বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৬

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৬
জাওয়াদ জামী

তাহমিদের শরীর সিঙ্গাপুরে থাকলেও মনটা পরে আছে বাংলাদেশের একটা শ্যামবরণ মেয়ের কাছে। ও অপেক্ষায় আছে কবে সেমিনার শেষ হবে, আর কবেইবা সেই শ্যামা মেয়ের কাছে যাবে।
আজকের সেমিনার শেষ করে হোটেলে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগায পোশাক পরিবর্তন না করেই, হোটেলের রাজকীয় বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় তাহমিদ।

টলটলে নদীর পানিতে চাঁদের রুপালি আলো পরে, পুরো নদীটাই যেন রুপোর সরোবরে রুপান্তরিত হয়েছে। সেই নদীর কোল ঘেঁষে এক কিশোরী নুপুরের রিনিঝিনি ছন্দ তুলে হেঁটে চলেছে। তার পড়নে সাদা শাড়ি। চাঁদের আলোয় শাড়িটি চিকচিক করছে। কিশোরীর হাঁটু সমান কোঁকড়ানো চুল যেন অতল পারাবারের উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় উছলে পরছে। তার হাসিতে রংধনুর সাত রংয়ের ছটা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাহমিদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে সেই রুপোলী কন্যাকে। রুপোলী কন্যার হাসির ঝংকারে কেঁপে উঠছে তাহমিদের বক্ষস্থল। তার হৃৎস্পন্দনেরা জানান দিচ্ছে, রুপোলী কন্যা একান্তই তোর। তার হাসি, তার নুপুরের ঝংকার, তার তরঙ্গখোচিত কেশ সবকিছুর অধিকর্তা একমাত্র তুই।
ঠক ঠক শব্দ হতেই তাহমিদ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। এতক্ষণ ও স্বপ্ন দেখছিল! ক্লান্ত শরীরে বিছানায় পিঠ ঠেকাতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছিল বুঝতেই পারেনি।

অসময়ে সুখস্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় মুখ দিয়ে ‘ চ্চ ‘ জাতীয় শব্দ করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
পরদিনই আফরোজা নাজনীন ভাইয়ের কাছে জমিজমা, দোকানপাট, শোরুম সবকিছু বুঝিয়ে দেন। সংসারে দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দেন শিউলিকে। তবে একটা দ্বায়িত্ব তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। সেটা তিনি পরে সবাইকে জানাবেন।
শিউলি এতবড় সংসার পেয়ে খুশিতে টগবগিয়ে উঠে। ও কখোনও কল্পনাও করেনি, কায়েস এতবড় বাড়ির ছেলে। ও খুশিমনে বাড়ির এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরেঘুরে দেখছে। বাড়ির সাথে লাগোয়া আম-লিচুর বাগানসহ আর নানান ফলের বাগান, বড় ঘাট বাঁধান পুকুর দেখে শিউলির মাথা ঘুরে ওঠে।

তিনদিন ভাইয়ের কাছে কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার তোড়জোড় শুরু করলেন আফরোজা নাজনীন। নাজমা পারভিনের শ্বশুর অসুস্থ হয়ে গেছে বিধায় সে-ও থাকতে পারবেননা। শাহনাজ সুলতানার ছেলে আনান বারবার মা’কে বাসায় ডাকছে। ওর ছোট বোনের পরীক্ষা আর সাতদিন পর থেকে।
ফুপুরা চলে যাবে জন্য কুহুর মন ভিষণ খারাপ। উনিশ বছরের জীবনে শুধু কষ্টই করে গেছে, বিনিময়ে বাবার ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। ও হ্যাঁ, আর পেয়েছে দৃষ্টি, শিহাবের মত ভাই-বোন। কিন্তু কুহুর চায় মা’য়ের ভালোবাসা, আদর। যা সে শিউলির কাছ থেকে কখনোই পায়নি।

এই কয়েকদিন ফুপুদের ভালোবাসা পেয়ে মা’য়ের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। কিন্তু ফুপুদের যাওয়ার কথা শুনেই ওর বুক ভার হয়ে আসে। এই কয়দিন খুব ভালো কেটেছে। ফুপুরা চলে গেলে হয়তো আবার শুরু হবে ওর ধরাবাঁধা জীবন। এবার আর চাকরি নামক বিভীষিকার পেছনে দৌড়াতে হবেনা ঠিকই, কিন্তু ছোটমার মুখঝামটা নিশ্চয়ই থাকবে। কারন সে শোধরাবার মত মানুষ নয়।

আফরোজা নাজনীন বাড়িতে আগেই একজন কাজের মেয়ে রেখেছিলেন। যে বাড়ির সব কাজ করে, বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে। আর একজন ছেলে রেখেছেন। যার দ্বায়িত্ব জমিজমা, বাগান, পুকুর দেখাশোনা করা। এখন সেই ছেলেকে নতুন করে বাজার করার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন আফরোজা নাজনীন। কারন তিনি চাননা, তার অসুস্থ ভাই সংসারের কোনও কাজ করুক।
আর দোকান, শোরুমের জন্য আলাদা ম্যানেজার নিয়োগ দেয়াই আছে। এখন থেকে সে সবকিছুর হিসেব কায়েসকে বুঝিয়ে দিবে।

আফরোজা নাজনীন বাবা মা’রা যাওয়ার পর থেকে সব টাকা পয়সার হিসেব রাখেন। দোকান, শোরুমের ভাড়া প্রতিমাসে তিনি ব্যাংকে রাখেন। জমিজমার টাকাও তাই করেন। তিনি কায়েসকে সব বলেছেন। আরও বলেছেন, এরপর গ্রামে আসলে সেসব টাকা তিনি কায়েসকে দিয়ে দিবেন। কায়েস অনেকবার নিষেধ করেছে কিন্তু তিনি শোনেননি। তার একটাই কথা, এসবের প্রকৃত মালিক কায়েস। তিনি ভাইয়ের হক মারতে চাননা।

এরইমধ্যে আফরোজা নাজনীন একটা কাজ করেছেন। তার বাবার সম্পত্তির সব দলিল তার কাছে ছিল। তিনি সানাউল রাশেদিনকে ফোন দিয়ে সেগুলো ড্রাইভারের মাধ্যমে আনিয়েছেন। সেই দলিলও তিনি ভাইয়ের হাতে তুলে দেন।
শিউলি এসব দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছে। সে এত সহজে এত সম্পত্তির দখল পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। অবশেষে তার দুঃখের দিন শেষ হল! এবার শুধুই আনন্দ করার পালা। এসব কথা ভাবতেই শিউলির মুখে হাসি ফুটে। যা নাজমা পারভিনের নজর এড়ায়না।

কায়েস বোনেরা যাওয়ার আগেরদিন একটা অবিশ্বাস্য কাজ করে বসে। সে তার ভাগের পাওয়া সম্পত্তি থেকে পাঁচ বিঘা জমি আর দুইটা দোকান কুহুর নামে করে দেয়। কারন হিসেবে সে জানায়, একদিন কুহু সংসারের জন্য, তার চিকিৎসার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেছে। তাই এতটুকু সে বাবা হিসেবে মেয়েকে দিতেই পারে। এতে কুহুর ফুপুরা ভিষন খুশি হয়।
কিন্তু শিউলি কায়েসের এমন কাজে মোটেও খুশি হয়না। সে দূর থেকে চার ভাই-বোনের কর্মকান্ড দেখছে আর রাগে ফুঁসছে। তার ছেলে-মেয়েকে বাবা হিসেবে কিছু না দিয়ে কুহুকে সম্পত্তির ভাগ দিচ্ছে এটা সে সহ্য করতে পারছেনা।
শিউলি মনে মনে ভাবছে, একবার তার ননদেরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাক, এরপর কিভাবে সেসব কুহুর থেকে ফিরিয়ে নিতে হয়, তা সে ভালো করেই জানে।

” এমুন বাপ জীবনেও দেখি নাই। হেয় শুধু এক মাইয়ার কতাই ভাবল! তার যে আরও দুইডা পোলা-মাইয়া আছেস,সেই কতা হেয় ভুইলা গেছে? ঐ হা’রা’ম’জা’দি’রে সব সম্পত্তি দিয়া ফালাইল! আবার কয়ডা দোকানও দিল! তার কাছে ঐ কালীই সব। আমার পোলা-মাইয়ার কুন দাম নাই। ” নিজের ঘরে এসে এভাবেই রাগ ঝাড়ছে শিউলি। এমন সময় সেখানে দৃষ্টি আসে।
মা’কে এমন গজরাতে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

” কি হয়েছে, আম্মু? তোমার মাথা মনে হচ্ছে হট হয়ে আছে? কি ঘটনা? ”
” কি আর হইব। সবই আমার কপাল। আমার ফাডা কপালের দোষ সব। তা না ওইলে তর বাপে কেন ঐ কালীরে সব সম্পত্তি দিয়া দিল! আমারে একবার জিগাইলওনা। আমার পোলা-মাইয়ার হক মাইরা হেয় তার বড় মাইয়ারে তাজা করতাছে। ”

” তোমার এত সমস্যা কেন হচ্ছে, আম্মু। আব্বু তার বাবার সম্পত্তি, নিজের মেয়েকে দিতেই পারে। এতে তোমার এত প্রশ্ন কিসের! আপু আমাদের জন্য চারদিন আগ পর্যন্ত কি করেছে তা তুমি ভুলে যেতে পার, কিন্তু আমরা ভুলিনি। সে আমাদের জন্য নিজের শখ,সুখ বিসর্জন দিয়েছে। আব্বু শুধুমাত্র আপুকে তার পরিশ্রমের মূল্যটুকু দিয়েছে। যদিও আপুর সেই অমানুষিক পরিশ্রমের মূল্য কোন পাল্লায় মাপা ঠিক হবেনা।

তবুও আব্বু চেষ্টা করেছে তার মেয়ের ত্যাগের মূল্যায়ন করতে। তোমারতো খুশি হওয়ার কথা, আম্মু। তুমি নিজে যেখানে বাবার বাড়ি থেকে কিছুই পাওনি, কিন্তু তোমার সন্তানেরা অনেক কিছু পাবে এটা ভাবতে কেন পারছনা! তোমার ফাটা কপাল হয় কেমন করে! এত বছর কষ্টের পর পুরো একটা রাজত্ব তোমার সামনে। কিন্তু আপুকে তার সামান্যই দিয়েছে। তুমি এই রাজত্ব নিয়ে খুশি থাকনা। কেন কথা বাড়াচ্ছ? আমাদের যার যা হক আছে, তার সবটাই আব্বু পূরণ করবে। তোমার কপাল ভালো আব্বুর মত একজনকে স্বামী হিসেবে পেয়েছ। শুকরিয়া আদায় করতে হয়, আম্মু। ”
” থাইক আমারে জ্ঞান দেওন লাগতোনা। হের বাপে ভালো আর আমি খারাপ। নিজের পেটের মাইয়াই যদি এম্নে কয়, তয় পরের মাইয়া কি ছাইড়া দিব! সব দুষ তর বাপের। হেয় মাইয়ারে মাথায় তুইলা রাখছে। ”

” আব্বুর কোনও দোষ নেই। আব্বু শুধুমাত্র ভুল করেছিল। যার খেসারত বিগত বিশ বছর ধরে দিয়েছে। বড়মাকে বিয়ে করার পর যদি বাড়ি না ছাড়ত, তবে এতদিন তার কষ্ট করতে হতনা। আর আপুকেও উপার্জনের জন্য পথে নামতে হতনা। অবশ্য সেক্ষেত্রে তোমার একটু বিপদ হত। আব্বু বড়মাকে নিয়ে টাঙ্গাইল না গেলে তোমার সাথেও দেখা হতনা। আর তোমাকে বিয়েও করা লাগতনা। এত বছর পর একটা রাজত্বও তুমি পেতেনা। তোমার বাবা-মা তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ত। আব্বু তোমার বাবা-মায়ের টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছিল তোমাকে বিয়ে করে। এবার চিন্তা করে বলতো আব্বু কি সত্যিই দোষী? ”

” তুই এহান থাইকা যা। আইছে বাপের চামচামি করবার। দুই ভাই-বোনই বাপের এক নাম্বারের চামচা হইছে! যেদিন কিছুই থাকবোনা, সব ঐ হা’রা’ম’জা’দি’রে দিয়া শেষ করব, তহন আমারে কইস। আমি কাঁন্দি হের লাইগা, আর হেয় কাঁন্দে বইনের লাইগা। ”
” কিছু না থাকলে, না থাকবে। এতদিন যেভাবে বেঁচেছি সেভাবেই বাঁচব। তোমার এই রাজত্বের মধ্যে থাকলেও একদিন ম’র’তে হবে, আবার ঐ জীবনে ফিরে গেলেও ম’র’তে হবে। আব্বুর সব সম্পত্তি পেয়ে যদি অমর হতাম তাহলে একটা কথা ছিল। তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করে প্রেশার বাড়াচ্ছ। ”

” পন্ডিত, তুই এহান থাইকা গেলি? তরে যদি এহন এইখানে আর দেখছি, তয় তর মাথা আমি ফা’টা’মু। ”
” আচ্ছা, যাচ্ছি। তুমি মনে সুখে বকবক কর আর প্রেশার বাড়াও। প্রেশার বেড়ে হার্টের প্রবলেম হবে। তখন চিকিৎসার জন্য আমার আব্বুকেই টাকা দিতে হবে। ”

শিউলি আক্তার তেড়ে আসলে হাসতে হাসতে দৌড় দেয় দৃষ্টি।
কুহু বাড়ির উঠানে থাকা পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝারি সাইজের গাছটাতে ডাঁসা ডাঁসা পেয়ারা ধরেছে। ও অনেক কসরত করে কয়েকটা পেয়ারা নামিয়ে ভাই-বোনকে ডাকে।
দৃষ্টি আর শিহাব ছুটে আসলে ওদের হাতে পেয়ারা ধরিয়ে দেয়।
” সোনা মা, এখানে কি করছিস? চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তোদেরকে প্রতিবেশি, আত্মীয়দের বাড়ি দেখিয়ে নিয়ে আসি। দৃষ্টি, শিহাবও চল। ”

ফুপুর কথার দ্বিমত করেনা কেউই। ততক্ষণে বাকি দুই ফুপুও এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা সবাই মিলে বেরিয়ে পরল। বাড়িতে থাকল কায়েস আর শিউলি।
” কায়েস বাড়িতে আছ? ও কায়েস? ” কেউ একজন বাহির থেকে কায়েসকে ডাক দেয়।
কায়েস বাহিরে এসে দেখল একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কায়েস তাকে চিনতে পারেনা।
” আপনি কে? চিনলামনাতো? ”

” আমাকে চিনতে পারছনা! আমি পশ্চিম পাড়ার জমির উদ্দিন। তোমার জমির চাচা। তোমার আব্বার জমি চাষ করতাম আমি। ”
এবার কায়েস তাকে চিনতে পারে।
” ওহ জমির চাচা! এবার চিনতে পেরেছি। আসেন চাচা, ভেতরে আসেন। আসলে এত বছর পর সবাইকে দেখছি, তাই চিনতে পারছিলামনা৷ আপনি কিছু মনে করবেননা চাচা। ”

” আরে বাজান, কিছু মনে করিনি। ভুল হইবারই পারে। আমি কালকাই শুনছি তুমি আসছ। তাই ভাবলাম দেখা কইরা আসি। কতদিন তোমারে দেখি নাই। আমি যে শুনলাম জব্বার খানের মেয়ে আইরিন, যারে তুমি বিয়ে করছিলা, সে নাকি মা’রা গেছে? পরে দ্বিতীয়বার আবার নাকি কাজ করছ? ”

কায়েসের মন বিরক্তিতে ছেয়ে যায়। জমির চাচার কথার ধরন তার পছন্দ হয়না। সে ছাড়া অন্য কারও মুখে আইরিনের নাম সে সহ্য করতে পারেনা। জমির চাচা কত সহজেই আইরিনকে মৃ’ত বলতে পারল! কিন্তু কায়েস তা বলতে কিংবা সহ্য করতে পারেনা। আইরিন যে ওর জন্য কি তা কায়েসই একমাত্র জানে। আইরিন চলে যাওয়ার পর থেকেই কায়েসের শরীরে অসুস্থতার বীজ বপন হয়। আর শিউলি আসার পর সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ডালপালা মেলেছে। শেকড় গেঁথে গেছে গভীর থেকে গভীরে।

” কি বাজান, চুপ কইরা থাকলা যে? আমার প্রশ্নের উত্তর দিলানা? ”
” ওহ্ চাচা। আপনি বসুন। তা কেমন আছেন আপনি? আর আমার সম্পর্কে যা শুনেছেন সত্যিই শুনেছেন। ” একবাক্যে জবাব দেয় কায়েস।
এমন সময় কুহু উঠানে প্রবেশ করে। উঠানের একপাশে বাবার সাথে কাউকে বসে থাকতে দেখে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু ততক্ষণে ও জমির উদ্দিনের নজরে পরে গেছে।
” কায়েস, এই মেয়ে কে? ”

” ও আমার বড় মেয়ে। ”
” তা তোমার মেয়ের সাথে পরিচয় করাবানা? ”
” কেন নয়, চাচা? কুহু এদিকে আয় তো মা। ”
কুহু সামনে এসে জমির উদ্দিনকে সালাম দেয়। জমির উদ্দিন সালামের উত্তর দিয়ে লোভী দৃষ্টিতে তাকায় কুহুর দিকে। হঠাৎই যেন তার শরীরে কামনার বান ডাকে। মনের মধ্যে নিষিদ্ধ ইচ্ছে জন্ম নিতে সময় নেয়না।
জমির উদ্দিনের তাকানোর ধরন কুহুর ভালো লাগেনা। ও প্রায় ছুটে ঘরে যায়।
আফরোজা নাজনীন এসে দেখলেন উঠানে জমির উদ্দিন বসা। তিনি জমির উদ্দিনকে সালাম দিলেন।
নাজমা পারভিন এই সময় জমির উদ্দিনকে দেখে বিরক্ত হন।

” চাচা, আপনি হঠাৎ এখানে? ”
” মা নাজমা, আমি কায়েসের সাথে দেখা করতে আসছি। গাঁয়ের ছেলে কত বছর পর গাঁয়ে ফিরল, এলাকার মেম্বার হিসেবে তার সাথে দেখা করা আমার দ্বায়িত্ব। কি বল? ”
” হুম, আপনি ঠিক বলেছেন চাচা। ” নাজমা পারভিন সেখানে আর দাঁড়াননা।
রাতে খাবার সময় আফরোজা নাজনীন কায়েসকে জানান তিনি কুহুকে তার সাথে ঢাকা নিয়ে যাবেন। সেখানে তিনি কুহুকে অ্যাডমিশন কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে দিবেন।

বড় বোনের কথার সাথে বাকি দুই বোনও তাল মেলান।
কায়েস প্রথমে আপত্তি করলেও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হয়। তবে সে কুহুকে বড় বোনের বাড়িতে থাকতে দিতে আপত্তি জানায়। তার ভয় আয়েশা সালেহার বোনের মেয়েকে সে বিয়ে করেনি। এর প্রভাব যদি তার মেয়ের ওপর পরে। কিন্তু আফরোজা নাজনীন তার ভাইকে ঠান্ডা মাথায় বোঝালেন যে, তার শ্বশুর বাড়ি কেউই বিষয়টি নিয়ে কায়েসকে দোষারোপ করেনা। এমনকি আফরোজা নাজনীন তার শ্বাশুড়ির সাথে কুহুর বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনিও চান কুহু ঢাকায় যাক।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫

অনেকক্ষন ধরে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, কুহু ঢাকায় যাবে। এবং তার দুই ফুপুর বাসাতেই থাকবে। শাহনাজ সুলতানা বাসায় থাকলে তার ছেলে আনান কুহুকে কোচিং-এ আনা-নেয়া করবে। আর আফরোজা নাজনীনের বাসায় থাকলে তার ছোট মেয়ে সিক্তার সাথে কোচিং-এ যাবে।
পরদিন সকালে কুহু সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। কায়েস মেয়েকে অনেক উপদেশ দেয়। ফুপুদের বাসায় কিভাবে চলতে হবে সেসব বলে দেয়।
দুরুদুরু বুকে কুহু গাড়িতে ওঠে। ওকে সামনে ডাকছে ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষণ।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৭