বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২৭

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২৭
জাওয়াদ জামী

শাহনাজ সুলতানা বোনের মেয়েকে পরম মমতায় মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন। মেয়েটা এদিকে খুব একটা আসেনা। হয়তো বছরে একবার কিংবা বড়জোর দুইবার আসে। তা-ও বেশি সময়ের জন্য নয়। আজ অসময়ে মেয়েটাকে নিজের ফ্ল্যাটে দেখে তিনি অনেকটাই অবাক হয়েছিলেন।

” খালামনি, স্বীকার করতেই হবে তোমরা তিন বোন রান্নায় পারদর্শী। তোমাদের রান্না একদিন খেলে বছর এর স্বাদ মুখে লেগে থাকে। কুহুটাও হয়েছে তোমাদের মতই। একবার যেই রান্নাই দেখবে, ফটাফট শিখে নিবে। আবার সেগুলোর টেষ্টও পারফেক্ট হয়। অবশ্য আমার চাচিও কম যায়না। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” খালামনির মেয়ে হয়ে তুই রান্না জানিসনা, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। তোরও উচিত ছিল আরও পাঁচ বছর আগে সব ধরনের রান্না শেখা। ছিহ্ সিক্তা ছিহ্। তুই আসলেই অকর্মা। তোকে বিয়ে করবে কে? আমিতো আবার আম্মু আর খালামনিদের রান্না ছাড়া খেতেই পারিনা। ” আনান খেতে খেতে বলল। ও আসলে ইন্ডাইরেক্টলি সিক্তাকে রান্না শেখার কথা বলল।

আজ আনানের কথা শুনে সিক্তার কিঞ্চিৎ রাগও হলোনা। আজ আনানের সবকিছুই ওর ভালো লাগছে। ওর দিকে তাকালেই ঠোঁট আপনাআপনি প্রসারিত হচ্ছে। আজ হঠাৎই আনানকে দুনিয়ায় সবথেকে সুদর্শন পুরুষ মনে হচ্ছে।
” কতজন আমাকে বিয়ে করার জন্য লাইন লাগিয়েছে। শুধু আমার রাজি হওয়ার অপেক্ষা মাত্র। তুমি দেখতে চাও? ”
” নাহ্ আমার দেখে কাজ নেই। তবে তোকে যারা বিয়ে করার জন্য লাইন লাগিয়েছে, তারা নিশ্চয়ই সুস্থ মস্তিষ্কের নয়। তোর মত আ’ধ’পা’গ’লী’কে সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ বিয়ে করতে কেন চাইবে! ”
এবারও সিক্তা আনানকে কিছুই বললনা। তবে ওর দিকে কড়া চোখে তাকাল। কিন্তু আনান সিক্তার দিকে একবারও তাকায়নি।

” খালামনি, তোমার ছেলেকে চুপ করতে বলবে। ও আমাকে আধ’পা’গ’লী বলল কেন? আমি যদি রে’গে যাই, তবে ওর মাথার চুল একটাও থাকবেনা বলে দিলাম। ” সিক্তা উগ্র কন্ঠে বলল।
” আনান, তুই চুপচাপ খেয়ে নে। মেয়েটাকে বিরক্ত করবিনা একদম। তোকে আরেক টুকরা মাংস দেই, টুকটুকি? ”
” না খালামনি, আর খেতে পারবনা। অনেক খেয়েছি। তুমি বরং তোমার পেটুক ছেলেকে খাওয়াও। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কয়েক বছর কিছুই খায়নি। ”

” কয়েক বছর না। গত কয়েকদিন থেকে কিছুই খায়নি ছেলেটা। সারাদিন শুধু বদ্ধ রুমে শুয়ে থেকেছে। হাজারবার ডাকলেও খেতে আসেনি, আবার দরজাও খোলেনি। কতদিন পর আজ খাচ্ছে। ”
শাহনাজ সুলতানার কথা শোনামাত্রই সিক্তার বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠল। ছেলেটা এই কয়েকটা দিন খুব কষ্ট পেয়েছে। সিক্তা আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে আনানের দিকে। কিন্তু আনানের কোন হেলদোল নেই। ও আপনমনে খেয়েই চলেছে।

” আম্মু, একটা লেবু কেটে দিবে? ”
” আনছি। একটু অপেক্ষা কর। ” শাহনাজ সুলতানা রান্নাঘরে গেলে আনান সিক্তার মুখের দিকে এক লোকমা বিরিয়ানি বাড়িয়ে ধরল।
সিক্তা লাজুক মুখে কোন প্রতিবাদ না করে খাবার মুখে নেয়।

” কি রে এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন! আমি মুখে শুধু খাবারই তুলে দিয়েছি, অন্য কিছুতো করিনি। জীবনে প্রথমবার আজ তোকে লজ্জা পেতে দেখলাম। ব্যাপারটা মন্দ নয়। তবে লজ্জা পেলে তোকে কিন্তু দারুণ লাগে। ” আনানের ফিসফিসানি কথায় সিক্তার শরীর ঝিম মেরে আসে।

” টুকটুকি, খাচ্ছিসনা কেন? আরেকটু বিরিয়ানি নে দেখি। ”
” খালামনি, প্লিজ আর খেতে পারবনা। তুমি কিন্তু আমাদের সাথে বসলেই পারতে। পরে একা একা খেতে হবে তোমাকে। ”
” তোর খালু আসলে একসাথে খাব। আজ সে একটু তারাতারিই আসবে বলেছে। ”

খাওয়া শেষ করে সিক্তা আরও কিছুক্ষণ সময় কাটায় শাহনাজ সুলতানার ফ্ল্যাটে। এরইমধ্যে আরোশি স্কুল থেকে একবারে কোচিং শেষ করে এসেছে। সিক্তাকে দেখে ও আনন্দে হৈ হৈ করে উঠল। আরোশি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া শেষ করে সিক্তার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আনান বাসায় নেই। এদিকে বিকেল হয়ে গেছে। এখন ওর বাসায় যাওয়া দরকার। কিন্তু আনানকে না বলে ওর মোটেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। এদিকে আরোশি কাছে থাকায় আনানকে ফোনও দিতে পারছেনা।
আনান আরও আধাঘন্টা পরে বাসায় আসলে সিক্তা জানায়, ও বাসায় যাবে। শাহনাজ সুলতানা সিক্তাকে বারবার থেকে যেতে বলছেন। কিন্তু ভর্তির ঝামেলার কারনে সিক্তা থাকতে রাজি হয়না।

” আনান, তুই টুকটুকিকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়। এতদূর পথ একা যাওয়া ঠিক হবেনা। ”
” তুমি চিন্তা করোনা। আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তবেই বাসায় আসব। সিক্তা, তুই তৈরি হয়ে নিচে আয়। ” আনান বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
আনান বাহিরে গেলে সিক্তা শাহনাজ সুলতানা ও আরোশির কাছ থেকে বিদায় নেয়।
আনান বাহিরে বাইক নিয়ে সিক্তার অপেক্ষা করছে। সিক্তা এসে ওর পাশে দাঁড়ালে মৃদু হাসে আনান।

” সরাসরি কি বাসায় যাবি? নাকি অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা আছে? ”
” কোথায় যাব! ”
” এই ধর রাস্তায় ফুচকা কিংবা ঝালমুড়ি খেলি। কিংবা কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেতে পারিস। কিংবা পার্কে গিয়ে বাদামও খাওয়া যায়। এরমধ্যে কোনটা করতে চাচ্ছিস তুই? ”

” এরমধ্যে কোনটাই করবনা। শুধু তোমার সাথে নির্জন কোন রাস্তায় ঘুরব। ”
” এই দিনের বেলায় ঢাকা শহরে নির্জন রাস্তা পাবি কই! রাতে হলে একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। ”
” তাহলে কোন পার্কে গিয়ে বসি চল। সেখানে গিয়ে বাদাম নয় ঝালমুড়ি খাব। ”
” ওকে, বাইকে উঠে বস। ঠিকমত ধরে বসবি। ” আনান বাইকে স্টার্ট দিয়ে সিক্তাকে বলল।
সিক্তাকে নিয়ে পার্কে এসেছে আনান। বিকেল হওয়ায় সেখানে অনেক মানুষের পদচারণা। কেউ হাঁটতে এসেছে, কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে। তবে বেশিরভাগই কপোত-কপোতী। এখানে এসে সিক্তার একটু লজ্জা লাগছে। ওরা সামনেই একটা গাছের নিচে বসল। সিক্তাকে বসিয়ে রেখে আনান যায় ঝালমুড়ি আনতে।

আনান কিছুক্ষণ পর ঝালমুড়ি, বাদাম আর পপকর্ন এনে সিক্তার কাছে দেয়। সিক্তা চুপচাপ সেগুলো হাত পেতে নেয়। আজ কোন কথাই ওর কন্ঠ নালী ভেদ করে বাহিরে আসতে পারছেনা। আনানের দিকে তাকালেই কেমন লজ্জা লাগছে। অথচ কয়েকদিন আগ পর্যন্তও আনানকে ও জ্বা’লি’য়ে মে’রে’ছে। কিন্তু আনানের দিকে তাকালেই অন্যরকম অনুভূতি এসে বুকে হুমড়ি খেয়ে পরছে।

আনান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিক্তার দিকে। এই মেয়েটা কয়েকদিন আগেও ওর সাথে কত ঝগড়া করেছে! কিন্তু আজ সে যেন শান্ত নদীর স্নিগ্ধ জল। যে জলে নিজের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। যে নদীর দুই কূল, জল কিংবা স্রোত সবই এখন ওর। অবশেষে মেয়েটা ওর কাছে ধরা দিয়েছে!
” চঞ্চলা নদীর এভাবে চুপসে যাওয়ার কারন কি? একটুতো আমার দিকে তাকাতেও পারিস। আমার চোখে তোকে দেখার যে তৃষ্ণা সেটা কি দেখতে পাস? এভাবে মুখ নিচু করে রাখলে তোকে দেখার তৃষ্ণা নিরাবরণ করব কিভাবে? ” আনান হালকা গলায় বলল।

” তুমি আমাকে লজ্জা দিওনাতো। এমনিতেই আমার প্রচুর লজ্জা লাগছে। ” মুখ নিচু রেখেই বলল সিক্তা।
” আজ প্রথম দিন। তাই এত লজ্জা পাচ্ছিস। এরপর যখন প্রতিদিন দেখা হবে, একসাথে ঘুরে বেড়াব তখন আর এই লজ্জা থাকবেনা। তখন সুযোগে থাকবি আমার ঘাড় ম’ট’কা’নো’র। এত বছরের অভ্যাস কি কখনো যাবে। ”
” কিহ্ আমি তোমার ঘাড় ম’ট’কা’ব! তুমি আসলেই বদ একটা ছেলে। আমাকে বাসায় দিয়ে এস। তোমার সাথে কোনও কথা নেই। ” সিক্তা উঠতে গেলেই আনান ওর হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
” চুপচাপ বসে থাক। আগে তোকে দু-চোখ ভরে দেখে নেই। এত যাই যাই করলে, সবার সামনে তোর গালে চুমু দেব বলে দিলাম। ”

আনানের কথা শুনে সিক্তার চোখ বড় হয়ে গেছে।
” ছিহ্ কি অসভ্য ছেলে তুমি! কিসব আজেবাজে কথা বলছ! তোমার সাথে আর কোথাও বেড়াতে যাবনা আমি। ”
” কি আজেবাজে কথা বললাম! আমার রুমে তো ঠিকই তোর কপালে চুমু দিলাম। তুইতো একবারও বললিনা কিসব অসভ্য কাজ করছ! ”

” কপালের চুমু আর গালের চুমু কি এক হল? ”
” কেন এক হবেনা? দুইটাতেই চরম ফিলিংস আসে। কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। ”
” তুমি আমাকে এখুনি বাসায় নিয়ে চল। বদ ছেলে কোথাকার। কয়জনকে তুমি এখন অব্দি চুমু দিয়ে কলিজা ঠান্ডা করেছ? ”
আনান বুঝতে পারল ও নিজের কথায় নিজেই ফেঁসেছে।

” এই রে পা’গ’লী ক্ষেপেছে। ” বিরবিরিয়ে বলল আনান।
” বিশ্বাস কর জীবনে প্রথমবার আজ তোকেই চুমু দিয়েছি। তাতেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই আমি ঐকথা বলেছি। রা’গ করেনা, আমার পুতুল সোনা। আজকে আমাদের সম্পর্কের প্রথম দিন। প্রথমদিনেই সব ভেস্তে দিসনা। তুই আমার অনেক সাধনার পুতুল সোনা। ”

” সাধনার না ছাইয়ের পুতুল সোনা। আমাকে নিজের মনের কথা বলেই, ছ্যাঁ’কা’খো’রে’র মত নিজের রুমে মুখ লুকিয়ে থেকে বলছে সাধনা!
চেহারাও হয়েছে বিশুদ্ধ ছ্যাঁ’কা’খো’রে’র মতই। না জানি কত মেয়ের পেছনে ঘুরেছে, কতজনকে চুমু দিকে কলিজা ঠান্ডা করেছে। ” সিক্তার চোখেমুখে রা’গ, ক’ষ্ট আর অভিমান স্পষ্ট।

” সত্যিই বলছি দেখতে আমি যতই ছ্যাঁ’কা’খো’রে’র মত হইনা কেন তুই-ই আমার প্রথম প্রেম। অন্য মেয়েকে চুমু দেয়া দূরের কথা, আমি তুই ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকিয়ে দেখিনি। আর কোনদিন দেখবওনা। ”
” সত্যি তো? ”
” তিন সত্যি। ”

সিক্তা হেসে ঝালমুড়ি মুখে দেয়।
কুহু বাসায় একা একা ভিষণ বিরক্ত হচ্ছে। আপাতত বাসায় ও ছাড়া আর কেউই নেই। আফরোজা নাজনীন এবং তাহমিনা আক্তার তাদের শ্বাশুড়িকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে মনি আপাকে বাজারে পাঠিয়েছেন তাহমিনা আক্তার। নীরা ভাবি তার বোনের বাসায় গেছে। সে দুইদিন পর আসবে। আরেকজন মেইড আছে রোকেয়া নামের, সে বোধহয় ঘুমাচ্ছে।
কুহু বিরক্তি নিয়ে ছাদে আসে। আপাতত গাছে পানি দিয়েই সময় কাটানো যাক।
কয়েকটা গাছে পানি দিতেই কুহুর ফোন বেজে ওঠে। পানির মগ বালতিতে রেখে, হাত মুছে ফোনের দিকে যায় কুহু৷

” আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়ালাইকুমুসসালাম। কি করছ আমার, সুখ পাখি? ”
” গাছে পানি দিচ্ছি। আর একা একা বিরক্তি বিলাস করছি। আপনি কি করছেন? সামনে রুগী নেই? ”
” মানুষকে দুঃখ বিলাস, সুখ বিলাস, জোছনা বিলাস করতে শুনেছি। কিন্তু কেউ কেউ যে বিরক্তি বিলাসও করে আজ তা প্রথম জানলাম। তা কি নিয়ে ঘটা করে বিরক্তি বিলাস করছ? ”

” আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছেন! দেবনা আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর। ”
” ওহ্ সরি, ভুল করে ফেলেছি। আমি কয়েক মিনিটের জন্য ফ্রি আছি। তাই তোমাকে ফোন দিয়েছি। এবার খুশি? এবার বল এত বিরক্তি কিসের? ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহুর ঠোঁট মৃদু প্রসারিত হয়। সেকেন্ডের ব্যবধানেই ওর সকল বিরক্তি পাখনা মেলে উড়াল দিতে চায়।

” বাসায় কেউই নেই। তাই একা একা বিরক্ত হচ্ছিলাম। ”
” ওহ্ এই কথা। আমি ভেবেছিলাম আমার বউ বোধহয় আমার বিরহে বিরক্ত হচ্ছিল। তাহমিদরে তোর কপালে বউয়ের আদর নেই। তোর বউ তোকে একটুও মিস করেনা। বাসার সবার বিরহে সে বিরক্ত বিলাস করে। পক্ষান্তরে আমার বিরহে সে বোধহয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। ”

” আপনি কি আবোলতাবোল বকছেন! কাজ না থাকলে মাথায় এমন আজব চিন্তাভাবনা আসবেই। সব সময় নেগেটিভটাই ভাবতে হবে! কাজ করুন, নিজের চিন্তাধারার প্রসার ঘটান। ”
” তারমানে বলতে চাইছ, আমাকে তুমি মিস কর? আমার বিরহে বুঝি তোমার অন্তরের দু কূল ছাপিয়ে কষ্ট এসে হানা দেয়? ”

” এই যে ফাজিল ডক্টর, নিজের কাজে মনযোগ দিন। সবসময়ই কি আপনার রোমান্টিক বাটন অন থাকে! সময় নেই, অসময় নেই, যখন তখন শুরু করে দেন! এত মধু নিয়ে বাস করতে গেলে আবার না ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হন। ”
” আহা, নিষ্ঠুর বউ, আবার ছ্যাঁ’কা দিলা! দুনিয়ার মানুষ প্রেমিকার কাছ থেকে ছ্যাঁ’কা খায়। আর আমি বেচারা বউয়ের কাছ থেকে ছ্যাঁ’কা খাই। আর কয়দিন পর শহরবাসী আমাকে ছ্যাঁ’কা তাহমিদ বলে ডাকবে। এই দুঃখ তুই কোথায় রাখবি তাহমিদ রাশেদিন। একটা তরুণী তোকে এভাবে ট্রিট করছে! ”

কুহু তাহমিদের কথা শুনে হাসতে থাকে। কিন্তু তাহমিদকে বুঝতে দেয়না।
” ভাইয়া, এবার চল যাই। আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তোমাকেও বাসায় ফিরতে হবে। এখন না উঠলে তোমার বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যাবে। ” সিক্তা আনানকে তাড়া দেয়।
” এই তুই আমাকে ভাইয়া ডাকলি কেন! কয়দিন পর যার বউ হয়ে তার পুরো রুম, তার বুকে রাজত্ব করবি, আজ তাকেই ভাইয়া ডাকছিস? বেয়াদব মেয়ে। আর যদি তোর মুখে ভাইয়া ডাক শুনেছি, সেদিন তোর ঠোঁট আমার হবে। এরপর থেকে যতবার ভাইয়া ডাকবি, ততবারই তোর ঠোঁট আমার। ”

” এই তুমি আবার শুরু করলে? এবার যদি না উঠ, তবে তোমাকে ফেলেই আমি চলে যাব। তোমার একবার নয়, এক হাজারবার ভাইয়া ডাকব। দেখি তুমি কি করতে পার। আমি যতই যুদ্ধবিরতি করতে চাচ্ছি, তুমি ততই আমাকে উস্কাচ্ছ? ”
” মাফ কর আমাকে। যুদ্ধবিরতি যখন দিয়েছিস, তখন সেটাই চালু রাখ। আমাকে আর জ্বা’লি’য়ে পু’ড়ি’য়ে খাক করিসনা। চল তোকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি। এখন একটু হাস। ”

” চল। ” সিক্তা হেসে আনানের হাত ধরল।
বাইকে উঠে সিক্তা আনানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সিক্তার স্পর্শ পেতেই আনানের সমস্ত শরীরে শিহরন খেলে যায়। বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত ধনকে ও অবশেষে পেয়েছে। এখন শুধু তাকে ভালোবেসে আগলে রাখার পালা। তাকে এত ভালোবাসতে হবে, যেন সে আনানকে ছেড়ে একদিন থাকার কথা ভাবতেও না পারে।
অনেকক্ষণ পর আনানের বাইক এসে দাঁড়ায় ‘ কুঞ্জছায়া ‘র গেটে।

” বাসায় যা। আর ফোন নিজের কাছে রাখবি। রাতে ভিডিও কলে তোকে দেখব। আর অন্য সময় শুধু কথা বলে তৃষ্ণা মেটাব। ”
” তুমি ভেতরে যাবেনা? একটু চল। ” সিক্তা মন খারাপ করে বলে।
” এখানে দেরি করলে আমার বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যাবে। আজকে যাই। কয়েকদিন পর আসব। নিজের খেয়াল রাখিস। আসছি। ”

” আচ্ছা। সাবধানে যাও। খুব স্পিডে ড্রাইভ করবেনা। বাসায় পৌঁছে ফোন দিও। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া কর। আমি যেদিন ভর্তি হতে যাব, তোমাকে জানাব। তুমি যেও। ”
” হুম। এবার ভেতরে যা। ”
সিক্তা হেটে ঢুকতে গেলেই আনান ওকে ডাক দেয়।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২৬

” সিক্তা, শোন। ”
” হুম, বল। ” সিক্তা পেছন ফিরে বলল।
” ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি তোকে। ”
” আমিও। ” সিক্তা আর দাঁড়ায়না।
আনানও হেসে বাইকে স্টার্ট দেয়।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২৮