প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬
নিশাত জাহান নিশি

“হ্যাঁ, তবে একজন আছে যে শাওয়ার নিতে যাওয়ার সময়ও হাতে করে ফোন নিয়ে যায়। সে হলো আমাদের নূর ভাইয়া! তবে নূর ভাইয়ার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই! থাকলে তো খালামনি এই ব্যাপারে জানত। তবে নূর ভাইয়া কেন ওয়াশরুমে ফোন নিয়ে গেল?”

অর্ণগল কথাগুলো বলে চাঁদ বাঁকা চাহনিতে সাবরিনা আবরারে দিকে তাকাল! ‘সাবরিনা আবরার’ হলো নূরের মা। চাঁদের উস্কানিমূলক কথাবার্তা শুনে উনি তৎক্ষণাৎ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন! নূরের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। নূরের বাবা হাবিব আবরার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছেন!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অন্যদিকে নূর শঙ্কিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে তাকাচ্ছে তো কিছুক্ষণ সাবরিনা আববারের দিকে তাকাচ্ছে! মুখে রাখা পাউরুটির পিসটি কিছুতেই তার গলা দিয়ে নামছে না। তাই স্বাভাবিকভাবে ঢোক গিলতেও তার সমস্যা হয়ে যাচ্ছে! বিরাট বিভ্রাটে ফেঁসে গেছে সে। ভয়ে হয়তো দমটা হাঁসফাস করছে!

বিস্তীর্ণ ডাইনিং টেবিল জুড়ে এখন গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। সবার এক চোখা চাহনি এখন নূর এবং সাদমানের দিকে সীমাবদ্ধ! কারণ, দুজনই ভয়ে সিঁটিয়ে আছে! মুখে এক গাল খাবার নিয়ে বসে আছে। চিবুতেও পারছে না উগলাতেও পারছে না। দেখতে অপরাধীর মতো ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে৷

তবে এর মধ্যে সোহানী বেশ বুঝতে পেরে গেছে এইসব চাঁদের টেকনিক! চাঁদের সাংঘাতিক দুষ্টু বুদ্ধির নতিজা এসব! চাঁদের এই দুরন্তপন স্বভাবের জন্য মাঝে মাঝে সোহানী নিজেও ফেঁসে যেত! তাই চাঁদের চালাকি ধরতে বেশি সময় লাগল না সোহানীর। মুহূর্তের মধ্যেই ক্ষেপে উঠল সোহানী। চাঁদের বাঁ হাতের শিরা বরাবর চিমটি কেটে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“নাটক বন্ধ কর বলছি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নাটক বন্ধ কর।”

চাঁদ শুকনো ঢোক গিলল! ব্যথায় খানিক কুঁকিয়ে উঠল। সোহানীর কানে কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“তুমি বুঝতে পেরে গেছ আপু এসব আমি নাটক করছি?”
“তোর বড় বোন আমি! তোকে চিনতে আমার ভুল হবে? তাছাড়া তোকে এখনো যে চিনে নি, সে এখনো মায়ের গর্ভেই রয়ে গেছে!”

লজ্জায় জিভ কাটল চাঁদ! কান থেকে তাড়াহুড়ো করে ফোনটি নামিয়ে নিলো। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য গলা খাঁকিয়ে সবার দিকে তাকাল। ব্যগ্র হেসে সাবরিনা আবরারকে কিছু উদ্দেশ্য করে বলার পূর্বেই সাবরিনা আবরার বাজখাঁই গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“চাঁদ এসব কী বলছে নূর? তুই ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় সত্যিই ফোন নিয়ে গিয়েছিলি?”
জোড়ালো ঢোক গিলল নূর! মুখে থাকা পাউরুটির অবশিষ্ট অংশ খাদ্যনালীতে সোজা গড়িয়ে পড়ল। অস্থির গলায় জবাবে বলল,,
“হ্যাঁ নিয়ে গিয়েছিলাম! এতে সমস্যা কী মা? ওয়াশরুমে তো যে কেউ ফোন নিয়ে যেতে পারে। হয়তো ইম্পর্টেন্ট কলও আসতে পারে।”

“না! ওয়াশরুমে যে কেউ ফোন নিয়ে যায় না। শুধু তারাই নিয়ে যায়, যারা নতুন নতুন প্রেম করে! চাঁদ বলল যে শুনলি না?”
নূর হিংস্র দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকাল! পারলে হয়তো এখনই সে চাঁদকে আস্ত গিলে খেতে পারবে! তেজী চাহনিতে চাঁদকে ভস্ম করে দিতে পারবে! বর্তমানে নূরের ভয়াবহ রূপ দেখে চাঁদ ভয় পেতে বাধ্য হলো! শুকনো ঢোক গিলে নূরের দিকে তাকাল। তবে বেশিক্ষণ এই গরল দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে রাখতে পারল না চাঁদ! তৎক্ষনাৎ নূরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সাবরিনা আবরারের দিকে অধীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কম্পিত গলায় বলল,,

“আমি বললেই কি সব হয়ে গেল নাকি খালামনি? আমি কতটুকুই বা বুঝি বলো সব? আমি তো এখানে তোমাদের সব্বার ছোট। মুখ ফসকে কী থেকে কী বলে ফেলেছি। ছেড়ে দাও না এসব খালামনি৷ চলো আমরা বরং নাশতা করি৷ আর নূর ভাইয়া উনার কাজে চলে যাক। বেচারা সকাল থেকে কত এক্সাইটেড হয়ে আছে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।”

সাবরিনা আবরার শান্ত হয়ে এলেন! সন্দেহবাদী মনোভাব ভেতর থেকে উপড়ে ফেললেন। নূরের দিকে ধীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন! নূর আতঙ্কিত দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকিয়ে আস্ত একটি পাউরুটির পিস মুখে পুড়ে নিলো! নূরের অবাক করা কর্মকান্ড দেখে সাবরিনা আবরার ফিক করে হেসে নমনীয় গলায় বললেন,,

“এত তাড়াহুড়ো করে খেতে হবে না বাবা। আস্তে ধীরে খা। আগে নিজেকে ঠিক রাখতে হবে তো, পরে বাকি কাজ!”
নূর স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল! চাঁদের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বিনিময়ে চাঁদ ক্রুর হাসল। ডান পাশের ভ্রুটি উঁচু করে ইশারায় বলল,,
“দেখলেন তো চাঁদের কামাল?”

গলায় খাবার আটকে গেল নূরের! গড়গড় করে এক গ্লাস পানি নিমিষের মধ্যেেই সাভার করে ফেলল সে। নূরের এরূপ তাড়াহুড়ো দেখে সাবরিনা আবরারসহ হাবিব আবরারও নূরকে আচ্ছে মতো বকতে শুরু করলেন! ঐদিকে চাঁদ মনে মনে পৈশাচিক আনন্দে ফেটে পড়ছে! যা সোহানী এবং নূর ব্যতীত বাকি কেউ বুঝতে পারছে না।

সোহানীও নূরের মতো চাঁদের উপর ফুঁসছে! সুযোগ পেলেই কখন চাঁদের কান মলে দিবে সেই ভাবনায় অস্থির। সীমিত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি সামলে নূর সাদমানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে সক্ষম হলো! পার্কিং অ্যারিয়ায় পার্ক করে রাখা বাইক নিয়ে ছুটে চলল প্যারাডাইস পার্কের উদ্দেশ্যে! সেই পার্কটিতে রোজ নূরের জন্য সেই কখন থেকে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।

ঘড়িতে সন্ধ্যা প্রায় সাতটা পনেরো ছুঁইছুঁই। চাঁদ সেই কখন থেকে ড্রইং রুমের সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। অপেক্ষমান চোখ দুটো কেবল ঘড়ির কাঁটার দিকেই সীমাবদ্ধ রয়েছে! নূরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এই পর্যায়ে এসে চাঁদ ভীষণ অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে। মুখটা ফুলিয়ে একটুটুটুখানি করে রেখেছে।

ঠিক সন্ধ্যার দিকেই নূরের বাড়ি ফেরার কথা ছিল! কিন্তু সেই কথা রাখছে না নূর! সন্ধ্যা পেরিয়ে এখন প্রায় রাত হতে চলছে। চাঁদের ধৈর্য্য ধারণ ক্ষমতাও ক্রমশ লোপ পেতে চলেছে। যা চাঁদকে আরও ভীষণভাবে রাগিয়ে তুলছে। এর মধ্যেই হঠাৎ সাবরিনা আবরার এবং সোহানী কিচেন রুম থেকে সন্ধ্যার হালকা খাবার হাতে করে নিয়ে এলেন।

এর মধ্যে চাঁদের ফেভারিট ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং পাকোড়াও আছে। ট্রে ভর্তি এত পছন্দের খাবার থাকা সত্ত্বেও চাঁদ মুখ তুলে একটি বার খাবারের দিকে তাকাচ্ছে না। ট্রে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সাবরিনা আবরারের দিকেও দৃষ্টিপাত করছে না। উদ্বেগী দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরার চাঁদের বিবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ভ্রু যুগল কুঁচকে উনি এবার চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কী হয়েছে চাঁদ? এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস কেন?”
সোহানী বেশ বুঝতে পেরে গেছে চাঁদ কেন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে! তাই সে চাঁদের মন ভালো করার জন্য চুপটি করে চাঁদের পাশে বসল। মিটিমিটি হেসে চাঁদের দিকে খানিক ঝুঁকে বলল,,

“চল আমরা দু’বোন মিলে বাইরে থেকে ঘুরে আসি৷ মন ভালো হয়ে যাবে তোর?”
অসন্তোষ দৃষ্টিতে চাঁদ সোহানীর দিকে তাকাল। ভগ্ন গলায় বলল,,
“না যাব না। আমি আর কারো সাথেই কোথাও যাব না!”

“আচ্ছা বল। এখানে আমার কী দোষ আছে? আমি কী করেছি? কেন আমার সাথে যাবি না তুই? আমি তো তোর মন ভালো করার জন্যই তোকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইলাম।”
“কারণ তুমিও আমাকে পছন্দ করো না! একটু আগেই তুমি আমাকে বকেছিলে, ধমকেছিলে, কান ধরেও টেনেছিলে! আমি একটু বেশি চঞ্চল স্বভাবের বলেই তোমাদের সমস্যা! বাচাল প্রকৃতির বলেই তোমাদের অনুশোচনা। অন্য সব মেয়েদের চেয়ে একটু দুষ্টু স্বভাবের বলেই তোমাদের আপত্তি। তাই প্রতি পদে তোমাদের কথা শুনতে হয়। সবার অবহেলার কারণ হতে হয়।”

বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো চাঁদ! সাবরিনা আবরারের দিকে ব্যথীত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। এক ঝটকায় সাবরিনা আবরারের হাত থেকে খাবারের ট্রে-টি ছিনিয়ে নিলো! বেকুব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সাবরিনা আবারার এবং সোহানীকে উদ্দেশ্য করে চাঁদ অপ্রিয় গলায় বলল,,

“আমার পছন্দের খাবার শুধু আমিই খাব! তোমরা কেউ হাতও লাগাতে পারব না।”
খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে হনহনিয়ে চাঁদ বাড়ির ছাদের দিকে রওনা হলো! সাবরিনা আবরার এবং সোহানী ফিক করে হেসে উঠল। দু’জনই সমস্বরে বলে উঠল,,
“ঠিকাছে আমরা খাব না। কোথায় যাচ্ছিস বলে তো যা?”

“ছাদে যাচ্ছি। তোমরা কেউ আমার পিছু পিছু আসবে না। মন ভালো হলে আমি নিজে থেকেই চলে আসব!”
সাবরিনা আবরার এবং সোহানী চুপ হয়ে গেল! দু’জনই হাসতে হাসতে কিচেন রুমে গেল। আলাদাভাবে প্লেটে তুলে রাখা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং পাকোড়া গুলো সোহানী হাতে তুলে নিলো। উদগ্রীব গলায় সাবরিনা আবরারকে বলল,,

“বুঝলে খালামনি? চাঁদ কখনো তার পছন্দের খাবার কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে না। সবটা সে নিজে খেতেই পছন্দ করে। তাই আমরা সবসময় এভাবে কিছু খাবার তুলে রাখি। চুপিসারে যেন আমরাও খেতে পারি।”
সাবরিনা আবরার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন! প্লেটে থাকা একটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মুখে তুলে বললেন,,

“চাঁদের এই বাচ্চামো স্বভাবটা আর গেল না। সবসময় বিনোদন দিয়েই চলছে! মেয়েটা পারেও বটে।”
সোহানী মৃদু হাসল। প্লেট থেকে একটি পাকোড়া মুখে তুলে নিয়ে তৃপ্তির সাথে বলল,,
“বাহ্ খালামনি। পাকোড়াটা বেশ মজা হয়েছে তো!”

ছাদের রেলিং ঘেঁষে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ। মোহিত দৃষ্টিতে আকাশভরা উজ্জ্বল তাঁরার দিকে নিষ্কলুষ দৃষ্টি তার। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তাঁরকারাজিদের পাশে অবস্থান করা থালার মতো বড় চাঁদের দিকে অপলক চাহনি তার। প্রকৃতি যেন বিকেলের সমস্ত উত্তপ্ততা কাটিয়ে সন্ধ্যে হতেই নিজেকে হিম ভাবে তুলে ধরেছে।

স্নিগ্ধ, প্রশান্ত এবং মিষ্টি বাতাসে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলছে। প্রকৃতির পরম আবেশে চাঁদের রাগটাও কেমন শিথিল হয়ে আসছে! মন খারাপের মনোভাব পাল্টে যাচ্ছে। প্রকৃতিক অকৃত্রিম সৌন্দর্যে বেখবর হয়ে চাঁদ একটার পর একটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং পাকোড়া টপাটপ খেয়ে চলছে। খাবারের স্বাদ পেয়ে সে সমস্ত রাগ-অভিমান ভুলতে শুরু করেছে।

মিটিমিটি হেসে খুব তৃপ্তির সাথে প্রতিটি খাবার উপভোগ করছে। এর মধ্যেই হঠাৎ বাড়ির মেইন গেইট থেকে বাইকের হর্ণের আওয়াজ ভেসে এলো! উত্তেজিত হয়ে চাঁদ বাড়ির মেইন গেইটের দিকে অশান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অমনি বাইকে বসা অবস্থায় ক্লান্ত নূরকে চাঁদ দেখতে পেল!

আর এক মুহূর্ত ব্যয় করল না চাঁদ। অবশিষ্ট ফ্রেঞ্চ ফ্রাই গুলো একসাথে মুখে পুড়ে সে এক দৌঁড়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বাড়ির সদর দরজায় চলে এলো। কিচেন রুম থেকে দৌঁড়ে আসা সাবরিনা আবরারকে থামিয়ে চাঁদ তাড়াহুড়ো করে সদর দরজার খিলটা খুলে দিলো।

মুখে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার থাকার কারণে চাঁদ মুখ খুলে কথা বলতে পারছে না। তাই কিঞ্চিৎ মুহূর্তের মধ্যেই সে গপাগপ খাবার গুলো শেষ করে নিলো। দরজার মুখোমুখি পজিশন নিয়ে দাঁড়ালো। সাবরিনা আবরার অবাক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আসলে উনি বুঝে উঠতে পারছেন না চাঁদ কী করতে চাইছে! এর মধ্যেই হঠাৎ নূর ফোন ঘাটতে ঘাটতে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে এলো। তার সম্পূর্ণ মনযোগ এখন ফোনের দিকে। ফোনের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন মিটিমিটি হাসছে সে! দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ খুশি সে।

সেই খুশি যেন আর ধরছে না তার। অনমনস্ক হয়ে সে সদর দরজার দিকে এগিয়ে আসতেই চাঁদ “ভাও” করে এক চিৎকার দিয়ে উঠল! সাথে সাথেই নূর ভড়কে উঠল! হাতে থাকা ফোনটি মাটিতে ছিটকে পড়ল। বুকে হাত চেপে নূর প্রকান্ড চোখে সামনের দিকে তাকাল! নূরের বর্তমান ভয়ার্ত অবস্থা দেখে চাঁদ ফিক করে হেসে উঠল! পাশ থেকে সাবরিনা আবরার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। হন্ন হয়ে নূরের দিকে এগিয়ে গেলেন। চিন্তিত গলায় বললেন,,

“কী হয়েছে বাবা? ভয় পেয়েছিস?”
নূর বড় করে একটি স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল! চাঁদের দিকে রুক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,
“তুমি? তুমি আবারও?”

“আমি আবারও কী হ্যাঁ? কথা দিয়ে কথা রেখেছেন আপনি? সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরেছেন?”
“সন্ধ্যা হয়েছে মাত্র। এখনো কিন্তু রাত পেরিয়ে যায় নি। বড্ড জ্বালাচ্ছ কিন্তু তুমি আমায়!”
“কোথায় জ্বালাচ্ছি হ্যাঁ? কোথায় জ্বালাচ্ছি? আপনি যদি আমার দেওয়া শর্ত না রাখেন তো আমিও…

নূর উত্তেজিত হয়ে উঠল! সাবরিনা আবরারের দিকে শঙ্কিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সাবরিনা আবরার উজবুক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালেন। তৎক্ষণাৎ সাবরিনা আবরারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নূর শুকনো ঢোক গিলে চাঁদকে বলল,,
“ওয়েট এ্য মিনিট৷ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি!”

চাঁদ এবং সাবরিনা আবরারকে পাশ কাটিয়ে নূর এক ছুটে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। নূরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে চাঁদ মুখ চেপে হাসতে লাগল। অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা সাবরিনা আবরার এবার চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। ভ্রু উঁচিয়ে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“তোদের ব্যাপারটা কী হ্যাঁ? কী চলছে তোদের মধ্যে? নূর তোকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?”
চাঁদ হকচকিয়ে উঠল। ইতস্তত গলায় বলল,,
“কিছু না খালামনি। আমি যাচ্ছি কেমন? রেডি হতে হবে।”

এক দৌঁড়ে চাঁদ নিজের রুমে চলে এলো। গাঁয়ে থাকা গোলাপী রঙের কুর্তিটা খুলে লাল রঙের একটি কুর্তি পড়ে নিলো। সোহানী তাকে হালকা সেজে সাজিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সেজেগুজে নূরের রুমে চলে এলো। এইদিকে নূর মাত্র ফ্রেশ হয়ে অফ-হোয়াইট রঙের একটি শার্ট পড়েছে। ধীর গতিতে সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে চাঁদ নূরের পাশে দাঁড়ালো। মিষ্টি হেসে উত্তেজিত গলায় বলল,,

“আমি রেডি ভাইয়া। এবার চলুন তাহলে।”
নূর হঠাৎ কেঁপে উঠল! রূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাশ ফিরে চাঁদের দিকে তাকাল। তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“এই তুমি কি ভূমিকম্প? কখন কোথা থেকে চলে আসো টের-ই পাওয়া যায় না!”
ভ্রু যুগল কুঁচকে চাঁদ রাগান্বিত গলায় বলল,,
“কী? আমি ভূমিকম্প?”

“নয়তো আর কী? সব জায়গায় এসে তুমি হাজির। তুমি আসার পর থেকেই আমার প্যারাহীন লাইফটা প্যারাময় হয়ে উঠেছে! সব জায়গায় অশান্তি কাজ করছে। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।”
“গার্লফ্রেন্ড থাকার পরেও আপনি কীভাবে বলছেন আপনার লাইফ প্যারাহীন ছিল?”
“অভেসলি ছিল! আমার গার্লফ্রেন্ড তোমার মতো এত প্যারাদায়ক নয়!”

“তাহলে তো বলব আপনার গার্লফ্রেন্ড শুধু নামে মাত্রই গার্লফ্রেন্ড! মন থেকে আপনাকে কখনো চায় নি বা ভালোবাসে নি! তার ঝোঁক হয়তো অন্যদিকে!”
মুহূর্তের মধ্যেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো নূরের! চাঁদের দিকে তেড়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“শাট ইউর মাউথ চাঁদ। জাস্ট শাট ইউর মাউথ। আমার গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না তোমার মুখ থেকে।”

“ওকে চুপ করলাম! তাহলে চলুন। এবার আমরা ঘুরতে যাই।”
চাঁদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো নূর। চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বাইকের চাবিটি হাতে তুলে নিলো। শান্ত গলায় চাঁদকে শুধালো,,

“কোথায় যেতে চাও বলো?”
“আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানেই যাব।”
“এত সময় নেই এখন আমার হাতে। তাই আশপাশ থেকে ঘুরিয়ে আনব। তবে কাল অথবা পরশু বের হলে হয়তো ভালো হতো।”

“কাল না আজই। আজই আমি ঘুরতে বের হবো।”
“যদি কাল বা পরশু বের হও তাহলে ঢাকা শহরের অনেক কিছু ঘুরে দেখতে পারবে।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫

“না! আমি আজ এক্ষণি যাব। এই বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছটফট ছটফট লাগছে। এক্ষণি আমার এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। যদি আপনি আমাকে নিয়ে এখন বের না হোন তবে আমি কিন্তু খালামনিকে সব বলে দিব!”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৭