অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৩

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৩
অরনিশা সাথী

মেরুন রঙের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বিছানায় বসে আছে রুজবা। একটু আগেই পার্লার থেকে দুজন মহিলা এসে ওকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। শাড়ির ভাজে আজকেও চিরকুট পাঠিয়েছে নুহাশ। বধু বেশে সবার আগে দেখার আবদার জানিয়েছে মানুষটা। রুজবা কিছুক্ষণ থম মেরে রয়।

অতঃপর ফোন হাতে নিয়ে নিজের কয়েকটা ছবি তুলে সেন্ড করে নুহাশের হোয়াটসঅ্যাপে।
রুজবা’কে ঘিরে বসে আছে ওর কাজিন আর বান্ধবীরা৷ ওরা নানান কথা বলে রুজবাকে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু রুজবা ওদের কথা তেমন ভাবে শুনছেই না। অন্যমনস্ক ভাবে কি যেন ভাবছে। দরজায় টোকা মারতেই সবার দৃষ্টি দরজার দিকে যায়। সাহিল আর আনিকা দাঁড়িয়ে আছে। ফারিন রুজবার হাত ধরে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“সাহিল ভাই আর আনিকা আপু আসছে রুজবা।”
রুজবা চকিত তাকালো দরজায়। দুজনকেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুজবা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। মৃদু হেসে বললো,
–“ওখানে কেন? ভেতরে আসো।”
সাহিল আর আনিকা ভিতরে আসলো। রুজবা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আনিকা’কে। কিছুক্ষণ বাদে ছেড়ে দিয়ে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বললো,

–“কথা নেই তোমাদের সাথে, কাল আসোনি কেন দুজনে?”
সাহিল শব্দ করে হেসে দিলো। রুজবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“আজ এসেছি তো, রাগ করিস না। তোর বিয়েতে একদম চারদিন আগে এসে বসে থাকবো।”
রুজবা হাসলো। ফারিন ওদের বসতে বললো। রুজবা জিজ্ঞেস করলো,

–“খেয়েছো তোমরা?”
–“মাত্রই এসেছি।”
–“খেয়ে আসো আগে।”
রুজবা নৌশিনকে ইশারা করতেই ও সাহিল আর আনিকাকে নিয়ে খাওয়ার ওখানে গেলো।

নুহাশ মেরুন রঙের শেরওয়ানী গায়ে জড়িয়েছে। রুজবা’দের বাসায় যাওয়ার জন্য সকলেই প্রস্তুত। কিয়ান, রিয়ান আর নিবির তিনজনেই নুহাশের সাথে ওর রুমে আছে। চার ভাই মিলে এটা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। নির্ঝর নুহাশের গলা জড়িয়ে ধরে ওর কোলে বসে আছে। আদিরা ব্যস্ত পায়ে নুহাশের ঘরে এসে বললো,

–“এই তোমাদের এখনো হয়নি? ওদিকে বাবা তাড়া দিচ্ছে তো। জলদি বের হও।”
ওরা সম্মতি জানিয়ে বের হয়ে এলো। সকলেই রেডি। নুহাশ গিয়ে ওর মা’কে সালাম করে বললো,
–“আসছি মা।”
শাহানা বেগম নুহাশের কপালে চুমু দিয়ে ওর গালে আদূরে স্পর্শ করে বললো,
–“হু সাবধানে যাস।”

নুহাশ ওর মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে উলটো দিকে ঘুরতেই কেউ একজন এসে হুট করে জড়িয়ে ধরলো ওকে। মেয়েটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। নুহাশ সহ সকলেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় সেদিকে। নুহাশ জোর করে মেয়েটাকে সরিয়ে দিতেই দেখলো এ আর কেউ না লিয়া। মূহুর্তেই নুহাশের মেজাজ চটে যায়। শাহানা বেগম লিয়াকে দেখে ভীষণ খুশি। উনার ভাইঝি এই নিয়ে দু’বার বাংলাদেশ এসেছে। উনি খুশিমনে এগিয়ে গেলো লিয়ার দিকে। লিয়ার গালে হাত রেখে বললো,

–“তুই এসেছিস মা? আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। তোর বাবাকে আসার কথা বললে তো জানালো অফিসে কাজের চাপ তাই আসতে পারবে না। তুই আসবি এটা বলেনি তো।”
–“ড্যাড জানতো না প্রথমে। হুট করেই আমি ডিসিশন নিয়েছি তাই হয়তো তোমাকে জানানোর সুযোগ পায়নি।”
–“এসে খুব ভালো করেছিস। এখন ফ্রেস হ জলদি। ওদের সাথে যা তুই’ও।”
লিয়া নুহাশের সামনে গিয়ে বললো,

–“তুমি এই বিয়েটা কিভাবে করছো নুহাশ?”
নুহাশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
–“কিভাবে করছি মানে?”
লিয়া নুহাশের গলার কাছের শেরওয়ানী খামচে ধরে বললো,
–“আমাকে রেখে তুমি রুজবাকে কি ভাবে বিয়ে করছো? আমি তোমায় ভালোবাসি নুহাশ।”

ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলের মাথায় যেন ছোট খাটো একটা বাজ পড়লো। শুধু কিয়ান আর আদিরা ছাড়া৷ কেননা ওরা দুজন সব জানে। নুহাশ বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। শেরওয়ানী থেকে লিয়ার হাত সরিয়ে বললো,
–“একদম বাড়াবাড়ি করবে না লিয়া৷ তোমার সাথে আমার সেরকম কোনো সম্পর্ক ছিলো না যে আমি রুজবাকে বিয়ে করতে পারবো না৷ তুমি শুরু থেকেই জানতে রুজবাকে আমি ভালোবাসি। আর ওকে পাওয়ার একটা সুযোগ পেলেও আমি সেটা হাত ছাড়া করবো না। সবকিছু জেনেশুনে তুমি ভালোবেসেছো কেন? এখানে আমার কিছুই করার নেই।”

–“ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড নুহাশ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি এই বিয়ে করো না।”
নুহাশ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
–“মা তোমার ভাইঝি’কে বলো পথ ছেড়ে দাঁড়াতে। আ’ম অলরেডি লেট।”
শাহানা বেগম পড়লেন মহা বিপাকে। লিয়ার কথার আগামাথা বুঝতে সময় লাগছে উনার। লিয়াকে টেনে নিজের কাছে এনে বললো,

–“কি ভুলভাল বলছিস? আমার নুহাশ তো রুজবাকে ভালোবাসে। ওকে বিয়ে করবে না তো কাকে বিয়ে করবে? তুই এসেছিস নুহাশের বিয়েতে আনন্দ কর, হই হুল্লোড় কর।”
–“স্যরি ফুপ্পি আমি আনন্দ হই হুল্লোড় করতে আসিনি। আমি নুহাশকে ভালোবাসি। তুমি ওকে বলো না এই বিয়েটা না করতে৷ আমি ওকে খুব ভালো রাখবো। খুব ভালোবাসবো প্লিজ ফুপ্পি বলো না। তুমি বললে ও শুনবে।”
শাহানা বেগম কিছু বলার আগেই নুহাশ বললো,

–“মা তোমার ভাইঝি’কে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলো। এক কথা বার বার বললে রাগ উঠে যাবে আমার। তখন গায়ে হাত’ও উঠতে পারে। আমি চাই না এই মূহুর্তে কোনো ঝামেলা করতে।”
শাহানা বেগম লিয়াকে বোঝাতে আপ্রান চেষ্টা করছে। মেয়েটা কিছুতেই মানছে না। এক প্রকার চিৎকার করেই লিয়া বললো,
–“রুজবা, রুজবা আর রুজবা। কি আছে ওর মাঝে যা আমার মাঝে নেই? ওর থেকে বেশি সুন্দরী আমি। ইউএসএ এর অনেক ছেলেরা আমার পেছনে ঘুরে আমি তাদের পাত্তা দেই না শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে। তোমার জন্য আমি ইউএসএ থেকে এখানে ছুটে আসলাম আর তুমি সেজেগুজে রুজবাকে বিয়ে করতে যাচ্ছো? ওই মেয়ের তো আগে সম্পর্ক ছিলো। এখন সম্পর্ক ভেঙেছে তাই তোমার ঘাড়ে চাপতে চাইছে। দেখো কোনো নোংরামি করেছে কিনা, চরিত্রের ঠিক___”

নুহাশ সজোরে চ/ড় বসায় লিয়ার গালে। সেখানে উপস্থিত সকলে হতভম্ব। নুহাশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“আর একবার যদি ওকে নিয়ে বাজে কথা বলেছো তো আই সোয়্যার, আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো।”
কথাটা বলে কিছুটা দম নেয় নুহাশ। তারপর আবার শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমি ফিরে যেন তোমার ভাইঝি’কে এ বাড়িতে না দেখি আর।”
কথাটা বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। ওর পেছনে বাকী সবাই ছুটলো। লিয়া চোখের পানির মুছে চোখ কটমট করে তাকিয়ে নুহাশের চলে যাওয়া দেখলো। শাহানা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লিয়াকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

গুটিগুটি পা ফেলে ছাদে উঠেছে রুজবা। ফটোশুট করা হবে এখন। সাথে ফারিন মিনহা নৌশিন সকলেই আছে। এমন কি সাহিল আর আনিকা’ও সাথে। রুজবা প্রথমে ওর মা বাবা ভাই বোনকে ডেকে ফ্যামিলি ফটো তুলেছে। তারপর ফ্রেন্ড কাজিন’রা মিলে একসাথে। সাহিল আর আনিকার সাথেও ছবি তুলেছে বেশ কিছু। নিচ থেকে রুপশা দৌড়ে এসে বললো,
–“নুহাশ ভাই চলে এসেছে, গেট ধরবে না তোমরা? চলো তাড়াতাড়ি।”
কথাটা বলেই রুপশা আগের ন্যায় ছুটে নিচে নেমে গেলো। ফারিন ওরা সবাই নিচে নেমে যায়। যাওয়ার আগে ক্যামেরাম্যান বললো,

–“আমি না আসা অব্দি কোনো কথা শুরু করবেন না আপনারা৷ আমি বউয়ের কিছু সিঙ্গেল শট নিয়েই চলে আসবো।”
মিনহা ওরা সম্মতি জানিয়ে চলে যায়। ক্যামেরাম্যান নানান স্টাইলে রুজবার ছবি নিচ্ছে, ভিডিও করছে। তারপর নিচে চলে গেলো। ছাদে তখন সাহিল আনিকা আর রুজবা। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুজবা। ওর পাশেই আনিকা। সাহিল পকেট থেকে ফোন বের করে বললো,

–“এদিকে তাকাও আমি ছবি তুলে দেই দুজনের।”
দুজনেই হেসে সম্মতি জানালো। সব শেষে রুজবার চোখ যায় সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো জারাফের দিকে। কেমন চোখে যেন ওকেই দেখছে। রুজবার বুকটা ধক করে উঠলো। উলটো দিকে ঘুরে কান্না আটকানোর প্র‍য়াশ চালালো। সাহিল বুঝতে পেরে রুজবার পাশে এসে দাঁড়ায়। নিচে তাকিয়ে জারাফ’কে দেখতে পেয়ে বললো,

–“কাঁদবি না রুজবা, আজ তোর বিয়ে নিচে নুহাশ এসে পড়েছে এখনো ওর জন্য কেন কষ্ট পাচ্ছিস?”
–“ও এখানে কেন এসেছে সাহিল ভাই? আমার এমনিতেই কষ্ট হচ্ছিলো, এখন আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।”
–“আমি চলে যেতে বলছি ওকে।”
রুজবা সাহিলের হাত ধরে আটকায়। ভাঙা গলায় বলে,
–“ওকে একবার এখানে নিয়ে আসবে সাহিল ভাই?”
আনিকা রুজবা’কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,

–“পাগল হইছো তুমি? কি সব বলছো?”
রুজবা করুন স্বরে বললো,
–“প্লিজ একবার।”
সাহিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। হুট করেই নুহাশের হাসিমাখা চেহারাটা ভেসে উঠে রুজবার চোখে। এই মানুষটাকে কি ঠকাচ্ছে না ও? মানুষটার তো কোনো দোষ নেই। তাহলে তাকে কেন কষ্ট দিবে ও? এই ভেবে সাহিলকে বললো,

–“যেও না সাহিল ভাই।”
আনিকা রুজবার কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“ঠিক আছো?”
রুজবা মাথা নাড়ায়। অতঃপর আনিকা আর সাহিলের সাথে নিচে নিজের রুমে চলে আসে।

সবার খাওয়া শেষে নুহাশ ওরা খেতে বসেছে এক টেবিলে৷ নুহাশ আদিরা’কে কিছু একটা ইশারা করতেই আদিরা রায়হান সাহেব’কে বললো,
–“আংকেল রুজবা কোথায়? ও খেয়েছে?”
রায়হান সাহেব তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
–“খাচ্ছে না কিছুই, কাল রাতে খেয়েছে আর খাওয়াতে পারিনি।”
আদিরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
–“ওকে নিয়ে আসছি আমাদের সাথে খাবে।”

রায়হান সাহেব সম্মতি জানালো। আদিরা আর জান্নাত উঠে যায় রুজবা’কে নিয়ে আসার জন্য। ক্ষানিক বাদেই নিয়ে ওকে। রুজবাকে দেখেই নুহাশের চটে যাওয়া মেজাজ মূহুর্তেই ভালো হয়ে গেলো। একরাশ প্রশান্তি এসে হানা দিলো হৃদয় জুড়ে। নুহাশের পাশে বসানো হলো। খাবার বেড়ে দেওয়া হয় সকলের প্লেটে। রুজবা খেতে চায় না। জান্নাত কয়েক লোকমা জোর করে খাইয়ে দেয়। খাওয়ানো শেষে দুজনকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাদে গিয়ে দুজনের বেশ কিছু কাপল ছবি আর ভিডিও করা হয় তারপর আবার নিচে নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় দুজনকে পাশাপাশি বসানো হলো।

কাজী এসে কাবিননামায় সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে লিখে নুহাশের দিকে এগিয়ে দেয়। নুহাশ চটজলদি সিগনেচার করে দেয়। তারপর এগিয়ে দেয় রুজবার দিকে। রুজবা ছলছলে চোখে সবার দিকে তাকায়। রায়হান সাহেব চোখ দিয়ে সিগনেচার করতে বললে রুজবা কাঁপা কাঁপা হাতে সিগনেচার করে দেয়। এবার হুজুর এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। নুহাশ’কে কবুল বলতে বললে সময় না নিয়েই কবুল বলে দেয়। রুজবা বেশ কিছুটা সময় নিয়ে কবুল বলে। কবুল বলার আগে বারবার জারাফের মুখটা ভেসে উঠছিলো চোখের সামনে। পরমূহুর্তেই কাল সন্ধ্যায় বলা রায়হান সাহেবের কথাগুলো কানে বেজে উঠলো। আর কিছু না ভেবে কাঁপা স্বরে কবুল বলে দেয়। সারাজীবনের জন্য দুজনে একে অপরের প্রতি বাঁধা পড়ে যায় আজ। আজ থেকে ওরা দুজন স্বামী-স্ত্রী।

সকল রিচুয়্যালস শেষ করে নুহাশ আর রুজবা’কে নিয়ে রাফাতের রুমে বসানো হয়। রুজবার ঘর ফুল দিয়ে সাজানো হবে। এতক্ষণ আদিরা জান্নাত রিয়ান নিবির সকলে থাকলেও মিনিট পাঁচেক আগেই বাসায় চলে গেছে ওরা। নুহাশের সাথে শুধু কিয়ান আছে। সাহিল আর আনিকা বিয়ে পড়ানোর পরেই চলে যায়। বাড়িটা এখন মোটামুটি ফাঁকা বললেই চলে। রুজবার খালামণি’রা শুধু আছে। বাকী সবাই বিকেলের পর পরই চলে গেছে।

কিয়ান, ফারিন, নৌশিন, মিনহা, রুপশা, রাফাত সবাই মিলে নুহাশ আর রুজবা’কে ঘিরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। রুজবার ছোট খালামণি এসে তাড়া দিলো বাসর ঘর সাজানোর জন্য। ফারিন ওরা দ্রুত উঠে পড়ে। এখানে আড্ডায় এতটাই মশগুল ছিলো যে বাসর সাজানোর কথা একদম ভুলে গিয়েছে। চটজলদি ওরা সবাই উঠে দাঁড়ালো। হুড়মুড়িয়ে একেকজন দৌড়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। এখন শুধুমাত্র কিয়ান, নুহাশ আর রুজবা বসে আছে। কিয়ান নুহাশের কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

–“আলাদা সময় কাটা দুজনে, আমি যাই ওদের সাথে। আবার উল্টাপাল্টা করতে যাস না খবরদার, একেবারে বাসর ঘরে গিয়েই যা করার করিস।”
নুহাশ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই কিয়ান হাসতে হাসতে চলে যায়। নুহাশ সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে রুজবার দিকে তাকায়। রুজবা এক-কোনে জড়সড় হয়ে বসে আছে। হাত ডলছে। রুজবার ভেতরে ভেতরে অস্থির লাগতে শুরু করলো। পাশে বসা এই মানুষটা ওর স্বামী, ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। সাথে ভয় লাগছে, লজ্জা লাগছে। নুহাশ বেশ কিছুক্ষণ গভীর ভাবে লক্ষ্য করলো রুজবাকে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে বললো,

–“নার্ভাস?”
পুরুষালি ভরাট কন্ঠে চমকে পাশে তাকায় রুজবা। এতটা সময়ে এই প্রথম ও নুহাশের দিকে তাকালো। লোকটা ওর সাথেই ম্যাচিং করে মেরুন রঙের শেরওয়ানী পড়েছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে। নুহাশ মুখ টিপে হাসলো। রুজবার দিকে ঝুঁকে বললো,
–“কি দেখছো?”

রুজবা দ্রুত দৃষ্টি সরায়। লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়। ইশ্ এতটা সময় বেহায়ার মতো লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিলো কেন ও? নুহাশ হাসলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে রুজবার হাত ধরে বললো,
❝আজকে আমার জীবনে সবথেকে খুশির দিন রুজবা জানো? আমি পেয়েছি তোমাকে। আমার ভালোবাসা সার্থক হয়েছে। লাইফে একমাত্র তোমাকেই ভালোবেসেছিলাম আমি, আর তোমাকেই হালাল ভাবে চেয়েছি। আল্লাহ আমার চাওয়া পূরণ করেছে। সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখবো আমি।

এক ফোঁটা জল আসতে দিবো না তোমার চোখে৷ আগে যা হয়েছে, হয়েছে। সব ভুলে একবার আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করো কথা দিচ্ছি কখনো ঠকবে না তুমি। আমার সবটা দিয়ে শুধু তোমাকে ভালোবাসবো আমি। #অনেক_সাধনার_পরে তোমাকে পেয়েছি তোমাকে ছাড়া আর দ্বিতীয় কিচ্ছু ভাবতে চাই না আমি। তোমাকে পেয়ে আমার এখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে, জানো?❞

রুজবা কিছু বললো না। মন দিয়ে ওর কথাগুলো শুনেছে শুধু। নুহাশ রুজবাকে নিজের মুখোমুখি করে বসালো৷ দুহাতে রুজবার গাল ধরে নিজের দিকে আনলো। নুহাশের স্পর্শে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে রুজবা। নুহাশ বললো,
–“আমার চোখের দিকে তাকাও।”
রুজবা তাকালো না। বরং আরো মাথা নুইয়ে রাখলো। নুহাশ আবারো বললো,
–“তাকাও।”

ধীর ভাবে মাথা তুলে নুহাশের চোখে চোখ রাখে রুজবা। নুহাশ বললো,
–“আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পারছো রুজবা?”
রুজবা দৃষ্টি সরালো না। নুহাশের চোখেই তাকিয়ে আছে। অপলক ভাবে। চোখের পলক ফেলছে না। নুহাশ বাঁকা হেসে বললো,

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২২

–“প্রথমে তাকাবে না, এখন তো আবার দেখছি আমার বউ চোখের পলক’ও ফেলছে না।”
রুজবা দ্রুত দৃষ্টি সরায়। লজ্জায় হাঁসফাঁস করে। বারবার বউ ডেকে লোকটা এত লজ্জা দেয় কেন ওকে? আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলো। তা দেখে নুহাশ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা শব্দ করেই হাসে।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৪