মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২১

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২১
সাদিয়া জাহান উম্মি

গতকাল যে মুষুলধারে বৃষ্টি হয়েছিলো,ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় একপ্রকার সব লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।তার এখন লেশ মাত্র নেই।উল্টো মনে হচ্ছে গতকালকের সেই বৃষ্টির কারনে সূর্য তার তেজের প্রখরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইহান অথৈকে নিয়ে ভার্সিটিতে মাত্রই পৌছালো।ইহান অথৈকে আনতে চায়নি।ওর শরীর ভালো না।কাল কি ভয়ানক জ্বরটাই না বাঁধিয়েছিল মেয়েটা।

তাই বলেছিলো আজকে বিশ্রাম নিতে।কিন্তু এই ঘ্যাড়ত্যাড়া মেয়ে শুনলে তো? যেই বন্ধুরা ফোন করে বলল ওরা আজ ভার্সিটিতে আসবে।সেটা শুনে নিজেও জোড় জবরদস্তি করে এসেছে আজ।তাই রাগ দেখিয়ে কথা বলছে না ওর সাথে।অথৈ বাইক থেকে নামলে ইহানও নেমে দাঁড়ায়।অথৈ হাসে ভাইয়ের মুখ ফোলানো দেখে।চট করে ভাইকে জড়িয়ে ধরল।ইহান হকচকিয়ে গেল।তারপর নিজেও দুহাতে বোনকে আগলে নিল।অথৈ আহ্লাদী স্বরে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ভাইয়া রাগ করে থাকবি না একদম।তুই রাগ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।আর যদি এমন মুখ ফুলিয়ে রাখিস তো আমি গিয়ে ইচ্ছে মতো আইসক্রিম খাবো।তারপর আবারও আমার জ্বর আসবে।তখন তুই খুশি থাকিস।’
অথৈয়ের কথায় ইহান অথৈকে বুক থেকে সরিয়ে আনলো।রাগ দেখিয়ে বলে,’ আর একবার যদি উল্টোপাল্টা কথা বলিস তো খবর আছে।’

‘ তাহলে আর রাগ করে থাকবে?বলো?’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইহান।বোনের সাথে না পেরে বলে,
‘ আচ্ছা আর রাগ করে থাকব না।তবে এক শর্তে তুই সাবধানে থাকবি।আর নিজের খেয়াল রাখবি।আর হ্যা বেশি খারাপ লাগলে আমায় সাথে সাথে জানাবি কিন্তু।’
‘ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।এতো চিন্তা করো না তো।এখন আমি যাই ঠিক আছে?’
‘ আচ্ছা যা।সাবধানে কিন্তু।’
‘ ওকে।’

ইহান চলে গেল বন্ধুদের কাছে।আর অথৈ সামনের দিকে হাটা ধরল।জ্বরের রেশ এখনও কাটেনি।তাই হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।এইজন্যে আস্তে আস্তে হাটছে ও।এতোক্ষণ দূর থেকেই অথৈয়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রিক।মেয়েটার কাল কি জ্বর‍টাই না এসেছিলো।আর এই মেয়ে আজ বাসায় বিশ্রাম না করে ভার্সিটিতে এসেছে।মন তো চাচ্ছে এখনই গিয়ে কয়েকটা চ’ড় মেরে আসতে।

কিন্তু তা কোনোদিন রুদ্রিক পারবে না।কারন এই মেয়েটার গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগলে। তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়ে যায়।এই মেয়েটা তার অস্তিত্ব। আর নিজের অস্তিত্বের গায়ে কেউ কিভাবে হাত উঠাতে পারে?উহু, রুদ্রিক তা কোনোদিন পারবে না।কিন্তু রাগটাকেও তো সামলাতে পারছে না।মারতে পারবে না ঠিক আছে।কিন্তু যে করেই হোক আজ এই মেয়েকে দু চারটা ধমক তো সে অবশ্যই দিবে।শুধু বাগে পেয়ে নিক একবার।এদিকে ইহান এসে দাঁড়ালো ওর পাশে।বলে উঠল,

‘ কিরে কি দেখছিস ওদিক তাকিয়ে?’
রুদ্রিক তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ইহানের দিকে।এমন দৃষ্টিতে ইহান ভড়কে গেল।রুদ্রিক রাগে হিসহিস করে বলে,
‘ তোর গাধি বোনকে দেখছি।ও যে অসুস্থ্ সেটা কি ও জানে নাহ?এই অবস্থায় আজ ভার্সিটি এসেছে কেন?নাকি সে একাই স্টাডি করে একেবারে উলটে দিবে সব?’

ইহান নাক-মুখ কুচকে বলে,’ এহহ! একদম আমাকে রাগ দেখাবি না।আর তাছাড়া তুই নিজেও ভালোভাবে জানিস।অথৈ যেই পরিমানে ঘ্যাড়ত্যাড়া।ও যা বলবে তাই করে।তোর কি মনে হয় আমি কি ওকে শখের বসে নাঁচতে নাঁচতে এখানে নিয়ে এসেছি?সে আমাকে,বাবাকে আর মা’কে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে আজ জোড় করে ভার্সিটিতে এসেছে।’
রুদ্রিক আবার দৃষ্টি তাক করল অথৈয়ের দিকে।মেয়েটা কেমন আস্তেধীরে হাটছে।নিশ্চয়ই শরীরটা অনেক দূর্বল।তাই তো এইভাবে হাটছে।রাগটা তরতর করে বাড়তে লাল রুদ্রিকের।দাঁতেদাঁত চিপে বলল,

‘ ওকে তো দেখে নিব।ছুটোচ্ছি ওর ঘ্যাড় ত্যাড়ামি।’
হঠাৎ সাফাত বলে উঠল,’ কিরে তোরা দুইটা কি ফুসুরফাসুর করছিস?’
ইহান বলল, ‘ এমনি কথা বলছিলাম।তেমন কিছু না।হ্যা রে অনিক কই?’

অনিকের কথা উঠাতেই নীল বলল,’ আর বলিস না ব্যাটা যে কি চায় সে নিজেও জানে না।সিয়াকে ভালোবাসলে বলে দিতে পারে নাহ?শুধু কেন মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছে?নিজেও কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটাকেও দিচ্ছে।আমি বললাম যা সিয়াকে গিয়ে মনের কথা বলে দে।সে তো শুনলই না।কেমন খাম্বার মতো কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এখন কই জানি চলে গিয়েছে।’

রুদ্রিক কিছু একটা আঁচ করতে পারল।পর পর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে,’ ও সিয়ার কাছেই গিয়েছে।’
ওর এমন কথায় সাফাত অবাক হয়ে বলে,’ তুই কিভাবে বুঝলি?’
‘ ইটস ম্যাজিক।’ বলেই রুদ্রিক হাসল।

সিয়া লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়ছে।সামনে অনার্স ফাইনাল এক্সাম তাদের।পড়াশোনায় এমনিতে বেশ ভালো সিয়া।কিন্ত্য অনিকের সাথে ব্রেক-আপ হওয়ার পর থেকে পড়ালেখার প্রতি অতো একটা ধ্যান দেয়নি সে।কিন্তু পরিক্ষা প্রায় ঘনিয়ে আসছে।স্যারের মুখে এই কথা শুনে সবকিছু ভুলে গিয়ে পড়াশোনায় পুরো দমে মন দিতে চাইছে সে।এতে যদি অনিককে ভুলে থাকা যায়।কিন্তু বেহায়া মন মানলে তো?

ক্ষণে ক্ষণেই অনিকের কথা মনে করিয়ে দেয় ওকে।এতে নিজের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে সিয়া পড়ার মাত্রা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।চায় না সে আর কিছু মনে করতে।অনেক তো হলো।প্রায় একবছর হতে চলেছে।অনিক তো দিব্যি লাইফটা এঞ্জয় করছে। তাহলে ও পারবে না কেন?পারতে হবে তাকে।কিন্তু মনের সাথে কি কেউ জোড় করে পারে?একবার যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে।তাকে কি ভোলা এতোটাই সহজ?

সাহজ না হলেও যে তাকে এটা করতেই হবে।আর কতোকাল পিছুটাব বয়ে বেড়াবে?সিয়া দিক বেদিক ভুলে পড়তে লাগল।সে বিন্দু মাত্র টের পায়নি তাকে এতোক্ষণ যাবত কেউ গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলো।অনিক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে সিয়ার দিকে।রিলেশন থাকা কালিন সময়েও অনিক এতোটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি সিয়াকে।যতোটা না এই ইদানিং ধরে করছে।আর তখন করবেই বা কিভাবে?

তার আসল সৌন্দর্যযে ঢাকা পরে থাকতে ভারি মেক-আপের আস্তরনে।আর আজ দেখো একদম সাধারনভাবে আছে মেয়েটা।আজ সিয়া গোলাপি রঙের একটা গোল জামা পরেছে,চুলগুলো পনিটেইল বাধা,তার ছোটো চুলগুলো অবাধ্য হয়ে কপালের উপর পরে আছে,চোখে কাঁজল টানা,আর ঠোঁটে লিপগ্লস লাগানো।এতেই যেন অমায়িক সুন্দর লাগছে সিয়াকে।চোখ ফেরানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।অনিক সিয়ার সৌন্দর্যে এতোটাই মোহিত হয়েছে যে ও বেশ জোড়েই মুখ ফোসকে বলে ফেলে,’ মাশা-আল্লাহ! একদম আমার মনের রানির মতো লাগছে।’

এদিকে আকস্মিক অতি কাছের চেনা মানুষটার কণ্ঠস্বর শুনে যতোটা না সিয়া চমকালো।তার থেকে বেশি চমকালো তার মুখে এমন এক বাক্য শুনে।অবিশ্বাস্যভাবে দৃষ্টি তাক করল অনিকের দিকে।হঠাৎ সিয়ার এহেন দৃষ্টিতে অনিক থতমত খেয়ে যায়। এতোক্ষণে তার হুশ আসল।সে সিয়াকে দেখতে দেখতে এতোটাই ঘোরে চলে গিয়েছিল যে সে যে বেশ জোড়েসোড়েই মনের কথাটা বলে ফেলেছে।তা খেয়ালই করেনি।সিয়া অনিককে নিজের পাশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো।বলল,’ তুমি…মানে আপনি এখানে কেন?’

অনিক ভ্রু-উঁচু করে বলল,’ কেন এখানে আসতে সমস্যা আছে নাকি?লাইব্রেরিটা কি তোর একার? আর কিসের আপনি আপনি করছিস?থাপ’ড়িয়ে গাল লাল করে দিবো।’
অনিকের এহেন ব্যবহারে যেন আকাশ থেকে পরল সিয়া।এই অনিকের কি হলো?সে আজ যেচে এসে ওর সাথে কথা বলছে?এই ছেলের মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেলো না তো আবার? সিয়া ভয়ে ভয়ে বলে,’ আপনার কি কিছু হয়েছে?অসুস্থ আপনি?নাহলে এইভাবে কথা বলছেন কেন?’

অনিক কেমন করে যেন তাকালো সিয়ার দিকে।তারপর হুট করে ঝুকে আসল সিয়ার দিকে।এতে সিয়া ভয় পেয়ে দ্রুত মাথা পিছনের দিকে নিয়ে যায়।হাত দুটো বুকের কাছে এনে গুটিয়ে নেয়।অনিক এইভাবে কাছে আসায় ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে।হাত পা কাঁপছে।তোলপাড় হচ্ছে বুকের মাঝে।হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিকভাবে দৌড়াচ্ছে।সিয়া কাঁপা গলায় বলে,’ কি করছেন?’

‘ শুনবি না আমার কি হয়েছে?’
সিয়া পিটপিট করে তাকালে।অনিক শীতল কণ্ঠে বলে,’ আমি ভীষণ বাজে একটা রোগে আক্রান্ত হয়েছি।যার থেকে নিস্তার নেই আমার। একবিন্দুও নিস্তার নেই।প্রতিনিয়ত সেই রোগটা আমায় গ্রাস করে নিচ্ছে।আমার স্বর্বষ কেরে নিচ্ছে।আমি আর আমার মাঝে নেই।আর আমাকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো তুই।তুই-ই আমার এই রোগের উপশম!’

অনিকের এহেন রহস্যমাখা কথা সবটা সিয়ার মাথার উপর দিয়ে গেল।বোকা কণ্ঠে সুধালো,’ আমি রোগের উপশম?’
‘ হ্যা তুই।তাই বলছি নিজেকে তৈরি করে নেহ।আমার রোগের চিকিৎসা করার জন্যে।আমি সেরে না উঠা পর্যন্ত তোর কোনো নিস্তার নেই আমার হাত থেকে।বুঝেছিস?
আর হ্যা,ভুলেও আর আপনি আপনি করবি না।তাহলে খু’ন করে ফেলব।’
কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না অনিক।দ্রুত পায়ে হেটে লাইব্রেরি থেকে চলে গেল।আর এক আকাশসম অবাকের মাঝে রেখে গেল সিয়াকে।যে আপাততো ব্যস্ত অনিকের সব কথাগুলো হিসাব মিলাতে।

বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে অথৈ।বাকিগুলোরও একই অবস্থা।তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ অথৈ,পিহু আর প্রিয়ানের।এই তিনটার জ্বর এসে একেবারে বেহাল অবস্থা।আহিদ আর রিধিরও জ্বর এসেছে।তবে ওতোটাও না।ওরা মেডিসিন নিতেই সেরে গিয়েছিলো।কিন্তু সর্দি কাশি আছে এখনও।পাঁচজনের হাতেই একটা করে রুমাল।একটু পর হাঁচি দিচ্ছে তারা।মাঝে তো একসাথেও দিয়ে ফেলে।এতে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেঁটে পরে ওরা।হঠাৎ ওদের আনন্দঘণ মুহুর্তে এসে ব্যাঘাত ঘটায় জেনি।সে এসেই ওদের মাঝে ঢুকে পরল।অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ এদিকে আসো তো মেয়ে।তোমার সাথে আমার কথা আছে।’

অথৈয়ের কপালে ভাঁজ পরল।এই মেয়ের সাথে জীবনেও কথা হয়নি ওর।তবে এটা জানে রুদ্রিক আর ওর ভাইয়ের ফ্রেন্ড সার্কেলের একজন।হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।তাই পিছনে ঘুরে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,’ তোরা এখানেই থাক।আমি আপুটার সাথে কথা বলে আসি।’

তারপর জেনির সাথে অথৈ চলে গেল।রিধি পিহুকে বলে,’ আমার কিন্তু বেশি সুবিধার লাগছে না এই মেয়েকে।’
‘ আমারও।তবে চিন্তা করিস না। এটা আমাদের অথৈ ভুলে যাস না।’
রিধি আর পিহু হেসে উঠল একসাথে।
এদিকে বন্ধুদের কাছ থেকে সরে গিয়ে বেশ খানিকটা দূরে এসে দাঁড়াল অথৈ আর জেনি।অথৈ শান্ত কণ্ঠে বলে,’ জি আপু।কি কথা বলবেন বলুন।’

জেনি বুকে হাত গুজে দাঁড়াল।ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে,’ আরে এতো তারা কিসের? নাকি বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে তোমার।চিপায় চাপায় যাবে নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে?’
জেনির কথায় মাথায় ধপ করে রাগ উঠে গেল অথৈয়ের।তবে নিজের স্বামী আর ভাইয়ের বন্ধু বলে নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে বলে,’ ভদ্রভাবে কথা বলুন আপু।আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।’

জেনি রেগে গেল অথৈয়ের কথায়।রাগে দাঁত কিরমির করে বলে,’ আমি বাড়াবাড়ি করছি?বাড়াবাড়ি তো করছিস তুই।তুই-ই তো ছ্যাছড়া মেয়েদের মতো আমার রুদ্রিকের পিছনে পরে আছিস।কেন যাস আমার রুদ্রিকের কাছে?ইহানের বোন যে এতোটা চিপ ম্যান্টালিটির তা আগে জানতাম নাহ।কিভাবে ফাসিয়েছিস আমার রুদ্রিককে?বল?নিশ্চয়ই শরীর দেখিয়ে।এ ছাড়া তোদের মতো মেয়েরা আর পারেই বা কি? আরে এতোই যখন দেহ দেখানোর শখ তাহলে পতি…..’

বাকিটা আর বলতে পারল না জেনি।আর আগেই অথৈ নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে কষিয়ে চ’ড় মারে জেনিকে। অথৈয়ের হাতে চড় খেয়ে জেনির মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগল।মাথায় হাত চেপে সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।পরপরেই রেগে আবার তেড়ে গেল অথৈয়ের কাছে।

‘ তোর সাহস কিভাবে হলো আমাকে মারার।তোকে আজ আমি শেষ করে দিব।’
জেনি অথৈয়ের কাছে এগিয়ে আসতেই অথৈ প্রচন্ড রাতে এলোপাথাড়ি প্রায় আট দশটা চড় মেরে বসল।জেনি এইবার মাঠের মধ্যে বসে পরেছে।ততোক্ষণে আহিদ,প্রিয়ান,রিধি, পিহু এসে পরেছে।অথৈ রেগে আবারও তেড়ে যেতে নিতেই আহিদ অথৈকে টেনে ধরে।অথৈ রাগে ফুসফুস করে বলতে লাগল,’ ছাড় আমাকে তুই,ছাড়।ওর সাহস কিভাবে হলো আমাকে এসব বলার।তোর জিভ টেনে আমি ছিড়ে ফেলব।ও জানে ও কাকে কি বলছে?’

অসুস্থ অথৈকেও যেন ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আহিদের।রেগে গেলে মেয়েটার হুশ থাকে না।অথৈ ঝাটকা মেরে আহিদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর জেনির কাছে গিয়ে ওর ব্রাউন কালার করা চুলগুলো সজোড়ে টেনে ধরল।তেজি কণ্ঠে বলে,’ আর তুই সাহসের কথা বলছিস?তাই নাহ?যে আমি কোন সাহসে রুদ্রিকের কাছে যাই।আরে তুই কে রে? যে তোকে জবাবদিহিতা করতে হবে?এখন আমি বলছি তোর সাহস কিভাবে হয় রুদ্রিককে ‘ আমার, আমার ‘ বলার?বল এতো সাহস কে দিয়েছে?’

ব্যথায় ছটফট করছে জেনি।তাও নিজেকে দমালো না।বলল,’ আমার সাহস জানিস তুই?রুদ্রিক আর আমি একে-অপরকে ভালোবাসি।আর তুই আমাদের মাঝখানে এসে পরেছিস।তুই কোন অধিকারে ওর কাছে যাস?’
অথৈ জেনির কথায় হেসে উঠল।পর পর আবার একটা থাপ্পড় লাগালো জেনির গালে।জোড়ালো কণ্ঠে বলে উঠল,’ অধিকারের কথা বলছিস? তবে বলে দেই রুদ্রিকের কাছে যাওয়ার অধিকার‍ যদি কোনো মেয়ের হয়ে থাকে।তবে সেটা হবে শুধু মাত্র আমার।বুঝেছিস?’

‘ মিথ্যে কথা।তুই কে যে তোর কথা আমি বিশ্বাস করব?’
জেনির কথায় জেনিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অথৈ।বুকে আড়াআড়িভাবে হাত বেঁধে বাঁকা হেসে বলে,’ মানলাম তুই রুদ্রিকের প্রেমিকাই।তবে এখন আর নেই।যদি অতীতে হয়েই থাকিস।তবে সেটা বর্তমানে না।আর অতীত ঘাটিয়ে লাভ নেই।আর আমি কে শুনতে চাস?আমি হলাম রুদ্রিকের বর্তমান আর ভবিষ্যত।রুদ্রিকের সব।আমি হলাম মিসেস আরিহান রুদ্রিক মির্জা।মানে রুদ্রিকের বিয়ে করা বউ।তার অর্ধাঙ্গিনী।এখন বল তোর অধিকার বেশি না কি আমার?’

অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো জেনি।রুদ্রিক বিয়ে করে ফেলেছে?তাও এই মেয়েটাকে?কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব? ও বিয়ে করলে তো ওর মাকে ওর মামা এই বিষয়ে জানাতো।মেয়েটা মিথ্যে বলছে।জেনি বলে উঠল,’ মিথ্যে বলছিস তুই।এমন কিছু হলে সবার আগে আমি জানতাম।’

অথৈ ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,’ এখন তুই কে জানিসনি তা তো আমি জানি না।তবে বিশ্বাস না হলে রুদ্রিককে গিয়েই স্বয়ং জিজ্ঞেস করে নিস।চল তোরা এখানে আর একমুহূর্ত দাঁড়াতে পারব না আমি।দেখা যাবে রাগে একে খু’নও করে ফেলতে পারি।আমার প্রচুর রাগ লাগছে।আজকে এমন একটা পরিস্থিতিতে আমায় পরতে হবে ভাবিনি। এর জবাব মিস্টার আরিহান রুদ্রিক মির্জাকে দিতেই হবে।হবে মানে হবেই।চল।’

শেষ কথাগুলো বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে পা বাড়াতে নিয়েও থেমে যায়।ঘুরে তাকিয়ে জেনিকে শীতল গলায় হুমকি ছুড়ল, ‘ তুই রুদ্রিকের আগে কি আছিলি না আছিলি সব ভুলে যাহ।আমার স্বামীর দিকে ফের বাজে নজর যদি তোকে দিতে দেখি তাহলে তোর চোখ দুটো আর তোর সাথে থাকবে না। কথাটা মাথায় রাখিস।’

হাড়কাঁপানো হুমকিতে জমে গেল জেনি।অথৈয়ের সেই লাল চোখজোড়া যেন পারলে এখনি ভস্ম করে দেয়।অথৈ বাকিদের নিয়ে সামনে পা বাড়াতে গিয়েই দেখে সাফাত দাঁড়িয়ে আছে।চোখে মুখে কেমন অস্বাভাবিকতা তার।অথৈ ভ্রু-কুচকালো।এই লোক এমন রিয়েকশন দিচ্ছে কেন?

তবে কি রুদ্রিক তাদের বিয়ের বিষয়টা ওর বন্ধুদের জানায়নি?কেন জানায়নি?কি কারনে এমন লুকোচুরি করল রুদ্রিক।ও এমন না করলে তো আজ ওর সাথে এসব হতো না।রুদ্রিকের প্রতি রাগ আরও একধাপ বেড়ে গেল।রাগে হনহন করে সাফাতের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।ওর পিছন পিছন রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদও চলে গেল।

কিন্তু অথৈ তো জানতেই পারল না। একটু আগে তার বলা কথাগুলো ঠিক কতোটা ধারা’লো ছুড়ির ন্যায় আঘা’ত করেছে সাফাতের বুকে।সাফাত এখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে।
সামনে কি হতে চলেছে কে জানে?সাফাত কি মানতে পারবে এই তিক্ত সত্তিটা?নাকি এই সত্যের কারনে ফাটল ধরে যাবে ওর আর রুদ্রিকের বন্ধুত্বে?

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২০

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।গল্পটা কি ভালো লাগছে না? তাহলে জানাবেন।গত পর্বগুলোর মতো আপনারা রেস্পন্স করছেন না।এতে আমি কি ধরে নিবো আপনারাই বলুন।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২২