অনেক সাধনার পরে পর্ব ২২

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২২
অরনিশা সাথী

আদিরা ওরা ওদের পরিচিত একটা দোকানে এসে বসেছে। এই দোকান থেকেই রুজবার জন্য শাড়ি বা লেহেঙ্গা নিবে ওরা। আদিরা, নিবির, জান্নাত, কিয়ান এসেছে। জান্নাত আর আদিরা নিজেদের জন্য শাড়ি দেখছিলো। তখনই নুহাশ রুজবা’কে নিয়ে আসে। দুজনেই পাশাপাশি টুল টেনে বসলো। আদিরা জিজ্ঞেস করলো,

–“শাড়ি না লেহেঙ্গা কোনটা নিবো তোমার জন্য?”
–“আপনাদের পছন্দ মতো একটা নিলেই হবে।”
রুজবা’র কথায় জান্নাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“তোর কোনো ইচ্ছে নেই? লেহেঙ্গা পড়বি নাকি শাড়ি পড়বি।”
–“নাহ।”
নুহাশ বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“কোনটা পড়ে কম্ফোর্ট সেটা তুমি___”
–“আপনাদের পছন্দ মতো নিন আমার সমস্যা নেই।”
আদিরা নুহাশের দিকে তাকালো। নুহাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকানী’কে শাড়ি দেখাতে বললো। বেশ কয়েকটা শাড়ি দেখানোর পর নুহাশ রুজবা’কে আবারো নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–“শাড়িতে কমফোর্টেবল তো? শাড়ি সামলাতে জানো?”
–“হ্যাঁ, বেশি ভারী শাড়ি নিয়েন না।”
নুহাশ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। উলটেপালটে বেশ কয়েকটা শাড়ি দেখলো। সেখান থেকেই বেছে বেছে মেরুন রঙের একটা কাতান শাড়ি হাতে নিলো। সিম্পল কারুকাজ করা অথচ নজরকাঁড়া সুন্দর। নুহাশ আগের ন্যায় শুধালো,
–“কেমন এটা? নিবো?”
রুজবা মাথা নাড়ায়। নুহাশ শাড়িটা আদিরা ওদের দিকে দিয়ে বললো,

–“এটা দেখো।”
সকলেরই শাড়িটা পছন্দ হয়। তারপর হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য কাঁচা হলুদ কালার শাড়ি নেয় নুহাশ নিজেই পছন্দ করে। হলুদের শাড়ি কেনার সময় নুহাশ রুজবা’র দিকে হালকা ঝুঁকে বলে,
–“শাড়িতে যেহেতু কমফোর্টেবল তাহলে বিয়ের পর মাঝে মাঝেই বউকে শাড়িতে দেখতে চাই।”
রুজবা চমকালো, বিস্মিত হলো, অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবে লোকটাকে এখানেও এসব বলছে? লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নাকি? লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসে রয় ও। নুহাশ নিঃশব্দে হেসে নিজের জন্য হলুদের পাঞ্জাবী সিলেক্ট করে নিবির’কে বললো,

–“ভাই, তোমরা বাকী কেনাকাটা করে এসো, আমি রুজবা’কে নিয়ে গেলাম।”
আদিরা নাকোচ করে বললো,
–“ও আমাদের জন্য এসেছে, সুতরাং আমাদের সাথেই যাবে। তোমার যাওয়ার হলে একা যাও।”
নুহাশ রুজবার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তুমি আমার সাথে যাবে না? বলো।”
এইটুকু বলে আবার আদিরার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“ও বলেছে আমার সাথে যাবে। তোমরা কেনা-কাটা করে খাওয়া-দাওয়া সেরে তারপর বাসায় চলে যেও, কেমন?”
রুজবা আহাম্মক হয়ে নুহাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও কখন বললো নুহাশের সাথে যাবে? নুহাশ আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুজবার হাত ধরে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো। নুহাশ যেতেই আদিরা ওরা ফিক করে হেসে দেয়।

রায়হান সাহেবের পুরো বাড়ি কাছের সকল অতিথি দিয়ে ভরপুর। আজ সকালেই সবাই এসে হাজির হয়েছে। সন্ধ্যায় হলুদের আয়োজন করা হবে৷ সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে ফুল ভলিউমে। এত শব্দ আর চেঁচামেচিতে রুজবার ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। চোখ মুখে পানির ছিটা দিয়ে অলস ভঙ্গিতে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। সামনের ফাঁকা উঠোনে আজ মানুষ ভরপুর। ওই তো স্টেজে রাফাত আর ওর দুইজন বন্ধুকে দেখা যাচ্ছে। স্টেজ ডেকোরেশন করছে ওরা।

ফারিন আর রুজবা’র দুজন কাজিন, মিনহা এবং নৌশিন ছুঁটে এলো রুজবার ঘরে৷ মিনহা নৌশিন ওরা রুজবার সমবয়সী। মিনহা রুজবার বড় খালামণির মেয়ে আর নৌশিন ছোট খালামণির মেয়ে। ঘরে না পেয়ে তিনজনেই বারান্দায় ছুঁটলো। গুটি কয়েক পায়ের শব্দ পেতেই দ্রুত চোখের পানি মুছলো রুজবা। মিনহা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস রুজবা? রেডি হবি না? একটু বাদেই তো সন্ধ্যা নামবে৷ হলুদ ছোঁয়াবে তো সকলে।”
রুজবা হাস্যোজ্জ্বল মুখে ওদের দিকে ঘুরলো। তিনজনেই শাড়ি/টাড়ি পড়ে রেডি।
–“খুব সুন্দর লাগছে তোদের, ভাবছি বিয়েটা কার, আমার নাকি তোদের?”
রুজবার কথায় হেসে উঠলো তিনজনেই। ফারিন আচমকা রুজবা’কে জাপ্টে ধরে ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। রুজবা মৃদু হেসে ওর পিঠে হাত রেখে বললো,

–“কাঁদছিস কেন? আমি চলে যাচ্ছি না তো৷ আরো বছর দুই পরে যাবো৷ ততদিনে কিয়ান ভাই’ও তোকে বউ করে নিয়ে যাবে ও বাড়ি। দুজন তো একসাথেই থাকবো।”
এতে ফারিনের কান্নার পরিমান বাড়লো৷ মিনিট দুই গড়াতে মিনহা আর নৌশিন’ও জাপ্টে ধরলো রুজবা’কে। রুজবা’র এবারে ভিতরের কান্না গুলো হুটোপুটি করে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। আটকে রাখতে পারছে না কিছুতেই। নৌশিন কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“তোকে ভীষণ মিস করবো, আগের মতো আর পাওয়া হবে না। ইচ্ছে হলেই কাজিনরা সব একসাথে হতে পারবো না৷ রাত বিরাতে হাঁটতে বের হতে পারবো না। চাইলেই আর রাত দুপুরে সবাই মিলে ঘুম বাদ দিয়ে কিছু রান্না করে খাওয়ার তোরজোর চলবে না।”

এসব কথা শুনে রুজবা এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো। কাজিন এবং বন্ধুদের সাথে কাটানো সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। রুপশা তখন রুজবা’কে ডাকতে ডাকতে রুমে আসে। রুজবাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায় সকলে। মিনহা ওর চোখের পানি মুছে দেয়। রুজবা গুটিগুটি পায়ে রুমে প্রবেশ করে। রুপশা’ও শাড়ি পড়েছে। হলুদ জামদানী। ভীষণ সুন্দর লাগছে রুপশা’কেও বিছানায় তিনটে শপিং ব্যাগ হাতে বসে আছে ও। রুজবা’কে দেখে রুপশা এক গাল হেসে বললো,

–“আপু রেডি হবি না? নুহাশ ভাই শাড়ি গহনা পাঠিয়ে দিয়েছে সব।”
কথাটা শুনেই মিনহা নৌশিন আর ফারিন হামলে পড়লো সেগুলো দেখার জন্য। শাড়ির ভাজ থেকে একটা চিরকুট বেরিয়ে আসলো। মিনহা সেটা রুজবার হাতে দিয়ে নিজেরা শাড়ি গহনা দেখায় ব্যস্ত৷ রুজবা সেখানে দাঁড়িয়ে’ই চিরকুট খুললো। লিখা,

–“হলুদের সাজে আমার বউ’কে প্রথম আমি’ই দেখতে চাই।”
রুজবা লজ্জায় হাঁসফাঁস করে উঠলো। লোকটার মুখ থেকে বউ সম্বোধন শুনলেই ওর সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে যায়। রুপশা যাওয়ার আগে বলে গেলো,
–“আপু দ্রুত রেডি হ। একটু পরেই সবাই ডাকাডাকি শুরু করবে।”
রুজবা মাথা নাড়ালো শুধু। তারপর বাকী তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“বের হ তোরা, আমি রেডি হয়ে ডাকবো তোদের।”
ফারিন কপাল কুঁচকে বললো,
–“তোর বিয়েতে তুই নিজে সাজবি?”
–“কেন কোনো সমস্যা আছে?”
মিনহা বললো,
–“তা নেই___”
–“তাহলে বের হ এখন।”

ওরা আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। রুজবা দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে রইলো ক্ষানিকটা সময়। ওর কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। দম বন্ধ হয়ে আসছে। জারাফের মুখটা ভেসে উঠছে চোখে। এত ভালোবাসার পরেও মানুষটাকে ওর নিজের করে পাওয়া হলো না। কষ্টে বুক ছারখার হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর ঝলসে যাচ্ছে যেন। এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়? ওর ভালোবাসা তো সত্যি ছিলো তাহলে ওকে এভাবে ঠকে যেতে হলো কেন?

কেন ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হচ্ছে? এটাই কি ওর প্রাপ্য ছিলো? কিছুদিনের জন্য জারাফ তাহলে কেন এসেছিলো ওর জীবনে? এসব ভাবতে ভাবতেই কেঁদে উঠলো ও। বাইরে থেকে কেউ একজন আওয়াজ তুলে ডেকে বললো,

–“রুজবা রেডি হ দ্রুত, আর কত সময় লাগবে? কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আজান পড়বে। সবাই অপেক্ষা করছে তো।”
রুজবা চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়। ব্লাউজ পেটিকোট নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। মিনিট দুয়েক বাদে ঘরে এসে শাড়ি পড়ায় মনোযোগ দেয়। আটপৌরে ভাবে শাড়ি পড়ে নেয়। হালকা সাজে। সামনের চুলগুলো ফুলিয়ে মাথায় খোপা করে এলোমেলো ভাবে। খোপায় লাগানোর জন্য বেলিফুল পাঠিয়েছে নুহাশ। সেগুলো খোপায় আটকে নেয় ভালোভাবে। ওর শরীর সায় দিচ্ছে না। অস্থির অস্থির লাগছে।

বিছানায় বসে শ্বাস নিলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার উঠে কাঁচা ফুলের গহনা গুলো পড়ে নিলো। সব শেষে মাথায় গোল্ডেন কালারের নেটের উড়না টেনে নিলো। ব্যাস! রেডি রুজবা। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা চিরকুটে চোখ পড়লো রুজবার৷ ফোন হাতে নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নুহাশের হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে।
বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে আছে রুজবা৷ কোনো কিছু ভালো লাগছে না। সবকিছু কেমন বিষাদময় লাগছে। ম্যাসেজ টোন বাজতেই চোখ মেলে তাকায় রুজবা। ফোন হাতে নেয়। নুহাশের ম্যাসেজ। লিখা,

❝মাশাল্লাহ! কারো নজর না লাগুক আমার বউয়ের উপর।❞
রুজবা ম্যাসেজ দেখে মেকি হাসলো। লোকটা আসলেই পাগল। আগে তো দেখে মনে হতো ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না। আর এখন? কি কি কথা বলে। রুজবার এসব ভাবনার মাঝেই নুহাশের দ্বিতীয় ম্যাসেজ আসলো,

❝তোমাকে দেখিয়ে আমি আকাশ’কে বলবো, এই আকাশ দেখো তোমার মতো আমার’ও একটা চাঁদ আছে। পার্থক্য তোমার চাঁদ’কে সবাই দেখে। তোমার চাঁদের সৌন্দর্য সবাই উপভোগ করে। আর আমার চাঁদ একান্ত আমার। যে চাঁদ শুধুমাত্র আমি দেখবো। যার সকল সৌন্দর্য একান্ত আমার জন্য।❞

এই ম্যাসেজ’টা দেখেই রুজবার হৃদ-স্পন্দন বেড়ে গেলো। লেখাটুকু পড়ে রুজবার মনে অন্য রকম এক ভালো লাগা তৈরি হলো। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সামলালো নিজেকে। তখনই বাহির থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ এলো। রুজবা নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে দিলো। শারমিন বেগম মেয়েকে দেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
–“মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার মা’কে।”

রুজবা মাকে জড়িয়ে ধরে ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। মেয়ের সাথে সাথে মায়ের বুক’ও ভারী হয়ে উঠলো। চোখের অশ্রু আর আটকে রাখতে পারলো না। মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে কেঁদে উঠলো উনি নিজেও। একে একে যোগ হলো রুজবার তিন কাকি আর খালামণিরা। সকলেই কাঁদছে। রায়হান সাহেব এসে সবাইকে ধমকের স্বরে বললো,
–“কি শুরু করলে তোমরা? রুজবার মতো তোমরা’ও ছোট নাকি? ও তো এখনই এ বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না। দুই বছর বাদে মেয়ে তুলে দিবো আমি। কান্নাকাটি বন্ধ করো। তোমরা কাঁদলে ওর ভালো লাগবে?”

রুজবার কাকি আর খালামণিরা এখানে আর দাঁড়ালো না৷ রুজবাকে বের হতে বলে চলে গেলো ঘর থেকে। শারমিন বেগম তখনো রুজবাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসে আছে। রায়হান সাহেব ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন সেদিকে। সবাইকে ধমকে কাঁদতে বারণ করলে কি হবে এখন উনার চোখে’ও পানি টলমল করছে।

প্রতিটা বাবার কাছেই এই সময়টা খুব কষ্টের। নিজের আদরের মেয়েকে অন্যের নামে দলিল করে দেওয়াটা কি যন্ত্রণার সেটা শুধু বাবা’রাই জানে। রুজবার আরেক পাশে গিয়ে বসলো উনি। সাথে সাথেই রুজবা উনাকে জাপটে ধরে কেঁদে দিলো। এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না উনি। চোখ ভেঙে অশ্রু গড়াচ্ছে। রায়হান সাহেব দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। মোলায়েম কন্ঠে বললো,

–“কাঁদে না মা, তুমি তো এখন যাচ্ছো না। তুমি তো আরো দুই বছর থাকবে আমাদের কাছে। তাছাড়া তোমার শ্বশুর বাড়ির সকলেই বেশ ভালো। তোমাকে কোনো কষ্টে রাখবে না। ভীষণ ভালো থাকবে তুমি ওদের কাছে।”
রুজবা ওর বাবার বুকে মুখ গুজে বললো,

–“আমি বিয়ে করবো না বাবা, তোমাদের ছেড়ে থাকবো কিভাবে আমি? যাবো না আমি কোত্থাও তুমি নুহাশ ভাইকে ফোন করে বলে দাও এই বিয়ে হবে না।”
রায়হান সাহেব হাসলো মেয়ের বাচ্চামো কথা শুনে। নরম কন্ঠে বললো,

–“শোনো পাগলি মেয়ের কথা, কাল বিয়ে আর আজ বলছে বিয়ে ভেঙে দিতে এ হয় নাকি? তুমি চিন্তা করছো কেন? তুমি তো এখন আমাদের সাথেই থাকবে।”
রুজবা কিছু না বলে চুপচাপ বাবার বুকের সাথে মিশে রইলো। এখনো হেঁচকি তুলে কাঁদছে ও। বেশ ক্ষানিকটা সময় নিরব থেকে দূর্বল কন্ঠে রুজবা বললো,

–“আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আব্বু। আমি, আমি ভুলতে পারছি না কিছু। ওর কথা মনে পড়ছে খুব। ও, ও আমাকে___”
সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিলো না রায়হান সাহেব। আদুরে কন্ঠে বললো,
–“যে ঠকিয়েছে, যে ছেড়ে গেছে তার কথা ভেবে কেন কষ্ট পাবে মা? তোমার জীবনে এখন নুহাশ এসেছে। ও তোমাকে খুব ভালোবাসে। ওর কথা ভাবো তুমি। তুমি যে এখন জারাফের কথা মনে করে কষ্ট পাচ্ছো এই কষ্ট’টা কি তুমি নুহাশ’কেও দিতে চাও? ও তো তোমায় ভালোবাসে।

কাল ওর সাথে তোমার বিয়ে। এখন তুমি যদি জারাফের কথা ভেবে কষ্ট পাও, কান্না করো এতে নুহাশ’কে ঠকানো হলো না মা? তুমি’ও তো তাহলে ঘুরেফিরে জারাফের মতোই হয়ে যাবে। যে ঠকিয়েছে তার কথা ভেবে কষ্ট না পেয়ে, যে ভালোবাসে তোমায় তার কথা ভাবো তুমি। তাকে ভালোবাসতে শুরু করো। দেখবে জীবনে আর ঠকবে না। নুহাশ তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবে না৷ তুমি সবটা মানতে শেখো মা। বাস্তবতা বুঝতে হবে তো। নুহাশের সাথে সবটা মানিয়ে গুছিয়ে নাও, হ্যাঁ একটু সময় লাগবে কিন্তু তুমি ঠিক পারবে। তোমার সুখের কোনো কমতি হবে না মা।”

রুজবার কান্না ততক্ষণে থেমে গেছে। ফারিন মিনহা নৌশিন এলো ঘরে। তাড়া দিয়ে বললো,
–“সাতটা বেজে গেছে রুজবা এবার চল সবাই তোর জন্য বসে আছে।”
রায়হান সাহেব রুজবার মাথায় আদুরে স্পর্শ করে বললো,
–“এসো তাড়াতাড়ি।”

রুজবা মাথা নাড়লো। রায়হান সাহেব, শারমিন বেগমকে ইশারা দিতেই তিনি’ও চলে গেলেন ঘর থেকে। ফারিন রুজবা বকাবকি করলো কান্নাকাটি করে কাজল লেপ্টে ফেলার জন্য। মিনহা সুন্দর করে কাজলটা মুছে ঠিকঠাক করে দিলো। আচমকা ফারিন বললো,
–“আপনার বউয়ের কান্ড দেখুন নুহাশ ভাই। শ্বশুর বাড়ি যাবে দুই বছর পর আর আজই কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে ফেলছে উনি।”

নুহাশের নাম শুনতেই রুজবা চকিত তাকালো ফারিনের দিকে। ভিডিও কলে নুহাশ আছে। ফারিন ওর দিকেই ক্যামেরা ঘুরিয়ে রেখেছে। লোকটা সাদা পাঞ্জাবি পড়া৷ দু গাল ভর্তি হলুদ লাগানো। গাল ভর্তি হলুদ থাকায় লোকটার সৌন্দর্য যেন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। নুহাশ শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ রুজবার দিকে তাকিয়ে থেকে পুরুষালি ভরাট কন্ঠে বললো,
–“যত কাঁদার কেঁদে নিক আজ আর কাল। এরপর আমার বউকে আমি আর কাঁদতে দিবো না।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২১

রুজবা লজ্জায় হাঁসফাঁস করে উঠলো। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নুয়ালো নিচের দিকে। ওদের সামনে বউ বলে সম্বোধন করায় রুজবার একটু বেশিই লজ্জা লাগছে। ওরা সকলেই মিটিমিটি হাসছে। নুহাশ ফোন কেটে দিলো। ওরা আর কথা না বাড়িয়ে রুজবাকে নিয়ে গেলো স্টেজের দিকে। অনেক দেরি হয়ে গেছে এবার হলুদ লাগাতে হবে যে।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২৩