বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ২০

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ২০
নিশাত জাহান নিশি

“ইশ রে। একটু আগেই তো আমাকে অস্বীকার করলি! এখন আবার আমার থেকেই এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করছিস? নারী, তুমি শুধু ছলনাময়ী নও সুবিধাবাদীও বটে!”
মিশালের উস্কানিমূলক ও সরাসরি অপমানসূচক কথায় রাগে গাঁ পিত্তি জ্বলে ওঠল সামান্তার। নারীদের নিয়েই যতো বিদ্বেষ পুরুষদের। তাদের নিয়ে কটুক্তির যেনো অন্ত নেই তাদের।

একে তো সাহিলকে মারতে না পারার ক্ষোভ সামান্তার মধ্যে বহ্নি শিখা হয়ে জ্বলছে। দ্বিতীয়ত, তার বাবার কূটকাচালি যা সে আদোতেই ধরতে পারছেনা। তৃতীয়ত যুক্ত হলো মিশালের হাসি তামাশা। সব মিলিয়ে রাগে অতিষ্ট সে। যাকে সামনে পাবে তাকেই যেনো আক্রমন করবে। করলও ঠিক তাই! রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সামান্তা ডান হাতের কনুইয়ের সাহায্যে মিশালের পেট বরাবর সজোরে একটি গুঁতো দিলো! শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো সে এই কাজেই ব্যয় করল। আচমকা আক্রমন করেও সে শান্ত হতে পারলনা। রোষভরা গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“নারী শুধু সহিষ্ণু নয় শক্তিশালীও বটে! তাদের দুর্বল ও নিচু ভাবা পুরুষদের আমি তোমার মতো বিবেকবান মনে করিনা! কেন শুধু শুধু নিজেকে বিবেকহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করো? যা তোমার চারিত্রিক গুণাবলির সাথে একদমই যায়না।”
ঘটনার আকস্মিকতায় তাল সামলাতে না পেরে মিশাল পেছনের দিকে ঈষৎ ছিটকে গেল। সামান্তা এমনকিছু করবে তা মিশালের ভাবনারও অতীত ছিল। শরীরে ভর ছিলনা তার। মূলত এই কারণেই হিমশিম খেতে হলো তাকে। মুহূর্তেই হাতের বেড়ি ছুটে গেল মিশালের। সামান্তা ও মুক্তি পেল। কুঁজো হয়ে গেল মিশাল। পেটে হাত রেখে দুর্বল গলায় বলল,

“ওহ্ শিট। বুকের ব্যথার সাথে সাথে পেটের ব্যথাটাও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলি৷ এই হরিণী চোখের মেয়ে? আর কতো প্রকার অসুখ বাড়াবি তুই আমার? তোর দেওয়া অসুখে যে আমি তিলে তিলে মরতে চাই। একেবারে মরে যাওয়ায় তো কোনো স্বাদ নেই। তোর প্রেমে মরণ হোক আমার! ছটফট করে মৃত্যু হোক। মৃত্যুর যন্ত্রণা ও গভীরতা বুঝার সৌভাগ্য হোক আমার। শান্তিতে বাঁচতে না দে, শান্তিতে অন্তত ম’র’তে তো দে! আমার উপর কীসের এতো ক্ষোভ তোর?”

অত্যন্ত সাবধানতার সহিত মিশাল বিড়বিড় করে তার মনের অঘোষিত কথাগুলো বুনল! সামান্তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করল মিশাল আদোতে কী নিয়ে বিড়বিড় করছে। তবে বরাবরই সে ব্যর্থ হলো। স্পষ্টভাবে কোনো উক্তিই শ্রবণ করতে পারলনা সে। জানার আগ্রহ থেকে মিশালের দিকে এগিয়ে গেল সামান্তা। কোমরে হাত গুজল। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই? কী বিড়বিড় করছিলে তুমি?”
“তুই নারী না-কি ছু’রি তা নিয়ে ডিসকাস করছিলাম! তোকে রেসলিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া উচিৎ। এতে অন্তত শক্তির অপচয় হবেনা‌!
“আহারে। ব্যথা লেগেছে খুব? এইটুকু ব্যথাই সহ্য হচ্ছেনা? এবার বুঝলে তো? মেয়ে মানুষ চাইলে কতটা শক্তিশালী হতে পারে?”

“বুকের ভেতরে পুষে রাখা অকথ্য ও অসহ্য ব্যথা যে নিমিষেই হজম করে নিতে পারে, তার কাছে বাহ্যিক ব্যথা কিছুই নয়। উপরের খোলসে আর কি আসে যায়? তাকে তো মরতেই হয়। তবে ভেতরে থাকা আত্মার কী মৃত্যু হয়? হয়না তো। তাই ভেতরে পুষে রাখা ব্যথারও মৃত্যু নেই! মৃত্যুর পরেও ব্যথাকে বহন করতে হয়। নারীরা তখনই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যখন সে পুরুষ মানুষের আত্মার ব্যথাকে ছুঁতে পারে!”

সোজা হয়ে দাড়ালো মিশাল। শার্টের কলারটি ঝেড়ে নির্নিমেষ দুই আঁখিপল্লবে নির্লিপ্ত সামান্তার পানে তাকালো৷ বেজায় নির্বাক সামান্তা৷ মিশালের শক্ত কথার গভীরতা খুঁজতে ব্যস্ত সে। সামান্তাকে গভীরে ভাবতে দেখে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করল মিশাল৷ ভাবশূণ্য গলায় বলল,

“বাড়ি চল।”
“ভুলে গেলে? চা অফার করেছিলে?”
“মন নষ্ট হয়ে গেছে এখন আর যাবনা!”
“আশ্চর্য। কী করলাম আমি?”
“বললিনা ইচ্ছে নেই, তাই ঐ প্রসঙ্গ বাদ!”

“আজব। আমিতো রাগের মাথায় ঐ সময় বলে ফেলেছিলাম। সব কথা ধরতে হবে কেন?”
“রাগ কন্ট্রোল করতে পারলে বলিস তখন চা খাওয়াতে নিয়ে যাব!”
একরোঁখা ভাব নিয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো মিশাল। সামান্তা হয়রান হয়ে গেল মিশালের এহেন অস্বস্তিকর ও একঘেঁয়ে আচরণে। স্তম্ভিত হয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে রইল সে।

অপেক্ষায় রইল মিশাল! সামান্তা কখন তাকে পেছন থেকে ডাকবে। বলতে গেলে ধৈর্যের পরীক্ষাই নেওয়া হচ্ছিল সামান্তার। প্রত্যাশিতভাবেই সামান্তা এই পরীক্ষায় ফেল করল! পিছু তো ডাকলইনা বরং রক্তশূল দৃষ্টিতে মিশালের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। প্যান্টের পকেটে হাত গুজে মিশাল তৃপ্তির হাসি হাসল! পা ফেলে সামনের দিকে আগাতে লাগল। মাথা নুইয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“ধৈর্যের পরীক্ষায় তুই ফেল করলেও আমার মন মর্জির সাথে তোর কোনো অমিল নেই! তুই চলে গেলেও হয়ত আমি তোকে পেছন থেকে কখনও ডাকতাম না! ফিরলে ফিরবি নয়ত না! এতো ধরা বাঁধা কেন? এই একটা জেদ দুজনের মধ্যেই কাজ করে। আমরা কী তবে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নই? এভাবে কি আদো আমাদের এক হওয়া সম্ভব হবে? না-কি হারিয়ে যাব আমরা মহাকালের অভ্যন্তরে?”

বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল মিশাল। রাগে হাত-পা কচলাতে লাগল সামান্তা। নাক ফুলিয়ে অভিমানী গলায় বলল,
“ননসেন্স কোথাকার।সবসময় নিজের জেদটাকেই বড়ো করে দেখবে। আমার জেদের কোনো মূল্যই নেই তার কাছে। রাগ কন্ট্রোল করতে পারলেও ঐ শক্ত মনের মানুষটাকে কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়! একে কন্ট্রোল করতে হলে তো আমাকে সময়ে অসময়ে নরম হতে হবে আবার কঠিনও হতে হবে! কবে আমি এই গুনগুলো রপ্ত করতে পারব? সেই অবধি মানুষটা আদো আমার হবে তো?”

সামান্তাও বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। জানালার গ্রীল দ্বারা দুটি নিথর ও কলুষিত চোখ বহুক্ষণ যাবত সামান্তা ও মিশালকে পর্যবেক্ষণ করছিল। তারা দুজন বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতেই চোখ দুটি থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল! জানালা থেকে চোখ সরিয়ে বইয়ে মনোযোগ দিলো। জলের স্রোত এবার বাড়তে লাগল! এক পর্যায়ে হেঁচকি ওঠে গেল। বইয়ের উপর মাথা ঠেকিয়েই জেনিয়া ব্যথিত স্বরে বলল,

“তবে কী আমার ধারণাই ঠিক? সামান্তা আপু ও মিশাল ভাইয়ার মধ্যে কিছু একটা চলছে? আমি এই কঠিন সত্যিটা মেনে নিই কী করে? আমার মধ্যে যে এতো ধৈর্য্যশক্তি নেই!”

মিশাল তার রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই খেয়াল করল রান্নাঘরের পাশে থাকা খালি জায়গাটিতে রুমকি দাড়িয়ে। তবে স্বাভাবিকভাবে নয়। ফোনে কারো সাথে আলাপে লিপ্ত হয়ে। তার হেলেদুলে কথা বলা, মিটমিটিয়ে হাসা সব পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো সে সাধারণ কারো সাথে কথা বলছেনা।

বিশেষ কারো সাথে ফুরফুরে মন নিয়ে মধুর আলাপ করছে! সন্দেহপ্রবন হয়ে ওঠল মিশাল। নিঃশব্দে রুমকির পেছনের দিকটিতে দাড়ালো। ইতোমধ্যেই রুমকি দ্বিতীয় ব্যক্তির আভাস পেয়ে ফট করে কান থেকে ফোনটি সরিয়ে নিলো! কলটিও তাৎক্ষণিক কেটে দিলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে পেছনের দিকে তাকালো। মিশালের কঠিন ও সন্দিহান ভাবভঙ্গি দেখে রুমকি শুকনো ঢোঁক গিলল। শঙ্কিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কখন এলে ভাইয়া?”
“কার সাথে ফোনে কথা বলছিলিস তুই?”
“বাবান্ধবীর সাথে! কাকাকার সাথে আবার?”
“কোন বান্ধবী? নাম বল?”
“ঐ যে ত্বাহা? আমাদের পাশের পাড়ার আজিজ আঙ্কেলের মেয়ে।”

“ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার জন্য নিরিবিলি জায়গায় আসতে হবে কেন? কী এমন কথা বলছিলিস তোরা যা বাড়ির সবার সামনে বলা যায়না?”
“ভাইয়া আমি এখন বড়ো হয়েছি! ফ্রেন্ডসদের সাথে অনেক পার্সোনাল কথাই থাকতে পারে আমার! তুমি শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করছ।”

এই বলে রুমকি গোমড়ামুখো হয়ে মিশালকে উপেক্ষা করে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। পিছু ঘুরল মিশাল। রুমকির যাওয়ার পথে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রুমকি যে এখানে শুধু বান্ধবীর সাথে কথা বলতে আসেনি সে বিষয় মিশালকে বলে বুঝাতে হবেনা। রুমকিকে চোখে চোখে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো মিশাল! এই উঠতি বয়সে মেয়েরা ভুলটাকেও মধুর মনে করে। যদি রুমকি একটুও চালার চতুর হতো তবে না হয় মিশাল তাকে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত। যেহেতু রুমকি একটু সহজ সরল তাই তাকে নিয়ে কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে পরতে চায়না মিশাল। বুদ্ধিমান মানুষরা সহজ সরল মেয়েদেরই নিশানা করে।

চিন্তিত হয়ে রুমে প্রবেশ করল মিশাল। একের পর এক চিন্তা তার বেড়েই চলছে। রুমকিকে নিয়ে সে শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। দুনিয়ার সব চিন্তার মধ্যে এই চিন্তাটাকেই তার কঠিন চিন্তা বলে মনে হচ্ছে। বোনের জন্যই তো তার এতোকিছু! গোটা পরিবার টার জন্যই তো তার এতো ত্যাগ। সেই পরিবারেই যদি তার অসতর্কতার জন্য ক্ষতি নেমে আসে তবে লাভ কী তার পরিবারের ছায়া হয়ে?

রুমের দরজা ভেজিয়ে গাঁ থেকে শার্টটি খুলে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখল মিশাল। বেলকনির দিকে আচমকা দৃষ্টি পরতেই লক্ষ্য করল দুটি মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে! দৃষ্টি স্বচ্ছ, নিঁখুত ও সতর্ক হয়ে ওঠল মিশালের। দ্রুত পা ফেলে বেলকনির দিকে এগিয়ে যেতেই তার ঠোঁটের কোণে নিস্তেজ হাসির রেখা ফুটে ওঠল। শাহনাজ বেগমের মুখোমুখি দাড়িয়ে একজন তাগড়া যুবক! দুজনের মধ্যে টাকা-পয়সার লেনদেন হচ্ছে। বিষয়টিতে অবাক, উত্তেজিত কিংবা শঙ্কিত হয়ে উঠলনা মিশাল। বরং বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিলো!

ধীর পা ফেলে বেলকনি থেকে রুমের দিকে এগিয়ে এলো মিশাল। ধপ করে বিছানায় লম্বা হয়ে শুলো। মাথা যন্ত্রণায় চোখ বুজে মলিন স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
“এজন্যই মাসে মাসে এতোগুলো টাকার সংসার খরচ লাগে আমাদের। আপনি আজও শুধরালেন না মা! আমার কষ্ট, পরিশ্রম, মানসিক যন্ত্রণা কী চোখে পড়েনা আপনার?”

ইতোমধ্যেই সেলফোনটি বেজে ওঠল মিশালের। বেশ সময় নিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটি বের করল মিশাল। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত কলটি তুলল। তৎপর হয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসল। ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে মিজানুর রহমানকে উৎকণ্ঠিত গলায় শুধালো,
“হ্যাঁ বলো চাচা? সাহিল ভাই কী চলে গেছে?”
“হুম। মাত্র বিদায় করলাম।”

“কী বুঝালে তাকে? কী করতে চাইছ তুমি একটু ডিটেইলে বলবে চাচা?”
“আমি চাইছি সাহিলকে শান্ত করতে। তাকে স্বাভাবিক করতে। আমি জানি, তাকে ধীরস্থির করতে না পারলে আমি আমার মেয়ের লাইফটাকে এমনকি আমার বোনের লাইফটাকেও সেইফ করতে পারবনা! তুই হয়ত জানিসনা তমালের বংশধর একটা ডা’কা’তের বংশধর! একসময় তার বংশ ডাকাত ছিল!

এদের দ্বারা সব সম্ভব। আমার জেদের কারণে যদি আমার মেয়ে বা আমার বোনের কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তবে আমি নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবনা। আর এই বিষয়টা তুইও মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নে! সামান্তাকেও বুঝিয়ে বলিস। ফের সাহিলের সাথে হাড্ডাহাড্ডি করতে তাকে বারণ করিস। আর দরকারটাই বা কী সাহিলের সাথে লাগার? ডাকলেই কেন তাকে সাহিলের কাছে যেতে হবে? একটু ইগনোর করলেই তো চলে। মেয়েটাকে এসব বুঝিয়ে বলিস। এখন রাখছি আমি।”

কলটি কেটে দিলেন মিজানুর রহমান। কান থেকে ফোনটি বিছানার উপর রেখে মিশাল রাগে এক প্রকার বিষিয়ে ওঠে একটি সিগারেট ধরালো। বিছানার উপর পা তুলে এক হাঁটু উঁচিয়ে সেই হাঁটুতে ভর দিয়ে সিগারেট ফুঁকতে লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তবে সাহিলকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বনা। যেখানে আমার ফুফু, আমার “আত্মার মানুষ” তার অত্যাচারে ভালো নেই সেখানে তাকে আমি কী করে ছাড় দিই? ডাকাত তো আমিও কম নই! হয়তো পরিবারের কাছে তা বুঝাইনা। সময় হলে তা বুঝাতে আমি বিন্দুমাত্র কৃপণতা করবনা।”

সামান্তা ও রুমকি দুজনের মধ্যমনি হয়ে বসে রয়েছে জেনিয়া। মন মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ তার। রাতের খাবার খাবেনা বলে জেদ ধরে বসে আছে। কিন্তু সামান্তা ও রুমকিও নাছোড়বান্দা। তাকে জোর করে ধরে বেঁধে হলেও খাবার টেবিলে নিয়ে যাবে বলে দুজন জেনিয়ার পাশে আঠার মতো লেগে আছে। ব্যাপারটায় বেশ বিরক্ত জেনিয়া। এমন জোরাজোরি করলে চলে? অতঃপর টেবিল থেকে মাথা উঠাতে বাধ্য হলো জেনিয়া। অশ্রুসিক্ত ফোলা চোখে সামান্তা ও রুমকির দিকে তাকালো। অনুনয়ভরা গলায় বলল,

“প্লিজ তোমরা যাও। খাওয়ার মুড নেই আমার।”
আশ্চর্যিত হয়ে কপাল কুঁচকে রুমকি প্রশ্ন করার পূর্বেই সামান্তা প্রশ্ন করে ওঠল,
“কেন? কী হয়েছে তোমার? কেঁদেছ না-কি তুমি?”
“আমার মন ভালো নেই আপু। প্লিজ তোমরা যাও।”
“মন কেন ভালো নেই তা না জেনে আমরা কীভাবে যাব?”
“কাল থেকে তো আমার এক্সাম শুরু সেই টেনশনে কান্না পাচ্ছে।”
“উঁহু। এক্সামের টেনশন থেকে কেউ কাঁদেনা। মূল ঘটনা খুলে বলো?”

কাউকে কিছু বুঝাতে না পারার কষ্টে জেনিয়া জায়গা থেকে ওঠে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে প্রস্থান নিলো! বেকুব বনে দাড়িয়ে রইল রুমকি। নির্বাক সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ব্যাপারটা কী হলো আপু?”
“আমি বুঝতে পেরেছি!”

নির্বোধ রুমকিকে আরও একদফা ভাবনায় ডুবিয়ে দিয়ে সামান্তাও রুম থেকে প্রস্থান নিলো। হন্তদন্ত হয়ে একপ্রকার মিশালের রুমে প্রবেশ করল সামান্তা। ডিনারের জন্য রুম থেকে বের হচ্ছিল মিশাল। ইতোমধ্যেই সামান্তার আগমন। শার্টের বোতাম লাগাতে গিয়েও থামলো মিশাল। ভ্রু উঁচিয়ে সরু দৃষ্টিতে সামান্তার দিকে তাকালো। বুকের ওপর হাত গুটিয়ে রোষাগ্নি সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
“জেনিয়ার রাগ ভাঙিয়ে এসো!”
“হোয়াট?”
“শুনতে পাওনি? কানে কালা না-কি তুমি?”
“শুনেছি। তবে বুঝতে পারিনি। বুঝিয়ে বল?”
“জেনিয়া তোমার সাথে রাগ করেছে।”
“কিন্তু কেন? আমি আবার তাকে কী করলাম?”

“কি করোনি তা বলো? তুমি যেদিক দিয়ে যাবে ঠিক সেদিকেই আগুন ধরিয়ে আসবে! যেমন তেমন আগুন নয়। হৃদয় জ্বালিয়ে দেওয়ার আগুন। ভেতরে বাহিরে এতো তেজ কেন তোমার? পুরুষ মানুষকে এতো তেজিলা কেন হতে হবে? ”
“ইশ! তোরও কী তবে জ্বলে? দেখি কোথায় জ্বলে?”

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ১৯

“আজ্ঞে না। আমার জ্বলেনা! আমি বাদে দুনিয়ার সমস্ত নারীদের জ্বলে!”
“তা অবশ্য ঠিক। সেদিন তো স্বীকার করলি তুই না-কি কারো মনের রানী হয়ে বসে আছিস! যেহেতু রাজত্ব তোর, অন্য নারীদের মতো তোর এতো জ্বলবে কেন?”

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ২১