বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৪

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৪
তাসফিয়া হাসান তুরফা

পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছি আমি আর পূর্ণ। আমাদের সাথে বসে আছেন রিশাদ ভাইয়া, প্রিয়াসহ পূর্ণর কিছু বন্ধু। আমাদের মুখোমুখি বসে আছেন রায়হান ভাই, তার পাশে রাইসা, প্রান্ত ভাইয়ারা। হাসিঠাট্টা,গল্প-গুজবের মাঝেই গিটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে। দমকা হাওয়া বইছে যা শিহরণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুইপক্ষ মিলে গানের কলি খেলা হবে। রিশাদ ভাইয়া শুরু করলেন প্রথমে,

“ইস্টিশনের রেলগাড়িটা মাইপা চলে ঘড়ির কাটা
প্ল্যাটফর্মে বইসা ভাবি কখন বাজে বারোটা? কখন বাজে বারোটা?”
প্রান্ত ভাইয়া সামনে থেকে বিরক্তিকর সুরে বললেন,
—শালা তোর এই গান গাওয়া লাগলো? এটা কোন গান হলো? আমি দেখাচ্ছি কেমন গান গাইতে হয় দাড়া! “ট” দিয়ে না?
সবাই মাথা নাড়লে প্রান্ত ভাইয়া রাইসার দিকে চোখ টিপ মেরে গাইতে শুরু করলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—“টিপ টিপ বারসা পানি
পানি মে আগ লাগা দি
আগ লাগি দিল মে জো
দিল কো তেরি ইয়াদ আয়ি”
প্রান্ত ভাইয়ার গান শুনে রাইসা বেচারি লজ্জায় কেশে উঠলো। বাকা হেসে গান বন্ধ করে দিলেন প্রান্ত ভাইয়া। সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে এতক্ষণে। উনাদের এক বন্ধু লিমন ভাইয়া হাসতে হাসতে বললেন,

—ফানি, রোমান্টিক সবই হলো। একটা বিরহের গান না হলে হয়? এই রায়হান এবার তুই গা তো! তখন থেকে চুপচাপ বসে আছিস! সত্যিই ছ্যাকা-টেকা খাইছিস নাকি মামা? কি হইছে তোর?
—কিছুই হয়নি। কি গান গাবো সেটাই ভাবছিলাম বসে বসে। ছ্যাকা মার্কা গান শুনবি যখন তাহলে গেয়েই শুনাই একটা। কি বলো সবাই?

—হ্যাঁ হ্যাঁ, এটা আবার বলতে হয়? তবে বেশি কস্টের গান গাস না যেনো। একটা সুন্দর গান গা।
—আচ্ছা ঠিক আছে, আমার পছন্দের একটা গান গেয়ে শুনাই তোদের তাহলে।
কথাটা বলেই গিটারে সুর তুলতে শুরু করলেন রায়হান ভাই। সবার মনোযোগ এখন উনার দিকে! তবে উনার দৃষ্টি আকাশের দিকে। চাঁদের দিক চেয়ে গাইতে আরম্ভ করলেন,

“অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমার নিষ্পাপ মুখখানি
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়
ভুলগুলো জমিয়ে রেখে বুকের মণিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে ভালবাসবো তোমায়
তোমার চিরচেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাবো হারিয়ে
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
একবার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনোদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন”

শেষোক্ত পঙক্তিটুকু রায়হান ভাই হঠাৎ করেই আমার দিকে চেয়ে বললেন। এক মুহুর্তের জন্য উনার স্থির দৃষ্টি দেখে হঠাৎ কেপে উঠলাম আমি! আচ্ছা উনি কি তবে সত্যিই আমাকে পছন্দ করতেন? উনার চোখের ভাষা তো তাই বলছে! হঠাৎ করেই সত্যটা উপলব্ধি করে মনটা খুব বিষন্ন হয়ে উঠলো আমার। এত বছরে কোনোদিন আমি ওভাবে খেয়াল করিনি তার আচরণ, এজন্যই হয়তো চোখে পড়েনি তার অনুভূতি। তবে এখন উনার বা আমার কিছু করারও নেই, আমি চাই উনি নিজের জীবনে ভালো থাকুক! প্রিয়ার দিক তাকিয়ে দেখি সে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে রায়হান ভাইয়ের দিকে। ওর দৃষ্টিতে উনার জন্য একরাশ ভালোবাসা স্পষ্ট চোখে পড়ছে আমার! যে ভালোবাসাটা রায়হান ভাইয়ার জীবনে এখন সবচেয়ে প্রয়োজন!

এতদিন আমি প্রিয়াকে রায়হান ভাইয়ার জীবনে আনার ব্যাপারে সাহায্য করবো কি না অনিশ্চিত ছিলাম, তবে এখন হতে আমি নিজে থেকেই চাই প্রিয়া উনার জীবনে জায়গা করে নিক! ওর চঞ্চলতায়, ভালোবাসায় রাঙিয়ে তুলুক রায়হান ভাইয়ার সাদা-কালো জীবন!
নিজের ভাবনার মাঝেই কাধে পূর্ণর হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম আমি। উনার দিকে তাকাতেই দেখি তিনি শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আমার দিকে। আমি সেদিকে এক পলক চেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। পূর্ণ গলা ঝেড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন,

—বাহ রায়হান, সুন্দর গান গাও তো তুমি। তোমার গান শুনে সবাই ফিল করেছে। পরিবেশটা হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে গেছো দেখো!
—হুম তাই তো দেখছি! এবার তাহলে তুমিই পরিবেশটা পুনরায় স্বাভাবিক করে দেও তো, পূর্ণ!
পূর্ণ হালকা হেসে হাত বাড়ালেন রায়হান ভাইয়ার দিকে। রায়হান উনার ইশারা বুঝে নিজের হাত থেকে গিটার এগিয়ে দিলেন। পূর্ণ চেয়ার টেনে আমার দিক ঘুরে গিটার নিয়ে বসে সুর তুলতে লাগলেন।

“কারণে-অকারণে, নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত জোছনা নিলাম
নিয়মে-অনিয়মে, দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো কেন?
বাঁ পাশেই ছিলাম
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি, তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি, তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই…”

উনি পুরোটা সময় আমার চোখের দিক সরাসরি তাকিয়ে অনবদ্য গলায় গানটি গেয়েছেন! আজ পূর্ণ নিজের ভালোবাসা আড়াল হতে প্রকাশ করেননি, গানের মাধ্যমে সরাসরি বুঝিয়ে দিয়েছেন আমায়! আমি উনার দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ হাসি উপহার দিলেন আমায়! এত এত মানুষের মধ্যে উনার এহেন আচরণ একিসাথে মুগ্ধতা ও লজ্জায় ফেললো আমায়। রক্তিম আভা নিজ দায়িত্বে ছড়িয়ে পড়লো দু’ গালে। চোখের পলক তুলতে পারলাম না উনার দিকে! এমন সময় পূর্ণর বন্ধুরা উনাকে ক্ষেপানোর সুরে একে-অপরকে উদ্দেশ্য বললো,

—দোস্ত, আমাদের আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবেনা। পূর্ণর যে অবস্থা তাতে বছর না ঘুরতেই ও বাপ হয়ে যাবে আমার মনে হচ্ছে।
—তোরা আবার শুরু করলি?

পূর্ণ চোখ পাকিয়ে তাকালেন উনাদের দিকে। আমি আর এখানে বসে থাকলাম নাহ৷ উঠে চলে গেলাম অন্যদিকে৷ রাইসা, প্রিয়াও উঠে আমার কাছে এলো। ছেলেরা অন্যদিকে কথা বলছেন সবাই। কথায় কথায় রাইসা জানালো একটু পর বের হবে সবাই, রাত তো অনেক হয়ে গিয়েছে। পূর্ণ-প্রান্ত ভাইয়া এতদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে তাই ওদের গাড়িতে গল্প করতে করতে বাসায় যাবেন৷ আমি, রাইসা ও প্রিয়া আমাদের গাড়িতে যাবো। এর মধ্যেই প্রান্ত ভাইয়া এসে বললো,
—আমাদের গাড়িতে সবার জায়গা হচ্ছেনা। রায়হান যেহেতু আগেই যাবে তোমাদের সাথে যাক? রাইসার বাসায় ওকে লিফট দিয়ে চলে যেয়ো।

রায়হান ভাই আপত্তি জানিয়ে বললেন,
—লাগবেনা, প্রান্ত। আমি ম্যানেজ করে নিবো।
—সমস্যা নেই, ভাইয়া। আমাদের গাড়িতে তো জায়গা আছেই। আমাদের কোন প্রব্লেম হবেনা।

প্রিয়ার কথায় রাইসাও সায় জানালো। ওদের জোরাজোরিতে অবশেষে রায়হান ভাইও রাজি হয়ে গেলেন! ঠিক হলো তিনি যাবেন আমাদের সাথে! আমি রাইসার কাছে পার্স, ফোন দিয়ে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে গেলাম। ওয়াশরুমে যেতে হলে ছাদের কর্ণার বেয়ে যে সিড়ি আছে সেদিক দিয়ে নিচে নেমে যেতে হয়। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই কানে এলো পূর্ণর সাথে উনার বন্ধুদের আলোচনা। আমি তেমন মনোযোগ না দিয়ে নিচে নামছিলাম হঠাৎ রিশাদ ভাইয়ার মুখে আমার নাম শুনে নিজ হতেই থেমে গেলো পা! কৌতুহলী হয়ে সিড়ির সাথে ঘেঁষে উকি দিলাম ছাদের কোণের নির্জন জায়গায় যেখানে উনারা কথা বলছিলেন। পূর্ণকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই৷ রিশাদ ভাইয়া আবার বললেন,

—চুপ করে আছিস কেন, পূর্ণ? তুরফাকে এখনও জানাসনি কেন তোর মনের কথা? আর কতদিন লুকিয়ে রাখবি ওর থেকে?
—যতদিন না ও নিজে থেকে আমাকে ভালোবাসবে, নিজে থেকে আমার কাছে আসতে চাইবে।
পূর্ণর সরল স্বীকারোক্তি। উনার বন্ধুদের চোখে বিস্ময়। লিমন ভাইয়া তো রেগেই বলে উঠলেন,
—শালা এত বছর অপেক্ষা করেছিস যার জন্য তাকে নিজের এত কাছে পেয়েও কিভাবে কন্ট্রোল করিস তুই? আমি জাস্ট বিশ্বাস কর‍তে পাচ্ছিনা তোদের মধ্যে এখনও প্রেম নিবেদন হয়নি! এমন চাপা কেন তুই? তোর কি মনে হয় তুরফা বুঝেনা তুই ওকে ভালোবাসিস?

লিমন ভাইয়ার কথায় মৃদু হাসলেন পূর্ণ। শান্ত গলায় বললেন,
—তুরফা শুধু সেটুকই জানে যেটুক আমি ওর সামনে প্রকাশ করি। ওকে যে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি সেটা ও এখনো জানেনা। আমি চাই যেদিন ও নিজে থেকে আমাকে ভালোবাসবে, আমাকে কাছে টানবে সেদিন আমি ওকে শুনাবো আমার এত বছরের অপেক্ষার কথা! আমি জোর করে ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করতে চাইনা, আমি চাই ও মন থেকে আমাকে অনুভব করুক। কোন কারণ ছাড়াই আমাকে ভালোবাসুক যেমনটা আমি ওকে বাসি। সেদিন আমার আসল অপেক্ষার অবসান হবে!

—এটা শুধু তোমার পক্ষেই সম্ভব, বড় ভাইয়া। আমি হলে এতদিন শেষ হয়ে যেতাম। তুরফা হারিয়ে যাওয়ার পর তোমার বদলে যাওয়া আমি নিজ চোখে দেখেছি। তোমাকে এতটা ভেঙে পড়তে আমি কোনদিন দেখিনি যতটা ওইদিন দেখেছি। এতটা বছর তুমি ওর অপেক্ষায় নিস্বার্থভাবে একতরফা ভালোবেসে গেছো অথচ এখন এত কাছে পেয়েও তোমায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভাগ্যের এ নিষ্ঠুর পরিনতি আমার ভালো লাগছেনা। তুরফা কবে তোমাকে ভালোবাসবে?

—ও আমাকে ভালোবাসে, প্রান্ত। শুধু বুঝতে পারেনি এখনও। এখনো ছোটই আছে কি না? তবে ব্যাপার নাহ। আমি তুরফার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতেও প্রস্তুত। পূর্ণর ভালোবাসা এত দূর্বল না যে তুরফাকে কাছে পেয়েই ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে। আমি ওকে ভালোবাসি, ওর ইচ্ছেকে সম্মান করি। আমি চাই ও নিজে থেকে আমার কাছে আসুক, আমার মতো প্রণয়ের আগুনে জ্ব/লুক। তবেই না আমার অপেক্ষা সার্থক!

মলিন হেসে বললেন পূর্ণ। যে হাসি সরাসরি বিধলো আমার অন্তরে! একেতো এতক্ষণ উনাদের কথা শুনে আমি বিস্ময়তার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারিনি! ঢিপঢিপ করতে থাকা হৃদপিন্ড যেন বেরিয়ে আসবে বুকের মাঝখান থেকে! তার মধ্যে উনার মলিন মুখখানি আমার অন্তরে কড়াঘাত করছে বারবার! একটা মানুষ এভাবেও কাউকে ভালোবাসতে পারে? আমি বিশ্বাস কর‍তে পাচ্ছিনা এই গম্ভীর রাগী পূর্ণর মাঝে এমন একটা প্রেমিকপুরুষ লুকিয়ে আছে যার হৃদয়ের পুরোটা জুড়েই শুধু আমি ছিলাম এতগুলো বছর? যিনি আমার থেকে এতদূরে থেকেও আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করে গেছেন? কিছু বুঝে উঠার আগেই অক্ষিদ্বয় অশ্রুতে ভরে উঠলো আমার! প্রান্ত ভাইয়া কি বললেন সেটা শুনার জন্য আর থাকতে পারলাম না সেখানে! দৌড়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।

দরজা লাগিয়ে বেশকিছুক্ষণ অনর্গল অশ্রুপাত করলাম আমি। চোখের পানি যেন আজ কিছুতেই বাধ মানছেনা আমার। পূর্ণর প্রতি টান বেড়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে! আমি তো ভেবেছিলাম উনি বিয়ের পর থেকে আমায় পছন্দ করেন কিন্তু এই লোকটা যে মনের গহীনে এতদিনের আবেগ পুষে রেখেছিলেন সে-খবর একবারো কিভাবে টের পেলাম না আমি? দু-হাতে মুখ ঢেকে কেদে ফেললাম আমি! নিজেকে সামলানো যেন দায় হয়ে যাচ্ছে এ মুহুর্তে!

পূর্ণ কি জানেন না এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আমি কতটা গভীরভাবে উনার মায়ায় জড়িয়ে গেছি? উনাকে কিভাবে বুঝাবো আমি যে আমিও উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি? হিসেব করে দেখলাম পূর্ণ ও আমার বয়সের ব্যবধান আট বছর। এখন আমার আঠারো, উনার ছাব্বিশ। আমার আন্টির বাসায় আসার প্রায় দশ বছর হয়েছে। অর্থাৎ উনি এত্তগুলো বছর আমাকে একতরফা ভালোবেসে গেছেন! এটা কি আদৌ সম্ভব? বিষয়টা মনে হতেই চিৎকার করে কান্না আসছে আমার! কিভাবে সহ্য করেছেন উনি কে জানে? তার এত বছরের বিশুদ্ধ ভালোবাসা কিভাবে শোধ করবো বুঝতে পেলোনা আমার ছোট্ট মন! কান্নার দমকে বারকয়েক কেপে উঠলাম আমি! জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে থামানোর ব্যর্থ চেস্টা করলাম।

অবশেষে কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বাইরে বের হলাম আমি। ঠিক কতক্ষণ অতিক্রান্ত হয়েছে আমি জানিনা। রেস্টুরেন্টের লোকেরা জিনিসপত্র উঠিয়ে রাখছেন, বন্ধ করবেন হয়তো একটু পরে। দ্রুত পায়ে ছাদে উঠেই আমার চক্ষুচড়ক গাছ! পুরো ছাদ খালি! কি আশ্চর্য? সবাই গেলো কোথায় আমাকে রেখে? রাইসা, প্রিয়াকেও দেখছিনা কেন? ছাদের রেলিঙ ধরে নিচে তাকাতেই দূরে আমাদের গাড়ি চলে যেতে দেখা গেলো।

বিস্ফোরিত নয়নে সেদিকে চাইলাম আমি! আমাকে রেখেই ওরা চলে যাচ্ছে কেন? ওরা কি ভুলে গেছে আমি ছিলাম এখানে? চিল্লিয়ে লাভ হলোনা, আমার আওয়াজ ওদের কাছে পৌঁছালোনা। দৌড়ে নিচে নামতে নামতেই আরেকটি গাড়ি চলে যেতে দেখলাম আমি। যেটার লুকিং গ্লাস এ পূর্ণর হাতঘড়ি দেখতে পেলাম আমি, উনি গাড়িতে বসে ছিলেন মানে ওটা তার বন্ধুদের গাড়ি হবে নিশ্চয়? তাহলে কি পূর্ণও আমাকে রেখে চলে গেলেন? অদ্ভুত তো!

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৩

এদিকে রাত গভীর হচ্ছে। আমার হাতে ফোন, ব্যাগ কিছুই নেই। হঠাৎ করে কি হলো এখানে কিছুই বুঝতে পেলাম না আমি। দুরুদুরু বুকে ভাবতে লাগলাম এত রাতে একা বাসায় কিভাবে যাবো?

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৫