প্রেম পরিণয় পর্ব ৪

প্রেম পরিণয় পর্ব ৪
রাজশ্রী মজুমদার রাই

ওরা বেরিয়ে যেতেই অগ্নি মৃদু হাসলো, ফোনটা কার সেটা এতোখনে বুঝে গেছে, কিন্তু ফোন টা ওর রুমে কেন?? তাহলে কি পিচ্চি টা ওর রুমে গেছে কিন্তু কেন?? এসব ভাবছে অগ্নি
অভির ডাকে নিজের ভাবনা থেকে বের হলো,
অভি- কি বলবে বলছিলে দাদাই?
অগ্নি ফোনের কথাটা বলতে গিয়ে ও কিছু একটা ভেবে বললো না, দাদাইকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে অভি বললো

অভি- দাদাই,,, কি হলো?
অগ্নি- এভাবে কি তোর জীবন কাটবে?? পড়ালেখা শেষ করে বেকার বসে আছিস কেন??
অভি- তোমার কে বললো আমি বেকার বসে আছি, আমি তো চাকরি করছি।
অগ্নি – কি চাকরি করিস তুই??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অভি- এক পাগল প্রেমিকের প্রেয়সীকে দেখা রাখার চাকরি করছি।
অগ্নি- একদম বাজে কথা বলবি না, এভাবে জীবন চলে না, তোকে এবার নিজের জীবন টা গুছাতে হবে।
অভি- আমি তোমাকে আগেই বলেছি, তোমার জীবন গুছানো ছাড়া আমি কিছুই করবো না।
অগ্নি- পাগলামি করিস না, আর আমার জীবন গুছানোই আছে।

অভি- তাই, আমি কি বোঝাতে চাইছি সেটা নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারছো, দিয়া,,,,,
অগ্নি – তুই জানিস সেটা কখনোই সম্ভব না।
অভি- কেন সম্ভব না দাদাই?? সমস্যাটা কোথায়??
অগ্নি- সমস্যা হলো ও পিসিমনির মেয়ে।
অভি- তো।

অগ্নি- অবুঝের মতো কথা বলিস না অভি,, সমাজ কখনো মানবে না,, এটা পাপ।
অভি- এ আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে তুমি আদিম যুগের মানুষের মতো কথা বলছো, আর সমাজের কথা বলছো, তোমার খারাপ থাকাটা সমাজ দেখবে না,, তোমার কষ্ট টা ও সমাজ কিংবা সমাজের মানুষ দেখবে না, তাহলে তুমি কেন সমাজ নিয়ে ভাবছো। পাপ, সেটা তুমি প্রতিনিয়ত করছো, তীব্র ভালোবেসে ওকে কষ্ট দিচ্ছো, নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো।
একদমে কথাগুলো বলেই থামলো অভি, অগ্নি চুপ করে আছে, অভি আবার বললো

অভি- প্লিজ দাদাই তুমি সবকিছু বাদ দিয়ে নিজের কথা একটু ভাবো, দিয়া,,,,,
কথাটা শেষ করতে না দিয়েই অগ্নি বললো
অগ্নি- কি ভাববো আমি, এসব কথা যখন সবাই জানতে পারবে তখন কি হবে,ভাবতে পারছিস? দিয়াও তখন ভুল বুঝবে আমাকে।

অভি- ও তোমাকে ভুল বুঝবে?? তুমি হয়তো এখনো বুঝতে পারো নি ওকে। যদি কখনো বুঝতে পারো দিয়া তোমাকে অনুভব করছে তখন কি করবে??
অগ্নি চমকে তাকালো অভির দিকে, অভি হাসলো
অগ্নি- এটা কখনোই হবে না,, আর ও এখনো অনেক ছোট, যদি কিছু অনুভব করে তবে সেটা কিশোরী বয়সের আবেগ।

অগ্নি- দিয়া বয়সের ছোট হতে পারে,তবে আবেগি নাাা, যদি আমার বোনের অনুভূতি যদি সত্যি হয় সেদিন আর তুমি পার পাবে না। আমার বোনই তোমাকে ছাড়বে না।দরকার হলে যুদ্ধ করবে, তারপর ও নিজের ভালোবাসা ছাড়বে না।
বলেই অভি হনহন করে চলে গেছে, প্রচন্ড রেগে গেছে, অগ্নি এখনো ঠাঁই বসে আছে, ওর কানে শুধু একটা কথায় বাজছে, সত্যি যদি পিচ্চি টা ওকে অনুভব করে, আদৌও কি দিয়ার মনে কোন অনুভূতি আছে ওকে নিয়ে,,, অগ্নি আনমনে বলে

অগ্নি- ওর মনে আমার জন্য কোন অনুভূতি নেই, আমার ব্যবহারে ও কষ্ট পায়, সে কষ্ট থেকেই আমার জন্য মনে রাগ পুষে রেখেছে, রাগ থেকে শুধু ঘৃণার সৃষ্টি হবে, ভালোবাসা নাাা।
মন্দির থেকে এসে শান্তি দেবী খুব রেগে আছেন ছেলেদের উপর, বেলা সাড়ে বারোটা বাজে এখনো ওরা সকালের জলখাবার খায় নি, দুটোকেই ইচ্ছা মতো বকে এসে এখন খাবার দিচ্ছে টেবিলে, দিয়া গালে হাত দিয়ে বসে মামির রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখছে, প্লেট, বাটি, গ্লাস, জলের জগ সব ঠাস ঠাস শব্দ করে টেবিলের উপর রাখছে। এর মধ্যে অভি আর অগ্নি টেবিলে এসে বসেছে, অভি দিয়ার পাশেই চেয়ার টেনে বসলো আর অগ্নি বিপরীত পাশের চেয়ার টেনে বসলো, যার কারণে অগ্নি আর দিয়া মুখোমুখি। দিয়াকে এভাবে শান্তি দেবী দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভি বললো

অভি- এভাবে কি দেখছিস?
দিয়া- দেখছি, তোমাদের উপর রাগ টা এ জিনিসপত্র উপর দেখাছে মামি,, আহারে বেচারা জিনিসপত্র।
অভি- হুম দেখে শিখে রাখ, ভবিষ্যৎ তোরও কাজে লাগবে।
দিয়া- শিখে লাভ নেই, আমি আবার নিরীহদের উপর রাগ দেখায় না, মামির জায়গায় আমি হলে কি করতাম জানো,
অভি- না বললে জানবো কেম্নে??
দিয়া- জিনিসপত্রের উপর রাগ না দেখিয়ে যে দোষ করছে তার ওপর রাগ টা দেখাতাম,, এখন মামির কি করা উচিৎ জানো, ঠাস ঠাস শব্দ টা উনার হাত দিয়ে তোমাদের পিঠে করা।কিন্তু দুঃখ মামি ঠিক জায়গায় এপ্লাই করতে পারছে না।

দিয়া দুঃখী দুঃখী ফেস করে কথা টা বললো,, অভি ওর এমন কথা শুনে মিটমিট করে হাসছে, হেসেই বললো
অভি- আমাদের পিঠে ঠাস ঠাস পড়লে তো, তোর পিঠেও পড়বে,
দিয়া- কেন, আমি কি করেছি??
অভি- তুই ও তো জলখাবার খাস নি, তার উপর কাল রাতের খাবার ও না খেয়ে ঘুমিয়ছিস?
দিয়া – আমি তো উপোস করে মন্দিরে গিয়েছি, তাই সকালে খাওয়া হয় নি।
অভি- তা কি চাইলি ভগবানের কাছে??
দিয়া- সিক্রেট, বলা যাবে না।।।

অভি- আচ্ছা, আমি ও ভগবানকে বলে দিচ্ছি, হে ভগবান আমার বোনের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করো।
অভি কথা শুনে দিয়া অগ্নির দিকে তাকালো, ভগবানের কাছে তো অগ্নিকে চেয়েছে। অগ্নি চুপচাপ খাচ্ছে,, হঠাৎ করে দিয়ার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো, দিয়া ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো, কিছুখন তাকিয়ে থেকে অগ্নি দৃষ্টি সরিয়ে নিলো, কিন্তু দিয়া দৃষ্টি সরালো না, অগ্নি বুঝতে পারলো দিয়া এখনোও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, অগ্নি আর বসে থাকতে পারলো না, খাবার টা শেষ না করেই উঠে গেলে। অগ্নি যেতেই দিয়া বাঁকা হাসলো, আর অভি এতোখন সবই পর্যবেক্ষণ করেছে, অভি মনে মনে বললো,

অভি- কতো পালাবি দাদাই?
অগ্নি রুমে এসে ভাবতে লাগলো, নিজ মনেই বলতে লাগলো
অগ্নি – কি ছিলো ওর চাহনিতে, রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নাকি অন্য কিছু, না, না, তাহলে যে অনথ্যা হয়ে যাবে৷ প্লিজ পিচ্চি আমি যে পাপ করেছি সেটা তুই করিস না। প্লিজ,,,,,

ভালোবাসা কখনো কারো হাতে থাকে না, এটা সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। আর মন সে তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে বাইরে, আমরা চাইলেও মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। ১০ বছরে অগ্নি কম চেষ্টা করে নি দিয়াকে মনকে সরাতে, সমাজ, ধর্ম, পরিবার, সম্পর্ক সবকিছুই দোহাই দিয়ে মনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। আরো যতদিন যাচ্ছে ভালোবাসা ততোই বেড়ে যাচ্ছে, অগ্নির সর্বত্র জুড়েই দিয়ার বসবাস।

কাল রাতে শান্তি দেবী ছোট ভাইয়ের মেয়ে হয়েছে, সকাল সকাল আদিত্য বাবু তার স্ত্রী কে নিয়ে শশুড় বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন, অভিকে যেতে বললে, সে জানায় পরে যাবে আর অগ্নিকে শান্তি দেবী নিতে চান না কারণ উনার বাবার বাড়ি অনেক দূরে হওয়ায় আসা-যাওয়া দুই দিন লেগে যাবে। প্রথমে উনি যেতে চায় নি, দিয়া উনাকে আশ্বস্ত করে বললো

দিয়া- তুমি যাও মামি, তিনজনের রান্না আমি সামলে নিতে পারবে। চিন্তা করো না,,,
তিনি দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, মনে মনে তিনি দিয়ার মতোই রুপে লক্ষ্মী আর গুণে সরস্বতী একটা মেয়ে চান অগ্নির জন্য। তিনি ঠিক করলেন বাবার বাড়ি থেকে আসলে দিয়াকে নিয়েই অগ্নির জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।
দিয়া টেবিলে খাবার সাজিয়ে অনেকখন বসে আছে, কিন্তু দুই নবাবজাদার কোন খবর নেই,, দুজনে মনে হয় ঘুমাচ্ছে। সকাল সকাল মামা- মামি রওনা দিয়েছে, পৌঁছাতে কতোখন লাগবে কে জানি

দিয়া- ফোনটাও পায় নি, ফোনটা থাকলে তো একটা খবর নেওয়া যেতো।
সেদিন বাসায় এসে সব খুঁজেও দিয়া ওর ফোন টা পায় নি, পাবে কি করে ফোন তো অগ্নির কাছে, আর অগ্নির আসার পর থেকে ওর রুমে ও যাওয়া হয় নি।
দিয়া অভির রুমে গেলো, ওকে ডেকে তুলতে, যা ভেবেছিলো তাই, অভি ঘুমাছে। দিয়া বেডের পাশে দাঁড়িয়ে জোরে ডাক দিলো

দিয়া- দাদাভাইইইই
দিয়ার এমন ডাকে অভি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো
অভি- কি হয়েছে বোনু???
দিয়া- কয়টা বাজে দেখছো??
অভি- কয়টা বাজে এটা দেখার জন্য তুই আমার ঘুম ভাঙ্গালি, ওই যে ঘড়ি তুই দেখে নে কয়টা বাজে
বলেই অভি আবার শুয়ে গেলেই, দিয়া দ্বিগুণ জোরে ডেকে উঠলো
দিয়া- দাদাভাইইইইইইই

অভি- আবার কি হলো,এতো জোরে চিল্লাস কেন??
দিয়া- তো কি করবো, খিদে লাগছে আমার, সকালের খাবার টা কি দুপুরের খাবো??
অভি- তুই খেয়ে নে, আমি পরে খাবো,
দিয়া- নাহ্ একসাথে খাবো, উঠো তাড়াতাড়ি।
অভি- আচ্ছা ঠিক আছে, তুই যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
দিয়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অভি আবার ডাকলো

অভি- বোনু শোন,
দিয়া- বলো,
অভি- দাদাই খেয়েছে?
দিয়া- নাহ্
অভি-তাহলে যাওয়ার সময় দাদাইকেও ডেকে যাস।
দিয়া- এ্য, পারবো না আমি।
অভি- মনে হয় দাদাই ও ঘুমাছে, আচ্ছা ডাকতে হবে না, তুই শুধু দরজায় নক করেই চলে যাস। প্লিজ বোনু
দিয়া- ঠিক আছে।

বলেই অভি রুম থেকে বের হয়ে এলো, দিয়া ভাবছে বাইরে থেকেই নক করে চলে যাবে, নাকি একবার ভেতরে যাবে, মনে মনে ভাবলো
দিয়া- দাদাভাই তো বললো ঘুমাচ্ছে, একবার কি যাবে, ঘুমিয়ে থাকলে দেখে চলে আসবো, কিন্তু যদি জেগে থাকে, আরে ধুর, জেগে থাকলে কিছু একটা বলে দিবো।

এসব চিন্তা ভাবনা করেই মৃদু পায়ে অগ্নির রুমে ঢুকলো, দরজা লক করা ছিলো না, হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেছে। দিয়া রুমে ঢুকে দেখলো পুরো রুম খালি, নিজে নিজেই বললো
দিয়া- ওমা রুম খালি, ওই শয়তান টা কই, হাওয়া হয়ে গেলো নাকি।
তখনি ওয়াশরুম থেকে জলের শব্দ আসলো, তার মানে ওয়াশরুম আছে। দিয়া বেরিয়ে যাবে তখনি চোখ পড়লো বেড সাইট টেবিলের উপর রাখা ফোন দুটোর উপর। কিছু একটা ভেবে সেদিকে এগিয়ে গেলো, নিজের ফোন টা সেখানেই দেখেই,হাতে নিয়ে বললো

দিয়া- হায় ভগবান , তোকে আমি সারা দুনিয়া খুঁজেছি আর তুই এ শয়তানের রুমে কি করছিস। ওমা গো আমি ফেলে যায় নি তো এ রুমে।
এটা বলেই একটা ঢোক গিললো,
দিয়া- বদের হাড্ডি কি জেনে গেছে আমি উনার রুমে এসেছি, কিন্তু উনি কিভাবে জানবে এটা আমার ফোন, আর উনার রুমে এসেছি জানলেই কি করবে, উল্টো একটা ঝগড়া করার চান্স আছে, আমি বলবো উনি আমার ফোন নিজের কাছে রেখে দিয়েছে,,, এটাই বলবো দাদাভাই কে।

বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলো, মনে মনে ঠিক করে নিলো আজকে জমপেশ একটা ঝগড়া করে অগ্নির মুখ থেকে কথা বের করবে,,, এ ভেবেই নিজের ফোন আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো, পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে অগ্নির ফোনটা নিলো, আনলক ফোনের ওয়ালপেপার টা দেখেই ৪৪০ বোল্টের ঝটকা খেলো। এটা কি আদৌ সম্ভব নাকি দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখছে। দিয়া চোখ ভালো করে কচলে আবার দেখলো, না ঠিকই দেখছে।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো, সামনে তাঁকাতেই দিয়া ফ্রিউড হয়ে গেলো, অগ্নি মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে, ভিজা চুল গুলো কপালের উপর লেপ্টে আছে, পরণে টাউজার আর গলায় তোয়ালে ঝুলানো, দিয়া চোখ বড়বড় করে অগ্নির দিকে তাকালো, এ প্রথম অগ্নিকে এভাবে দেখছে। অগ্নিও দিয়াকে দেখে চমকে তাকিয়ে আছে, দুজনেই একে অপরের দিকে চেয়ে আছে, অগ্নি নিজেকে সামলে দিয়া পাশ কাটিয়ে এসে গেঞ্জি টা পড়ে নিলো, দিয়া এখনোই সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওর পা জোড়া মনে হয় কেউ সুপার গ্লু দিয়ে আটকে দিয়েছে, অগ্নি একবার আড় চোখে দিয়াকে দেখে নিলো, মনে মনে ভাবলো

অগ্নি- ও কি ফোনটা খুঁজতে এসেছে?? এখনো কি খেয়াল করে নি, সামনেই তো রাখলাম।
অগ্নি নিজেই ফোনটা হাতে তুলে দিয়ার সামনে ধরলো, তবে মুখে কিছুই বললো না,,
দিয়া একবার ফোনের দিকে আর একবার অগ্নির দিকে তাকালো, আর মনে মনে বললো

দিয়া- এ লোক কিভাবে জানে এটা আমার ফোন? সর্বনাশ, তাহলে কি বুঝে ফেলেছে আমি আগেও উনার রুমে এসেছি, এখন কি হবে, চলে যে যাবো তারও তো উপায় নাই, এ মীরজাফর পা দুটোও নড়াতে পারছি না, এতো দিন মন টা আর চোখগুলো মীরজাফরি করতো, এখন পা টাও শুরু করছে। এই মীরজাফর অঙ্গ- পতঙ্গ রেখে করবো টা কি আমি, একদিন সব সরকারি হাসপাতালে দান করে দিবো।
অগ্নি অনেকখন ফোনটা ধরে রেখেছে কিন্তু দিয়া তো ভাবনায় ব্যস্ত। অগ্নি দিয়ার এমন অবস্থা দেখে মনে মনে হেসে বললো

অগ্নি – আমার ভাবুক রানী,,,
অগ্নি দিয়ার হাত ধরে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে, নিজেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে । দিয়া এখনো কেবলার মতো তাকিয়ে আছে, কি হয়েছে সেটা বুঝতে পেরেই মুখ ফুলিয়ে বললো
দিয়া – আবারও ইগনোর করলো, বিয়াদ্দপ একটা।
তিন জনে এক সাথে খেতে বসেছে, তবে দিয়া খাচ্ছে কম ভাবছে বেশি, অভি দিয়ার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,

অভি- ভাবনা চিন্তা পরে করছিস, আগে খাবার টা শেষ কর।
দিয়া- আহ্, খাচ্ছি তো।
অভি- তাড়াতাড়ি।
বলেই সামনে দিকে তাকাতেই দেখলো, অগ্নি চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, কি হলো, এভাবে তাকিয়া আছে কেন? ব্যাপার বুঝতে একটু সময় লাগলো, বুঝার সাথে সাথে দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
অভি- ব্যাথা পেয়েছিস বোনু

দিয়া মাথা নাড়ায় যার অর্থ ব্যাথা পায় নি, দিয়া সত্যি ব্যাথা পায় নি শুধু ওর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। অভি বললো
অভি- মুখে বল, যে ব্যাথা পাস নি।
অভির এমন কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
দিয়া- এমন করছো কেন, ব্যাথা পাওয়ার মতো দিয়েছো নাকি??
অভি- সেটা যদি কেউ বুঝতো, তাহলে তো হতোই।
দিয়া- মাঝে মাঝে তোমার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না।
অভি- বুঝতে হবে না, আচ্ছা দুপুরে কি রান্না করবি,, তোর হাতের রান্না জাস্ট ফাটাফাটি।

দিয়া- কি খেতে চাও বলো,
অভি- সরষে ইলিশ, চিকেন কারি আর
বলতে গিয়ে ও অগ্নির দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো দিয়া বললো
দিয়া- আর কি রান্না করবো বলো
অভি- না বোন, আপাতত এ দুইটা ডিস রান্না কর।দিয়া- আচ্ছা।

অভি- দুপুরে বাসায় এসে একসাথে খাবো, তুই রান্না করে রাখিস, তবে সাবধানে করবি।
দিয়া- তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো দাদাভাই, বাসায় একা থাকতে ভালো লাগবে না।।।
অভি- একা কোথায় দাদাই তো,,,,
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই দিয়া বললো
অভি- বোবা, বয়রা লোক থাকার চেয়ে একা থাকাটাই শ্রেয়।
বলেই দিয়া রান্নাঘরে গেলো,দিয়ার কথা শুনেই অভি শব্দ করে হাসছে, অগ্নি মেকি রাগ দেখিয়ে বললো
অগ্নি- হাসার কি হলো।

অভি- আমার মন চাইছে তাই হাসছি, তুমি এতো রাগছো কেন?
অগ্নি- ওকে এতো গুলো ডিস রান্না করতে কেন বললি??
অভি- এতোগুলো কই মাএ দুইটা ডিস। আমার বোন আমার জন্য রান্না করবে তাতে তোমার কি?
অগ্নি- তাহলে আমার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করতে বললি কেন???

অভি- এতো কথা বলো না তো, সারাদিন রুমে বসে না থেকে, পারলে আমার বোনকে একটু হেল্প করে দিও,,,
বলেই অভি উঠে চলে গেলো, দিয়া রান্না করায় ব্যস্ত, অগ্নিকে ড্রায়নিং টেবিলে বসেই ল্যাপটপে কাজ করছে আর আঁড়চোখে দিয়াকে দেখছে। ওড়না টা কোমরে বেঁধে পাকা গিন্নীদের মতো কাজ করছে, চুল গুলো কে উপরে খোঁপা করে রেখেছে,,, খোঁপাটা ঢিলে হয়ে ছোট ছোট চুল গুলো বের হয়ে গেছে। যখন চোখে মুখে পড়ছে, বিরক্ত হয়ে বারবার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে।

অগ্নির খুব ভয়ংকর ইচ্ছে হলো, মন- মস্তিষ্কের যুদ্ধে আজ মনের কথায় শুনলো, ধীর পায়ে দিয়ার পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছে, দিয়া কাজে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে টের পায় নি কখন অগ্নি এসে ওর পিছনে দাড়িয়েছে৷ হাত দিয়ে আস্তে করে দিয়ার খোঁপা টা খুলে দিলো। লম্বা চুল গুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমরে এসে পড়লো,,, হঠাৎ এমন হওয়াতে দিয়া ভয় পেয়ে যায়, পিছনে ফিরতেই অগ্নিকে দেখেই ভয়ার্ত দৃষ্টি শিথিল হলো,, অগ্নি দিয়ার দুই বাহু ধরে ওকে ঘুরিয়ে দিলো, কেঁপে উঠলো দিয়া। অগ্নি সবগুলো চুল একসাথ করে একটা খোঁপা করে দিলো। খোঁপা করেই দু- পা পিছিয়ে গেলো, দিয়া আবার ঘুরে দাড়ালো অগ্নির দিকে। অগ্নির সেই মুগ্ধ দৃষ্টি, যেখানে গভীর ভালোবাসা দেখতে পায় দিয়া।

দিয়া ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই অগ্নি পিছনে ফিরে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে যেতো লাগলো, অভিমানে দিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো, অসাবধানতার গরম কড়াইয়ে হাত লেগে যায়, মুখ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো
দিয়া- আহ্হ্
অগ্নি পিছনে ফিরতেই দিয়ার লাল হয়ে যাওয়া হাতের দিকে তাকাতেই নিজেকে সামলাতে পারলো না ছুটে গিয়েই দিয়া হাতটা ধরলো, এতো গুলো বছরের দৃঢ়তা মুহূর্তে ভেঙে বলে উঠলো

অগ্নি- কিভাবে হলো,, কতোটা পুড়েছে, তুই কেন এসব করতে গেলি???
দিয়ার চোখ দিয়ে যেন জলের ঢল নেমেছে, ব্যাথার নাকি আনন্দের সেটা দিয়া নিজেও জানে না।
অগ্নি যেন নিজের মধ্যে নেই, ট্যাপ চালু করে ঠান্ডা জলে নিচে দিয়ার হাত ধরে রেখেছে, দিয়া ঝাপসা চোখে অগ্নিকেই দেখে যাচ্ছে।

অগ্নি দিয়াকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে, নিচে হাটু গেড়ে বসে ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর হাতে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে। দিয়া ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে, সারাটা সময় দিয়া নিশ্চুপ হয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছে।
অগ্নি দিয়ার কান্না ভেজা মুখশ্রী দেখে বললো
অগ্নি- খুব বেশি ব্যাথা লাগছে,, জ্বলছে খুব
দিয়া এতোখনে বললো

দিয়া- হ্যাঁ,ব্যাথা করছে, খুব জ্বলছে তবে হাতে না।
অগ্নি অস্থির হয়ে বললো,,
অগ্নি- হাতে ছাড়াও অন্য কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস?? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে???
দিয়া অগ্নির হাত ছাড়িয়ে, উঠে দাঁড়ায়, কান্নাভেজা কন্ঠে বলে ওঠে

দিয়া- হাতের ব্যাথাটা চোখে পড়লো আপনার, আর এতোগুলাে বছর যে এতো কষ্ট পেয়েছি সেটা আপনার চোখে পড়লো না,, আপনার এ অবহেলা আমাকে এতোটা যন্ত্রণা দিয়েছে, সেটা আপনি বুঝেননি। হাতের ব্যাথা চেয়ে আমার মনে ব্যাথা টা দ্বিগুণ বেশি।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৩

বলেই দিয়া দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো,যদি একবার পিছনে ফিরে দেখতো তাহলে একজনের অসহায় চাহনি দেখতে পেতো।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৫