প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৯

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৯
নিশাত জাহান নিশি

“তোমার মতো ভাইয়া পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার জানো? কারণ, তুমি আমাকে খুব বুঝো! ছোটবেলা থেকে আমাকে পরিচালনা করে আসছ। আমার সমস্ত অবাধ্যতার কারণগুলো খুঁজে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছ। আমার সব কথা বা দুষ্টুমিগুলো তুমি সিরিয়াসলি কখন-ই নিতে পারো না।

সবসময় আমাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে আসছ। বাকিরা এত আপন না ভাইয়া। আমার দুষ্টুমিও তারা বুঝে না! আমার সব কথাই তারা সিরিয়াসলি নেয়! ভাবে আমি খুব খারাপ! আমি তাদের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করি। অথচ ওরা এটা জানে না আমি একটা সম্পর্ক জোড়ার জন্য ঠিক কতখানি সেক্রিফাউজ করতে পারি। আমার ফ্রেন্ডকে পর্যন্ত বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলাম!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়মন হকচকিয়ে উঠল! সন্দিহান গলায় চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“তার মানে তুই-ই সিনথিয়াকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলি চাঁদ?

“করেছিলাম ভাইয়া! তবে বুঝতে পারি নি সিনথিয়ার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার আঘাতটা আন্টি এত সহজে মেনে নিতে পারবেন না! স্ট্রোক করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে যাবেন। আমি যা করেছিলাম তখন সিনথিয়ার ভালোর কথা ভেবেই করেছিলাম ভাইয়া। কীভাবে পারতাম আমি বলো?

দুটো ভালোবাসার মানুষকে এভাবে আলাদা করে দিতে? আমার চোখের সামনে বেড়ে ওঠা তাদের এতদিনকারর ভালোবাসাকে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে ভেঙে দিতে? খুব বিবেকে বাঁধছিল আমার। তাই আমি বাধ্য হয়ে তাদের দুজনকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলাম।”

“আমি ঠিক জানতাম এর পেছনে তোর হাত নিশ্চয়ই আছে! তোকে চিনতে আমার কখনও ভুল হতে পারে না। আর ঠিক একারণেই তোকে আমি জোরাজুরি করে ঢাকা পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলাম। কুমিল্লায় থাকলে এতদিনে বিষয়টা পুরো এলাকায় জানাজানি হয়ে যেতো। তখন কী অবস্থা হতো তোর বল তো?”

“যাই হয়ে যাক ভাইয়া। আব্বু-আম্মু যেন এই বিষয়ে কিছু না জানে। তুমি প্লিজ আমাদের ফ্যামিলির কাউকে কিছু জানতে দিও না। এমনকি আমার সোহানী আপুকেও না।”

এর মধ্যেই সোহানী বেডরুমে প্রবেশ করল! চোখ বুলিয়ে রুমের কোথাও চাঁদনীকে দেখতে না পেয়ে সে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো। অমনি বেলকনির কাছ থেকে গুনগুন আওয়াজ ভেসে এলো সোহানীর কানে। সেই আওয়াজকে অনুসরণ করে সোহানী বেলকনির ধারে গেল! এদিক ওদিক খেয়াল নেই চাঁদের। সে ব্যস্ত আয়মনের সাথে কথা বলতে। সোহানী পেছন থেকে চাঁদকে ডাকতে গেলেই চাঁদ মিনমিনে গলায় আয়মনকে বলল,,

“আমি জানি ভাইয়া তুমি কখনও কাউকে কিছু বলবে না। সিনথিয়া এখন কোথায় আছে আমি জানি ভাইয়া! তবে তার বর্তমান ঠিকানা আমি এখন কাউকে বলব না।”
মুহূর্তের মধ্যেই সোহানী অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল! দাঁতে দাঁত চেপে পেছন থেকে চাঁদের চুলের মুঠি চেপে ধরল! তেজী গলায় বলল,,

“কী বললি তুই? তুই জানিস সিনথিয়া কোথায়?”
চাঁদের হাতে থাকা ফোনটি মাটিতে খসে পড়ল! চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে সে ব্যথায় আর্তনাদ করে বলল,,
“আপু আমি জানি না সিনথিয়া কোথায়!”

সোহানী চাঁদের কথা কানে তুলল না! চুলের মুঠি ছেড়ে সে একের পর এক চাঁদের গালে এলোপাথারি চড় বসাতে লাগল! চড়ের দাগ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে লাগল। অঢেল রাগে ফোঁস করে সোহানী বলল,,

“মিথ্যে বলছিস তুই আমার সাথে না? মিথ্যে বলছিস? আর কত আমাদের মানসম্মান ডুবাবি তুই? আর কত তোর এসব বেয়াদবির জন্য, তোর অবাধ্যতার জন্য, তোর দুরন্তপনার জন্য আমাদের কথা শুনতে হবে বল? আর কত?”

মুখ বুজে মার হজম করছে চাঁদ! প্রথমবারের ন্যায় এবার আর মুখ খুলে চিৎকার করার সাহস খুঁজে পাচ্ছে না সে। অন্যদিকে সোহানীর রাগ যেন কিছুতেই কমছে না! রাগের পরিমান আরও পালাক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশের রুমে নূর রোজের সাথে কথা বলছিল।

সোহানীর গোঙানির শব্দ পেয়ে সে ফোন রেখে দৌঁড়ে এলো চাঁদ এবং সোহানীর বেডরুমে! বেলকনির ধারে উদগ্রীব দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই সে সোহানী এবং চাঁদকে দেখতে পেল! উদগ্রীব দৃষ্টি যেন তার মুহূর্তের মধ্যেই হতবিহ্বল হয়ে উঠল! আর এক মুহূর্তও নষ্ট না করে নূর ছুটে গেল সোহানী এবং চাঁদের কাছে। পরিস্থিতি না বুঝেই সে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই পেছন থেকে সোহানীর হাত চেপে ধরল! বিস্মিত গলায় সোহানীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হয়েছে কী আপু? আপনি এত বড় একটা মেয়েকে এভাবে মারধর করছেন কেন?”
সোহানী পিছু ঘুরে তাকালো। নূরকে দেখামাত্রই সে উত্তেজিত হয়ে উঠল। বাজখাঁই গলায় বলল,,

“এই মেয়ের মতো অসভ্য, বেয়াদব, নির্লজ্জ মেয়েদের ঠিক এভাবেই মারধর করতে হয় নূর! এত বড় একটা মেয়ে অথচ কত বড় জঘন্য একটা কাজ করেছে তুমি শুনলে হয়তো তুমিও তাকে মারতে আসবে নূর! দিন দিন এই মেয়ে অসম্ভব রকম খারাপ হয়ে উঠছে। কোনো কাজ করার আগে ভেবে-চিন্তে করছে না। নিজের মন যা চাইছে ঠিক তাই করছে। নিজে তো বদনাম হচ্ছে হচ্ছে সাথে আমাদের পরিবারেরও বদনাম করে ছাড়ছে!”

চাঁদ মাথা নুইয়ে হেচকি তুলে কাঁদছে। নাকের জলে চোখের জলে ভেসে একাকার। চাঁদের কান্না দেখে সোহানীর রাগটা যেন আরও বেড়ে গেল! তাই সে প্রচণ্ড ক্ষেপে চাঁদের গালে আরও একটি চড়ে বসানোর পূর্বেই নূর পুনরায় সোহানীর হাতটি চেপে ধরল। উত্তেজিত গলায় বলল,,

“এবার কিন্তু আপনি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছেন আপু! এতক্ষণ ধরে এত মারধর করার পরেও আপনি আবার ওর গাঁয়ে হাত তুলতে যাচ্ছেন? আমি কিন্তু আপনাকে এতটা নির্দয় ভাবি নি আপু।”

সোহানীর হাতটি ছেড়ে নূর অবিশ্বাস্যভাবেই চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়াল! তব্ধ শ্বাস ছেড়ে অজান্তেই চাঁদের ডান হাতটি চেপে ধরল! কোনো রকম কথাবার্তা ছাড়াই সে চাঁদকে টানতে টানতে এনে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। গালে লাল হয়ে থাকা চড়ের দাগগুলোর দিকে মর্মাহত দৃষ্টিতে তাকালো। তাৎক্ষণিক প্যান্টের পকেট থেকে সে একটি টিস্যুর প্যাকেট বের করল! চাঁদের মুখের কাছে টিস্যুর প্যাকেটটি ধরে মলিন গলায় বলল,,

“মুখটা মুছে নাও।”
চাঁদ হেচকি তুলে কেঁদে নূরের দিকে তাকালো। গোঙাতে গোঙাতে ক্ষীণ গলায় বলল,,
“আপনি আমার রুমে কী করছেন হ্যাঁ? আপনি আমার রুমে কী করছেন? দয়া করতে এসেছেন আমাকে তাই না? বুঝাতে এসেছেন আপনি খুব দয়ালু, মহান?”

নূর ভড়কে উঠল! ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকালো। চাঁদের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“এভাবে মার খাওয়ার পরেও গলায় এত জোর কোথা থেকে আসে তোমার হ্যাঁ? অহেতুক এভাবে ঝগড়া করার পাওয়ার কোথায় পাও তুমি? এই? তুমি কী ছোটবেলা থেকেই এমন ঝগড়ুটে স্বভাবের?”

“হ্যাঁ আমি ঝগড়ুটে স্বভাবের। তো কী হয়েছে হ্যাঁ? কারো জন্য আমি নিজের স্বভাব বদলাতে পারব না। আমি জানি আমি খুব উচ্ছৃঙ্খল, ঝগড়ুটে, বেয়াদব, বদমেজাজি আপনার দৃষ্টিতে বিরক্তিকরও। আমি এ ও জানি আমার মধ্যে সামান্যতম গুনের ছিঁটেফোঁটাও নেই। তো কী হয়েছে হ্যাঁ? আমি মানুষ না? আমার কী অনুভূতি নেই? আমি কী এতটাই ফেলনার বস্তু?”
নূর তাজ্জব বনে গেল! চাঁদ কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেল সেটাই বুঝতে পারছে না নূর। এরমধ্যেই চাঁদ আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“এখন তো আমি আপনাকে চিনে গেছি। এখন থেকে আর আপনার সাথে মিশব না, কথা বলব না, আপনার আশেপাশেও ঘেঁষব না, আপনাকে অযথা বিরক্তও করব না। আর একটা কথা। আমি মার খেয়েছি তো কী হয়েছে? আমার আপু আমাকে মেরেছে। অন্যায় করেছি বলেই আমাকে মেরেছে।

এতে আপনার কী হ্যাঁ? মজা নিতে এসেছেন আপনি এখানে তাই না? দেখতে এসেছেন আপনার চিরশত্রু কীভাবে মার খায়? শান্তি হয়েছেন তো? খুশি হয়েছেন? এবার যান। দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন। আল্লাহ্’র কাছে দু’হাত তুলে বলুন আপনাকে বিরক্ত করা মেয়েটি যেন আজ রাতেই ম’রে যায়! তাহলে আপনিও শান্তি। আমার পরিবারের সবাইও শান্তি পাবে!”

ঠাস করে চাঁদের গালে আরও একটি চড় পড়ল! সোহানী আবারও চাঁদের গালে চড় মেরেছে। চাঁদ চোখ উঠিয়ে সামনে তাকাতেই সোহানী কেঁদে উঠল! নূরকে ঠেলে সরিয়ে তাৎক্ষণিক চাঁদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
“আর কখনও এভাবে ম’রে যাওয়ার কথা বলবি না তুই।

একটা মাত্র বোন আমার। আমি কী এতক্ষণ সাধে তোকে মেরেছি? কেন করিস এমন অবাধ্যতা হ্যাঁ? কেন আমাদের কারোর কথা শুনিস না তুই? কেন আগ বাড়িয়ে সবার উপকার করতে যাস বল? জানিস না লোকজনের উপকার করতে নেই। তারা তোর সেই উপকারের মূল্য দিবে না।

উল্টো সুযোগ পেলে তোকে ফাঁসিয়ে দিয়ে যাবে। তুই দেখে নিস সিনথিয়া তোকে ফাঁসাবে! এই মেয়ে ফিরে এসে ঠিক তোকে ফাঁসাবে। আমি তো চিনি সিনথিয়াকে, খুব ভালো করেই চিনি। বড়লোক বয়ফ্রেন্ড পেয়ে সহ্য হয় নি। অকারণেই তাকে নিয়ে পালিয়েছে। কয়েকদিন পরে যখন ছেলের ফ্যামিলি চাপ দিতে শুরু করবে তখন সে ফিরে আসতে বাধ্য হবে! আর ফিরে এসেই তোকে জঘন্যভাবে ফাঁসাবে।”

নূর বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দু’বোনের কার্যকলাপ কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তাই উৎসুক গলায় সে সোহানীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আপু আসল কাহিনীটা কী একটু বলবেন প্লিজ? আমি আপনাদের কোনো কথাই বুঝতে পারছি না।”
চাঁদকে ছেড়ে দাঁড়ালো সোহানী। চোখের জল মুছে নূরের দিকে তাকালো। মুখ খুলে সোহানী যেই না নূরকে কিছু বলতে যাবে অমনি চাঁদ সোহানীকে থামিয়ে দিলো। নাক টেনে কেঁদে বলল,,

“আপু প্লিজ। নূর ভাইয়াকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যৎে আমার উপর কোনো বিপদ আপদ এলে তখন না হয় ব্যাপারটা দেখা যাবে! এখন প্লিজ এই বিষয়টা নিয়ে আর কথা বাড়িও না। আর দয়া করে আম্মু-আব্বুকে এখনি কিছু বলো না! সময় হলে আমি নিজেই আম্মু-আব্বুকে সব খুলে বলব।”

সোহানীকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না চাঁদ। সোজা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নূরকে উপেক্ষা করে মাথা নুইয়ে তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। নূরও বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। নিজের রুমে ঢুকে সোজা দরজা আটকে দিলো।

এই রাতে চাঁদ অভুক্ত অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ল। সোহানী এবং সাবরিনা আবরার হাজার জোর করেও চাঁদকে কিছু খাওয়াতে পারল না। চাঁদ কিছু খায় নি বলে সোহানী নিজেও কিছু খেলো না! সারারাত চাঁদের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে সেও ভোররাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ল। চাঁদকে মারধর করার পর সোহানীও অনেক কেঁদেছে। সারারাত ধরে চাঁদের গালে এবং সমস্ত মুখে বরফ ঘঁষে দিয়েছে। তাই চড়ের দাগগুলো ক্রমশ কমে এসেছে।

চারদিকে ফজরের আযান পড়তেই চাঁদের ঘুম ভেঙে গেল। কপাল কুঁচকে সে অর্ধখোলা চোখে আশপাশ তাকাতেই দেখল সোহানী তার মাথার পাশে বাঁকা হয়ে শুয়ে আছে। ঘুম থেকে ওঠার পরই নিশ্চয়ই তার ঘাড় ব্যথা শুরু হবে। যেভাবে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে শুয়েছে ঘাড় একদম লক হয়ে গেছে হয়তো।

চাঁদ হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল। হালকাভাবে সোহানীর শরীরে হাত রাখল। আস্তে ধীরে তাকে সোজা করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। সোহানী আরাম পেয়ে নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ল। চাঁদ ম্লান হেসে সোহানীর দিকে তাকালো। মিনমিনিয়ে বলল,,

“আমি কাল ঠিক-ই বলেছিলাম আপু। রক্তের টান আলাদা হয়! আমাকে মারধর করে তুমিও শান্তি পাও নি। আমার কষ্টে হয়তো আমার থেকে তুমিই বেশি কেঁদেছ!”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল চাঁদ। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ শেষে মাথায় ঘোমটা টেনে সে দুরুদ পড়তে পড়তে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।

ভোরের মিষ্টি বাতাস গাঁ ছুঁয়ে দিতেই চাঁদ মাথা থেকে ঘোমটাটি সরিয়ে দিলো! প্রাণোচ্ছ্বল বাতাসে গাঁ ভাসিয়ে দিলো। চোখ বুজে মুখটা উঁচু করে সে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল। কিছুক্ষণ এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার পর মন-মর্জি শান্ত হয়ে উঠতেই চাঁদ মিষ্টি হাসল। এতক্ষণে চারিদিকে ভোরের আভা ফুটতে শুরু করেছে। প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সাজতে লাগল।

আশপাশ থেকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। এর মধ্যেই চাঁদের নজর গেল বাড়ির মেইন গেইটের দিকে। নীড় মাত্র জগিং করতে বের হচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব তাড়ায় আছে সে। চাঁদ আর এক মিনিটও ব্যয় করল না। পেছন থেকে চিৎকার করে বলল,,
“নীড় ভাইয়া শুনছেন?”

নীড় পিছু ফিরে তাকালো। তার দূরদৃষ্টি চাঁদের রুমের বেলকনির দিকে আটকালো। চাঁদ মৃদু হাসল। প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আমাকেও আপনার সাথে নিয়ে যাবেন ভাইয়া?”
নীড় মলিন হাসল। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,,
“চলে এসো।”

খুশি হয়ে গেল চাঁদ! দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মাথায় ঘোমটা টেনে নূরের রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে গেল! চাঁদ হকচকিয়ে উঠল। মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালো। অবিশ্বাস্যভাবে জগিং স্যুটে নূরকে দেখা মাত্রই মুখে সে হাত দিয়ে বলল,,

“আপনি? এত সকালে?”
নূর ঢুলুঢুলু দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ঘুম জড়ানো গলায় বলল,,
“হ্যাঁ আমি৷ তো?”
“এত সকালে? আজও কী দেখা করার কথা?”

“এখন থেকে আমি রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠব। ডেইলি রুটিন ফলো করব। রুটিন অনুযায়ী এখন আমার জগিং করার ফিক্সড টাইম। তাই এখন আমি জগিং করতে যাব ওকে?”
“আমাকে এসব শুনিয়ে লাভ কী? যান। নিজের কাজে যান। সকাল সকাল মুডটাই নষ্ট করে দিলো! আপনার জন্য এখন আমারও বাইরে যাওয়া পণ্ড হয়ে গেল!”

পূর্ণদৃষ্টিতে নূর এবার চাঁদের দিকে তাকালো। ভ্রু যুগল উঁচু করে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“মানে?”
“মানে আমি জগিংয়ে যাচ্ছিলাম।”
“তো মানা করল কে?”
চাঁদ রাগ দেখিয়ে বলল,,

“আপনি!”
“আজব! আমি কখন নিষেধ করলাম?”
“আমি গতকাল রাতে বলেছিলাম না? আপনার সাথে মিশব না। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমি এখন কোথাও আপনার সাথে যেতে পারব না!”
নূর চমকালো। তৎপর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“হোয়াট? আর ইউ সিরিয়াস চাঁদ?”

চাঁদ ভাব নিলো। বুকের উপর দু’হাত গুজে দাঁড়ালো। মুখটা বাঁকিয়ে বলল,,
“টু সিরিয়াস।”
নূর কিয়ৎক্ষণ মৌণ রইল। এক দৃষ্টিতে চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল! চাঁদ অবাক হলো। প্রকান্ড দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হলো? এভাবে কী দেখছেন?”
নূর মাথা ঝাঁকালো। আচ্ছন্ন গলায় বলল,,
“তোমাকে রোজ ভেবেছিলাম!”
“এহ্হ্?”

“এহ্হ্ না হ্যাঁ। গালে বরফ ঘঁষো নি?”
“কেন বলুন তো?”
“গালে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে তাই বললাম!”
“আমার দিকে এত নজর দিতে হবে না আপনার।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৮

“আমি আর মানুষ পাই নি নজর দেওয়ার? আমার তো রোজ আছে। শুধু তার দিকেই নজর দিব। আর একটা কথা। আমি এখন ওর সাথে দেখা করার জন্যই জগিংয়ে যাচ্ছি। চাইলে তুমিও জয়েন করতে পারো।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১০