বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৭

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৭
সাদিয়া জাহান উম্মি

তীব্র বারিধারার পরে ঠিক যেমন পরিবেশ শীতল হয়েছিলো।এখন আবার তীব্র রোদের ঝলকানিতে যেন চোখ মেলে চেয়ে থাকাও দুষ্কর হয়ে ঠেকেছে।অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ সবাই।কেটে গিয়েছে এর মাঝে পাঁচটি দিন।বেশ ভালোই গিয়েছে দিনগুলো।

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আজ তিনদিন হলো আরাবী ক্লাস করছে।বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে আরাবীর।তপ্ত শ্বাস ফেললো আরাবী। নূরের জন্যে অপেক্ষা করছে আরাবী।নূর আর ও একই ক্লাসের হলেও ওদের ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন।নূর কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের আর আরাবী মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের।আজ নূরের এক্সট্রা ক্লাস আছে একটা।তাই আরাবী লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করছে নূরের জন্যে।নূরদের ফ্যামিলির মাঝে নূর আর নিহাদকে আরাবীর ভীষন ভালোলাগে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এতো মিশুক মানুষ দুটি।সেদিন যখন নূর ওকে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের বাসায় ব্রেকফাস্টের জন্যে তখন সাথি বেগম খানিক বিরক্তই হয়েছিলেন আরাবী বুঝতে পেরেছিলো।কিন্তু মেয়ে আর স্বামির জন্যে কিছু বলেননি।আর এইভাবে একজন মেহমান বাড়িতে আসলে তার সাথে অনুচিত ব্যাবহার করেও ঠিক না এইভাবেও তিনি কিছু বলেননি।তবে সৌজন্যমূলক ব্যাবহারও যে করেছিলো এমনটাও না।তিনি আরাবীর সাথে কোন কথাই বলেননি।জায়ানও আরাবীর সাথেও একটা কথাও বলেনি।খেয়ে চুপচাপ উঠে চলে গিয়েছে।তবে নূর আর নিহাদ পুরোটা সময় বেশ সুন্দর ভাবেই কথাবার্তা বলেছে। সেদিনের পর থেকে আর আরাবী ভুলেও আর ওই বাড়িতে যায়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরাবী।বই খাতা গুছিয়ে লাইব্রেরি হতে বেড়িয়ে আসলো।অনেক পড়া হয়েছে এখন একটু হাটা যাক।এক টানা ক্লাস করে ক্লান্ত আরাবী।লাইব্রেরি থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় নূরের।নূর আরাবীকে দেখেই হাসলো।বললো,

-‘ আরে কোথায় যাচ্ছো?’
আরাবী হালকা আওয়াজে বলে,
-‘ তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম অনেক সময় হলো।তাই ভাবছিলাম একটু হেটে আসি।’
-‘ ওহ! আমার মাত্রই ছুটি হলো।ইসস,তোমার অনেক কষ্ট হলো তাই নাহ?যাক চলো এখন বাড়ি ফিরা যাক।ড্রাইভার আংকেল এসে গেছেন।’
আরাবী সম্মতি জানিয়ে নূরের সাথে হাটতে শুরু করলো।পুরো ভার্সিটি প্রায় খালি হয়ে গিয়েছে শুধু কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন স্টুডেন্ট দেখা যাচ্ছে তাও খুব কম।আরাবী আবারও চোখ নামিয়ে নিলো।নূর আরাবীকে দেখে মুখ গুমড়া করে বলে,

-‘ তুমি অলওয়েজ এমন এমন চুপচাপ থাকো কেন আরাবী?একটু আনন্দ, হাসি খুশি থাকলে কি হয়?’
আরাবী নূরের কথায় মলিন হাসলো।উদাসিন কন্ঠে বলে,
-‘ আমার জীবনে যে আনন্দ, উল্লাস এইসব করার কোন কারন নেই।আমি নিজেই যেখানে নিজেকে অনুভব করতে বৃথা।সেখানে আনন্দ উল্লাস এইসব উপভোগ করবো কিভাবে জীবনে?’
নূর আরাবীর এমন কথা শুনে বললো,
-‘ তুমি বড্ড উদাসিন আরাবী।লাইফে এমন উদাসিন হলে চলে না।জীবনটাই তো এখন উপভোগ করার।’
-‘সেটা হয়তো তোমার জন্যে।আমার জন্যে না নূর।আমি যে এই পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিতে পারছি এটাই অনেক।’
নূর ভোতা মুখ করে বলে,
-‘ উফ ভাল্লাগে নাহ!’

আরাবী আর কিছু বললো না।মাথা নিচু করেই হাটলো লাগলো।এদিকে গেটের কাছে আসতেই নূর বলে উঠলো,
-‘ ও মাই গোড।জায়ান ভাইয়া?তুমি?আমি ঠিক দেখছি তো?’
নূরের এহেন কথায় আরাবী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই জায়ানকে দেখতে পেলো। কালো শার্ট,কালো ব্লেজার,কালো প্যান্টে অনেক সুদর্শন দেখাচ্ছে লোকটাকে।নিজেকে যেন একেবারে কালোতে মুরিয়ে নিয়েছে লোকটা।জায়ান চোখ হতে সানগ্লাস খুলে ত্যারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আরাবীর দিকে।সাথে সাথে গা শিরশির করে উঠলো আরাবীর।দৃষ্টি নত হলো তৎক্ষনাৎ।ঠিক পাঁচ দিন পর জায়ানের সাথে দেখা আরাবীর জায়ানের সাথে দেখা হলো।এই কয়দিন আরাবী ভুলেও জায়ানের আশেপাশেও যায়নি। এদিকে জায়ান দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

-‘ গাড়িতে উঠে বস নূর।’
নূর অবাক কন্ঠে বলে,
-‘ কিন্তু ভাইয়া তুমি?তুমি এখানে এসেছো আমাকে নিতে?কিন্তু এর আগে আমি কেদেকেটে মরে গেলেও তো তুমি রাজি হতে না আমাকে দিয়ে অথবা নিয়ে আসার জন্যে বললে। ‘
জায়ান রাগিভাবে তাকালো নূরের দিকে।দাঁতেদাঁত চিপে বলে,

-‘ এখন কি তোর কাছে আমার এর জন্যে জবাবদিহিতা করতে হবে?ওকে ফাইন আমি চলে যাচ্ছি।তুই যেভাবে পারিস এসে পরিস বাড়িতে।আমি যাচ্ছি।তোর এইসব অহেতুক কথা আমি একদম নিতে পারছি না।’
জায়ানের কথায় নূরের মুখটা একটুখানি হয়ে গিয়েছে।জায়ান সেটা লক্ষ্য করলো।তাই রুক্ষ মেজাজটাকে খানিক শান্ত করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-‘ মোখলেস আংকেল অসুস্থ হয়ে পরেছেন এতো গরমে।তাই তিনি আসতে পারেননি।এইজন্যে আমিই আসলাম। আর ইফতির প্রচন্ড মাথাব্যাথা হচ্ছিলো নাহলে ওকেই পাঠাতাম।’
বলেই জায়ান গাড়ির ভীতরে উঠে বসলো।গরমে ঘেমেনেয়ে অবস্থা খারাপ ওর।একটু গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো সেইটুকু সময়েই কি যাতা অবস্থা হয়েছে।গাড়ির এসিটা অন করে দিলো জায়ান তাড়াতাড়ি। তারপর জায়ান রুমাল দিয়ে মুখশ্রীটা মুছে নিলো।ঢকঢক করে এক বোতল পানি সব খেয়ে নিলো।

এদিকে আরাবী চুপচাপ বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।এতো করা রোদে ওর নিজেও অস্থির হয়ে গিয়েছে।তবে রোদের তাপ ও সহ্য করতে পারে।ও তো আর জায়ান, নূরের মতো অতো বড়লোক না?যে এসির নিচে থাকতে থাকতে একেবারেই গরম সহ্য করতে পারেনা।ও তো গরিব ঘরের মেয়ে।এমন কতোশতো গরম সহ্য করে নিয়েছে।এমনকি এতো গরমের মাঝে হানিফ আরাবীকে একটু ফ্যান ছেড়েও ঘুমোতে দিতেন নাহ।ওর মাও তো এতো গরমে অস্থির হয়ে আছে?বয়স হয়েছে একা একা এই গরমে এখন সব কাজ নিশ্চয়ই মা করছে।আগে তো আরাবী ছিলো আরাবী কলেজ আর টিউশনি শেষ করে বাড়ি এসে যা পারতো কাজ করে দিতো।কিন্তু এখন কে করে দিবে?মায়ের কথা মনে পরতেই বুকটা খা খা করে উঠলো।বাসায় ফিরে মার সাথে একবার কথা বলে নিবে ভাবলো আরাবী।এদিকে আরাবীকে গাড়িতে উঠতে না দেখে ডাকলো নূর,

-‘ কিরে? গাড়িতে উঠছিস না কেন?’
আরাবী তাকালো নূরের দিকে।কিভাবে উঠবে গাড়িতে?লোকটা তো শুধু নূরের কথা উল্লেখ করে গাড়িতে উঠতে বলেছে।ওকে তো একবারও বলিনি।তাহলে কেন উঠবে গাড়িতে?আরাবী ভাবলো নূরকে বলে রিকশায় করে যাওয়া যাবে।যেই না মুখ খুলে কিছু বলবে তার আগে তীক্ষ্ণ ঝাঝালো কন্ঠস্বর কানে আসলো,

-‘ নূর এই মেয়েকে জিজ্ঞেস কর এখন কি ওকে আলাদাভাবে আমার ইনভাইটেশন দিয়ে গাড়িতে উঠার জন্যে বলতে হবে?’
শেষের কথাটা বেশ জোড়ে ধমক দিয়ে বললো জায়ান।কেঁপে উঠলো আরাবী।নূর ভাইয়ের মেজাজ গরম দেখে নিজেই গাড়ি থেকে বের হয়ে আরাবীকে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।জায়ান এইবার দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-‘ এইটা কেমন ধরনের ম্যানার্স নূর?আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয়?সামনে এসে বস।নাহলে এক চরে দাঁত ফেলে দিবো।’

নূর ভয়ে ভয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে আবারও জায়ানের পাশের সিটে বসে পরলো তারপর সিটবেল্ড বেধে নিলো।নাহলে দেখা যাবে এরজন্যে আবার ওকে বকে দিয়েছে।নূর জানে তার ভাই গরমে অস্থির হয়েই এমন করছে।একটুপর বাসায় গিয়ে ঠান্ডা হলেই ওকে গিফ্ট দিয়ে সরি বলে দিবে।তা যাক আপাততো ভাইকে আর রাগানো যাবে না। জায়ান গাড়ি স্টার্ট করলো।আরাবী সাথে সাথে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো।মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৬

আজকে ভাবছিলো চাকরির খোজে বের হবে।কিন্তু যেই গরম পরেছে সেটা দেখেই মনের চিন্তা ভাবনাটা বাদ দিয়ে দিলো।আজ আপাততো থাক।কাল থেকেই নাহয় চাকরি খুজতে বের হবে।টিউশনি যে করবে তার কোন জো নেই।এখানে ও কাউকেই চিনে না যে কাউকে বলবে ক’টা টিউশনির জোগার করে দিবে।আর ইফতিকে যে বলবে তারও কোন উপায় নেই।এই কথা শুনলে ইফতি,মিলি,মিহান সবাই রেগে যাবে ওর উপর।আগে একটা চাকরি হোক।তারপর নাহয় জানানো যাবে সবাইকে।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৮