বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৮

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৮
ইলমা বেহরোজ

কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে নিয়মমাফিক সব কাজকর্ম সেরে ঘন্টাখানিকের মাথায় চারজন বেরোয় এয়ারপোর্ট থেকে।বেরোতেই দেখা পেলো জেম্বার।জেম্বা একজন শেরপা।জেম্বা একটি টয়োটা গাড়ি নিয়ে এসেছে।জেম্বার পাশে আরো দুজন ছিল।
ধারা বিভোরকে প্রশ্ন করলো,
— “কারা ওরা?”
বিভোর বললো,

— “এই দুজন জুম্বা এবং রধবি আমাদের শেরপা।আর উনি হচ্ছে গরজ।আমাদের কুক।আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে।”
মালপত্র জেম্বা গাড়িতে তুলে নিল।তখন পাসাং নামে একজন আসেন।বিভোর এগিয়ে এসে হ্যান্ডসেক করলো।এই অভিযানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পাসাংয়ের উপর।পাসাংয়ের এজেন্সি ‘পাসাং এক্সপিডিশন’-এর সঙ্গে মোস্তফা ও বিভোরের চুক্তি হয়েছে।অভিযানের সমস্ত দায়িত্ব পাসাংকের।শেরপা,রাঁধুনি এবং অন্যান্য মালপত্র জোটানো, অনুমতি পত্র যোগাড় করা,খাবারদাবার, অক্সিজেন-তাঁবুর ব্যবস্থা করা,অভিযানের যা যা দরকার সবই তাঁর দায়িত্ব।ধারা আগ্রহ নিয়ে পাসাংকে দেখে।নেপালি পাসাংয়ের বয়স চল্লিশ হবে।দেখতে ফর্সা।পাসাংয়ের দার্জিলিং এবং কাঠমান্ডু দু’জাগাতেই অফিস রয়েছে।সে দার্জিলিঙয়ে বেশি থাকে।সেই সূত্রে পরিচয়।পাসাংয়ের মতো অনেক শেরপারই এজেন্সি রয়েছে।পাসাংয়ের সাথে কাগজে-কলমে চুক্তি হয়েছিল দার্জিলিং থেকে।তখন ধারার প্রশিক্ষণ চলছিল।পাসাংই শেরপা এবং কুক যোগাড় করেছে।
শুরু হয় হোটেলের দিকে যাত্রা।পথিমধ্যে অভিযান সংক্রান্ত আলোচনা হয়। ওরা নেপালের দিক দিয়ে যাবে।কাঠমান্ডু থেকে ফ্লাইটে লুকলা।সেখান থেকে আট-দশদিন ট্রেকিং করে,তবে এ পথের বেসক্যাম্পে পৌঁছানো যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাঁরা থামেল বাজারের সামসারা নামে বেশ বড় হোটেলে উঠে।দুটি রুম নেওয়া হয়েছে।একটা ধারা ও বিভোরের।অন্যটিতে প্রভাস ও মোস্তফা।পাসাং বললো, একটি দলের সাথে মিলে গেলে মাথাপিছু ডলার কিছুটা কমে আসবে।যেহেতু নেপাল পথ দিয়ে যেতে অনেক খরচ।বিভোর অনুমতি দেয়।পাসাং সকলের সঙ্গে কথা বলে দেখতে লাগলো।এবং একটি দলের সাথে কথাও হয়ে গেলো।হোটেলের কাছাকাছি প্রচুর দোকানপাট।ওরা চারজন বেরোয় হাঁটার জন্য।চারপাশটা দেখার জন্য।কাঠের কাজ করা পুরানো বাড়িগুলো নজর কাড়ছে সবার আগে।পাসাং ফিরলো সুখবর নিয়ে।একটি বড় দলের সাথে তাঁরা যাচ্ছে।
পারমিট হয়ে যায়।যে দলের সঙ্গে পারমিট হয়েছে তাঁর সরকারি নাম ‘ইকো এভারেস্ট এক্সপিডিশন’।ইকো এভারেস্ট এক্সপিডিশনের শেরপা সর্দার পৃথিবীবিখ্যাত আপা শেরপা।আপা শেরপা বিশবার এভারেস্ট চূড়া স্পর্শ করেছে।

এবার সফল হলে একুশবার!নয়টায় থামেল বাজারে তাঁরা ডিনার সারে।আরো দিনতিনেক কাঠমান্ডু থাকতে হবে।এখনো অনেক কাজ বাকি।পরের দু’দিন চললো খাবার-দাবার সাজসরঞ্জাম,কেনাকাটা আর প্যাকিং করার পালা।কেনাকাটা করেছে পারসোনাল ইকুইপমেন্ট।যেমন,মাউন্টেনিয়ারিং বুট,ক্র‍্যাম্পন,ফেদার জ্যাকেট, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি।বুট কিনতে লেগেছে সাইত্রিশ হাজার টাকা।আর স্লিপিং ব্যাগ যেটা কেনা হয়েছে সেটি -৪০° সেন্টিগ্রেড ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে।
২এপ্রিল সকালে পাসাং,জেম্বা,রধবি,গরজ এলো।চারজন এভারেস্ট অভিযাত্রীর সম্মুখে মেলে ধরলো এক লম্বা চওড়া লিস্ট।অভিযান চলার সময় কি কি খাবার বেছে নেওয়া যাবে তাঁর তালিকা।অসংখ্য জানা-অজানা খাবারের নাম লিস্টে।এই ধরণের অভিযানে সারা পৃথিবী থেকেই অভিযাত্রীরা আসে।তাই প্রায় সমস্ত পৃথিবীর খাদ্যতালিকা এতে আছে।ধারা ফিসফিসিয়ে বিভোরকে বললো,

— “কি কিউট কিউট নাম।আমার সবই নিতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
বিভোর হাসলো।নিজেদের পছন্দের কিছু খাবার বাছাই করে দেয়।পরিমাণ কুক ঠিক করে নিবে।
জীবন শ্রেষ্ঠ নামে এক ভদ্রলোক দেখা করতে আসেন এপ্রিলের তিন তারিখ।একটি ফর্ম ধরিয়ে দেন।পূরণ করে ফর্ম ফিরিয়ে দেওয়া হয়।তিনি নিউজিল্যান্ডবাসী মিসেস এলিজাবেথের অধীনে কাজ করেন। তাদের সংস্থা গত ৫০ বছর ধরে এক অদ্ভুত কাজ করে চলেছে। এভারেস্ট আরোহণ এর সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। অভিযান নেপালের দিক থেকে হোক বা চীনের দিক থেকে। তারা নথিভুক্ত করেন অভিযাত্রীদের পরিচয়,তাদের আরোহণের বিশদ/বিবরণ, সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান এমনকি মৃত্যুর হিসাব।
জেম্বা ও রধবি জানিয়েছে চার এপ্রিল বা আগামীকাল সকাল সকাল রওনা দেওয়া হবে লুকলার উদ্দেশ্যে।বিভোরে বিকেলে বাজারে গিয়ে নেপাল পথের একটি মানচিত্র কিনে নেয়।

এরপরদিন সকাল চারটা-ত্রিশে বিভোরের ঘুম ভাঙ্গলো।গায়ে শার্ট জড়িয়ে মোস্তফা ও প্রভাসকে ডেকে দেয়।এরপর নিজের রুমে ফিরে আসে।ধারা ঘুমাচ্ছে।ধারার ঘুম ভাঙ্গাতে বরাবরই বিভোরের খারাপ লাগে।ধারার পাশে এসে বসে বিভোর।কপালে হাত রাখে।কেনো এতো প্রিয় এই মেয়েটা?কেনো এতো কাছের?বিভোর জানেনা।বিভোর শার্ট খুলে কম্বলের ভেতর আবার ঢুকে পড়ে।ধারা উম পেয়ে গুটিসুটি মেরে বিভোরের বুকে মুখ লুকোয়।বিভোর নিজের শক্তপোক্ত দু’হাতে ধারাকে বুকের সাথে চেপে ধরে।অনবরত ধারার কপালে চুমু দিতে থাকে।এরপর কম্বল সরিয়ে নিজে উঠে পড়ে।ঘুমন্ত ধারাকে কোলে তুলে নেয়।ধারার ঘুম ভেঙে যায়।বিভোর ভারী চমৎকার করে বললো,

— “আবার কখন কবে গোসল করার সুযোগ পাবেন জানিনা।গোসলটা সেরে নেন।”
ধারা দু’হাতে বিভোরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
— “ভালো লাগছেনা। গোসল করতে অলস লাগছে।”
বিভোর কপাল কিঞ্চিৎ করে বললো,
— “এতো অলস কি করে হয় মানুষ।তোমাকে না দেখলে জানতামনা।”
ধারা হাসলো।বিভোর ধারাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।যথাসময়ে গোসল-খাওয়া শেষ হয়।এবং যথাসময়ে গাড়িও চলে আসে।এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে জেম্বা,গরজ,পাসাং।

প্লেন উড়ছে।বাঁদিকের জানালায় একের পর এক বরফশৃঙ্গ।ধারা উড়াধুড়া ছবি তুলে।এই প্র‍থম এমন শৃঙ্গ দেখছে সে।এইতো শুরু হলো।এরপর তো শুধু শৃঙ্গ আর শৃঙ্গ।চল্লিশ মিনিটে ওরা লুকলা বিমানবন্দরে পৌঁছে।তেনজিং হেলারি এয়ারপোর্ট।এয়ারপোর্ট না বলে একে এয়ারস্ট্রিপ বলা উচিত।এয়ারস্ট্রিপের ঠিক ওপরেই হিমালয়া লজের দু’তলায় দুটো রুম নেওয়া হয়।লুকলা জনপদটা ছোট।কিন্তু দাম বিরাট, বিরাট।দুটো সেদ্ধ ডিম দেড়শো টাকা।চা এক গ্লাস পঞ্চাশ টাকা।ফোনের চার্জ প্রতি মিনিটে একশো টাকা!সন্ধ্যা সাতটায় দোকানপাট,হোটেল বন্ধ হয়ে যায় তাই ওরা আগে আগে ডিনার সেরে নেয়।ধারার মাঝরাতে ক্ষুধা লাগে।তাই বিভোর খাবার প্যাকিং করে নেয় হালকা।
রুমে এসে বিভোর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিছানার উপর।ধারা বিভোরের পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে।বিভোর সোজা হয়ে শুয়ে ধারাকে বুকে নিয়ে বললো,

— “কাল থেকে ট্রেকিং শুরু।হাঁটতে হবে অনেক।”
ধারা বললো,
— “উত্তেজনা কাজ করছে খুব আমার।নার্ভাস ও।”
— “মনোবল ঠিক রেখো।”
— “হুম।”

সাড়ে সাতটায় নাস্তা খেয়ে শুরু হয় ট্রেকিং।দলে আরো দুটি মেয়ে রয়েছে।একজন মেয়ে দেখতে অসম্ভব সুন্দর।চোখ নীল,চুল লাল।ধারার ইচ্ছে হচ্ছে কথা বলতে।কিন্তু বিভোরের ভয়ে বলছেনা।বিভোর না করেছে আগ বাড়িয়ে অভিযানে কারোর সাথে কথা না বলতে। মন দিয়ে শুধু অভিযানটা উপভোগ করতে।পথে অনেক হোটেল,বাড়িঘর নিয়ে দেখা পেলো চিপলাঙা নামে এক গ্রামের।খানিকটা এগুনোর পর এক জায়গা থেকে পরিষ্কার নজরে এল কুসুমকাঙরু শৃঙ্গ।আরো একটু এগিয়ে পেল ঝুলন্ত ব্রিজ।এখানে সবই দড়ির ব্রিজ।ব্রিজের উপর দিয়ে সাবধানে নদী পার হলো সবাই।ধারার পা কাঁপছিল।বিভোর ধারার পিছনে ছিল।ধারাকে সুরক্ষিত রাখতে।এরপর এল থাডোকোশী গ্রাম।আরো খানিক পর নারিনিং নামে এক জায়গা।পথ ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে।ধারা মুগ্ধতায় বিস্মিত হয়ে যায়।সবার চোখেই মুগ্ধতা।ভারী সুন্দর পথ।প্রচুর ফুল,প্রচুর অচেনা পাখি এ পথে।কারো মুখে কথা নেই।দলটা নিশ্চুপ।সবাই চারপাশ উপভোগ করছে।আরো ঘন্টাখানিক পর পৌঁছানো হয় ফাংদিক।ফাংদিক গ্রামটা নদীর দু’পাড় জুড়ে বিস্তৃত।এখানে খানিকক্ষণ থামলো সবাই।প্রিন্স অফ এভারেস্ট হোটেলে দুপুরের খাবার হিসেবে জুটলো শাক-ভাত।লুকলা থেকে ফাংদিক আসতে তিন ঘন্টা লেগেছে।বারোটায় বেরিয়ে পড়ে আবার।লুকলা থেকে নারনিং এর রাস্তা ছিল নিচের দিকে।এবার আস্তে আস্তে উচ্চতা বাড়ছে।ধারা খেয়াল করছে অনেক্ষন যাবৎ।নীল চোখের মেয়েটা হাসেনা।কেমন ফ্যাকাসে মুখ।এভারেস্ট চড়ার কোনো ভাব-ভঙ্গি নেই মুখে।মনে হচ্ছে জীবিত লাশ হাঁটছে।কি কারণ এর?ওরা পার হয় আরো তিন চারটে গ্রাম।

রাস্তায় প্রচুর ট্রেকার।সবার কাঁধে ব্যাগপ্যাক।কি দারুণ দেখতে।ধারার ঠোঁটে হাসি লেগেই আছে।এখানকার ট্রেকিং সিজন এটাই।সারা পৃথিবী থেকে ট্রেকার আর মাউন্টেনিয়াররা এ সময় এ পথে ভিড় করে।আর তাদের আপ্যায়নের জন্য তৈরি এখানকার লোকজন।গোটা পথ জুড়ে রয়েছে অনেক হোটেল। থাকা খাওয়ার অঢেল ব্যবস্থা।বেশিরভাগ দোকানপাট চালায় মেয়েরা।এছাড়া আছে চাষাবাদ।পাহাড়ের ঢালে চলছে ধাপ-চাষ।চাষের কাজে ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে হাত লাগাচ্ছে মেয়েরা।এরপর ঢুকা হয় মনজো গ্রামে।মনজোগ্রাম থেকে শুরু হয় সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক।ঢুকতে হয় এন্ট্রি টিকেট কেটে।এরপর দড়ির ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে জোরসাল গ্রামে।আজ রাতটা এখানেই থাকা হবে।হিমালিয় লজের দোতলায় দুটো রুম নেওয়া হলো।দোতলায় আট টা রুম।এক সারিতে।রুমগুলোর সামনে লম্বা বেলকনি।রুমে ঢুকে বিভোর বাইরে তাকায়।ত্রিশ বয়সী একজন লোক আড়চোখে তাদের রুমের দিকে তাকিয়েই সামনে এগুচ্ছে।বিভোর প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ দেখছে লোকটি ধারাকে আড়চোখে দেখতে।চোখের দৃষ্টিতে লালসা।এমন একটা অভিযানে এমন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ!ধারা বিভোরের কাঁধে হাত রাখে।ধারা বললো,

— “একজন এভারেস্ট অভিযাত্রীর মাইন্ড এমন হতে পারে?”
বিভোর বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো,
— “কার কথা বলছো?”
— “তুমি যার কথা ভাবছো।”
— “তুমি খেয়াল করেছো!”
— “হুম।”
— “এই লোক এভারেস্ট অভিযাত্রী না।আশেপাশের গ্রামের আদিবাসী হবে।যাই হোক।খারাপ আচরণ করলে বুঝিয়ে দেব বিভোর কি জিনিস!”
ধারা বিভোরের কাছে এসে দাঁড়ায়।দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
— “কি জিনিস? ”
বিভোর কপাল ভাঁজ করে ধারার দিকে তাকায়।
ধারা ভ্রু উঁচিয়ে আবার নামায়।বিভোর আচমকা চুমুতে ডুবে।তখনি প্রভাস আসে।ধারা দ্রুত ছিটকে পড়ে দূরে।চোখ-মুখ খিঁচে নিজেকে নিজে শাসায়।প্রভাস দ্রুত সরি বলে বেরিয়ে যায়।বিভোর পিছন ডাকে প্রভাস শুনেনি।ধারা বিছানায় বসে বিভোরকে ধমক দেয়,

— “ছিঃ ছিঃ।উনাকে আমি দাদা ডাকি।উনার সামনে….তুমি দরজা কেন বন্ধ করনি।”
— “ওমনি আমার দোষ না?গলা জড়িয়ে ধরেছে কে?”
ধারা আড়চোখে একবার বিভোরকে দেখে।এরপর শুয়ে পড়ে।বিভোর ডাকে,
— “খাবানা?উঠো।”
— “ক্লান্ত লাগছে খুব।তুমি খাবার নিয়ে এসো প্লীজ।”
— “তোমাকে একা রেখে যাবো?”
ধারা বিভোরের দিকে তাকায়।বলে,
— “তো কি?আমি নিজেকে নিজে রক্ষা করতে জানি।”

বিভোর ছুরি ধারার পাশে রেখে বেরিয়ে যায়।নিচে নামার পূর্বে চারপাশ দেখে নেয়।যাক,ওই লোকটি নেই।বিভোর, প্রভাস,ফজলুল সহ পুরো দলটাই খাবার খেতে হোটেলে ঢুকে।আরো কয়টি দল রয়েছে।
ধারার চোখদুটি সবেমাত্র লেগেছে।তখনি দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়।সে দরজা লাগায়নি।বিভোর বাইরে থেকে লাগিয়েছিল।ধীরে ধীরে পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট হচ্ছে।এটা বিভোর নয় ধারা জানে!সে অনুভব করে বিভোরের উপস্থিতি।কে এলো?ওই লোকটি?পিঠে হাতের স্পর্শ।ধারার শরীর ঘিনঘিন করে উঠে।বালিশের নিচ থেকে ছুড়িটা হাতে নেয়।এরপর কৌশলে চোখের পলকে লোকটিকে বিছানায় ফেলে গলায় ছুরি ধরে।লোকটির ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠে।শুনেছে বাঙালি মেয়েরা ভীতু হয়।ছেলেদের ভয় পায়।চাপালিঙা গ্রামের লোক সে।তখন তার বন্ধু ধারাকে দেখিয়ে বলেছিল,

— “এই মেয়ে বাঙালিয়ান।দেখে মনে হচ্ছে।”
এরপরই সে পিছু ধরে।এমনটা হবে ভাবেনি।নড়তে চাইলে ধারা চোখ পাকিয়ে কড়া কন্ঠে ইংলিশে বললো,
— “নড়বি তো মরবি।কোনো চালাকি করবিনা।হাতে যে ছুরিটা আছে অনেক ধার।একবার হাত চালালে শেষ হয়ে যাবি।”
কাংকার নড়াচড়া থামিয়ে দেয়।ধারা প্রশ্ন করলো,
— “নাম কি?”
— “কাংকার।”
ধারা খাঁটি বাংলায় বলে,
— “কাংকার!ং আর র বাদ দিলে কা কা।আর কা কা ডাকে কাওয়া।তাইলে তুই কাওয়া।দেখতেও কালা আসিছ।সো কাওয়া মানায়।তোরে আমি কাওয়া ডাকবো।সুন্দর না নামটা?”

কাংকার হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে।ধারার কথার আগামাথা বুঝেনি সে।বরাবরই ফর্সা নারীর উপর তাঁর দূর্বলতা।তবে একটু বোকা।তাই কখনো ধর্ষণ করা হয়ে উঠেনি এত চেষ্টা করেও।রীতিমতো রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে ভয়ে।যদি ধারা লোক ডাকে?তাঁর আগে কিছু একটা করতে হবে।কিন্তু কিছু করার পূর্বেই বিভোর এসে ঢুকে।বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সে খাবার না খেয়ে দুজনের খাবার একসাথে নিয়ে দ্রুত ফিরেছে।কাংকারকে দেখে যা বোঝার বুঝে ফেলে।ধারাকে সরিয়ে কাংকারের কলার ধরে দাঁড় করায়।অনবরত নাকে-মুখে ঘুষি দিতে থাকে।কাংকার ভয়ে চিৎকার করছেনা।চিৎকার করলে আরো লোকজন আসবে।তখন সবাই মারবে।আর্তনাদ করে শুধু বলছে,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৭

— “প্লীজ ফরগিভ মি!প্লীজ।”
ধারার মনে হলো কাংকার শুধু বোকা নয়।মেন্টালি প্রবলেম রয়েছে।বিভোরকে আটকায়।বলে,
— “ছেড়ে দাও।আমার কোনো ক্ষতি করেনি।করতে পারেনি।”
বিভোর একটা রুমাল কাংকারের হাতে দিয়ে ইংলিশে বললো,
— “রক্ত মুছে বেরিয়ে যা।রুমে কি হয়েছে বাইরের কেউ যেন না জানে।”
কাংকার বাধ্যের মতো রক্ত মুছে।রুমালটা ফিরিয়ে দিতে চাইলে বিভোর বলে,
— “নিয়ে যা।”
কাংকার দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।এই নিয়ে সাতাশ বার সে মার খেয়েছে!

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৯