বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৭

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৭
জাওয়াদ জামী

ভীরু পায়ে কুহু প্রবেশ করে ‘ কুঞ্জছায়া’য় ‘। ভয়ে ওর মুখখানি ছোট হয়ে গেছে। ওর মা-বাবার জন্য না জানি কেউ কিছু বলে।
কুঞ্জছায়া’র ড্রয়িং রুমে ঢুকেই ওর মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম। এত বড় বাড়ি! বিশাল ড্রয়ি রুম!
এতবড় ড্রয়িং রুম ও ওদের ছোট টিভিতে দেখেছে।

ড্রয়িংরুমের অর্ধেক জায়গা জুড়ে দামী সোফা গোল করে রাখা। চারপাশে ছোট-বড় ফ্লাওয়ার ভাস। কর্নার স্ট্যান্ডে নানান শো-পিস শোভা পাচ্ছে। দেয়াল জুড়ে দামী পেইন্টিং নিজের দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
আফরোজা নাজনীনের পাশে কুহুকে দেখে আয়েশা সালেহা বুঝে গেছেন এটাই কায়েসের মেয়ে। তিনি হাসিমুখে কুহুর দিকে হাত বাড়ান।
আফরোজা নাজনীন কুহুর সাথে শ্বাশুড়িকে পরিচয় করান।
কুহু হাসিমুখে বৃদ্ধাকে সালাম দিলে, বৃদ্ধা ওকে বুকে জরিয়ে নেন।
তাহমিনা আক্তারও এগিয়ে আসেন। সামনে দাঁড়ানো মিষ্টি মেয়েটার দিকে চোখ পরতেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কি মায়াবী তার মুখখানি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আফরোজা নাজনীন তার মেজো জা’য়ের সাথে কুহুকে পরিচয় করালেন। এরপর তিনি সিক্তাকে ডাক দিলেন।
মা’য়ের ডাক শুনে সিক্তা নিচে আসে। ও ড্রয়িংরুমে নতুন মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে এটা কুহু। তাই কোন ফর্মালিটির ধার না ধরে ও কুহুকে জড়িয়ে ধরে।
” তুই-ই তাহলে আমার মা’য়ের, সোনা মা! শোন কিছু মনে করিসনা, তুই করে বললাম জন্য। আমরা যেহেতু একসাথে পড়ি, সেহেতু তুই বলতেই পারি। ”

” আমি কিছু মনে করিনি। তোমার যা ইচ্ছা হয় ডেক। ”
” আমি তোকে তুই বলছি, আর তুই আমাকে তুমি বলছিস! আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতি। নিজেকে কেমন পর পর মনে হচ্ছে। ” সিক্তা ভ্রু কুঁচকে বলল।

” সিক্তা, মেয়েটা আসতে না আসতেই শুরু করে দিয়েছিস! ওকে একটু সময় দে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। ”
মা’য়ের কথা শুনে সিক্তা হেসে দেয়। এরপর ও কুহুকে প্রায় টেনেহিঁচড়ে ওপরে নিয়ে যায়। কুহু এখন থেকে সিক্তার রুমেই থাকবে। যদিওবা আফরোজা নাজনীন কুহুকে আলাদা রুমে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সিক্তা রাজি হয়নি। ওর একটাই কথা, নতুনভাবে পাওয়া পুরাতন মামাতো বোনকে ও নিজের রুমেই রাখবে।

সানাউল রাশেদিন বাসায় এসে কুহুকে দেখে প্রথমেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তার বুকের ভিতর হুহু করছে। এই বয়সে মেয়েটা মা’কে ছাড়া দিন কাটায়। কুহুও যেন সানাউল রাশেদিনের আদর পেয়ে আবেগে ভেসে যায়। ভিজে ওঠে ওর চোখের কোন। বাবা ছাড়া কেউ ওকে এতটা ভালোবাসবে তা ওর ধারনায় ছিলনা।
কুঞ্জছায়া’য় খাপ খাওয়াতে কুহুর তিন দিনের মত লেগে যায়। এই তিনদিনে ওর অনেকটাই জড়তা কেটে গেছে। মিষ্টি হাসি আর মিষ্টভাষিণী হিসেবে ও জয় করেছে এই বাড়ির সবার মন।

এরমধ্যে ওর ছোট ফুপা তার মেয়ে আরোশিকে নিয়ে কুহুর সাথে দেখা করে গেছে। আরোশি এবার এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। সে খুবই ফ্রেন্ডলি বিহেব করেছে কুহুর সাথে। তবে ফুপুর ছেলে আনান আসেনি। তার ভার্সিটিতে ইম্পরট্যান্ট ক্লাস চলছে। এখানে আসলে ওর ক্লাস মিস হবে। তাই ও বলেছে দুইদিন পর ফ্রি হলে আসবে।
কায়েস নিয়মিত মেয়ের খোঁজ রাখে। সানাউল রাশেদিন কায়েসকে ফোন করে ঢাকা আসতে বলেছেন। তিনি চাচ্ছেন তাহমিদ না আসা পর্যন্ত কায়েস অন্য ডক্টরের তত্বাবধানে থাকুক। তাহমিদ আসলে তখন সে-ই দেখবে। যেহেতু তাহমিদও হার্ট স্পেশালিষ্ট। তিনি চাচ্ছেন কায়েসের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কায়েস বড় বোনের বাসায় আসতে ইতস্তত করতে থাকে।

কুহু আর সিক্তা মিলে ফোনে ওদের কাজিন মহলের ছবি দেখছে। যদিও কুহুকে আগেই নাজমা পারভিন সবার ছবি দেখিয়েছেন, কিন্তু সিক্তার কাছে আরও অনেক ছবি আছে। সেগুলো সিক্তা কুহুকে দেখাচ্ছে। আফরোজা নাজনীন ঢাকায় এসে কুহুকে ফোন কিনে দিয়েছেন। কুহুর জন্য নতুন পোশাক এনেছেন। মোটকথা, কুহুর যা যা প্রয়োজন তার সবই দিয়েছেন। শাহনাজ সুলতানা বলে দিয়েছেন, কুহু তার বাসায় গেলে তিনিও কিনে দিবেন।
অবশ্য তারা কুহুকেই শুধু দিচ্ছেননা। তারা গ্রাম থেকে আসার আগে দৃষ্টি আর শিহাবের কেনাকাটার জন্য টাকা দিয়ে এসেছেন।

তারা তিন বোন চান তাদের ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা যে কষ্ট এতদিন করেছে, আর যেন তাদের সেই কষ্ট না করতে হয়।
তিনদিন পর আনান এসে কুহুকে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। আনানের সাথে কুহুর কথা বলায় প্রথমে জড়তা থাকলেও, আনানের সদালাপী মনোভাবে সেই জড়তা কেটে যায়। ও আনানের সাথে কয়েকদিনের জন্য ছোট ফুপুর বাড়িতে চলে যায়।
ছোট ফুপুর মেয়ে আরোশি কুহুকে পেয়ে ভিষন খুশি হয়। আরোশি এবার এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে।

ছোট ফুপুর বাসায় কুহুকে সবাই সাদরে গ্রহণ করে। ছোট ফুপা মানুষটা বেশ। সারাদিন পর অফিস থেকে এসে, রাতে কুহু আর আরোশিকে নিয়ে তিনি গল্পের আসর জমান। কুহুর দিনকাল বেশ ভালোই যাচ্ছে। সারাদিন কোচিং, পড়াশোনা মাঝেই কাটছে। আনানও নিয়মিত ওকে পড়া দেখিয়ে দেয়।

কুহু ঢাকায় এসেছে পঁচিশ দিন হচ্ছে। এই পঁচিশটা দিন ওর কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন মনে হয়েছে। এই পঁচিশ দিনের মধ্যে একদিনও ওকে সংসারে চিন্তা করতে হয়নি। কিভাবে বাজারের টাকা জোগাবে, কিভাবে বাবার চিকিৎসা করবে, দৃষ্টি, শিহাবের স্কুল – কোচিং-এর বেতন দিবে কিভাবে, নিজের পড়নের কাপড় ছিঁড়ে গেছে, কাপড় কেনার জন্য টাকা পাবে কোথায়, এসবের কিছুই চিন্তা করতে হয়নি। আর ভবিষ্যতে এসব চিন্তাও করতে হবেনা। এখন ওর সামনে শুধু সুন্দর ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে।

কুহু বড় ফুপুর বাসায় এসেছে তিনদিন আগে। এ বাসার প্রত্যেকটা মানুষ ওকে আপন করে নিয়েছে। যা কুহুর কাছে অকল্পনীয়।
সকাল সাতটা বেজে দশ। সিক্তা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কুহু কখনো ফজরের নামাজের পর ঘুমাতে পারেনা। ছোট থেকেই এই অভ্যাসটা ওর নেই। খানিকক্ষণ বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকার পর, আর পড়তে ইচ্ছে করলনা। ওর রান্নাঘরে যেতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। এই বাসার রান্নাঘর অনেক বড় আর সাজানো-গোছানো। কুহুর খুব ইচ্ছে করে এই রান্নাঘরে একদিন রান্না করতে। যেই ভাবা সেই কাজ। কুহু দ্রুত পায়ে নিচে নামে।

তাহমিনা আক্তার দুইজন মেইডকে নিয়ে রান্নাঘরে কাজ করছেন। এই বাসায় সকালে একেকজন একেক খাবার খান। তাই প্রতিদিন সকালে সবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইটেম করতে হয়।
” আন্টি, আসব? ” রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কুহু তাহমিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
” ওমা! রান্নাঘরে আসতে হুকুম লাগবে! চলে আয়। আজ তুই কি খাবি বল। ”

” তোমরা যা খাবে, আমিও তাই খাব। আমি কি তোমাকে সাহায্য করব, আন্টি? আমি কিন্তু রান্না করতে জানি। ”
” তোর কিছুই করতে হবেনা। তুই শুধু বসে বসে আমাদের কাজ দেখ। যেদিন বাসায় সবাই থাকবে, সেদিন বরং রান্না করিস। এখন আমার থেকে শিখে নে, কে কেমন খাবার খায়। ”
কুহু একটা টুল নিয়ে এক কোনায় বসে তাহমিনা আক্তারের রান্না দেখতে থাকে। ও এসব খাবার এ বাড়িতে আসার আগ পর্যন্ত দেখেনি। তাই এসব রান্নাও করতে জানেনা। তাই সে খুব মনযোগ দিয়ে তাহমিনা আক্তারের প্রত্যেকটা রান্না দেখতে লাগল।

বিকেলে কোচিং থেকে এসে ড্রয়িংরুমে আয়েশা সালেহার কাছে বসেছে কুহু আর সিক্তা। বৃদ্ধা মনযোগ দিয়ে দুই নাতনীর গল্প শুনছেন। সিক্তা তাকে কুহুর ভয় পাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে। কুহু নাকি শুধু শুধুই ভয় পায়। কারও সাথে কথা বলতে চায়না। শুধু একমনে ক্লাস করে যায়। আবার রাস্তার ধারের কোন কিছু খেতে চায়না।
আয়েশা সালেহা সিক্তার কথা শুনে হেসে কুহুর গাল টেনে দেন। কিন্তু সিক্তার কথার জবাবে কিছুই বলেননা। কারন তিনিও বেশি কথা বলা, রাস্তার পাশের খাবার খাওয়া পছন্দ করেননা।

কুহু একসময় উঠে রান্নাঘরে যায়। সেখানে ওর ফুপু আর তাহমিনা আক্তার কিছু একটা করছেন।
” ফুপু তোমরা কি করছ? এই অসময়ে রান্নাঘরে কেন! ”
” আজ আমার ছেলে আসছে, তাই ওর পছন্দমত খাবার রান্না করছি, সোনা মা । ” আফরোজা নাজনীনের মুখ হাসি।
কিন্তু কুহু অবাক হয়ে গেছে। ওর ফুপুর ছেলে আছে কিন্তু ও জানেনা! কিন্তু ও যে শুনেছে ফুপুর চারটাই মেয়ে! সেই তিনজন আপুরই বিয়ে হয়ে গেছে। কুহুর হতভম্ব ভাব তাহমিনার চোখ এড়ায়না।

” কুহু মা, আমাদের দুই জা’য়ের একটা ছেলে আছে। সে আমাদের দুইজনকেই মা বলে মানে। শুধু ডাকের পার্থক্য আছে এই যা। আমাকে মা ডাকে, আর তোর ফুপুকে বড়মা ডাকে। সে কিন্তু আমার থেকে তোর ফুপুকে বেশি ভালোবাসে। সে তোর ফুপুর কাছে মাতৃদুগ্ধের ঋণে ঋণি। তোর ফুপুর সেই ছেলে আজ সিঙ্গাপুর থেকে আসছে। ”
কুহুর বুঝতে বাকি থাকেনা ঘটনা কি।

” কি রান্না করছ, ফুপু? আর উনি কি সিঙ্গাপুর থাকেন? ”
” না, সোনা মা। আমার ছেলে এখানেই থাকে। সে একজন হার্ট স্পেশালিষ্ট। একটা সেমিনারে যোগ দিতে সে একমাস আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিল। তুই আমার কাছে এসে দেখ, কি রান্না করছি। সিক্তাকে তো রান্নাঘরের চৌকাঠে আনতে পারলামনা। তুই বরং আমাদের রান্না দেখে রান্না শিখবি। ”

কুহু হাসিমুখে ফুপুর কাছে এসে দাঁড়ায়। মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে ফুপুর গরুর মাংসের কালাভুনা রান্না।
এদিকে তাহমিনা আক্তার ইলিশের সর্ষে বাটা রাঁধছেন। ইলিশ রান্না হলে তিনি চিংড়ির মালাই কারি করতে শুরু করেন।
” আন্টি, আমি মালাই কারি করব? আমি এই রান্না জানি। ” ভয়ে ভয়ে বলে কুহু।
” নে কর। এই সুযোগে আজকে তোর হাতের রান্না খাওয়া হবে। ”
কুহু আনন্দে রান্না করতে লেগে যায়। চিংড়ির মালাই কারি হলে, কুহু নিজের ইচ্ছেতে ছোট মাছ টমেটো দিয়ে চচ্চড়ি করল। এরপর তাহমিনা আক্তারের কথামত ডিমের কুসুম কোর্মা করল।

কুহুর কাজের ধরন তাহমিনা আক্তারের বেশ পছন্দ হয়। তিনি মনে মনে ভাবছেন, মেয়েটা বেশ কাজের।
আর কুহু মনে মনে ভাবছে, মানুষটা কি রা’ক্ষ’স! একজনের জন্যই এত আইটেম করছে ফুপু আর আন্টি মিলে!
রাতে খাবার পর যে যার রুমে চলে গেছে। কুহু এসে পড়তে বসেছে। সিক্তা ফোনে কিছুক্ষণ ওর বন্ধুদের সাথে বকবক করে পড়তে বসে। রাত সাড়ে এগারোটা বাজতেই কুহু শুয়ে পরে। সিক্তাও দেরি না করে ঘুমিয়ে পরে।

তাহমিনা আক্তার ও আফরোজা নাজনীন দুজনেই ছেলের অপেক্ষায় জেগে আছেন। কতদিন পর তাদের ছেলে ফিরছে।
রাত বারোটা দশ মিনিটে কলিং বেল বেজে ওঠে। আফরোজা নাজনীন প্রায় ছুটে যেয়ে দরজা খুলে দেন। তাহমিনা আক্তার হাসিমুখে বড় জা’য়ের কান্ড দেখছেন।

” বড়মা, আমার বড়মা, তুমি কেমন আছো? ” তাহমিদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বড়মাকে।
” আমি ভালো আছি, বাপ। তুই কেমন আছিস? আয় ভেতরে আয়। তোর মা জেগে ওঠে। ”
তাহমিদ ভেতরে এসে মাকেও জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষন তাদের সাথে কথা বলে নিজের রুমে যেয়ে গোসল সেরে নিচে আসে।
খাবার টেবিলে নানানরকম খাবার দেখে তাহমিদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
” কি করেছ, বড়মা! এত আয়োজন করেছ কেন! এত খাবার আমি খেতে পারব? ”
” কথা না বলে খাওয়া শুরু কর। অল্প অল্প করে সব আইটেম নে। এই একমাস কি খেয়েছিস আল্লাহই জানেন। কেমন শুকিয়ে গেছিস। আমি যা দিব চুপচাপ খেয়ে নিবি। ”

বড়মার মুখের ওপর কথা না বলে খাওয়ায় মনযোগ দেয় তাহমিদ। একটু একটু করে সব আইটেম নিলেও চিংড়ির মালাই কারি দিয়েই বেশি ভাত খায় ও। বিষয়টি তাহমিনা আক্তারের নজর এড়ায়না।
প্রতি রাতের ন্যায় শ্যামলাবরণ মেয়েকে স্বপ্নে দেখেই ঘুম ভাঙ্গলো তাহমিদের। চারদিকে তখন ফজরের আজান দিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই সে স্বপ্নে ঐ মুখটা দেখেছে। আজকাল ঐ মুখটা ওকে ঠিকমত ঘুমাতে দেয়না। চোখ বুঝলেই স্বপ্নে এসে রাজত্ব শুরু করে। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে ছাদে যায়। গত একমাস ছাদে যাওয়া হয়নি।

ছাদে এসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তাহমিদ। তখনই ওর চোখ যায় পূর্ব দিকে। সেখানে একটা হাফ ড্রামে লাগানো হয়েছে একটা ফুল গাছ। যা আগে ছিলনা। কাছে যেয়ে দেখল থোকায় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ফুটে আছে। তীব্র সুবাস সেই ফুলের। তাহমিদ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় হাত দিয়ে ফুল ছুঁয়ে দেয়।
কুহু নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করে। এদিকে সিক্তা ঘুমে কাদা। হাজার ডাকলেও ওঠার নাম নেই।
কুহুর রুমে থাকতে ভালো লাগছেনা। তাই ও ভোরের ভেজা বাতাসের স্পর্শ নিতে ছাদে যায়।

তাহমিদ ছাদের ছাউনিতে নামাজ আদায় করে সেখানেই শুয়েছে। থেকে থেকে শীতল মলয় এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর শরীর। আকাশে তখনও আলোর রেখা স্পষ্ট হয়নি। রাত নিজেকে ভোরের বুকে সমর্পন করলেও সূর্যের কাছে ধরা দেয়নি।
কুহু ছাদের দরজায় এসে দেখল দরজা খোলা। তবে কি মনি আপা ভুল করে কাল দরজা লাগায়নি! মনি আপাকে বলতে হবে, শোয়ার আগে যাতে সব চেইক করে শোয়।

দরজা ঠেলে কুহু ছাদে পা রাখে। শীতল মলয়ের আশায় ছাদের রেলিংয়ের দিকে যায়। কি মনে করে খুলে দেয় চুলের খোঁপা। একরাশ ঘনকালো কোঁকড়ানো চুল লুটোপুটি করতে থাকে পুরো পিঠ জুড়ে। হাওয়ার দুলুনিতে চুলগুলো উড়ছে।
ছাদে এসে কুহুর পুরো শরীরে সঞ্চারিত হয় শীতল মলয়ের ভেজা স্পর্শ। ও দিগন্তে তাকিয়ে উপভোগ করছে ধরনীর অকৃপণ রূপ।

তাহমিদ এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। কি মনে চোখ খুলতেই দেখল রেলিং ধরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। যার মেঘবরণ চুল হাঁটুতে বারি খাচ্ছে। বাতাসে তারা ছুটোছুটি করছে। মেয়েটি তাদের কোনও বাঁধা দিচ্ছেনা। কিন্তু এতবড় চুল এই বাড়িতে কারও নেই! তবে কে সে!
তাহমিদ একটু নড়ে উঠতেই ওর হাত পাশের চেয়ারে বারি খায়। একটু শব্দ হতেই কুহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
সামনে আধা শোয়া কাউকে দেখে ওর পিলে চমকে যায়। সেই লোকটার সাথে চোখাচোখি হতেই কুহুর মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেড়িয়ে আসে,

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৬

” ও মা গো। ” কথাটা উচ্চারণ করেই কুহু এক দৌড়ে নিচে যায়।
এদিকে তাহমিদ সেই অবস্থায়ই কিছুক্ষণ থাকে। এ কাকে দেখল! মেয়েটা কি আজকাল ভোরের আলোতেও দেখা দিচ্ছে! ওর রাতের ঘুম হারাম করে এবার কি দিনও কেড়ে নিতে চাচ্ছে!
বেচারা তাহমিদ বুঝতেই পারলনা, তার স্বপ্নকন্যার বাস তার বাড়িতেই। যাকে সে কল্পনা ভাবছে, সে-ই রমনীই তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৮