বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১১

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১১
সাদিয়া জাহান উম্মি

রাতে প্রচন্ড বৃষ্টির পর এখন ঝলমলে এক দিনের আগমন ধরনীতে।ভীষন স্নিগ্ধ চারপাশ।বাগানে হেটে বেড়াচ্ছে আরাবী।ঠিক তিনদিন পর আজ চতুর্থ দিনের বেলায় ঘরের বাহিরে এসেছে আরাবী।এ কয়দিন শতবার বলার পরেও আরাবীকে কেউ ঘর হতে বাহিরে যেতে দেয়নি।আজও যেতে দিতো না। ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে দেখে মিলি রান্না করছে।আরাবী সাহায্য করতে যেতেই মিলি এক ধমকে আরাবীকে থামিয়ে দেয় আর বলে রুমে গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে।মাত্র তখন ছয়টা বাজে।আরাবী তখন মুখটা একটুখানি করে আস্তে করে বলেছিলো,

-‘ মাম্মাম ঘরে ভালো লাগছে না।আমি একটু বাগান থেকে হেটে আসি।আমার পায়ে একটুও ব্যাথা নেই।প্লিজ না করো না।’
ব্যস মিলি গলে গিয়ে আরাবীকে অনুমতি দিয়ে দেয়।আরাবী ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি।আরাবী কাঠগোলাপ ফুল গাছটার কাছে এগিয়ে গেলো #বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ গুলো যেন এখন আর শুভ্র,স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।আরাবী নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা কাঠগোলাপ পরে আছে।আরাবী ফুলটা কুড়িয়ে নিয়ে কিছুক্ষন একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।কেন যেন এই ফুলটার মাঝে অদ্ভূত এক মায়া খুজে পায়।আরাবী ফুলটা ওর কানের পিঠে গুজে দিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরাবী কাঠগোলাপ ফুলগুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে বাগানের অন্যপাশে যেতে নিয়েই হঠাৎ ওর বারান্দার ঠিক ডানপাশের বারান্দাটার দিকে তাকালো।চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেলো আরাবীর।দ্রুত দৃষ্টি সংযত করে অন্যপাশে তাকালো।আবারও, আবারও এই লোক উদোম গায়ে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে।লোকটার কি কোন লজ্জা,শরম নেই? জায়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি পান করছিলো।

সকাল সকাল গোসল সেরে নিয়েছে এইটা জায়ানের প্রতিদিনের অভ্যাস।অফিস যাওয়ার আগে একবার গোসল নেয় আবার অফিস থেকে এসে।জায়ানের কাধে ঝুলানো শুভ্র রঙের তোয়ালে।আরাবী তাকাতে চাচ্ছে না।তাও বেহায়া দৃষ্টি আরো একবার চোরা চোখে তাকালো।সাথে সাথে শরীরে মৃদ্যু কম্পন অনুভব হলো।লোকটার ধারালো দৃষ্টি তার দিকেই।কেমন যেনভাবে ওর দিকে তাকিয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে আরাবীর ভীতরে কেমন যেন তোলপাড় অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে।আরাবী যতোদ্রুত সম্ভব সেখান থেকে প্রস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।নাহলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।যেটা আরাবী কখনো চায়না।

আরাবী বাড়ির ভীতরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই সেই অনাকাঙ্খিত মানুষটির একটি ডাক হৃদয় কাঁপিয়ে তুললো,
-‘ এই মেয়ে শুনো!’
পা জোড়া থমকে গিয়েছে আরাবীর অজান্তেই। আরাবী ধীরে পিছনে ফিরলো।হালকা করে চোখ উঁচিয়ে তাকিয়ে আবারও মাথা নুইয়ে নিলো।বললো,
-‘জি আমাকে ডাকছেন?’
-‘ তো এখানে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পারছো তুমি?’

আবারও সেই ত্যাড়া ত্যাড়া কথা লোকটার।রাগ লাগলো আরাবীর হালকা তেজ নিয়ে বললো,
-‘ আমাকে এই মেয়ে এই মেয়ে করে ডাকলে আমি বুঝবো কিভাবে?আমার একটা নাম আছে।ইনসিয়া জাহান আরাবী।খুব সুন্দর একটা নাম আশা করি এখন থেকে সেই নামেই ডাকবেন।এই মেয়ে এই মেয়ে বলা বন্ধ করুন।’
এতোটুক জোড়ে কথা বলায় গলাতে মৃদ্যু ব্যাথা অনুভব করলো আরাবী।তাতে ভ্রুক্ষেপ করলো না।তবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।যাক লোকটাকে একটু কথা তো শোনাতে পেরেছে এটাই অনেক।এই শান্তির কাছে এতোটুক ব্যাথা কিছুই নাহ। জায়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আরাবীর দিকে। আজ হঠাৎ এমন তেজ আসলো কোথায় থেকে এই মেয়ের? জায়ান হালকা আওয়াজে বলে উঠলো,

-‘ ওখানেই অপেক্ষা করো। আ’ম কামিং। ডোন্ট ইউ ডেয়ার।একপাও এখান থেকে যেন না নড়ে।তাহলে ভালো হবে না।’
সাথে সাথে আরাবীর মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।কি বললো লোকটা?ওকে অপেক্ষা করতে বললো তার জন্যে?কিন্তু কেন?ওই কথাগুলো বলার কারনে কি লোকটা রেগে গিয়েছে?সেদিন তো বলেছিলো বারান্দায় উঁকিঝুকি মারার কারনে ওকে বারান্দা থেকে ফেলে দিবে।আর আজ তো কতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।আজ কি করবে? তুলে আছাড় মারবে নাকি সুইমিংপুলে ফেলে দিবে?নাকি অন্য কোন শাস্তি দিবে?দিলেও বা কি কঠিন শাস্তি দিবে নাকি সহজ?আরাবী চিন্তায় বিভোর হয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।

-‘ দাঁত দিয়ে নখ কাটা, ইট্স ব্যাড ম্যানার্স মিস ইনসিয়া জাহান আরাবী।’
হঠাৎ জায়ানের গম্ভীর গলার কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠার মতো অবস্থা হলো আরাবী।গভীর চিন্তায় আচমকা জায়ানের কন্ঠস্বর শুনতে অনেক ভয়ানক লেগেছে আরাবীর কাছে।আরাবী তাকালো লোকটা ধূসর টাউজারের সাথে কালো রঙের টি-শার্ট পড়েছে।নাক মুখ কুচকে এলো আরাবীর।লোকটাকে সবসময় এমন কালো রঙের পোষাকই পরিধান করতে দেখে।কেন এই লোকের কি আর কোন রঙের জামা-কাপড় নেই। তবে লোকটাকে বেশ মানায় কালো রঙে।

-‘ মুখ থেকে হাত সরাও।’
আরাবীকে এখনো মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এইবার হালকা ধমকে উঠে জায়ান।আরাবী ভয় পেয়ে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে নিলো।ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ জি কিছু বলবেন আমায়?ডেকেছিলেন যে?’
-‘ এদিকে এসো।’

জায়ানের নির্লিপ্ত কন্ঠস্বর।এদিকে জায়ানের এহেন কথায় হকচকিয়ে যায় আরাবী।জায়ান আবারও একই কথা বলতে আরাবী ধীর পায়ে জায়ানের কাছে এসে দাঁড়ায়।তবে এখনো অনেকক্ষানি দূরুত্ব দুইজনের মাঝে।হঠাৎ জায়ান সেই দুরুত্বটুকু আরো একটুখানি ঘুচিয়ে দিলো।আরাবী কদম পিছাতে নিলেই জায়ান চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।তারপর আরাবী কপালে ব্যান্ডাজ করা স্থানটায় আলতো করে হাত ছোঁয়ালো।শিরশির করে উঠলো আরাবীর শরীর।কেমন যেন লাগছে মনের ভীতর। জায়ানের গা থেকে সুন্দর একটা ঘ্রান আসছে।আরাবী শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সেই ঘ্রানটুকু নিজের মাঝে টেনে নিচ্ছে নিজ অজান্তেই।এদিকে জায়ান আরাবীর ব্যান্ডেজকৃত স্থানে একধ্যানে তাকিয়ে থেকে নরম কন্ঠে সুধালো,

-‘ ব্যাথা আছে?’
আরাবী নত মস্তকেই মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়। জায়ান বিরক্তি নিয়ে বললো,
-‘ ইউস ইওর ওয়ার্ডস।’
আরাবী জায়ানের কথা শুনে কাপা গলায় বলে,
-‘ নাহ এখন ব্যাথা নেই।’

সাথে সাথে জায়ান দ্রুত পায়ে দুহাত পেছনে সরে গেলো আরাবীর থেকে।ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে হালকা রাগি গলায় বলে,
-‘ অসুস্থ শরীর নিয়ে এমন সকাল সকাল বাগানে ঘুরঘুর করছো কেন?তাও আবার সাদা জামা পরে এলোমেলো চুল নিয়ে।আমি দেখে কিছু হয়নি।নাহলে অন্য কেউ তোমাকে দেখলে নিশ্চিত পেত্নি ভেবে হার্ট এট্যাক করতো। ঘরে যাও দ্রুত।’
কথাগুলো বলে আর এক সেকেন্ডও দাড়ালো না জায়ান।দ্রুত পায়ে বাড়ির ভীতর চলে গেলো।

এদিকে আরাবী হা করে তাকিয়ে আছে জায়ানের যাওয়ার পথের দিকে। লোকটা কি বললো ওকে?পেত্নি বলে গেলো?মানুষ ওকে দেখলে হার্ট এট্যাক করবে? মানে এতো বড় অপমান করলো আরাবীকে মুখের উপর? অপমানে মুখশ্রী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো আরাবীর।এখন কাউকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে ওকে কি আসলেই পেত্নীদের মতো লাগছে নাকি।আরাবী ছোট ছোট কদমে বাড়ির ভীতর চলে গেলো। দেখে কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।কাকে জিজ্ঞেস করবে?হঠাৎ রান্নাঘরের টুংটাং শব্দে দ্রুত রান্নাঘরের দিকে আগালো আরাবী।কর্মরত মিলিকে টেনে নিজের দিক ফিরালো।মিলিকে কিছু বলতে না দিয়ে আরাবী ধুম করে বলে,

-‘ দেখো তো মাম্মাম।ভালো করে আমাকে দেখো।’
মিলি আরাবী এমন কথায় অবাক হলেও।পরক্ষনে আরাবীর দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
-‘ হ্যা দেখেছি ভালো করে।তো?’
আরাবী বললো,

-‘ আমাকে কি দেখতে পেত্নিদের মতো লাগে?’
মিলি ভ্রু-কুচকালো আরাবীর কথায়।বললো,
-‘ আশ্চর্য? তোকে পেত্নিদের মতো লাগবে কেন?’
-‘ না মানে সাদা জামা পরে আছি তার উপর মাথার চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে এই জন্যে।’
মিলি মুচকি হেসে আরাবীর গালে হাত রেখে বলে,
-‘ একদম না।আমার মেয়েটাকে তো এই সাদা জামা,এলোমেলো চুলে একেবারে মারাত্মক সুন্দরী লাগছে। ‘
তারপর আরাবীর কাছ থেকে সরে গিয়ে আবার বলে,

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১০

-‘ এখন যা ভালোভাবে ফ্রেস হয়ে আয়।আমার নাস্তা বানানো প্রায় শেষ। একটু পর নাস্তা দিবো।দ্রুত যা।’
আরাবী চিন্তিত হয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলো,
-‘ আজব মাম্মাম বললো সুন্দর লাগছে।তাহলে লোকটা কেন আমাকে পেত্নী বললো।’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১২