যদি তুমি বলো পর্ব ৩

যদি তুমি বলো পর্ব ৩
আফনান লারা

তানিয়ার সেজেগুজে পাত্রপক্ষকে মাতিয়ে রাখার কথা এখনও বাবা মা কিংবা বাকি কেউই জানেন না।তারা সবাই এক রুমে উপস্থিত হয়ে ভাবছেন কি করে পাত্রপক্ষের কাছে তারা মুখ দেখাবেন।এদিকে ফুফু হঠাৎ বলে দিলেন তিথি নেই যখন, তানিয়াকেই দিয়ে দিতে।অন্তত মুখ বাঁচবে।
সেসময় তিথির বাবা জনাব সুলতান বলেন সেটা সম্ভব নয়।তিথির আর তানিয়ার চেহারায় অমিল একটু হলেও আছে,ওনারা ধরে ফেলতে পারেন।

তাই সত্য কথা বলতে তিনি যেই না বের হলেন,ওমনি দেখলেন গোলাপি রঙের শাড়ী পরে তানিয়া ওদের সামনে নতুন বউ সেজে দাঁড়িয়ে আছে।হাবভাব দেখে মনে হলো তারাও টের পায়নি এটা তিথি।
তিনি কিছুক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখলেন আসলে হচ্ছে টা কি।
তানিয়া শাড়ীর আঁচল ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,’আমাকে আপনাদের কেমন লেগেছে?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রকিবের খালা জোরপূর্বক হেসে বললেন ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে আসায় এখন মোটামুটি লাগছে দেখতে।
এই শুনে তানিয়া চট করে তার মুখোমুখি বসে বলে,’এসব তো কিছুই না।আমি যখন সাবান দিয়ে গোসল করে বের হই তখন আমাকে আকাশের পরীর মতন লাগে।’

রকিব মিটমিট করে হাসছিল।সে বয়সের দিক দিয়ে বড় হলেও তার স্বভাব চরিত্র সবই একটু বোকাসোকা টাইপের।তানিয়ার উড়নচণ্ডী ভাব তার দারুণ লাগলো কিন্তু মা খালার ভয়ে চুপ করে থাকলো সে।
এই মেয়েটা বউ হলে তার আপত্তি থাকতোনা।কিন্তু বড়দের সামনে তো আর এটা বলা যায়না।সামনে কি হয় তাই দেখার পালা।

সুলতান সাহেব পুরোটা বুঝতে পেরে একটু এগিয়ে এসে বললেন,’আমাদের মেয়েকে কেমন লাগলো আপনাদের?’
রকিবের বাবা তখন ওনার হাত ধরে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে আলাপ জুড়ে দিলেন,তিনি এতক্ষণ উধাও ছিলেন কেন সেই নিয়ে আলাপ।বিয়ের কথাটা আরও পরে বলবেন বলে ঠিক করলেন তিনি।
এত বড় পরিবার,সকলের মত থাকা জরুরি।
এই সময়টাতে তানিয়া রকিবকে চোখ মেরে তার রুমে চলে গেলো হঠাৎ।রকিব তখনই তার মাকে বলে সে ওয়াশরুমে যাবে।

ওমনি রিদম এসে তাকে নিয়ে যাবার দায়িত্ব নিয়ে নেয়।
‘দুলাভাই,আপনার কি আমার টুকুকে ভাল লেগেছে?’
রকিব লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।রিদম ওর লাল হওয়া দেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো,’জানেন?আমি হচ্ছি অমিতাভ বচ্চনের বাল্যকালের দোস্ত।একসাথে কত যে বিসকুট চুবিয়ে চা খেয়েছি।বুড়ো হয়ে আমাকে সে ভুলেই গেছে।এই যে দেখেন আমি কিন্তু ভুলিনি ওকে।আমার স্মৃতি শক্তি প্রখর।যাই হোক,আমি কিন্তু আপনাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছিনা,টুকুর কাছে নিয়ে যাচ্ছি।টুকু আমায় একশো টাকা দিবে বলেছে তাই।তাছাড়া আমি মুফতে কোনো কাজ করিনা।এই যে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।আপনারও কিন্তু বকশিশ দিতে হবে আমায়’

রকিব পকেট হাতিয়ে দুইশ টাকার নোট বের করে। রিদম তখন বলে,’মেয়ে ছেলে সমান নয়।ছেলেরা একটু বেশি হয়।টুকু একশো দিছে যখন, তখন আপনি দিবেন আরও একশো বাড়িয়ে।
যদি নারী পুরুষ সমান হয়ে যায় তাহলে কি হবে জানেন?কিছুই হবেনা।শুধু পুরুষ, পুরুষ থাকবেনা।বেডা=বেডি হবে।বুঝতে পারছেন দুলাভাই?’
রকিব অনেক ভেবে দুইশ টাকার নোটটা রিদমকে দিয়েই দিলো।এর আগে এমন খরচা করার সময় অবশ্যই সে মাকে জানিয়ে করতো।আজ জানাতে পারলোনা বলে মনের ভেতর কেমন খুটখুট করছে।

তিথিকে রেখে সুরাইয়া চলে গেছে।তিথি সময় কাটাতে ফোনটা হাতে নেয়, কিন্তু দেখে ফোনে চার্জ কম।তাই ফোন চার্জে দিয়ে ওদের বাসার টিভি অন করে বসে।কিছু সময়ের মধ্যেই কারেন্টাও হঠাৎ করে চলে যায়।তিথির এবার হালকা পাতলা একটু ভয় হতে লাগলো। সিনেমায় দেখেছে এরকম কারেন্ট চলে গেলেই ডাকাত এসে হামলা করে।
তিথি অনেক খুঁজে একটা টর্চ লাইট পায়,তারপর সেটা জ্বালিয়ে খাটের উপর বসে থাকে।এরপরেও ওর ভয় কাটছিল না বলে লাইটটা নিয়ে খাটের তলায় গিয়ে লাইট অফ করে ফেলে সে।রোডের ল্যাম্প পোস্টের আলো রুমের ভেতরে আসছিল।তিথির নিজের লাইটটা অফ করার কারণ হলো কেউ যাতে তাকে হামলা করতে আসলে তাকে না দেখে।

তিথি ভয়ে ভয়ে মুখে হাত দিয়ে চুপটি করে বসে আছে।কারেন্ট আসার নামও নিচ্ছেনা।অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিথি শুনতে পেলে কারোর হাঁটার শব্দ।তিথির ভয় এবার চরম পর্যায়ে চলে গেছে।ঢোক গিলে সে মুখটা ভাল করে চেপে বসে থাকলো।হাঁটার শব্দটা আরও কাছ থেকে শোনা যায় এবার।
তিথি চিন্তা করছে যে মানুষটা হাঁটছে,সে ভেতরে ঢুকলোই বা কেমন করে।তার ভাবনার মাঝেই সেই মানুষ ঐ রুমে প্রবেশ করে।দেখে একটা ছেলে মনে হলো।

তিথির সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।ঢোক গিলে সে বোঝার চেষ্টা করছে মানুষটা আসলে কি করবে।
সে দেখে ঐ মানুষটা কোনো কিছু না হাতিয়ে,কেবল হেঁটে সব জায়গায় কাকে যেন খুঁজছে।তিথি বেশ বুঝতে পারলো এই ছেলে কোনো চুরির উদ্দেশ্যে আসেনি।তার উদ্দেশ্য অন্য কিছু।
ছেলেটা বাথরুমের দরজা খুলেও চেক করে এবার।তিথি হাতের টর্চ লাইটটা মুঠো করে ধরে।খাটের তলায় চেক করতে আসলেই মুখের উপর বাড়ি মেরে দিবে।
ছেলেটা রুম ছেড়ে চলে যাওয়া ধরলো ওমনি কি ভেবে সে খাটের কাছে এসে দাঁড়ালো আবার।তিথি তৈরি হয়ে আছে বাড়ি দেবার জন্য।

যেইনা সে ছেলে খাটের তলায় দেখার জন্য মাথা নিচু করলো ওমনি তিথিও কোনো কিছু না দেখেই দিয়ে দিলো এক বাড়ি।তাও যেনতেন বাড়ি না।একেবারে মাথা ফেটে যাবার মতন বাড়ি।
সেই ছেলেটা মাথা হাত দিয়ে বসে পড়ে।তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে।
তিথি খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ফোন খুঁজতে থাকে।টর্চ লাইট তো ঐ ছেলের সামনে পড়ে আছে।
ফোন খুঁজে সে ছেলেটার দিকে ফ্ল্যাশ অন করে ধরে।ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে।
‘কে আপনি?কি চাই?’

তিথির কথা শুনে ছেলেটা চট করে উঠে দাঁড়িয়ে যায়,
পেছনে একবারও না তাকিয়ে সে দৌড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
তিথি যেন আরও সাহস পেয়ে গেলো।সে ও ছুটলো ছেলেটার পিছু পিছু।তিথি আলোতে খেয়াল করে ছেলেটার হাতের দিকে।ঐ ছেলের হাতের সবুজ রঙের ব্রেসলেটটা দেখে তিথি সিওর হয়ে যায় এটাই সেই ছেলেটা যার গাড়ী করে সে এখানে এসেছিল।

এবার সে আরও দ্রুত দৌড়ায়।
কিন্তু অন্ধকারে নিমিষেই ছেলেটা উধাও হয়ে গেলো কোথায় যেন।
কোথাও আর খুঁজে পেলো না তিথি ঐ ছেলেটাকে।
ছেলেটা চলে যেতেই কারেন্ট ও চলে আসে।তিথি এবার ফোনের আলো নিভিয়ে তার রুমে আসতেই দেখে ফ্লোরে রক্ত কয়েক ফোটা পড়ে আছে।তার মানে ঐ ছেলেটার মাথা ফেটেছিল!
তিথি এক দৌড়ে বারান্দার গ্লাস খুুলে দেখে গাড়ীটা তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে।

‘ইশান?আর ইউ ওকে?’
‘ইয়াহ্,আই এম ফাইন।তিথি বলে কথা,মাথা তো ফাটাবেই!আসার পথে হাসপাতাল হয়ে আসবো।তুই টেনসন নিস না।আর মাকে বলার দরকার নেই’
‘তোর ফাটা মাথা দেখে মা এমনিতেই বুঝে যাবে,আমার আর কিছু বলতে হবেনা।যাই হোক,তুই কি এখনও ঔখানে আছিস?’

‘সুরাইয়া আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।আমি বলে কিছু করিনি।কিন্তু আমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে ফাটা মাথা নিয়ে পালাতো না।খারাপ কিছু করতো।ওকে একা রাখা যাবেনা।সুরাইয়া ফিরলে তারপর আমি এখান থেকে চলে আসবো।তুই ঘুমিয়ে পড়’
ইশান ফোন রাখতেই দেখে তার গাড়ীর সামনে তিথি দাঁড়িয়ে আছে। সে এটা কল্পনাও করতে পারেনি।তিথি কোমড়ে হাত দিয়ে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেন আজ রফাদফা হয়ে যাবে।
ঠিক তাই।তার পেছনের হাতে ছিল একটা ইট।সে ইটটাকে ছুঁড়ে মারলো ইশানের কারের গ্লাসের উপর।ওমনি গ্লাস ফেটে চুরমার।ইশান দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে।

‘আমার থেকে লুকিয়ে থাকা অসম্ভব। ‘
এটা বলে তিথি এগিয়ে এসে ফোনের আলো জ্বালালো।কিন্তু ইশানের মুখে সেই মাস্কটা তখনও ছিল।তিথি হাত বাড়িয়ে মাস্কটা সরাতে নিতেই ইশান ওর হাত ধরে ফেলে এরপর বলে,’আমি না চাইলে তুমি কিছু করতে পারবেনা।
যদি তুমি বলো,তবেই পারবে’

যদি তুমি বলো পর্ব ২

এটা বলে ইশান তিথির হাত মুচড়ে ধরে টান দেয়,ওমনি তিথির হাতে ভাঙ্গা কাঁচ লেগে কেটে যায় অনেকটা অংশ।ইশান তখন বলে,’আমি নায়ক এবং ভিলেন, দুটোই!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪