বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৭

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৭
ইলমা বেহরোজ

শহর জুড়ে সকালের মিস্টি রোদের ছড়াছড়ি।সেই সাথে হালকা মৃদু হাওয়া।দিনটার আবহাওয়া ভারী সুন্দর।ঠিক যতটা সুন্দর আজকের দিনটা ঠিক ততটাই খারাপ কপাল সায়নের!দিশারি লাগেজ নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।সে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে।সায়ন কিছুতেই আটকাতে পারছেনা।দিশারি কিছুতেই সায়নের কথা শুনছেনা।দিশারির সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে সায়ন।চাপা স্বরে বার বার বলছে,

— “দিশু প্লীজ যাইস না।প্লী….
দিশারি চোখ গরম করে কটমট করে বললো,
— “তুই ‘তুই’ করে কেন বললি?আমি তোর সাথে আর সংসার করতাছিনা।এটা ফাইনাল।”
সায়ন এদিক-ওদিক তাকায়।পথচারী দু’তিনজন ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সায়ন গলার স্বরটা আরো নিচু করে বললো,
— “তুমিও তো মাত্র তুই করে বললা।”
দিশারি দাঁড়িয়ে পড়ে।সায়ন ও দাঁড়ায়।দিশারি আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলে,
— “আমি ১০০ বার বলমু।তুই কেন বলবি?আমি তোর বউ না?”
— “আমিও তো তোর…সরি তোমার জামাই।আমাকে…”
দিশারি পুরো কথা না শুনে আবারো হাঁটতে থাকে।সায়নও হাঁটা শুরু করে।বলে,
— “বিশ্বাস করো তিন্নির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।ওর লগে এক বছর আগেই ব্রেকাপ হইছে।”
দিশারি রিক্সা ডাকে।সায়ন দিশারির এক হাত ধরে বলে,
— “যাইয়োনা পাখি।প্লীজ।তিন্নি আমারে কল করে জ্বালায়।আমি ওরে কখনো কল করি নাই।বিশ্বাস করো।”
দিশারি রিক্সায় উঠতে উঠতে বললো,
— “আমি তোর কল লিস্ট দেখছি।গতকাল এক ঘন্টা কথা বলছস ওর সাথে।”
— “ওইটা তো…..”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সায়নের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই দিশারি রিক্সা ড্রাউভারকে তাড়া দেয়।রিক্সা চলতে শুরু করে।সায়ন হতভম্ব হয়ে মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে থাকে।ঘুরে দাঁড়ায়।তখন দিশারি মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়।ঠোঁটে ভেসে উঠে দুষ্টু হাসি।দু’দিন আগে সায়ন বলছিল,
— “আরেএ আমাদের আজ আট দিন ঝগড়া হয়না।জোস তো।সুখের সংসার একেই বলে।”
দিশারির তখন মনে পড়ে।সত্যিতো!প্রতিদিন ২-৩ বার ঝগড়া, ২-৩ দিন পর সিরিয়াস ঝগড়া চলছেই বিয়ের পর থেকে।আর এখন আট দিন পার হয়ে গেল!ঝগড়া একটা বাঁধাতেই হবে!ওমনি দিশারি ঝগড়া করার রাস্তা খুঁজতে থাকে।সায়নের এক্স তিন্নি ইদানীং সায়নকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে জ্বালায়।সায়ন এতে বিরক্ত হয়।দিশারি বুঝে।গতকাল সকালে বারান্দায় বসে সায়ন ফোনে তিন্নিকে বুঝিয়েছে ওকে আর ডিস্টার্ব না করতে।দিশারি শুনেছে।তবুও এমন ভান করেছে যে শুনেনি।এরপরই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বলা শুরু করেছে সে।তর্কে তর্কে একসময় দিশারি লাগেজ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।সে জানে বিকেলেই সায়ন তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াবে!
বিকেলে কলিং বেল বাজতেই দিশারি দৌড়ে আসে।নিশ্চয় সায়ন আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাঁকে নিতে এসেছে।দরজা খুলে দেখে সামিত দাঁড়িয়ে।পিছনে সাফায়েত রয়েছে।দিশারি হেসে বলে,

— “আরে ভাইয়ারা!
সাফায়েত মুখ গম্ভীর রেখে বললো,
— “তোর সাথে কথা আছে।ভেতরে চল।”
দিশারির মুখটা চুপসে যায়।কিসের কথা!সাফায়েত,সামিত সোফায় বসে।দুজনের সামনে দিশারি।দিশারির মা ঘুমাচ্ছে।বাবা বেরিয়েছেন হাঁটতে।সামিত বললো,
— “যা প্রশ্ন করবো সত্যি বলবি।”
দিশারি ঠাওর করতে পারছেনা কি হলো।সামিত বললো,
— “ধারার সাথে ওর হাসবেন্ডের দেখা দার্জিলিং হইছিল এটা সত্যি?”
দিশারি ভড়কে গেলো। এরা জানে কীভাবে!সাফায়েত তাড়া দেয়,
— “জলদি বল।মিথ্যা কথা সাজাতে হবেনা।মিথ্যা বলবিনা ভাইদের সাথে।”
দিশারি মাথা নাড়ায়।যার অর্থ ‘হ্যাঁ’।সামিত বললো,
— “ওরা একই ফ্ল্যাটে ছিল? ”
দিশারির ঘাম শুরু হয়।কি পরিস্থিতি তে পড়লো।না পারছে সত্যি বলতে আর না পারছে মিথ্যে বলতে। মনে হচ্ছে এরা সবই জানে।সামিত বললো,

— “চুপ মারছস কেন?বল?”
দিশারি নিচু স্বরে বললো,
— “ছিল।”
সামিতের চোখ লাল হয়ে উঠে।সাফায়েতকে বলে,
— “দেখছিস হারামজাদা কেমন মেয়েখোর।আমাদের সহজ সরল বোনকে পটিয়ে ফ্ল্যাটে তুলছে।ব্যবহার করছে।”
দিশারি সাথে সাথে বলে,
— “বিভোর ওরকম না।ও একটা স্পেশাল পারসন।ওর মতো ছেলে নেই আরেকটা।কখনো কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টি নিয়া তাকায়নি।ওর অনেক সুযোগ ছিল মেয়ে পটানোর।লুটে নেওয়ার…করে নাই।”
সাফায়েত সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়।বলে,
— “তুই কেমনে জানিস?”
— “কারণ আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি জানি ও কেমন।ওর মতো পোলা এক পিসই।”
সাফায়েত তীর্যক ভাবে হেসে বললো,
— “তাইলে তুইও আসামি। এসবে পুরোপুরি ভাবেই ছিলি?”
দিশারি কিছু বললোনা।সামিত বললো,

— “তোর ফ্রেন্ড যদি এতোই সাধু হয় আমাদের কাছে কেন যায়নি?কেন শুধু ধারারে বাগে এনে এক সাথে থাকছে।”
দিশারি অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
— “ওরা স্বামী স্ত্রী। থাকাটা ভুল কিছু নয়।আর তোমাদের বলবে এভারেস্ট থেকে এসে।”
দু’ভাই একসাথে চমকে যায়।সামিত বলে ,
— “কি?এভারেস্ট মানে?বিভোর নেপাল?এভারেস্ট? ”
— “হা।বিভোর পর্বতারোহী। বিভোরের থেকে উৎসাহিত হয়েছে ধারা।দুজন একসাথে আছে।”
রাগে সামিতের পুলিশি রক্ত টগবগ করে উঠে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বিভোরকে জেলের ভাত খাওয়াবেই।এরপরই কিছু না বলে উঠে বেরিয়ে যায়।সামিতের দেখাদেখি সাফায়েতও।দিশারি পিছুন ডাকে শুনলোনা।মিনিট পাঁচেক পর সায়ন আসে।দরজা খোলা পেয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে।দিশারি অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিল।সায়ন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।এক নিঃশ্বাসে বলে,
— “বাসায় চলো।বিশ্বাস করো আমার কোনো সম্পর্ক নাই তিন্নির সাথে।প্লীজ বিশ্বাস করো।আমি ভালো হয়ে গেছি।”

তুষারপাত শুরু হয়েছে।বাতাসের বেগ বেড়েছে দ্বিগুণ। বাতাসের দাপটে টিকা যাচ্ছেনা।দ্রুত নামতে গেলে ক্রিভাসে পড়ে মরতে হবে।আর ধীরে চললে বরফের নিচে ঠাসা পড়ে মরতে হবে।সবার ভেতর কাঁপছে।দড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করছে।বিভোর হাঁটার সময় ধারার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।দড়ি বেয়ে নামার সময় নজর রাখছে ধারার যেনো কিছু না হয়।দড়ি বেয়ে অনেকটা নেমে এসেছে সবাই।তখন জেম্বা চেঁচিয়ে উঠে,
— “সবাই উপরে তাকাও।নিজেদের সামলাও।”
উপর থেকে একটা বড় সড় বরফের স্তূপ নিচের দিকে এগিয়ে আসছে।সবার চোখ আতংকে,ভয়ে বড় হয়ে যায়।দ্রুত সবাই দড়ি ছেড়ে হিমালয়কে খামচে ধরে রাখার চেষ্টা করে।ক্র‍্যাম্পন দিয়ে বরফে আটকে থাকার জন্য যুদ্ধ শুরু করে।দুজন পারেনি বাঁচতে।বরফের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে।হিমালয়ের গা পিচ্ছিল হয়ে আছে।প্রভাস কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা।বিভোর এক হাতে ধারাকে ধরে রেখেছে।ভাগ্যিস পায়ের ক্র‍্যাম্পনের কাঁটা একটু হলেও বরফের ভেতর ঢুকেছে।বিভোর ধারাকে বললো,

— “আমার জ্যাকেট দু’হাতে শক্ত করে ধরে রাখো।”
ধারা তাই করে।একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়।তাদের চেয়ে অনেক বেশি দূরে একটি বড় ক্রিভাস। বিভোর এই মুহূর্তে তাকে ছেড়ে দিলে এতোটা পথ চোখের পলকে শেষ হয়ে যাবে।গড়াগড়ি করে গিয়ে সে পড়বে ক্রিভাসে।তারপরই মৃত্যু!
জেম্বা,গরজ দড়িটা আবার নিয়ে আসে।এক এক করে সবাই দড়িটা হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।পারলোনা প্রভাস।আচমকা গড়িয়ে যায় নিচে।বিভোর,জেম্বা সহ অনেকে চেঁচিয়ে উঠে।বিভোর শুধু প্রভাসের একটা কথা শুনে,নিচের দিকে গড়িয়ে যাওয়ার সময় চেঁচিয়ে বলে,
— “জেম্বা আমাকে বাঁচাও….
বুকটা হাহাকার করে উঠে বিভোরের।কত ভালো ছিলো প্রভাস।বিভোরকে ছোট ভাইয়ের মতো এ’কয়টা দিন দেখেছে।মিশেছে।জেম্বা তাড়া দেয়,

— ” শোক প্রকাশের সময় নয় এটা।দ্রুত চলো।আবহাওয়া ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
আবার চলা শুরু হয়।দুই ঘন্টার মধ্যে হাওয়ার গতিবেগ ২৫০ কিমি চলে আসে।চারপাশে আওয়াজ হচ্ছে বরফ ধসে পড়ার।পাশ দিয়ে বরফ ধসে পড়েছে দু’বার।চারদিকে ধোঁয়ার মতো উড়ছে।ঘোলা হয়ে আসছে সব।চার-পাঁচ জন তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে একজন হারিয়ে গিয়েছে হিমালয়ে।সবার এখন একটাই চেষ্টা।বাঁচা!বাঁচতে হবে।ডেমরার বিভোরকে বললো,
— “এদিকটা খুব রিস্কি মনে হচ্ছে।আমাদের পথ চেঞ্জ করা উচিৎ।”
জেম্বাও তাই বললো।অন্য শেরপারা রাজি হলোনা।ডেমরার,বিভোর,ধারা,ফজলুল,জেম্বা অন্য পথ ধরে।হাঁটার পথ।উঁচু নিচু বরফ পার হয়ে হাঁটতে থাকে।আশে-পাশে অসংখ্য ক্রিভাস।হাওয়া যেনো উড়িয়ে নিবে।বিভোর শক্ত করে ধারার হাত ধরে রেখেছে।ধারা হাওয়ার সাথে টাল সামলাতে পারছেনা।সামনের রাস্তায় ছোট ছোট ৩ টা ক্রিভাস যেগুলো লাফিয়ে পার হওয়া যাবে।সবার আগে ফজলুল এরপর জেম্বা এরপর ডেমরার পার হয়।ধারা পার হওয়ার পরই ঠিক মাঝে বরফ ভেঙে পড়ে। বিভোর আলাদা হয়ে যায়।ধারা চিৎকার করে উঠে,

— “বিভোর!”
চারিদিকে হাওয়ার আওয়াজ।বরফের স্তূপ নিচে চলে যায়।ফাটল বেড়ে যায়।মই ছাড়া পার হওয়া পসিবল না।ধারার হৃদপিণ্ড ভয়ে ধুকধুক করছে।বিভোরের ঠিক কিছুটাই পিছনেই আরেকটি বরফ ধসে পড়ে।ধারা বার বার জেম্বাকে বলছে,
— “জেম্বা কিছু করো।”
এরপর চেঁচিয়ে উঠলো,
— “বিভোর সরে যাও।”
ধারার কথায় বিভোর দ্রুত অন্যদিকে সরে যায়।যেদিক যায় সেদিকে আরেকটি ক্রিভাস।বরফের উঁচু স্থান ভেঙে একটা পর একটা পড়ছে।বিভোর ধসে পড়া বরফকে পিছনে ফেলে দ্রুত লাফিয়ে আরেকটু সামনে যায়।সেখানেও ক্রিভাস।তাই আবার লাফ দেয়।এভাবে ধারাদের চেয়ে অনেকটা দূরে চলে যায়।যেনো,বিভোরকে পিষে খাওয়ার জন্য বরফ রাক্ষস একটার পর একটা বড় বড় বরফ ছুঁড়ছে।বিভোরের সামনে অনেকগুলো ক্রিভাস বা ফাটল।বরফ ধসে পড়তে পড়তে বিরাট আকৃতির ক্রিভাস ধারণ করে।এদিকে ফজলুল তাড়া দিচ্ছে সামনে এগুতে।ধারা কিছুতেই বিভোরকে রেখে যাবেনা।ধারাকে রেখে ডেমরার এবং জেম্বা যেতে নারাজ।জেম্বা বার বার বলছে,

— “এমনটা হওয়ার কথা নয় এই মাসে।এরকম ঝড় উঠে আগষ্ট সেপ্টেম্বরে।”
ধারা বিভোরের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
— “বিভোর…বিভোর আমার কাছে আসো।জেম্বা…জেম্বা প্লীজ কিছু করো।”
বিভোর পড়েছে ক্রিভাসের মধ্যিস্থলে।কোনো দিকেই যাওয়া যাচ্ছেনা।হাওয়ার সাথেও আর যুদ্ধ করা যাচ্ছেনা।পা দু’টি অবশ হয়ে আসছে।চোখ দু’টি কেমন করছে।ধারা ক্রিভাসের পাশে চিকন পথের মতো একটু জায়গা দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে বিভোরের দিকে।হাওয়ার দাপটে সে দুলছে।কখন না পড়ে যায় ক্রিভাসে!বিভোর নিজের চেয়েও ধারাকে নিয়ে চিন্তিত।সে বার বার বলছে,

— “ধারা পাগলামি করোনা।নিজের সেইফটি দেখ।প্লীজ ধারা।আমার যাই হোক।প্লীজ ধারা নিচে নেমে যাও।”
ধারা কিছুতেই শুনছেনা।পিছনে জেম্বা আর ডেমরার আসে।ফজলুল দূরে দাঁড়িয়ে।তার বিরক্তি লাগছে।কখন না নিজেরই মরতে হয়।বিভোর আর কয়েক ফুট দূরে।আর এগোনোর পথ নেই।বিভোরের চারপাশ ঘিরে ক্রিভাস।যেখানে দাঁড়িয়ে আছে বিভোর সেটিও ধীরে ধীরে ধসে পড়ছে।ধারা বসে পড়ে উত্তেজনায়।বিভোর ও বসে।ধারার দিকে তাকায়।নিষ্পলক সেই দৃষ্টি। চারিদিকে জোরসে হাওয়া।ধোঁয়া।বরফ ধসে পড়ছে।নিচে তাকালে নীল ও কালো রংয়ের বরফের ক্রিভাস।যার শেষ কোথায় কেউ জানেনা।পড়ে গেলে জীবনের সব কয়টা রং এক নিমিষে শেষ।বিভোর জানে এখান থেকে বাঁচার উপায় নেই।সেই পরিবেশ নেই।নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত করে ধারাকে বলে,
— “ধারা এইবার ফিরে যাও।এরপর এভারেস্ট জয় করতে আসবে।আমার স্বপ্ন যত্ন করে পূরণ করবে।আর…আর নিজের প্রতি খেয়াল রাখবে।”

বিভোরের গলা কাঁপছে।ধারার বুকটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে।ধারা বলে,
— “একসাথে মরবো নয় একসাথে বাঁচবো।”
এরিমধ্যে ডেমরার হাওয়ার দাপটে পা ফসকে পড়ে যায়।দ্রুত বরফ খামচে ধরে।জেম্বার সাহায্যে উঠে পড়ে।জেম্বা ধারাকে তাড়া দেয়।বিভোরও আদুরে গলায় বলে,
— “যাও আমার প্রিন্সেস।”
ধারা দৃষ্টি শান্ত।হিমালয় তান্ডব বেড়েই চলেছে।বিভোর জেম্বাকে রিকুয়েষ্ট করে ধারাকে নিয়ে যেতে।জেম্বা ধারাকে তুলে দাঁড় করায়।ধারাও বাধ্যের মতো উঠে দাঁড়ায়।দৃষ্টি বিভোরের দিকে বন্দি।কি মোহনীয় ভাবে তাকিয়ে আছে মানুষটা।হাটুগেড়ে বসে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছে!এই মানুষটাকে ছাড়া কেমনে বাঁচবে সে।ধারাও ঘুরে দাঁড়ায়।চলে যাচ্ছে ধারা….বিভোর চোখ বন্ধ করে মা, বাবা, ভাই, ফ্রেন্ড সবাইকে দেখে নেয় একবার।এরপর কালিমা পড়ে চোখ খুলে।দেখে ধারা তার সামনের ক্রিভাসের দিকে উন্মাদের মতো হয়ে দৌড়ে আসছে।পিছনে জেম্বা ও ডেমরার।বিভোর উঠে দাঁড়ায়।চিৎকার করে বলে,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৬

— “ধারা….প্লীজ এমন করোনা।আত্মহত্যা করোনা।ওপারে পাবেনা আমায়।প্লীজ ধারা….ধারা আর এগোবেনা…..ধারা শুনো প্লীজ….ধারা….
শুনলোনা ধারা।বিভোর ‘আল্লাহ’ বলে আর্তনাদ করে চোখ বুজে বসে পড়ে।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৮