
“তওবা তওবা! এসব কী নাউজুবিল্লাহ্ মার্কা কথা-বার্তা বলছ তুমি?”

“আমি নাউজুবিল্লাহ্ মার্কা কথা-বার্তা বলছি না?আমি নাউজুবিল্লাহ্ মার্কা কথা-বার্তা বলছি? তুই যে পিপাসা মিটিয়ে আসতে পারিস নি এটার বেলায় কিছুনা? আর এই কারণেই তুই বাধ্য হয়ে এখন আমার কাছে ছুটে এলি। আমি তো তোর লাইফে শুধুমাত্র একটা অপশন। আমাকে মেনে নিতে তো তোর হাজারটা সমস্যা, হাজারটা বাঁধা।

কারি কারি সময়ের প্রয়োজন। অনুর ঘোর তো তোর মাথা থেকে এখনও কাটেনি। তাই তো এতগুলো মাসের মধ্যেও তুই একবার নিজ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস নি। আমার ভালো-মন্দের খোঁজ রাখিস নি। কেমন আছো, কী করছ ব্যস এতোটুকু অবধিই সীমাবদ্ধ ছিলি।”
সোহানীকে শান্ত করার জন্য নীড় তৎপর হয়ে উঠল। শান্ত কণ্ঠে বলল,,

“কুল সোহানী। প্লিজ বি কুল। তোমার পড়ালেখার ক্ষতি হবে বলেই তো আমি খুব ভেবেচিন্তে তোমার খোঁজ-খবর নিতাম। বিনা প্রয়োজনে দিনে একবারের বেশি তোমার খোঁজ নিতাম না। ভাবতাম এতে হয়তো তোমার মাইন্ড ডাইভার্ড হতে পারে। পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে। আর তাছাড়া আজকের আসার ব্যাপারটা ছিল সারপ্রাইজ! মা বলছিল হুট করে এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে।”

নীড়ের একটা কথাও সোহানী কানে তুলল না! এতদিনের পুষিয়ে রাখা সব রাগ, অভিমান একত্রে ঝাড়তে আরম্ভ করল। রাগে আরও বোম হয়ে উঠল। শার্টের কলারটা জোরালোভাবে চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“গর্দভ ভেবেছিস তুই আমাকে হ্যাঁ? গর্দভ ভেবেছিস? তুই যে মস্ত বড়ো একটা ঢ’পবাজ তুই কী মনে করিস আমি জানি না, না? বিয়ে করা বউয়ের প্রতি তোর না আছে কোনো টান না আছে কোনো আদর-মোহাব্বত। না আছে কোনো গুরুত্ব। শালা কপালটাই খারাপ আমার! তোর মতো একটা দায়িত্বহীন, পাষাণ, ভণ্ড একটা ছেলেকে বিয়ে করে!”

নীড় এবার ক্ষেপে উঠল। এক ঝটকায় শার্টের কলার থেকে সোহানীর হাতটা শক্ত হাতজোড়া ছাড়িয়ে নিলো। চোয়াল শক্ত করে সোহানীর থুতনি চেপে ধরল! তীক্ষ্ণ গলায় বলল,,

“আমি দায়িত্বহীন না? আমি পাষাণ, আমি ভণ্ড? তোর উপর আমার কোনো টান নেই, কোনো আদর-মোহাব্বত নেই? এবার আমি তোকে বুঝাব আদর-মোহাব্বত ঠিক কাকে বলে!”

হিংস্র হয়ে নীড় মুহূর্তের মধ্যেই সোহানীর ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট ডু’বিয়ে দিলো! দেয়ালের সাথে তাকে চে’পে ধরল। হঠকারি দৃষ্টিতে সোহানী বেখবর নীড়ের দিকে তাকালো। হাঁসফাঁস করে উঠল নীড়ের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার নীড়ের এই হঠাৎ অত্যা’চারে। ছাড়া পেতে চাইছিল সে এই অ’ত্যাচার থেকে।

অবশেষে প্রচুর ক্ষেপে ওঠে সোহানী শরীরে শক্তি সঞ্চার করে দু’হাত দ্বারা জোরচে এক ধাক্কা মা’রল নীড়ের বুকের পাঁজরে। অমনি নীড় সোহানীর গাঁ থেকে ছিটকে পড়ল এক গজ দূরে! ঘর্মাক্ত অবস্থায় হাঁপাতে হাঁপাতে সোহানী এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। কম্পিত হাতে ভেতর থেকে ওয়াশরুমের দরজাটা লক করে দিলো। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে লাগল। নীড় রাগী দৃষ্টিতে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো। শার্টের কলার ঝেড়ে মৃদু আওয়াজে বলল,,

“কই পারলি না তো আমার ভালোবাসা নিতে! আদর, মোহাব্বত নিতে। মুখে মুখে আবার হুমকি দিতে জানিস আমি তোকে ভালোবাসি না, আদর-যত্ন করি না। তোর শরীরের প্রতিই শুধু আমার ভালোবাসা নেই বুঝেছিস? তোর মনের প্রতিও আমার অনেক ভালোবাসা! যা আমি তোকে আস্তে ধীরে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম! কিন্তু তুই এর সুযোগ দিলি না আমাকে। এর আগেই আমাকে রাগিয়ে দিলি।”

সোহানী ভয়ে সিঁটিয়ে আছে! নীড়কে রাগিয়ে দেওয়ার ফল সে হারে হারে ভোগ করছে। আজ রাতটা সে ওয়াশরুমেই কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যানিং করছে! কিছুতেই ঐ হিংস্র নীড়ের মুখোমুখি হতে পারবে না সে।

চাঁদ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। টাওয়াল হাতে নিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করল। অমনি তার শিথিল দৃষ্টি পড়ল বিছানার উপর পড়ে থাকা দু’টি গিফট বক্সের দিকে। কৌতূহলী হয়ে চাঁদ বিছানার দিকে দৌঁড়ে এলো। টাওয়ালটা হাত থেকে রেখে লাল এবং নীল ‌র‌্যাপিং বক্সে মোড়ানো গিফট বক্সগুলো হাতে নিলো। বক্সগুলো হাতে নিয়ে পুরো রুমটাতে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মূর্তায়মান ভাব-ভঙ্গি নিয়ে আনমনে বলল,,

“আজব। এই গিফট বক্সগুলো আমার রুমে কোত্থেকে এলো? আজ তো এই বাড়িতে কোনো প্রোগ্রামও ছিল না। প্রোগ্রাম হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তাহলে গিফট’স গুলো কে রেখে গেল আমার রুমে?”

উদগ্রীব হয়ে চাঁদ গিফট বক্সগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্রথমে লাল র‌্যাপিংয়ে মোড়ানো গিফট বক্সটা খুলল। পুরো বক্সটা খোলার পর ভেতরের গিফটটা দেখে চাঁদ সঙ্গে সঙ্গেই খুশিতে ঝলমল করে উঠল! ঐদিন চাঁদ মেলায় গিয়ে ঠিক এরকমই একটা গাজরা ফুল পছন্দ করেছিল। তবে সাথে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার দরুন গাজরাটা ছাড়াই তাকে বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। ঐ সময় তার পাশে জায়মা ছিল।

তার মানে জায়মা-ই চাঁদকে চুপিসারে এই গিফটটা দিয়ে গেছে? চাঁদকে হঠাৎ চমকে দেওয়ার জন্য। খুশিতে হতবিহ্বল হয়ে চাঁদ তার চুলে গাজরাটা গুজে নিলো। আয়নায় তার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল। গাজরাটা তার চুলে কতোখানি স্যুট করল তা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ ট্রায়াল দেওয়ার পর চাঁদ গাজরাটা মাথা থেকে খুলে রাখল। নীল র‌্যাপিংয়ে মোড়ানো গিফট বক্সটা খুলল।

অমনি ইন্ডিয়ান দুটো সফট এন্ড সিল্কি ডেইরি মিল্ক সে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গেই লোভে চাঁদের চক্ষুজোড়া লাল হয়ে উঠল! আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চাঁদ জিভ চেটে ডেইরি মিল্কের প্যাকেটটা খুলল। তাৎক্ষণিক ডেইরি মিল্কটায় বাইট বসাতেই দরজা ঠেলে রুমের ভেতর পুচি প্রবেশ করল! অনেকক্ষণ পর চাঁদকে দেখে পুচি আহ্লাদি হয়ে দৌঁড়ে ছুটে এলো চাঁদের কাছে। তৃপ্তি সহকারে চোখ বুজে চকলেট খেতে থাকা চাঁদের কোলে এসে বসল।

চাঁদের খাওয়া দেখে পুচি নিজেও এবার জিভ চাটতে লাগল! চাঁদের গাঁয়ে থাবা বসিয়ে ম্যাও ম্যাও বলে ডাকতে লাগল। ইঙ্গিত করতে লাগল তাকেও একটু দিতে। চাঁদের এবার ধ্যান ভাঙল। চোখ খুলে সে পুচির দিকে তাকালো। ম্লান হেসে পুচির মুখে একটু চকলেট ঢুকিয়ে দিলো। মৃদু্ হেসে বলল,,
“নে তুইও একটু খা।”

পুচিও চোখ বুজে চকলেটটা চু’ষতে লাগল। চাঁদের মতোই তৃপ্তি করে সে চকলেটটা খেতে লাগল। অমনি চাঁদের মাথায় এলো এই ইন্ডিয়ান চকলেটটা জায়মা কোথায় পেল? ইন্ডিয়া থেকে তো কেউ জায়মাদের বাড়ি আসেনি বা ইন্ডিয়ায় তো জায়মাদের কোনো আত্নীয়-স্বজনও থাকেনা!

তবে কোথা থেকে এই চকলেট? শীঘ্রই টনক নড়ে উঠল চাঁদের। চকলেটটা তাড়াহুড়ো করে সে হাত থেকে ছুড়ে মেরে বিছানার উপর রাখলো। পুচি দৌঁড়ে এসে চকলেটটায় থাবা বসাতে লাগল। জিভ চেটে চাঁদকে বুঝালো তাকে আরও একটু চকলেট দিতে। পুচির আবদারকে প্রশ্রয় না দিয়ে চাঁদ পুচিকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হতে হতে বলল,,

“আগে জায়মার সাথে একটু দেখা করে আসি। আসলেই জায়মা এই গিফটস গুলো আমাকে দিলো কি-না কনফার্ম করে আসি।”
তৎপর হয়ে চাঁদ রুম থেকে বের হতেই সাবরিনা আবরারের মুখোমুখি হয়ে গেল। বুকে দু’হাত গুজে উনি অভিমানী দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালেন। রাগান্বিত গলায় বললেন,,

“এই কয়েকমাসে ভুলে গেছিস খালামনিকে না? সে কখন বাড়িতে ফিরেছিস অথচ এখনও অবধি আমার সাথে দেখা করলিনা।”
পুচিকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো চাঁদ। সাবরিনা আবরারের রাগ ভাঙানোর জন্য জাপটে ধরল উনাকে। মুচকি হেসে আনন্দঘন গলায় বলল,,

“তোমাকে কী করে ভুলি বলো তো খালামনি? তোমার মতো একটা মিষ্টি খালামনিকে ভোলা কি আদো সম্ভব?”
“অমনি শুরু হয়ে গেছে ঢঙ না? নিজে ভুল করে আবার আমাকে ফিটিং দেওয়া হচ্ছে?”
“সত্যি বলছি খালামনি। আমি তোমাকে মোটেও ফিটিং দিচ্ছিনা। বাড়ি ফিরে এসে খুব ক্লান্ত লাগছিল বিশ্বাস করো। তাই ভেবেছিলাম একটু ফ্রেশ হয়ে নেই এরপর না হয় তোমার সাথে দেখা করর।”

“আচ্ছা যা মানলাম। তোর কথাটাই বিশ্বাস করে নিলাম। এবার বল এক্সাম কেমন হয়েছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ খুব ভালো হয়েছে খালামনি।”
“খেয়েছিস কিছু?”
“না খালামনি। এখনো কিছু খাইনি।”
চাঁদকে বুকের পাঁজর থেকে উঠিয়ে নিলেন সাবরিনা আবরার। চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,,

“কী বলিস তুই? এখনো কিছু খাসনি? এভাবে না খেয়ে দেয়ে থাকলে তো পেটে পিত্তি পড়ে যাবে। আয় আয় তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে আয়। খালামনি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। সামিয়াটা হয়েছে একদম অন্যমনস্ক। এখনো নিজের সন্তানদের প্রতি যত্ন নিতে শিখেনি। মেয়েটা সেই কখখন কলেজ থেকে ফিরেছে, অথচ এখনও অবধি মেয়েটা খেয়েছে কিনা সেই খবরটাও নিলো না। আসার পর থেকেই দেখছি রান্নাঘর নিয়ে পড়ে আছে। কী এমন রান্না করছে আল্লাহ্ জানে।”

চাঁদ ব্যস্ত হয়ে উঠল। সাবরিনা আবরারের খপ্পর থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“থাক না খালামনি। আমি একটু পরে খাই? আসলে জায়মার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা ছিল। তাই এক্ষণি আমার উপরে যেতে হবে।”

“আমি তো জায়মার কাছ থেকে এইমাত্র এলাম। খেয়ে-দেয়ে একদম ফিটফাট জায়মা। আর তুই কিনা এখনও না খেয়ে আছিস? কেন এতো খাবারের প্রতি তোর অনীহা বল তো?”
“আমি ফিরে এসে খাব খালামনি। প্লিজ এখন আমাকে একটু যেতে দাও। ইট’স আর্জেন্ট প্লিজ।”
“খুব জরুরি কিছু?’
“হ্যাঁ খালামনি। খুব জরুরি।”

“আচ্ছা যা। তবে তাড়াতাড়ি ফিরিস। খালামনি তোর জন্য খাবার মেখে বসে থাকব।”
চাঁদ মুচকি হাসল। প্রত্যত্তুরে বলল,,
“ঠিক আছে খালামনি।”

সাবরিনা আবরারকে উপেক্ষা করে চাঁদ দৌঁড়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেল। অস্থির মনে তিনতলায় ওঠে পড়ল। অনবরত কলিংবেল চাপতে লাগল। অমনি কেউ এসে সদর দরজাটা খুলে দিলো। স্থির দৃষ্টিতে চাঁদ অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আবারও বাঁকা চাহনিতে দাঁড়িয়ে থাকা নূরকে দেখতে পেল! চাঁদের বিমূর্ত অবস্থা দেখে নূর বুঝতে পারল চাঁদ ঠিক কী কারণে এতটা উতলা হয়ে উঠেছে। গলা ঝাঁকিয়ে নূর চাঁদের চঞ্চলা দু’চোখে তাকালো। চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩২

“গিফট’স গুলো সাদমান তোমার জন্য পাঠিয়েছে! আমাদের সাথে সে আসতে পারেনি কিছু ব্যস্ততার কারণে৷ তাই শুভেচ্ছা হিসেবে এই গিফট’স গুলো তার তরফ থেকে তোমার জন্য পাঠানো! পছন্দ হয়েছে তো গিফট’স গুলো?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৪