ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৩১

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৩১
নীহারিকা নুর

রাতের নিস্তব্ধতা কে’টে গিয়েছে বেশ কিছু সময় হলো। চারদিকে পাখির কিচির মিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। মিষ্টি সুৃমধুর কন্ঠধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেল তরুর। ঘুম ভাঙতে নিজেকে নতুন একটা জায়গায় আবিষ্কার করল। তার মাথা বালিশে নেই। সে মাথা তুলে দেখার চেষ্টা করল কোথায় আছে।

মাথা তুলেই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। চোখের সামনে ভেসে উঠল তুরাগের লোমস বুক। চোখ বন্ধ করে আবার কিছু সময় পড়ে রইল আগের মতো। চোখ সম্মুখে ভেসে উঠল গত কাল রাতের কিছু দৃশ্য। তুরাগ ড্রাঙ্ক অবস্থায় কাছে টেনে নিয়েছিল। প্রথমে চেয়েছিল বাধা দিতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরমুহূর্তে কিছু একটা ভেবে বাধা দিলো না তুরাগকে। স্বামীর আহ্বানে সারা দেয়াটা পাপের নয়। কিন্তু এখন বেশ লজ্জা লাগছে। কাল রাতে তো তুরাগ ড্রাঙ্ক ছিল। কিন্তু এখন। এখন তো সজ্ঞানে থাকবে। এটা ভেবেই লজ্জায় চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো তরু। তখনি কানে ভেসে আসল তুরাগের কন্ঠ। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। মাথা তুলে সেদিকে তাকালো তরু। তুরাগ কি বলছে বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু কথাগুলো অস্পষ্ট। কানটা এগিয়ে নিলো তুরাগের মুখের সামনে। বোঝার চেষ্টা করল তুরাগ কি বলার চেষ্টা করছে। আস্তে আস্তে কথাগুলো স্পষ্ট হলো-

– যেও না মিথিলা। প্লিজ। যেওনা।
অস্পষ্ট স্বরে বলা কথাগুলো বুকের মধ্যে যেন তীরের মতো বিধছে। কিছু সময় আগেও তুরাগকে নিয়ে ভাবা অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে যেন ফিকে রঙ ধারণ করছে। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল তরু। বেডশিটটা টেনে নিয়ে তা জড়িয়ে উঠে গেলো তুরাগের পাশ থেকে।

প্রায় ঘন্টাখানিক সময় পড়ে ঘুম ভাঙল তুরাগ এর। বোঝার চেষ্টা করল কোথায় আছে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল নিজের রুমেই আছে। পুরো শরীর ব্লাঙ্কেটে আবৃত। উঠে বসল তুরাগ। নিজের দিকে নজর যেতেই আতকে উঠল। এক সুতো কাপড় ও নেই। নিজেকে আবার ব্লাঙ্কেটে আবৃত করে নিলো। রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখার চেষ্টা করল তরু কোথাও আছে কিনা। না তরুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ফোস করে শ্বাস ছাড়ল তুরাগ। মনে করার চেষ্টা করতে লাগল কাল কি হয়েছিল। অস্পষ্ট ভাবে মনে পড়ছে। তবে পুরোপুরি কিছুই মনে করতে পারছে না। সব কিছুই আবছা লাগছে। মাথা চেপে ধরল তুরাগ। কোনমতেই সবটা মনে করতে পারছে না। ব্লাঙ্কেট জড়িয়েই চলে গেলো ওয়াশরুমে।

পুরো রুম খুজে কোথাও পেল না তরুকে। বেলকনির দরজাও লাগানো। তার মানে ওখানেও যায়নি। দৌড়ে ছাদে গেল তুরাগ। নাহ ছাদেও নেই। ঘাবড়ে যায় তুরাগ। অবচেতন মন বারবার জানান দিচ্ছে তরু হয়ত চলে গেছে। কাল রাতে হয়ত ভুল কিছু হয়ে গেছে তরুর সাথে। বারবার এটাই মনে হচ্ছে যে তরু এ বাসায় নেই। কি করবে তুরাগ। তরুকে স্ত্রীর অধিকার না দিলেও তরু তার স্ত্রী।

তাকে দেখে রাখটাও দায়িত্ব। পা গুলো যেনো অসাড় হয়ে আসছে। নিচে নেমে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছে না। পা টেনে টেনে নামল নিচে। উদ্দেশ্য তুরফার রুম। এখন তরুর কথা জিজ্ঞেস করার মতো তুরফা ছাড়া আর কাউকে নিরাপদ মনে হলো না৷ তুরফার রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে রইল কিছু সময়। মনে সাহস জুগিয়ে টোকা দিলো তুরফার দরজায়। কয়েকবার টোকা দিতেই ভেতর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ এলো। তুরাগ মনে মনে গুছিয়ে নিলো কীভাবে তুরফাকে তরুর কথা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু তুরাগকে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলল তরু। তরুকে দেখে ভেতর থেকে সস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। কি জিজ্ঞেস করবে খুজে পেল না। সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো

– তুরফা কোথায়?
– আপু ওয়াশরুমে গেছে।
– ওহ আচ্ছা। তুমি রুমে আসো। কথা আছে।
কথা আছে কথা শুনে চমকালো তরু। এখন আবার কি জিজ্ঞেস করবে এই লোক। কাপা কাপা পায়ে হেটে আসে তুরাগ এর পিছু পিছু। তুরাগ রুমে ঢুকে দরজার সামনেই দাড়িয়ে ছিল। তরু রুমে ঢুকতেই দরজার সিটকিনি টেনে দিল। কেপে উঠল তরু। তরু তবুও মনকে শক্ত করলো। কিছু বলবে না মানে না। সে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো রুমের মাঝ বরাবর।

– তরু
চোখ খিচে বন্ধ করে রেখে মনে মনে আল্লাহ নাম জপ করছো তরু। আর খুব করে চাইছে তুরাগ যেন গতকালের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করে।
– তরু তাকাও আমার দিকে।
এবার বিনাবাক্য ব্যয়ে তুরাগের দিকে ঘুরে তাকালো তরু।

– আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তোমাকে
– হুম
– কাল রাতে কি
তুরাগকে কথা শেষ করতে না দিয়েই তরু বলা শুরু করে
– কাল আপনি হয়ত স্যাড ছিলেন। তাই প্রচুর পরিমাণে ড্রিংকস করেছেন। অনেক রাতে বাসায় ফিরেছেন। আমি আপনাকে রুমে এনে শুয়িয়ে দিয়েছি। আর কিছু না।

– সত্যি কি তাই?
– হ্যা হ্যা।
– তবে বেডশিট কেন চেন্জ করেছো?
মেজাজ খারাপ হয় তরুর। এই বেডা এমন খ২০ কেন।
– কি হলো

– আপনি ব’মি করেছিলেন তাই চেন্জ করে দিছি।
– ওহ আচ্ছা। তাহলে ড্রেস?
– বমি করেছেন বলেই।
– লজ্জা শরম কি সব খেয়ে ফেলেছো নাকি।
এই মুহুর্তে ভীষণ লজ্জা লাগছে তরুর। নির্লজ্জ লোক। সেখান থেকে পালানোর পথ খুজে তরু।
– আচ্ছা আমি আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। বাবাও তো আজ অফিসে যাবে মনে হয়। আমি দেখে আসি।
– হুম।

ব্যাস্ত পায়ে রুম ছাড়ে তরু। তরু বেড়িয়ে যেতেই ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে তুরাগ। মাথা একদম কাজ করছে না। আবছা আবছা যে মুহুর্ত গুলো মনে পড়ছে সেগুলো একদম বাস্তব মনে হচ্ছে। এদিকে তরু বলছে অন্য কথা। এদিকে হসপিটালের এরকম নিউজ। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে। এই মুহুর্তে কি করা উচিত তুরাগের। মনে মনে মিলাতে থাকে অনেক হিসেব। এভাবেই পার হয়ে যায় অনেক সময়।

এক প্রকার ভাবনার মাঝেই ডুবে মাঝে তুরাগ। হঠাৎ কারো চিতকারের শব্দ কানে আসতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে তুরাগ। কন্ঠটা তরুর মনে হলো। তুরাগ আবারো কান খাড়া করে রাখে শোনার জন্য। আসলেই কি ঠিক শুনেছে নাকি ভুল। আর কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

তবুও কি হয়েছে দেখার জন্য রুম থেকে বের হয় তুরাগ। রুমের সামনে আসতেই মেরিনা বেগমের রুম থেকে চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। সেদিকে পা বাড়ায় তুরাগ। রুমের সামনে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ। ফ্লোরে পা বিছিয়ে বসে আছে তরু। তুরফা উবু হয়ে সমানে ফু দিয়ে যাচ্ছে তরুর পায়ে। ঠোট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতেছে তরু। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গাল বেয়ে নামছে। এরকম দৃশ্য দেখে খারাপ লাগে তরুর। কিন্তু কি হয়েছে এখানে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না৷ দ্রুত পায়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে তুরাগ। তুরফাকে সরতে বললে বিনাবাক্য ব্যয়ে সরে যায় তুরফা। তরুর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে পায়ের পাতা লাল হয়ে গেছে।

– পুড়েছে?
– হুম ভাইয়া
– আইস কিউব লাগিয়েছিস?
– না
– গাঁধি। তাড়াতাড়ি আইস কিউব নিয়ে আমার রুমে আয়। পুড়ে গেলে ঠান্ডা কিছু লাগাতে হয় জানিস না।
তুরাগ এর আদেশ মতো তাড়াতাড়ি আইস কিউব আনতে ছুটে যায় তুরফা। নুয়ে পাজাকোলে তুলে নেয় তরুকে। বের হওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াবে সে সময় কিছু তিক্ত কথা পা দুটো থামিয়ে দেয় তুরাগ এর।

– আমার মেয়েটা হসপিটালে ওভাবে পড়ে আছে আর তুমি বউকে নিয়ে ফুর্তি করতেছো। ভালোই। সব পুরুষ মানুষ এক। তুমি কোনদিন আমার মেয়েকে ভালোই বাসোনি। আমার মেয়েটাই বোকা। ওর এখন এসে দেখা উচিত তার প্রিয়তম এখন অন্য মেয়ে নিয়ে ব্যাস্ত।

কথাগুলো শুনে চোখ বন্ধ করে নেয় তুরাগ। জোরে শ্বাস নিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যোত হতেই শার্টের কলার খামচে ধরে তরু। তরুর দিকে তাকাতেই মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে তুরাগ। পা বাড়ায় রুমের দিকে। আগে পায়ের ব্যাবস্থা করতে হবে। মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।
বিছানার উপর চোখ বন্ধ করে বসে আছে তরু। তার সামনেই হাটু মুড়ে বসে পায়ে আইস কিউব লাগিয়ে দিচ্ছে তুরাগ। তার পাশেই দাড়িয়ে আছে তুরফা।

– ওর পা পুড়লো কীভাবে?
গম্ভীর কন্ঠ শুনে কেপে উঠে দুজনই। তুরফা আমতা আমতা করে বলে
– এ এমনি।

ভালোবাসার বর্ষণ বোনাস পর্ব 

– এমনি কীভাবে পুড়ছে? সত্যিটা বল।
– আসলে ভাইয়া ওই আন্টির জন্য গরম স্যুপ করে নিয়ে গেছিল তরু। তিনি কাল থেকে কিছু খাননি। এখনো খাবেন না বলছিলেন। তাই তরু জোর করে। আর তখনি তিনি হাত ঘুরিয়ে স্যুপের বাটি ধরে ধাক্কা দেয়। আর সেটাই পায়ে পড়ছে।
হাত মুঠো করে নেয় তুরাগ।

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৩২