বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৯

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৯
ইলমা বেহরোজ

ডেমরার তিব্বত পথ দিয়ে একা যাচ্ছে।বিভোরের জানা নেই, সাউথ কল দিয়ে এসে ফেরত নর্থ কল দিয়ে যাওয়া যায় নাকি।যেহেতু ডেমরার আরো এসেছে এভারেস্ট, পসিবল হতেই পারে।যাওয়ার পূর্বে নাম্বার আধান-প্রধান হয়েছে।ডেমরারের অনেক ইচ্ছে বাংলাদেশ দেখার।সে বলছে,খুব দ্রুত আসবে!হিলারি স্টেপ পার হওয়ার সময় ধারা প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো।বিভোর সামলায়।উঠার সময় উত্তেজনা কাজ করেছে প্রবল তাই কষ্ট হয়নি উঠতে।নামতে গিয়ে বিভোর-ধারার দুজনেরই যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিলো।ধারার চোখের ব্যাথাটা বেড়েই চলেছে।চোখে কম দেখছে।ভ্রু কুঁচকে ফেলে।একি সমস্যা!বিভোর থমকে দাঁড়ায়।ধারাকে প্রশ্ন করে,

— “কি হয়েছে ধারা?”
ধারা হাঁসফাঁস করতে করতে বললো,
— “চোখ খুব ব্যাথা করছে।আর কম দেখছি।”
বিভোর আৎকে উঠে বললো,
— “কি?কখন থেকে?”
— “অনেক্ষণ। কয়েক ঘন্টা প্রায়।”
— “আর এখন বলছো?কেয়ারলেস কোথাকার!”
ধারা চুপসে যায়।বিভোর জেম্বাকে বলে।জেম্বা সানগ্লাস চেঞ্জ করে দেয়।যেনো চোখে ঠান্ডা হাওয়া না ঢুকে সতর্ক থাকতে বলে।ফিরে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।এর আগে সম্ভব না।বিভোর চিন্তায় কপাল কুঁচকে ফেলে।ব্যাথায় ধারার চোখ দিয়ে জল পড়ছে।তবুও থামা যাচ্ছেনা।হাঁটতে হচ্ছে।অক্সিজেন প্রায় শেষের দিকে।দড়ি ধরে নামার পথে জেম্বা আবিষ্কার করে রাস্তা পালটে গিয়েছে,গতকালের দূর্যোগে!তার উপর এখন রাত।অক্সিজেন ও সীমিত।কোথায় তাঁবু পেতে থাকাও পসিবল নয়।টর্চ বের করে জীবন ঝুঁকি নিয়ে তিনটি মানুষ পথ খুঁজে সামনে এগোয়।জেম্বা বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “দড়ি হাতের নাগালে রেখ।একজন পর্বতারোহীর দড়ি হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার।সে দড়ি দ্বারা নিজেকে যেকোনো শৃঙ্গ থেকে রক্ষা করতে পারে।তবে,কৌশল জানা থাকলে।”
ভোর রাত হওয়ার আরো ঘন্টা পাঁচেক বাকি।বিভোরের অক্সিজেন শেষ!দুইটা সিলিন্ডার আছে।কোনোটা থেকে অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছেনা।জেম্বার চোখে ভাসে সিলিন্ডারের গায়ে ফুটো!কে করলো এমনটা?ভয়ে, আতংকে নীল হয়ে পড়ে তিনজনই।
ধারার চোখের ব্যাথা নিমিষেই চাপা পড়ে বিভোরের চিন্তায়।ধারারও মাত্র দু’টো সিলিন্ডার বাকি।একটা কিছুক্ষণ আগ থেকে সে ব্যবহার করছে।ক্যাম্প-২ অব্দি সে পৌঁছাতে পারবেনা।যেহেতু গতকাল দূর্যোগ গেল।বেসক্যাম্পে তাঁরা মিসিং।অবশ্যই কেউ উপরে উঠে আসবে খোঁজ করতে।তার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করা যাবে।সে আশায়ই সামনে এগোনো।সেখান থেকে একটা নিয়ে গেলে তো দুজনেরই পথে মৃত্যু!আর জেম্বা তো একজন শেরপা।শেরপাদের ফুসফুস স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বড়।এরা এভারেস্টে অক্সিজেন ব্যবহার না করেই চলতে পারে।জেম্বা বার বার বলছে,

— “বেভোর ধারার একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করো।”
— “ধারা কীভাবে পৌঁছাবে তাহলে?”
ধারা বিরক্তি নিয়ে বলে,
— “কি বলছো এসব।তাই বলে তোমাকে এভাবে চোখের সামনে অক্সিজেনের অভাবে…..প্লীজ একটা নাও।”
— “ধারা….বুঝার চেষ্টা করো।পথ অনেক বাকি।সাউথ কলই এখনো পৌঁছায়নি।এরপর ক্যাম্প-৩।তারপর ক্যাম্প-২।কম করে হলেও ১২-১৫ ঘন্টা লাগবে।এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে হাঁটাও পসিবল নয়।”
— “দেখ,কোনো কথা শুনছিনা।তুমি একটা ইউজ করো।”
বিভোর গোঁ ধরে তাড়া দিয়ে বললো,
— “দ্রুত হাঁটো।যতক্ষণ পারি হাঁটবো।এখানে মরণ থাকলে মরে যাবো।সমস্যা কি।”
ধারা থমকে দাঁড়ায়।জেম্বা একবার ধারাকে দেখে পরে বিভোরকে বলে,

— “কাকে কি বলছো বেভোর?তোমাকে নিয়ে বাঁচার জন্য সে গতকাল কত বড় যুদ্ধটা করেছে ভুলে গিয়েছো?তার সামনে নিজের মৃত্যু নাম এভাবে নিওনা।”
বিভোর আড়চোখে ধারার দিকে তাকায়।ধারা তাকিয়ে আছে।চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে গাল বেয়ে।ধারা আকস্মিক হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বিভোরের পা ধরে বলে,
— “প্লীজ একটা সিলিন্ডার ইউজ করো।আল্লাহর দোহাই লাগে।”
বিভোর সচকিত। দ্রুত ধারাকে টেনে তুলে।ধমক দিয়ে বলে,
— “এই মেয়ে পাগল তুমি।এভাবে কারো পায়ে পড়ে।আত্মসম্মান নাই?”
— “হাসবেন্ডের পায়ে ধরলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবেনা।”

বিভোর মৃদু হাসলো।এরপর একটা সিলিন্ডার নিয়ে,মাস্ক পরে নেয়।অক্সিজেনের অভাবে বুক শুকিয়ে এসেছিল প্রায় ।এরপর হাঁটা শুরু হয়।দ্রুতগতিতে হাঁটছে।পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল,যেহেতু অন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটা হচ্ছে দড়ি ছাড়া।তবুও দ্রুতগতিতে ছুটতে হচ্ছে।ধীরে হাঁটলে তো অক্সিজেনের অভাবে মরতে হবে।এর চেয়ে কপালে যদি থাকে দ্রুত হাঁটার কুফলে মৃত্যু। তবে সেটাই ভাল।এর মাঝে তো সম্ভাবনা আছে না পড়ার।অক্সিজেন ছাড়া বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
ধারা পিচ্ছিল খেয়ে বার কয়েক গড়িয়ে যাওয়ার পথে ছিল বিভোর আর জেম্বা সামলিয়েছে।প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা চলছে।ধারার আরো দু’টো সিলিন্ডার অবশিষ্ট থাকার কথা ছিল।দূর্যোগের জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়েছে সেই সাথে অক্সিজেন।বিভোর মাঝে মাঝে মাস্ক খুলে নিঃশ্বাস নেওয়া চেষ্টা করছে।অক্সিজেন বাঁচাতে হবে নয়তো ধারা বাঁচবেনা।ক্যাম্প-৩ অব্ধি পৌঁছানো গেলেই হতো।রাতের অন্ধকারে বিপজ্জনক এভারেস্টের অচেনা পথ ধরে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা কোনো সামান্য কথা নয়।বুক ধুকপুক ধুকপুক করেছে প্রতিটি সেকেন্ডে।এই বুঝি পা পিছলে অন্ধকার কোনো ক্রিভাসে হারিয়ে গেলো।

হঠাৎ দেখা যায় অন্ধকারের আসন্ন বিদায়,আলোর উদ্বোধন।রাত কেটে যাচ্ছে।অন্ধকার থেকে একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে চারিদিকের সব বিশাল বরফশৃঙ্গ।একটু পরেই আকাশ জুড়ে ফুটলো সিঁদুরের আভা।একটু, একটু করে সূর্য উঠতে থাকে।দিনের আলো মুহূর্তে মনে যোগায় সাহস।রাতের আঁধারে মনে হচ্ছিলো চারপাশে মানুষখেকো রাক্ষস কিলবিল করছে।যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে শরীরটা ছিন্নভিন্ন করে চিবিয়ে খাবে!সেই ভয় কাটিয়ে দিল যেনো সূর্যের আলো।আরো মিনিট ত্রিশেক হেঁটে পৌঁছে ওরা সাউথ কলে!ধপ করে বসে দুজন।খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।জেম্বা দ্রুত চা বানাতে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।ধারা অক্সিজেন মাস্ক খুলে প্রশ্ন করে,

— “আসার পথে কোনো বড় ক্রিভাস তো পড়লোনা।”
বিভোর জবাব দিল,
— “পথ চেঞ্জ হয়েছে।অনেক বরফশৃঙ্গ ভেঙে পড়েছে সেদিন।হয়তো বড় ক্রিভাস গুলো বরফশৃঙ্গের অংশর নিচে চাপা পড়েছে।আর ছোট তো অনেক ক্রিভাসই দেখলে।”
— “সবসময় কি পথ পালটে যায়?”
— “শুনছি তো।মাঝে মাঝে পথ চেঞ্জ হয়ে যায়।অভিযান শুরুর আগে শেরপারা আগে উপরে উঠে আসে দেখোনা?ওরা পথ চিহ্নিত করে।”
— “জেম্বা খুব ভালো।”
— “হুম।”

হরলিক্স এবং চা খেয়ে ওরা আবার উঠে দাঁড়ায় সামনে এগোতে।পায়ের জোর কমে এসেছে।তবুও এখানে আর থাকা যাবেনা।দ্রুত ক্যাম্প – ৩ এ যেতে হবে।এক ঘন্টা পর ধারা জানায় তাঁর অক্সিজেন শেষ!সর্বনাশ!বিভোর দ্রুত নিজের সিলিন্ডার ধারার সাথে যুক্ত করে দেয়।ধারার মানা শুনলোনা।মিনিট কয়েকের পর বিভোরের মনে হলো তার ফুসফুস অস্বাভাবিক ভাবে চলছে।গলায় লবণাক্ত ভাব।পা চলছেনা।হাঁটার স্পিডও কমে আসে।ধারা টানছে, বিভোর পারছেনা শত চেষ্টা করেও।আচমকা হুড়হুড় করে রক্ত বমি করতে শুরু করে।ধারার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠে।বিভোর বসে পড়ে।ধারা দ্রুত মাস্ক খুলে বিভোরের মুখে লাগায়।বিভোর দ্রুত নিঃশ্বাস নেয় কয়েকবার। জেম্বা বিভোরকে পানি খাওয়ায়।

শরীরে ক্ষমতা নেই হাঁটার।তবুও মনের জোরে উঠে দাঁড়ায় বিভোর।হাঁটা শুরু করে।অদলবদল করে দুজন একই সিলিন্ডার ইউজ করছে প্রায় দু’ঘন্টা যাবৎ।এক নাগাড়ে অক্সিজেন গ্রহণ না করতে পারায় ধারার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে।নাক – মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে।এই দৃশ্য দেখে বিভোরের সারা শরীরের রগে রগে কাঁপন শুরু হয়েছে।ধারাকে কোলে তুলে নেওয়ার শক্তিটুকু অব্ধি নেই শরীরে।কোনোমতে শুধু দুলে দুলে হাঁটছে।এরিমধ্যে সামনে পড়ে ক্রিভাস!!এই পথ কেনো চেঞ্জ হলোনা?ধারাকে সিলিন্ডার দেয়।তখন ধারা দূর্বল গলায় বলে,

— “এতক্ষণ পারবে?”
বিভোর হেসে বলে,
— “পারবো।”
ধারা মই দিয়ে ক্রিভাস পার হয় মিনিট দশেক টাইম নিয়ে।বিভোরের তখন কলিজা ফেটে যাওয়ার অবস্থা।লুটিয়ে পড়ে জ্বেম্বার গায়ে।ধারা মই পার হয়েই পিছন ফিরে তাকায়।বিভোর জেম্বার গায়ে পড়ে আছে।কেনো?কি হয়েছে?ধারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে,
— “জেম্বা, জেম্বা কি হইছে ওর।জেম্বা…জেম্বা…কি হইছে ওর।জেম্বা ও… ও বেঁচে আছে?জেম্বা….”
জেম্বা এমন অবস্থায় কখনো পড়েনি।গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তাঁর।কবে শেষ কেঁদেছে সে মনে নেই।আজ কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।মেয়ে বয়সী একটা মেয়ে তার স্বামীর জন্য কিরকম ভাবে কাঁদছে।ইশ্বর এতো নিষ্ঠুর!ধারা হাউমাউ করে কেঁদে বলেই যাচ্ছে,

— “জেম্বা বাঁচাও ওরে।জেম্বা আমার বিভোর কে বাঁচাও।আমি বিধবা হতে চাইনা।জেম্বা…. বিভোর আমাকে ডাকো একবার।আমার দিকে তাকাও।একবার ফিরি বাড়ি আর জীবনে ছাড়বোনা।লুকাইয়া রাখবো।প্লীজ জেম্বা…বিভোর…আল্লাহ কেন শুনতাছে না আমার কথা…জেম্বা ওর বুকটা এমনে উঠানামা কেন করতাছে….জেম্বা….এই শুনতাছো তুমি….”
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় বিভোর।জেম্বা নিজেকে শান্ত করে বলে,
— “পারবে পার হতে?”
বিভোর কথা বলতে গিয়ে দেখে আওয়াজ আসছেনা।চোখ দু’টি জলে টলমল করে উঠে।মাথা ঘুরিয়ে একবার ওপাড়ের দিকে তাকায়।বসে হাউমাউ করে কাঁদছে ধারা।ধারা বিভোরকে তাকাতে দেখে হাত উঠিয়ে আরো জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে,

— “এই আমারে দেখতাছো তুমি?এমন ভং ধইরা শুয়ে আছো কেন?আমার ভয় করতাছে…শুনতাছো তুমি….চোখগুলো বন্ধ কইরোনা, আমারে একা করে দিওনা…. শুনতাছো তুমি?”
বিভোরের অব্যক্ত মন বলছে,
— “এমন করে কেনো কাঁদছো তুমি।মৃত্যু যন্ত্রণা থেকেও কষ্ট বেশি পাই তোমার কান্না দেখে।কেনো দিচ্ছো এত কষ্ট?”
কিন্তু মুখ ফুটছেনা।ধারা এপাড়ে আসার জন্য পা বাড়ায়।জেম্বা চিৎকার করে বলে,
— “এদিকে এসোনা দারা(ধারা)।আমি আসছি বিভোরকে নিয়ে।”
জেম্বা বিভোরকে কাঁধে তুলতে গেলে বিভোর অনেক চেষ্টায় ঝাপসা কন্ঠে বলে,
— “জেম্বা একটা অনুরোধ রাখবে?”
— “বলো।”
— “ক্যাম্প-৩ এ পৌঁছাতে অনেক সময় প্রয়োজন। আমি ওপাড়ে গেলে ধারা অক্সিজেন আমায় দিয়ে দিবে….
বিভোর থামে।কথা বলতে পারছেনা।তারপর আবার বলে,
— ” জানোই তো ওর অবস্থা।এভাবে দুজনের কেউই বাঁচতে পারবনা।এক ঘন্টায় দুজন একসাথে… তুমি এক কাজ করো।তুমি পাড় হয়ে যাও আমাকে এখানে রেখে।এরপর ধারাকে নিয়ে চলে যাও।”

— “বিভোর কি বলছো?ধারা কখনো যাবেনা।”
— “ও তোমার মতো মানুষের শরীরের শক্তির সাথে কুলোতে পারবেনা।একবার শুধু ওরে ওর পরিবারের হাতে তুলে দিও।মইটা ভেঙে দিও পাড় হয়ে ধারা এদিকে আসতে পারবেনা।আমার জন্য ভেবোনা মিনিট কয়েক আর পারবো…..
— ” এতো কথা বলোনা উঠো কাঁধে উঠো।”
বিভোরের চোখ ঘোলা হয়ে আসছে।নাক,মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে।জেম্বার হাত খামচে ধরে বললো,
— “প্লীজ আমার বউটারে বাঁচতে দেও।ও পরিবারের একমাত্র মেয়ে।প্লীজ..
জেম্বা কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।এটা সত্যি দুজন একসাথে আর এক সিলিন্ডার ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা।এতে দুজনই পথে মারা যাবে।কি করবে সে?বিভোর আকুতি করে বললো,
— ” জেম্বা একটু নিষ্ঠুর হও।”

জেম্বা উঠে দাঁড়ায় বিভোরকে রেখে।তার চোখের জল বাঁধ ভেঙে পড়ছে।জেম্বাকে একা মইয়ে উঠতে দেখে ধারার সারা শরীরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে।হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে।কোনোমতে উঠে দাঁড়ায়।বিভোরের দিকে তাকায়।বিভোরের মুখ রক্তে লাল।বুকটা হাহাকার করছে।প্রতি নিঃশ্বাসে যেনো বিষ ঢুকছে ভেতরে।ধারার কোনো এক ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে জেম্বা তাকে নিয়ে চলে যাবে।বিভোরকে ফেলে!ধারার চোখ দুটি রক্ত বর্ণ ধারণ অরে।চেঁচিয়ে উঠে,
— “জেম্বা আমি তোমাকে খুন করবো।তুমি একা কেনো আসছো।জেম্বা…জেম্বা তুমি আমাকে চিনোনা…আমি…আমি কিন্তু তোমাকে মেরে দেব।তুমি…কি করছো।একা কেন আসছো?”
জেম্বা ধারার কথা পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে আসছে।যখন সে মইয়ের মাঝামাঝি অংশে তখন ধারা হুমকি দেয়,

— “আমি ক্রিভাসে ঝাঁপিয়ে পড়বো কিন্তু।”
জেম্বা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়!সে কি করবে।ধারা যে মেয়ে সত্যি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।এতে স্বার্থপরের মতো বিভোরকে রেখে আসায় লাভ কি হলো?ধারা আবার বলে,
— “বিভোরের কিছু হলে তুমি আমাকে নিয়ে ফিরতে পারবেনা।”
বিভোর অনেক দিন এই আবহাওয়ার সাথে ছিল।খাপ খাইয়ে নিয়েছে।তাই হিসাব মতো বিভোর আরো মিনিট কয়েক বাঁচতে পারবে।তবুও জেম্বা ধারাকে বললো,
— “বিভোর বেঁচে নেই।তুমি পাগলামি করোনা।আমি আসছি….
ধারার কানে কথাটি বজ্রপাতের মতো আঘাত হানে।মস্তিষ্কে ভারী কিছু একটা পড়ে।দু’কদম পিছিয়ে যায়।বিভোরের দিকে তাকায়।বিভোরের মুখটা অন্যদিকে ফেরানো তবে নিস্তেজ!ধারা মাথা থেকে টুপি সরিয়ে ফেলে ক্রোভে।এরপর নিজের মাথার চুল নিজে খামচে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৪৮

মনে হচ্ছে, উন্মাদ সে।জেম্বা দ্রুত পা চালিয়ে ধারার কাছে আসে।ধারাকে সামলাতে গেলে ধারা জেম্বাকে খামচাতে থাকে।অক্সিজেন ব্যবহার করছেনা ধারা।ফলে কাশতে থাকে।জেম্বা জোর করেও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করাতে পারছেনা।ধারা আচমকা সিলিন্ডার কেড়ে নিয়ে ক্রিভাসে ছুঁড়ে ফেলে।এরপর রাগে অদ্ভুত আওয়াজ করতে করতে বরফ ভাঙার চেষ্টা চালায়।হাত কামড়াতে থাকে নিজের।জেম্বা হতভম্ব!মেয়েটা পাগল!সিলিন্ডার ফেলে দিল!আবার এমন করছে!তার শরীর অবশ হয়ে আসে।ধারাকেও আর বাঁচানো গেলোনা।অক্সিজেন ছাড়া ক্যাম্প-৩ অব্দি যাওয়া কোনো সাধারণ মানুষের সম্ভব নয়।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫০