মধুবালা পর্ব ১৮

মধুবালা পর্ব ১৮
ফারজানা আক্তার

ছোঁয়া আমতা আমতা করছে। লিলি এক ছুটে চলে যায় সেখান থেকে। শুভ্র কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে লিলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোঁয়াকে জিজ্ঞেস করে লিলির এভাবে চলে যাওয়ার কারণ। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নেয় আর ভাবে এটাই সুযোগ যদি একবার শুভ্রকে বলে রাজি করানো যায় তবে আলিফ স্যারকে বড় আব্বুও মেনে নিবেন।

শুভ্র ভাই বংশের একমাত্র ছেলে হওয়ায় শুভ্রর কথার গুরুত্ব দেয় সবাই। শুভ্রকে হারানোর ভয় আছে সবার বুক জুড়ে কারণ হলো শুভ্র ভাইয়ের জেদ। ছোঁয়ার থেকেও শুভ্র ভাইয়ের জেদ বেশি।
ছোঁয়া নরম কন্ঠে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো “চলো একটু বাহিরে যায়। সকালের হাঁটাহাঁটিও হয়ে যাবে আর আমাদের কথাও হবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি ব্যাপার আজ যে কারো রেজাল্ট দিবে সে খবর কী আছে? কারো দেখি রেজাল্ট নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।”
তারপর ছোঁয়া শুভ্র কে জায়েদা বেগমের বলা কথাগুলো বললো। কথা বলতে বলতে বাড়ির গেট ক্রস রে পিচঢালা রাস্তার পাশে হাঁটতে লাগলো দুজন।
“কিরে বল? তখন লিলি পালালো কেনো আর তোরা কার কথা বলছিলি যেনো?
ছোঁয়া সত্যি করে বল লিলি কারো প্রেমে পরেনি তো?”

শুভ্রর কথা শোনে হালকা একটা ঝা’ট’কা খেলো যেনো ছোঁয়া। এবার তো ছোঁয়ার মনে ভয় ঢুকে গেলো। শুভ্রকে সব কিভাবে গুছিয়ে বলবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরে ছোঁয়া। শুভ্র একটু জোরে ডাক দিতেই ছোঁয়া হুঁশে ফিরে।
তারপর আমতা আমতা করে বলে “ওই যে সামনে একটা পার্ক আছে, চলো ওখানে বসে বলি কথা।”
“হুম তা ঠিক আছে কিন্তু তুই এতো ঘামছিস কেনো হঠাৎ? ”

“তুমিওনা কিছুই বুঝোনা। একেতো গরম তারপর এতক্ষণ হাঁটলাম তাই ঘাম হয়েছে একটু।”
“মাথা ঠিক আছে তোর নাকি পাবনার পাগলা গারদে সিট একটা বুকিং করতে হবে?”
“ম ম মানে?”

“মানে এই শীতে তোর জন্য গরম আসলো কোন গ্রহ থেকে?। যাইহোক বাদ দে। চল বসি।”
ছোঁয়া আর ভনিতা না করে বসে পরলো একটা কাঠের বেঞ্চে। শুভ্র ছোঁয়ার পাশে বসে বলে “এবার বল সব ক্লিয়ার করে।”

ছোঁয়া চারপাশে চোখ বুলালো। কিছুটা দূরে একটা বাদামওয়ালা দেখতে পেলো ছোঁয়া। একটু ভেবে ছোঁয়া নরম কন্ঠে বলে “শুভ্র ভা…. না মানে আমি বলছিলাম কী বাদাম ওয়ালা।”
কথাটুকু বলেই ছোঁয়া একটা শুকনো ঢুক গিলে। শুভ্র ভ্যাবাছ্যাকা খেয় যায়। চোখ রাঙিয়ে শুভ্র বলে “যা বলার স্পষ্ট করে বল।”

“বাদাম খাবো। ওই যে বাদামওয়ালা।”
“তা বললেই তো হয়। এতো ন্যাকামু করার কী দরকার?”
বলেই শুভ্র বাদাম আনার জন্য বসে থেকে উঠে পা বাড়ায়। এর মাঝেই ছোঁয়ার ফোনে কল আসে তানহার। ছোঁয়া কল রিসিভ করতেই তানহার কান্নার শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে ছোঁয়ার। ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে বলে “এই তানহা কাঁদছিস কেনো এভাবে? কি হয়েছে বল আমায়।”

“রকি জার্মান চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য। সেখানেই নাকি সেটেল হয়ে যাবে। আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ও আমায় কখনও ভালোবাসতে পারবেনা।
আমি আর পারছিনারে এভাবে বাঁচতে। রকিকে না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। রকি তোকে এখনো প্রচন্ড ভালোবাসে, প্লিজ তুই বল একবার ওকে। ও নিশ্চয়ই তোর কথা শুনবে। আমার কোনো কথা-ই শুনছেনা রকি। আমি পাগল হয়ে যাবো রে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে কান্না থামা তুই আগে। আগামী তিন ঘন্টার মধ্যে রকি তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। তৈরি হয়ে থাক। আজকেই তোদের বিয়ে হবে। তোর মা বাবা তো এমনিতেই জানে রকিকে তুই ভালোবাসিস আর রকির মা বাবাকে রাজি করার দায়িত্ব আমার।”
এটা বলেই কল কে’টে দিলো ছোঁয়া। ছোঁয়া বুঝতেছেনা কি করবে এখন। দুই দুইটো দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে অথচ মাথা শূন্য হয়ে আছে।

শুভ্র বাদাম নিয়ে এসে দেখে ছোঁয়া থ মে’রে বসে আছে। শুভ্র বাদামের ঠুঙা এগিয়ে দিয়ে বলে “কিরে হঠাৎ দেবদাসী হয়ে আছিস কেনো? তোর বয়ফ্রেন্ড রকি ছ্যাকা ট্যাকা দিলো নাকি?”
ছোঁয়া কিছু না বলে হা হয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র আবারো বললো “কিরে ছ্যাকা খেয়ে স্মৃতি হারিয়েছিস নাকি মধুবালা?”

“না মানে একটা কাজ আছে আমার। তুমি বাসায় যাও আমি সন্ধ্যায় চলে আসবো?”
“মানে কী? যাবি কই একা একা তাও সারাদিনের জন্য?”
ছোঁয়া আর কোনো পথ খোঁজে না পেয়ে শুভ্রকে সব খুলে বললো। শুভ্র কুটকুট করে হেঁসে ফেলে। কিন্তু রকির জন্য একটু মন খারাপও হয়। বেচারা রকির তো কোনো দোষ নেই। সে তো আর জানতোনা ছোঁয়ার জন্ম শুভ্রর জন্য। বড্ড বেশি বোকা রকি নামের ছেলেটা। শুভ্র ভাবছে আর হাসছে। শুভ্রর হাসিতে ছোঁয়া ভীষণ বিরক্ত।

ছোঁয়া রকির মা বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। শুভ্র বসে বসে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে। ছোঁয়ার প্রেমে যেনো শুভ্র নতুন করে পরছে আবারো। রকির মা বাবাকে রাজি করাতে তেমন কষ্ট করতে হয়নি কারণ তানহাকে আগে থেকেই চিনেন উনারা রকির ফ্রেন্ড হিসেবে। আর তানহার পরিবারও বেশ ভালো। তাই চট জলদি রাজি হয়ে যান রকির মা বাবা। তানহার পাগলামি গুলো কেনো জানি শুভ্রর মনে ধরেছে খুব। কতটা ভালোবাসলে একটা মেয়ে একটা ছেলের জন্য এমন পাগলামি করতে পারে শুভ্রর জানা নেই। সত্যিই শুভ্র খুব অবাক হচ্ছে রকির ভাগ্য দেখে। কয়জনের ভাগ্যেই বা জুড়ে এমন ভালোবাসা অথচ রকি পেয়েও হারাতে বসেছে।

রকি নিজের রুমে কাপড়চোপড় টলিব্যাগে গুছিয়ে রাখছে। সন্ধ্যার আগে রওনা হতে হবে তাকে তাই দ্রতভাবে হাত লাগাচ্ছে সে। ছোঁয়া কয়েকবার টুকা দিতেই রকি বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে দরজা খুলে ছোঁয়াকে দেখে অবাক। কাঁপা কাঁপা হাতে রকি দরজা বন্ধ করতে যেতেই শুভ্র তার নজরে পরে।

শুভ্রকে রকি অনেকবার দেখেছে কলেজে তাই চেনাজানা আছে। হঠাৎ ছোঁয়া আর শুভ্রকে দেখে রকির কথা মুখে আঁটকে যাচ্ছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে “কিরে ছোঁয়া বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলি নাকি? কিন্তু দাওয়াত দিয়েও যে কোনল লাভ হবেনা। রাত নয়টাই আমার ফ্লাইট। জার্মান চলে যাচ্ছি, একটা ভালো কাজের অফার এসেছে তাই আর দেরি না করে চলে যাচ্ছি। জানা নেই ফিরবো কবে, হয়তো আর নাও ফিরতে পারি।”

“এখানে দাঁড়িয়েই কী সব কথা বলবি নাকী? ভেতরে যেতে ডাকবি না?”
“আরে কী বলিস ডাকবোনা কেনো? আয়। যাওয়ার আগে তোকে দেখবো ভাবতে পারিনি। ধন্যবাদ আসার জন্য। ”
“তা তুই যে চলে যাচ্ছিস পড়ালেখার কী হবে তোর? আজকে তো রেজাল্ট দিবে।”
“হু রেজাল্টের জন্যই তো রাতের টিকিট নিয়েছি। আমি জার্মানে একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে সেখানেই করবো পড়ালেখা। আজ কলেজে যাবো, সবার সাথে শেষ দেখা করে আসবো। ৩০মিনিটের মধ্যে তো কলেজে যেতে হবে। যাবিনা তুই?”

“যাবো। কিন্তু তুই কোথাও যাচ্ছিস না। তুই দেশেই থাকবি। দরকার হলে তোর হাত পা বেঁ’ধে খাটের নিচে বন্দি করে রাখবো তোকে, তারপর দেখি জার্মান না ফার্মান কেমনে যাস তুই। শা’লা তুই জানিসনা তানহা তোর জন্য সন্যাসী হয়ে ঘুরছে? কীভাবে ওকে রেখে চলে যাচ্ছিস?

এতো সেতো কিছু বুঝিনা, তুই আজকেই তানহাকে বিয়ে করবি ব্যাস। আঙ্কেল আন্টি রাজি আর তুই যদি অমত করিস তবে তোর মাথায় গুনে গুনে পঞ্চাশ টা ডিম ভা’ঙ’বো আমি দেখে নিস।”
রকি আর শুভ্র দু’জনেই হা হয়ে আছে ছোঁয়ার কথা শোনে।
ছোঁয়া ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে।

মধুবালা পর্ব ১৭

রকি হঠাৎ বলে উঠে “একজনে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে ঘর বাঁধতে আমি পারবোনা। সরি, ক্ষমা করে দিস পারলে আমায়। আমি রাখতে পারবোনা তোর কথা।”
রকির কথা শোনে তেলে বেগুনে রে’গে উঠে ছোঁয়া থা’প্প’ড় দিতে হাত তুলতেই_____

মধুবালা পর্ব ১৯