অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৪

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৪
অরনিশা সাথী

বাসর ঘরের দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে রুপশা, ফারিন, নৌশিন, মিনহা এমন কি কিয়ান’ও নাম লিখিয়েছে ওদের দলে। সকলের দিকে অতি বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে নুহাশ আর রুজবা। নুহাশের থেকে রুজবার মুখেই বিরক্তির ছাপ বেশি মনে হচ্ছে৷ নুহাশ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–“কি চাই?”
কিয়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
–“টাকা।”
নুহাশ কপাল কুঁচকায়। দাঁতে দাঁত চিপে বলে,
–“সে তো আমার শালীকারা চাইবে কিন্তু তুই এখানে ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিয়ানের মুখটা ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে যায়। রুজবা হেসে দেয় ফিক করে। নুহাশ এক পলক সে হাসির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। কিয়ান পরমূহুর্তেই গর্জে উঠে বলে,
–“একদম ভিক্ষুক বলে অপমান করবি না। এখানে সুন্দরী বেয়ান’রা আছে। ওদের সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা কেন বানাচ্ছিস ভাই?”
নুহাশ একগাল হেসে বললো,

–“কারেক্ট, এখানে তোর সুন্দরী বেয়ান’রা আছে। সো আমার হয়ে ওদের সাথে ঝগড়া করবি তুই। কিভাবে আমার টাকা বাঁচাবি তা ভাববি। তা না করে তুই ওদের সাথে মিলে আমার টাকা হাতানোর ধান্দা করছিস? বেয়াদব।”
মিনহা হেসে বললো,
–“আপনারা ভাই-ভাই পরে ঝগড়া করবেন, আগে আমাদের টাকা দিন। আমরা চলে যাই।”
–“কত টাকা চাই?”
ফারিন কিছু সময় ভেবে বললো,

–“পনেরো হাজার। আকদ বলে একটু কম চাইলাম।”
কথাটা বলে একগাল হাসলো ও। নুহাশ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। রুজবা বিরক্ত হয়ে বললো,
–“টাকা নুহাশ ভাই____”
সকলেই একসাথে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
–“নুহাশ ভাই???”
রুজবা আমতা আমতা করে বলে,

–“না মানে টাকা তো উনি দিবে, আমাকে আটকে রেখেছিস কেন? উনাকে আটকে রেখে আমাকে যেতে দে, ঘুম পাচ্ছে ইয়ার।”
কিয়ান রুজবার দিকে ঝুঁকে বললো,
–“ঘুম পাচ্ছে নাকি অন্যকিছু? আদর আদর ফিল আসছে না?”
রুজবা চোখমুখ কুঁচকে বললো,
–“ছিইইই অশ্লীল।”

কিয়ান হো হো করে হেসে উঠে রুজবার কথায়। রুজবা ততক্ষণে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়েছে। নুহাশ’কে নিয়ে এসব কখনো কল্পনাতেও আনেনি ও। অথচ ভাগ্য ওকে সেই মানুষটার সাথেই সারাজীবন এর জন্য জুড়ে দিলো। ভেবেই একটা তপ্ত শ্বাস ফেললো। নৌশিন সময় দেখে বললো,
–“এগারোটার ঘর পেরিয়ে যাচ্ছে নুহাশ ভাই। বউ নিয়ে কি বাসর ঘরে ঢোকার ইচ্ছে নেই? দ্রুত টাকা দিলে তো আপনারই ভালো বউ নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকতে পারবেন, বউকে তাড়াতাড়ি____থাক আর বললাম না। এবার টাকা দেন তো দেখি।”

নুহাশ কিছু বলার আগেই কিয়ান নুহাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ চটজলদি টাকা বের কর তো।”
নুহাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
–“তোকে দেবো কেন?”
–“কারণ এই মূহুর্তে আমি কনেপক্ষ। তোর বন্ধু, ভাই কোনোটাই না।”

নুহাশে’র চোখ যায় কিয়ানের পাঞ্জাবীর পকেটের দিকে। ওয়ালেট দেখা যাচ্ছে ক্ষানিকটা। নুহাশ গলা ঝেড়ে বললো,
–“একটু এদিকে শোন কিয়ান।”
কিয়ান সোজা মনে নুহাশের সাথে একটু সাইডে যায়। কথার ফাঁকে নুহাশ আলগোছে কিয়ানের পকেট থেকে ওয়ালেট সরিয়ে নিজের কাছে রাখে। তারপর বলে,

–“তুই তো আমার ভাই বল? একটু টাকার এমাউন্ট কম কর। শুধু বেয়ান’দের দিক দেখলেই হবে? ভাই’র দিকটা দেখবি না একটু?”
কিয়ান দাঁত কেলিয়ে হাসলো। ভাব নিয়ে বলে,
–“আজকে নো ছাড়াছাড়ি, টাকা টা জলদি দিয়ে রুজবাকে নিয়ে বাসর ঘরে যা তো। পাঁচ বছর অপেক্ষা করছিস এই দিনটার জন্য। এখন টাইম ওয়েস্ট করছিস কেন?”
রুজবা কেঁশে উঠে কিয়ানের কথায়। বাকীরা সবাই মিটিমিটি হাসে। নুহাশ আবার ফারিন ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

–“কত টাকা যেন বলেছিলে?”
রুপশা বললো,
–“পনেরো হাজার।”
নুহাশ কিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে উলটো দিকে ঘুরে যায়। কিয়ানের ওয়ালেট থেকে আঠারো হাজার টাকা বের করে ওয়ালেট পকেটে রেখে দেয়। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিনহার হাতে পনেরো হাজার টাকা দিয়ে দেয়। টাকা পেয়ে সকলেই খুশি। নুহাশ আরো তিন হাজার টাকা বেশি দিয়ে বললো,

–“এই যে আরো তিন হাজার, এটা তোমাদের গিফট আমার তরফ থেকে।”
ফারিন খুশি হয়ে বাসর ঘরের দরজা খুলে দেয়। রুজবা ঘরে ঢুকতে গেলেই রাগী স্বরে বলে,
–“তুই এভাবে যাবি বলে কি এতক্ষণ তোকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম নাকি?”
–“মানে?”
–“নুহাশ ভাই তোকে কোলে করে ঘরে নিবে। কি নুহাশ ভাই নিবেন না কোলে?”
–“অবশ্যই নেবো।”

কথাটা বলে চট করেই কোলে তুলে নেয় রুজবাকে৷ রুজবা হকচকিয়ে যায়। অবাক হয়, চমকায়। বিস্মিত চোখে তাকায় নুহাশের দিকে। রুজবা আচমকাই বুঝতে পারে ওর ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে৷ সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে যাচ্ছে যেন। হাত পা সিরসির করছে। হৃদপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। বুকের ভেতরে ধরাস ধরাস করছে। বুঝতে পারলো সারা শরীর কাঁপছে ওর নুহাশের এই স্পর্শে। নৌশিন হেসে ঘরের দিকে হাত দেখাতেই নুহাশ ফটাফট ভেতরে ঢুকে যায়৷ রুজবাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আবার দরজার সামনে ফিরে আসে। কিয়ান সবার আগে ছিলো৷ সবাই একসাথে বলে,

–“অল দ্যা বেস্ট বোথ অফ ইউ।”
নুহাশ মৃদু হাসলো। ওদিকে রুজবা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসে রয়। হঠাৎ করেই ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর। নুহাশ আর ও একসাথে একই ঘরে থাকবে? দুজনে বেড শেয়ার করবে? ভাবতেই অজানা শিহরণে শরীর কাটা দিয়ে উঠছে ওর। কিয়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,

–“পাঁচ বছর সাধনার পরে পাইছিস, একটু ধীরে সুস্থে হ্যাঁ?”
নুহাশ দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। ‘গুড নাইট’ বলে ধড়াম করে কিয়ানের মুখের উপর দরজাটা আটকে দিলো। এতে কিয়ান ওরা সকলেই হো হো করে হেসে উঠে।
নুহাশ ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। লজ্জায় গুটিয়ে আছে রুজবা৷ দুহাতে পড়নে শাড়ি খামচে ধরে আছে। ওর কেমন যেন অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। নুহাশ মৃদু হাসলো রুজবার কাঁপুনি দেখে। নরম স্বরে বললো,

–“ফ্রেস হবো, চেঞ্জ দিয়েছে কিয়ান?”
রুজবা মাথা নাড়ালো৷ বিছানা ছেড়ে উঠে কাবার্ড থেকে নুহাশের জন্য টাওজার আর টি-শার্ট বের করে ওর হাতে দেয়। নুহাশ মৃদু হেসে ফ্রেস হতে চলে যায়। রুজবা এতক্ষণে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। মিনিট দশেক বাদে নুহাশ ফ্রেস হয়ে রুজবা’কে বললো,

–“চেঞ্জ করে আসো, নামাজ পড়বো একসাথে।”
রুজবা সম্মতি জানায়৷ কাবার্ড থেকে প্রথমে সেলোয়ার-কামিজ বের করেও আবার রেখে দেয়। কি মনে করে যেন কালো পাড়ের লাল সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।

একের পর এক সিগারেট শেষ করছে জারাফ। পাশে এখনো অর্ধ খোলা সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে। এবং পায়ের কাছে অসংখ্য সিগারেটের শেষাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। পাশে রাখা ফোনটা বারবার বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে। নিদ্রা ফোন করছে বারবার। জারাফ তুলছে না। সে শূণ্যে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে ব্যস্ত। ওর পাশে বসেই সাহিল গভীর ভাবে লক্ষ্য করছে জারাফকে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“রুজবা’কে প্রথম যখন নুহাশের বাইকে দেখেছিলি তখন তোর এই অবস্থা হয়েছিলো আর আজ আবার সেই একই অবস্থা। সেদিনের থেকে আজ একটু বেশিই খারাপ অবস্থা তোর। কারণ রুজবা সেদিন নুহাশের বাইকে ছিলো, আর আজ নুহাশের সাথে বাসরঘরে।”
জারাফ সিগারেট ছুঁড়ে মেরে দুহাতে কান চেপে ধরে হুংকার ছেড়ে বললো,

–“শুনতে চাই না এসব। সহ্য হচ্ছে না আমার, একটুও সহ্য হচ্ছে না।”
–“মেয়েটা অনেক ভালোবাসতো তোকে। ও থাকতে চেয়েছিলো তোর হয়ে কিন্তু তুই ওকে রাখতে চাসনি।”
–“ও তো আমায় ভালোবেসেছিলো রাইট? তাহলে আজ নুহাশকে বিয়ে করে ওর সাথে বাসর___”

কথাটা শেষ করলো না জারাফ। কথাটা ভাবতেই বুক কাঁপছে ওর। আচ্ছা ওর তো কষ্ট হওয়ার কথা না ও নিজেই রুজবাকে ছেড়ে নিদ্রাকে বেছে নিয়েছে, তাহলে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেন? তবে কি ও সত্যিই ভালোবেসেছিলো রুজবাকে? টাকার কাছে নিজের ভালোবাসা বলি দিয়েছিলো? ভাবতে পারছে না আর। সেই মূহুর্তে আবারো নিদ্রার ফোন। এবারে ফোন রিসিভ করলো ও। গম্ভীর স্বরে বললো,

–“বউ সাজো, আমি হুজুর নিয়ে আসছি। আজ এক্ষুনি বিয়ে করবো আমরা। কাল অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিবো।”
নিদ্রাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয় ও। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“মুখেই যত ভালোবাসি বলেছে। অথচ আমার আগেই বিয়ে করে নিলো। আমার আগে বিয়ে করে আমাকে দেখাচ্ছে ও? জ্বালাতে চাইছে আমায়? আমিও দেখি কিভাবে জ্বালায় ও আমাকে। জারাফ জুহায়ের কে টেক্কা দেওয়া মুখের কথা না।”
সাহিল অবাক চোখে তাকায় জারাফের দিকে। তার মানে কি জারাফ এতক্ষণ রুজবার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে কষ্ট পাচ্ছিলো না? ও আগে বিয়ে করে মেয়েটাকে আরো কষ্ট দিতে চাইছিলো? ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চাচ্ছিলো? কি চায় ও? কেন করছে এসব? ভেবে পায় না সাহিল। জারাফ উঠে দাঁড়ায়৷ বললো,

–“চল, বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়েতে ছিলি আর বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে থাকবি না তা কি হয় নাকি?”
কথাটা বলে সাহিলের হাত ধরে টেনেই বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো ও।

আড়ষ্ট হয়ে বিছানায় বসে আছে রুজবা। নুহাশ ওর সামনেই বসা৷ রুজবা হাত কচলাচ্ছে। জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়েই বাঁকা হাসছে নুহাশ। পকেট থেকে সোনার চেন বের করে পড়িয়ে দেয় রুজবায় গলায়। বলে,
–“বাসর ঘরে নাকি বউকে গিফট দিতে হয়? এটা তোমার জন্য।”

রুজবা কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো। নুহাশ যখন ওর দিকে ঝুঁকে ওর গলায় চেন পড়িয়ে দিচ্ছিলো তখন মনে হচ্ছিলো বুকের ভেতর কেউ হাতুরি পেটাচ্ছে। দ্রুত বুক ওঠা-নামা করেছে। নুহাশ মৃদু হাসলো। বললো,

–“তুমি খুশি রুজবা?”
–“খুশি থাকতে চাই আমি।”
–“ছোঁয়ার অনুমতি মঞ্জুর করেছো?”
রুজবা চুপ করে রইলো। প্রত্যুত্তরে কি বলবে জানা নেই ওর। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে আমতা আমতা করে বললো,
–“আমি আপনার স্ত্রী, আমাকে ছুঁতে হলে আপনার আমার অনুমতির প্রয়োজন নেই।”
নুহাশের ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। রুজবা আবারো বললো,

–“ঠকেছি একবার, দ্বিতীয় বার ঠকলে এ জীবন আর থাকবে না আমার। আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো।”
আচমকাই হ্যাঁচকা টানে রুজবাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় নুহাশ। মাথায় চুমু এঁকে দিয়ে কঠোর স্বরে বলে,
–“দ্বিতীয় বার এসব কথা যেন আর না শুনি তোমার মুখে। যাকে এতটা বছর সাধনার পর পেয়েছি তাকে কিভাবে ঠকাই আমি? তুমি আমার রক্তের শিরা-উপশিরায় মিশে গেছো। তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই আর থাকবেও না রুজবা। একবার ঠকেছো বলে দ্বিতীয় বার’ও ঠকবে এমন না। আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারো, আমি তোমার বিশ্বাস ভাঙবো না।”

রুজবা কিছু বললো না। নুহাশের টি-শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। নুহাশ রুজবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–“হুঁশশ, কাঁদবে না।”
রুজবা নাক টেনে বললো,
–“শুনুন___”
–“বলুন ম্যাডাম।”

–“আমার হওয়া এত সহজ না। আমার হলে শুধু আমারই হতে হবে। একটুও এদিক সেদিক অন্য কারো হওয়া যাবে না। যদি একবার আমি আমার বলে মেনে নেই তাহলে সারাজীবনের জন্যই মানবো। ছেড়ে যেতে চাইলে হাত-পা ভেঙে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখবো। তবুও আমার করেই রাখবো।”
নুহাশ রুজবাকে বুক থেকে সরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

–“এই আমি কি শেষমেশ ডাকাত মেয়ে বিয়ে করলাম? না মানে বাসর রাতে নিজের বরকে হাত-পা ভেঙে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখার হুমকি দিচ্ছো যে।”
রুজবার সহজ স্বীকারোক্তি,
–“আমার জিনিস আমি আর হারাতে পারবো না, অন্যের হতে দিবো না।”
নুহাশ ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

–“তা জারাফকে এই হুমকি দিতে পেরেছিলে? নাকি শুধুমাত্র আমার জন্যই বরাদ্দ?”
রুজবা মাথা নিচু করে বললো,
–“তখন পারিনি, কিন্তু এখন পারছি। আপনি আমার স্বামী সুতরাং এটা শুধুমাত্র আপনার জন্যই প্রযোজ্য।”
নুহাশ হো হো করে হেসে উঠে৷ রুজবা ঠোঁট ফুলায়। নুহাশ রুজবার দু গাল স্পর্শ করে বললো,
–“স্বামী হিসেবে মেনেছো?”
–“হু।”

মাথা নিচু করে জবাব দেয় রুজবা। নুহাশের অধরে এক চিলতে হাসি দেখা যায়। রুজবা বললো,
–“আমি আমার অতীত কখনো মনে করতে চাই না। আমি আপনাকে নিয়ে সবসময় ভাবতে চাই নুহাশ ভাই।”
নুহাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“শেষমেশ বাসর ঘরেও ভাই ডাকলে বউ?”
নুহাশের কথায় রুজবা থতমত খেয়ে যায়। মিনমিনে কন্ঠে শুধায়,

–“তাহলে কি বলবো? ভাই বলে অভ্যাস যে।”
–“নাম ধরে ডাকবে।”
–“উহুঁ, পারবো না।”
–“আচ্ছা, কি বলছিলে যেন? আবার বলো।”
–“আপনার কথা ভাবতে চাই সবসময়, আপনাকে নিয়ে সবটা নতুন করে সাজাতে চাই। ফিল করতে চাই আপনাকে। আপনার সকল অনূভুতির সাথে পরিচিত হতে চাই”

আচমকাই নুহাশ রুজবার একদম কাছে চলে যায়। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
–“সত্যিই ফিল করতে চাও আমায়? আমার অনুভুতিদের সাথে পরিচিত হতে চাও?”
রুজবা হকচকিয়ে যায়। ড্যাবড্যাবে চোখে তাকায় নুহাশের পানে। নুহাশ বাঁকা হেসে বললো,
–“কিছু অনুভূতির সাথে পরিচিত করাই তোমাকে? একটুখানি ফিল করাই কি বলো?”

রুজবা তখনো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। নুহাশ মৃদু হেসে রুজবার কোমড় ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ এক হাতে কোমর চেপে ধরে অন্যহাতে কাঁধ থেকে ব্লাউজ ক্ষানিকটা নামিয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে৷ মূহুর্তেই রুজবার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে। গলা ঘাড়ে অজস্র চুমু এঁকে দেয়। সাথে ছোট ছোট কামড় ফ্রি। চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় রুজবা৷ নুহাশ ধীরে ধীরে ঘাড় এবং গলা ছেড়ে রুজবার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। এক হাতে কোমড় খামচে ধরে অন্যহাতে রুজবার চুল মুঠো করে ধরে। রুজবা হতভম্ব, হতবাক, চমকায়, বিস্মিত হয়। বড়বড় চোখে তাকায় নুহাশের পানে। নুহাশ ব্যস্ত ওর ঠোঁটের স্বাদ নিতে। রুজবার সারা শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়৷ দুহাতে শক্ত করে নিজের শাড়ি খামচে ধরে। কিছুক্ষণ বাদে নুহাশ রুজবাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

–“কোন ব্রান্ডের লিপস্টিক এটা? টেস্ট খুব বাজে।”
রুজবা চোখ তুলে তাকাতে পারে না আর৷ লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। কে বলবে এই লোকটা এত অসভ্য? লজ্জায় হাঁসফাঁস করে উঠে ও। নুহাশ রুজবার গাল ধরে মুখ উঁচু করে। কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বললো,

–“প্রথম স্পর্শের অনুভুতি’টা অদ্ভুত সুন্দর না?”
রুজবা লজ্জায় মাথা নুয়ালো। নুহাশ শুয়ে পড়ে বিছানায়। রুজবার দিকে হাত বাড়াতেই রুজবা কাঁপা কাঁপা ভাবে এগোয়। নুহাশ রুজবার হাত ধরে টান দিতেই রুজবা হুমড়ি খেয়ে ওর বুকের উপর পড়ে। নুহাশ রুজবার মুখ থেকে চুল সরিয়ে বললো,

–“যখনই আসবো একটু একটু করে ফিল করাবো আমায়। আপাতত এতটুকুই থাক৷ এতটুকু জিনিস’ই আগামী বেশ কয়েকদিন তোমার মাথায় ঘুরবে। ভাবতে থাকবে তুমি আমাকে নিয়ে। আর একা একাই ব্লাশ করবে। রাত হয়েছে অনেক আপাতত ঘুমাও।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৩

কথাটা বলে রুজবার ঠোঁটে আলতো করে আর একবার চুমু খায় ও। রুজবা এবারেও চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়৷ নুহাশ মৃদু হেসে চোখ বন্ধ করে। রুজবার মাথায় বেশ কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে ও।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৫