ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ১৯

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ১৯
লেখনিতে : মিমি মুসকান

কয়েকটা বাইক ঢুকলো ভার্সিটিতে।‌ আমি আর ইতি তাকিয়ে আছি সেদিকে। গুনে গুনে চার টা। আমি হিসাব করেছি। তখনই আচমকা আমার চোখ পড়ল মাঝের ছেলেটার দিকে। কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আহিয়ান। কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে? আমার জানামতে তার বাইক নেই তাহলে। সত্যি সত্যি তাই হলো। মাঝের ছেলেটা আহিয়ান’ই ছিল। আমি হা করে তাকে দেখছি। রোদের আলোতে তাকে দেখতে ভালোই লাগছে। মাথা থেকে হেলমেট খুলেই চোখে সানগ্লাস টা রাখলো। উনার এই সানগ্লাস এর প্রতি আমার খুব লোভ। শুধু উনি নাহ উনার সাথে আকাশ ভাইয়া, আনাফ ভাইয়া আর নাহান ভাইয়া। খেয়াল করলাম ইতি কি রকম ভাবে তাকিয়ে আছে আকাশ ভাইয়ার দিকে। এই চাহনি’র মধ্যে পার্থক্য আছে। ইদানিং দেখছি ইতি কেমন ভাবে তাকিয়ে থাকে আকাশ ভাইয়ার দিকে। ব্যাপার টা সুবিধার না।

ইতি কে ধাক্কা দিয়ে বলি..
– কিরে এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিস?
থতমত খেয়ে…
– ক…ই কিছু না।
– কই আমি তো দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিস।
– আর সত্যি’ই কিছু না।
– ওহ তাহলে তো ভালোই, চল ক্লাসে যাই
– আরেকটু থাকি এখানে।
– কেন থেকে কি করবি!
– দেখ রোদ টা খুব ভালো লাগছে। থাকি একটু এমন করছিস কেন?
– বাহ্ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রোদ উপভোগ করতে এই প্রথম দেখলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চুপ হয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। হঠাৎ এর মধ্যেই নিতি’র গাড়ি ঢুকল। গাড়ি থেকে নিতি নামল। অনেকটা অবাক হলাম কারন অনেক দিন পর ওকে দেখছি। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই আগের মতোই। থাক গে আমার কি? কিন্তু এখন সে কি করবে সেটাই জানার জন্য আমার মন ছটফট করছে। কিন্তু সেটার কারণ আমার অজানা।

নিতি হাঁটতে হাঁটতে আহিয়ান এর সামনে গেলো। আহিয়ান তাকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো। নিতি তার হাত’টা ধরে আহি বলে ডাকলো। আচ্ছা সবাই তাকে আহি কেন বলে আর সবাই বলে কিন্তু আমার মুখ দিয়ে সেটা বের’ই হয় না। থাক গে এই কথা। নিতি উনার হাত ধরাই উনি কোনো প্রতিক্রিয়া না করে নিতি’র দিকে তাকায়। নিতি বলে ওঠে..

– ১ মাস হয়ে গেলো, তোর রাগ কি এখনো কমে নি।
উনি কিছু না বলে নিতি’র হাত টা ছাড়িয়ে ফোন টিপতে টিপতে চলে এলো। যার অর্থ এই উনার রাগ এখনো কমেনি। ছেলে মানুষের এতো রাগ আছে উনাকে না দেখলে জানতাম’ই না। আমি ভাবতে ভাবতে হাঁটতে লাগলাম। কিন্তু ওই মেয়ে এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইচ্ছে করেই ডাকি নি। জানি সারাজীবন ও শুধু দেখেই যাবে কিন্তু সামনে যাওয়ায সাহস হবে না। দেখেই শান্তি পাক তাহলে। মন ভরে দেখুক।

হঠাৎ খুব অস্থির লাগছে। ওয়াসরুম এ গিয়ে মুখে পানি ছিটালে বোধহয় ভালো লাগতো। হাঁটতে হাঁটতে সেখানেই গেলাম। মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছি আর বির বির করে বলছি, “উনার এতো রাগ, শুধু তো একটা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছিল কিন্তু সেটা কি তা আমি জানি না। আমার মাথায় এইসব ঢুকবে না। আচ্ছা সেটা কি খুব বড় কিছু। আমি সারাদিন তো কতোকিছু করি। উনি আমার সাথে তখন ঝগড়া করে বটে তবে কখনো এভাবে রাগে না যে আর কথাই বলবে না। যদি বেশি উল্টো পাল্টো বলি তাহলে গম্ভীর গলায় বলবে..

– নিহা এরকম কথা আর কখনো বলবা না বুঝলা।
– আমি মটেও এভাবে কথা বলি না ভুতনি!
হুট করেই উনার আওয়াজ পেয়ে লাফিয়ে উঠি। পাশে ফিরে দেখি উনি আমার শাড়ি’র আঁচল ধরে আবার গিটু দিচ্ছে কিন্তু এটাতে মজার কি! যখন তখন এটা করেন উনি।‌ হঠাৎ মনে পড়ল আমি লেডিস ওয়াসরুম এ।চারদিকে তাকাই তাড়াতাড়ি করে, যদি কেউ তো সর্বনাশ হবে। সোজা স্যার এর কাছে বিচার। মান সম্মান যাবে। নাহ কেউ নেই কিন্তু নেই বলে যে আসবে না তা না। যখন তখন যে কেউ আসবে। রেগেই বলে উঠি..

– আপনি লেডিস ওয়াসরুম এ কি করছেন? কেউ দেখলে কি হবে জানেন!
শাড়িতে গিট্টু দিতে দিতে…
– কেউ নেই আর আসবেও না আমি জানি।
– হ্যাঁ সব জেনে বসে আছেন। বের হন এখান থেকে।
– আরে ভূতনি শান্ত হও। তোমার সাথে কথা আছে আমার।
– কিসের কথা আপনার যার জন্য এখানে চলে আসলেন। আর আমার শাড়ি ছাড়ুন কি করছেন?
– টেনশন কমাচ্ছি!

– এভাবে শাড়ি গিট্টূ দিলে টেনশন কমে এটা কোন ধরনের সাইন্স আবার!
– সেটা তোমার মতো ভূতনি’র মাথায় ঢুকবে না। আমার কথা শোন।
– কিহহ?
– আচ্ছা আমি কি করবো বলো তো!
– কোন ব্যাপারে!
– নিতি’র‌। মাফ করে দেবো ওকে।
– সেটা আমি কিভাবে বলবো!
– আরে তুমি তো মেয়ে, মেয়েদের মন বুঝতে পারো না। তোমার কি মনে হচ্ছে ও সত্যি’ই অনুতপ্ত।
– আপনার বন্ধু আপনি জানবেন। আমি কিভাবে বলবো!
– কচু!

– আপনি কবে থেকে খেতে শুরু করলেন!
আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে…
– আমি কি খাওয়ার কথা বলেছি!
– তাহলে আপনি নাম নিলেন কেন?
– তুমি জানো না মানুষ বিরক্ত হলে এইটা বলে!
– কেন? শাড়িতে গিট্টু দিতে দিতে টেনশন কমে নি আপনার!
– হুহ।
– বাইরে চলুন এখানে এভাবে থাকলে মানুষ খারাপ ভাববে।
বলেই বেরিয়ে এলাম। আমার পিছু পিছু শাড়ি’র আঁচলে গিট্টু দিতে দিতে উনি বের হয়ে এলেন। আমি রেগে উনার হাত থেকে শাড়ি’র আঁচল কেড়ে নিই। উনি বিরক্ত হয়ে বলে…
– কি করলে এটা টেনশন কমে নি।
– এতো টেনশন কেন আপনার। যতসব! আজাইরা ফালতু কাজ।
বলেই উনার গিট্টু গুলো খুলতে লাগলাম। উনি আমার পিছু পিছু বক বক করতে করতে আসছে। ইদানিং খুব বেশি কথা বলেন উনি। আগে মনে করতাম আমি হয়তো বেশি কথা বলি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে উনি বলেন। আমার মাথা ধরে যায় কিন্তু উনার কথা যেন শেষ হবার নাম নেয় না। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে আমি পিছনে ঘুড়ে একটা ধমক দিয়ে বলি…

– চুপ করবেন আপনি।
– কেন?
– আপনি ইদানিং খুব বেশি কথা বলেছেন, একদম বাচাল হয়ে যাচ্ছেন।
– কি করবো! সারাদিন একটা বাঁচাল ভূতনি’র সাথে থাকলে আমার তো এই অবস্থায় হবে নাহ।
উনার কথার দিলাম না। হাঁটতে লাগলাম। জানি উনি থামবার পাত্র নন। হুট করেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে উনি বলতে লাগলেন..
– কি হলো বলছো না কেন? কি করবো?
– কি আর করবেন! মাফ করে দিন।
– মাফ করে দেবো বলছো।
– হ্যাঁ! বন্ধু রা থাকেই তো ভুল করার জন্য আর আপনার বন্ধু একটা ভুল করেছে আপনি মাফ করতে পারবেন না।
– হুম বুঝেছি।
বলেই উনি চলে গেলেন। আমি ক্লাস রুমে থেকে দেখলাম উনি কথা বলছেন নিতি’র সাথে নিতি বেশ খুশি। ইতি আমাকে খোঁচা দিয়ে বলছে..

– দেখলি!
– কিহ দেখবো!
– আরে আহিয়ান ভাইয়া মাফ করে দিলো নিতি কে তাও ১ মাস পর!
– তো! বন্ধু তো মাফ করবেই।
– হুম জানি তো। কিন্তু ১ মাস পর’ই তো আর আকাশ কে দেখ আনিকা’র সাথে পরেরদিন থেকেই ভাব করছে হুহ
– তাতে তোর কি?
– আ….আমার।
ভ্রু কুঁচকে বলি…
– হ্যাঁ তোর! এতো ইন্টারেস্ট কেন তোর!দেখছি তো সবসময় চোখ কোথায় থাকে আপনার। তার মধ্যে ভাইয়া ডাকটা অলরেডি উধাও। ব্যাপার টা কি?

কথা শুনে মনে হলো ইতি বেশ লজ্জা পেয়েছে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি এমন কি বললাম যার কারনে এতো শরম পেলো ও। ইতি লাজুক মুখে বলে ওঠে..
– যখন বাইক থেকে নামলো দেখলি কি হ্যান্ডসাম
লাগছিলো ওকে। ইচ্ছে করেছিলো উনার সাথে বাইকে উঠি!
ইতি’র কথা শুনে আমি কাশতে শুরু করি। এই মেয়ে তো সোজা উনি তে চলে গেছে। তুমি তেও ঢেকলো না।‌ কি মেয়েরে বাবা।

ইতি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো..
– কিরে কি হলো তোর। হুট করে কাশতে কেন শুরু করলি।
– বোন থাম তুই। আর কথা বলিস না।
আমাকে পানির বোতল দিয়ে…
– কেন কি এমন বললাম।
– যাহ বললি কম কিছু না।
পানির বোতলে চুমুক দিলাম।
– আরে আমি কি শুধু আকাশের কথা বলেছি নাকি! আহিয়ান ভাইয়া, নাহান ভাইয়া তাদের ও বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিলো।

ইতি কথা শুনে আমার কাশি আরো বেড়ে গেলো। এই মেয়ের তো মতলব ভালো ঠেকছে না। ইতি আবারও আবারও আমার পিঠে হাত বোলাতে থাকে। ইতি বলে উঠে..
– কি হলো কি তোর?
– কিছু না ঠিক আছি এখন। আচ্ছা বল তো তোর ইন্টারেস্ট কার ওপর আহিয়ান এর নাকি নাহান ভাইয়া।
ইতি কিছু বললো না আমি এবার আস্তে আস্তে বলি…
– আকাশ ভাইয়া!

ইতি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।‌ মিটিমিটি হাসতে লাগলো। যাক বাবা বেঁচে গেলাম আমি। একটু’র জন্য দম আটকে আসছিলো আমার। ইতি আমার ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠে..
– দেখিস আজ নিতি আহিয়ান ভাইয়ার বাইকে চড়ে ঘুড়বে ইশ এমন ভাগ্য যদি আমার হতো।
মন টা হুট করেই খারাপ হয়ে গেল। আচ্ছা উনি কি সত্যি’ই নিতি কে বাইকে নিয়ে ঘুড়াবে। ইতি এবার একটু ধাক্কা দিয়ে বলে..
– কি ভাবিস এতো? যখন কিছু বলি কোনো ভাবনার জগতে চলে যাস। আচ্ছা তোর তো স্কুটি আছে, তা তোর বর এর কি বাইক আছে। ঘুড়তে বেড়িয়েছিস কখনো!
আনমনে বলি…

– উনার বাইক আছে এটা আমি জানতাম না।
– জানতাম না মানে কখন জানলি। যাই হোক তোর বর খুব কিপ্টা বুঝলি!
– কেন?
– বিয়ে‌ হলো আজ ১ মাস! হানিমুনে গেলি‌ না, তোর বর তোকে কিছু দিলো ও না। আচ্ছা বাদ দে একটা ফোন দাওয়া তো উচিত ছিলো। তোর খোঁজ খবর নিবে কিভাবে?
– জানি না। ( যেভাবে আঠার মতো পিছে লেগে থাকে আমাকে ফোন করে উনার খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। ) বির বির করে বললাম।

ভার্সিটি ছুটি হয়েছে অনেকক্ষণ। আমি বসে আছি ক্যাম্পাসে, কারন হলো ইতি’র তখনকার কথা। সত্যি’ই কি তিনি নিতি কে বাইকে চড়াবে।
উনি উনার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। অনেক দিন পর সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। আমি দূর থেকেই দেখছি। কারো চোখে না পড়লেও হয়তো উনার চোখে পড়েছি। উনি বলেন উনি নাকি দূর থেকেই আমার শরীরের গন্ধ চিনেন। এটা কিভাবে সম্ভব।

আমার প্রেমে পাগল বান্ধবী আমার সাথে বসে তার আকাশ মসাই কে দেখতে ব্যস্ত। বুঝি না বাপু এতো দেখার কি আছে। তাকে দেখলেই কি আরো সুন্দর হয়ে যাবে নাকি। আবার যেই লজ্জা তার কি ভালোবাসা! বাহ কিন্তু কিভাবে সম্ভব। জিজ্ঞেস করা হয়নি! করবো পরে মনে হচ্ছে না এখন জিজ্ঞেস করলে কিছু বলবে? সে এখন দেখতেই ব্যস্ত। মেয়েদের কারো প্রেমে এভাবে পাগল হতে কম’ই দেখেছি। বেশির ভাগ ছেলেরাই পাগল হয় বলে আমার ধারণা ছিল। কিন্তু নিতি আর ইতি মিলে আমার সেই ভাবনা পাল্টে দিলো বলতে হবে।

উনি উঠে গেলেন, হয়তো আড্ডা দেওয়া শেষ। সবাই বের হচ্ছে। আমি গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি নিতি কি সত্যি’ই তার বাইকে চড়ে কি না। আমার সাথে ইতি ও দেখছি। মূলত এটা ও জানে না আমি আহিয়ান কে দেখছি। ওর ধারনা আনিকা আকাশের বাইকে চড়বে তাই ও দেখছে আর আমি ওর সঙ্গ দিচ্ছি। হি হি হি ভাবলেও হাসি পায়। দুই বান্ধবী মিলে গোয়েন্দা করছি। দেখতে দেখতে টিনা গিয়ে ‌নাহান এর বাইকে চড়ল, নাহান কিছু বললো না। আনিকা গিয়ে আকাশের বাইকেই চড়লো। আনিকা বাইকে চড়ায় ইতি ম্যাডাম আমার পিঠে সেই কিল বসালো বাপরে বাপ। কার রাগ কাকে দেখাচ্ছে। পুরো পিঠ যেন আগুন জ্বলছে। এ্যা মা নিতি তো উনার বাইকে উঠতে গেলো। কিন্তু উনি নামিয়ে দিলেন। কি জানি বলছে ওকে। নিতি তো মনে হয় উনার কথায় একটু রেগে গেছে। চুপচাপ গিয়ে আনাফ এর বাইকে চড়ল। নিতি বাইকে না চড়ায় অজান্তেই মুখে হাসি ফুটল আমার।

উনারা চলে যাবার পর আমি বের হলাম ইতি কে নিয়ে। ওকে বাসায় নামিয়ে দিলাম। সারাটা রাস্তা বকবক করে আমার মাতা খেলো হারামি টা। কারন একটাই আকাশ কিভাবে আনিকা কে বাইকে চড়ালো। হায় রে প্রেমজ্বালা ‌আমার। কি অবস্থা! বাসায় এসে দেখি উনার বাইক বাইরে। আমি সেটার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে রুমে গেলাম। উনি বিন ব্যাগ এ বসে আছেন। আমাকে দেখে বললো…

– এতো দেরি হলো কেন? ভার্সিটি তো কখন ছুটি হয়েছে। তাহলে…
– ইতি কে দিয়ে আসলাম তাই!
– মিথ্যে কেন বলছো?
আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি ফোনের স্কিনের দিকেই তাকিয়ে বললো..
– আমার পিছনে গোয়েন্দা করছিলে নাহ!
– মোটেও না।
– তাই! তাহলে গাছের পিছন থেকে কি দেখছিলে!

– সেটা রাখুন আগে বলুন আপনি আজ বাইক নিয়ে আসবেন সেটা বললেন না কেন?
– ভাবলাম ভুতনি কে একটু চমকে দেবো তাই! কিন্তু এটা ভাবিনি আমার ভুতনি বউ আমার বাইক দেখে গোয়েন্দা ভূতনি হয়ে যাবে।
আমি একটু অবাক হলাম। কারন এই প্রথম উনি আমায় বউ বলে ডাকলেন বলে আমার মনে হলো। তাও ভূতনি টা যোগ করলো। এটা না করে শান্তি লাগে না উনার।
বলে উঠি…
– আমি গোয়েন্দা করছিলাম বলে কি নিতি কে বাইকে উঠান নি।
– নাহ তা কেন হবে? তোমাকে কি ভয় পাই নাকি আমি!
– তাহলে…

– আমি আহিয়ান ঠিক আছে। আমার বাইকে সবাই উঠতে পারবে না।‌ এতো ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই বাইকে মেয়েদের নিয়ে চড়তা‌ম।
– বাহ কি কনফিডেন্স!
– হুম। মা খুঁজছিলেন তোমায়!
– আচ্ছা important কথা সবসময় দেরি করে বলা কি আপনার habit.
– না তা নাহ!
– তাহলে মা ডাকছেন আগে বলেন নি কেন? আজব পাবলিক!

উনাকে বকতে বকতে মায়ের রুম এ গেলাম। মা’র শরীর ইদানিং ভালো নেই। বেশির ভাগ সময়ই একটু ‌শুয়ে থাকেন তিনি। সেদিন হুট করেই তার মাথা ঘুরে যায়। আহিয়ান কে সেদিন প্রথম বার খুব চিন্তিত লাগছিলো আমার কাছে। অনেকটা ভয় পেয়েছিলেন সেদিন তিনি। ডাক্তার এসে বলেছিল প্রেসার লো তাই এমন হয়েছে। উনাকে যেন রেস্ট এ রাখি তাহলে ঠিক হয়ে যাবেন। অতঃপর মা এই কয়েকদিন রেস্ট এ আছে। আমি মা’র রুমে এসে নক করলাম। বই পড়ছিলেন তিনি। বেশির ভাগ সময়ই বই পড়ে কাটান। হাতের ইশারায় আমাকে আসতে বললেন। আমি গিয়ে তার বিছানার পাশে বসলাম।

– মা আমাকে ডেকেছিলেন।
বই টা বন্ধ করে..
– হুম মা। একটা জরুরী কথা ছিলো তোমার সাথে।
– বলুন!
– সামনেই আমার শাশুড়ি মানে তোমার দাদি শাশুড়ির মৃত্যু বার্ষিকী। এই উপলক্ষে তোমার বাবা আমাদের গ্রামের বাড়ি মানে তোমার বাবা’র বাড়ি সিলেটে একটা এতিমখানায় তিনি মিলাদ পড়ান, এছাড়া খাওয়া-দাওয়া বাচ্চাদের কিছু উপহার দেন। এতিমখানা টা তোমার দাদি শাশুড়ির নামে মানে আয়ানা চৌধুরী’র নামে।
– আয়ানা তো আপুর নাম!

– হুম। তোমার বাবা’র ধারনা তিনি তার মাকে হারিয়ে এই মা কে পেয়েছি। আর আয়ানা নাকি আমার শাশুড়ি’র মতো দেখতে তাই তিনি নিজের মায়ের নাম টাই রাখলো।
– ওহ আচ্ছা।
– হুম। ৩ দিন পর মৃত্যু বার্ষিকী। প্রতিবছর আমি আর তোমার বাবা যাই কিন্তু এবার আমি অসুস্থ বলে তোমার বাবা যেতে দিচ্ছেন না। আর উনি একাও যাবেন না তাই কাল রাতে বললো যেনো তোমাকে আর আহি কে পাঠাই। তুমি যাবে!
– হ্যাঁ মা যাবো না কেন! অবশ্যই যাবো।

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ১৮

– আচ্ছা আমি আহি কে বলেছি ও বললো তোমায় জিজ্ঞেস করতে তাই। এখন তুমি যখন বললে তাহলে আমি নিশ্চিত। তোমারা চাইলে কিছুদিন সেখানে ঘুরতে পারো, জায়গা টা খুব সুন্দর।ওখানে একটা চা বাগান ও আছে। আর তোমার বাবা তার মা বাবা মানে আমার শশুর শাশুড়ি দের থাকার জন্য একটা ছোট বাড়ি বানিয়েছিলেন সেখানে। তারা বুড়ো বয়সে ওখানে থাকতে চেয়েছিল। তোমরা সেখানেই থেকো। তারা মারা যাওয়ার পর একজন কেয়ার টেকার থাকে সেখানে। আমি তাকে বলে দেবো তোমরা যাবার আগেই যেন সব পরিষ্কার করে রাখবে।

– মা আপনি উত্তেজিত হবেন না। ধীরে সুস্থে সব করুন।
– হুম মা! কিন্তু কি বলোতো তোমার দাদি শাশুড়ির ওই এতিমখানায় নিয়মিত যেতেন। অনেক যত্ন করতেন এতিমখানার বাচ্চাদের। দেখো তাদের যেন কোনো ‌কমতি না থাকে।
– আপনি নিশ্চিত থাকুন মা। আমরা অনেক ভালো ভাবেই সব করবো।
– হুম! শীতের পোশাক নিও কিন্তু। এখন ওখানে অনেক শীত থাকবে। অগ্রহায়ণ মাস এসে পরেছে বুঝলে। খেয়াল রেখো নিজেদের। যাও প্যাকিং শুরু করো।
– হুম মা।

মার ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে উনি ইচ্ছে করেই চাইছেন আমরা যাই। হয়তো আমাদের একা সময় কাটাতে বলতে চান। যাই হোক আমি ঘুরতে পারলেই হবে। অনেকদিন ধরেই কোথায় যেতে মন চাইছিলো। সেখানে গেলে মুড ফ্রেশ হবে আমার। ঘরে এসে প্যাকিং করতে শুরু করলাম। উনার টাও করলাম। মা’র কথামতো শীতের পোশাক নিলাম। উনি বললেন আমরা কাল সকালে রওনা হবো।

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ২০