বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১২

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১২
সাদিয়া জাহান উম্মি

♪তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো
ভোরের রং রাতে মিশে কালো। কাঠ গোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি
আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।♪

মনোযোগ দিয়ে গানটা শুনছে আরাবী।এই গানটা আরাবীর ভীষন প্রিয়।যতো শুনে ততোই শুনতে ইচ্ছে করে।পুরনো হয় না যেন। আরাবী বাগানে দোলনায় বসে বসেই গানটা শুনছিলো।আর সন্ধ্যের আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো।এমন সময় হুট করে কেউ ওর পাশে বসে পরে। দোলনাটা ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠে যেন।আরাবী ভয় পেয়ে মৃদ্যু চিৎকার করে উঠে।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পাশে তাকাতেই ইফতির হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রীর দেখা মিলে।আরাবী কান হতে ইয়ারফোন খুলে নিলো।তারপর খানিকটা রাগি গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ এটা কেমন ইফতি ভাইয়া?তুমি এইভাবে না বলে ধুপধাপ যে বসে পরো ভয়ানকভাবে।অপরপাশের মানুষটা যে একারনে নিশ্বাস আটকে মারাও যেতে পারে তা কি তুমি জানো নাহ?’
ইফতি হুহা করে হেসে দিলো।আরাবী বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেললো।ইফতি হাসি থামিয়ে বলে,
-‘ আমি তো তোকে ভয় দেখানোর জন্যেই এমন করেছিলাম।’
আরাবী গোমড়ামুখ করে বললো,
-‘ তুমি খুব খারাপ ইফতি ভাইয়া!’

ইফতি উঠে দাড়ালো।তারপর আরাবীর হাত টেনে ধরে বললো,
-‘ চল উঠ।ঘরে যাবো।’
আরাবী অবাক কন্ঠে বললো,
-‘ আরে কেন?কি হয়েছে?আমি মাত্রই এসেছি তো এখানে।’
ইফতি আরাবীকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
-‘তুই গিয়ে রেডি হয়ে একেবারে নিচে আসবি।আজ আমাদের কাজিনদের ছোট খাটো একটা গেট টুগেদার আছে সেখানেই যাবো।’

আরাবী তৎক্ষনাৎ হাটা থামিয়ে দিলো।অবাক হয়ে বলে,
-‘ আশ্চর্য? তোমাদের কাজিনদের গেট টুগেদার তাহলে আমি কেন যাবো?’
ইফতি বিরক্ত হয়ে তাকালো আরাবীর দিকে ওর এমন প্রশ্ন শুনে বললো,
-‘ তুই জানিস না কারনটা কি? তুই আমায় কি ডাকিস?’
আরাবী ইফতির এমন কথায় বোকা বোকাভাবে বলে,

-‘ ভাইয়া ডাকি।’
-‘ তাহলে তুই আমার কি হোস?’
-‘ বোন!’
ইফতি বাঁকা হাসলো।তারপর আরাবীর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,
-‘ তাহলে তুই কেন যাবি নাহ?বলদ একটা।এমন বোকা হলে চলে জীবনে?’
আরাবী মাথায় হাত বুলালো।বললো,

-‘ উফ ভাইয়া এতো জোড়ে মারে কেউ?’
ইফতি হেসে বললো,
-‘ আমি মারি।’
আরাবী এইবার খানিক ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
-‘ আমি না গেলে হয়না ভাইয়া?তুমি তো জানো আমার নতুন মানুষদের সামনে যেতে লজ্জা লাগে।আর আমি চোখ তুলেও তাকাতে পারিনা।ভীষন জড়তা লাগে।’
ইফতি আরাবীর কথায় শুনলো।বুঝলো মেয়েটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে।ইফতি আরাবীর মাথায় স্নেহ নিয়ে হাত বুলিয়ে দিলো।বললো,

-‘ দূর বোকা মেয়ে।এতো নার্ভাস হওয়া লাগবেনা।আর আমি আছি না?নূর,ভাই ওরাও যাবে।তাহলে এতো জড়তা কিসের?’
নূরের কথা শুনে যেমন ভালো লেগেছিলো।তেমন জায়ান যাবে শুনে ভালোলাগাটা মাটিচাপা দিয়ে দিলো। সেইযে পেত্নি বলার দিনের পর গড়িয়েছে সাতদিন।এই সাতদিনে যতোবার আরাবী সাদা জামা পরেছে।ততোবার কোন না কোনভাবে ও জায়ানের সামনে এসে পরেছে।আর ততোবারই জায়ান ওকে পেত্নী বলে সম্বোধন করেছে।এখন আরাবী কি করবে?ওর বাড়িতে রেগুলার পড়ার জন্যে জামা পাঁচটা তার মধ্যে তিনটাই সাদা।

আর ভার্সিটি যাওয়া আসার জন্যেও যেগুলো আছে আর বাহিরে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার জন্যেও যেগুলো আছে সেগুলোর মধ্যেও বেশিরভাগ সব সাদা।আসলে সাদা রঙটা আরাবীর খুব পছন্দ।আরাবী সবসময় ভাবে ওর জীবনে যেমন কোন রঙ নেই ঠিক তেমনভাবে ও নিজেও নিজেকে রংহীন পোষাকে মুরিয়ে রাখতে ভালোবাসে।শুভ্র রঙটা যেন ভীষনভাবে টানে আরাবীকে।প্রচন্ড পছন্দ এই রঙটা।এমনকি এই রঙের যেকোন কিছু।নেহাত সেই কারনেই এতোগুলো সাদা জামা ওর।কিন্তু এখন এই জায়ানের কারনে আরাবী বোধহয় আর সাদা রঙের কিছুই পরিধান করতে পারবে না।

খারুস লোকটা ক্ষনে ক্ষনে ওকে পেত্নী বলে মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দেয়। আরাবী অবশ্য শান্ত স্বভাবের মেয়ে নাহলে অন্য কেউ হলে লোকটাকে তখনি পশ্চাতে এক লাথি দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দিতো।অবশ্য আরাবীরও ইচ্ছে করছিলো খুব এটা করার।কিন্তু ওই গুমড়ামুখো লোকটার দিকে তাকালেই ভয়ে আত্মা হিম হয়ে যায় আরাবীর।ও যদি লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেয় তাহলে নিশ্চয়ই লোকটা ওকে ছেড়ে দিবে না।গুনে গুনে একশোটা চুবানি দিতে আরাবীকে এই অপরাধের কারনে।আর প্রাহি চুবানি খেতে খেতে মরেই যাবে।চুবানি খাওয়ার ভয়ে আরাবী তার মনের ইচ্ছাটা সেখানেই সেই মুহূর্তেই ওই সুইমিংপুলেই চুবিয়ে মেরে ফেলেছিলো।কারন ওর দ্বারা কখনো জায়ানকে ধাক্কা দেওয়া পসিবল না। তপ্ত শ্বাস ফেললো আরাবী। ইফতি অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,

-‘ যাবি না আরাবী?’
আরাবী ইফতির মুখশ্রী দেখে না করতে পারলো না।রাজি হয়ে গেলো।ইফতি হাসিমুখে আরাবীকে রেডি হতে বলে নিজেও চলে গেলো রেডি হওয়ার জন্যে।এদিকে রুমে এসে আরাবী আলমারি খুলে বসে আছে।কি পরবে ও?আবারও সাদা পরবে?কিন্তু জায়ান যদি আজকে আবার পেত্নী বলে তাহলে আজ আরাবীর মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে একাবারে।সেখানে কতোগুলো মানুষ থাকবে।তাদের মাঝে যদি জায়ান অপমান করে বসে? আরাবী যখন নিজের চিন্তায় বিভোর।তখন আরাবীর রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে নূর।রুমে আসতে আসতে বলছে,

-‘ আরাবী রেডি তুমি?চলো ভাইয়ারা অপেক্ষা করছে।’
আরাবীর দিকে তাকাতেই হা করে তাকিয়ে থাকলো নূর। অবাক হয়ে বলে,
-‘ তুমি এখনো রেডি হওনি?ওদিকে ভাইয়া’রা অপেক্ষা করছে!’
আরাবী তাকালো নূরের দিকে।মেয়েটা মেরুন রঙের শাড়ি পরেছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে নূরকে।আরাবী স্মিত হেসে বলে,
-‘ তোমাকে সুন্দর লাগছে নূর।’

নূর যেমন আরাবীর প্রসংশাকে পাত্তা দিলো না।বললো,
-‘ আমার প্রসংশা বাদ দেও।দ্রুত রেডি হও।জায়ান ভাইয়া দেরি করা পছন্দ করে না।’
আরাবী ঠোঁট উলটে বলে,
-‘ কি পরবো আমি।তুমি বলে দেও। আমার সব জামা প্রায় সাদা রঙের।’
নূর বললো,
-‘ আজ আমাদের কাজিনদের ড্রেসকোড শাড়ি।আমি যেহেতু শাড়ি পরেছি।তুমিও পরবে।’
আরাবী মন খারাপ করে বলল,
-‘ কিন্তু আমার তো কোন শাড়ি নেই।’

আরাবীর কথায় নূর কি করবে ভেবে পেলোনা।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে একছুটে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।আরাবী ভ্যাবলার মতো নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো।কিয়ৎক্ষন বাদে নূর হাতে করে একটা কালো রঙের শাড়ি নিয়ে আসলো।শাড়িটা আরাবীর কাছে দিয়ে দিলো।তারপর নূর দু কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
-‘ এখন যাও ফটাফট রেডি হয়ে আসো।’
আরাবী শাড়িটার উপর হাত বুলিয়ে দিলো।শাড়িটা ভীষন সুন্দর।কালো রঙের সিল্কের শাড়ি।আরাবী দৃষ্টি না সরিয়েই প্রশ্ন করলো,

-‘ এটা কার শাড়ি?শাড়িটা ভীষন সুন্দর।’
নূর আরাবীকে টেনে দাড় করালো তারপর আরাবীকে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে পাঠাতে পাঠাতে বলে,
-‘ এটা ছোটমার শাড়ি হয়েছে? জেনেছো?এখন আর প্রশ্ন করো না।অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্লিজ জলদি পরে আসো।শাড়ি পরতে পারো তো?আমি কিন্তু শাড়ি পরাতে পারি না।আমাকে আম্মু পরিয়ে দিয়েছে।তুমি না পারলে বলো আমি ছোটমাকে ডেকে নিয়ে আসি।’
আরাবী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।বলল,

-‘ ডাকা লাগবে না।আমি পারি।তুমি একটু অপেক্ষা করো।আমি এখনো পরে আসছি।’
-‘ দ্রুত যাও।’
আরাবী ওয়াশরুমে ঢুকে যতো দ্রুত সম্ভব শাড়িটা পরে নিলো।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসতেই নূর ওকে টেনে নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসালো।হালকা একটু সাজিয়ে দিলো।খোপা করে চুলে হেয়ার পিন লাগিয়ে দিলো। কালো বড় সিলভারের সিতাহার আর সিলভারের কানের দুল আর সিলভারের চুরি পরালো এক হাতে আরেকহাতে সিলভারের ব্রেসলেট।
আরাবী প্রশ্ন করলো,

-‘ এইগুলো কোথায় পেয়েছো নূর?’
নূর আরাবী কাজল ঠিক করে দিচ্ছিলো উত্তরে বললো,
-‘ ছোট মা দিয়েছে।তোমাকে এইগুলো দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে বলেছে।’
সাজানো শেষে আরাবী আয়ানায় নিজের দিকে তাকালো।কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে আরাবীর।আরাবী কখনও এইভাবে সাজেনি।এইদিকে নূর গালে দুইহাত দিয়ে বলে,
-‘ ওয়াও আরাবী।তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’

আরাবী বিনিময়ে মুচকি হাসলো।নিচ থেকে মিলির ডাক পরতেই।আরাবী আর নূর হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।নিচে আসতেই আরাবী আর নূরকে দেখে বলে,
-‘ মাশা-আল্লাহ! আমার দুটো মেয়েকেই আজ পরির মতো লাগছে।যা এখন আর দাড়াস না।পাছে না দেখা যাবে জায়ান রেগে মেগে আর যাবেই না।নয়তো তোদের না নিয়েই চলে যাবে।জানিসই তো ছেলেটা আমার বড্ড ঘাড়ত্যাড়া।’
মিলির থেকে বিদায় নিতেই আরাবী আর নূর বাড়ির বাহিরে চলে আসলো।গাড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো। ইফতি গালে হাত দিয়ে গাড়ির ডিকির উপর বসে আছে আর জায়ান বোধহয় ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।

ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।এতোদিন নায়ক কে জানতে চেয়ে পাগল হয়েছিলেন। তো আজ সবাই সিউর তো কেন মেইন নায়ক? বলবেন ইফতি কেন নায়ক হলো না।আপনারা গল্পতেই দেখতে পেয়েছেন আমি ইফতি বা আরাবীর মাঝে কোন রোমান্টিক কিছু দিয়েছি?বলুন?সেইগুলো দেখলেই তো ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা।বলতে পারেন ইফতি যে ওই দিন আরাবীকে সুন্দর বললো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১১

আরে ভাই কাউকে সুন্দর বললেই যে তাকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে এমনটা একদম না।কাউকে সুন্দর লাগলে তাকে সুন্দর বলতেই পারেন।তবে হ্যা ইফতিও নায়ক।আর ইফতির ব্যাপারে পুরোপুরি ক্লিয়ার হবে নেক্সট পর্বে।আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন।প্লিজ কেউ মন খারাপ করবেন।আশা করি আগে যেভাবে পাশে ছিলেন সেইভাবেই থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৩