প্রেম পরিণয় পর্ব ৩

প্রেম পরিণয় পর্ব ৩
রাজশ্রী মজুমদার রাই

দিয়ার পরীক্ষা আর এক সপ্তাহ বাকি, কিন্তু ওই শয়তান লোকটা যে ওর মনে শীতকালে ও বসন্ত এনে দিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার চাপে এ বসন্তটা ঠিক মতো উপভোগ করতে পারছে না দিয়া। দিয়া মনে মনে ঠিক করলো।
দিয়া- পরীক্ষা শেষ করি, তারপর ওই শয়তান ব্যাটা কে নিয়ে গভীর গবেষণা করবো, এতো গুলো বছর কথা না বলার শাস্তি গুণে গুণে দিবো বজ্জাত টাকে।

অগ্নি অফিসে বসে কাজ করছে, ফোন বাজছে ওর, এক নজর ফোন দিকে দেখলো,অভি কল দিয়েছে। হাতের কাজ টা আগে শেষ করে কল ব্যাক করলে
অভি- হ্যালো, কেমন আছো দাদাই?
অগ্নি- ভালো, তোর কি খবর??
অভি- এইতো যাচ্ছে,, শুনো ফোন কিনেছি একটু আগে। ফোনের ছবি What’sapp পাঠিয়ে দিবো।
অগ্নি – ছবি পাঠাতে হবে না, পরীক্ষা শেষ হলে দুজনকে দিয়ে দিস। পিসেমশাইশয়ের দিকটাও সামলে নিস।
অভি- ঠিক আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অগ্নি – তোর বোনকে ঠিক সময়ে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসিস। প্রথম দিন একটু তাড়াতাড়ি নিয়ে যাস।
অভি- আমার বোনকে নিয়ে মানুষের এতো চিন্তা কেন বুঝি না।
অগ্নি- বুঝতে কে বলছে তোকে।
অভি- সেটাই তো, আচ্ছা এ মাসে বাসায় আসবে না।
অগ্নি – ছুটি নেই,
অভি- আমি তো জানি সরকারি চাকরি যারা করে তাদের শুক্র-শনি ছুটি থাকে। সরকার কি নিয়ম কানুন চেঞ্জ করলো নাকি?

অগ্নি – বেশি কথা বলবি না, ফোন রাখ।
অভি- উচিৎ কথা শুনতে কার ভালো লাগে, আচ্ছা শুনো, এখন ছুটির দিন গুলো কাজে লাগিয়ে পরের মাসে এক সপ্তাহে ছুটি নিয়ে এসো।
অগ্নি- শুধু শুধু কেন এক সপ্তাহ ছুটি নিতে যাবো। এতোদিন ছুটি নিয়ে করবো টা কি।
অভি- তোমার ইচ্ছা না হলে নিও না, আমি ভাবছি আমার বোনের পরীক্ষা শেষ হলে ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো। আমরা ভাই-বোন মিলে অনেক মজা করবো।

অগ্নি – তুই আর কিছু বলবি, আমার কাজ আছে।
ফোনটা রাখতে হবে।
অভি- ঠিক আছে, বাই।
ফোন কেটেই অগ্নি ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলো,,, ওয়ালপেপারে এক হাস্যজ্জ্বল পরীর ছবি। অগ্নি ফোনের স্কিনে হাত বুলিয়ে বললো

অগ্নি – All the best. খুব ভালো করে পরীক্ষা দিস। আমি জানি আমার পিচ্চি পরী টা খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
আজ দিয়ার পরীক্ষা, প্রিপারেশন ভালো,তারপর ও নার্ভাস লাগছে। তার উপর দীপক সাহা বলে দিয়েছে A+ চায়। অভি বাসার নিচে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে, দিয়াকে সেই নিয়ে যাবে। দিয়া সবার থেকে আর্শীবাদ নিয়ে নিচে নেমে এলো। অভি দিয়াকে দেখেই বললো
অভি- কি রে তোকে এমন লাগছে কেন??নার্ভাস!

দিয়া- হুম।
অভি- কেন? তোর প্রিপারেশন ভালো না??
দিয়া- প্রিপারেশন ভালো, তবে সবাই যেভাবে A+ A+ করছে।
দিয়া আর অভির সব কথায় শুনছে অগ্নি, তাকে কলে রেখেই অভি দিয়ার সাথে কথা বলছে। কল কেটে দিয়ে অভিকে এসএমএস করলো। দাদাইয়ের এসএমএস দেখেই অভি কানে হেডফোন গুঁজে কল দিলো অগ্নির নাম্বারে, কল ধরতেই ফোন পকেটে রেখে বাইক স্টার্ট দিলো,,

অভি- আমাকে শক্ত করে ধরে বস। আর আমি কিছু কথা বলছি সেটা মনোযোগ দিয়ে শুন।
দিয়া- হুম বলো।
অভি- প্রথমে A+ চিন্তা মাথা থেকে বের কর, শুধু এটা মাথায় রাখ তুই তোর সেরা টা দিবি। ক্লাস তুই 1-10 পর্যন্ত তুই কতোটা জ্ঞান অর্জন করেছিস, কতোটা শিখেছিস এটা শুধু তারই একটা পরীক্ষা। কঠিন কিছু না। আমি জানি তুই পারবি। তুই শুধু তোর best টা দিবি। সব টেনশন বাদ দিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা টা দে। আমি জানি আমার পিচ্চি পরী খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
অভি কথা গুলো শুনে দিয়ার নার্ভাসনেস কেটে গেছে।

দিয়া- Thanks দাদাভাই।
দিয়ার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আর দশ মিনিট বাকি, এই তিন ঘন্টার অগ্নি অভিকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে, অভি কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছে, আবার ও অগ্নির কল এলে, অভি একবার ভাবলো ধরবে না, কিন্তু কল না ধরলে ভাই যে পাগল হয়ে পাবনা হাসপাতালের বাসিন্দা হয়ে যাবে। তাই কল ধরে বললো
অভি- এটা তোমার ৩৩ তম কল, সিরিয়াসলি দাদাই তিন ঘন্টায় ৩৩ টা কল। এটা তুমি, কিভাবে সম্ভব।
অগ্নি- বাজে না বকে বল, ওর পরীক্ষা কেমন হচ্ছে।
অভি- আজব প্রশ্ন করবে না একদম, ও এখনো বের হয় নি, আমি বাইরে থেকে কিভাবে বলবো ওর পরীক্ষা কেমন হচ্ছে।

অগ্নি – তিন ঘন্টা তো হয়ে গেছে এখনো বের হয় নি কেন।
অভি- মাএই তিন ঘন্টা শেষ হইছে, হল থেকে বের হয়ে আসতেও তো পাঁচ দশ মিনিট সময় লাগে। ও তো পরী না যে ডানা মেলে উড়ে উড়ে চলে আসবে।
অগ্নি মনে মনে বললো,,

অগ্নি- পরী ও, আমার পিচ্চি পরী।
দিয়াকে ওর দিকেই আসতে দেখেই, অভি কান থেকে ফোন নামিয়ে রাখলো কিন্তু কাটলো না,,,
অভি- বোন এতো দেরি করলি কেন, আর একটু দেরি করলে আমি তো পাগল হয়ে যেতাম।
দিয়া- কই দেরি করলাম, কাগজ নেওয়ার সাথে সাথে তো বেরিয়ে এলাম। আর পাগল হয়ে যেতে কেন??
অভি থতমত খেয়ে বললো

অভি- কেন আর গরমে,যা গরম পড়েছে।
দিয়া- এতেখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে গেলে কেন, বাসায় চলে যেতে পারতে,
অভি- এখানে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও তো উনি শান্তি পাচ্ছে না,আর বাসায় থাকলে তো আমার গরদান যেতো।
দিয়া অভির কথা মাথা মুন্ড কিছুই বুঝতে পারছে না।

দিয়া- কি বলছো তুমি দাদাভাই, কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
ওদের কথা শুনে অগ্নির ইচ্ছে করছে অভিকে কয়েক ঘাঁ লাগাতে। অগ্নি বিড়বিড় করে বললো
অগ্নি – গাধা টা আসল কথা না জিজ্ঞেস করে দুনিয়ার কাহিনী শুরু করছে। ইচ্ছা করছে কয়েক ঘাঁ লাগিয়ে হাতের সুখ করে নি।

অভি- তোকে বুঝতে হবে না, এবার বল পরীক্ষা কেমন হয়েছে।
দিয়া- ভালো হয়েছে দাদাভাই।।
অগ্নি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
দেখতে দেখতে আজ দিয়ার পরীক্ষার শেষ দিন। সবগুলো পরীক্ষায় খুব ভালো হয়েছে। দিয়া পরীক্ষার শেষ হওয়ার পর থেকেই অগ্নিকে নিয়ে গবেষণা লেগে গেছে। অগ্নির কথা ভাবতে ভাবতেই হল থেকে বের হলো। দিয়া মনে মনে ভাবছে

দিয়া- এ বদের হাড্ডি টা একবার ও তো খবর নিলো না, পরীক্ষা কেমন হচ্ছে? মা,কে ফোন দিয়ে তো একটা খবর নিতে পারতো। হিয়ার পরীক্ষার সময় তো প্রায় মা,র কাছে কল দিয়ে খবর নিতো। আমার বেলায় একটা খবরও নিলো না।

এসব ভাবতেই দিয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো, ছোটবেলার কিছু স্মৃতি এখনো দিয়ার মনে আছে। ছয়টা বছর অগ্নি ছাড়া দিয়ার কোন খেলার সাথী ছিলো না। অগ্নি ছিলো ১৬ বছর আর দিয়ার ৬ বছর। তখনকার দিন গুলো কতো সুন্দর ছিলো, হঠাৎ করেই অগ্নি ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। সেদিনের কথা দিয়ার এখনো মনে আছে, অগ্নির সাথে খেলার জন্য কতো কান্না করছো, কিন্তু অগ্নি মুখ ফিরিয়ে চলে গেছে। এসব মনে করেই দিয়া বিড়বিড় করে বললো

দিয়া- নিষ্ঠুর আপনি, খারাপ আপনি। কিভাবে আমাকে এতো কষ্ট দিলেন, কিভাবে শৈশবের সব স্মৃতি ভুলে গেলেন। কই আমি তো কিছু ভুলি নি। আপনি আমার শৈশবের খেলার সাথী, আর কিশোরী বয়সের প্রথম ভালো,,,,,,,।
কথা পুরো শেষ করলো না দিয়া,,, বাকি কথাটুকু গিলে নিলো।
দিয়া মুখের এ অবস্থা দেখে অভি জিজ্ঞেস করলো,,
অভি- কি রে পরীক্ষা ভালো হয় নি??
দিয়া- হুম ভালোই হয়েছে।

অভি- তাহলে মুখ টা এমন বাংলা পাঁচ বানিয়ে রেখেছিস কেন???.
দিয়া- একজন নিষ্ঠুর মানুষের, নিষ্ঠুরতা মনে পড়ছে তাই।
অভি- কে আমার এতো কিউট বোনটার সাথে নিষ্ঠুর আচারণ করছে তার নামটা একবার বল??
দিয়া অকপটে বলে দিলো
দিয়া- কে আর তোমার শয়তান ভাই।
দিয়ার কথা শুনে অভি চোখ বড়বড় করে একবার হাতের ফোন আরেক বার দিয়ার দিকে তাঁকাছে। অভি নিজে সামলে বললো,,

অভি- দাদাই এবার কি করেছে??
দিয়া- আমার পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা দিন ও খবর নিয়েছে?? হিয়ার সময় তো ঠিকই মাকে কল দিয়ে খবর নিতো৷ আমার বেলায় তার সব নিষ্ঠুরতা। প্রায় ১০ বছর আমার সাথে কথা বলে না। কি এমন দোষ করেছি আমি যে আমার সাথে কথা বলে না। আমি তো,,,,,,,
আর বলতে পারলো না দিয়া, কথা গুলো গলায় আটকে গেছে, এতোখন চোখ ছলছল করলে এখন কয়েক ফোঁটা জল গরিয়ে পড়লো।

অভি হতবাক হয়ে গেলে, দিয়া যে কথা বলতে বলতে কেঁদে দিবে ও সেটা ভাবতেই পারে না, নিজেকে একটু ধাতস্থ করে দিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
অভি- আরে পাগলি কান্না করছিস কেন,, এবার দাদাই আসলে আমি খুব বকে দিবো,,, দাদাই খুব বড় অন্যায় করছে, পিসিমনিকে কল দিয়ে একটা খবর নিতে পারতো।
দিয়া অভির আহ্লাদী কথা শুনে নাক টেনে বললো

দিয়া- অন্যায় তো সে ছোটবেলা থেকেই করছে আমার সাথে। মাকে না হোক তোমাকে তো একটা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতো বলো দাদাভাই?? কিন্তু তাও করে নি?
অভি- সেটাই, আমাকে তো অনন্ত একটা কল দেওয়া উচিৎ ছিলো।
নিজের হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
অভি- তুই একটা কল আশা করছিস আর এ পর্যন্ত হাজার টা কল দিয়েছে। চাইলে ও সত্যিটা তোকে বলতে পারবো না।

অগ্নির ভিতর টা আজকে ভীষণ জ্বলছে, কিন্তু সবসময়ের মতো উপর টা শান্ত। ভেতরের যন্ত্রণা টা আরো কয়েকশো গুণ বেড়ে গেছে প্রিয়তমার কান্না ভেজা মুখশ্রী দেখে।, কিছুখন আগে অভি ছবিটা সেন্ড করেছে৷ কি নিদারুণ কষ্ট বয়ে বেড়াছে অগ্নি সেটা কাউকে বুঝতে দিবে না। বুকটা অসহ্য যন্ত্রণা করছে, অগ্নি বুকের বাঁ পাশ টা হাতে চেপে ধরে বিড়বিড় করে বললো

অগ্নি-অনেক বড় অন্যায় করেছি আমি, ছোটবেলা থেকে তোকে ভালোবেসে অন্যায় করেছি, সম্পর্কের মারপ্যাঁচ না বুঝেই আমি তোকে ভালোবেসেছি,, তোকে ভালোবাসা তো আমার হাতে ছিলো না, এখন যে ভুলে যাবো সে ক্ষমতাও আমার নেই। তোকে ভালোবেসে শুধু অন্যায় নয় পাপ করেছি আমি। সরি আমার পরীটা,,,,,,
দিয়া মন খারাপ করে বসে আছে, সবকিছু বিরক্ত লাগছে,,, অভি ওকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তবুও মনটা শান্ত করতে পারছে না।

অগ্নি কি কখনো ওর অনুভূতি সম্পর্কে আঁচ করতে পারবে?? অগ্নি কি জানতে পারবে ষোড়শী হৃদয়ে কি উওাল ঝড় চলছে,ওকে ঘিরে।
আজ সাত দিন হলো দিয়া মামা বাড়িতে এসেছে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দিনই অভি গিয়ে নিয়ে এসেছে, দীপক বাবুও কোন অমত করেন নি। হিয়া- দিয়ার ভাই হিসাবে অভিকে তার কাছে বেশ লাগে, উনি মনে করেন অভি আছেই বলেই মেয়ে দুটো কে ছেলেপেলেরা উতক্ত্য করার সাহস পায় না।।

অভি বাড়িতে নিয়ে আসার পর দিয়ার হাতে ফোন দিয়েছে, তবে ফোন হাতে পেয়েও দিয়া বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করে নি। দিয়ার মাথায় তো ঘুরছে অন্য কিছু। দিয়া আসার পর থেকেই অগ্নি রুমে কয়েকবার গুপ্ত অভিযান চালিয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। দিয়া নিজেও জানে না, ও কি খুঁজতে আসে এ রুমে। বর্তমানে দিয়া অগ্নির রুমে ওর বেডে বসে আছে, হাতে অগ্নির একটা শার্ট। কিছু একটা ভেবে শার্ট টা নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ নিচ্ছে, এই ঘ্রাণ টা সে রাতেও পেয়েছিলো, আহ্ সে রাতের কথা মনে পড়লেই কেমন সুখ সুখ লাগে ওর। সে অপলক দৃষ্টি, কথা না বলেও প্রবল অধিকারে শক্ত করে হাত ধরে রাখা, কি যত্নে মুখ মুছে দিয়েছে। দিয়া নিজে নিজেই বললো

দিয়া- আপনার দৃষ্টিতে আমি অন্য কিছু দেখেছি, কিন্তু আপনার ব্যবহার?? কিছু তো আছে যা আমি জানি না,, আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে আমি আপনাকে ছাড়বো না, আর যদি আমার ধারণা ভুল হয়, তখন কি করবো আমি,, আপনি যে আমার মনে অনেকটা জুড়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।
বলেই দিয়া শার্ট টা বুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
রাতে অভি খাবার টেবিলে বসে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো

অভি- দিয়া কোথায় মা?? ওকে দেখছি না।
শান্তি দেবী- ঘুমিয়ে পড়েছে।
অভি- আজকে মনে হয় একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে।
শান্তি দেবী- ঘড়ি দেখেছিস কয়টা বাজে?? রাত দেড়টা।আর ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছে, তাই নয়টা বাজে শুয়ে পড়ছে।

অভি- দাদাই কে বাস স্টপ আনতে গিয়েই তো এতো দেরি হয়েছে,, খেয়েছে দিয়া?
শান্তি দেবী- না, অনেকবার বললাম খেয়ে ঘুমাতে, বললো খাবে না।
অভি- জোরে করে খাওয়াতে পারো নি,, ও তো না খাওয়ার বাহানা খুঁজে সবসময়। না খেয়ে একদিন কঠিন অসুখ বাধাঁবে।

শান্তি দেবী- মেয়েটার খাবারের প্রতি এতো অরুচি। খেতেই চায় না,,
অগ্নি চুপচাপ খাচ্ছে, অভি একবার আড়চোখে ওকে দেখে নিলো,, স্বভাব সুলভ শান্ত,,,,
সকাল সাড়ে আটটায় মামির হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে দিয়া, শান্তি দেবী অনেকবার বার বারণ করছে কিন্তু দিয়া শুনছে না উল্টো মামিকে বললো

দিয়া- তুমি তো সারাজীবন করছো, আমি যে কয়দিন আছি তুমি রেস্ট করো।
দিয়ার কথা শুনে শান্তি দেবী ভীষণ খুশি হলো, ওনার ভাইয়ের মেয়েরা ও মাঝে মাঝে আসে কিন্তু সাহায্য করা তো দূরের কথা, উল্টো এটা সেটা অবদার করে বসে। আর এই মেয়েটা কতোটা লক্ষ্মী। শান্তি দেবী হাসি মুখে বললো
শান্তি দেবী- অনেক কাজ করেছিস, এবার যা স্নান করে রেডি হয়ে নে।
দিয়া- কোথায় যাবো মামি??

শান্তি দেবী- মন্দিরে যাবো, একটা সংকল্প পূজা দিবো।
দিয়া- আচ্ছা যাচ্ছি, হাতের কাজটা শেষ করেই যাচ্ছি।
দিয়া মন্দিরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের, সাদা রংয়ের চুড়িদার সাথে টকটকে লাল ওড়না পড়ছে। মামি রেডি হয়েছে কি না সেটা দেখার জন্য মামির রুমে যায় দিয়া।
দিয়া- মামি আমি রেডি, কই তুমি??
শান্তি দেবী- ১০ মিনিট অপেক্ষা কর মা, আমি আসছি।
দিয়া- আচ্ছা।

দিয়া মামির রুম থেকে বের হয়ে ভাবলো একবার অভির রুমে যাবে, কালকে রাতে দেখা হয় নি, অভির রুমের যেতেই অগ্নিকে দেখেই থেমে গেলো, দিয়া মনে মনে বললো,
দিয়া- এই বজ্জাত এলো কখন?? হায় কতো কিউট লাগছে দেখতে। না দিয়া না, একদম আজকে ক্রাশ খাবি না, এতোদিনে যতোবার ক্রাশ খেয়েছিস, দরকার পড়লে আজ সব বমি করে ফেলে দিবি। এই ব্যাটার মনে কি চলছে সেটা না জানা পর্যন্ত এসব সাইডে রাখ।

দিয়াকে দেখা মাত্রই অগ্নির মন্ত্র মুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো, অগ্নির হার্টবিট বেড়ে গেছে। পলক ফেলতে ও ভুলে গেছে। ওকে এভাবেই তাকিয়ে থাকতে দেখে দিয়া মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
দিয়া- আমাকে তো দু’চোখে দেখতে পারিস না, এখন এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন, ইচ্ছা করছে চোখ দুটো খুলে লুডু খেলি, ব্যাটা বজ্জাত।

অগ্নিকে একটা ভেঙচি মেরে পাশ কাটিয়ে অভির রুমে চলে গেলো, অগ্নি নিজেকে সামলে ড্রয়িং রুমে গেলো, অগ্নিও অভির রুমেই যেতো, কাল রাতে ওর রুমে একটা ফোন পেয়েছে, অভি দেখাবে ফোনটা কার আর ওর রুমে কে রেখেছে???

কিছুখন পর অভি আর দিয়াও এলো ড্রয়িং রুমে, অভি অগ্নিকে দেখেই বললো
অভি-বাহ্ আজকে এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে।
অগ্নি – হুম, তোর সাথে কথা আছে, শুন আমার রুমে,,,,,
পুরো কথা শেষ করার আগেই অভি বললো, তোমার কথা একটু পর শুনছি আগে দিয়ার ক্লাস নিয়ে নিই।
অভি- লক্ষ্মী বোনু তোর ফোনটা কই,, ফোন টা কি তোকে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে দিয়েছি??
দিয়া- ফোন,,,,

অভি- কেন ভুলে গেছিস যে তোর একটা স্মার্ট ফোন আছে?? কয়বার কল দিয়েছি কালকে, ফোন ধরলি না কেন???
দিয়া আসলেই ভুলে গেছে ও নিজের একটা ফোন আছে, কোথায় রেখেছে মনেও পড়ছে না, এটা অভি জানতে পারলে খুব বকবে, তাই কিউট ফেস করে বললো
দিয়া- ফোন তো রুমেই আছে,কালকে তো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছি তাই কল ধরতে পারি নি৷
অভি- ও আচ্ছা, এখন তো বাইরে যাচ্ছিস ফোন সাথে করে নিয়ে যা। কোন দরকার পড়লে কল দিতে পারবি।
দিয়া তাড়াহুড়ো করে বললো,

দিয়া- না না, এখন কিভাবে নিবো ফোন,
অভি- কিভাবে নিবি মানে??
দিয়া- আসলে দাদাভাই ফোন হাতে নিয়ে রাখতে কেমন একটা প্যারা প্যারা লাগে, কখন কোথায় ফেলে আসি ঠিক নেই, তার থেকে বাসায় থাক ফোনটা।
অভি – এ যুগের মেয়ে হয়ে ফোন প্যারা লাগে তোর কাছে, গাঁধি একটা।

হায় হায় এ বজ্জাত ব্যাটার সামনে দাদাভাই গাঁধি বললো, ইজ্জত ফেলুদা বানিয়ে দিলো, দিয়া একবার আড় চোখে অগ্নিকে দেখে নিলো,,, এই হলো আরেক জ্বালা এই শয়তান টা কে দেখে বুঝায় যায় না ভিতরে কি চলে, সবসময়ের মতো শান্ত হয়ে বসে আছে,, মনে হয় সে ব্যক্তি ছাড়া এখানে দ্বিতীয় কেউ নেই।

প্রেম পরিণয় পর্ব ২

মামি এসে পড়াতে অভির হাত থেকে বাঁচলো, দুজনে বেরিয়ে পড়লো মন্দিরের উদ্দেশ্যে। দিয়া মনে মনে বললো,
দিয়া- বাসায় এসেই আগে ফোন টা খুঁজে বের করি, তারপর ও শয়তান বেডারে নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু করবো, কিছু না কিছু ঠিক পাবো।

প্রেম পরিণয় পর্ব ৪