বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩
সাদিয়া জাহান উম্মি

মায়ের সাথে দীর্ঘক্ষন কথা শেষ করে ঘুমিয়েছিলো আরাবী।মাত্র উঠলো ঘুম থেকে।বেশ ভালোই লাগছে এখন।আরাবী ফ্রেস হয়ে রুমের বাহিরে বের হলো।নিচ থেকে শোরগোলের আওয়াজ আসছে।এতো মানুষ কোথাথেকে আসলো?এই বাড়িতে তো শুধু মিলি,মিহান, ইফতি আর দুটো মেইড আছে।আর আজ থেকে ও বারলো।আরাবী আস্তে ধীরে নেমে আসলো নিচে। নিচে আসতেই দেখে মিলি আর মিহানের সাথে আরো দুজন আছে।এরা কারা চিনলো না আরাবী।তারা কথা বলছে।আরাবী তাদের কথার মাঝে যাবে কি না তা নিয়ে ভাবছে।না যাওয়াটাই ঠিক মনে করলো আরাবী।হয়তো তারা কোন দরকারি কথা বলছে।তাই আরাবী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।তবে তা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না।মিলি আরাবীকে দেখেই উঠে আসলো।আরাবী হাত ধরে সবার সামনে টেনে নিয়ে আসলো।বললো,

-‘ ওখানে ওইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?আমি বলেছিলাম নাহ?এখন থেকে এটা তোমারও বাড়ি।তাই নির্দিধায় সব করবে এখানে।’
আরাবী কিছুই বললোনা।চুপচাপ মাথা নিচু করে সোফায় বসে রইলো।মিলি হেসে বাকি দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ সাথি আপা আর নূর।তোমরা তো ওকে চিনতে পারছো না তাই নাহ?আরে এটা আরাবী।লিপি আর জিহাদ ভাইয়ের মেয়ে।সেই ছোট্ট আরাবী।উফ আমিও না চিনবে কিভাবে তোমরা।তোমরা তো শুধু দু একবার ওর ছবি দেখেছো আর মাঝে মধ্যে ভিডিও কলে দেখেছো।তোমরা তো তখন এখানে থাকতে না।আমিও না কিসব ভুলভাল বলি। জানো আপা আরাবী এখন থেকে এখানেই থাকবে।আমার মেয়ে ও। আর আরাবী ইনি হলেন আমার বড় জা আর নূর হলো উনার মেয়ে।’
এদিকে মিসেস সাথি এতোক্ষন তীক্ষ্ণ নজরে আরাবীকে পরখ করছিলো।আরাবী মিসেস সাথির এমন তীক্ষ্ণ নজরে ভয় পেলো।মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,

-‘ আসসালামু আলাইকুম আন্টি!’
মিসেস সাথি গম্ভীর কন্ঠে সালামের জবাব দিলেন।তার মিলির কথা মোটেও ভালো লাগলো না।যে আরাবী এখন থেকে এখানেই থাকবে।এদিকে নূর আরাবীকে দেখে তৎক্ষনাৎ আরাবীর পাশে এসে বসলো দুম করে।এতে খানিক চমকে উঠলো আরাবী।আরাবীকে এমন চমকাতে দেখে খিলখিল করে হাসলো নূর।তারপর মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ ছোট মা।ওকে আমার খুব ভালো লেগেছে।একদম পুতুলের মতো দেখতে। যাক এখন থেকে আমার আর একা থাকা লাগবে না।আমি একটা সঙ্গি পেয়ে গেলাম।’

বলেই একপাশ হতে জড়িয়ে ধরলো আরাবীকে।আরাবী অবাক হলো নূরের আচড়নে।এইভাবে অচেনা একটা মেয়েকে এমন এক ঝটকায় কিভাবে কেউ এতো সুন্দর করে আপন করে নিতে পারে।ভীষন ভালো লাগলো নূরকে আরাবী’র।নূরের কথায় মিলি বললেন,
-‘ হ্যারে আরাবীর জন্যেও ভালো হলো।আচ্ছা নূর এক কাজ কর।তুই যা আরাবীকে নিয়ে আমাদের পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে আয়।’
-‘ ছোট মা,ওকে আগে আমি আমাদের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো তারপর বাগান। ঠিক আছে?’
-‘ আচ্ছা যা!’

নূর আরাবীকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে নূরের এমন আচড়নে বেশ বিরক্ত হলেন সাথি।এই মেয়েটা এমন চঞ্চল হলো কিভাবে যেখানে তিনি অনেক গম্ভীর।পুরোই বাবার মতো হয়েছে।মেয়েটার এই স্বভাবটা তিনি মোটেও পছন্দ করেন নাহ। এইভাবে হুটহাট অচেনা মানুষদের সাথে মেয়েটা তার এক দেখাতেই মিশে যায়।মিসেস সাথি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
-‘ তা জিহাদ ভাইয়ের মেয়ে এখানে কেন থাকবে?আর শুনেছিলাম তো জিহাদ ভাই মারা গেছেন।তারপর আর এদের খোঁজ পাসনি।তো হঠাৎ এই মেয়ে কোথা থেকে আসলো?আর ওর পরিবার কোথায় যে এই মেয়ে এখানেই থাকবে?’
মিলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

-‘ আসলে আপা হয়েছে কি…….! ‘
তারপর আস্তে আস্তে সবটা বললো মিলি সাথিকে।সব শুনে সাথি’র একটু খারাপ লাগলো আরাবীর জন্যে।পরক্ষনে আবার বললেন,
-‘ বেশ খারাপ লাগলো মেয়েটার জন্যে।কিন্তু এখানে একেবারে থাকার কথাটা কেমন যেন লাগলো না? এইভাবে মানে?’
মিলি অবাক হলো সাথির কথায় বলেন,

-‘ কি বলো আপা।এই মেয়েটা আমার মেয়ের থেকে কম না।ওকে আমি অনেক স্নেহ করি।ও আমার কাছেই থাকবে।আর তাছাড়া এই অচেনা ঢাকা শহরে ও একা একা কিভাবে থাকবে আপা?’
সাথি উঠে দাড়ালেন।তারপর রুক্ষ কন্ঠে বলেন,
-‘ হুম। যা ভালো মনে করিস কর তুই ছোট।আমার যা বলার ছিলো আমি বললাম।বাকিটা তোদের মর্জি।আসি আমি।অনেক কাজ আছে। ‘

এই বলে গট গট পায়ে চলে গেলেন সাথি।মিলি আর মাহিন একে-অপরের দিকে করুনভাবে তাকালো।তারা বুঝলো সাথি’র আরাবীর এখানে থাকাটা মোটেও পছন্দ হয়নি তাদের।

নূর আরাবীকে নিয়ে ওদের বাড়ি পুরো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।কার রুম কোনটা সেটা বলছে।আর আরাবী সব দেখছে চুপচাপ।এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখেও আরাবী ভীতরে কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই।আসলে ওর জীবনে তো কোন রঙের ছোঁয়াই নেই।যেখানে ওর জীবনটাই সাদা কালা সেখানে এতো রঙিন চাকচমকপূর্ন জিনিস ওর কাছে কিছুই মনে হয়।এইগুলো দিয়ে ও কি করবে?ওর তো চাই একটা রঙ্গিন জীবন।যেখানে ও চারপাশ উপভোগ করবে মুগ্ধ হয়ে।মুক্তো পাখির মতো উড়ে বেড়াবে স্বাধীনভাবে।শান্তির শ্বাস নিবে ওই নির্মল প্রকৃতিতে।কিন্তু হায় আফসোস।চাইলেও যে সব আশা পূর্ণ হয়না।এদিকে নূর আরাবীর কোন সারাশব্দ না পেয়ে।আরাবীর কাধে হাত দিলো।তারপর মুখ লটকিয়ে বলে,

-‘ কি গো?তোমার কি কিছু ভালো লাগছে না?কথা বলছো না কেন?’
নূরের কথায় ধ্যান ভঙ্গ হয় আরাবী’র।তারপর হালকা হেসে বলে,
-‘ নাহ আমি শুনছি তো তোমার কথা।ভালো লাগছে।তুমি বলো?’
নূর খুশি মনে আরাবীর হাত টেনে নিয়ে গেলো একটা রুমের সামনে তারপর বলে,

-‘ এটা হলো আমার বড় ভাইয়ার রুম।ভাইয়ার রুমটা এই বাড়িতে সবচেয়ে বড় রুম।আর অনেক সুন্দরও।কিন্তু আমি তোমাকে ভীতরে নিয়ে দেখাতে পারছি না তার জন্যে দুঃখিত।কারন ভাইয়ার অনুমতি ছাড়া কেউ ওর রুমে ঢুকতে পারে না।তাহলেই ভাইয়া রেগে যায়।ভাইয়াটা ভারি বজ্জাত আমাকেও ঢুকতে দেয়না।’
বলেই মুখ গুমড়া করে নিলো নূর।এদিকে আরাবী বিরসমুখে চাইলো রুমটার দরজার দিকে। এ কেমন লোক যে নিজের পরিবারের মানুষদেরও রুমে প্রবেশ করতে দেয়না।মনে হয় নিশ্চয়ই লোকটা অনেক বদরাগি।আরাবী নূরের গুমড়ো মুখ দেখে বলে,

-‘মন খারাপ করো না আপু।চলো আমরা বাগানে যাই।বাগানটা আমার ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছে।সকালে দেখেছিলাম।অনেক ফুল গাছ আছে বাগানে।’
মুহূর্তেই নূরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আরাবীকে নিয়ে চললো বাগানে।এদিকে বাগানে আসতেই আরাবীর মনটা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো।এতো এতো ফুল গাছ।যে আরাবীর চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে।

সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।মৃদ্যুমন্দ বাতাস বইছে।পাশেই কাঠগোলাপ গাছটা দেখে আনন্দে নেঁচে উঠলো আরাবীর মন।ছোট থেকেই কাঠগোলাপ ফুল ওর অনেক পছন্দ।কেন যেন কাঠগোলাপ ফুলগুলো দেখলো সেই ফুলের মাঝে এক স্নিগ্ধ ভালোবাসা খুঁজে পায় আরাবী।ঠিক এই স্নিগ্ধ শুভ্র ফুলগুলোর মতো।আরাবী আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো ফুলগুলো।তারপর মুখটা এগিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফুলের স্পর্শগুলো অনুভব করলো।

দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে দিলো আরাবীর চুল।শুভ্রতায় লেপ্টে থাকা এই মানবীকে যেন মনে হলো কোন পরির রাজ্যের রাজকন্যা।হঠাৎ কিছু একটা আলো এসে লাগলো আরাবীর চোখে।প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে।এই অন্ধকারের মাঝে একটুখানি আলোর ঝলকানিটা যেন খুব ভালোভাবে টের পেলো আরাবী।চমকে উঠে চোখ মেলে তাকালো।কিন্তু না কিছুই দেখতে পেলো না ও।এদিকে হঠাৎ নূর এসে আরাবীর হাত টেনে ধরলো।ওকে নিয়ে বাড়ির মিহানদের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বলছে,

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২

-‘ আরে আব্বু,বড় ভাইয়া আর ছোট ভাইয়া এসে পরেছে অফিস থেকে।চলো চলো আমরা ঘরে যাই।তোমাকে আগে ছোট ভাইয়ার সামনে নিয়ে যাই।কারন ছোট ভাইয়ার সাথেই তো তোমার বন্ডিংটা ভালোছিলো ছোটবেলায় আমি শুনেছি।ভাইয়া প্রায় তোমার কথা বলতো আমাকে জানো।চলো ভাইয়া তোমাকে দেখলে চমকে যাবে।’
এদিকে নূরের কথা শুনতে শুনতে আরাবীও পুতুলের মতো নূরের পিছে পিছে চললো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৪