প্রেয়সী পর্ব ৬৫

প্রেয়সী পর্ব ৬৫
নন্দিনী নীলা

তিন্নি নিচে এসে শুনে মামা মামি ওর বাবা চাচার সাথে ওর আর কাওসারের বিয়ের কথা বলছে। তিন্নি সটান দাঁড়িয়ে তাদের পরিকল্পনা শুনছে। এদিকে তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। তিন্নি সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল ও ভেবেছিল ওকে কেউ দেখে নি। তাই ও লুকিয়ে সবার কথা শুনছিল আর রাগে ফুঁসছিল। এদিকে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ওর বাবা ওকে ডেকে বলেন,,” তিন্নি দেখো তো কে আসলো দাঁড়িয়ে না থেকে।”

তিন্নি চমকে উঠে দরজা খুলে দেখে ফুয়াদ দাঁড়িয়ে আছে ও ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে,,”ভাইয়া দেখো সবাই কি করছে?”
ফুয়াদ কপাল কুঁচকে বলে,,” কি হয়েছে?”
” সবাই কাওসার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা বলছে। এটা কোন কথা! তুমি বলো যাকে ছোটো থেকে ভাই বলে আসলাম। এখন আমায় তাকেই বিয়ে করতে হবে?”
ফুয়াদ বলল,,,” দেখি সর।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিন্নি গাল ফুলিয়ে দরজা আটকে ফুয়াদের পিছু পিছু আসলো। ও ভাবল ফুয়াদ হয়তো ওর কথা শুনে বুঝেছে ও এই বিয়েতে রাজি না। তাই ওর হয়ে কথা বলবে। কিন্তু ওকে অবাক করে ফুয়াদ এই প্রসঙ্গে কোন কিছুই বলল না। ভেতরে এসে তিন্নির মামা মামির সাথে সালাম বিনিময় করে নিজেও বসল। এদিকে তিন্নি কে পেয়েই ওর মামি আহ্লাদ করতে লাগল। তিন্নির রাগে গা জ্বলে উঠল আগে হলে আনন্দে নাচতো কিন্তু এখন আর নাচ আসছে না‌।
তিন্নির মামা বললেন,,” তিন্নি এতো শুকাইছিস কেন মা। খাওয়া দাওয়া করিস না?”

তিন্নি বিড়বিড় করে বলল,,” জিম করে নিজের স্বাস্থ্য কমালাম একটা হিরোর মতো জামাই পাওয়ার জন্য আর আমাকে সবাই মিলে ওই খাটাশ কাওসারের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে। এই বিয়ে তো আমি করমু না কখনোই না।”
তিন্নির মা এগিয়ে এসে বলল,,” ভাইজান আর ব‌ইলেন না। ও তো এখন খাওয়া-দাওয়া করতে চায় না। তার নাকি বেশি স্বাস্থ্য তাই সে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে দিছে। গুনে গুনে খাবার খায় আর সকাল বিকেল জিম করতে যায়। দেখেন চোখের পাড় কেমন কালো বানাই ফেলছে এসব করে।”

তিন্নি দাঁত কিড়মিড় করে মায়ের কথা শুনল। তারপর মনে মনে বলল, মোটা বেশি থাকতেও তো খাওয়া নিয়ে কম খোটা দাও নাই। এখন আহ্লাদ করতে আসছে ঢং।”
সবাই খাওয়া নিয়ে একশ জ্ঞান দিল। কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গেছে মোটা বেশি ছিল তাই কম কথা শোনায় নাই তারাই। এখন একটু নিজের ফিটনেস সুন্দর করতে কষ্ট করছে তখন আবার জ্ঞান দিচ্ছে। এরা বড়োই অদ্ভুত।
তিন্নি বিড়বিড় করে উঠে আসলো। কাওসার তিন্নির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে নিচেই চলে এলো। তিন্নি কাওসার কে চোখ রাঙিয়ে চলে গেল। ফুয়াদ সবার কথার মাঝে নতুন কথা ঢুকিয়ে দিল।
ফুয়াদ ওর বাবা কে বলল ওরা সবাই ফ্যামিলি ট্যুরে যেতে চায়।
ওর বাবা বললেন,,” যাবে যাও।”

” ফ্যামিলি বলেছি বাবা। পরিবারের সবাই।”
” আমরা কীভাবে যাব? অফিসের অনেক কাজ আছে। আর সমুদ্রের তো খবর নাই। কোথায় গিয়েছে সে।”
” বেশিদিনের জন্য নয় বাবা। অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে গেলে সবার মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যাবে। আমার নিজের মন মেজাজ ও ভালো নেই। খুব অশান্তি ফিল করছি।”
” তোমরা চলে যাও আমাদের কেন টানছো?”

” আমরা অনেকবার গেছি কিন্তু বাবা মায়ের সাথে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। প্লিজ বাবা তুমি রাজি হয়ে যাও কয়েকদিন কাজে না গেলে কি এমন হবে। আর আমরা সবাই সমুদ্র ভাইয়ার কাছেই যাচ্ছি। ভাইয়ার লোকেশন আমি পেয়েছি। ভাইয়াকে ও সারপ্রাইজ দেব গিয়ে।”

নাফিসা বেগম আর আনিতা বেগম কেউ ডেকে আনা হলো। ফাহাদ ছাড়া সবাই বাসায় জড়ো হলো। কাওসার রা পরিবার নয় তাই তারা কোন কথা বলছে না। মধু নিচে এসে এক কোনে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছে। তিন্নি আর ফুয়াদ বাবা মাকে রাজি করাচ্ছে। ফুয়াদ কথা শেষ করে তিন্নির মামা-মামি ও কাওসার কেউ সাথে যাওয়ার অফার করল। তিন্নির মামা-মামি রাজি না হলেও কাওসার যাবে বলল। কাওসার রাজি হ‌ওয়াতে তিন্নি অসন্তুষ্ট হলো।
ফুয়াদ রাহী কে কল করে জানিয়ে দিল।

সবাইকে রাজি করিয়ে ফুয়াদ রুমে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল। দেখল মধু সবার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে।‌ ফুয়াদ ওর কাছে গিয়ে বলল,,” কি হয়েছে মুড অফ?”
মধু বলল,,” নাহ।”

ফুয়াদ মধুর নাহ শুনে দাঁত বের করে হাসলো। ফুয়াদ কে বেক্কেলের হাসতে দেখে মধু চোখ ছোটো ছোটো করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ ওর হাত ধরে বলল,,” আসো রুমে যাই।”
মধু সবার সামনে তাই কিছু বলতে পারছে না কিন্তু ফুয়াদের হাসি দেখে ওর রাগে গা জ্বলে উঠল। ও হাত ছাড়াতে গিয়েও না ছাড়িয়ে ফুয়াদের সাথে পা মিলিয়ে রুমে আসলো।‌ রুমে এসেই ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল,,” ডোন্ট টাচ মি।”

ফুয়াদ দূরে সরে বলল,,” আচ্ছা আচ্ছা এতো রাগ দেখিয়ে বলতে হবে না বুঝেছি। এতো রেগে যেও না বেশি রাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
মধু বলল,,” ফালতু, আমি রাগ করেছি আপনাকে কে বললো? আমি কোন প্রকার রাগ করিনি।”
” ওকে মাই ডিয়ার সুইটহার্ট, মাই জান। কিন্তু তোমার নাকটা লাল টুকটুকে হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তুমি রেগে বোম হয়ে আছো। যেকোনো সময় বোম ব্লাস্ট হবে।”
মধু আঙ্গুল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,” একদম আমাকে রাগানোর চেষ্টা করবেন না। আমি যথেষ্ট শান্ত আছি। আমাকে শান্ত থাকতে দিন।”

ফুয়াদ মধুকে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল,,” একটু আমার বুকে শান্ত হয়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকো। দেখবে তোমার সব রাগ অভিমান হাওয়ার মিলিয়ে গেছে।”
মধু দুহাতে ফুয়াদ কে জড়িয়ে ধরে। থুতনি উঁচু করে বুকে ঠেকিয়ে, মাথা উঁচু করে ফুয়াদের দিকে চেয়ে বলল,,,” এভাবে আমার রাগ কমবে না।”
ফুয়াদ বলল,,” তাহলে কীভাবে কমবে?”

মধু দাঁত বের করে হেঁসে দিল। ফুয়াদ বলল,,” কি হলো দাঁত দেখাচ্ছ কেন? আজ দাঁত ব্রাশ করো নাই নাকি রাগে!”
মধু ফুয়াদের বুকের কাছে থাকা শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। ফুয়াদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মধু ফুয়াদের বক্ষস্থলে উন্মুক্ত করে আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল,,” রাগ কমাতে এখানে দাঁত বসাতে হবে!”
ফুয়াদ মধুর শয়তানি বুদ্ধি বুঝতেই মধু কে টেনে সরিয়ে দিতে চায়‌। কিন্তু মধু তার আগেই ফুয়াদ বুকে কামড়ে ধরে আচমকাই। এতো জোরে দাঁত বসিয়ে দিয়েছে যে ফুয়াদ ব্যথায় চোখ মুখ খিচে ফেলেছে।
মধু ফুয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” খুব লেগেছে না?”

” না খুব মজা লেগেছে।”
মধু কামড় দেওয়া স্থানে চুমু দিয়ে বলল,,”আরেকটা দেই?”
ফুয়াদ মধু কে একটানে পিছু ঘুরিয়ে ওকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে কয়েকটা চুমু দিয়ে বলল,,” একটাই এনাফ। আর না বাপরে,,,রাগ কমেছে?”

” আপনার কি হয়েছে না বলা পর্যন্ত কমবে না।”
” আমার কি হবে?”
” আপনি কি নিয়ে এতো দুশ্চিন্তায় থাকেন? অল্পতেই রেগে যান কেন?”
” মাথায় আঘাত পেয়ে আমি হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছি সিনেমার নায়কদের মতো। তোমার মনে হয় সামনে পাগল হাজব্যান্ড সামলাতে হবে।”

মধু বলল,,” সব সময় কথা‌ ঘুরিয়ে দেন এতো চালাক কেন আপনি?”
ফুয়াদ আর কোন কথা বলল না। নিরবে মধুকে জড়িয়ে ধরে র‌ইল।
ফুয়াদ সবার টিকিট নিয়ে আসলো পরদিন। ওরা গন্তব্যে পৌঁছালো দুইদিন পর। মাঝে একদিন রেখে তারপর পর‌ই ওরা সবাই র‌ওনা হয়েছিল।

ফুয়াদ কাউকে বাদ রাখেনি সবাইকে নিয়ে এসেছে কিন্তু ওর বড়ো ভাই কে আনতে পারে নি। তিনি কাজ ফেলে যাবেন না তাই ঘ্যারতেরা তাকেই রেখে ভাবি কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফুয়াদ রা এসে পৌঁছিয়েছে রিসোর্ট এ। ওরা এসেছে কক্সবাজার। এখানে এসেই ফুয়াদ সবাইকে যার যার রুমে পৌঁছে দিয়ে নিজের রুমে আসে।
মধু ফুয়াদ কে জিজ্ঞেস করল,,” এখানে সমুদ্র ভাইয়া আছে?”

” নাহ।”
” আপনি যে বললেন কক্সবাজারে সমুদ্র ভাইয়া আছে।”
” আছেই তো।”
” এখন না বললেন নাই।”
” এই রিসোর্ট এ নাই।”
” ওহ। ভাইয়া জানে আমরা এখানে এসেছি?”
” নাহ।”
ফুয়াদ মধু কে ফ্রেশ হতে বলল। মধু বলল,,” আপনি আগে যান।”

তাই ফুয়াদ আগে ফ্রেশ হয়ে এসে মধুকে পাঠালো। মধু গোসল করল না শুধু হাত মুখ ধুয়ে আসলো। ফুয়াদ ভেবেছিল মধু গোসল করবে সময় লাগবে বের হতে। কিন্তু মধু এতো তাড়াতাড়ি বের হয়। তাই চমকে উঠে। মধু ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে দেখে ফুয়াদ ল্যাকেজের সব জামাকাপড় বের করে বিছানার ভরে ফেলেছে। মধু তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলল,,” এসব কি? সবকিছু এমন এলোমেলো করেছেন কেন? কিছু খুঁজছেন! আসার সময় তো নিজেই সব গুছিয়ে ল্যাকেজে ঢুকিয়েছেন তাও পাচ্ছেন না নাকি?”

ফুয়াদ চোরের মতো মুখ করে বলল,,” তুমি গোসল করো নি? এতো দ্রুত বের হলে!”
ফুয়াদ ল্যাকেজ পুরো বিছানায় ঠেলে দিছে তাই সব ছড়িয়ে গেছে বিছানায়। এখন তাড়াতাড়ি সব আবার ল্যাকেজে রাখতে লাগল।
মধু নিজেও এগিয়ে এসে হাত লাগাল তা দেখে ফুয়াদ বলল,,” তোমার কিছু করতে হবে না তুমি ক্লান্ত। শুয়ে থাকো আমি গুছিয়ে রাখছি।”

মধু বলল,,” সমস্যা নাই। আমি করছি আপনি রেস্ট করেন। কত ক্লান্ত লাগছে আপনাকে। আমার থেকেও বেশি আপনি ক্লান্ত। রাস্তায় মাথা ব্যথা বলেছিলেন।”
ফুয়াদ কিছুটা কঠিন গলায় বলল,,” মধু প্লিজ আমি করছি। তুমি যাও ঘুমাও।”
বলেই ওর হাত থেকে সব টেনে নিল। এভাবে টানাটানি করতে গিয়ে মধু একটা লাল ডায়েরি দেখতে পেল।
ও কপাল ভ্রু কুঁচকে ডায়েরির দিকে তাকিয়ে বলল,, এটা কার ডায়েরি। আগে তো দেখিনি আপনার নাকি?”
ফুয়াদ চমকে তাকাল‌ কিছু বলল না।

মধু হাতের জামা ছেড়ে এক টানে ডায়েরি নিজের হাতে নিলো। ওর মুখে হাসি। ও বলল,,” ও মাই গড, আপনি ও ডায়েরি লেখেন! দেখি দেখি কি লিখেছেন। আমাকে নিয়ে কিছু লিখেছেন কি? কত না বলে ভালোবাসেন দেখি ডায়েরি তে আমার নাম আছে নাকি।”

মধু ডায়েরি হাতে নিয়ে হাসিমুখে প্রথম পেইজ বের করল।সাথে সাথে খুব সুন্দর করে লেখা দেখল,,“ প্রেয়সী ”
ওর মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,, “প্রেয়সী” হাউ সুইট। এটা আমাকে নিয়ে লিখেছেন তাই না?
মধুর চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে যেন। ফুয়াদ মধুর হাত থেকে একটানে ডায়েরি টা নিয়ে বলল,,” আমি কি একবার ও বলেছি এটা আমার? কারো পার্সোনাল জিনিস না বলে দেখতে হয় না জানো না।”‌ ফুয়াদ ঘেমে অস্থির হয়ে উঠেছে।

প্রেয়সী পর্ব ৬৪

মধু মুখ গোমড়া করে বলল,,” তাহলে এটা কার?”
ফুয়াদ বলল,” অন্য কারো।”
” তাহলে আপনার কাছে কেন?”
” উফফ মধু এতো প্রশ্ন করো না।” বিরক্তিকর কন্ঠে বলল।

প্রেয়সী পর্ব ৬৬