বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২২

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২২
শারমিন আক্তার বর্ষা

‘রাত একটা বাজে চুপিচুপি ওই বাড়িতে যাওয়ার কি আছে? যদি কেউ দেখে চোর ভেবে পিটুনি দেয় তখন কও হবে?’
ত্যক্ত কণ্ঠে কথাটি বলে তাজ। একহাত মুঠ করে ধপ করে পাশে একটা চেয়ারে বসে পরল ওয়াসিফ। রাগারাগি করছে তাজ। এই রাতে আরিশের একা বেরিয়ে যাওয়া ভালো চোখে নিচ্ছে না তাজ। প্রবীর মৃদুস্বরে বলে,

‘জানি না ভাই। এ.স এর মাথায় কখন কি চলে?’
আমান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘আরিশ যদি রুহানিকে ভালোই না বাসে তাহলে এই মধ্য রাতে ওর সাথে দেখা করতে গেলো কেন?’
প্রবীর বলে,
‘হয়তো এটাও ওর কোনো প্লানিং এর মধ্যে পরে।’
ওয়াসিফ রাগী গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘একটা মেয়ের ফিলিংস নিয়ে মজা করায় আমি আরিশ কে সাপোর্ট করতে পারবো না। রাজেশ কে হাতেনাতে ধরার অন্য উপায় আমরা বের করতে পারবো। শুধুশুধু একটা মেয়েকে বিপদে ফেলার কি দরকার?’
প্রবীর ওয়াসিফের কাঁধের ওপর হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,

‘দেখ ভাই। তুই বা আমি আমরা কেউই আরিশের মুখের ওপরে কোনো কথা বলতে পারবো না। জানিসই তো ও যখন যে প্লান করে সেটা ১০০% ওয়ার্ক করে। এখন শুধু বসে বসে দেখার পালা, আরিশ শাহ আসলে রুহানি মেয়েটার সাথে কিভাবে খেলে? তবে যাই বলিস দাবার গুটি টা কিন্তু মাশা আল্লাহ। মেয়েটাকে গুটি না বানিয়ে বউ বানালে বেশ মানাতো।’
আমান মৃদুস্বরে বলে,

‘রুহানি মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন মেয়েটার ব্যবহার।’
প্রবীর, ওয়াসিফ, তাজ আমানকে ঝাপ্টে ধরে। পেটে পিঠে কয়েকটা কিল-ঘুষি দিয়ে বলে,

‘সা*লা নিজে তো একটা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিয়েছিস। দেখলাম তো এতক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে লুতুপুতু প্রেম করছিলি।’
তাজ রাগী গলায় বলে,
‘আমাদের থেকে লুকাইলি কেন? বললে কি হত?’
প্রবীর বলে,

‘মেয়েটা কে?’
আমান লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। অস্ফুটে আওয়াজে বলে,
‘রুহানির বান্ধবী নাজিন।’
নাজিনের কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে যায়, প্রবীর, তাজ ও ওয়াসিফ। তিনজনে একসাথে বলে ওঠে,

‘ওই দ’জ্জা’ল মেয়েটা?’
আমান চোখ জোড়া ছোটছোট করে রাগী গলায় বলে,
‘ওই ও-কে একদম দজ্জাল বলবি না। তোদের হবু ভাবী হয়। ভাবী বলবি ভাবী।’
প্রবীর, ওয়াসিফ, আমান সশব্দে হাসি হেসে আমান কে আগের মতো ঝাপ্টে ধরে পিটুনি দিতে লাগে। আমান নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের মধ্যে দৌঁড়াচ্ছে। আমান কে ধরার জন্য ওর পিছনে ওরা তিন বন্ধু ছুটছে।

ডেসিন টেবিলের ওপরে গিফটের প্রোডাক্ট গুলো রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে রুহানি। বারবার শুধু ইয়াসিরের ওর সাথে ব্যবহারের কথা মনে পরছে। সেজন্য রাতে খায়নি। এক কাত হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। যে দেখবে সে ভাববে মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। শ্যামা, নাজিন ওরা সবাই একবার করে রুহানিকে ডেকে গেছে। কিন্তু কারো ডাকে সাড়া দেয়নি রুহানি।

মধ্য রাত ঝুলন্ত বারান্দা দিয়ে পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠে আসে আরিশ। হুডি পরে আসছে, নাক পর্যন্ত ডাকা। বারান্দায় কোনে দরজা নেই। পর্দা হাত দিয়ে সরিয়ে রুমের মধ্যে চলে আসে। বেডের পাশে ছোট্ট টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে, কেননা একদম অন্ধকারে রুহানি ঘুমাতে পারে না। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওর ভয় লাগে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় রুহানি কে অমায়িক সুন্দর লাগছে।

রুহানির হাতের পাশে বসে আরিশ। রুহানির দু’পাশে হাত রেখে রুহানি নিজের দুইহাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। রুহানির মুখশ্রী থেকে আরিশ মুখশ্রী কিঞ্চিত পরিমাণ দূরে। আরিশের গরম নিঃশ্বাস রুহানির মুখে পরতে রুহানি নড়েচড়ে ওঠে। চোখ মেলে তাকাই। চোখের সামনে একটা হুডি ওয়ালা লোককে নিজের এত কাছে দেখে ‘আহহ’ বলে চিৎকার দিতে নিচ্ছিল রুহানি।

আরিশ তার একহাত দিয়ে রুহানির মুখ চেপে ধরে। অন্য হাত দিয়ে হুডিটা মাথা থেকে খুলে ফেলে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় রুহানি স্পষ্ট দেখতে পায় আরিশের মুখটি। চোখ জোড়া টমেটোর মতো বড়বড় করে তাকাই আরিশের দিকে। আরিশ রুহানির চোখ দু’টি দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। আরিশের হাসি দেখে কপাল কুঁচকানো করে রুহানি।
আরিশ হাসি থামিয়ে বলে,

‘চিৎকার করছো কেন? ভূত দেখেছো?’
রুহানি কথা বলতে পারছে না। আরিশের হাত তার মুখের ওপরে। রুহানি নড়বে তারও উপায় নেই। আরিশ রুহানির হাত দু’টো ধরে বালিশের ওপরে চেপে রাখছে। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে মনে মনে রুহানি বলে,

‘আস্তো একটা গাঁধা। আমার মুখ চেপে ধরে জিজ্ঞেস করছে আমি ভূত দেখেছি কী না? হোয়াট ননসেন্স!’
আরিশ ভ্রু উঁচু করে শাসিত কণ্ঠে বলে,

‘আমি তোমার মুখের ওপর থেকে হাত সরাচ্ছি। তুমি কিন্তু ভুলেও চিৎকার করবা না। তুমি যদি চিৎকার করো তাহলে তোমার জন্য মোটেও ভালো হবে না। আমি আমার সঙ্গে করে সেলাই মেশিন নিয়ে আসছি। যদি ভুলেও চিৎকার করো আমি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো।’

আরিশ রুহানির মুখের ওপর থেকে হাতটি সরাতে রুহানি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘আপনি বিজনেস ম্যান নাকি ডাক্তার?’
আরিশ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,
‘তোমার জন্য প্রেমিক!’

রুহানি রাগে দাঁত দিয়ে ঠোঁটে কামড় বসালো। বিছানার ওপরে একটা খাবারের ব্যাগ রাখে। ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানি বের করে রুহানির সামনে রাখল। আঁড়চোখে দেখল, রুহানি রাগে ঠোঁট কামড়াচ্ছে।
রুহানিকে দেখে দুষ্ট হাসি দেয় আরিশ। বাম হাত রুহানির গালের ওপর রেখে নেশালো কণ্ঠে বলে,

‘আমি তোমাকে খু/ন করে ফেলবো রুহানি। এর পর যদি তোমার দাঁত দিয়ে আমার ওষ্ঠদ্বয়ে আঘাত হানো। তোমার এই নরম কোমল ঠোঁট দু’টোকে কামড়ে রক্তাক্ত করার অধিকার শুধু আমার।’
আরিশের দিকে ডেবডেব করে তাকাই রুহানি। অস্ফুটস্বরে বলে,
‘ফাইজলামি করছেন আপনি?’

আরিশ রাগে দাঁত কটমট করছে। একহাত রুহানির চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহানি ব্যথা পাচ্ছে। ওর একহাত আরিশের হাতের ওপর রেখে বিনয়ের সাথে বলে,
‘আমার ব্যথা লাগছে প্লিজ ছাড়ুন।’
আরিশ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,

‘তোমার কি মনে হচ্ছে, এই মধ্য রাতে আমি পাইপ বেয়ে তোমার রুমে আসছি। তোমার সাথে ফাইজলামি করার জন্য? আমি কে তুমি জানো? এ.স এর জন্য হাজারও মেয়ে পরে আছে। চাইলে ২৪ঘন্টা মেয়েদের নিয়ে বিছানায় পরে থাকতে পারি। কিন্তু আমার সব মেয়েদের দেহের প্রতি লালসা নাই রুহানি।

তোমাকে দেখার পর, আমার মন তোমাকে চায়। সব জায়গায় আমি তোমাকে খুঁজে পাই। আমার মন, শরীর সব কিছু শুধু তোমাকে চায়। মানে কি বুঝো তুমি রুহানি? আমি ভালোবাসি তোমাকে। ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলছি তুমি শুধু আমার। তোমার পুরো জীবন আমি আমার নামে লিখে দিয়েছি।’

বলেই রুহানির ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ লাগিয়ে দেয় আরিশ।
রুহানি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। হাত পা সমানে কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। বুকের মধ্যে হার্ট জেনো জোরে জোরে বিট করছে। আরিশ বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজ ওষ্ঠদ্বয় জোড়ায় হাত ছুঁয়ে দেয়। নেশালো কণ্ঠে জানতে চায়,

‘কেমন লাগলো?’
রুহানির ইচ্ছে করছে আরিশ কে মাথার ওপরে তুলে একটা আছাড় মারতে। একটা লোক এতটা নির্লজ্জ হয় কিভাবে? একে তো বিনা অনুমতি নিয়ে ও-কে চুম্বন করেছে। তার ওপর বেহায়ার মতো জিজ্ঞেস কেমন লাগছে? অসভ্য! রুহানি মনে মনে আরিশের পিন্ডি চটকালো। অস্ফুট আওয়াজে বলে,

‘আপনি খুব খারাপ।’
আরিশ রুহানির কোমড় চেপে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহানির ঠোঁটের কাছে আরিশ তার ঠোঁট জোড়া নিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলে,
‘জানু তোমার ঠোঁট ভীষণ নেশালো। আমি আবারও মত্ত হতে চাই ডুব দিতে চাই তোমার ঠোঁটে। হারিয়ে যেতে চাই তোমার ঠোঁটের নেশায়।’

বলে আবারও আরিশ রুহানির ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে নেয়। রুহানি বিছানার চাদর একহাতে খাবলে ধরে। অন্য হাতে আরিশের বুকের বা পাশে খাবলে ধরে। হুডির ওপর দিয়ে আরিশের বুকের বা পাশে রুহানির নখের আচর লেগে যায়।
চব্বিশ ঘণ্টা রুহানির ওপর নজর রাখে আরিশের লোকজন। তার ওপরেও রুহানির খবর শ্যামা আরিশকে জানায়। রুহানির মন খারাপ শুনে অস্বস্তি অনুভব করে আরিশ। সে সাথে শ্যামা এটাও বলে, রুহানি রাতে কিছু খায়নি ও দরজা ভেতর থেকে লক করে রাখছে।

অফিসের একটা মিটিং শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রুহানির সামনে দেখা করতে আসে। আসার সময় বন্ধু দের কল দিয়ে জানিয়ে দেয়। বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে ওয়ান টাইম প্লেটে বিরিয়ানি ঢেলে দেয়। রুহানি খেতে চায় না। আরিশ নিজ হাতে খাইয়ে দিতে নেয়। রুহানি রাগে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

আরিশ দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘এখন যদি ভালোয় ভালোয় না খাও। তাহলে কিন্তু!’
আরোহী রাগী গলায় বলে,
‘তাহলে কিন্তু কি?’
আরিশ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,

‘তুমি যদি আমার তোমার ঠোঁটের মধু বারবার খাওয়াতে চাও তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই মধু তো আমার সারাক্ষণ খেতে প্রস্তুত।’
রুহানি বড়বড় চোখ করে শুধালো,
‘মানে?’
আরিশ কাঠকাঠ কণ্ঠে বলে,

‘হয় তুমি আমার হাতে খাবার খাবে নয়তো আমার চুমু খেয়ে পেট ভরাবে। নাউ ডিসিশনস আর ইউর’স।’
রুহানি রাগে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বসে রইল। ইচ্ছে না থাকলেও খেতে রাজি হল। আরিশ মুচকি হেসে রুহানিকে ভালোবেসে খাইয়ে দিল।
খাবার শেষে গম্ভীর গলায় বলে,

‘এজন্যই বলে, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে। আঙুল টা একটু বাঁকাতে হয়।’
রুহানি আরিশের কথার অর্থ বুঝতে পারিনি। মাথা তুলে আরিশের দিকে তাকাতে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। রুহানি ও আরিশের চোখে চোখ পরতে আরিশ টুক করে একটা চোখ টিপ মারল। হা হয়ে তাকালো রুহানি। আরিশ ওঠে এসে রুহানির কপালে শুঁকনো এক চুমু দিয়ে বলে,

‘কখনো না খেয়ে নিজের শরীর কে কষ্ট দিবে না। আর যদি এরপর কখনো না খেয়ে থাকো তাহলে আমি এসে এভাবে চুমু দিয়ে খাওয়াবো। মনে থাকবে?’
রুহানি ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে ডান দিকে মাথা কাত করে। যার অর্থ হ্যাঁ। রুহানির গালে হাত ছুঁয়ে কিয়ৎক্ষণ রুহানির মুখশ্রীর দিকে তাকাই রইল। আরিশের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে ফেলে। আরিশ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে এক পলক রুহানিকে দেখে যেভাবে আসে সেভাবে চলে যায়।

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২১

রুহানির মন বলছে, আরিশকে আঁটকে রাখতে যেতে দিতে একদম ইচ্ছে করছে না। এই মূহুর্তে আরিশকে দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মন চাচ্ছে রুহানির। ভেবে পায় না রুহানি,লোকটা কেনো তাকে এত বেশি ভালোবাসে?

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৩