রাজনীতির রংমহল পর্ব ২০

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২০
সিমরান মিমি

খাবার টেবিলে নিরব হয়ে বসে আছে স্পর্শী। পেটে ভীষণ ক্ষুধা তার।অথচ তাকে খেতে দিচ্ছে না পরশের নানী।এটা নাকি নিয়ম।নতুন বউ বরের আগে খেতে পারবে না।চারদিকে সবাই কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছে আর স্পর্শী নিচের দিকে তাকিয়ে পেটের সাথে যুদ্ধ চালাচ্ছে।কিছুক্ষণ আগেই কাজি তাদের বিয়ে পড়িয়েছে।এখন সবাই মিলে খাওয়ায় মেতে আছে।

বড় এক স্টিলের থালা।তার মাঝখানে দু-চামচ পোলাও। পোলাও কে ঘিরে একে একে রাখা আছে আস্ত চিকেন,বড় রুই মাছের মাথা,রোস্ট,চিংড়ি,ডিম,ভাপা ইলিশের টুকরো,গরুর মাংস,খাসির মাংস,সালাদ এবং তারপরে দুটো রসগোল্লা। এটা জামাইয়ের থালা।বিপাশা থালাটা নিজ হাতে সাজিয়ে পরশের সামনে রাখলো।সামান্য সময়ের জন্য নিজের খাবার দেখে হকচকিয়ে গেল পরশ।তার নানি পাশেই বসে আছে। পাভেল কনুই দিয়ে গুতো মেরে পরশ কে বললো-
ভাই,এমন এক খানা থালা পাওয়ার জন্য হলেও বিয়েটা তাড়াতাড়ি করা উচিত।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্পর্শীর খিদেয় পেটে মোচড় দেওয়া শুরু করে দিয়েছে।বিপাশার দিকে করুন চোখে তাকাতেই ইশারা দিয়ে শান্ত হতে বললো। দ্রুতপায়ে পরশের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো-
বাবা,তুমি খাওয়া শুরু কর।স্পর্শীটার খিদে পেয়েছে।তুমি যতক্ষণে খাওয়া শেষ না করবে ততক্ষণে ও খেতে পারবে না।
চমকে তাকালো পরশ।কিছু বলার আগেই বিপাশা পুনরায় বললো-
এটাই নিয়ম।

পরশ আর কিচ্ছু বললো না।হাত ধুয়ে চিকেন টার একপাশ ছিড়ে মুখে দিল।সামান্য একটু পোলাও মুখে দিয়েই বললো –
আমার খাওয়া হয়ে গেছে।আর খাব না।
আতকে উঠলেন রেহানা বেগম।হায়হায় করতে করতে বললেন-
এইডা কি কও নানুভাই।এরম হইলে তো হইবো না।এই সব পদ দিয়াই একটু একটু খাইতে হইবো।নাইলে তো বউ খাইতে পারবো না।

নিভে গেল পরশ।দ্রুত সব পদ থেকে সামান্য একটু করে মুখে দিয়ে তারপর হাত ধুতে গেলেই পুনরায় আতকে উঠেন রেহানা।বলেন-
আরে আরে,অন্য থালায় হাত ধোও।বউরে কি না খাওয়াইয়া রাখবা নাকি এই থালায় হাত ধুইয়া।
থেমে,
ও বিপাশা,নাও এইডা নিয়া তোমার মাইয়ারে খাইতে দাও।
পরশ অবাক হয়ে বললো-

এটা নিয়ে মানে।এই মাখা খাবার খাবে ও।
রেহানা সামান্য লজ্জা পাওয়ার ভংগিতে বলল-
হ,স্বামীর ঝুডা ভাত খাইলে ভালোবাসা বাড়ে।আমিও খাইছিলাম।
হতাশ হলো পরশ।এটা মহিলাদের নিয়ম কানুন।তার কিছু করার নেই। আর করতে গেলেও নানি বাড়ি মাথায় তুলবে।পরশ মাঝেমধ্যে ভাবে এই মহিলার পেটে তার শান্তশিষ্ট মা কি করে হলো।এ তো একদম পাভেলের কার্বন কপি।
খাবারের থালা স্পর্শীর সামনে দিতেই সে আতকে উঠলো।বললো-

এটা তো কারো খাওয়া খাবার। আমি এ খাবার খাবো কেন?
তড়িঘড়ি করে সামলে নিলেন বিপাশা।স্পর্শীর কানের কাছে গিয়ে ছোট্ট আওয়াযে বললেন-
একদম কোনো কথা বলিস না মা।চুপচাপ খেয়ে নে।এটা পরশের খাওয়া খাবার।তোকে খেতে হবে।এটাই নিয়ম।আমরাও খেয়েছি বিয়ের সময়।তুই কোনো হাঙ্গামা করিস না মা। বিয়ে বাড়ি,অনেক লোকজন।খেয়ে নে।
স্পর্শী করুন চোখে খালামনির দিকে তাকালো।তারপর কিছু না বলেই চুপচাপ একপাশ থেকে সামান্য কিছু খেল।পেট উগড়ে আসছে তার।

বিকেল পাচটা।সবাই পরশের রুমে বাসর খাট সাজাচ্ছে।স্পর্শী বেনারসি চেঞ্জ করে একটা কুর্তি পড়লো।তারপর সোজা হয়ে পেটের উপর হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো।ভীষণ খিদে পেয়েছে তার।এখন খুব আফসোস হচ্ছে।মনে মনে নিজেকেই ঝারছে সে।
কি হতো তখন ভালো করে খেলে?নেতামশাই য়েরই তো খাওয়া খাবার।ছি:স্পর্শী, সামান্য জামাইয়ের খাওয়া খাবার হজম করতে পারিস না, চুমু কি করে হজম করবি?বেয়াদপ মেয়ে।
এরইমধ্যে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো পরশ।হাতে খাবারের প্লেট।দেখামাত্রই উঠে ছুটে গেল স্পর্শী। হাত দিয়ে খাবারের প্লেট টেনে এনে বিছানায় বসলো।বললো-

উফফ,আপনি কত্ত কিউট নেতামশাই।কি করে জানলেন, আমার খিদে পেয়েছে।থাংকিউ।এভাবেই আমাকে বুজতে থাকবেন আর আমি একটু একটু করে পটতে থাকবো।এই দেখুন, এই মাত্র দু কেজি পটে গেলাম।
পরশ শান্ত দৃষ্টিতে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর চুপচাপ খাট থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে যেতে লাগলো।পরশকে বাইরে যেতে দেখে মুখে খাবার নেওয়া অবস্থাতেই অস্পষ্ট গলায় বললো-

একি নেতামশাই,একটু বসবেন না?
পরশ থমকে দাড়ালো।পিছু চাইলো।কিন্তু ওই চোখের দিকে আর তাকালো না।কেন যেন স্পর্শীর চোখের দিকে তাকালেই ওর দম বন্ধ হয়ে যায়।ভীষণ অসভ্য হতে ইচ্ছে করে। নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।মুখে বললো-
হ্যা,এখন তোমার কাছে আমি বসে থাকি।আর পাভেল সারাবাড়িতে মাইকিং করুক।এমনিতেই বাড়ি ভর্তি মেহমান।তুমি খেয়ে প্লেট গুলো ওখানেই রেখে দিও।বাইরে বের হওয়ার দরকার নাই।

সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই পরশ তার এক বডিগার্ডের সাথে ধাক্কা খায়।মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে সুজন বললো-
ভাই,দেখি নাই সরি।
পরশ হেসে দিল।সুজনের কাধ চাপড়ে বললো-

খেয়েছিস?
সুজন আমতাআমতা করে বললো-
হু হ্যা খেয়েছি।
ভ্রু কুচকে ফেললো পরশ।অবাক হয়ে বললো-
পাচটা বেজে গেছে আর তুই এখনো খাস নি।
সামান্য লজ্জা পেল সুজন।আমতাআমতা করে বললো-

আসলে ভাই,সবাইকে খাওয়ানোর পরে একটু ইমপর্ট্যান্ট কল আসছিলো। তাই বাইরে গেছিলাম।আর খাওয়া হয় নি।
অবাক হয়ে গেল পরশ।বললো-
তুই কি পাগল।তুই নিজে নিয়ে খেতে পারতিস না।এখনো এতো অসস্তি কেন তোর আমি বুজলাম না।তোকে কি আমি কখনো বডিগার্ডের মতো দেখেছি।পাভেল আর তোকে কখনো আলাদা চোখেও দেখিনি আমি।কোথায় নিজের বাড়ির মতো মনে করে নিয়ে খাবি,আয়োজন করবি সেই জন্য খাওয়ানোর দায়িত্ব দিয়েছি।আর তুই?এখনো লজ্জা পাচ্ছিস।

থেমে
এই পাভেল(হাক ছেড়ে ডাকলো)
দ্রুত বেগে উপর থেকে নিচে নামলো পাভেল।পরশ পাভেলের কান ধরে টেনে বললো-
নিজে পেট গাদালেই চলবে?কে কে না খেয়ে আছে সেদিকে খেয়াল রাখবি না।এক্ষুনি ওকে তোর রুমে নিয়ে খেতে দে।নিচে অনেক মানুষ।

পাভেল ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।তারপর যেতে যেতে সুজনকে বললো-
দেখেছিস, ভাই তোকে আমার থেকেও বেশী ভালোবাসে। ইশ যদি জানতাম ওইদিন গুলি থেকে ভাইকে বাচালে এতটা ভালোবাসা পাবো।তাহলে শালা তোকে তো ভাইয়ের আশে-পাশেই আসতে দিতাম না।আমি নিজে বাচাতাম।
বিনিময়ে সুজন আলতো হেসে দিল।সত্যিই পরশ ভাই তাকে ভীষণ ভালোবাসে।একদম অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।

রাত এগারোটা।সারা রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। ফুলের সুঘ্রানে চারদিক মো মো করছে।বিছানার মাঝখানে খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে স্পর্শী।প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ বসে আছে সে।ঘাড়-পিঠ এবার সত্যিই ব্যাথা করছে।বসা থেকে উঠে এবার সারা রুম পায়েচারি করলো সে।এরইমধ্যে খুট করে দরজা খোলার শব্দ আসলো। দ্রুতবেগে ছুটে গিয়ে ঘোমটা দিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসলো স্পর্শী।পরশ কে ভেতরে আসতে দেখেই অদ্ভুত ভাবে হাত পা কাপাকাপি শুরু করলো তার।হৃদ স্পন্দন অলরেডি বেড়ে গেছে।বুকের মধ্যে ধুড়ুম ধুড়ুম শব্দে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।

পরশ ধীর পায়ে স্পর্শীর পাশে বসলো।দুহাত দিয়ে ঘোমটা সরাতেই ছিটকে দুরে গেল স্পর্শী।
এই একদম না, আমাকে ছোয়ার চেষ্টা ও করবেন না।দুপুর বেলা জিজ্ঞেস করেছিলাম-আমায় কেমন লাগছে?বলেছিলেন আপনি?নিজের ইগো দেখিয়ে চুপচাপ চলে গেছিলেন। এখন এসছেন কেন লুচুগিরি করতে।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল পরশ।সারাদিন তো ঠিক ঠাকই ছিলো।যত রাগ সব বাসর করার সময়ই বের হতে হলো।নিজেকে সংযত করে ধীর কন্ঠে বললো-

আমি তো আমার বউকে একাকি, নিরবে,এক রুমে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।তাই বলি নি,আর আসল কথা হচ্ছে-আমি নিজেকে সামলাতে পারতাম না স্পর্শীয়া।তাই,,
ইশ হয়ে গেল।লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো স্পর্শী।তারপর বিছানার এক পাশে গিয়ে গুটি শুটি পাকিয়ে শুয়ে পড়লো।হতভম্ব হয়ে গেল পরশ।আদোও কি রাগ কমেছে স্পর্শীর।হাতের গিফট টা টেবিলের উপর রেখে ঘড়ি খুললো।তারপর লাইট নিভিয়ে জানালা খুলে দিল।ঘরে অলরেডি একটা মোমবাতি জ্বলছে। ধীর পায়ে বিছানায় উঠে নিজেও স্পর্শীর পাশে শুলো।ডান হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শীর গা ছুতেই ছিটকে দূরে সরিয়ে দিল হাত।বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার মতো চমকে উঠলো পরশ।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৯

ধুর,এই মেয়ের যত রাগ সব বাসর রাতেই হতে হলো।নিজেকে ধাতস্থ করে কয়েকমিনিটি চুপ রইলো পরশ। তারপর আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল।হুট করে স্পর্শীর হাত টেনে সোজা করে শুইয়ে নিজেও ভর দিল তার উপর।চমকে উঠলো স্পর্শী।গলা শুকিয়ে গেছে তার।আবছা আলোয় অনেকক্ষণ স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ। তারপর হুট করে বললো-
ভীষণ গরম লাগছে তাই না।চলো লেহেঙ্গা টা খুলে দেই।

রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব