মন পায়রা পর্ব ৪

মন পায়রা পর্ব ৪
নুসাইবা ইসলাম

কিশোরী বয়সে সব আবেগের খেলা, এই আবেগের বসে অনেকে অনেক ভুলভাল কাজ করে। এই সময় টা মনের কথাই তারা প্রাধান্য দিয়ে থাকে, তাদের মনে হয় তাড়া যা করছে একদম ই ঠিক।

চারিদিকে পাখির ডাকে তিথির ঘুম ভেঙে যায়, এখন উঠে সে জানালার পর্দা সড়িয়ে দিলো বাহিরে তাকিয়ে দেখে আবছা আলো ফুটছে। তায়াহুরু করে ফ্রেস হয়ে দৌড় ছাদের, কারণ তিথির সকালে আবছা আলোয় ওঠা সূর্য দেখতে অনেক ভালো লাগে। সাধারনত কেউ এই সময় ছাদে যায় না কারণ সবাই ১০ -১১ টা অবদি ঘুমায়। তিথি এতোটাই তারাহুরু করে এসেছে যে তার চুল গুলো বাধে নাই, পিঠের উপর এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে তার চুল।তিথির চুল বেশি লম্বাও না আর ছোট ও না মিডিয়াম।ছেদের রেলিঙ এর উপর হাত রেখে তাকিয়ে রয়েছে আকাশ পানে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই সময় টা কেউ উঠুক আর না উঠুক ফায়াজ ঠিক ই উঠে ভার্সিটি লাইফ এ যে হোস্টেল এ সে প্রতিদিন এ সময় ই উঠতো। এক্সারসাইজ করার জন্য ফায়াজ ছাদে এসে থমকে যায় সে, এক প্রকৃতি প্রেমিক যে আকাশ এর অই লালাভ বিন্দুটি দেখতে ব্যাস্ত। এক নয়নে ফায়াজ তাকিয়ে আছে তিথির দিকে বাচ্চা মেয়েটি যে তার মনের কোনে যায়গা করে নেয়া একজন। সেই ছোট বেলা থেকেই তো তিথি নামক মেয়েতে আবদ্ধ।এবার ফায়াজের রাগ হয় মেয়েটা না কাল কি জ্বর এ ভুগছিলো আর আজকেই, নিজেকে সংযত করে তিথির উদ্দেশ্য বলল,

ফায়াজঃ এই তোমার এতো সকালে ছাদে কি কাজ? একাএকা এখানে কেনো আসছো তোমার না জ্বর।
আপনমনে যখন তিথি সূর্য দেখায় বিভর কারো ডাকে সে বিরক্ত হলো কারন এ সময়টা নিতান্তই যে তার। এই সময়টায় তো সে এই লালাভ আকাশ দেখে মনের মধ্যে নানানরকম জল্পনা কল্পনা করে।এবার সে বিরক্তি নিয়েই পিছে তাকায়,
তিথিঃ তো আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই নিশ্চয়ই? আর আমি কখন কি করবো না করবো তা নিতান্তই কমক্র ব্যাপার।
তিথি এবার নিচের দিকে হাটা ধরলো আর কিছু বলতে তার ইচ্ছা করলো না। তিথির মন যে আজ খারাপ অনেক খারাপ আজ যে তা জন্মদিন তা কেউ মনে রাখে নি উইশ ও করে নি। এইজন্য সব রাগ ফায়াজের সাথে দেখালো সে,কিন্ত ফায়াজ তা বুঝলো না মনেমনে আঘাত পেলো তিথির এমন ব্যাবহারে।

ফায়াজঃ দিনদিন তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছো, আংকেল কে বলতে হবে।
সেইযে তিথি রুমে এসে দরজা দিয়ে শুয়েছে আর উঠে নাই,মা অনেকবার ডাকা সত্যেও। কেনো উঠবো আজ যে আমার জন্মদিন তা কি মা জানেন না? কেউ আমাকে জন্মদিনের কথা বললো ও না। ভাইয়া সবসময় আমাকে বলে আমি নাকি তার জান তার কলিজা তার সব তাহলে আজ ভাই ও কেনো আমাকে কিছু বললোনা। আমি খাবো না কিছু আর যাবো ও না বাইরে হুহ। তিথির মা সেই সকাল থেকে মেয়ের রুমের দরজা টোকা দিচ্ছে মেয়ের তো খোলার সময় ই নাই। সবার ই মনে আছে যে আজ তিথুর জন্মদিন,তামিম আর ফায়াজ, ফিহা সবাই ব্যাস্ত কিনাকাটায়।
আমার মনের ঘড়ে এসেছিলে তুমি এক ঝড় হয়ে, তোমাকে না পেলে এই ঝড় থামবে না তিথুইজান। যেভাবেই হোক তোমাকে আমার লাগবে, আসছি আমি আসছি তো আমি।

সব কিছু করা ফায়াজদের কাপ্লিট তাই সবাই ধিরে ধিরে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলো,তামিম এসে যখন শুনলো তিথি না খেয়ে এখোনো রুম এ বসে আছে।
তামিমঃ বনু এ বনু দরজা টা খোল দেখ ভাইয়া এক্সিডেন্ট করছি,উফফফ আম্মু কি ব্যাথা!
তামিম একটু নাটক করেই বললো যাতে তিথি রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তা নাহলে কখোনোই তারে দিয়ে দরজা খুলানো যাইতো নাহ। সত্যিই ভাইয়ের ব্যাথার খবর পেয়ে বেরিয়ে আসলো কিশোরী টি চোখমুখে প্রকাশ পাচ্ছে আরেকটু হলেই কেদে বন্যা বানিয়ে ফেলবে।

তিথিঃ এই কুত্তা শয়তান তুই আমাকে মিথ্যা বললি কেন? ভাইয়ায়া আমার কতো কষ্ট হচ্ছিলো কেন ইউ ইমেজিন দ্যাট।
তামিমঃ আম সরি বনু তুই দরজা খুলছিলি না তাই তো মিথ্যা বলতে হলো, তুই নাকি খাস নাই হ্যা?
তিথিঃ কেনো খাবো আমি তুমি না প্রতিদিন আমাকে খাইয়ে দেও, ঘুন থেকে ডেকে তুলো তাহলে আজ কোথায় ছিলে?
তামিমঃ তোকে বলেছিলাম না আমার বন্ধু হাসপাতালে তারে দেখতে গিয়েছিলাম। ওর অবস্থা তো ভালো নারে বনু, তুই কি রাগ করছিস?

তিথিঃ ঠিক ই তো ভাইয়ার বন্ধু অসুস্থ না হলে কখোনোই ভাইয়া এভাবে আমাকে রেখে যেতোনা,এইজন্য ই গেছে রে থাক আমার ভাইয়ার উপর কতো না প্রেসার যাচ্ছে।মনেমনে এগুলো ভাবছিলো তিথি তখন তামিম তাকে আবার বললোক্স
তামিমঃ কি ভাবছিলি বনু হ্যা? চল আমি খাইয়ে দেই।
তিথিঃ ভাইয়া আমাকে শাকিল ভাইয়া কে দেখতে নিয়ে যাবা?
তামিমঃ আচ্ছা আমরা বিকেলে যাবো ঠিক আছে এখন তাহলে আয় খাইয়ে দেই।
তিথিঃ না আমাই এভাব খাবো না, আমি হেটে হেটে ছাদে যাবো আর তুমি খাইয়ে দিবে।

তামিমঃ না চল আজ ফিহাদের বাসায় যাই ওখানে থেকে তোকে খাইয়ে দিবো,আন্টি আংকেল বাসায় নাই মেয়েটা একা।
তিথিঃ আমাকে খাইয়ে দিতে যাবা না কি ফিহা আপুকে দেখতে যাবা আমি কি জানিনা না কি? আচ্ছা তাহলে চলো।
তামিম মুচকি হেসে প্লেটে খাবার বেরে হাটা দিলো, ফিহাদেত বাসায় একটা দোলনা আছে যা তিথির অনেক পছন্দের। এইজন্য তিথি প্রায় ফিহাদের বাসায় গিয়ে দোলনায় বসে থাকে । যেহেতু ফায়াজ হোস্টেলে থাকতো আর ফিহা পড়া নিয়ে ব্যাস্ত তাই সবাই তিথির ওই বাচ্চামো অনেক ভালোবাসে। কলিংবেল দেওয়া মাত্র ফায়াজ এসে দরজা খুলে,ফায়াজ কে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে ফ্লাটে ঢুকে দোলনায় গিয়ে বসে অড়ে তিথি। ফায়াজ তামিমের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে যে তামিম অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছে।

ফায়াজঃ কি ব্যাপার খাবারের প্লেট হাতে এখানে কি করছিস, আজ আমি ভিক্ষা দিতে পারবো না মাফ চাই।
ফায়াজ এটা বলে হেসে দিলো,তামিম ফায়াজের দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে বললো,
তামিমঃ তুই জানিস না ওর এভাবে হেটে হেটে খাওয়ার অভ্যাস হ্যাঁ? একটুর জন্য বেচে গেছি না হলে ছাদে যাওয়া ধরছিলো। আমাকে না বাচিয়ে উনি হাসছে দূর সালা।
ফায়াজঃ আমার বোন কে কি তোর কাছে বিয়ে দিবো যে আমাকে সালা ডাকিস?
তামিমঃ মজা বাদ দে দোস্ত হ্যা,
তিথিঃ ভাইয়ায়ায়ায়া আমার খুদা লাগছে আসো না কেন?

মন পায়রা পর্ব ৩

ফায়াজঃ প্লেট টা দে ফিহা একা ছাদে সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখছে যা গিয়ে দেখে আয়।
ফায়াজের কথায় তামিম তো বেজায় খুশি যে সে ফিহার সাথে একান্ত কথা বলতে পারবে।তামিম কালবিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি চলে গেলো ছাদের দিকে। ফায়াজ দরজা লক করে হাত ধুয়ে খাবার মাখিয়ে তিথির মুখের সামবে ধরে,তিথিও ফোনে ভিডিও গেমস খেলতে খেলতে খেতে লাগলো একটু দেখলো ও না যে কে তাকে খাওয়াচ্ছে।এটা দেখে ফায়াজের ঠোটের কিনারায় মৃদু হাসির রেশ দেখা পেলো। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা,নাহলে এই কান্ড কেও করে। ফায়াজ তাকে দেখছে আর খাওয়াচ্ছে। এবার তিথি পানির গ্লাস চাইতে উপর দিকে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ তাকে খাওয়াচ্ছে,তিথি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ফায়াজ কে দেখে সে কল্পনাতেও আনে নাই তা৪ ভাই না অন্য কেউ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে,
তিথিঃ আপনি এখানে ভাই কই?।

মন পায়রা পর্ব ৫