বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৯

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

ভার্সিটি ছুটির পর চাকরি খোঁজার জন্যে বের হয়েছে আরাবী।এতে অবশ্য বেশ কাঠখোড় পোড়াতে হয়েছে ওকে।নূর নানান প্রশ্ন করতে করতে শেষ।অবশেষে অনেকভাবে অনেক কিছু মিথ্যে বলে নূরকে মানাতে পেরেছে আরাবী।এতোগুলো কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দিতে গেলো কিন্তু ওকে নেই নিবে না।আর নিবেই বা কিভাবে মাত্র এইচএসসি পাশ করা মেয়েকে কি কোম্পানিতে চাকরি এতো সহজে কেউ দেয়?তপ্ত শ্বাস ফেলে আরাবী।অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

এতো দেরি হয়ে যাবে ভাবেনি আরাবী।বাড়ির সবাই নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে ওর জন্যে।নাম্বারটা অব্দি আদান প্রদান করতে মনে নেই আরাবীর।ক্লান্ত লাগছে খুব।সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে।এখন অব্দি না খাওয়া।ক্ষুদায় পেট চো চো করছে আরাবীর।একেকটা পায়ের কদম যেন আর ফেলতে পারছে না।কোনরকম শরীরটা টেনেটুনে এগিয়ে নিচ্ছে আরাবী।আর দুটো গলি।গলি দুটো পার হলেই বাড়ির রাস্তায় এসে যাবে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

।কিন্তু গলিতে প্রবেশ করার সাথে সাথে ঘটলো আরেক বিপদ।কয়েকশন গুন্ডা টাইপ ছেলেদের দেখা যাচ্ছে। তাদের সবার হাতে সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান।ঢোক গিললো আরাবী।বুকটা ভয়ে ধরফর করছে প্রচন্ড।তাও আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে করতে সাহস জুগিয়ে আগাতে লাগলো।এদিকে ছেলেগুলো দূর হতেই লক্ষ্য করলো আরাবীকে।একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ী করে কি যেন ইশারা করলো।আরাবী যেইনা ছেলেগুলোর পাশ কাটিয়ে যাবে তার আগেই একটা ছেলে আরাবীর পথ রুখে দাড়ালো।ভয় পেয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলো আরাবী। হাত পা কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠলো।নাহ নিজেকে দূর্বল প্রমান করলে চলবে না।ভয়টাকে সরিয়ে সাহস জুগিয়ে আগাতে হবে ভাবলো আরাবী।তাই ভয় পেলেও সেটা বুঝতে দিলো না ছেলেগুলোকে।সাহসীকতা নিয়ে বলে,

-‘ এটা কেমন ধরনের অসভ্যতা?পথ রুখে দাড়িয়েছেন কেন?’
আরাবীর কথা শুনে যেন বেশ মজা পেলো ছেলেগুলো।আরাবীর সামনে থাকা ছেলেটা অশ্লীলভাবে আরাবীর সারা শরীরে নজর বুলালো।তারপর বাকা হেসে বলে,
-‘ এমন একটা সুন্দরী মেয়ে সামনে দিয়ে চলে যাবে আর আমরা কি তাহলে বসে বসে আঙ্গুল চুষবো? আমরা তো এসেছি সেই সুন্দরীকে ***** জন্যে।’

ছেলেটার মুখে নিজেকে নিয়ে এমন বিশ্রি কথা শুনে ঘৃনায় গা গুলিয়ে আসলো আরাবীর।চোখ ভরে উঠলো জলে।আরাবী চোখ মুছলো।এইভাবে কাঁদলে হবে না।হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই ব্যাগ হতে পারফিউমের বোতল বের করলো আরাবী।স্প্রে করে দিলো ছেলেটার মুখে।ছেলেটা চিৎকার করতেই বাকি ছেলেরাও আগাতে নিলে আরাবী সামনে থাকা ছেলেটার মেইন পয়েন্ট বরাবর লাথি মেরে দিলো।ছেলেটা যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে নিচে বসে পরতেই আরাবী প্রানপনে ছুটতে লাগলো দিগবেদিগ হারিয়ে।বাকি ছেলেরা ওই ছেলেটার কাছে সাহায্যের জন্যে আসতেই সেই ছেলেটা চিৎকার করে বললো,

-‘ আমাকে ছাড় ওই মা***রে ধরে নিয়ে আয় আমার কাছে।আজকে ওই সা*লির তেজ বাহির করমু আমি।যা!’
ছেলেগুলো কথা মতো ছুট লাগালো আরাবীর দিকে।মেয়ে হয়ে কি আরাবী ছেলেদের সাথে দৌড়ে পারে?পারে না।ঠিক হলো সেটাই একটা ছেলে আরাবীর ওড়না টেনে ধরলো।জর্জেটের ওড়না হওয়ায় আচমকা টানে ওড়নায় সাথে ঘষা খেয়ে আরাবীর গলার চামড়া ছিলে রক্ত বের হয়ে আসলো।আরাবী যন্ত্রনায় ঠোঁট এতো জোড়ে কামড়ে ধরলো যে আরাবীর ঠোঁটও খানিক কেটে গেলো।তাও আরাবী থামলো না ওড়না ফেলে দিয়েই প্রানপনে দৌড়াতে লাগলো।

হঠাৎ করে একটা গাড়ির সামনে মুখ ধুবরে পরলো আরাবী।একটুর জন্যে গাড়িটা ব্রেক করায় বেঁচে গিয়েছে আরাবী।এদিকে গাড়ির সামনে আচমকা কেউ পরায় দ্রুত গাড়িতে ব্রেক কষে জায়ান।তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা মেয়ে ওর গাড়ির সামনে পরে আছে।সামনে তাকালো জায়ান দেখলো কতোগুলো ছেলে এদিকেই আসছে।বুঝলো মেয়েটাকে এই ছেলেগুলো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই তাড়া করছিলো। জায়ান সেদিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে মেয়েটাকে টেনে সোজা করলো।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো জায়ান আরাবীর মুখশ্রী দেখে।

আরাবী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে রাস্তায় এভাবে পরায় মাথায় আঘাত পেয়েছে।গলা হতে রক্ত বের হচ্ছে।ঠোঁটের কোনেও রক্ত দেখা যাচ্ছে।নিজের গায়ের কোট খুলে আরাবীর গায়ে পেচিয়ে দিলো জায়ান।তারপর উঠে দাড়ালো।ছেলেগুলো সামনে আসতেই ওদের দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায় জায়ান।পাশে পরে থাকা একটা ইটের টুকরো নিয়ে ছুরে মারলো ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে সাথে সাথে সেখানকার একটা ছেলের মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে আসলো।

জায়ান আবারও ইটের টুকরো নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই ভয়ে পেয়ে যায় ওরা।আহত ছেলেটাকে কোনরকম ধরে নিয়ে সেই স্থান হতে পালিয়ে গেলো তৎক্ষনাত।জায়ান এইবার দ্রুত পায়ে আরাবীর কাছে আসলো।আরাবীকে পাজাকোলে করে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসালো। জায়ান খেয়াল করলো আরাবীর হাতের তালুরও চামড়া ছিলে গিয়েছে।হলুদ রঙের সেলোয়ারটা হাটুর দিক দিয়েও লালরঙ্গা হয়ে আছে।জায়ান পকেট হতে রুমাল বের করে আরাবীর গলার আঘাত স্থানে পেচিয়ে দিলো যাতে রক্তক্ষরণ খানিক হলেও কমে।তারপর দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো।

এদিকে চিন্তায় অস্থির মিহান, মিলি আর ইফতি।মিলি যখন ফোন দিয়ে জানায় যে আরাবী রাত আটটা বেজে গিয়েছে এখনো ফেরেনি।তৎক্ষনাত অফিস হতে ছুটে চলে এসেছিলো কাউকে কিছু না বলে।সকল চেনাজানা জায়গায় তন্ন তন্ন হয়ে আরাবীকে খুজেও ব্যর্থ হয়ে মাত্রই বাড়িতে এসে পৌছিয়েছে ইফতি। মিলি কান্না করতে করতে বলছে,
-‘ কোথায় গেলো মেয়েটা? এখানের কিছুই চেনেনা ও?আমার মেয়েটাকে তুই খুজে নিয়ে আয় ইফতি।আমি লিপিকে কি জবাব দিবো।আমার মেয়েটা কোথায় গেলো। কেমন দায়িত্বহীন মানুষ আমরা। মেয়েটার ফোন নাম্বারটাও এতোদিনে কেউ নিতে পারলাম না। আমার মেয়েটাকে এনে দে ইফতি।এনে দে।’

ইফতি কি বলে মানে শান্তনা দিবে ভেবে পেলো না।এদিকে মিলির এমন কান্না করা দেখে সাথি হালকা বিরক্ত কন্ঠে বলে,
-‘ আহা মিলি এতো কান্না করার কি আছে?মেয়েটা যথেষ্ট বুদ্ধিজ্ঞানসম্পন্ন ।হয়তো কোন বন্ধু বান্ধবের সাথে আছে।’
নূর মায়ের কথায় আপত্তি জানালো।কাঁদো কন্ঠে বলে,
-‘ কিন্তু মা আরাবীর আমি ছাড়া কোন ফ্রেন্ড নেই।ইনফেক্ট ও তো আমি বাদে কারো সাথে কথাই বলে না।’
নূরের কথা শুনে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় সাথি।মেয়েকে ধমকে বললেন,
-‘ তুই চুপ কর ফাজিল মেয়ে।মুখে মুখে কথা শিখেছিস তুই?তোর আর ওর ডিপার্টমেন্ট আলাদা আলাদা তাহলে তুই কিভাবে জানবি ওর ফ্রেন্ড কে? ‘

নিহাদ বেশ বিরক্ত হলো স্ত্রীর ব্যবহারে।তবে কিছু বললেন না। ছেলেমেয়েদের সামনে স্বামি স্ত্রী ঝগরা করা তিনি অনুচিত মনে করেন।তার ভাষ্যমতে স্ত্রীকে আদর ভালোবাসাও দিতে হয় চার দেয়ালের মাঝে আবার স্ত্রীকে শাষনও করতে হবে চার দেয়ালের মাঝে।তাদের স্বামি স্ত্রীর মাঝে কি হবে না হবে তা অন্য কেউ কেন জানবে?আর এই কথাটা তিনি আজও পর্যন্ত মেনে আসছেন।

ইফতি মায়ের এমন আহাজারি সহ্য করতে পারছে না।বুকের কোথাও একটা তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি হয়েছে মেয়েটার জন্যে।যা ক্ষনে ক্ষনে বেড়েই চলেছে।ইফতি গাড়ির চাবি নিয়ে কাল বিলম্ব না করে আবারও বাড়ি থেকে বের হতে নিবে।এমন সময় দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে জায়ান।তার কোলে আরাবীকে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়।মিলি দৌড়ে জায়ানের কাছে গিয়ে আরাবীকে দেখতেই আতকে উঠে এক চিৎকার করে উঠেন।এদিকে আরাবীর এমন করুন অবস্থা দেখে সবাই হতবাক।জায়ান বেশ বিরক্ত হলো।মেয়েটা অসুস্থ সেটা চোখে দেখতে পারছে না এরা।ওকে যেতে না দিয়ে কি ভীর করে রেখেছে।জায়ান দাঁতে দাঁত চিপে বললো,

-‘ আমাকে সাইড দিবে তোমরা?সি ইজ ইল।তোমরা কি তা দেখছো নাহ?’
ইফতি জায়ানের কথায় দ্রুত সবাইকে সরিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,
-‘ ভাই আসো তুমি আরাবীকে নিয়ে ওর রুমে আসো।’
জায়ান চোয়াল শক্ত রেখে আরাবীকে নিয়ে ওর রুমে চললো।যেতে যেতে বলে,
-‘ ইফতি কল দ্যা ডক্টর ইমিডিয়েটলি!’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৮

ইফতি জায়ানের কথামতো ডাক্তারকে ফোন দিলো।কথা শেষে শেষে ইফতিও চললো আরাবীর কাছে।এদিকে রুমে এনে আরাবীকে বিছানায় সুইয়ে দিলো জায়ান।গায়ে কাথা টেনে দিলো।এদিকে ইফতি এসে কিছু জিজ্ঞেস করবে জায়ানকে তার আগেই জায়ান রুম ত্যাগ করলো।অবশ্য যাওয়ার আগে গম্ভীর কন্ঠে বলে গেছে,
-‘ আই ডোন্ট নোউ এনিথিং।ওই মেয়ের জ্ঞান ফিরলেই তার থেকে সব জিজ্ঞেস করে নিস।’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১০