বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১৩

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১৩
ইলমা বেহরোজ

পরদিন সকাল ছয় টায় ঘুম ভাঙলো ধারার।আড়মোড়া ভেঙে জানালার পাশে এগিয়ে আসে। জানালায় ভারি পর্দা ছিল।পর্দা সরাতেই মুখ দিয়ে একটি কথাই বেরিয়ে এলো, ‘অসাধারণ’।মুগ্ধকর আবহাওয়া।পাহাড়ের প্রতিটি ধাপে ধাপে বাড়ি আর হোটেল।ধাপগুলো শেষ হওয়ার পর প্রায় ৭ হাজার ফুট গভীর খাদ।পুরু ঘনত্বের সাদা সাদা মেঘগুলো ভাসছে খাদের উপর যত্রতত্রভাবে যা হোটেলের উচ্চতা থেকেও অনেকটা নিচে। মনে হচ্ছে হোটেল থেকে নেমে ৩০-৪০ মিনিট নিচে নামলেই মেঘ ছোঁয়া যাবে।এমন ভিউ কিন্তু সব হোটেল থেকে দেখা যায় না বা হোটেলের সব রুম থেকেও দেখা যায় না।ধারা সৌভাগ্যবান ছিলো,তাই প্রকৃতি নিরাশ করেনি।মুগ্ধ হয়ে ঠোঁটে সন্তুষ্টজনক হাসি ফুটিয়ে তুলে ধারা।এরিমধ্যে দরজায় করাঘাত।দরজা খুলে বিভোরকে দেখতে পায়।সদ্য ঘুম থেকে উঠা ধারার মুখ তেলতেলে হয়ে আছে।নিষ্পাপের আভা চেহারায়।বিভোর বললো,

——-“তৈরি হয়ে নিন।নাস্তা করে বের হবো।”
ধারা হেসে ঘাড় কাত করলো।বিভোর চলে যায়।কিছুক্ষণের মাঝে বিভোর, ধারা,সায়ন,দিশারি ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে চলে আসে।নাশতা শুরু করে পরোটা-ডিম আর চা দিয়ে।সায়ন,দিশারি নিশ্চুপ।এরা কথা বলবেনা ধারা বুঝে গেছে।এভাবে নিরবতা পালনের তো মানে নেই।ঢোক গিলে ধারা কথা শুরু করলো।
——-“বিভোর সাহেব?”
বিভোর খাবার চিবোতে চিবোতে উত্তরে বললো,
——“সাহেব কেনো বলেন?”
ধারা সংকোচে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

——“মানে আর কি বলবো।শুধু বিভোর ডাকাটা কেমন জানি।”
দিশারি রূঢ়ভাবে বললো,
——“ভাই ডাকলেই তো হয়।তোর চেয়ে চার বছরের বড় আছে।”
ধারা বুঝেছে এই রূঢ়ভাবে কথা বলাটা সায়নকে উদ্দেশ্যে করে।বিভোর আগে-বাগে বললো,
——-“থাক ভাই ডাকতে হবেনা।সাহেবই ভালো।তা কি যেন বলতে চাইছিলেন ধারা?”
——-“ওহ হ্যাঁ আমরা এখন কোথায় যাবো?”
——-“বাতাসিয়া লুপ,ঘুম ষ্টেশন,ক্যাবল কার,সেন্ট জোসেফ স্কুল দর্শনের ইচ্ছে আজ।বাতাসিয়া লুপ দিয়েই শুরু করবো।”
——-“গ্রেট!”
——-“আর দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত ট্রয়-ট্রেনে না চড়লে দার্জিলিং ভ্রমণটাই বৃথা।দুই ঘন্টার রাইড করা যাবে।”
——-“এটা কোথায়?”
——-“বাতাসিয়া লুপে।টয়-ট্রেনে চড়লে আমাদের বাড়তি করে আর ঘুম স্টেশন বা বাতাসিয়ালুপ জায়গাগুলোতে না গেলেও চলবে।”
——-“কেনো?”

——-“কারণ যাত্রাপথে টয়-ট্রেন বাতাসিয়ালুপে দশ মিনিট যাত্রাবিরতি দেয়।আর ঘুম স্টেশনে দাঁড়ায় প্রায় আধঘন্টা।আমরা সেই সময়টাতেই বাতাসিয়া লুপ আর ঘুম ষ্টেশন ঘুরতে পারবো।”
——-“ও।গ্রেট।”
——-“ট্রয় ট্রেনকে ঘিরে প্রচুর ভারতীয় বাংলা মুভির শুটিং হয়েছিলো।রাজেশ খান্নার আরাধনাও শুটিং হয়েছে এখানে।শুধু তোমারি জন্য মুভিতে সোহম ট্রয় ট্রেনের রাস্তার পাশে বসেছিলো।”
ধারা মুগ্ধ হয়ে বললো,
——–“বাহ!বাংলা মুভি দেখেন?”
——-“না।মুভি ধরতে গেলে দেখি না আমি।যখন মুভিটার শুটিং হচ্ছিলো তখন এসেছিলাম তাই জানি।”
দিশারি রাগে কটমট করে বললো,
——“তোদের পকপকানি শেষ হইলে বাইর হ।”

সায়ন আড়চোখে দেখে দিশারিকে।চোখে চোখ পড়তে ভয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
ওরা চলে আসে বাতাসিয়া লুপে।ঢোকার আগে বিভোর খাওয়া শুরু করে গোর্খাদের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার মোমো।মোমো মানে পুলি পিঠার মতো করে বানানো ভেতরে মুরগি মাংস,সবজি,গরু মাংস ইত্যাদি থাকে।দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড এটি।বিভোরের দেখাদেখি ভরা পেট নিয়ে ধারা,দিশারি, সায়ন খাওয়া শুরু করলো।
বাতাসিয়া লুপে প্রবেশ করে চারজন।বাতাসিয়া লুপ থেকেও দেখা মেলে উদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা।বাতাসিয়া লুপ জায়গাটিতেই দার্জিলিং ট্রয় ট্রেন যেটা কিনা ঘুম আর দার্জিলিংয়ের মধ্যে এখন চলাচল করে।সেটি এখান থেকে ঘোরে।গোল লুপের মতোন লাইনটি ঘুরে আবার ঘুম স্টেশনের দিকে যায়। বাতাসিয়া লুপ হচ্ছে অনেকটা আমাদের দেশের শহিদ মিনারের মত।এটি বানানো হয়েছিল গোর্খা সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যারা ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন।বাতাসিয়া লুপ জায়গাটি দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঠিক ঘুম স্টেশনের নিচের দিকে।

বাতাসিয়া লুপ থেকে মাত্র ৫০ রুপিতে কিনতে পাওয়া যায় নেপালি বেশ।নেপালি ড্রেস পরার পর যে কাউকে চেনা দায়।ধারা নেপালি ড্রেস পরতে আগ্রহ দেখায়।দিশারিরও ইচ্ছে হয়।রাগ সাইটে রেখে সে ও নেপালি ড্রেস পরে।ধারা নীল রঙের ড্রেস পরেছে।খোলা চুল পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে।পায়ে লোফার তাই ব্যাপারটা হাস্যকর।কিন্তু অসম্ভব সুন্দরী উপজাতি মনে হচ্ছে ধারাকে।দিশারি লাল রঙের পরেছে।সায়ন আগের মতো সরাসরি তাকাতে সাহস পায়না।তাই আড়চোখে দেখছে।পাশাপাশি চারজন হাঁটতে থাকে।বিভিন্ন রকম মানুষ,ফুলের বাগান আগ্রহ নিয়ে সবাই দেখছে।বিভোর হাঁটার তালে ধারার পাশে এসে দাঁড়ায়।প্রশ্ন করে,
——-“মনোরম পরিবেশ তাইনা?”
ধারা হেসে ছোট করে বললো,
——-“হুম।”

পর্যাপ্ত হিমশীতল বাতাস শরীর ও মনকে উজ্জীবিত করে দিচ্ছে।পৃথিবীর যাবতীয় বাতাস যেন এই পবিত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদস্পর্শে এসে সংসার পেতেছে। শুধু বাতাস বাতাস আর অবিশ্রান্ত বাতাস। বিশাল সবুজ প্রান্তরটি শুধু নানান রঙ বেরঙের ফুল আর চিরহরিৎ বৃক্ষের আবাসভূমি।একদিকে রাজার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে চির তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা।সব মিলিয়ে ভেতরটা সুখে লাফাচ্ছে।তাঁর উপর চারজনের মনেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সুপ্ত এক অনুভূতি উঁকি দিচ্ছে।বাতাসিয়া লুপের উপর থেকে সমস্ত দার্জিলিঙ শহরটাকে দেখা যায়।একেবারে ৩৬০ডিগ্রি।অসাধারণ সেই দৃশ্য।

প্রতিজন ৬৩০ রূপিতে ট্রয় ট্রেনে উঠে।দুই ঘন্টা রাইডে বাতাসিয়া লুপ,ঘুম ষ্টেশন,দার্জিলিংয়ের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করে।প্রকৃতিতে ডুবে ছিলো তাঁরা।সায়ন অনেকবার দিশারির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।ফেরার আগে সেন্ট পল’স স্কুলটা দেখে আসতে ভুলেনি বিভোর।প্রায় দুইশ বছর পুরনো এই স্কুলটি অনেকেই দেখেছে সিনেমায়।শাহরুখ খানের সেই বিখ্যাত মুভি ম্যায় হু না কথা কার না জানা।এই স্কুলেই শুটিং হয়েছিলো মুভিটার।ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।কিন্তু না দেখে ফিরে আসার মানুষ বিভোর নয়।এটা হতে পারে না।দারোয়ানের সাথে ভাব করে ১৫০ রুপি ঘুষ দিয়ে ঢুকে যায় ধারাদের নিয়ে।দারোয়ান ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে কোথায় কি শুটিং হয়েছে।কি আছে।স্কুল প্রাঙ্গন থেকেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেতশুভ্র রূপ।ধারা স্কুলের এক কর্ণে বসে।বিভোর,দিশারি ঘুরছে স্কুলটা।সায়নের হাঁটতে ভালো লাগছেনা তাই সে ধারার পাশে এসে বসে।
সায়ন বললো,

——“হাই ধারা?”
——“হ্যালো ভাইয়া।”
——“একটা রিকুয়েস্ট করবো?”
——“রিকুয়েস্ট কি!আপনি এভাবেই বলুন।”
——“দিশারিকে বুঝিয়ে বলবে প্লীজ?আমাকে ক্ষমা করে দিতে?”
ধারা হালকা হাসলো।বললো,
——“জ্বি অবশ্যই।”
কয়েক সেকেন্ড নিরবতা।ধারা বললো,
——-“বিভোর সাহেব সম্পর্কে কতটুকু জানেন?”
সায়ন তাকায়।ধারা অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো।কারে কি প্রশ্ন করছে সে!সায়ন হেসে উত্তর দেয়,
——-“পুরোটাই চিনি।কি জানতে চাও ক্রাশ সম্পর্কে?”
ধারা থমকায়।আমতা আমতা করে বললো,
——“কা..ক্রাশ?”
সায়ন জবাবে হাসে।দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,

——-“শালীনতা আছে ওর মধ্যে।প্রেম করেনি কখনো।কিন্তু স্কুল লাইফ থেকেই বলতো বিয়ে করার কথা।কিশোর থেকেই ওর ইচ্ছে এরেঞ্জ ম্যারেজ।বউকে ভালবাসবে।বউয়ের সাথে প্রেম করবে।ও শান্ত না আবার অশান্তও না।স্কুল লাইফে আমাদের অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল।তাঁদের সাথে এখনও আমার সম্পর্ক আছে।কিন্তু বিভোর পাত্তা দেয়না।খেয়াল করে দেখো দিশারি ওর পাশে ঘেঁষতে পারেনা।মেয়েদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি ওর খুব অপছন্দের বিষয়।খাওয়ার সময় বিরক্ত পছন্দ করেনা।কিন্তু খুব রাগ আছে ওর।রেগে গেলে মার শুরু করে।পর্বত-পাহাড় খুব টানে ওরে।অফিসের কাজ করে মন দিয়ে।কোনো অলসতা নেই।ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস।”
ধারা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

——-“দেখে মনে হয়না মানুষটা যে এমন।হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।গার্লফ্রেন্ড মেয়ে ফ্রেন্ড অনেক থাকার কথা।”
——-“আগেই বললাম ও ঘেঁষতে দেয়না।অনেকে ওরে অহংকারী বলে।কিন্তু আমরা কাছের মানুষেরা জানি ও কেমন।আর আমি ওরে প্রশ্ন করেছিলাম,সুন্দর দিয়া বডি ফিট বানাইয়া কি করবি?প্রেমই যখন করবিনা?এর চেয়ে খা আর ভুরি বানা।উত্তরে কি বলছে জানো?”
——“কি?”
——“বউয়ের জন্য ফিগারের খেয়াল রাখতে হয় মামা।নইলে বউ গর্ব কইরা কেমনে কইবো তাঁর হাসবেন্ড হ্যান্ডসাম।আর বাচ্চাদের ও হ্যান্ডসাম পাপা হতে হবে নাকি?আর বড় ব্যাপার নিজেকে হ্যান্ডসাম হিসেবে আয়নার সামনে কে দেখতে না চায়!শুধু গার্লফ্রেন্ড পেতেই ফিট হতে হবে হ্যান্ডসাম হতে হবে কোথাও লিখা আছে?”
ধারা চমৎকার করে হেসে বললো,

——“চমৎকার মানুষ তো।”
——“হুম।”
ধারা বিমোহিত।এমন একটা ছেলে তাঁর স্বামী হলো।আর সে?
সায়ন খেয়াল করলো ধারা হাসছে। সায়ন বোকা বনে যায়।ধারা যদি বিভোরকে ভালোবেসে থাকে বা ক্রাশ খেয়ে থাকে তাহলে যখন শুনেছে বিভোর প্রেম করে না এবং করতেও চায় না সে বউকে ভালবাসবে শুধু,ধারার মুখ তো রক্তশূন্য হবার কথা ছিল।অথচ সে হাসছে!ব্যাপারটা কি সায়নের মস্তিষ্কে ঢুকছে না।

স্কুল দর্শন শেষে ওরা বেরিয়ে পড়ে। দিশা এবং ধারা জামা চেঞ্জ করে নেয়।বিভোর জানালো তাঁরা এখন ক্যাবল কারে উঠতে যাবে।দার্জিলিং শহরের চক বাজার থেকে জিপ নিয়ে ওরা যাত্রা শুরু করলো।৩ কিলোমিটার দূরের সিঙ্গামারিতেই ক্যাবল কার।
ক্যাবল কার হলো দার্জিলিং এর অন্যতম প্রধান টুরিস্ট প্লেস।যারা দার্জিলিং আসে তারা একবার হলেও ক্যাবল কারে উঠে। দার্জিলিং শহর এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী হিমালয় রেঞ্জের পাহাড়গুলো সহ যদি কেউ প্যানারোমিক দৃষ্টিতে দর্শন করতে চায় তাহলে ক্যাবল কারে করেই দেখতে হবে।প্রাথমিকভাবে ক্যাবল কারের উদ্দেশ্য ছিল দুর্গম চা-বাগানগুলোতে খাবার পৌঁছানো।
পরবর্তীতে ১৯৮৮ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয় এবং সময়ের পরিক্রমায় পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়।ধারা বিভোরকে প্রশ্ন করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।ধারা বললো,
——-“বিভোর সাহেব? ক্যাবল কার সম্পর্কে কিছু বলুন?”
বিভোর হেসে বললো,

——“ঘুরে গেছি।এসব নিয়ে ইতিহাস পড়িনি।তাই কম কম জানি।”
——-“যতটুকু জানেন বলেন।”
——-“শুরুতে যখন এইটা চালু হয় একটিই ক্যাবল কার ছিলো।আর আমার জানামতে ২০০৩ সালের এক দুর্ঘটনার কারণে জনপ্রিয় এই পর্যটন সেবাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।সে বছরের অক্টোবরে তারিখ ঠিক মনে নেই তিনটি ক্যাবল কার ক্যাবল ছিঁড়ে ১০০ ফুট নিচের চা-বাগানে খসে পড়ে। ৪ জন নিহত হওয়া ছাড়াও আরও অনেকেই আহত হন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে ক্যাবল কারের সঞ্চালন লাইনগুলো ঠিকমত মেরামত করা হয় নি বলেই এমন অঘটন।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রায় ৮ বছর দার্জিলিং রোপওয়ে বন্ধ থাকে।”
দিশারি আৎকে উঠলো,
——-“কি কস?আমি উঠবো না। তুই আমার আগে কস নাই কেন?তাইলে তো আমি আইতাম না।মরে যামু তো।”
সায়ন স্বভাবসুলভ বিদ্রুপ করে বললো,
——“ভীতু একটা।”
দিশারী জবাব দিতে গিয়েও দিল না।সে সায়নের সাথে কথা বলতে চায় না।অন্যদিন দিশারি উত্তর দেয়।তর্ক করে।আজ দিল না। ঝগড়া করল না।এটা দেখে সায়ন আহত হয়।চুপসে যায়।ধারা বললো,

——-“কি সাংঘাতিক!চালু হলো কবে?”
——-” ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও চালু হয়।তখন থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এটি পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে।আর দিশারি শোন ওই দুর্ঘটনার স্মরণে প্রতি মাসের ১৯ তারিখ প্রয়োজনীয় মেরামতের জন্য রোপওয়ে বন্ধ রাখা হয়।তাই ভয় নেই।”
১৬৫ রুপি জনে টিকিট কিনে ওরা।অনেক লম্বা লাইন ছিলো তাই ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ওদের।তবে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বোরিং না হয়ে বিভোর সবাইকে নিয়ে এখানকার মোমো আর পাপড়ি চাট খায়।মোমো ৮ পিছ ৬০ রুপি আর পাপড়ি চাট প্লেটপ্রতি ৪০ রুপি।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১২

৪ কিলোমিটার ক্যাবল কারে যেতে আসতে সময় লাগে ৪০ মিনিট।সিঙ্গলা চা বাগানের প্রায় ৫০০ ফুট উপর দিয়ে ক্যাবল কারটি অপরপ্রান্ত সিঙ্গলা বাজারে পৌঁছতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে।অর্থাৎ আসা-যাওয়াসহ প্রায় ৪০ মিনিট।
ক্যাবল কারে মোট আটজন উঠলো।বাকি চারজন দুই জোড়া কাপল।তাঁরাও হয়তো ধারা-বিভোর, দিশারি-সায়নকে কাপল ভাবছে।দিশারি ভয়ে চোখ খিঁচে রেখেছে।ক্যাবল কার ধীরে ধীরে এগুচ্ছে।মাঝে মাঝে চোখ খুলে বাইরে তাকায় সে।এতো উপরে নিজেকে দেখে দিশারির আত্মা কেঁপে উঠে।পাশেরজনের হাত খামচে ধরে রেখেছে।উত্তেজনা, ভয়ে খেয়ালই করেনি মানুষটা সায়ন।ধারা মুগ্ধ হয়ে ক্যাবল কার থেকে নিচের সবুজ চা বাগান আর দূরের সুবিস্তীর্ণ পাহাড়ের রাশি আর মেঘমালার মনোরম দৃশ্য দেখছে।এই সৌন্দর্য দিশারি ছাড়া যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।বিভোর ধারাকে আড়চোখে মাঝে মাঝে খেয়াল করছে।মেয়েটার প্রতি ভীষন টান অনুভব করছে সে।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১৪