প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫০

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫০
নিশাত জাহান নিশি

“হেই সুন্দরি? আমি তো এদিকে!”
তিথী থতমত খেয়ে উঠল। আকাশ থেকে টুপ করে মাটিতে পড়ার মতো অনুভূতি হলো। ঘোমটার তলা থেকে সে রাগে গজগজ করল। বুকে দু’হাত চেপে বিড়বিড় করে বলল,,
“মহা মুশকিলে পড়লাম তো। ছাগলটা আমাকে দেখল কীভাবে? এর মনোযোগ তো ঐসময় অন্য জায়গায় ছিল। সেই গভীর মনোযোগ ভেদ করে তো আমাকে দেখার কথা না!”

তিথীর মৌনতা মাহিনের কাছে ঝড়ের পূর্বাভাস বলে মনে হলো! সেই ঝড়কে আরও একটু উস্কে দেওয়ার জন্য মাহিন বিনা সংকোচে তিথীর কানের কাছে মুখ ঠেকালো৷ হেঁতো হেসে রসালো গলায় বলল,,
“এবার তুমি আমার হাত থেকে পালাবা কীভাবে সুন্দরি? পালানোর তো সব রাস্তা বন্ধ! যতই বাঁধা বিপত্তি আসুক এবার তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়ব। সে এবার যেভাবেই হোক।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দাঁতে দাঁত চেপে তিথী মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে নিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে মাহিনের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চোখের লেলিহান আগুনে মাহিনকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে বলল,,
“রিলিফের মাল পাইছেন আমাকে হ্যাঁ? যেভাবেই হোক আমাকে আদায় করে ছাড়বেন? কেন আসেন আমার সাথে ছাগলের মতো ম্যাঁ ম্যাঁ করতে হ্যাঁ? বুঝেন না বিরক্ত হই?”

তিথীর বলা প্রথম উক্তিটায় মাহিন বেশ চটে গেল! শিথিলতা ভুলে সে দাহ্য পদার্থে পরিণত হলো। তিথীর দিকে লোহিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“নিজেকে এত তুচ্ছ ভাবো তুমি ছিঃ! আমার ভালোবাসাকেও তোমার তুচ্ছ মনে হয়? তাই তুমি রিলিফের পন্যের সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করলা? আমার ভালোবাসাকে অপমান করলা? তোমাকে একটা নজর দেখার জন্য আমি কী কী না করেছি। মাথায় হাজারটা কাজের বোঝা নিয়েও আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি। এই পনেরোটা দিন আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে কাটাইছি শুধু আমি জানি। আর তুমি কিনা.. ছিঃ!”

হনহন করে মাহিন জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। হলের ভেতরে না ঢুকে সে তুখোর রাগের বশবর্তী হয়ে বাইক নিয়ে হল থেকে বের হয়ে গেল! তিথী মানব মূর্তিতে রূপান্তরিত হলো! তাজ্জব দৃষ্টিতে মাহিনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। কিয়ৎক্ষণ নীরবতায় ডুবে রইল। অতঃপর সম্বিত ফিরে পেতেই সে মাথা ঝাঁকালো। নিজের অপরাধ সে বুঝতে পারল। মাথা নুইয়ে গোমড়ো মুখে বলল,,

“শিট৷ রাগের বশে কী না কী বলে ফেললাম আমি উনাকে! নিশ্চয়ই খুব হার্ট হয়েছেন উনি। উনার কাছে একবার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। সত্যিই তো কতটা পেরেশান হয়ে উনি আমার কাছে ছুটে এসেছিলেন! সব তো আমার নিজের চোখেই দেখা। এতকিছু বুঝার পরেও কেন নাটকটা করলাম আমি? ছ্যাঁ, আই হেইট মাই মাইন্ড!”

বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির রাস্তায় মোড় নিতেই হঠাৎ সাদমানের দিকে দৃষ্টি পড়ল মাহিনের! ফুটপাতের দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে সাদমান একের পর এক সিগারেট ফুঁকছে! দেখতে ভীষণ নিষ্ক্রিয় দেখাচ্ছে তাকে। চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বিরহে কাতর হয়ে আছে সে। দিন-দুনিয়ার কোনো খবর নেই তার! সাদমানের এই বিবর্ণ মুখশ্রী দেখে মাহিন বাইকটা থামিয়ে দিলো। রাস্তার পাশে বাইকটা পার্ক করে সে দৌঁড়ে এলো সাদমানের কাছে। উদ্বিগ্ন হয়ে সাদমানের কাঁধে হাত রাখল। উত্তেজিত গলায় শুধালো,,

“কী রে? কী হইছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
মাহিনের দিকে এক নজর তাকালো সাদমান। সঙ্গে সঙ্গেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো! কাঁধ থেকে সে এক ঝটকায় মাহিনের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। হিংস্রাত্নক হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“আমার খবর তোদের নিতে হবেনা বুঝেছিস? দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে! তোরা সবক’টা এক। প্রতারক, বেইমান, স্বার্থপর!”

মাহিন হতবাক হয়ে একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। জোরে শোরে এক ধাক্কা খেলো। সাদমানের দিকে আশ্চর্যিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। শুকনো ঢোঁক গিলে পুনরায় শুধালো,,
“কী হইছে তোর বলবি তো? আমাদের কোনো কথায় তুই হার্ট হয়েছিস?”

“হ্যাঁ হয়েছি! তোর ভাই নূর আমাকে হার্ট করছে। সে তার কথা রাখছেনা। চাঁদের ধারে কাছে ঘেঁষবে না বলেও সে চাঁদের সাথে টই টই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছলাকলা করে চাঁদকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে! যে জায়গায় আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিল চাঁদ শুধু আমার। চাঁদের উপর শুধু আমার-ই অধিকার।”

“নূর কখনও তার ওয়াদা ভাঙতে পারেনা সাদমান। হয়তো চাঁদ চেয়েছিল বলেই চাঁদকে নিয়ে তার বের হতে হয়েছে। তুই অযথা নূরকে দোষারোপ করা বন্ধ কর প্লিজ।”
সাদমান আক্রমনাত্নক হয়ে উঠল! মাহিনের শার্টের কলার চেপে ধরল সে। চোয়াল শক্ত করে মাহিনের হতবিহ্বল দু’চোখে ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“হ্যাঁ যা বুঝেছি বুঝেছি। ভাইয়ের হয়ে সাফাই দিতে এসেছিস? রক্ত তো রক্তকেই টানবে তাইনা? আমার হয়ে কেন টানবে? তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ মাহিন। নূর যদি সত্যি সত্যিই চাঁদের দিকে হাত বাড়ায় না? তবে কিন্তু আমি নূরের হাত কে’টে রেখে দিব! তোকে জানিয়ে রাখলাম। সাবধান করে দিস তোর ভাইকে।”

মাহিনকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সাদমান জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। আচম্বিত দৃষ্টিতে মাহিন এখনো সাদমানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। এই প্রথম সাদমানকে সে এতটা হিংস্র হতে দেখল। যা তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এক নিমিষেই সব সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

গাড়ির হর্ণ কর্ণতলে ভেসে আসতেই মাহিন তার সম্বিত ফিরে পেল। মুখশ্রীতে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে সে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করল। তড়িঘড়ি করে নূরের নাম্বারে ডায়াল করল। কনফার্ম হতে চাইল নূর আসলে কোথায় আছে। নূর আদোতে চাঁদের সাথে আছে কিনা, সাদমানের অভিযোগ ঠিক কিনা!

এদিকে চাঁদকে নিয়ে নূর এইতো পাঁচ মিনিট হলো মাত্র হসপিটালে এসে পৌঁছালো। পরিচিত ডক্টর বিধায় এপয়েন্টমেন্ট নিতে তার বেশি দেরি কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। চেম্বারের ভেতরে ঢুকবে ডক্টর দেখাবে আর চলে আসবে। ব্যস এটুকুই। মাহিনের কল পাওয়া মাত্রই নূর তাড়াহুড়ো করে কলটা পিক করল। চাঁদকে ডক্টরের কেবিনে ঢুকিয়ে দিয়ে সে হসপিটালের এক কর্ণারে এসে দাঁড়ালো। মাহিনের সাথে কথা বলার জন্য। ব্যস্ত গলায় নূর হ্যালো বলতেই মাহিন ঐ পাশ থেকে কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই কই তুই?”
“চাঁদকে নিয়ে একটু হসপিটালে এসেছিলাম। কেন?”
“কে বলছে তোকে চাঁদকে নিয়ে হসপিটালে যেতে?”
“মানে? কে বলবে মানে? তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?”
“চাঁদের কি কোনো গার্জিয়ান নাই? তোকেই কেন চাঁদের সাথে আসতে হবে হ্যাঁ? আয়মন ছিলনা বাড়িতে? চোখে দেখিস নি তাকে?”

“কী যা তা বলছিস তুই হ্যাঁ? চাঁদের কাজিন আমি। অবশ্যই আমি তার গার্জিয়ান। আমার রাইট আছে চাঁদকে নিয়ে হসপিটালে আসার।”
“সাদমানকে তুই কী কথা দিয়েছিলি হ্যাঁ? তোদের মধ্যে কী কী কথা হয়েছিল বল? কেন তুই নিজের ওয়াদা ব্রেক করছিস?”
“কেন? তোকে বলতে যাবে কেন? সাদমান কি তোর আশেপাশে আছে?”

“সাদমানের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। কেন গেলি তুই চাঁদকে নিয়ে হসপিটালে? তুই কিন্তু সাদমানকে কথা দিয়েছিলি চাঁদের আশেপাশে ঘেঁষবি না তুই। তারপরেও কেন এসব করছিস? কেন বন্ধুত্বের মধ্যে শত্রুতা তৈরী করছিস?”
নূর শান্ত হয়ে এলো! গলা নামিয়ে বলল,,

“আমি কী করতাম বল? চাঁদ আমাকে ছাড়া হসপিটালে আসছিল না! ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না জাস্ট। কষ্ট হচ্ছিল আমার। ভালোবাসি আমি ওকে! কষ্ট হবেনা বল? তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে নিয়ে হসপিটালে আসা। এছাড়া আমার হাতে আর কোনো উপায় ছিলনা।”
এরমধ্যেই হঠাৎ পেছন থেকে চাঁদ কাঁচুমাচু স্বরে নূরকে ডেকে উঠল! মাথা নুইয়ে আবদারসূচক গলায় বলল,,

“নূর ভাইয়া।”
ফোনটা কানে রেখেই নূর দ্রুত বেগে পিছু ফিরে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ অসহায় গলায় বলল,,
“আপনিও আমার সাথে চলুন না নূর ভাইয়া। আমি একা চেম্বারে যেতে পারবনা!”
ঝট করে নূর ফোনটা কেটে দিলো। বড়ো বড়ো পা ফেলে চাঁদের দিকে এগিয়ে এলো। শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কেন? ভয় পাচ্ছ?”

“খুব! ভয়ে আমি আমার সমস্যার কথাগুলো খুলে বলতে পারছিনা নূর ভাইয়া।”
হুট করেই চাঁদের হাতটা আঁকড়ে ধরল নূর! হাঁটতে হাঁটতে ডক্টরের চেম্বারে ঢুকে পড়ল৷ চাঁদ উৎফুল্লিত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল,,

“আপনি কী শুধুই আমার ক্রাশ নূর ভাইয়া? নাকি এরচেয়েও বিশেষ কিছু? কেন আপনার স্পর্শ এখন আমার এত ভালো লাগে বলুন? কেন আপনি আশেপাশে থাকলে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ মেয়েটি মনে হয়?”
ডক্টরের সামনেই চেয়ার টেনে বসল দুজন। মিস নায়লা মিষ্টি হেসে নূরের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন! মিষ্টি রঙের চুড়িদারে উনার শুভ্র মুখশ্রীতে আরও দ্বিগুন শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ছিল। দ্বিধা নিয়ে নূর মিস নায়লার দিকে তাকালো। শার্টের কলারটা ঠিক করে গলা ঝাড়লো। মিস নায়লাও নূরের দেখাদেখি গলা ঝাড়লেন। নরম কণ্ঠে শুধালেন,,

“কেমন আছো নূর?”
মলিন হাসল নূর। জবাবে বলল,,
“ভালো আছি আপু। আপনি কেমন আছেন?”
“এইতো চলছে কোনোরকম। তো বলো কী খবর তোমার? পড়ালেখা কেমন চলছে?”
“চলছে আগের মতোই। যেমন দেখেছিলেন।”

“আচ্ছা বুঝলাম। তো অনার্স কমপ্লিটের পর প্ল্যান কী হ্যাঁ?”
“বিসিএস দেওয়া! যদি ভাগ্যে থাকে তো ভালো কিছু হবে!”
“হুম লেগে থাকো। সফলতা নিশ্চয়ই আসবে।”
“জি আপু। দো’আ করবেন। একচুয়েলি আমার কাজিনকে নিয়ে আপনার কাছে আসা। আপনি ওর ফেসটা দেখলেই বুঝতে পারবেন আসলে ওর সমস্যাটা কী।”

মিস নায়লা দৃষ্টি ঘুরিয়ে একবার চাঁদের দিকে তাকালেন। নূরকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“তোমার কাজিন?”
“জি আপু। দুদিন পরই আমার বড়ো ভাইয়ার সাথে ওর বড়ো আপুর বিয়ে। এরমধ্যেই মুখের চৈত্রিশটা বাজিয়ে রেখেছে। তাই ইমার্জেন্সি আপনার কাছে নিয়ে আসা।”

চাঁদ ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগল। মিস নায়লার সাথে নূরের এত ভাব ভঙ্গিমা তার একদম পছন্দ হলোনা। বিশেষ করে মিস নায়লার নূরের দিকে তাকানোর ভঙ্গি তার পছন্দ হচ্ছেনা! ডাল কুচ কালা হে এমন মনে হচ্ছে। মিস নায়লা কিছুক্ষণ বিজ্ঞ দৃষ্টিতে চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে উনি নূরের দিকে তাকালেন। স্বাভাবিক গলায় বললেন,,

“ইনফেকশন হয়েছে মুখে। কিছু মেডিসিন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
নূর স্বস্তির শ্বাস ফেলল। বিনিময়ে মৃদু হেসে বলল,,
“প্রোপার্লি মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে তো আপু?”
“মেয়েটা কী শুধুই তোমার কাজিন হয়?”

পাশ ফিরে চাঁদের দিকে একবার তাকালো নূর। অধীর আগ্রহ নিয়ে চাঁদ নূরের দিকে তাকাতেই নূর অভিমানে তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। জোরপূর্বক হেসে মিস নায়লাকে বলল,,
“হুম। অনলি কাজিন!”
চাঁদ ছোটো খাটো একটা আঘাত পেল! তাড়াহুড়ো করে সে মাথাটা নুইয়ে নিলো। মিস নায়লা তৃপ্তির হাসি হাসলেন! মিষ্টি গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“তা তোমার বড়ো ভাইয়ার বিয়েতে আমাকে ইনভাইট করবে না?”
নূর ভীষণ লজ্জা পেল। কেন আগেই সে মিস নায়লাকে ইনভাইট করলনা সেজন্য সে জিভ কাটল। গলা ঝাকিয়ে মিস নায়লাকে বলল,,
“অফকোর্স আপু। ইনভাইট করবনা কেন? আপনার ইনভিটিশন রইল কিন্তু ভাইয়ার বিয়েতে। চলে আসবেন ওকে? আমি কোনো বারণ শুনবনা”
মিস নায়লা ফিক করে হেসে দিলেন। জবাবে বললেন,,

“ঠিক আছে আসব। তোমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাও তো! অনেক বছর পর আমাদের দেখা হলো। লাস্ট মেবি দুইবছর আগে দেখা হয়েছিল। অমিত ভাইয়ার কোচিংয়ে।”

নূর বিনাসংকোচে তার ফোন নাম্বারটা মিস নায়লাকে গড়গড় করে বলে ফেলল। মিস নায়লাও হাসোজ্জল মুখে নাম্বারটা উনার ফোনে টুকে নিলেন। পাশ থেকে চাঁদ সাপের ফোঁস ফোঁস করছিল! শুধু পরিস্থিতির চাপে পড়ে কিছু বলতে পারছিলনা। পুরো বিষয়টাতে সে খুব বিরক্ত। বিশেষ করে নূরের প্রতি খুব বিরক্ত! মিস নায়লার সাথে নূরের রসিকতা তার কোনোভাবেই পছন্দ হচ্ছেনা। একবার ফোন নাম্বার চাওয়াতেই দিয়ে দিতে হবে? জুনিয়রের সাথে কীসের এত রসিকতা? এত ভাব-ভঙ্গিমা?

চাঁদের সব সমস্যা জানার পর মিস নায়লা প্রেসক্রিপশান লিখে দিলেন চাঁদকে। নূর মিস নায়লাকে পেমেন্ট করতে নিলেই মিস নায়লা বাঁধ সাঁধলেন! পেমেন্টটা উনি নিতে চাইলেন না। নূর হাজার জোর করার পরেও পেমেন্টটা উনি নিলেন না। পরিশেষে পেমেন্ট পে করা ছাড়াই নূর চাঁদকে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে এলো। তাড়াহুড়ো করে হসপিটাল থেকে বের হয়ে পাশের ফার্মেসিতে গেল। প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী সমস্ত ঔষধ কিনে নূর চাঁদকে নিয়ে রিকশায় উঠল। মুখ গোমড়া করে বসে আছে চাঁদ! চোখ তুলে কিছুতেই নূরের দিকে তাকাচ্ছে না। ভীষণ রেগে আছে সে নূরের সাথে।

চারিদিকে তখন মাগরিবের আযান পড়ল। মাথায় বড়ো করে ঘোমটা টেনে নিলো চাঁদ। পুরো মুখটা সে ওড়নার আঁচলে ঢেকে নিলো। নূর আড়চোখে চাঁদের দিকে তাকালো। তবে কিছু বলল না। চাঁদ আর চুপ করে থাকতে পারলনা। নীরবতা তাকে বড্ড পোড়াচ্ছিল। ঘোমটার তলা থেকে সে রূঢ় গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“মেয়েটাকে আপনি আগে থেকে চিনতেন?”
“হ্যাঁ। সিনিয়র আপু। তিন বছরের সিনিয়র।”
“শুধুই কি সিনিয়র আপু? নাকি অন্যকিছু?”
“অন্যকিছু বলতে কী মিন করতে চাইছ?”
“আমি মিন করতে যাব কেন? হাবভাব দেখে বুঝেননি?”
“না বুঝিনি! তুমিই বলো?”

“বুঝে নিন কী বলতে চাইছি। এমন একটা নাটক করছে মনে হচ্ছে যেনো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। ন্যাকা।”
“আরেহ্ ভাই। বুঝাইয়া বলবা তো কী হইছে? আমি তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতেছিনা!”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৪৯

উড়নচণ্ডী হয়ে চাঁদ মাথার ঘোমটাটা ফেলে দিলো। তেজী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। মুখটা ব্যঙ্গ করে ঝাঁঝালো গলায় বলল,,
“আহাম্মক তুমি? কিছু বুঝো না না? নাক টিপলে দুধ বের হয়? সিনিয়র আপু তোমাকে লাইন মারতে চায় তুমি বুঝো না?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫১