রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৭

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৭
সিমরান মিমি

রাত সাড়ে নয়টা।দলের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে গোপন বৈঠকে বসেছিল পরশ।এরইমধ্যে স্পর্শীর ফোন পেতেই অবাক হয়ে রিসিভড করেছিলো।ওপাশ থেকে তার বলা হুমকিস্বরূপ কথাগুলো শুনতেই ভ্রু কুচকে ফেললো। স্পর্শীর গলা কাপছিলো,ভীষণ রেগে ছিলো।কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব কষ্ট করে কান্না আটকে রাখতে চাইছিলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে।তোয়াক্কা করলো না পরশ।স্পর্শীর উদ্দেশ্যে ধীর কন্ঠে বললো-

স্পর্শীয়া,কি হয়েছে?
কান্নায় ঠোট ভেঙে আসছে স্পর্শীর।তাও নিজেকে সামলালো।কন্ঠে সামান্য তেজ এনে বললো-
আপনি আসবেন কি না?
ওদিকে যে কিছু একটা হয়েছে সেটা বুঝে গেল পরশ। ছোট্ট করে বললো-
আসছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফোন কেটে দিল পরশ। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো-
আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে।আজকের মিটিং এখানেই ক্যানসেল।আগামীতে সময় করে আপনাদের কে খবর দেওয়া হবে।
এরপর পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো-

কমিশনার সাহেব কে ফোন দে।এক্ষুণি সরদার বাড়িতে যেতে হবে।আর হ্যা,রেজিস্ট্রি পেপার ও সাথে রাখিস।
পাভেল আর দ্বিমত করে নি।ফোন হাতে বেরিয়ে গেল রুমের বাইরে।চেয়ারে গা এলিয়ে দিল পরশ।চাইলেই সে নিজে গিয়ে স্পর্শীকে নিয়ে আসতে পারে।এতো প্রমাণ,পুলিশ কিছুর’ই দরকার ছিল না।কিন্তু সেটা বর্তমানে তার সাথে মানানসই হবে না।বিরোধী পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন ভাবে তার দোষ ধরার জন্য ওত পেতে রয়েছে।তেমন কোনো ক্ষতি করতে না পারলেও সম্মানে যে আঘাত লাগবে সেটাই অনেক বড় বিষয়।এমনিতেও বাবা বিয়েটা নিয়ে বেশ ঘাবড়ে আছে।

অলরেডি বিশ মিনিট হয়ে গেছে।যত সময় যাচ্ছে স্পর্শীর তত রাগ বাড়ছে।আচ্ছা সেতো বলে দিল,নেতামশাই বিশ মিনিটের মধ্যে না এলে কিছু একটা করে বসবে।কিন্তু এই বন্ধ ঘরের মধ্যে সে কি করবে?সুইসাইড! ভাবতেই হাসি পাচ্ছে স্পর্শীর।সে করবে সুইসাইড, তাও এই সামান্য কিছু ব্যাপারের জন্য।এহহহহ,তার জীবন কি ওতো সস্তা নাকি।পুনরায় চিন্তিত মুখে চারদিকে তাকালো।সারা শরীর বড্ড নিশপিশ করছে।

সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ছে নেতামশাই য়ের উপর।এখনো কেন আসছে না।বারকয়েক দরজার উপর ধাক্কা দিলো স্পর্শী।কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ খুললো না।রাগে,জেদে রুমের মধ্যে ছূটে এলো।সারা রুমে এখন তার রাগের তান্ডব চালাবে।টেবিলের উপর চোখ যেতেই সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল।ইশ,বাচ্চা মেয়েটা কি সুন্দর করে পুরো ঘরটা পুতুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।চারপাশ টা কি সুন্দর গোছানো।এখন রাগের বশে এগুলো ভাঙলে নিশ্চয়ই আর্শি খুব কষ্ট পাবে।নাহ,এসব ভাঙাচোরা বন্ধ।

সোফায় নিঝুম হয়ে বসে আছে সোভাম।এই মুহূর্তে রাগ কিছুটা কমেছে। কেননা,আরাফ বলে দিয়েছে স্পর্শীর দশটা বিয়ে হলেও তার কোনো সমস্যা নেই। সে বিয়ে করবে।শামসুল সরদার দুরেই বসে ভাবনায় নিমজ্জিত।বিয়ে হয়েছে জেনেও আরাফের কেন এতো তাড়া?নিশ্চয়ই কোনো কিছু লুকাচ্ছে তাদের কাছে।কিন্তু কি সেটা?সোভামের মন মেজাজ ভীষণ খারাপ দেখে এই ব্যাপারে তিনি আর কথা বললেন না। যা বলার সকালে বলবে।এরইমধ্যে বাড়ির সামনে থেকে গাড়ির হর্ণ বাজলো,সাথে লোকজনের আওয়াজ ও।চমকে উঠলো স্পর্শী।এই বুঝি তার নেতামশাই এসে গেছে।সোফা থেকে উঠে বাড়ির সদর দরজায় গেল সোভাম।গেটের দিকে তাকাতেই তার চক্ষু চড়কগাছ।

পরপর পাচটা মাইক্রো এবং শ-খানেক মোটর সাইকেল থামলো সরদার বাড়ির গেটের সামনে।পরশ বিয়ে করেছে তাও সরদার বাড়ির বড় মেয়েকে এ কথা শোনামাত্রই দলের বাকি সবাই রওনা দিয়েছে তার সাথে।সামান্য কোথাও জনসভা থাকলেও পরশ শিকদারের গাড়ির সামনে ও পিছনে তাকে গার্ড দেওয়ার জন্য দলের তরুন যুবকরা শত খানিক মোটর সাইকেল নিয়ে রেডি থাকে।

দারোয়ান গেট খুলতেই চঞ্চল পায়ে ভেতরে চলে যায় পরশ।সাথে কমিশনার সহ তার ফোর্সের কিছু পুলিশ,পরশের বডিগার্ড, পাভেল সহ দলের ছেলেরা।সদর দরজার সামনে আসতেই পরশের ইশারায় সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।শুধুমাত্র কমিশনার,পাভেল,পরশ ও দুজন বডিগার্ড ঢুকলো বাড়ির মধ্যে।

পরশকে দেখতেই হেরে যাওয়ার ব্যাথাটা আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো সোভামের।কমিশনার এবং পুলিশ থেকে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে রাখলো।শামসুল সরদার বেশ আথিতেয়তার সহিত তাদের সোফায় বসতে দিলেন এবং মহিলাদের হুকুম দিলেন নাস্তার জন্য।

শামসুল সরদার পরশের দিকে একবার চাইলেন। সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বেশ দাম্ভিকতার সাথে বসেছে সে।টগবগে এই তরুন যুবককে দেখে নিজের যুবক বয়সের ছবি ভেসে উঠলো।
সোভাম কিছু বলে উঠতেই শামসুল সরদার ইশারা দিলেন থামার জন্য।তারপর নিজে কমিশনারের দিকে তাকিয়ে বললেন-
হঠাৎ এই সময়ে আসলেন যে কমিশনার সাহেব?কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বুঝি।
নড়েচড়ে বসলেন কমিশনার।বললেন-

এমপি সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে এসেছেন।কোথায় আপনার মেয়ে?
তেতে উঠলো সোভাম।দাতে দাত চেপে বললো-
স্ত্রী মানে কি হ্যা,কখন বিয়ে হলো আমার বোনের?হলে আপনারা জানতেন না?
নুয়ে পড়লো কমিশনার।সত্যিই তো সে কিছু জানে না।এমনকি কেউই কিছু জানে না।পরশ শান্ত ভংগিতে শামসুলের দিকে তাকালো।তারপর বললো-

স্পর্শীয়া কোথায় আংকেল?
চমকে উঠলো স্পর্শী।দরজার উপর হেলান দিয়ে কান পাতছিল সে।পরশের কন্ঠস্বর শুনতেই চেচিয়ে উঠে বললো-
নেতামশাই,আমি এখানে।একদম কোনার রুমে।

চকিতে চাইলো পরশ।কোনার রুমের তো দরজা বন্ধ।তাহলে কি স্পর্শীয়াকে আটকে রাখা হয়েছে।নিমিষেই মাথা গরম হয়ে গেল তার।সোফা থেকে উঠে গটগট পায়ে সোজা রুমের সামনে গেল।তালাবদ্ধ নয় তবে সিটকিনি লাগানো।ত্রস্ত হাতে দরজা খুলতেই হকচকিয়ে গেল স্পর্শী।এতো তাড়াতাড়ি দরজা খোলা হবে ভাবেনি সে।তাইতো দরজার সাথে একদম লেপ্টে কান পাতছিলো বাইরের কথায়।পরশকে দেখা মাত্রই পাশ থেকে ফোন আর ট্রলি হাতে নিল৷ পরশ এক হাত দিয়ে ট্রলি নিয়ে অন্যহাত দিয়ে স্পর্শীর হাত ধরে বাইরে চলে আসলো।

শামসুল সরদার এখনো সোভামের হাত ধরে চেপে রেখেছে।পরশকে তখন উঠতে দেখেই সেও ছুটতে চেয়েছিলো তার পিছু পিছু।হয়তো হাতাহাতি হয়ে যেত দুজনার মধ্যে।সেই ভয়েই তিনি ছেলেকে আটকান।বসার ঘরে পরশ এসে কন্ঠে গাম্ভীর্যতা এনে বললো-

সম্পর্ক টা স্বাভাবিক ভাবেই পরিপূর্ণ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু আপনাদের জন্য অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটাতে বাধ্য হলাম।আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেলাম।আসি
বলেই গটগট পায়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো।এরইমধ্যে শামসুল সরদার তেজি স্বরে বললো-
তূমি যে ওকে বিয়ে করেছো তার প্রমাণ কি?কোন সাহসে আমার বাড়িতে এসে আমারই সামনে আমারই মেয়ের হাত ধরে বের করে নিয়ে যাচ্ছো?

পরশ পিছু চাইলো।পাভেল কে ইশারা করতেই সে রেজিস্ট্রি পেপার কমিশনারের হাতে দিলো।পেপারে চোখ বোলাতেই আতকে উঠলেন কমিশনার।সোভামের দিকে তাকিয়ে তেজী সুরে বললেন-
মশকরা পেয়েছেন।রেজিস্ট্রি পেপারে তো সাক্ষী হিসেবে আপনি নিজেও সই করেছেন।তাহলে এখন মানছেন না কেন?
চমকে তাকালো সোভাম।কমিশনারের হাত থেকে টেনে নিয়ে গেল কাগজ।চোখ বোলাতেই আশ্চর্য হয়ে গেল।অবিকল তার সাক্ষর।তবে এটা যে নকল সই সে বিষয়ে নিশ্চিত।

পরশ নিজেও চমকালো।পাভেলের দিকে তাকাতেই দেখলো সে তার দিকে দাত কেলিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।দীর্ঘশ্বাস ফেললো পরশ।এসবের কি খুব দরকার ছিলো।শুধু শুধু ঝামেলা।
শামসুল সরদার আর কিছু বললেন না।কিই বা বলবেন তিনি?সাবালিকা মেয়ে,তার উপর বিয়েও হয়ে গেছে এক্ষেত্রে কি করতে পারেন তিনি।মেয়েটাতো নিজেই ত্যাড়া।বাধা দিতে গেলে সবার সামনে যদি ত্যাড়ামি করে বসে,তাহলে যে মান সম্মান যা ছিলো তাও থাকবে না।

সবার সামনে থেকে পুনরায় স্পর্শীর হাত ধরলো পরশ।সামনে এগোতেই হাতে টান পড়তে পিছু চাইলো।স্পর্শী হাত ছিটকে কঠিন চোখে পরশের দিকে তাকিয়ে রইলো।থমথমে মুখে বললো-
আমার চোখ আছে দেখার জন্য।হাটার জন্য ও পা আছে।আমি নিজেই যেতে পারবো।
থেমে দাতে দাত চেপে বললো-

আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন না,ভুলেও হাত ধরার চেষ্টা ও করবেন না।একদম মুচড়ে দিব হাত।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পরশ।এতটা ত্যাড়া কি ভাবে হয়?মাথায় যখন যা আসে তাই করে ফেলে।এক্ষুণি তো ঠিক ছিলো,এরমধ্যে আবার ভুত চেপে বসলো।নিচের দিকে তাকিয়ে হতাশার শ্বাস ফেললো পরশ।স্পর্শী অলরেডি সামনে হেটে গেছে।পরশ ও বেরিয়ে গেল।আর পাভেল?সে তো পুনরায় হতাশার সুর টেনে ভাইয়ের কানের কাছে গিয়ে বললো-
একে কিভাবে সামলাবি ভাই?

শিকদার মহলের সামনেই গাড়ি গুলো থামলো।একেবারে স্পর্শীকে ঘরে উঠিয়ে তার পরেই বিদায় নেবেন কমিশনার সাহেব।গাড়ি থেকে বের হতেই অসস্তিতে নুইয়ে রইলো স্পর্শী।অচেনা জায়গা,অচেনা মানুষ, আদোও পারবে তো সবার মন রাখতে।পরশ তাকে ফেলেই সামনের দিকে হেটে গেল।আহাম্মক বনে গেল স্পর্শীয়া।দ্রুতপায়ে গিয়ে পরশের পাশে বিড়াল ছানার মতো গুটিশুটি পাকিয়ে হাটতে লাগলো।একপর্যায়ে নিজে থেকেই পরশের ডান হাত আলতো ভাবে ধরলো।মুহুর্তে’ই দাড়িয়ে পড়লো পরশ।স্পর্শীর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই বললো-

আমার কেমন কেমন জানি লাগছে।
পরশ হাসলো।তারপর স্পর্শীর হাত থেকে আলগোছে নিজের হাত টা ছাড়ালো।বললো-
একি!তোমার চোখ আছে,পা ও আছে।আমাকে ধরার কোনো প্রয়োজন তো নেই। যাও সামনে যাও।
মুহুর্তেই চুপসে গেল স্পর্শী।সে তো রাগের মাথায় বলে ছিলো। তাই বলে এখনো এমন করবে।

কলিং বেল চাপতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয় পিয়াশা।সামনেই পরশের পাশে অচেনা মেয়েটিকে দেখেই চমকে ওঠে।আশে-পাশে ছেলে পেলের অভাব নেই।পুলিশ ও আছে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাভেল দ্রুতপায়ে ঘরে ঢোকে।মাকে একপাশে নিয়ে বলে-
আম্মু,ওটা ভাইয়ের বউ।তুমি প্লিজ এতো লোকের সামনে সিনক্রিয়েট করো না।বকো,মারো যাই করে সবাই আগে যাক। তারপর।

পিয়াশা সামান্য আশাহত হলো।তারপর সময় নষ্ট না করেই রান্নাঘরে ছুটলো।দুর্বা নেই,মোমবাতি সহ বাদ বাকি সমস্ত জিনিস নিয়ে সাজিয়ে আনলেন বরণ ডালা।তারপর দ্রুতপায়ে ছুটে এলেন সদর দরজার সামনে।মাকে ডালা হাতে দেখেই সস্তির নিঃশাস ফেললো পরশ।সে ভেবেছিলো এক্ষুণি বুঝি কেদেকুটে বন্যা বইয়ে দেবে।

বরণের পালা শেষ হতেই রান্নাঘরে ছুটলো পিয়াশা।আপাতত দ্রুতহাতে নাস্তা দিয়ে বিদায় করলো কমিশনার কে।বাইরেই দলের বাদবাকি ছেলেপেলেরা রয়েছে।এতো লোককে তো আর ঘরে এনে হুট করে নাস্তা করানো যায় না।সকলকে বিদায় করতেই পরশ পাভেলকে টাকা দিয়ে বললো বাকি সবাইকে বাজারে নিয়ে মিষ্টি খাওয়াতে।

রাত এগারোটা।বেশ চিন্তিত মুখে বসে আছে মহীউদ্দীন শিকদার।পাশেই তার ভাইসহ স্ত্রী বসে আছে।পিয়াশা ফুপিয়ে উঠে বললেন-
বউ যখন বাড়িতেই নিয়ে আসবি তখন সন্ধ্যাবেলায় বললে কি হতো?বিয়েও একা করলি,বউ ও একা গিয়ে নিয়ে আসলি।আমরা তো কেউ না।

আহ,পিয়া। থামবে তুমি।
মহীউদ্দীন শিকদার বললেন।তারপর পরশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
হুট করে এই ঘটনা ঘটানোর কারন কি?
বাবার দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে পরশ বললো-
সোভাম ওকে ঘরে আটকে রেখেছিলো। বিয়ের কথা চলছিলো।আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনি।তাই হুট করেই এমন কাজ করতে হলো।

থেমে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো-
আশ্চর্য! তুমিই তো আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলে।এখন বিয়ে করেছি বলে কাদছো কেন?মেয়ে কি পছন্দ হয় নি?
পিয়াশা রেগে বললেন-

এটা কোনো বিয়ের মধ্যে পড়ে।কোনো অনুষ্ঠান নাই,মানুষ জন নাই,আত্নীয়-স্বজন জানে না এমনকি আমরাও জানি না।
আমি কি তোমাদের অনুষ্ঠান করতে বারন করেছি?(শান্ত স্বরে বললো পরশ)
মহিউদ্দিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন-
তাহলে ওই কথাই রইলো।আগামীকাল ছোট খাটো একটু আয়োজনে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে।তারপর নাহয় সময় করে বড় করে অনুষ্ঠান করবো।

রাজি হয়ে গেলেন পিয়াশা।তারপর চলে গেলেন রান্নাঘরে। অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো কারো খাওয়া-দাওয়া হয়ে ওঠে নি।খাবার টেবিলে সবার খাবার বেরে একটা প্লেট হাতে নিয়ে উপরে চললেন।পাভেল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
এটা কার জন্য?

পিয়াশা এখনো স্পর্শীর নাম জানে না।সেভাবে কথা বলার সুযোগ’ই হয় নি।সন্ধ্যায় পরশ নাম বললেও খেয়াল করে শোনে নি।তাই উপরের দিকে তাকিয়ে বললো-
নতুন বউয়ের জন্য।ওকে প্রেমার রুমে রেখে এসেছি।
পাভেল-কেন?প্রেমার রুমে কেন?ভাইয়ের রুমে রাখতে কি সমস্যা?
দাত কিড়মিড় করে পিয়াশা বললেন-

তোর অতো মাথা ঘামাতে হবে না।আগে কাল ভালোমতো বিয়েটা হোক,তারপর ও ঘরে যাবে।তার আগে দেখা করার ও দরকার নেই।একদম বাড়াবাড়ি করবি না।আমার কথার যেন একটুও নড়চড় না হয় বলে দিলাম।
থ হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ।সে তো ভেবেছিলো স্পর্শী তার রুমেই থাকবে।মাথা নুইয়ে হতাশার শাস ফেলে প্লেটে হাত বোলাতে বোলাতে বিরবির করে বললো-
আশ্চর্য সব নিয়ম কানুন আমার বেলাতেই হয়।

হতাশার সুর টেনে পরশের মাথায় হাত বুলিয়ে পাভেল বলে উঠল-
দেখেছিস এমপি হওয়ার প্বার্শপ্রতিক্রিয়া কত?আজ সাধারণ জনগন হলে নিজের বউকে টেনে হিচড়ে রুমে নিয়ে দরজা আটকে দিতি।টানা চার/পাচদিন ধরে রুম আটকে হরতাল চালাতি।আফসোস!এখন আর পারছিস না।তাহলে যে নিজের প্রেস্টিজ কাল মিডিয়ার হাতে কানামাছি খেলবে।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৬

বার্তা:জ্বরের কারনে নিঃশ্বাস টুকুও ঠিক মতো নিতে পারছি না।এই ছাড়ে তো আবার কতক্ষণ পর ওঠে।আপাতত কদিন হয়তো অনিয়মিত হতে হবে আমায়।যাই হোক,কেমন হয়েছে জানাবেন।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৮