মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৫

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৫
অনামিকা রহমান

তোকে খুব মিষ্টি লাগছেরে আন্নি।
আন্নি তৃনার পানে চাইলো, হাউমাউ করে তৃনাকে জড়িয়ে ধরলো। তৃনা হতচকিত হলো। আন্নির কান্নার কারন বুঝতে পারছে না তৃনা।
আন্নির দু গালে হাত দিয়ে মুখখানা উঠালো তৃনা,আন্নিকে শুধালো,

কি হয়েছে আন্নি?
আন্নি কান্না মাখা মুখে জবাব দিলো, আমি রাইদকে ভালোবাসি। তিনু তুই কিছু কর।কাল থেকে রাইদের ফোন বন্ধ। একটু আগেও কল দিলাম ধরলো না।
আমি কি করবো এখন। বাবা, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। রোদেলা আপুর সাথে বিয়ে হবে। আমি পারবো না, তিনু। এই বিয়ে করতে। আজ দেখতে এসে আন্টি বদল করে যাবে।
তুই তো সব পারিস, বিয়েটা আটকা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তৃনা আন্নির মাথায় হাত ভুলালো আর বলল, চিন্তা করিস না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
তুই এভাবে কান্নাকাটি করিস না, দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না। আসতে দে।
কিছুক্ষণ বাদেই ডাক পড়লো তৃনার। তৃনা কক্ষ ত্যাগ করলো আন্নিকে রেখে। রোদেলা
আন্নিকে শাড়িতে অপ্সরাদের মতো লাগছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবারো ফোন করলো রাইদকে আন্নি। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

আবারো মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসলো
~আপনার কাক্ষিত নাম্বারটা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে।
আন্নি হতাশ হলো। ফিক্কে মেরে বিছানায় ফেলে দিলো মোবাইলটাকে।চুপ করে বসে রইল কাঠের টুলে।

বৈঠক ঘরে মেহমান বসে আছে। তনয় আহমেদ তৃনাকে আর রোদেলাকে বলল, আন্নিকে যেনো নিয়ে আসা হয়, বৈঠক ঘরে।
কিছুক্ষণ মাঝেই আন্নিকে এনে বসিয়ে দেওয়া হলো। আন্নিকে দেখা মাত্রই আয়ানা রাইদের পাশ থেকে উঠে গিয়ে আন্নির কাছে বসলো। আন্নি এখনও, মাথা নিচু করে আছে,তার কোনো ইচ্ছাই নেই ছেলের মুখ দেখার।বিয়ে যদি হয়েও যায়, এই ছেলেকে সে স্বামী হিসেবে মানবে না।

আয়ানা আন্নির থুতনিতে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলল, বাহ মাশাল্লাহ।
তনয় আহমেদ রাইদের বাবা কবির রহমানকে বলে উঠল, তা বাইসাব আমার মনে হয় ছেলে আর মেয়েকে একটু আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হতো। ফিরোজা বেগম হাসি মুখে বলল, হ্যা, তা তো অবশ্যই।
তনয় আহমেদ তৃনাকে বলল,তিনু মা, অনুকে রুমে নিয়ে যা। আমি ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তৃনা মাথা দুলালো, আন্নিকে নিয়ে চলে গেলো রুমে।

তনয় আহমেদ রাইদকে মুচকি হেসে বলল, যাও, মেয়ে খুব অভিমান করেছে, আমার উপর। অভিমান ভাঙ্গানোর দায়িত্ব তোমার।
রাইদ হাসলো, হাটা শুরু করল রুমের নিকট। তার প্রেয়সী যদি একবার চোখ তুলে তাকাতো, তাহলেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো। না তা আর হল কই। অভিমান করে, দুঃখ করে চোখ তুলে তাকালোই না। রুমের নিকট গিয়ে গলা খাকারি দিলো রাইদ। তৃনা বুঝলো রাইদ এসেছে, তাই আন্নিকে বুঝিয়ে বের হলো রুম থেকে।
তৃনা বের হওয়ার সাথে সাথে রাইদকে ইশারায় উইশ করলো।

অতঃপর কক্ষে প্রবেশ করল রাইদ।
রাইদ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো আন্নির নিকট। মাথা নিচু করে রাইদ নরম গলায় বলল,
~মিস আন্নি, কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হয়।
কথাটা শোনা মাত্রই পিছন ঘুরে দাড়ালো আন্নি। রাইদকে দেখা মাত্রই চোখ বড় হয়ে গেলো আন্নির। নিজের রাগকে কন্ট্রোল না করতে পেরে রাইদের তনুময়ে হাত চালাতে শুরু করল। চেচিয়ে বলে উঠল, ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে, ফোন বন্ধ করে আমার সাথে মজা নেওয়া হচ্ছে।
রাইদ আন্নির কান্ড দেখে হাসলো।
আন্নির মেজাজ আরো তিরিক্ষি হলো। আবার বলে উঠল রাইদকে,

~হাতে নাতে একটা শিক্ষা না দিলেই নয়। আমি এখনই বলবো বিয়ে ভেঙে দিতে।
আন্নি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার আগেই হাত পাকড়ে ধরলো রাইদ। টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে, ললাটে চুমু খেলো।
আন্নির অবয়বে চেয়ে বলল, বাসার সবাই আগে থেকেই জানতো। আমরা সবাই দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি কর।
আন্নি জবাবে বলল, তৃনাও জানতো।

~হু
~ও আচ্ছা, এই কারণেই কোনো ভাবাবেগ দেখি নাই ওর ভিতরে। শালি শয়তান।
আজ ওর একদিন,আর আমার যে কয়দিন লাগে।
রাইদ হাসলো, হাতের আঙুল দ্বারা আন্নির অধরে চেপে ধরলো। আন্নির গালে চুমু খেয়ে শুধালো, খুব ভালোবাসি তোমায়। তাই ভেবো না কখনো তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে বেচে নিবো। এবার চল,বাইরে সবাই অপেক্ষায় আছে।
আন্নি লজ্জা মিশ্রিত অবয়বে মাথা দুলালো, পিছু পিছু হাটা শুরু করল রাইদের পিছনে।

আন্নিকে আয়ানা দেখা মাত্রই এগিয়ে এসে ফিরোজা বেগমের পাশে এনে বসিয়ে দিলো। ফিরোজা বেগম আন্নিকে নিজের পানে ফিরিয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে বলল,আমার লক্ষি বউমা। আন্নি মৃদু হাসলো, আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা শেষে রাইদ আন্নিকে আন্টি পড়িয়ে দিলো। ফিরোজা বেগম একটা চুড়ির বক্স থেকে এক জোড়া রুলি বের করে পড়িয়ে দিলো আন্নির হাতে। পরিশেষে সকলকে জানানো হলো, তনয় আহমেদের দুই মেয়ের বিয়ে ১তারিখেই অনুষ্ঠিত হবে।

লোকপ্রশাসন গেটের সামনের ফুট অভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে সানি। উদ্দেশ্য তার তার প্রেয়সীর সাথে দেখা করা । কিছুক্ষন বাদেই কলেজ ছুটি হবে। এই ৪ দিন হলো তাদের একবারও দেখা হয় নি। তাই সানি জাহাঙ্গীর নগর থেকে সোজা বাসে করে এসে বিপিএটিসি নেমেছে।

কিছুক্ষণ পর পর হাত ঘড়ি দেখছে সানি। গেট থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের হওয়ার দুম পড়েছে। ফুট অভার ব্রিজ থেকে পাড়াপাড় হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অপর প্রান্তে চেয়ে আছে চাতক পাখির ন্যায় সানি। তুলিকে সিড়ি ভেঙে উঠতে দেখেই একটা মৃদু হাসি দিলো সানি। অভার ব্রিজে উঠা মাত্রই সানিকে রেলিং ধরে দাড়াতে দেখেই চশমাটা হালকা ঠেলে উঠিয়ে দিলো চোখে। দুজনের চোখাচোখিতে দুজনেই হাসি টানলো ঠোঁটে। কাছাকাছি আসতেই ইশারা নিচে আসতে বলল সানিকে তুলি।

সানি মাথার চুলে আঙুল দ্বারা ব্রাশ করে হেটে চলছে তুলির পিছু পিছু।
বিপিএটিসি থেকে রেডিও কলোনি হেটে যেতে সময় লাগে ১০ মিনিটের মতো, তাই আজ আর বাসে উঠল না তুলি। তুলির পাশাপাশি হাটছে সানি। সানি তুলিকে নরম গলায় বলল, ~কেমন আছো সকিনার আম্মা।
তুলি হাসলো, সানির পানে চেয়ে বলল,

~বলেছি না,সকিনার আম্মা বলবেন না। কেমন যেনো শুনতে লাগে।
~আচ্ছা, ঠিক আছে। আমার আম্মার পুত্র বধু কেমন আছেন?
তুলি খিলখিল করে হাসলো। জবাবে বলল,
~জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
সানি প্রতিউত্তরে বলল, ভালো।

~আন্নি আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে জানেন?
~হুম, দাওয়াত পেয়েছি।
~আমি যে পাঞ্জাবিটা দিয়েছি, ওইটা পড়ে আসবেন কিন্তু!
~আচ্ছা।

কথা বলতে বলতে রেডিও কলোনি চলে আসলো তারা। সানি আক্ষেপের সুরে তুলিকে বলল, সময় গুলো কেমন তাড়াতাড়ি চলে যায়। সময়টা যদি থেমে যেতো, তাহলে তোমায় আমি সারাজীবন এভাবে দেখে যেতাম। তা হলো কই, সময় তো খুব নিষ্ঠুর।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৪

তুলি সানির হাত ধরে রেডিও কলোনির ফুট অভার ব্রিজ পাড় হলো। রিকশায় তুলিকে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় জানালো। তুলি যাওয়ার সাথে সাথে সানিও রিকশায় উঠে চলে গেলো ভাটপাড়ায় নিজের বাসায়।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৬