প্রেয়সী পর্ব ৩৭

প্রেয়সী পর্ব ৩৭
নন্দিনী নীলা

উকিল নিয়ে থানায় যায় প্রান্ত। ফুয়াদ সব কথা বলে সব ঠিক করে রেখেছিল। বারোটার আগে সমুদ্র কে ছাড়িয়ে আনে। সমুদ্র বাসায় না ফিরে ফুয়াদের কাছে আসে। প্রান্ত মানা করলেও শুনে না ওর বাসায় জোর করেই‌ আসে।
ফুয়াদ সমুদ্রকে এখানে দেখে বলে,,”তুমি এখানে কেন?”

সমুদ্র এদিকে ওদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,”মধু কোথায়?”
ফুয়াদ চাপানো দরজার দিকে ইশারা করে বলল,,”ঘুমিয়ে আছে রুমে।”
“ওকে কীভাবে নিজের কাজে রাখলি ও তো তোকে পছন্দ করে না ছোটো! ও থাকলো!”
ফুয়াদ বাঁকা হেসে বলল,,”ভাইয়ের হাতে ধরা খাওয়ার থেকে আমার কাছে থাকা স্বস্তি মনে করেছে তাই তো রয়ে গেছে।”
সমুদ্র বিস্মিত গলায় বলল,,” রিয়েলি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হুম।”
“কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে!” চিন্তিত কন্ঠে বলল ফুয়াদ।‌ সমুদ্র ওর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ও রাগ দেখে ওর হাত ধরে বলল,,” আবার কি হলো?”
” ভাই আমাকে কেউ প্রতিনিয়ত ফলো করছে। এতো দিন সেটা মনের ভুল ধারণা মনে হলেও আজ কনফার্ম হয়ে গেছি।”
সমুদ্র বলল,,” কী হয়েছে বল?”

ফুয়াদ রেস্টুরেন্টের ঘটনা সবটাই খুলে বলল সমুদ্র কে। সমুদ্র বিষ্ময় এ হতভম্ব হয়ে শুনল।
সব শুনে বলল,,”মধু ঠিক আছে তো। ও গড তোর শত্রু তো মধুকেও চিনে নিল। একবার তোর দুর্বলতা জানতে পারলে তো মধুর বিপদ। ওর লাইফ রিস্ক।”
ফুয়াদ সমুদ্রকে বলল,,” আমি মধুর কোন ক্ষতি হতে দেব না ভাইয়া। কিন্তু কে আমার পেছনে লোক লাগিয়েছে। তাকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।”

“রমেশচন্দ্রের বাসা থেকে কিছু পেয়েছিস? উনির যা সব কাজ ছিল তাতে তো মনে হয়না সবটা একা করেছে এর পেছনে আরো বড়ো কোন রহস্য থাকতে পারে।”
” উনার ব‌উ শিখা রাণী আমাকে বাসা সার্চ করতেই দেয়নি। কোর্টের এ্যাপার্টমেন্ট ছাড়া খোঁজা সম্ভব না।”
সমুদ্র ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,,” মা তোর উপর খুব রেগে আছে। শুধু মা না বাসার সবাই। মধুর ভাই যা করছে তাতে।”

একটা শ্বাস ফেলে আবার বলল,,” দেখ যাই করিস না কেন আমি সব সময় তোর পাশে থেকেছি আর থাকব‌। কিন্তু নিজের ও পরিবারের কথা ভেবে করবি যা করার। আমাদের বাসায় কখনো পুলিশ যায়নি কিন্তু এবার গিয়েছে আমাকে থানায় যেতে হয়েছে আমি তাতেও কিছু মনে করছি না। কিন্তু এতে আমাদের সম্মান জড়িয়ে আছে। তাই আমি চাই সব দিক ভেবে কাজ করবি।”

ফুয়াদ মাথা নিচু করি সরি বলল সমুদ্র কে।
” আই এ্যাম সরি ভাই। আমার জন্য তোমাকে সাফার করতে হলো।”
সমুদ্র সোফায় বসে বলল,,”থানায় গিয়ে মাথা ব্যথা হয়ে গেছে রে ছোটো। সবার চিল্লাচিল্লি তে। একটু মাথার চুল টেনে দে তো ছোটো। তোর জন্য ব্যথা তুই সাড়া।”

চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল ফুয়াদ সমুদ্রের দিকে। দুই ভাইয়ের কথোপকথন নিরবে দেখছিল এতোক্ষণ প্রান্ত এবার হা হা করে হেসে দিল।
ফুয়াদ মুখ কালো করে সত্যি চুল টানতে লাগল। প্রথমে আস্তে টানলেও পরে জোরে দিল আর সমুদ্র ওর হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে বলল,,” থাক অনেক হয়েছে। এবার আমরা সোফায় ঘুমিয়ে পরি। রুম তো দখল।”
ফুয়াদ বলল,,”তুমি এসেছ ভালোই হয়েছে। আমি তোমাকে মধুর কাছে রেখে একজায়গায় যেতে পারব।”

” তুই এতো রাতে কোথায় যাবি?”
ফুয়াদ বলল,,” রেস্টুরেন্টের সেই ছেলে সার্ভেন্টের বাসায়।”
বলেই প্রান্তের কাছে গিয়ে বলল,,” তুমি যাবে?”
” আপনি বললে আমি প্রস্তুত।”
” ওকে চলো তাহলে রহস্য কতটা উদ্ধার করা যায় দেখে আসি।”

বলেই ফুয়াদ আরেকবার রুমে গিয়ে মধু কে দেখে আসলো তারপর প্রান্ত কে নিয়ে বেরিয়ে এল। আসার আগে সমুদ্র কে ওর খেয়াল রাখতে বলে গেল।
সমুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে বলেছে তখন,,” ঘুমন্ত মানুষের কি খেয়াল রাখব রে ছোটো?”
ভাইয়ের কথায় ফুয়াদ লজ্জা পেয়েছে। সমুদ্র ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,” আমি আছি তো তোর মধু ভালোই থাকবে। ডোন্ট ওয়ারি মাই লিটোল বার্দার।”

ফুয়াদ একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসে।
মধুর যখন ঘুম ভাঙে তখন সকাল হয়ে গেছে। ও ঘুম থেকে উঠতেই খেয়াল করে ওর মাথা ভার হয়ে আছে। ও মাথা দুহাতে ধরে উঠে বসে। চোখ পিটপিট করে তাকাতেই চমকে উঠে‌। একটা অপরিচিত রুমের বিছানায় আছে ও। ওর পিল চমকে উঠে।

এটা কোথায় ও তো ফুয়াদের সাথে ছিল তাহলে এটা কোথায়? এখানে কীভাবে এল? ফুয়াদ ওকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে উঠেছিল তারপর ওরা খাবার খেতে গিয়েছিল। তারপর খাচ্ছিল তারপর আর‌ কিছুই মনে পরছে না ওর। মাথা ধরে অনেকক্ষণ মনে করার চেষ্টা করল। কিছুই মনে পরছে না। ভয়ে মধুর হাত পা কাঁপতে লাগল। ও কাঁপা কাঁপা পায়ে ফ্লোরে পা নামালো। গুটিশুটি পায়ে হেঁটে দরজা ফাঁক করে উঁকি মারল। একেতে মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে তার উপর এই অচেনা বাসা ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।

মধু দরজা ফাঁক করে মাথা বের করে উঁকি মারতেই দেখল সমুদ্র দুটো সোফার একটাতে মাথা দিয়ে আরেকটাকে পা দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ও সমুদ্র কে দেখতেই কপাল কুঁচকে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দাঁড়াল দুই সোফার সামনে। ওর কপাল আরো কুঁচকে গিয়েছে। সমুদ্র এখানে কি করছে? এটা কার বাসা? ও আশেপাশে ঘুরে সমুদ্র ছাড়া আর কাউকে পেল না বাসায়। ওর হতবিহ্বল চোখে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করল,,” রাতে ছোটো ভাই সাথে ছিল। সকালে বড়ো ভাই সাথে আছে। কি হচ্ছে এসব?”

মধু সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে। ওর মাথা হ্যাং হয়ে আসছে। সমুদ্র ঘুমের মাঝে নড়তে নড়তে ঠাস করে ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ল। মধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর পরে যাওয়া নিখুঁত ভাবে দেখল। পরা পর্যন্ত কিছু না বুঝলেও পরতেই ও গলা ফাটিয়ে হেসে উঠল।

সমুদ্র ফ্লোরে গড়িয়ে পড়তেই জেগে গেলে। কপালে ও কোমরে ব্যথা পেয়েছে ও কপালে হাত দিয়ে উঠে বসতেই সামনে মধু কে দাঁড়িয়ে হাসতে দেখল। লজ্জায় সমুদ্র লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্ট ও শার্ট টেনেটুনে ঠিক করতে লাগল। মধু মুখে হাত দিয়ে তাও হাসছে। ওর হাসির শব্দে সমুদ্রের লজ্জা আরো বাড়ছে‌।

সমুদ্র উঠে দাড়াতেই মধু অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,,” আপনি এখানে? এটা কার বাসা? আমি এখানে কিভাবে এলাম? আপনার ভাই কোথায়? আমি তো তার সাথে ছিলাম তিনি হা‌ওয়া হয়ে আপনি উদয় হলেন কি করে?”
সমুদ্র ওর প্রশ্নের চাপে পরে বসে পরেছে সোফায়। মধু থামতেই বলল,,” আরে আস্তে ধীরে প্রশ্ন করো ইয়ার। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না তোমার উত্তর না দিয়ে। আমি আছি তো। ছোটো না আসা পর্যন্ত তোমার সাথেই আছি তাই এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নাই।”

” এবার বলেন আমি এখানে কীভাবে এলাম।”
” এটা ছোটোর এক পরিচিতের বাসা। ছোটো তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।‌ আমি থানা‌ থেকে রাতে এখানে এসেছি। আর ছোটো একটা কাজে গেছে আমাকে তোমার পাহারা দাঁড় হিসেবে রেখে।”
মধু চিন্তিত মুখে বলল,,” আমার কিছু মনে পরছে না কেন? রাতে আমি এখানে কীভাবে এসেছি কিছুই মনে করতে পারছি না‌। মাথা ভার হয়ে আছে।”

বলেই মধু পাশের সোফায় বসল। সমুদ্র রেস্টুরেন্টের কথা কিছুই বলল না। ফুয়াদ চাইলে বলবে নি ও বলবে না ভাবল।
মধু বসে বলল,,” আপনি থানায় ছিলেন কেন?”
” তোমার জন্য।”
মধু বিমূর্ত গলায় বলল,,” মানে?”
” তোমার ভাই তোমাকে আটকে রাখার দায়ে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে।”
মধু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। বিষ্ময় এ ওর মুখটা হা হয়ে গেছে।
“এতো কিছু হয়ে গেছে।”

মধু অসহায় মুখ করে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বলল,,” আমাকে ক্ষমা করে দিন ভাইয়া আমার জন্য আপনাকে জেলে যেতে হলো। আমি আপনাদের কত বড়ো বিপদে ফেলে দিলাম। আপনারা আমার সাহায্য করেছেন আর আমি। সবাই নিশ্চয়ই আমাকে ঘৃণা করছে এখন আন্টি নিশ্চয়‌ই আমার মুখটাও আর দেখতে চাইবেন না‌।”

কষ্টে মধুর চোখ ছলছল করে উঠল। সমুদ্র কিছু বলতে পারল না। বাসার সবাই যে পরিমাণ রেগে আছে। মা তো বলেই দিয়েছে মধুর দর্শন আর করতে চান না। ওই বাসার ত্রিসীমানায় যেন মধু না ঘেঁষে।
মধু উত্তরের আসায় চেয়ে আছে সমুদ্রের মুখের দিকে। সমুদ্র ঢোক গিলে উঠে দাঁড়াল। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে লেবু নিল ফ্রিজ থেকে আর লেবু পানি দিল মধু কে। নেশা কাটাতে। মধু লেবু পানি নিয়ে বলল এসব কি?

” খাও ভালো লাগবে।”
মধু এক চুমুক খেয়েই চোখ মুখ বিকৃত করে বলল,,” ছিহ এটা কি আমি খাব না।”
জোর করেও আর খাওয়াতে পারল না মধু কে সমুদ্র। তাই গ্লাস নিয়ে চলে যাবে তখনি কলিং বেল বেজে উঠল‌। সমুদ্র গ্লাস হাতেই দরজা খুলে দেখল ফুয়াদ আর প্রান্ত চলে এসেছে।
ফুয়াদ রুমে ঢুকে বলল,,” গ্লাসে কি?”

সমুদ্র সব বলতেই ফুয়াদ নিজে গ্লাস নিয়ে এগিয়ে এল মধুর কাছে।
মধু ওকে দেখে আবার প্রশ্নের ভান্ডার খুলে বসল।
ফুয়াদ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এগিয়ে এসে জোর করে লেবু পানি খাওয়ালো‌। মধু রাগে দুঃখে ফুয়াদ কে কিল ঘুষি মেরে বলল,” আপনি কি করেছিলেন আমার সাথে। গত কালকের কিছু আমি মনে করতে পারছি না কেন?”

” গতকাল তুমি নেশা করেছিলে আর পাগলামি করছিলে মনে নেই?”
মধু চোখ কপালে তুলে বলল,,” ইম্পসিবল আমি নেশাজাতীয় কিছুই খায়নি। আমি তো শুধু আপনার খাবারটা খেয়েছিলাম।”
ফুয়াদ বলল,,” নিজেকে তো খুব বুদ্ধিমতি ভাবো‌। আমার খাবারেই মেশানো ছিল এলকোহল।”

” আপনি খাবারে এসব মিশিয়ে খান ছিহহ।”
বলেই মধু ছি ছি করতে লাগল।

প্রেয়সী পর্ব ৩৬

” এসব মিশিয়ে আমার খাওয়াটা অভ্যাস হলে, যে এই কাজ করেছে তাকে খুঁজতে রাত জেগে তাকে খুঁজতে যেতাম না মাথামোটা।”
মধু রাগী অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ ওকে ফেলে সমুদ্রের সাথে কি যেন কথা বলল।

প্রেয়সী পর্ব ৩৮