প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫
নিশাত জাহান নিশি

“এসব কী হচ্ছে নূর? মেয়েটি কে?”
তৎক্ষনাৎ নূর ভাইয়া আমার মুখের উপর থেকে হাতটি সরিয়ে নিলেন। কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে ভদ্র ছেলেদের মতো দাঁড়িয়ে পড়লেন!

আমি তাজ্জব দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। হঠাৎ কী এমন হলো উনার? দেখে তো মনে হচ্ছে ভীষণ ভয় পেয়ে আছেন উনি! ঐ ছেলেটিকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে আজব! মুহূর্তের মধ্যেই জোরপূর্বক হেসে উনি পেছনের চুলগুলো টেনে সেই অপরিচিত ছেলেটির দিকে অগ্রসর হলেন!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি এক দৃষ্টিতে এখনও আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে! ভীষণ জড়তা কাজ করছিল আমার। তাই আমি সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম! মাথা নুইয়ে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লাম। এর মধ্যেই নূর ভাইয়ার গলার স্বর শুনতে পেলাম। উনি বেশ নমনীয় গলায় ছেলেটিকে শুধাচ্ছেন,,

“হেই সাদমান। তুই এত সকালে আমার বাড়িতে?”
ছেলেটি দুর্বল গলায় বলল,,
“রোজ পাঠিয়েছে!”
গলার আওয়াজ কমিয়ে নিলেন নূর ভাইয়া! দাঁতে দাঁত চেপে নিম্ন আওয়াজে বললেন,,
“আস্তে কথা বল আস্তে!”
“আস্তে কথা বলব কেন?”

“দেখছিস না পেছনে ঐ হ্যাংলা মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে?”
“মেয়েটি কে?”
“পরে বলছি। আগে বল, রোজ হঠাৎ তোকে পাঠাতে গেল কেন?”
ছেলেটি লাগামহীন গলায় বলল,,

“কেন আবার? তুই সবসময় ঘুম থেকে উঠতে দেরি করিস তাই! সবসময় রোজকেই তোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাই এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হলো!”

বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না এই রোজই হলো নূর ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড! আজ হয়তো তাদের দেখা করার কথা! আর সেই বিষয়টিকেই এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নূর ভাইয়া নিচু গলায় কথা বলছেন! ভয়ে ঘাবড়ে আছেন! হয়তো ভাবছেন আমি কিছু শুনে ফেলব।

খালামনিকে সব বলে দিব! আমিও কিন্তু কম যাই না! ভীতু মানুষদের ভয় দেখাতে এক পৈশাচিক আনন্দ পাই আমি। তাদের দুর্বল জায়গা নিয়ে খেলতেও বেশ পছন্দ করি! এবার কেউ যদি বলে এটা আমার খারাপ স্বভাব। হ্যাঁ, তো আমি খারাপ! পাছে লোকজনের কটু কথার চুল পরিমান ধাঁর ধারি না আমি!

তাছাড়া একটু আগেই উনি আমাকে হ্যাংলা বলে অ্যাখায়িত করেছেন। তো এবার তো আরও বেশি বেশি করে হ্যাংলামিগিরি দেখাতে হবে! শীঘ্রই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে তাদের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ঠোঁট চেপে হেসে অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নূর ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“তো ভাইয়া, রোজ বুঝি আপনার গার্লফ্রেন্ড? তার সাথেই আজ আপনার দেখা করার কথা?”
ভড়কে উঠলেন নূর ভাইয়া! ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমতা আমতা গলায় বললেন,,
“কেকেকে রোজ? কাকার সাথে দেদেখা করার কথা?”

সামনে থাকা ছেলেটি ভীষণ অবাক হয়ে নূর ভাইয়ার মুখ থেকে কথা টেনে নিলেন! কোমড়ে দু’হাত রেখে উনি ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে নূর ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“রোজ কে মানে? তুই চিনিস না রোজকে?”
শুকনো ঢোক গিলে নূর ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন। গলা খাঁকিয়ে ছেলেটির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে তেজী গলায় বললেন,,

“এই তুমি এখানে কী করছ হ্যাঁ? যাও নিজের রুমে যাও। দেখছ না? এখানে আমি এবং আমার ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছি? গুরুজনদের মাঝখানে তোমার কী হ্যাঁ?”
ভ্রু যুগল কুঁচকে আমি রাগে ফোঁস করে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সঙ্গে সঙ্গেই উনি প্রচুর ক্ষেপে বললেন,,
“ফোঁস করে লাভ নেই। যাও নিজের রুমে যাও!”

“ওকে। তাহলে আমিও এখন খালামনির রুমে যাচ্ছি! খালামনির সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে৷ যা এখন না বললেই নয়!”
মিটিমিটি হেসে আমি পিছু ঘুরতেই নূর ভাইয়া দৌঁড়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়লেন! কোমড়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে কপাল ঘঁষতে আরম্ভ করলেন!

রক্তিম মুখের আদল দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচণ্ড রেগে গেছেন উনি! কিন্তু এই মুহূর্তে কী করতে পারি আমি? আমার যে লোকজনদের রাগাতে খুব ভালো লাগে! তাদের জ্বালাতেও প্রচুর আনন্দ পাই। কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলেন নূর ভাইয়া। রাগকে শান্ত করার মিথ্যে ভঙ্গি নিয়ে আমার দিকে খানিক ঝুঁকে এলেন। স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“কী চাও তুমি আমার কাছ থেকে বলো? কী করলে তুমি আমার মা’কে কিছু বলবে না?”
“আমি যা চাই তা আপনি রাখবেন তো?”
“কী চাও বলো?”

“আমি যদি বলি আপনি আজ কোথাও যাবেন না তবে?”
“হোয়াট? আমি আজ কোথাও যাব না মানে?”
“যাবেন না মানে আজ আপনি বাড়ি থেকে কোথাও বের হবেন না! আজ আমি আপনার সাথে পুরো ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখতে চাই!”

“আর ইউ ক্রেজি চাঁদ? ইউ নো হোয়াট? আজ আমাদের রিলেশনশিপের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে? আজ আমার লাইফের সবচেয়ে স্পেশাল একটা দিন! আর তুমি বলছ আজ আমাকে বের না হতে?
“বের হওয়াটা কী খুব জরুরি নূর ভাইয়া?”

রাগ শান্ত হয়ে এলো নূর ভাইয়ার! চোখে-মুখে প্রখর আনন্দের ছাপ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ দিনটার জন্য উনি বেশ এক্সাইটেড। যেকোনো প্রকারেই হোক আজ উনাকে বের হতেই হবে। কারো বাঁধা উনি মানবেন না আজ। কিছু ভেবে মৃদু হাসলেন উনি। প্রত্যত্তুরে বললেন,,

“হ্যাঁ! ভীষণ জরুরি। আজ আমাকে যেতেই হবে। যেতে হবে মানে যেতেই হবে!”
মায়া জন্ম নিলো আমার! এমন ভালোবাসা দেখে কার-ই বা মায়া জন্মাবে না? আর রাগাতে ইচ্ছে হলো না লোকটিকে! মন থেকে তাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হলো৷ গলা খাঁকিয়ে নিলাম আমি। শান্ত গলায় শুধালাম,,

“ফিরবেন কখন?”
“সন্ধ্যা তো হবেই।”
তৎক্ষনাৎ আমি আবদার সূচক গলায় বললাম,,
“তাহলে সন্ধ্যার পর আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন প্লিজ?”
তেজী শ্বাস ছাড়লেন নূর ভাইয়া! বিরক্তিমাখা গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

“ওকে। তবে শর্ত আছে।”
“আমি জানি কী শর্ত! ট্রাস্ট মি, খালামনিকে আমি কিছু বলব না। ঘুরে আসুন।”
নূর ভাইয়ার পাশ কাটিয়ে আমি ডাইনিং রুমের দিকে অগ্রসর হলাম! ইতোমধ্যেই নূর ভাইয়ার বন্ধু উত্তেজিত গলায় নূর ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“এই নূর তুই কিন্তু মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলি না!”
নূর ভাইয়া কিছু বলার পূর্বেই আমি সৌজ্যনতার খাতিরে ছেলেটির মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ম্লান হেসে প্রত্যত্তুরে বললাম,,
“আমি চাঁদ। নূর ভাইয়ার কাজিন। আই মিন, খালাতো বোন। আর আপনি?”

ছেলেটি মৃদু হাসল! শার্টের কলার উঁচিয়ে আমার দিকে ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলো। উৎফুল্ল গলায় বলল,,
“আমি সাদমান। নূরের বেস্ট ফ্রেন্ড। পরিচিত হয়ে ভীষণ ভালো লাগল। আর একটা কথা৷ আপনার মতো, আপনার নামটাও কিন্তু ভীষণ মিষ্টি!”
“থ্যাংকস ভাইয়া।”

ছেলেটি উনার বাড়িয়ে রাখা হাতটির দিকে ইঙ্গিত করে বাঁকা হেসে বললেন,,
“আগে কখনো এই বাড়িতে দেখি নি তোমাকে! এই প্রথম এলে বুঝি এই বাড়িতে?”
“জি। এই প্রথমই এই বাড়িতে আসা।”

জোরপূর্বক হেসে আমি ছেলেটির বাড়িয়ে রাখা হাতটির দিকে তাকালাম! দু’টানায় ভুগছিলাম ছেলেটির সাথে হেন্ডশেইক করব কি-না! হঠাৎ করে অপরিচিত কারো সঙ্গে হেন্ডশেইক করা যায় নাকি? এর মধ্যেই নূর ভাইয়া আমাদের দিকে হেঁটে এলেন! অপ্রত্যাশিতভাবেই উনি সাদমান ভাইয়ার হাতটি আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন! স্মিত হেসে সাদমান ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে ডাইনিং রুমের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন,,

“থাক না সাদমান। চাঁদ যেহেতু হেন্ডশেইক করতে চাইছে না তো ছেড়ে দে। তাছাড়া এখন আমাদের হাতে একদদদম সময় নেই। ব্রেকফাস্ট করেই আমাদের দৌঁড়াতে হবে। তাছাড়া এই পাঁজি মেয়েটার সাথে হেন্ডশেইক করার মতোও কিছু নেই!”
সাদমান ভাইয়া এখনও ঘাড় ঘুরিয়ে সম্মোহিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছেন!

আমি বড্ড অদ্ভুত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাচ্ছি। চেনা নেই জানা নেই প্রথম পরিচয়ে কেউ এতটা বেহায়া হতে পারে? এর মধ্যেই ডাইনিং রুম থেকে খালামনি এবং আপুর ডাক পড়ল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সামনে মন্থর গতিতে হাঁটতে থাকা নূর ভাইয়া এবং সাদমান ভাইয়াকে ঠেলে আমি এক ছুটে ডাইনিং রুমের দিকে রওনা হলাম!

দু’জনকে পাশ থেকে এমন ধাক্কা দিয়েছি যে দু’জনই জায়গা থেকে সরে অনেকখানি দূরে ছিটকে পড়েছে! দু’জনই বেকুব ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাতে বাধ্য হচ্ছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমি বাঁকা হেসে একটু পিছু ঘুরেও তাকালাম! সাদমান ভাইয়া তাজ্জব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে নূর ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন! ভেতরে ভেতরে যে আমাকে শাসাচ্ছেন বেশ বুঝতে পারছি আমি! এদিকে আমিও যেতে যেতে ভেংচি কেটে নূর ভাইয়াকে বললাম,,

“সন্ধ্যার আগে যদি বাসায় ফিরে না আসেন না? তবে কিন্তু আমি খালামনিকে সব বলে দিব!”
পিছু ফিরে আর তাকালাম না! মূলত সাহস পাচ্ছিলাম না তাকানোর। তবে কারোর হাসির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি আমি। সেই হাসি সাদমান ভাইয়ার বেশ বুঝতে পেরেছি আমি!

এক দৌঁড়ে সোজা আমি ডাইনিং রুমে ঢুকে পড়লাম। খাবার টেবিলে আগে থেকেই বসে আছেন আংকেল, নীড় ভাইয়া, আপু এবং খালামনি। সবাই খাবার সামনে রেখে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। খাবার টেবিলের কাছে আমাকে দেখামাত্রই আংকেল মৃদু হেসে বললেন,,

“গুড মর্ণিং চাঁদ।”
আমিও মিষ্টি হেসে জবাবে বললাম,,
“গুড মর্ণিং আংকেল।”

আপু এবং খালামনি আমাকে ইশারা করে বললেন তাদের মাঝখানের চেয়ারটিতে বসতে। আমিও তাদের কথা মতো চেয়ারটির দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার পিছু পিছু নূর ভাইয়া এবং সাদমান ভাইয়াও খাবার টেবিলে চলে এলেন। সাদমান ভাইয়াকে দেখা মাত্রই আংকেল, খালামনি এবং নীড় ভাইয়া ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন। নীড় ভাইয়া জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে সাদমান ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“হেই সাদমান? কখন এলি?”
“এই তো একটু আগে ভাইয়া।”
“কখন এলি? দেখলাম না যে? আমরা তো এখানেই ছিলাম।”
“তোমরা তখন নিউজ পেপার পড়ছিলে ভাইয়া। তাই হয়তো খেয়াল করো নি।”

“ওহ্ আই সি। তা আজ এত সকাল সকাল এই বাড়িতে? কোনো বিশেষ কাজ আছে নাকি দুজনের?”
তাৎক্ষণিক খালামনি এবং আংকেল সন্দেহের দৃষ্টিতে সাদমান ভাইয়ার দিকে তাকালেন! খালামনি তো সাথে সাথেই সন্দিহান গলায় সাদমান ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“হ্যাঁ তাই তো! আজ হঠাৎ তুই এত সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে? নূরকেও দেখলাম আজ মার-ধরের আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে! শাওয়ার টাওয়ার নিয়ে একদম ফিটফাট। ব্যাপারটা কী বল তো?”
সাদমান ভাইয়া কনফিউজড হয়ে গেলেন! অস্থির দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালেন। কাঠ কাঠ গলায় মুখ খুলে কিছু বলার পূর্বেই নূর ভাইয়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমতা আমতা করে বললেন,,

“হ্যাঁ আছে তো! আজ ভার্সিটিতে বিশাশাশাল বড় এক প্রোগ্রাম আছে। ঐ প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করার জন্যই আমরা আজ সকাল সকাল ওঠে গেছি!”

খালামনি খুব সহজেই এই মিথ্যাবাদীর কথা বিশ্বাস করে নিলেন! মৃদু হেসে তাদের দুজনকেই খেতে বসতে বললেন। অনুমতি পেয়ে দু’জনই খুব তাড়াহুড়ো করে চেয়ার টেনে বসে পড়ল! গপাগপ পাউরুটির পিসে বাইট বসাতে লাগল। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দু’জন বেশ তাড়ায় আছে।

কোনো রকমে এই বিরূপ পরিস্থিতি থেকে বের হতে পরলেই তারা যেন বাঁচে। তাদের দু’জনের কান্ড দেখে আমি ক্রুর হাসছি! কেন জানি না তাদের দু’জনকে আবারও ফাঁসাতে ইচ্ছে করছে আমার! তাছাড়া সমগ্র ডাইনিং রুম জুড়ে এখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।

যা আমার মোটেও ভালো লাগছে না! মহল গরম করে তুলতে হবে। সবাইকে এন্টারটেইনমেন্ট দিতে হবে। আমি মনে করি মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের-ই উচিৎ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপভোগ করার! বেঁচে থাকার প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি সময়কে উচ্ছ্বাসের সাথে মাতিয়ে তোলার।

সর্বত্র খুশি ছড়িয়ে দেওয়ার। মৃত্যুর আগ অবধি নিজেদের ভালো রাখার জন্য জীবন থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ খুঁজে নেওয়ার! যা আমরা অনেকেই করি না! অবলীলায়, অলসতায়, অবসন্নতায় সময় পাড় করে দেই! মনে হয় যেন সময় পেরিয়ে গেলেই আমরা বেঁচে যাই।

মাথায় জলদি দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে আমি আপুর পাশের চেয়ারটি টেনে বসে পড়লাম। সেদ্ধ ডিম মুখে তুলে জেগেন্সের পকেট থেকে আমার সেলফোনটি হাতে তুলে নিলাম! ফোনটিতে কোনো রিং না আসা সত্ত্বেও আমি নাটক করে ফোনটি কানে তুলে শান্ত গলায় বললাম,,

“হ্যাঁ জায়মা বল? কেমন আছিস?”
ডাইনিং টেবিলে থাকা সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে! আমি নিশ্চিন্তে পাউরুটির পিসে বাইট বসিয়ে অস্পষ্ট গলায় আবারও বললাম,,

“আনিশার ফোন হারিয়ে গেছে তো আমি কী করতে পারি আজব! আমাকে বলছিস কেন? আমি তো আছি ঢাকায়। কুমিল্লার খবর কীভাবে জানব?”

মুহূর্তের মধ্যেই আমি খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলাম! নাটক করে বিস্মিত গলায় বলতে আরম্ভ করলাম,,
“কী বলছিস কী এসব তুই? আনিশা তার নতুন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার জন্য শাওয়ার নিতে যাওয়ার সময়ও হাতে করে ফোন নিয়ে গিয়েছিল? সেই ফোনে কমোডে ভেতর পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে? নতুন নতুন প্রেম হয়েছে ওদের তাই না? কিন্তু শাওয়ার নিতে যাওয়ার সময় কে হাতে করে ফোন নিয়ে যায় ভাই?”

নূর ভাইয়া পাউরুটি অর্ধেক মুখে নিয়ে অস্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন! হয়তো বুঝতে পারছেন আমি উনাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছি! তবে এটা বুঝতে পারছেন না, উনাকে আজ আমি কিছুতেই ফাঁসতে দিব না! উনাকে দেওয়া কথা আমি রাখব। যেভাবেই হোক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলব। আপাতত একটু মজা করে নেই! একটু পরে লোকটা চলেই যাবে। সারাদিন আর খুঁজে পাব কই?

ডাইনিং টেবিলের সবাই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তবে আমি কদাচিৎ হেসে নূর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৪

“হ্যাঁ, তবে একজন আছে যে শাওয়ার নিতে যাওয়ার সময়ও হাতে করে ফোন নিয়ে যায়। সে হলো আমাদের নূর ভাইয়া! তবে নূর ভাইয়ার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই! থাকলে তো খালামনি এই ব্যাপারে জানত। তবে নূর ভাইয়া কেন ওয়াশরুমে ফোন নিয়ে গেল?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬