প্রিয়োসিনী পর্ব ২৭

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৭
নীরা আক্তার

-বিয়ে কি হবে না??
কেউ কোনো উওর দেয় না।ইসরাক তিয়াশকে ডাকার জন্য বাহিরে যেতে চাইলে নওরিন হাত ধরে নেই।
–আমি কথা বলি তিয়াশের সাথে!
-যাবেন না।ওনাদের সময় দিন।
ইসরাক আর এগোয়নি। নোহার পাশে এসে বসে।

-ভয় পাশ না।দাভাই আছি তো!আমি তোর জন্য আরো ভালো বর এনে দেবো।কষ্ট পাস না নোহা।
নোহা ইসরাকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।হাসিতে সুখের চেয়ে দুঃখ বেশি ছিলো।ইসরাকের চোখ ছল ছল করছে।অনেক কষ্টে থামিয়ে রেখেছে নিজেকে।নোহা কষ্ট পেয়েছে।ভীষন রাগ হচ্ছে নিজের উপর।তিয়াশকে আগেই সবটা জানানো উচিৎ ছিলো।বিষয়টা মাথায় আসে নি তার।
নওরিন নোহার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।কাঁধে হাত রাখে।
নোহা নওরিনের দিকে তাকিয়েও একটা মুচকি হাসি দেয়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আমি ঠিক আছি।আমি কেন ভয় পাবো?আমি কেন লজ্জা পাবো?আমি তো কোনো অন্যায় করিনি….লজ্জা তো তাদের পাওয়া উচিৎ যারা অন্যায়কারীকে কিছু না বলে যার উপর অন্যায় হয় তার দিকে আঙ্গুল তুলে।
নোহা সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।নিবিড় নোহার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়।মেয়েটার অন্তর আত্নার শক্তি প্রবল।কি সুন্দর করে গুছিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করলো।নওরিন হলে হয়তো এতোক্ষণে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলতো।নয়তো চুপচাপ স্টাচু অব লিবার্টির মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবার কথা শুনতো।স্টাচু অব লিবার্টি নয় স্টাচু অব নোহা হয়ে যেতো।
নিবিড় ছোট করে একটা কাশি দিয়ে বলতে শুরু করে,

-তিয়াশকে আমি চিনি।ও তোমার জন্য একেবারে ডেস্পারেট।বিশুদ্ধ ভালোবাসা যাকে বলে।ওর উপর বিশ্বাস রাখো।আর সবচেয়ে বড় কথা নিজের উপর বিশ্বাস রাখো।
নিবিড় একটু থেমে আবার বলে উঠে
-যদি তিয়াশের সাথে তোমার বিয়েটা হয় ও কখনো আর সবার মতো অতীত টেনে নিজের স্ত্রীকে অসন্মান করবে না।সুখে রাখবে তোমাকে।এতটুকু গ্যারেন্টি আমি দিতে পারি!একটু সময় দেও।আশা করি ওনারা কথা শেষ করে ফিরেই আসবে।এটা গোটা জীবনের প্রশ্ন,সব দ্বিধা দন্দ পরিষ্কার করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ

কথাটা নিবিড় ইসরাককে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা ইসরাক বেশ বুঝতে পেরেছে।সে তো সত্যি সত্যিই নওরিনকে তার যোগ্য সন্মান দেয় নি।না নওরিনকে সন্মান পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলো।
ইসরাক মাথা নিচু করে নেয়।এটা লজ্জা নয়, অনুশোচনা,অপরাধবোধ।থাকাটাই স্বাভাবিক। নোহার কেন যেন নিবিড়ের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে তিয়াশ ফিরেবে।

সে নিজেও এখন মনে প্রাণে চায় তিয়াশ ফিরে আসুক।
তবে কি সে তিয়াশের মায়ায় পড়ে গেলো?মায়া নাকি ভালোবাসা?
কিন্তু যদি তিয়াশ আর কখনো ফিরে না আসে?
নোহার মনে ভয় বাসা বেঁধেছে।হারানোর ভয়।।।

এদিকে তিয়াশের আম্মু তিয়াশকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।বাড়ির দরজা থেকে একটু দূরে….
তিয়াশের আব্বুকেও পেছন পেছন আসতে দেখে ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে তাকায়। ধমকের শুরে বলে উঠে,
-তুমি কেন এলে?
-তুমি না বললা বিয়ে হবে না।এমনি তেও আমার একমাত্র ছেলে যার তার সাথে তো আর বিয়ে দিতে পারি না!
-কখন বললাম বিয়ে হবে না?
-বিয়ের আসর থেকে ছেলেকে উঠায়ে নিয়া আসলা যে।
-কথা বলতে আনছি…

-ভালো করেছো নিয়া আসছো। চলো বাড়ি যাবো।এই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দেবো না।মেয়ের তো সমস্যা আছে।
ভদ্রমহিলা একরাশ বিরক্তি নিয়ে স্বামীর দিকে তাকায়।
স্বামীকে কিছু বলতে গিয়ে তাকাতেই দেখে পেছন পেছন তিশাও এসেছে।
এবার তো তার বিরক্তির কুল কিনারা নাই,
-তুই কেন এলি?জামাই কোথায়?এভাবে সবাই উঠে এলি ওনারা কি ভাববেন বল তো?
তিশা মিনমিন করে উওর দেয়,

-তোমরা যে আসলা….তাই জন্যই তো….ও মনে হয় ভেতরেই আছে।
তিয়াশের বাবা একটু খুশি হয়েই বলে উঠে,
–আসেছিস ভালো করেছিস।জামাই কে ও ডাক।বাড়ি ফিরে যাবো।এই বিয়ে হবে না।
তিশা অবাক হয়ে বলে উঠে,
-হবে না মানে?কেন হবে না?
-হবে না মানে হবে না।

তিয়াশের বাবা চেচিয়ে উওর দেয়,
ভদ্রমহিলা দুজনকেই থামিয়ে দেন।
-আমি তিয়াশের সাথে কথা বলতে চাই।তোরা ভেতরে যা।
-কি বলো?(তিশা)
-তোর বাবাকে নিয়া যাতো।
তিয়াশের বাবা গো ধরেন,
-যাবো না।আমারও ছেলে….

ভদ্রমহিলা তিয়াশের দিকে তাকান,তিয়াশ চুপ চাপ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে আছে,
-কি ভাবিস বাবা?
-খারাপ লাগছে মা।খুব খারাপ লাগছে নোহার জন্য।বাচ্চা নোহাটা না জানি কতো কষ্ট পেয়েছে।বাচ্চা নোহার কথা ভেবে বড় নোহাও কষ্ট পাচ্ছে।মানুষ এতো খারাপ হয়?
-হুম্ম কিছু মানুষ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়।তোর খারাপ লাগছে বাবা?
-এতো কাছে থেকেও বুঝতে পারি নি।মেয়েটা সব নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে।এখন বুঝতে পারছি ওর ভয়ের কারণ…
-ছোটবেলার এই ধরনের ঘটনা মনে দাগ কেটে যায়।অদ্ভুত এক ট্রমার সৃষ্টি করে।বড় হয়েও সেগুলোর প্রভাব থেকেই যায়।
তিয়াশের চোখ থেকে এক ফোটা পানি পরে,

-খুব কষ্ট হচ্ছে?
-হুম্ম
-নিজের ভালোবাসার মানুষের কষ্টে কষ্ট পাওয়াই তো বিশুদ্ধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।আমি তোর বন্ধু তিয়াশ।ছোট বেলা থেকে তুই কখনো কোনো কথা আমার থেকে লুকাস নি।নোহার কথাও না।সব বুঝেই আমি তোর এক কথায় আজকে বিয়ে দিতে এসেছি।আমার কাছে কোনো সংকোচ করিস না বাবা।সত্যিই করে বল এখনো বিয়ে করতে চাস নোহাকে?

-হুম্ম।আম্মু প্লিজ অমত করো না।আমি চলে গেলে মেয়েটা বড্ড কষ্ট পাবে।বড় নোহা সারা জীবনের জন্য অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।হয়তো সারাজীবনের জন্য পুরুষ জাতীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে…..প্লিজ আম্মু না করো না।
ভদ্রমহিলা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে,
-মনের মধ্যে নোহাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই তো তোর?
তিয়াশ মাথা নাড়ে।
তিনি তিয়াশের হাতটা নিজের মাথায় রাখেন,তিয়াশ ঝটকা দিয়ে নিজের হাত নামিয়ে নেয়,

-প্লিজ আম্মু,এমন কিছু বলোনা যেটা মানতে পারবো না।
পাশ থেকে তিয়াশের বাবা বলে উঠে,
-মানবি না মানে।মানতে হবে!
তিয়াশ অসহায়ের মতো মায়ের দিকে তাকায়।
তিনি আবার স্বামীকে ধমক দেয়,
-থামুন তো আপনি।আমাকে বলতে দিন।
তিনি তিয়াশের দিকে তাকান,

-তিয়াশ আমার মাথায় হাত রেখে বল,জীবনে যতো খারাপ পরিস্থিতিতেই তুই পরিস না কেন,ঝগড়া হোক,রাগ হোক, কখনো বউমার অতীত তুলে কোনো কথা বলবি না।খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা তো করবিই না।আজকের পর এই বিষয় নিয়ে কখনো বউমাকে কোনো প্রশ্ন করবি না।
তিয়াশ মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়,
-কসম দেওয়ার প্রয়োজন নেই মা।আমি এমনিতেও কখনো নোহাকে কষ্ট দেবো না। নিজের অজান্তেও না….
পাশ থেকে তিয়াশের বাবা অসহায় দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকায়,

-এই ছিলো তোমার মনে?আমি এতোক্ষণ কতো কিছু ভাবলাম।সত্যিই বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি নেই?শুধু শুধু যা তা বললাম।
-আমার সব কথায় কে তাল মিলাতে বলেছে তোমাকে?
-ধুর!
তিনি স্বামীর দিকে তাকিয়ে হাসেন,

-ধরুন এমন কোনো ঘটনা আমার সাথে ঘটে থাকতো আপনি কি আমাকে ফালায়ে দিতেন?
-নাউজুবিল্লা কি বলো! আমার কাছে তুমিই সবার আগে….দুনিয়া এক দিকে তুমি অন্যদিকে
তিনি খিলখিল করে হেসে দেন,
-তিয়াশ আপনারই ছেলে…আপনার মতোই হবে এটাই স্বাভাবিক!
এবার সবাই একসাথে হাসে…
তিয়াশ বোনকে প্রশ্ন করে,

-তিশা তোর কোনো আপত্তি নেই তো?
-নাহ্।আমার বানরের মতো ভাই এমন পরীর মতো বউ পাইতিছে আমার আবার কিসের আপত্তি।আমার তো গর্ব হচ্ছে।বানর ভাইয়ের গলায় পড়ানোর জন্য মুক্তার মালা নিয়ে যাবো…আর কি চাই…..!
এবারই সবাই একসাথে হেসে উঠে।

পরিবারের সবাই একসাথে ঘরে ফিরে আসে।সবার কেমন মুখ কেম থম থমে করে রেখেছে।নোহার আম্মু এতটুকু সময়ে কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে।তিয়াশের আম্মু…নোহার মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন,
-ভাবি যান মেয়েকে বিদায় দেওয়ার আগেই এতো কান্না করছেন।বিদায় দেওয়ার সময় তাহলে কি করবেন শুনি।
তিনি চোখটা মুছে নিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করেন।

ইসরাক তিয়াশের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়।
তিয়াশ চোখের ইশারায় তাকে আস্বস্ত করে।
ইসরাক হাপ ছেড়ে বাঁচে।তিয়াশের মা সোজা নোহার পাশে গিয়ে বসে।
বসতে গিয়ে খেয়াল করে সোফার একপাশে বালা জোড়া নোহা খুলে রেখেছে।
তিনি বালাগুলো হাতে নিতে নিতে প্রশ্ন করে,

-বালা জোড়া খুলেছো কেন?
নোহা কোনো উওর দেয় না।সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে ভদ্রমহিলার দিকে…
তিনি নোহার হাতটা নিজের দিকে টেনে নেন।নোহার হাতে বালা পড়াতে পড়াতে বলে উঠেন,
-আমি কিন্তু বউমা নিতে আসি নি মেয়ে নিতে এসেছি।আমার মেয়ে আবার আমার কথা না শুনলে দুচার ঘা বসিয়ে দেই।বড় হয়েছে বলে কোনো ছাড় দেবো এটা ভাবা ভুল।টিচার মানুষ তো মারের হাত বরাবরই ছিলো।তুমি আবার আমাকে শ্বাশুড়ি ভেবে রাগ করবে না তো?

নোহা মুখ তুলে তাকায়।চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
তিয়াশের আম্মু নোহার চোখ মুছে দিতে দিতে বলে উঠে,
-কাঁদতে নেই মা।আজ না তোমার জীবনের শুরু।এখন থেকে শুধু হাসবা।তোমাকে হাসানোর দায়িত্ব আমাদের।আমার ছেলে কখনো তোমায় কষ্ট দিবে না।দিলে আমাকে বলবা।পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবো…..।
নোহাকে তিনি জড়িয়ে ধরেন।সিকদার বাড়ির সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

-আপনারা রাজি থাকলে আজই আমরা বিয়েটা দিয়ে দেবো।আপনারা যদি না চান সেক্ষত্রে….
ইমতিয়াজ সিকদার এককথায় রাজি হয়ে যান।এমন ঘর বর পাওয়া একটা মেয়ের সারা জীবনের সৌভাগ্য।সবাই সম্মতি দেয়।
ইসরাক তিয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“তোর যদি কখনো মনে হয় আমার বোনকে ভালোলাগছে না আমাকে বলবি আমি ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।ওকে কখনো অবহেলা করিস না।কষ্ট দিস না”

ইসরাক এতোটুকু বলেই বিয়েতে সম্মতি দেয়।
আপাতোতো বিয়েটা দেওয়া যাক অনুষ্টান পরে করলেও চলবে।
কাজী বিয়ে পড়ায়।এতোক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে তিনি বিয়ে পড়াতে পেরেছেন তাতেই তিনি খুশি।
ইসরাক কাজীকে তিনগুণ বেশি টাকা দেয়।তার সবচেয়ে আদরের বোনের আজ বিয়ে হয়েছে।এর চেয়ে খুশির আর কিছু হতেই পারে না।

নোহা নওরিনকে সাথ নিয়ে ইশার কাছে যায়।ইশা বিছানায় শুয়ে ছিলো।পাশে আমান সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।বিয়ের সময় আমান উপস্থিত থাকলেও একটু পর সে উপরে চলে আসে।
নোহা একা একাই ঘরে প্রবেশ করে।নওরিন বাহিরে দাঁড়ানো। সে কিছুতেই ইশার সামনে যাবে না।ইশার সাথে কথাও বলবে না।
নোহা ঘরে ঢুকে। ছোট্ট করে ইশাকে ডেকে উঠে,

-ইশা
-হু
ইশা নোহার দিকে তাকায়।নোহার পরনে লাল বেনারসি।গা ভর্তি গয়না।হালকা সাজ।কি মিষ্টি লাগছে।
-বিয়ে হয়ে গেছে?
-হু
-এগুলো?
-এগুলো আমার শ্বাশুড়ি মা দিয়েছে।আদরও করেছে।
-তোকে আজকে আর শাঁকচুন্নির মতো লাগছে না সুন্দর লাগছে।
-কে শাঁকচুন্নি সেটা গোটা দুনিয়া জানে,

-সরি নোহা।আমি ভুল ছিলাম।আমানের সাথে তোকে মিথ্যা মিথ্যা…
ইশা আড় চোখে তাকায় আমানের দিকে। আমান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে,
নোহা একটু বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে,
-হিংসা কখনো জীবনে ভালোকিছু বয়ে আনে না।ভালোমানুষগুলোর সাথে দিন শেষে ভালোই হয়।
-খোটা দিলি?আমাকে খারাপ বলে?
-নাহ্।এমনিই বললাম কিছু মনে করিস না।আমি যাচ্ছি।
-যাচ্ছি না বল আসছি।দোয়া করি ভালো থাক।সুখে থাক!
নোহা মুচকি হাসি দেয়।
আমানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

-আমি আসলাম।তুমি ভালো থেকো।জীবন থেকে পালানোটা বন্ধ করো।
আমান নোহার কপালে চুমু খায়।
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য অনেক শুভকামনা। আশা করি খুব সুখের হবে তোর নতুন জীবন।ভালো থাকিস নোহা।
নোহা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসে।
এবার বিদায়ের পালা।নোহা সবার থেকে বিদায় নেয়।
সঙ্গে নওরিন ও।নোহাকে আগেই তারা নিয়ে গেছে।নওরিনকে নেওয়ার জন্য শুধু নিবিড় রয়ে গেছে।জিনাত সিকদার পুত্রবধুকে আটকানোর চেষ্টা করে।কিন্তু তিনি ব্যার্থ হয়ে ইসরাককে বলে নওরিনকে আটকানোর জন্য।মেয়েরা যে স্বামীর কথা ফেলতে পারে না।
ইসরাক নোহার হাত টেনে ধরে।

-যেও না নওরিন, প্লিজ।আমি ভীষণ একা হয়ে যাবো।
-আমি তো আগেই বলেছিলাম থাকবো না।
-আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয়ো দুইজন মানুষ একসাথে চলে গেলে আমি তো নিঃস্ব হয়ে যাবো।ভেসে যাবো।ভীষণ একা হয়ে যাবো।আমি নিতে পারবো না।প্লিজ থেকে যাও।
পাশ থেকে নিবিড় বলে উঠে,
-এটা কিন্তু কথা ছিলো না।ইসরাক সিকদার আমায় কি কথা দিয়েছিলো সেটা নিশ্চয় তার মনে আছে।সিকদার বাড়ির লোকেরা নাকি কথার বরখেলাপ করে না।আমি অন্তত তাই জানতাম।
ইসরাক নওরিনের হাত ছেড়ে দেয়,

নিবিড় নওরিনকে টেনে নিজের সাথে নিয়ে যায়।
নওরিন যাওয়ার সময় বার বার প্রশ্ন করিছিলো কি কথা!কি এমন কথা দিয়েছেন ওনি?
নিবিড় শুধু একটাই উওর দেয়,
-যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি।যা করবো তোর ভালোর জন্য করবো।আপাতোতো আমার কাছে ইসরাক সিকদারকে তোর যোগ্য মনে হয় না!অযোগ্য কোনো পুরুষের কাছে আমি আমার বোনকে দেবো না।
নওরিন আর কিছু বলে না….
নিবিড় নওরিনকে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যায়।তিশা বার বার বলেছে নওরিনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে।কিন্তু বর্তমানে নিবিড় শুধু সেটাই করবে যেটা তার কাছে ঠিক মনে হবে……

তিয়াশের মা বেশ যন্ত করে নোহাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়।নোহা মনে মনে বেশ খুশি।
বাড়ি ফিরতে ফিরতেই প্রায় মাঝরাত হয়ে গেছে।এতো রাতে শুধু শুধু জাগিয়ে রেখে লাভ নেই।খাওয়া দাওয়া তারা সিকদার বাড়ি থেকেই করে এসেছে।
সারা দিনের ধকলে সবাই বেশ ক্লান্ত।
নোহা আর তিয়াশকে তিয়াশের ঘরে দিয়ে
ভদ্রমহিলা তিশার কানে কানে কিছু একটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।
বাড়িতে তেমন লোকজন নেই।সদস্য বলতেই তারা স্বামী স্ত্রী আর তিশা তিয়াশ।
তিশা নোহাকে খাটে বসিয়ে দেয়।তিশা সাত মাসের প্রেগনেন্ট।নোহা বসতে বসতে দুম করে তিশার পেটে হাত দেয়,

-বাবু কি নড়ে?
তিশা হেসে উওর দেয়,
-একটু আগেই নড়ছিলো।এরপর নড়লো তোমায় দেখাবো।
-সত্যিই
-হুম্ম সত্যিই।
নোহা মুচকি হাসে…
তিশা নোহার পাশে বসে,
-কোনো হেল্প লাগবে?এগুলো খুলতে(গয়না)
-না না আমি পারি তুমি ঘরে যাও বাবু মনে হয় ঘুমাবে…
নোহা জিহ্বায় কামড় দেয়,

-তুমি বলে ফেললাম
-না না বলো সমস্যা কি।তোমার বর পারলে তো আমায় তুইয়ের চেয়ে নিচে কিছু বলতো।
তিয়াশ রাগী চোখে তাকায়।
-থামবি তুই?
তিশা মুখ বাঁকায়ে,
-ভাবি,সম্পর্কে তুমি আমার বড়।এই ছেলেটাকে বাবা মা আমার দুই বছর আগে টোকায়ে আনছে তাই বড় হইতে তাই তোমার নাম ধরে না ডেকে ভাবি ডাকলাম যদিও তুমি আমার ছোটই হবে

-না না সমস্যা নেই।
-আচ্ছা শুনো তোমার এই ঘরে থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না তো?না মানে ভাইয়ের সাথে থাকতে কোনো….অস্বস্তি হলে বলতে পারো।তোমার আমি আমার ঘরে নিয়ে যাবো।
তিয়াশ এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
-তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম আমি?আমার সবকিছুতেই তোর ব্যাগড়্যা দেওয়া লাগে কেন?
তিশা মুখ ভাঙ্গিয়ে বলে উঠে,

-তুই চুপ থাক…..তুই কি কিছু বুঝিস? নাকি জানিস?
-সব জানি আমি
-কি সব জানিস?কতোবার বিয়ে করেছিস শুনি?
তিশা এটা বলেই হা হা করে হেসে দেয়,
তিয়াশ নোহার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
–আচ্ছা চলে গেলাম।অসুবিধা হলে বরকে ঠেঙ্গিয়ে আমার কাছে আসবা।আমি তোমারে সাপোর্ট দিবো।
নোহা মাথা নাড়ে।
তিশা ঘর থেকে চলে যায়।
নোহা বিছানায় বসে পা দোলাচ্ছে আর আড় চোখে দেখছে তিয়াশকে।আর তিয়াশ সোফায় বসে ফোন চাপচ্ছে।
তিয়াশ লক্ষ করে নোহা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

-কিছু বলবা?কিছু লাগবে তোমার!
-এতোক্ষণ কোই ছিলেন?
-না মানে…তোমায় অস্বস্তিতে ফেলতে চাই নি। চেন্জ করে নাও যাও
নোহা মুখ বাকিয়ে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে। তিয়াশ সোফায় চোখ বুজে শুয়ে আছে।
নোহা চুল মুছতে মুছতে তিয়াশের কাছে এগিয়ে আসে।

-বিছানায় শুলেই তো পারেন।
-এতো রাতে গোছল করলে কেন ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
তিয়াশ চোখ বুজেই বলে উঠে,
-এতো সাজুগুজু করা অভ্যাস নেই।কেমন কেমন লাগছিলো।উঠুন তো উঠুন।এভাবে শোয়া যায় নাকি!
তিয়াশ নোহার কথায় লাফিয়ে উঠে,নোহার দিকে তাকায়।
নোহার পড়নে হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি।এলোমেলো ভেজা চুল।চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।তিয়াশ এক নজরে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে।ঘোর লেগে গেছে তার চোখে।চোখে অদ্ভুত নেশা ঝলক দিচ্ছে।
নোহার ঠোঁটে বাঁকা হাসি,

-এভাবে দেখার কিছু নেই।বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমার অসুবিধা নেই।
তিয়াশ নোহার দিক থেকে চোখ না ফিরিয়েই বলে উঠে,
-আমার চোখে নেশা লেগে গেছে নোহা।বেশিক্ষণ সামনে থেকো না।নেশাখোরদের বিশ্বাস করতে নেই।তারা কখন কি করে বসে তা তারা নিজেরাও জানে না।নিজের প্রতি তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ায় ভালো!
তিয়াশ বিছানার কাছে যায়।

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৬

নোহা দুম করে তিয়াশের সামনে চলে আসে। মুচকি হেসে বলে উঠে,
-আপনি কি ড্রাগ এডিকটেড?চোখে এতো কিসের ঘোর?
-উহু….নোহা এডিকটেড আমি!

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৮