প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৯

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৯
নিশাত জাহান নিশি

“এতোদিন তো জামাই জামাই করে মরছিলা! এখন জামাইয়ের লাভ টর্চার সহ্য করবা না?”
সোহানী ঠোঁট উল্টালো। নীড়ের দুষ্টুমিকে প্রশ্রয় না দিয়ে তৎক্ষণাৎ হাত দ্বারা ঠোঁট চেপে ধরল! দৃষ্টিতে ব্যাপক উৎকন্ঠা ফুটিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল,,

“জামাইয়ের লাভ টর্চার চাইনা আমি!”
নীড় কদাচিৎ হাসল। এক ঝটকায় সোহানীর ঠোঁট থেকে হাতজোড়া নামিয়ে নিলো! প্রখর রোমাঞ্চে প্রলোভিত হয়ে সোহানীর ঠোঁটের কাছে অতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল। যতো দ্রুত গতিতে রকেট আকাশপথে যায় ঠিক ততোটাই দ্রুত গতিতে নীড়ও সোহানীর ঠোঁটের কাছে এগিয়ে গেল। ঘোরে আবিষ্ট হয়ে অধীর গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“জামাই হইছি কেন? যদি জোর করে বউকে আদর-ই করতে না পারি?”
ইতোমধ্যেই সোহানীর ঠোঁটজোড়া বহু চতুরতার সাথে আঁকড়ে ধরল নীড়! গহীন মধুরতায় তলিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই সোহানী অসহনীয়ভাবে কেঁপে উঠল। বিস্ফোরিত চোখে ভালোবাসায় উন্মাদ হয়ে থাকা নীড়ের প্রবিষ্ট দু’চোখে তাকালো। হাঁসফাঁস করে নীড়কে তার শরীর থেকে ওঠানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগল সোহানী। হাত-পা ছুড়াছুড়ি করে সে তার নাজুক ঠোঁটকে নীড়ের সাংঘাতিক টর্চারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগল।

বর্তমানে রাগে বো’ম হয়ে বসে আছে তিথী! তাশফিয়ার পাশেই তার অবস্থান। হাত-পা কচলে সে ক্ষণে ক্ষণে ত্যাড়া দৃষ্টিতে তাশফিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। চেষ্টায় আছে কখন সে এই বাড়ি থেকে পালাবে! প্রয়োজনে জানালা টপকে পালাবে। যা শুধু ফিল্মেই সম্ভব। তবুও ভাবতে দোষের কী?

যে কেউ-ই এই অনুকূল পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য এমন সিনেমেটিক চিন্তা-ভাবনা করতেই পারে। এই মুহূর্তে খুব আফসোস হচ্ছে তার! কেন সে জেসমিন হকের ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই কোনো কারণ জিজ্ঞাসা না করে এখানে ছুটে এলো? এভাবে হুটহাট করে চলে আসা তার মোটেও উচিৎ হয়নি! সে নিজেই এখন নিজের প্রতি বড্ড বিরক্ত। রাগে আগুন দু’চোখে সে মিনমিনিয়ে বলল,,

“আমি পারবনা ঐ ছেলেটার বাসায় যেতে! হাতে-পায়ে ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইতে! মরে গেলেও না।”
দ্রুত পা ফেলে জেসমিন হক হাতে নাশতার ট্রে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। ট্রে-টা টেবিলের উপর রেখে তিনি মিষ্টি হেসে রাগে বুদ হয়ে থাকা তিথীর দিকে তাকালেন। নরম গলায় বললেন,,

“নাশতা তৈরি মা। এবার খেয়ে নে। একটু পরেই আমাদের বের হতে হবে।”
তৎক্ষণাৎ তিথী রাগে ফোঁস করে উঠল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জেসমিন হকের দিকে তাকালো। নম্রতা ভদ্রতা ঝেড়ে খরখরে গলায় বলল,,

“আমি কোথাও যেতে পারবনা আন্টি! বার বার আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইতে পারবনা। সেদিন তো ক্ষমা চেয়ে এসেছিলাম-ই। তাহলে এখন আবার কেন?”
জেসমিন হক মিষ্টতা ভুলে রূঢ় দৃষ্টিতে তিথীর দিকে তাকালেন! কপাল কুঁচকে কঠিন গলায় বললেন,,

“এটা কোন ধরনের আচরণ তিথী? বড়দের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয় আমি বা আমরা তোমাকে শিখাইনি? তুমি ঘরের মানুষদের সাথেই এমন রুড বিহেভ করছ৷ বাইরে ঠিক কতটা করো আমার সব বুঝা হয়ে গেছে। দিন দিন বেয়াদব হয়ে উঠছ তুমি! আমার মেয়েটাও তোমার চেয়ে কম যায়না। খুব অনুতাপ হচ্ছে এখন জানো? কারণ, আমি তোমাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে পারিনি।”

তিথী খুব ভয় পেয়ে গেল জেসমিন হকের এহেন রাগী আচরণে। সচরাচর তিনি খুব একটা রাগেন না। ঠাণ্ডা মাথার মানুষ তিনি। নম্রতা উনার স্বভাব। নম্রতা বজায় রেখে সব বিষয় তিনি খু্ব স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে পারেন। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি এই টেকনিক প্রয়োগ করে আসছেন।

যেহেতু এখন তিনি এতোটা রেগে গেছেন তার মানে তিথী খুব বড়ো-সড়ো অন্যায় করেছে বলে তিথী মনে করছে। তাই এই মুহূর্তে তার জেসমিন হকের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। জেসমিন হকের কথা নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়া উচিৎ। সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে তিথী তাৎক্ষণিক বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ঠোঁট উল্টে জেসমিন হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। অতি আদুরে হয়ে তার আন্টিকে জড়িয়ে ধরল! নিচু গলায় বলল,,

“সরি আন্টি। আমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি যা বলবে আমি ঠিক তাই করব। তবুও এভাবে আমার সাথে রেগে কথা বলোনা প্লিজ।”
তিথীর শিথিলতা দেখে জেসমিন হক মৃদু হাসলেন। একাত্নভাবে তিথীকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আহ্লাদি স্বরে বললেন,,

“এইতো আমার লক্ষী মেয়ে। আমার দুটো মেয়েই খুব লক্ষী! মা যা বলি তাই শুনে।”
তাশফিয়া এতক্ষণে ফিটফাট হয়ে তৈরী হয়ে গেছে ঐ বাড়িতে যাওয়ার জন্য। গোলাপী রঙের চুড়িদার পড়ে সে সেজেগুজে প্রস্তুত। কখন সে চাঁদ এবং জায়মার দর্শণ পাবে সেই চিন্তায় হয়ে আছে ব্যাকুল! ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে সে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে যে নাশতা খাওয়ারও একটা ব্যাপার আছে তা প্রায় সে ভুলেই বসেছে! তাশফিয়ার এই তাড়াহুড়ো দেখে তিথী কপাল কুঁচকালো। ধারালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই? তুই এতো পাগল হইছস কেন ঐ বাড়িতে যাওয়ার জন্য? কী এমন আছে ঐ বাড়িতে হ্যাঁ?”
তাশফিয়া ভাবলেশ ভঙ্গিতে তিথীর দিকে তাকালো। চোখের সামনে পড়ে থাকা বেহায়া চুলটাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো। ক্ষীণ গলায় বলল,,

“কী থাকবে আবার? চাঁদ আর জায়মা আছে ঐ বাড়িতে।”
তিথী মুখ বাঁকালো। জেলি মাখা পাউরুটিটা মুখে রুচে খরখরে গলায় বলল,,
“এই চাঁদ আর জায়মাই তোমারে বাঁ’শ দিলো!”
তাশফিয়া ঝগড়ুটে ভাব নিয়ে কোমরে হাত গুজল। তেড়ে এসে ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“বাঁশ কে দিছে আমারে হ্যাঁ? তুই দিয়েছিস নাকি চাঁদ জায়মা? কেন তুই আগ বাড়িয়ে মা’রতে গেলি মাহিন ভাইয়াকে হ্যাঁ?”
“শুধু আমার মারাটাই দেখলা না? ঐ আয়মন ছেলেটা যে তোমাকে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তা দেখলা না? আমি না থাকলে তো তোমাকে ফা’টাইয়া ফেলত! না জানি কী কী করে বসত। আমি সাহস দেখিয়ে মাহিন ছেলেটাকে মেরেছিলাম বলেই তো তুমি জানে বেঁচে ফিরতে পারলা! অকৃতজ্ঞ মেয়ে-ছেলে কোথাকার!”

“আমি অকৃতজ্ঞ নাকি তুই অকৃতজ্ঞ হ্যাঁ? রাত জেগে জেগে যে আমি তোকে ভারী ভারী এসাইনমেন্ট গুলো করে দিই তার বেলায় কিছুনা না? হাতটা পর্যন্ত ধোতা হয়ে যায় আমার। ট্রিট দিবি বলেও তো এই পর্যন্ত একটা ট্রিট দিলিনা! কত বড়ো বড়ো উপকার করে দিই আমি তোর। আর তুই কিনা আমার সাথে কিপ্টামি দেখাস? কিপ্টুস মেয়ে-ছেলে কোথাকার!”

দুজনের মধ্যে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া! জেসমিন হক দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উনার কান চেপে ধরতে বাধ্য হয়েছেন। কাকে রেখে কাকে থামাবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও দুজনের মধ্যে ঝগড়া থামানো গেল না! চু’লোচু’লি করার মতো অবস্থা হয়ে গেল! তাদের সাথেরআর না পেরে তিনি সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। যেতে যেতে তিক্ত গলায় বললেন,,

“নে। এবার যতো পারিস ঝগড়া কর। কেউ তোদের বাঁধা দিবেনা!”
পড়ার টেবিলে বসে আনমনে কী যেনো ভাবছে চাঁদ! উতলা, উদাসী, চঞ্চলা মন তার। স্থির আঁখিযুগল অদৃশ্য কিছু ভাবনা চিন্তায় ক্ষণে ক্ষণে অস্থির হয়ে উঠছে। মনটা ক্রমশ বেখেয়ালি হয়ে উঠছে। লাগামহীন ঘোড়ার ন্যায় বেসামাল হয়ে ছুটে চলছে দিক থেকে বিদিক। অতি আকর্ষণীয় কিছু তার মনকে ক্রমাগত আকুল করে তুলছে।

মনের গহীন কোণে বেজে ওঠছে সুরেলা কিছু এলোমেলো সুর। যে সুরের রাগিনী তার মনকে আরও ছন্নছাড়া করে তুলছে। কিছুতেই মিলাতে পারছেন না সেই অবাধ্য সুরদের। দৃষ্টির সামনে ধোঁয়া ওঠা গরম চা থাকা সত্ত্বেও তার মনযোগ চায়ের চেয়ে বেশি বিভোর তার অতিরঞ্জিত কল্পনায়! পড়ার প্রতিও বিশেষ কোনো মনযোগ নেই তার। যা তার পাশে বসে জায়মা বেশ আঁচ করতে পারছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে জায়মা চাঁদের দিকে ট্যাড়া দৃষ্টিতে তাকালো। চায়ের কাপে দীর্ঘ এক চুমুক দিলো। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী রে? কী ভাবছিস তুই? স্বপ্নে টপ্নে আবার বিজয় দেবরোকণ্ডাকে দেখিসনি তো?”
চাঁদ মাথা ঝাঁকালো৷ সম্বিত ফিরে এলো তার। তাড়াহুড়ো করে সে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে মিনমিনে গলায় বলল,,

“কই কী ভাবছিলাম?”
“কী লুকাচ্ছিস বল তো?”
“লুকানোর মতো কী এমন আছে আমার?”
চাঁদকে গুরুতরভাবে চেপে ধরল জায়মা। কিছু লুকানোর আঁচ পেয়ে সে সন্দেহজনক গলায় বলল,,
“তুই কিন্তু ব্লাস করছিস! বল কী হয়েছে?”

জায়মার থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারলনা চাঁদ! পেটে এমনিতেও বেশিক্ষণ কথা থাকেনা তার। পেটটা কেমন কিলবিল কিলবিল করে। একটু ঘুরে জায়মার মুখোমুখি বসল চাঁদ। লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মাথা নুইয়ে বলল,,
“এই জানিস? ফিল্মে যে হয়না হিরোরা কাছে আসলে হিরোইনদের হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে যায়? আমারও আজ সেমভাবে হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গিয়েছিল!”

জায়মা মুখটা হা করে চাঁদের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ একই অসমতট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উজবুক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“সিরিয়াসলি? কাকে দেখে তোর হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গিয়েছিল চাঁদ?”
চাঁদ ঝেড়ে কাশলো। কম্পিত গলায় বলল,,
“তুই কাউকে কিছু বলবিনা তো?”
“উঁহু বলবনা। বল কে সে?”

জায়মার সদ্বিশ্বাস কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলনা চাঁদ! তাই সে উদগ্রীব হয়ে তার ডানটা জায়মার দিকে এগিয়ে দিলো। ছটেফটে গলায় বলল,,
“আগে প্রমিস কর কাউকে কিছু বলবিনা?”
জায়মার যেনো তড় সইছিলনা। এতো অপেক্ষা তার সহ্য হচ্ছিলনা। হুড়মুড় করে সে তার ডান হাতটা চাঁদের হাতের উপর রাখল। ব্যস্ত গলায় বলল,,

“প্রমিস কাউকে কিছু বলবনা৷ এবার বল কে সে?”
চাঁদ লজ্জা পেল! লজ্জায় রাঙা হয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। গলা খাদে এনে বলল,,
“নূর ভাইয়া!”
জায়মার মাথা ঘুরে এলো! গোল গোল দৃষ্টিতে সে চাঁদের দিকে তাকালো। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,,

“নূর ভাইয়া? সত্যিই নূর ভাইয়াকে দেখে তোর হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গিয়েছিল চাঁদ?”
চাঁদ নাক-মুখ কুঁচকে নিলো। এদিক-ওদিক অস্থির দৃষ্টিতে তাকালো। জায়মাকে শাসিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল,,
“উফফফ আস্তে কথা বল। কেউ শুনে ফেলবে তো। তোকে বলে আমার ঘাট হয়েছে বুঝলি?”
জায়মা মুখে আঙুল চেপে ধরল। উৎসুক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। অস্পষ্ট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কীভাবে কী হলো একটু বলবি?”
চাঁদ পুনরায় লাজুক ভাব নিলো! লজ্জায় রাঙা হয়ে ঝট করে টেবিলের উপর মাথা রাখল! হাত-পা কচলে অস্ফুটে স্বরে বলল,,
“যাহ্ আমার লজ্জা লাগছে!”
জায়মা মুখ টিপে হাসল৷ অবিশ্বাস্য গলায় বলল,,

“এ তো দেখছি ভূতের মুখে রাম নাম! এই রসকষহীন মেয়েটা আবার এতো সুন্দর করে লজ্জাও পেতে পারে?”
ইতোমধ্যেই তাদের পড়ার রুমে হঠাৎ নূরের আগমন ঘটল! কালো রঙের টি-শার্ট পড়ে সে কলারটা উপরের দিকে উঁচিয়ে নিলো। বাহুতে লেগে থাকা টি-শার্টের অংশটা এক ইঞ্চি উপরে গুটে রাখল।

চুলগুলো স্পাইক করে সে বেশ ভাব নিয়ে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল। চাঁদের সান্নিধ্য পেয়ে আজ সে ভীষণ খুশি। নূর বেশ বুঝতে পেরেছে চাঁদের মনে তার নামের ঘণ্টা বাজছে। যতো দ্রুত সম্ভব চাঁদকে পটাতে হবে! আর এরজন্য তাকে সারাক্ষণ চাঁদের আশেপাশে থাকতে হবে। আকার-ইঙ্গিতে তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।

দরজাটা খোলা ছিলো বিধায় রুমে প্রবেশ করতে তার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি নূরের। বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই রুমে ঢুকতে হয়েছে। চাঁদ এখনো তার মুখটা টেবিলের উপর গুজে রেখেছে। মনে বসন্তের হাওয়া লেগেছে তার! নতুন এক রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে সে পাগল পাগল করছে। আনমনে মিটিমিটি হাসছে।

নতুন এক রূপে নিজেকে আবিষ্কার করছে। যে রূপটা খুবই কোমল, নাজুক, প্রেমময়ী এবং উষ্ণতায় ঘেরা। নিজের মধ্যে চাঁদ এতোটাই মত্ত হয়ে রয়েছে যে রুমে তৃতীয় কারো উপস্থিতি সে টের পায়নি। এরইমধ্যেই জায়মার আকস্মিক দৃষ্টি পড়ল হঠাৎ নূরের দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই জায়মা বিচলিত হয়ে উঠল। চাঁদকে সাবধান করার জন্য মুখ খুলে কিছু বলার পূর্বেই নূর ইশারায় জায়মাকে চুপ করতে বলল! নূরের ইশারা বুঝে জায়মা একদম চুপ হয়ে গেল।

বাঁকা হেসে নূর চাঁদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। চাঁদের এভাবে টেবিলে মুখ গুজে রাখার কারণ সে চট করে ধরে ফেলেছে! নিশ্চয়ই চাঁদ একটু আগের ঘটনাগুলো মনে করে লজ্জায় কুঁকড়ে মরছে! অমনি নূরের দৃষ্টি পড়ল বিছানার উপরে। সেদিনের সেই ডেইরি মিল্কগুলো এখনো আস্ত পড়ে আছে!

খোলা ডেইরি মিল্কটা হাওয়া লেগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ রাগ চেপে বসল নূরের মাথায়। বিছানার উপর থেকে ডেইরি মিল্কগুলো সে হাতে তুলে নিলো। রাগে গজগজ করে টেবিলের দিকে তেড়ে এলো। আনমনা চাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সে টেবিলের উপর সশব্দে কয়েকটা টোকা মারল। সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ ভয়ে কেঁপে উঠল।

তড়িৎ বেগে মাথা তুলে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অমনি তার হাওয়া ফুস হয়ে গেল! রোমাঞ্চকর অনুভূতি জানালা দিয়ে পালালো। এলোমেলো দৃষ্টিতে সে নূরের দিকে তাকালো। বারবার শুকনো ঢোঁক গিলে কপাল কুঁচকাতে লাগল। নূর দাঁতে দাঁত চাপল। চাঁদের দিকে খানিক ঝুঁকে এসে লোহিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“চকলেটগুলা এখনো খাও নাই কেন?”
চাঁদ কম্পিত গলায় মুখ খুলে কিছু বলার পূর্বেই জায়মা নূরের মুখের কথা টেনে নিলো। ডানপিটে গলায় বলল,,
“আমি অনেকবার খেতে চেয়েছিলাম নূর ভাইয়া। তবে চাঁদ আমাকে খেতে দেয়নি। কে না কে দিয়েছে তা বলে আমাকে প্রতিবার বেগড়া দিয়েছে।”

তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজে চাঁদ দৃষ্টি ঘুরিয়ে জায়মার দিকে তাকালো। রাগে আগুন হয়ে বিড়বিড় করে বলল,,
“একেই বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ! এর মতো ছোঁচামুখো মেয়ে আমি বাপের জন্মে দেখিনি। নিজে খেতে পারেনি বলে এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো? তাছাড়া ঐ নূরের বাচ্চা হঠাৎ কাটাপ্পার রূপ নিলো কেন? একটু আগেই তো বাহুবলী সেজে আমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল!”

চাঁদের মৌনতা দেখে নূর পূর্বের তুলনায় আরও অধিক রেগে উঠল। কটমট দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। শাণিত গলায় বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৮

“এই এইদিকে তাকাও। আমি এইদিকে। চকলেটগুলা এভাবে নষ্ট করার জন্যই কি আমি এতদূর থেকে ফ্রেন্ডকে রিকুয়েস্ট করে এই চকলেটগুলা তোমার জন্য এনেছিলাম?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৪০