ভালোবাসার বর্ষণ শেষ পর্ব (শেষ অংশ) 

ভালোবাসার বর্ষণ শেষ পর্ব (শেষ অংশ) 
নীহারিকা নুর

হ্যাপি ফ্যামিলি নামের মেসেন্জার গ্রুপে কল বেজে যাচ্ছে অনেকক্ষণ। ব্যাস্ত থাকায় জয়েন হতে পারেন নি নুরুল ইসলাম। হাতের কাজ শেষ করে গ্রুপ কল রিসিভ করলেন। অমনি স্ক্রিনে ভেসে উঠল তরুর মুখখানা। নুরুল ইসলাম হাসি হাসি মুখ করে জিগেস করলেন

– কেমন আছে আমার আম্মা।
– ভালো না৷
– কেন কি হয়েছে?
– আগে তোমার বউ জয়েন হোক তারপর বলব।
তরুর পেছনে ঝোলানো ছবির ফ্রেমের দিকে নজর গেলো নুরুল ইসলাম এর। ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে বললেন
– মামনি রুমটা বেশ চেনা চেনা লাগছে যে?

তরুকে উত্তর দিতে দিলো না তহমিনা। কলে জয়েন হয়েই কথাটুকু কানে গেছে তার। অমনি খেক করে বলে উঠলেন
– চেনা চেনা লাগবে না এটা তো তোমারই বাসা। তাই চেনা চেনা লাগছে।
– ওহ তরু বাড়িতে এসেছে। তাহলে বাড়িতে বসে মায়ের সাথে ভিডিও কল দেয়া লাগে। কি জুগ আইলো হায়রে।
– না বাবা কারণ সেটা নয়৷ অন্য কিছু। আসলে আমি তোমাদের কিছু বলতে চলেছি। যে কথাগুলো আম্মুর একটুও পছন্দ হবে না। তাই তার হাত থেকে বাচতে রুমের দরজা বন্ধ করে নিয়েছি।

– কি এমন জরুরি কথা শুনি?
– বাবা মাকে জিগেস করো তো তার হার্ট এর ঔষঊ পাশে আছে কিনা? নয়ত নিয়ে বসতে বলো। আমার কথা শুনে এট্যাক ফ্যাটাক করে বসলে আমার কিন্তু দোষ নাই।
তরুর কথায় আবারো খেক করে উঠলেন তহমিনা। বললেন
– ভনিতা না করে যা বলার বল।

চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো তরু। এরপর চোখ বন্ধ রেখেই এক নিঃশ্বাসে বলল
– বাবা মা আমি তুরাগ এর সাথে আর সংসার করব না৷ ওর আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। ওর দেওয়া ডিভোর্স পেপারে সই করে দিয়েছি আমি।
তহমিনা নুরুল যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। একসাথে বলে উঠলেন – কিহহহ।

– শান্ত হও তোমরা। এই দেখো আমি কিন্তু একদম ঠিক আছি। একটুও কষ্ট হচ্ছে না আমার। তোমরা শান্ত থাকো প্লিজ।
– তরু। কি করেছো এটা তুমি। এটা কি কোনো সাধারণ বিষয়। এরকম একটা বিষয়ে তুমি একা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারো।

– বাবা তুমি কি চাও তোমার মেয়েটা তিলে তিলে ম’রে যাক। যে মানুষ আমার সাথে সংসারই করতে চায় না তার সাথে সারাজীবন কীভাবে কা’টাবো বাবা। এখন তোমার যদি মনে হয় তোমরা চাও না আমি তোমাদের সাথে থাকি তাহলে বলে দাও। দূরে কোথাও চলে যাই৷

মেয়ের কথায় রিয়াক্ট করা বন্ধ করে দিলেন তাহমিনা৷ তার বুক হুহু করে উঠল। এই মেয়ে তার হাতের পুতুলের ন্যায় ছিলো। সেই মেয়ের লাইফটা আজ কেমন অগোছালো হয়ে আছে৷ তিনি প্রথম শুনে ভীষণ ক্ষেপে গেলেও এই মুহুর্তে একদম শান্ত হয়ে গেছেন। হয়ত মেয়ে হারানোর ভয় ঝেকে বসেছে তাকে। কারণ এরকম সিচুয়েশনে যে কোউই উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তহমিনা শান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো

– সকাল সকাল চলে এসেছিস ও বাড়ির কাউকে জানিয়ে এসেছিস?
তরুর সহজ সরল স্বীকারোক্তি
– না। কাউকে বলে আসিনি৷
– তাহলে কেউ জানেনা তুই এ বাসায় এসেছিস?
– না৷

– তাহলে চলে যা এখান থেকে। তরুর বাবা ও তোমার কাছে চট্টগ্রামে চলে যাক। তোমার থানার আশে পাশেই একটা ভালো দেখে বাসা খোজো। যতদিন না পায় ও ততদিন হোটেলে থাকবে। তবে আজই যাবে ও।
তহমিনার হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ভরকে গেলো বাবা মেয়ে দুজনই৷ তরু অবাক কন্ঠে জিগেস করলো

– কিন্তু এসব কেন করবো আম্মু?
– তুরাগকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।
– কি বলছো এসব আবোল তাবোল ( নুরুল)
– আমি আবোল তাবোল বলছি না৷ আমি ঠিকই বলছি৷ তুরাগ তরুকে নিতে একটু পরই চলে বসবে দেখো। কিন্তু তরুকে ওর সাথে যেতে দিবো না আমি৷ তরু কোথায় আছে তার খোজও দিবো না ওকে আমি৷

– তুমি কীভাবে জানলে তুরাগ আসবে?( নুরুল ইসলাম)
– তোমরা কি ভেবেছো সেদিন রেগে চলে আসছিলাম আর কোনো খোজ খবর নেইনি। তোমাদের ধারণা ভুল। ওই বাড়ির প্রতিটা খবর জানি আমি। তুরাগ আসতেছে তাও সেভাবেই জেনেছি যেভাবে বাকিগুলো জেনেছিলাম। এখানে কোনো একটা ঘাপলা আছে। আগে তা খুজে বের করতে হবে। কিন্তু তার আগে তুরাগের কাছে যেতে দেয়া যাবে না তরুকে।

বাবা মেয়ে চুপ করে আছে। এই মুহুর্তে তহমিনার কথাই তারা মানবে বলে মনস্থির করল।
তহমিনা যা বলেছিল তাই হয়েছে। একটু পরেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। আচলে হাত মুছতে মুছতে গিয়ে দরজা খুলে দিলো তহমিনা। সামনেই ভেসে উঠলো তুরাগের ক্লান্তিমাখা মুখস্রী। উস্কো খুস্কো চুল। ব্যাস্ত কন্ঠে জানতে চাইলো

– তরু কোথায় মামি?
– তরু কোথায় মানে? ও তোমারা সাথে আসে নি?
– না মামি। ও বলে এসেছে ও এখানে আসবে। আপনি সরুন। আমি জানি ও এখানেই আছে।

তুরাগের কথায় ভাবান্তর হলো না তহমিনার। তা দেখে দরজা ধাক্কা দিয়ে পুরোপুরি খুলে ফেলল তুরাগ। তহমিনাকে পাশ কা’টিয়ে ঢুকে গেলো ভিতরে। প্রতিটা রুম তন্ন তন্ন করে খুজল। ছাদেও খুজল। না কোথাও নেই তরু। তহমিনা তখনো ড্রইং রুমে দাড়িয়ে আছে। তার মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না এতে যেনো তার কোনো চিন্তাই নেই। থাকবে কীভাবে। সেই তো লুকিয়েছে তরুকে।

তরুকে না পেয়ে যেরকম ভাবে এসেছিল সেরকম ভাবেই আবার বের হয়ে গেলো। এতক্ষণে বৃদ্ধ তারামন বের হয়ে এলেন। কিন্তু সে আসতে আসতে তুরাগ বাসার গেট পেরিয়ে গেছে। বৃদ্ধার কন্ঠ তুরাগ কর্ন কুহরে পৌছালো না। সে ততক্ষনে ছুটে গেছে। তারামন বিবি চেচালেন তহমিনার সাথে। বাড়ির জামাইকে কেউ এভাবে চলে যেতে দেয়। তহমিনা নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছেন।

কারো কোনো কথাই তার গায়ে লাগছে না। তার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। তিনি সুফিয়ার থেকে যতটা শুনেছেন তাতে তুরাগ এখন স্বাভাবিক আচরণই করে। তহমিনা নিজ চোখেও মাত্র তাই দেখলেন। তুরাগের চোখে তরুকে হারাণোর ভয় ছিলো। তবে তুরাগ ডিভোর্স পেপার কেন দিলো এটাই ভেবে পাচ্ছে না তিনি।

কেউ ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকলে তাকে খুজে পাওয়ার সাধ্যি কার। তুরাগেরও এখন সেই অবস্থা। গাড়ি নিয়ে সারা শহর টহল দিলো। কিন্তু এভাবে কোনো মানুষকে খুজে পাওয়া যায় না। বাড়িতে ফিরলো প্রায় মাঝ রাতে। কলিং বেল দিতেই দরজা খুলে দিলো সুফিয়া। দরজা খুব তাড়াতাড়িই খুলল। যেনো তুরাগের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

– খালা ঘুমান নি এখনো?
– না বাবা। তোমার লগে কথা আছিল বাবা। এহনি কওয়া লাগবো।
– সকালে শুনলে হবে না। ক্লান্ত অনেক।
– না বাবা। অনেক জরুরি।
– আচ্ছা বলেন।

আঁচলের নিচ থেকে একটা খাম বের করলেন সুফিয়া। খামটা সুফিয়ার হাতে দেখতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তুরাগের। এটা তার কাছে কি করে এলো। এসব ভাবতে ভাবতেই তুরাগের সামনে খামটা উচু করে ধরল সুফিয়া। ব্যাস্ত হাতে খামটা এক প্রকার টেনেই নিলো তুরাগ। জানতে চাইলো
– খালা এটা আপনার আছে কেনো?

– অনেক কাহিনি হইছে আব্বা। হুনো কাল তোমার অফিসের এক লোক আইসা এই খামটা দিয়া গেছিলো। দিছিলো মেরিনা আপার কাছে। লোকটা কইছিলো খামটা তরু আম্মারে দিতে। কিন্তু সে ছোড আম্মারে না দিয়া খাম নিয়া নিজের রুমে গেছিলো। পরে অন্য একটা খাম আইনা হেয় ছোড আম্মারে দিছে। হেই খামে কি ছিল জানি না কিন্তু হেই খামডা বুকে জরাইয়া ছোড আম্মায় অনেক কান্না করছিলো। পরে আমি মেরিনা আপার ঘর পরিষ্কার করতে গিয়া এই খামডা পাইছি। আমার মনে হইছে হেয় কোনো ভেজাল করছে। তাই খামডা আচলের নিচে লুকাইয়া রাখছি। পরে মেরিনা আপা অনেক খুজছে। কিন্তু আমি দেই নাই।

রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তুরাগের। একটা ভুল করে ফেলেছে তুরাগ। তার জন্য অনুতপ্ত ও। ক্ষমাও চেয়েছে। তাদের সারাজীবন এর দায়িত্ব নিয়েছে। সেখানে তুরাগের বাসায় থেকে ওর পেছনে এত বড় ষড়যন্ত্র করার সাহস কি করে পায় মেরিনা বেগম। এত দিন তরুকে কষ্ট দেয়ার জন্য ছোটখাট প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিছু বলেনি তুরাগ। ভেবেছে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে এত বড় ষড়যন্ত্র করে তরুকে বাড়ি ছাড়া হতে বাধ্য করলো। এর মূল্য দিতে হবে তাকে। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তখনি সুফিয়া আবার বলে

– রাইতের খাওন খাইবা না আব্বা?
– না খালা ক্ষুধা নেই। তবে আপনার কাছে কৃতজ্ঞ খালা। এত বড় একটা জিনিস আপনি সযত্নে আমার হাতে তুলে দিছেন।

– ছি কি কও আব্বা। তোমাগো খাই তোমাগো পড়ি। তোমাগো লইগা এইটুক কাম করতে পারি না।
– খালা একটা কাজ করতে হবে আপনাকে?
– কি কাজ কও?
– কাল সকালের মধ্যে মেরিনা আন্টির সমস্ত জিনিস পত্র প্যাক করে দিয়েন।
– কি করবা আব্বা?

– তাকে তার স্থানে রেখে আসব। এখানে থাকতে দিছি কিন্তু সেটা তার সহ্য হচ্ছে না। রাগের বশে অন্ধ হয়ে গেছে তিনি। এরপর আরো বড়ো কোনো কাজ করতেও তিনি দুবার ভাববেন না। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে। আপাতত সে তার বাড়িতে একা থেকে বুঝুক এখানে সে কেমন ছিলো।
-এইডা করা কি ঠিক হইবো আব্বা?
– যা বলছি করবেন আপনি।
সুফিয়া আর কথা বাড়ায় না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

এত দিন করা সব কিছুর জন্য বাবার কারণ ক্ষমা চায় তুরাগ। বিছানায় হেলান দিয়ে বসা ছিলেন তায়েফ সাইয়িদ। ছেলের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে তিনি। সোজা হয়ে বসতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কোমড়ে ব্যাথা থাকার কারণে সম্ভব হয় না। তুরাগ তাকে সাহায্য করে বসতে। তিনি বসে ধীর স্থির ভাবে জিগেস করে

– মতলব কী?
– কি আবার মতলব বাবা?
– তাহলে এত দিন পর আমার দ্বারে তাও এত নম্র সুরে মেও মেও করছো যে।
– ওফফ বাবা। আমি কি আসতে পারি না এখানে?
– অবশ্যই পারো। তা কি চাই বলো।
– বউ চাই।

– হোয়াট। কিসব বলছো। ঘরে বউ রেখে আবার বউ চাই বলতে লজ্জা করে না বেদ্দপ ছেলে।
– ঘরে বউ নাই বাবা। এজন্যই তো চাই।
– ঘরে বউ নাই মানে?
– ঢং করো না বাবা। আমি জানি তুমি জানো। প্লিজ বলো না বাবা। আমি প্রমিজ করতেছি এবার আর তোমার নাতনির মাম্মামকে কোনো কষ্ট দিবো না বাবা।
নাতনি কথাটা যেনো বারবার কানে বাজতে লাগলো। চোখ চকচক করে উঠলো তার।

– সত্যি আমি দাদা হবো?
– হুম সত্যি। এখন তুমিই বলো তোমার নাতনির মাকে কি বাহিরে থাকতে দেওয়া ঠিক বলো।
চিন্তায় পড়ে গেলেন তায়েফ। তারপর ফিসফিসিয়ে বললেন
– তরু কোথায় তা জানি আমি। কিন্তু তোকে বলা যাবে না। শালা বাবুর বউ না করে দিছে। এখন তোর বউ তুই খুজে বের কর যা।

– ইট্টু ক্লু তো দাও বাবা। নয়ত আমার প্রিন্সেসকে কিন্তু আমি তোমাকে কোলে নিতে দিবো না বলে দিলাম।
– এই না না। আমার নাতনি হবে সে। আচ্ছা আমি বলছি। তরু চট্টগ্রামে আছে। নিয়ে আয় যা। তবে এরপর যদি কোনো ভুল হয় তাহলে তোকেই বাসা থেকে বের করে দিবো।

কে শোনে কার কথা। এক ছুটে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে। পেছনে বসে সস্তুির নিঃশ্বাস ফেললেন তায়েফ সাইয়িদ। প্রিন্স আসুক বা প্রিন্সেস সমস্যা নেই। তার ছেলে যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে এই অনেক। বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন নিয়ে তরুর নাম্বারে ডায়াল করলেন তায়েফ। একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো তরু৷ তায়েফ সাইয়িদ অভিমানি গলায় বলল

– আমার নাতি/ নাতনি আসতেছে মিষ্টি কিনে বিলাতে হবে না। আমি বাজারে যেতে পারছি না একা একা বাসায় আসো তাড়াতাড়ি।
– কিন্তু বাবা তুরা
তরুকে কথা শেষ করতে না দিয়েই তায়েফ বলে উঠলেন

– পাগলটা কাল সারাদিন রাত না খেয়ে না ঘুমিয়ে সারা শহর খুজেছে তোমাকে। এখন আবার ছুটে যাচ্ছে চিটাগং। ফিরিয়ে দিও না মা। ও স্বাভাবিক লাইফ লিড করতে চাচ্ছে। একটা সুযোগ দাও মা।
– জ্বি বাবা আপনি চিন্তা করবেন না।

কফির মগ টেনে ধরে বসে আছে তুরাগ। আর তরু সেটাকে টানতেছে। চোখ বড়বড় করে তাকালো তুরাগের দিকে। তুরাগ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তরুর দিকে। ঝাঝালো কন্ঠে তরু জানতে চাইলো
– কি সমস্যা?

– আসছো পর থেকে তিন কাপ শেষ। আর খেও না প্লিজ। আমার প্রিন্সেস এর ক্ষতি হবে তো।
তুরাগ এর কথায় কফি মগটা ছেড়ে দিয়ে পেটের উপর হাত রাখে তরু। আসলেই তো। এতক্ষণ বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সে এসব। রাগের মাথায় কফি খাচ্ছিল।
– আমাকে কি একবার সুযোগ দেয়া যায় না মিস তরুলতা?

মিস তরুলতা ডাকটা যেনো অদ্ভুত শোনালো তুরাগ এর কন্ঠে। এই ডাকটা কতদিন শোনে না তুরাগের মুখে। এতদিন কতো করে চাইতো তুরাগ এই নামে ডাকুক৷ তুরাগ এর মুখে এই নাম শুনতে কেন জানি ভালো লাগে তরুর। কিন্তু তুরাগ এতদিন ছিল নির্লিপ্ত। আজ মনে মনে তুরাগের এই রুপ দেখে ভীষণ খুশি তরু। তবে উপরে সেটা প্রকাশ করল না। জিগেস করল

– হাতে কিসের খাম দেখি? আবারো ডিভোর্স পেপার নাকি।
তুরাগ বিনা বাক্য ব্যায়ে খামটা তরুর হাতে তুলে দিলো। তড়িঘড়ি করে খুলল তরু। ভেতরের সব কিছু পড়ে স্তব্ধ তরু। কথা বলল না কোনো। তুরাগই বলল

– এই খামটাই পাঠিয়েছিলাম। মেরিনা আন্টি পাল্টে দিয়েছে। আর তুমি বোকার মতো আমাকে একবার ও না জিগেস করে এত দূর অবধি চলে আসছো।
– স্যরি।
– আমার স্যরি কি এক্সেপ্টেড?
– না।
– তাহলে?
– এই রেস্টুরেন্টে সবার সামনে দাড়িয়ে স্যরি বলতে হবে।
– বলতেই হবে?
– হুম।

কি আর করার। বউয়ের আবদার। নাহয় আবার কোথায় যাবে পরে আর খুজেই পাবে না। দাড়িয়ে পকেট থেকে কি যেন বের করলো। হাটু গেড়ে বসে পড়ল তরুর সামনে। হাতে রয়েছে ডায়মন্ড রিং। সেখানে বসেই চেচিয়ে বলল
– আ’ম স্যরি মিসেস তুরাগ সাইয়্যিদ। আর কখনো ভুল করব না প্রমিজ৷ প্লিজ এক্সেপ্ট মাই স্যরি।

অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়ালো তরু। এভাবে কখনো কাউকে স্যরি বলতে দেখেনি৷ ততক্ষণে রেস্টুরেন্টের প্রায় সবার নজর পড়ল ওদের দিকে। তুরাগ তখনো ওভাবেই বসে আছে৷ কেউ কেউ চেচিয়ে সমস্বরে বলতে লাগল
– ফরগিভ হিম। ফরগিভ হিম।
সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো তরু। আংটিটা পড়িয়ে দিলো তুরাগ। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে সবার সামনেই পাজাকোলে তুলে নিলো তরুকে। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো তরু। ফিসফিস করে বলল

– নামান আমাকে। লজ্জা লাগছে না আপনার।
– আমার বউকে আমি কোলে নিছি। তো কি হয়েছে।
আমার বউ। কথাটায় যেনো মা’দক’তা আছে চুপ হয়ে গেলো তরু। চোখ বন্ধ করে লেপ্টে রইল তুরাগের বুকে। একদম পার্কিং লটে এসে তরুকে নামালো তুরাগ৷ গাড়ির দরজা খুলে আবারো কোলে তুলে তরুকে গাড়িতে বসালো।
– আরে করছেন টা কি৷ আমি কি বাচ্চা নাকি।

– না। তবে আমার বাচ্চা আছে না এখন তোমার সাথে। তাই তার যত্ন নিচ্ছি।
কথাগুলো শুনে খিলখিলিয়ে হাসল তরু। সেদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তুরাগ। এরপর দেখা গেলো ক্ষনিকের নিরবতা৷ নীরবতা ভেঙে তুরাগই বলল

– তুমি যদি অনুমতি দাও আমি কি আমার প্রিন্সেসকে একটু অনুভব করতে পারি?
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো তরু। সিটে বসেই তরুর দিকে ঝুকে পেটের উপর কানে গুজে চুপ করে রইল। অনুভব করার চেষ্টা করলো কারো অস্তিত্ব। তরু যেনো এই মুহুর্তে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছে। আঙুল চালালো তুরাগের চুলে। শান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো

– তার আগমনে আপনি কি খুশি গায়ক সাহেব?
সেভাবে থেকেই তুরাগ জবাব দিলো
– আমি আমার অনুভূতি গুলো বলে প্রকাশ করতে পারব না তরু। বাবা হওয়া যে এতটা সুখের আমি কোন দিন কল্পনাও করিনি৷ আমার প্রিন্সেসকে আমি কখনো দুঃখের স্পর্শ লাগতে দিব না। সারাজীবন আগলে রাখবো তাকে।
মুচকি হাসলো তরু।

তবে তার অবচেতন মন জানতে চাইলো তুরাগ কি সত্যি মিথিকে ভুলতে পারছে। নিজেই নিজের মনকে ধমকালো তরু। এরকম একটা মুহুর্তে এসব কথা টানা কি খুব দরকার৷ কোনো দরকার নেই এসব টানার৷ আল্লাহ কার ভাগ্যে কি রেখেছেন তা তিনিই জানেন। হয়ত তিনি চেয়েছেন এরকম একটা পরিনতি৷ নিরবতা ভেঙে তুরাগ আবারো বলল

– আমাদের সংসারে #ভালোবাসার_বর্ষণ হয়ে ঝড়তে আসতেছে আমার প্রিন্সেস। আমি তাকে খুব খুব খুব ভালোবাসব দেখো। সে যা চাইবে সব দিবো। আমার আম্মা তো নেই। তাই আমার ছোট আম্মা আসবে দেখো। একদম আমার আম্মার মতো হবে।
কিছু বলল না তরু। উপভোগ করতে লাগল মুহুর্তগুলো। কিছু কিছু সময় মনে হয় সময় এখানে থমকে গেলেই মনে হয় ভালো হতো। এরকমটাই এখন মনে হচ্ছে তরুর। এরকম মুহুর্তগুলো লাইফে বারংবার ফিরে আসুক৷

ভালোবাসার বর্ষণ শেষ পর্ব (১ম  অংশ) 

[ আবিরের কাহিনি এই গল্পে পুরোপুরি শেষ হয়নি৷ তার শাস্তি পাওয়া। তাদের পুরো গ্যাংকে ধরা৷ এটা লিখতে গেলে এই কাহিনিটা আমি শেষ করতে পারতাম না৷ তাই এই কাহিনি নিয়ে পুরো নতুন একটা সিজন আনব৷ তবে সেটা দেরী আছে। তখন হয়ত এই সব পাঠকদের পাবো না। তবুও। আর ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়।
এতদিন যারা সাথে ছিলেন, সমর্থন করেছেন তাদের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। আসসালামু আলাইকুম। ]

সমাপ্ত