বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩১

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩১
নিশাত জাহান নিশি

“স্ক্রাউন্ডেলটাকে হসপিটালে ভর্তি করে এসেছি। ঘাঁ বেশ গভীরেই লেগেছে তার! সামান্তা এতো গভীরে জখম করতে পারবে তা আমার ধারণার বাহিরে ছিল!”

সামান্তা নিশ্চুপ। মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে রইল। গাঁ ঘিন ঘিন করছে তার। খানিকক্ষণ পূর্বেই তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো রিপিট টেলিকাস্টের ন্যায় তার কর্ণকুহরে তীব্র বেগে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। স্বচ্ছভাবে তা চোখের সামনেও ভাসতে লাগল। মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছে তার। যেনো উত্তপ্ত ভাপ বের হচ্ছে। আশপাশটা বিরক্তিকর লাগছে। ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একান্তে ও নিরিবিলি কিছুটা সময় কাটাতে মন চাইছে। ভেতর থেকে ফুপিয়ে ওঠল সামান্তা। মিশাল হয়তো কোনোভাবে সামান্তার না বলা বিষাক্ত অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরেছে। তাই এখানে দাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট কিংবা কথা বাড়াতে চাইলনা সে। দ্রুত গলায় সাহিলকে লক্ষ্য করে বলল,

“আশপাশটা সুবিধার মনে হচ্ছেনা ভাইয়া। আমরা গাড়িতে ওঠেও কথা বলতে পারব।”
তাৎক্ষণিক সাহিল গাড়িতে ওঠে গেল। তড়িঘড়ি করে ড্রাইভিং সিটে বসল। সামান্তাকে নিয়ে মিশাল ব্যাকসিটে বসল। ইতোমধ্যেই সাহিল গাড়ি ছেড়ে দিলো। পেছনের সিটে মাথা ফেলে দিলো সামান্তা। শরীর তার নিস্তেজ হয়ে এলো। শরীর দুর্বল থাকার দরুন চোখজোড়াও আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। সামান্তার দিকে ঘুরে বসল মিশাল। পেরেশান হয়ে ওঠল সে। বেশ ইস্তততা নিয়ে সামান্তার মাথায় হাত বুলালো। উদ্বিগ্ন স্বরে শুধালো,

“ঠিক আছিস তুই?”
“হেই ডোন্ট টাচ মি।”
নির্জীব শরীর নিয়েও গুঙ্গিয়ে ওঠল সামান্তা! মাথা থেকে মিশালের হাতটি এক ঝটকায় সরিয়ে নিল। শ্বাস-প্রশ্বাস তার উর্ধ্বগতিতে। মিশালও তার হাত গুটিয়ে নিলো। ভেতরের রাগ ভেতরে মজাতে লাগল! এই মুহূর্তে সামান্তাকে রাগানো যাবেনা কিংবা কোনো প্রকার দুর্ব্যবহারও করা যাবেনা। শান্ত মেজাজে সামান্তাকে যতোটুকু সম্ভব হ্যান্ডেল করতে হবে। আজ সকাল থেকে এই অবধি সামান্তার সাথে কী কী ঘটল তার বিবরণ জানতে হবে। গলা ঝাকালো মিশাল। শান্ত গলায় সাহিলকে ডেকে বলল,

“ভাইয়া পানি আছে?”
“ওয়েট দিচ্ছি।”
গাড়িতে রাখা একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল সাহিল দ্রুত মিশালের হাতে তুলে দিলো। বোতলটি হাতে নিয়ে মিশাল নিশ্চল ভঙ্গিতে সামান্তার দিকে বোতলটি এগিয়ে দিলো। গম্ভীর গলায় বলল,

“চোখমুখে পানি ছিটিয়ে নে ভালো লাগবে।”
“নো থ্যাংকস।”
“অযথা জেদ ধরিসনা তো। যা করতে বলছি কর।”
“আমার জেদ আমার ইচ্ছা। কারো কথা শুনতে হবে কেন?”
“ওকে ফাইন শুনিসনা। বাট আঙুল কীভাবে বাঁকা করতে হয় তা আমারও জানা আছে!”

রাগে গিজগিজিয়ে ওঠল মিশাল। বোতলের ছিপি খুলে কোষভর্তি জল নিয়ে সবটুকু জল সে সামান্তার চোখেমুখে ছিটিয়ে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই সামান্তা লাফিয়ে ওঠল। হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসল। হকচকিয়ে ওঠে আচ্ছন্ন দৃষ্টি ফেলল ক্ষিপ্র মিশালের পানে। প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হলো ব্যাপারটা? পানি ছিটালে কেন?”

প্রত্যত্তুরে মিশাল মৌন রইল। পুনরায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে বোতলে থাকা প্রায় বেশ অর্ধেক জল গড়গড়িয়ে সামান্তার মাথায় ঢেলে দিলো! সেই সাথে রোষভরা গলায় বলল,
“এই নে। এবার মাথা ঠান্ডা হবে। মুখ থেকেও মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হবে।”

মাথা অর্ধেক ভিজে গেল সামান্তার। চুল বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরতে লাগল তার সর্বাঙ্গে। তাৎক্ষণিক মাথা নুইয়ে নিলো সামান্তা। মাথায় হাত দিয়ে দেখল মাথা অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে গেছে তার! গরম ভাপটাও কেমন উধাও হয়ে গেল। যদিও রাগের বশে মিশাল তার উপকারই করেছে কিন্তু এই মুহূর্তে উপকারীর উপকার স্বীকার করতে নারাজ সামান্তা। রাগী দৃষ্টিতে সে চোখ তুলে তাকালো রগচটা মিশালের পানে। খরখরে গলায় বলল,

“কী করলে এটা? আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিলে কেন?”
“হট ছিলি তাই কুল করলাম! এতেও আমার দোষ?”
“ফালতু লজিক দিওনা তো মিশাল ভাইয়া। তুমি জানো তুমি এই মুহূর্তে আমার সাথে যা করেছ কতোটা বিবেচকহীন কাজ করেছ।”

“লিসেন? তুই এখন আমার সাথে যে রাগটা দেখাচ্ছিস না? সেই রাগটা কিন্তু তোর সাথে আমার দেখানোর হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাইট ছিল। বেহায়া বলে আমি তোর সাথে কথা বলছি ওকে? আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতনা? কবেই তোর মায়া ত্যাগ করে সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যেতো।”

“কেউ যদি আমার কথা পুরোপুরি না শুনে আমাকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যায় বিলিভ মি এতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই! প্রেম ভালোবাসায় তো বুঝাবুঝিরও কিছু ব্যাপার থাকে তাইনা? তোমাকে ছেড়ে দিব্যি ভালো ছিলাম এই চারদিন। তুমি না থাকায় খারাপ কোনো প্রভাব পরেনি।”

“হেই স্টপ হার্টলেস গার্ল! কী শুনব আমি? আর কী বুঝব? নিজের কানে যা শুনেছি তা অবিশ্বাস করব?”
“আমি এখন এই প্রসঙ্গে যেতে চাইনা মিশাল ভাই। বাড়ি ফিরতে চাই আমি। দয়া করে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও।”

সামান্তা অন্যদিক ফিরে গেল। মিশালও এই প্রসঙ্গ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইলনা। পরিস্থিতি ক্ষীণ স্বাভাবিক হলে ঠান্ডা মাথায় সে সামান্তার সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে এই চিন্তাভাবনা করল। তবে সামান্তার সাথে আজ কী ঘটল তা জানার তীব্র ইচ্ছা তাকে পেয়ে বসল। তবে সামান্তা যে এখন তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিবেনা তা মিশালের বেশ ভালোভাবেই জানা। তখনি মিশাল তার ফোন থেকে সাহিলের নাম্বারে ছোটো একটি মেসেজ পাঠালো! মেসেজটি দেখার পর সাহিল জায়গা থেকে নড়েচড়ে বসল। নীরব দর্শকের ন্যায় বসে থাকা সাহিল এবার মুখ খুলল। তৎপর গলায় সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই সামান্তা? এবার বল তো ওখানে কী কী হয়েছিল? আমাদের শোনাটা প্রয়োজন।”
জানালার কাঁচে মাথা ঠেকালো সামান্তা। ঝিম ধরে আসছিল তার। তবে সাহিলের জিজ্ঞাসাকে এড়িয়ে গেলোনা সে। ম্যারম্যারা গলায় বলল,

“গত দুইদিন আগে ফেসবুকের একটি পেইজ থেকে চাকরী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেখেছিলাম। কমেন্ট বক্স চেক করে অডিয়েন্সদের রেসপন্স দেখে ভাবলাম আমিও ট্রাই করে দেখি। তাদের পেজ ভিজিট করে মনে হলো ট্রাস্ট করা যায়। এতে ক্ষতি কী। তৎক্ষণাৎ আমি সেই পেইজের ইনবক্সে আমার চাকরী করার আগ্রহ তাদের জানাই। ওখান থেকে ফিডব্যাক আসে সিভি জমা দেওয়ার জন্য তাদের দেওয়া ঠিকানায় যেতে হবে। সেই সূত্র ধরে আমি আজ তাদের অফিসে যাই। তবে ওটা কোনোদিক থেকে আমার অফিস মনে হয়নি!

সাধারণ একটি ফ্ল্যাট বাড়ি ছিল। জাদরেল টাইপের কয়েকজন লোক ওখানে ছিল। স্যুট ব্যুট পরা একজন লোক চেয়ারে বসে ছিল। আমার আগে প্রায় কয়েকজন মেয়েকে দেখেছিলাম অফিস থেকে বের হতে। তারাও আমার মতো ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল। কিন্তু চাকরিটা তাদের হয়নি। বস না-কি তাদের রিজেক্ট করে দিয়েছে। তখন থেকেই আমার সবকিছু কেমন যেনো সন্দেহের ঠেকছিল।

আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা খারাপ হচ্ছিল আমার সাথে! নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। রুমে কিছু একটা স্প্রে করা হয়েছিল যার বিদঘুটে গন্ধ আমার নাকে এসে ঠেকছিল। ঢুলুঢুলু শরীরে বসের সামনে আমি চেয়ার টেনে বসা মাত্রই ফ্ল্যাটটিতে থাকা বাকী লোকগুলো এক এক করে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেল! টেবিলের উপর মাথা ঘুরে পরে গেলাম আমি। এরপর আর কিছু ঠাওর করতে পারিনি।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখলাম আমি ঐ ফ্ল্যাটেই অন্ধকার রুমে বদ্ধ অবস্থায় পরে আছি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। অদ্ভুতূড়ে অনুভূতি। হাতড়ে দেখলাম পাশে আমার কাঁধ ব্যাগটিও নেই। হতাশ হয়ে গেলাম আমি। চিৎকার চ্যাচাম্যাচি জুড়ে দিলাম। তখন আচমকাই মনে হলো বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আমি বুক পকেটে করে আমার নোকিয়া ফোনটি এনেছিলাম! কারণ আমার এন্ড্রয়েড ফোনটি রিপেয়ার করার পরেও হ্যাং করছিল।

ভাগ্যিস ফোনটি আমি ব্যাগে রাখিনি! যদিও এই ট্রিকটি আমি একটি লাইফ হ্যাংকিং ভিডিও থেকে দেখেছিলাম। সৌভাগ্যবশত এই ট্রিকটি আমার এই বিপদের সময় কাজে দিয়েছিল। প্রথমে আমি ঐ ফোন থেকে বাবাকে কল করি কিন্তু বাবা কলটি তুলেনি। দ্বিতীয় অপশন হিসেবে মিশাল ভাইয়াকে চুজ করেছিলাম কিন্তু কেনো জানিনা তাকে কল করার ইচ্ছে হয়নি! তখন আচমকা তোমার ফোন নাম্বারটি আমার সামনে পরল।

ভাবনাচিন্তা ব্যতিরেকে তোমাকেই কলটা করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই তুমি কলটি তুললে। এরপরের ঘটনা তো তোমার জানাই। তোমাদের পাশাপাশি আমিও ঐ লোকটিকে উত্তম মধ্যম দিয়েছি! তবে এসবের মাঝখানে আমি মিশাল ভাইকে একটি কথা বলতে চাই, টুটুল চৌধুরীকে আজ সকালের দিকে আমি ঐ ফ্ল্যাটের পার্কিং এরিয়ায় দেখেছিলাম। তাও আবার পুরোপুরি নয়, আংশিকভাবে। এক পলক দেখতেই তিনি মুখ ঢেকে নিয়েছিলেন।

প্রথমে আমি তাকে চিনতে না পারলেও অনেক চিন্তা ভাবনার পর তার চেহারাটা চিনতে আমি সক্ষম হয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছে এখানে বড়ো কোনো ‌র‌্যাকেট কাজ করছে! মেয়েদেরকে চাকরী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ফ্ল্যাটে ডাকা হচ্ছে। তাদের চাহিদা মতো মেয়ে পেয়ে গেলেই আমার ধারণা মতে তাদের পাচার করা হচ্ছে! এছাড়া আর কোনো মোটিভ আমার চোখে পরছেনা। আমিই হয়তো একমাত্র লাকী মেয়ে যে কি-না তাদের ফাঁদ থেকে বের হতে পেরেছি। যারা এসব করছে তাদের এভাবে ছেড়ে দিলে চলবেনা। এর বিরুদ্ধে কিছু একটা উদ্যোগ নিতে হবে।”

মিশালের পিলা চমকে ওঠল। ঘুরে তাকালো সে সামান্তার দিকে। উত্তেজিত গলায় শুধালো,
“তুই সিওর ওটা টুটুল চৌধুরী ছিল?”
“ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।”

সামান্তার সন্দেহ ভুল নয় তা মিশাল অনেক আগেই টের পেয়েছিল। যখন টুটুল চৌধুরী তার কমপ্লেন নিচ্ছিলনা! সেইফ করতে চাচ্ছিল ঐ সো কলড অফিসের বসকে। তাকে উল্টো হসপিটালে ভর্তি করাতে বলল। মিশালের সন্দেহ এখন আরও গাঢ় হলো। গাড়িতে থাকা অবস্থাতেই মিশাল টুটুল চৌধুরীকে কল দিলো। প্রথম কলটি বেজে ওঠতেই টুটুল চৌধুরী কলটি তুললেন। ভীত গলায় তিনি হ্যালো বলতেই মিশাল ডানপিটে হাসল। গলা ঝেড়ে শুধালো,

“কী খবর স্যার? শুনলাম আপনি নাকি চাকরী থেকে ডিসমিস হচ্ছেন?”
“হোয়াট? পাগল হয়েছিস তুই? কী যা তা বকছিস?”
“উত্তেজিত হবেন না স্যার। প্লিজ শান্ত হোন। গলাটা একটু ভিজিয়ে নিন। আমার কিছু সোর্স থেকে জানতে পারলাম আপনি না-কি মেয়ে পাচার র‌্যাকেটের সাথে জড়িত আছেন! এটা কী সত্যি?”
“বেশি বাড় বেড়ে গেছিস মিশাল। নিজের ইখতিয়ারের মধ্যে থাক। ভুলে যাসনা তুই আমার টাকার কেনা গোলাম! তোকে ভ্যানিশ করে দিতে আমার দুই সেকেন্ডও সময় লাগবেনা।”

“এতো ইজি নয় মিশালকে ভ্যানিশ করা। আমি তখনই নিজের ইখতিয়ারের মধ্যে থাকব যখন আপনি আমার পেছনে আঙুল দেওয়া বন্ধ করে দিবেন! আমার কিংবা আমার পরিবারের পেছনে লাগা বন্ধ করে দিবেন। সামান্তাকে ওখানে দেখার পরেও আপনার উচিত হয়নি তাকে ট্রেপে ফালানোর। এর ফল আপনাকে ভোগতে হবে! জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!”
কলটি কেটে দিলো মিশাল। টুটুল চৌধুরী অস্থির হয়ে ওঠলেন। এসির নিচে থেকেও তিনি ঘামাতে লাগলেন। ঢকঢক করে পানি গিলতে লাগলেন। চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলেন। অধৈর্য গলায় বিড়বিড় করে বললেন,

“তোর পেছনে আঙুল দিতে চাইনি বলেই তো সামান্তাকে পাচার করিনি! এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছি তাকে। তবে এই র‌্যাকেটটিকে এখন এখানেই বন্ধ করতে হবে! পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে এই নিয়ে ভাবা যাবে। তোর সাথে বিশ্বাস নেই মিশাল। তুই যে কোনো সময় আমাকে ডুবিয়ে দিতে পারিস!”

সামান্তাকে সুস্থভাবে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মিশাল ও সাহিল বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। সামান্তাকে পেয়ে বাড়ির সবাই ভীষণ রকম আবেগী হয়ে গেল। তাকে জড়িয়ে ধরে সবাই কান্নাকাটি জুড়ে দিলো। মিজানুর রহমানও চোখের জল ফেলতে কৃপণতা করেননি। তিনিও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। সামান্তা শক্ত থেকে সবাইকে শান্তনা দিতে লাগল।

সাইফা ও সায়মাকে বুঝিয়ে বলল চাকরীর বিজ্ঞাপন পেলেই কিছু যাচাই বাছাই না করে শুধুমাত্র কয়েকটা ফেইক পেইজ কিংবা কমেন্টের ওপর ভিত্তি করে সেই চাকরীর পেছনে না ঘুরতে। বর্তমানে অনলাইন জগতটা মানুষদের মধ্যে এতো বেশী প্রভাব বিস্তার করছে যে তারা খারাপ দিকগুলোও অতি সহজভাবে গ্রহণ করে নিচ্ছে। মিথ্যেকেও সত্যি হিসেবে গ্রহণ করতে দুবার ভাবছেনা তারা। নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্যকর বিষয় গুলোও বিশ্বাস করে নিচ্ছে। যা পরবর্তীতে তাদের জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজ সামান্তাও এই পরিস্থিতির শিকার হলো।

সাহিল তার গাড়িতে ওঠার আগে মিশালকে ডাকল। দুই ভাই পাশাপাশি দাড়ালো। পকেট থেকে সাহিল একটি সিগারেট বের করে সেই সিগারেটটি ধরালো। সিগারেটটিতে দুটো টান দিয়ে সাহিল অর্ধ খাওয়া সিগারেটটি মিশালের দিকে এগিয়ে দিলো। মিশালও টান দিলে সিগারেটটিতে। মুখ থেকে ধোঁয়া বের করে সাহিল ভাবুক গলায় বলল,
“কী সিদ্ধান্ত নিলি? ব্যবসা বানিজ্য করবি নাকি চাকরী বাকরী?”
উদাস মিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“যাই করিনা কেন সবক্ষেত্রেই তো টাকার প্রয়োজন। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা কী করব।”
“টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবেনা তোর। টাকার জোগাড় হয়ে যাবে। তুই চাইলে আমরা দুই ভাই মিলে একটা বিজনেস স্টার্ট করতে পারি!”

“কী বিজনেস?”
“এক্সপোর্ট ইমপোর্টের।”
“শিওর দিতে পারছিনা। কজ আমার পকেট শূণ্য।”
“তুই আমার পার্টনার হয়ে থাকবি জাস্ট এটুকুই? টাকার যোগান আমি দিব।”
“ফুফা মানবে তো?”

“বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তুই আমার পাশে থাকবি কি-না বল?”
জোরপূর্বক হাসল মিশাল। সিগারেটটিতে শেষ ফুঁক দিয়ে বলল,
“কেন নয়? এতো সুযোগ সুবিধা আমি কোথায় পাব?”
“ওকে। কিছুদিনের মধ্যেই আমি লাইসেন্সের ব্যবস্থা করছি। আপডেট পেয়ে যাবি তুই।”

এই বলে সাহিল গাড়িতে ওঠে গেল। মিশালের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। মিশাল তার বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার পথেই টের পেল তার পেছন দিয়ে কোনো একটা ছায়া সরে গেল!মিশালের ধ্যান কাটল। তাৎক্ষণিক মিশাল পিছু ঘুরে তাকালো। কে কে বলে চিৎকার করে ওঠল। একছুটে মিশাল বাড়ির গেইটের দিকে এগিয়ে যেতেই রাস্তার বাম পাশে তাকিয়ে দেখল কেউ একজন দৌড়ে রাস্তার শেষ সীমানায় চলে গেল! মিশালও পিছু পিছু দৌড়াতে যাবে তখনই রুমকি পেছন থেকে মিশালকে ডাক দিলো। ভীরু গলায় মৃদু চিৎকার করে বলল,

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩০

“কী হয়েছে ভাইয়া? কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
থেমে গেল মিশাল। রুদ্ধশ্বাস ফেলল। পিছু ফিরে চিন্তিত রুমকির দিকে তাকালো। হাঁপানো গলায় বলল,
“কেউ একজন হয়তো আমাদের বাড়িতে ঢুকেছিল।”
রুমকির দিকে তাকাতেই মিশাল সন্দেহপ্রবন হয়ে ওঠল! কপাল কুচকে সে রুমকির দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“এই কী হয়েছে তোর? এই রাতের বেলায় তুই এতো সেজেগুজে আছিস কেন?”

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩২