প্রেয়সী পর্ব ৩৩

প্রেয়সী পর্ব ৩৩
নন্দিনী নীলা

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
ফুয়াদ মধুর দিকে একপলক তাকিয়ে ড্রাইভিং ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মধু অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আবার তাকাল ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ ওর কথার উত্তর দিচ্ছে না তাই রেগে ফুয়াদের বাহু খামচে ধরে বলল,,” কি হলো? উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কোথায় যাচ্ছেন বাসায় ফিরবেন কখন?”
ফুয়াদ বিরক্তিকর গলায় বলল,,” হাত টানছ কেন এক্সিডেন্ট করাতে চাইছ নাকি?”

” আপনি কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”
” আমরা বাসায় ফিরছি না!”
মধু আঁতকে উঠা গলায় বলল,,” মানে কি এসবের? বাসায় ফিরছি না তাহলে এতো রাতে কোথায় যাচ্ছি আমরা।”
” ছটফটানি বাদ দিয়ে চুপ করে বসো। পৌঁছালে তো দেখতে পাবেই।”
” আপনি কি আমাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাচ্ছেন?” কন্ঠ কাঁপল মধুর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফুয়াদ মধুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” তুমি কি একটু চুপ করে থাকবে?”
” না একদম আমি চুপ থাকব না। আপনার মনে কি ঘুরছে বলেন দ্রুত।”
ফুয়াদ শব্দ করে গাড়ি ব্রেক কষল। তারপর রেগে তাকাল মধুর দিকে। মধু ফুয়াদের রাগী চাহনি দেখে ভয়ে মিইয়ে যায়‌।
ফুয়াদ ওর দিকে কড়া গলায় বলল,,” আর একটা কথা বললে মাঝরাস্তায় ফেলে চলে যাব।”
মধু দাঁত কিড়মিড় করে ফুয়াদ কে মনে মনে বকতে লাগল। ফুয়াদ আরো পনেরো মিনিট ড্রাইভিং করে একটা হোটেলর সামনে এসে গাড়ি থামায়। মধুকে নিয়ে হোটেলের সামনে নেমে দাঁড়ায়। মধু কপাল কুঁচকায় হোটেল দেখে।

” এখানে কেন এসেছেন?”
” আজকের রাত আমরা এখানেই থাকব।”
” কিন্তু এখানে কেন? বাসায় চলেন।”
” বাসায় যাওয়া যাবে না।”
” কিন্তু কেন?”
” তুমি কি নিজের বাড়ি যেতে চাও?”
মধু দুই সেকেন্ড নিরব থেকে মাথা নাড়িয়ে না বুঝাল।
” তাহলে আমি যা বলছি তাই করো।”

মধুর মাথার উপর দিয়ে গেল সব। ও ফ্যালফ্যাল করে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে র‌ইল। ফুয়াদ দুইটা পাশাপাশি রুম বুক করে ওকে নিয়ে ভেতরে এল। ওরা হোটেল ভেতরে চলে যেতেই একটা লোক ফোনে কাউকে বলল,,” জার্নালিস্ট আবরার ফুয়াদ একটা মেয়ে নিয়ে হোটেলের রুম বুক করেছে।”
ওপাশ থেকে আরেক লোক বলল,,” বাহ দুর্দান্ত খবর।”

” জি স্যার। এটা ভাইরাল করতে পারলে তার ক্যারিয়ার শেষ‌। তার চালে তাকেই মাদ দেই কি বলেন?”
” আগে খবর নাও মেয়েটা আবরার কে হয়? আবরারের দূর্বলতা আছে নাকি মেয়েটার উপর।”
” ওকে স্যার।”

লোকটা ফোন কেটে হোটেল কাউন্টারে গিয়ে নিজেও একটা রুম বুক করল। সাইন করার সময় ফুয়াদ আর মধুর দুটো রুমের নাম্বার জেনে গেল। আর বাঁকা হেসে চাবি নিয়ে ভেতরে চলে গেল।
নাফিসা বেগম সমুদ্রের কাছে বসে আছেন। সমুদ্র মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাফিসা বেগম সমুদ্রের হাত ধরে বললেন,,” আমি মিতুল কে বাড়ির ব‌উ করব বলে কথা দিয়েছি সমুদ্র।”

সমুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,” ছোটো ওকে খুব ভালোবাসে। ও মিতুল কে বিয়ে করবে না।”
” এটা আগে কেন বলেনি আমাকে?”
” তুমি বলার মতো পরিস্থিতি রাখো নি তখন। কীভাবে রাজি করিয়ে ছিলে মনে নেই?”
নাফিসা বেগম কথা বলতে পারলেন না। নিজের করা কাজে নিজেই এখন লজ্জা পাচ্ছেন। বান্ধবীকে কথা দিয়েছেন এখন তিনি কি করবেন। তিনি আশাহত চোখে তাকিয়ে আছে‌ সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র মায়ের অসহায় মুখ দেখে নিজেও নরম হয়ে গেল।

” সমুদ্র তুই বিয়ে কর মিতুল কে।”
সমুদ্র চমকে তাকাল।
” তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
” ওকে বাড়ির ব‌উ করার কথা দিয়েছে ফুয়াদ না করলে তুই আমার কথার দাম রাখ।”
” তুমি যা বলবে আমি সব করতে রাজি আছি চোখ বন্ধ করে। কিন্তু বিয়ে করার কথা বলো না। আমি বিয়ে ছাড়া আর সব কথা শুনতে পারব।”

নাফিসা বেগম সমুদ্রের কথায় অসন্তুষ্ট হয়ে বেরিয়ে এল। মিতুল এ বাসায় আছে এখনো। তিনি ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন। মিতুল তখন নিচে নেমে এল। তাকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। নাফিসা বেগম তাকে কাছে ডাকলেন মিতুল মিষ্টি করে হেসে তার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
” বসো এখানে..
মিতুল বসতে যাবে তখনি কলিংবেল বেজে উঠল। নাফিসা বেগম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন দশটা বাজে এসময় কে আসলো ফুয়াদ? এখন ফুয়াদ বাসায় নাই।

” ফুয়াদ আসলো নাকি?”
মিতুল বলল,” দেখে আসি কে আসলো।”
মিতুল কাজের মেয়ের আগে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখল ফুয়াদ না অপরিচিত তিন-চার জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তারা মিতুল কে ফেলেই হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এল। মিতুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ওদের পেছনে এল। নাফিসা বেগম একাই বসে ছিলেন সোফায় হঠাৎ অপরিচিত চারজন পুরুষ মানুষ দেখে চমকে দাঁড়িয়ে যায়।

” আপনারা কারা?” নাফিসা বেগম জিজ্ঞেস করলেন। ইশারায় বাকিদের ডাকতে বললেন কাজের মেয়েকে। মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রের বাবা চাচাকে ডেকে আনল। সমুদ্র ও নিচে নেমে এসেছে।
রাজিব খান চারজন কেই ভদ্রতা সহিত বসতে বললেন।
” আপনাদের পরিচয়?”

মধুর ভাই কথা বলল,,” আমার নাম মামুন হোসেন। আমি শুনেছি আমার বোন মেহেরিমা আপনাদের এখানে আছে। বিয়ে থেকে পালিয়ে ও আপনার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। আপনারা তাকে তার বাসায় না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এটা একটা অন্যায় আমি আমার বাবা আমার বোনকে এতো দিন পাগলের মতো হন্নে হয়ে খুঁজছি। আর আপনারা অন্যের মেয়েকে আটকে রেখেছেন। অবশেষে আমরা জানতে পারলাম সে গা ঢাকা দিয়ে আপনাদের কাছে আছে।”
রাজিব খান অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন।

তাকালেন সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র নিজের থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মিতুল একমাত্র মহা খুশিতে দাঁড়িয়ে আছে। মধুর ভাই ওর সাহায্যেই তো এখানে এসেছে। সমুদ্র এগিয়ে এসে বসল বাবার পাশে তারপর মামুনের দিকে তাকিয়ে বলল,, ” দেখুন আপনার বোন মধু আমাদের বাসায় ছিল এটা সত্যি কিন্তু ওকে আমরা ইচ্ছা করে বা জোর করে আটকে থাকি নি। ও নিজ থেকেই এখানে ছিল‌। আমরা অনেক বার ওকে ফিরে যেতে বলেছি কিন্তু ও বলেছে ও যাবে না। কিছু দিন সময় চেয়েছিল।”
মামুনের পাশ‌ থেকে সাফিন বলল,,” মেহেরিমা কোথায়? ওকে ডাকুন এতো কথা বলার সময় নাই। আমরা এক্ষুনি ওকে নিয়ে ফিরে যাব।”

সমুদ্র সহ সবাই চমকে উঠল। তিন্নি এসেই শুয়ে পড়ছিল বাইরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে আসলো। এসে ও কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু সাফিন কে দেখেই ও চিনতে পারল। মধু বিয়ে ঠিক হতেই সাফিনের ছবি ওকে দেখিয়েছিল। ও সাফিন কে বাসায় দেখেই ভয় পেয়ে যায়। তারমানে ওরা খবর পেয়ে গেছে মধু এখানে আছে। ও ঢোক গিলে সাফিন ও বাকিদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তিন্নি কাঁপতে কাঁপতে ফুয়াদের নাম্বারে মেসেজ করে সব জানিয়ে দেয়। মধু বাসায় নেই এটা বলতেই সাফিন আর মামুন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। প্রথমে ভালো করে কথা বললেও এবার চিৎকার করতে থাকে‌। ওরা বিশ্বাস করে না মধু বাসায় নাই ওরা ভাবে সমুদ্র রা মিথ্যা বলছে।
” আমার বোনকে আটকে রাখতে চাইছেন ছাড়ব না। চেনেন না আমাদের। সব কটা কে জেলের ভাত খাওয়াব। আমার বোনকে আটকে রাখা তাই না।”

সাফিন ও চিৎকার করছে ওরা ভেতরে গিয়ে বাসা চেক করতে বলে সাথে আসা গার্ড দু’জন কে। দুজন সবার কথাকে তোয়াক্কা না করে হনহনিয়ে ভেতরে দুতালায় চলে যায়। পুরো বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন মধু কে পায় না তখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে মামুন কে বলে।
মামুন রক্তচক্ষু করে সমুদ্র দের বলে,,” কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস আমার বোনকে বল নয়তো খুন করে ফেলব তোদের‌।”
মামুন আর সাফিন ঝামেলা করে শেষে মধুর কোন হদিস না পেয়ে বাসায় থেকে বেরিয়ে যায় যাওয়ার আগে ওদের হুমকি ধমকি দিতে বাদ দেয় না।

ওরা চলে যেতেই রাজিব খান সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,,” ফুয়াদ কোথায়?”
সমুদ্র মাথা নিচু করে ফেলে।
রাজিব খান সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,,”আমাদের একটা সম্মান আছে। এই সম্মানে কারো আঘাত আমি সহ্য করব না। এটা বাইরের মেয়ের জন্য এতো কথা শুনতে হলো। ওই মেয়ে যেন আমার বাসায় ত্রিসীমানায় না আস্তে পারে।”
বলেই তিনি নিজের রুমে চলে যান।

সাফিন বাইরে এসে বলল,,” ওরা মেহেরিমাকে লুকিয়ে রেখেছে। এভাবে বের করবে না পুলিশের সাহায্য দরকার।”
” আগামীকাল পুলিশ নিয়ে হাজির হবো। দেখি কিভাবে লুকিয়ে রাখে।”
” আগামীকাল কেন এখনি চলো।”
” বাসায় সত্যি নাই মেহেরিমা। ওকে অন্য কোথাও রেখেছে।”
” আঙ্কেল কে কল করে সব জানাও।”

প্রেয়সী পর্ব ৩২

মামুন মাহতিম হোসেন কে কল করে সব জানাল সব শুনে তিনি ও মেয়েকে নিতে আসতে চাইলেন‌। মামুন তাকে সকালে আসতে বলল।
রাতের মধ্যে আবার পুলিশ নিয়ে ওরা হাজির হলো। সমুদ্র রা পুলিশ দেখে চমকে উঠল। রাজিব খান এসব ঝামেলা দেখে রাগে ফুয়াদ কে অনবরত কল করতে লাগলেন। কিন্তু নাম্বার শুধু সুইচ‌অফ বলছে।

প্রেয়সী পর্ব ৩৪