রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব 

রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব 
সিমরান মিমি

রাতের নিকশ অন্ধকারকে ভেদ করে পৃথিবীতে ধীরে ধীরে শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে আলো ছড়িয়ে পড়ছে।সূর্য এখনো ওঠেনি।পূর্ব দিকের আকাশ সামান্য লাল আভা ছড়িয়েছে মাত্র।জানালা দিয়ে রুমের মধ্যে আলোর রেশ পড়তেই আড়মোড়া ভাঙলো স্পর্শী।উপুড় হয়ে উঠতেই পরশের ঘুমন্ত মুখটা দৃষ্টিগোচর হলো।

এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো শ্যামলা,তামাটে মুখ খানির উপর।পরক্ষণেই রাতের কথা মনে হতেই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হেসে দিলো।বিছানায় শুয়ে পরশের বুকের উপর ভর দিয়ে পুনরায় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।আঙুল দিয়ে লোমওয়ালা প্রশস্ত বুকে আকিঝুকি করতে গিয়েই নজরে এলো হাতের লাল দাগ।পরক্ষণেই মনে পড়লো রাতের কথা।
নেতামশাই কে বাধা দিতে গেলে একপর্যায়ে কামড় মেরেছিলো হাতের উপর।মুহুর্তেই মুখ দিয়ে বিরবির করে বললো-
অসভ্য এমপি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নড়েচড়ে উঠলো পরশ।সে তো গভীর ঘুমে নয়।চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো মাত্র।দপ করে চোখ খুলতেই হকচকিয়ে যায় স্পর্শী।তাড়াহুড়ো করে পরশের গায়ের উপর থেকে সরে আসে।এরইমধ্যে কোমড় ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে ঠেস খাওয়ায় পরশ। কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো-
সভ্য হয়েই তো ঘুমিয়েছিলাম।সহ্য হয় নি তোমার।দুর্নাম রটালে।এবারে যখন অভিযোগ তুলেই ফেলেছো তখন একটু আধটু অসভ্য হতে ক্ষতি কি বল?

হেসে দিল স্পর্শী।পরশ আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তাকে।চুলে নাক ডোবাতেই পরশ নাক কুচকে ফেললো।বলল-
উমমম!চুল টাও মুছতে শেখো নি এখনো।ওঠো আমি মুছে দিচ্ছি।নয়তো পড়ে চুল পড়ে যাবে।
স্পর্শী উঠলো না।ওভাবেই শুয়ে রইলো।পরশ টাওয়াল আনলো।তারপর আলতো করে চুলগুলো মুছতে লাগলো।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই দ্রুত উঠে গেল সেখান থেকে।স্পর্শী ওভাবেই পড়ে রইলো।সারা শরীর ভীষণ ব্যাথা করছে। মাথা টাও ধরেছে।এরইমধ্যে পরশ বললো-

হয়ে গেছে।
বলেই পাচ ইঞ্চি কালার করা চুল স্পর্শীর সামনে ধরল। আতকে উঠলো স্পর্শী। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ছলছল চোখে চুলের দিকে তাকিয়ে রইল।রাগে দুঃখে এক প্রকার কেদেই ফেললো সে।বললো-
এটা আপনি কি করলেন?আমার এত্তোগুলা চুল কোন সাহসে কাটলেন আপনি?আমার চুল!

–তো কি করবো?বাদরের লেজের মতো নিচের চুলগুলো রঙ করে রেখেছো কেন?।বিচ্ছিরি দেখাচ্ছিলো।তাই কেটে দিয়েছি।কান্নাকাটির কিচ্ছু নেই। ক দিনের মধ্যে আবার বড় হয়ে যাবে।
রেগে চেচিয়ে উঠলো স্পর্শী। বললো-

বড় হবে সেটা আমিও জানি।কত্ত শখ করে কালার করেছি আমি।আর আপনি সেটা কেটে ফেললেন।আমি আবার কালার করবো।এবার শুধু নিচের টুকু না।পুরো চুলে করবো কালার।
কোনোরকম সময় ব্যয় না করেই পরশ বললো-
তাহলে তোমাকে পুরোটাই ন্যাড়া করে দিব।

ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল স্পর্শী।পরশ স্পর্শীকে ওভাবে তাকাতে দেখে বললো-
কি ভেবেছো,বিয়ের আগে তোমার সব বাদরামি সহ্য করেছি বলে বিয়ের পরেও করবো।নো মিসেস শিকদার,এটা তোমার ভুল ধারনা।সব বাদরামি ছুটিয়ে দিব আমি।আমায় চিনতে ভুল করেছো।একদম ভদ্র,নরম বউদের মতো থাকবা।
বলে পরশ বাথ্রুমে চলে গেল।আর স্পর্শী তব্দা খেয়ে পরশের কথাগুলো ভাবছে।

মা,চাচিরা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।এইফাকে মোবাইল নিয়ে ছাদে চলে গেল আর্শি।এতো এতো ঝামেলায় পাভেল ভাইকে একদম ফোন দিতে পারেনি।আজ প্রায় দুইদিন পর সে পাভেলের সাথে কথা বলবে।টানা তিনবার ফোন দেওয়ার পরেও ওপাশ থেকে রিসিভড হলো না।বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে আবারো ফোন দিল আর্শি।রিসিভড হতেই ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে ধমকে পাভেল বললো-

এই মেয়ে,সমস্যা কি তোমার?ফোন ধরছি না সেটা নজরে আসছে না তোমার।এতোবার ফোন দিচ্ছো কেন?ঘুমোচ্ছি আমি।
আর্শী পাভেলের ধমক শুনে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো-
পাভেল ভাই,আবার পড়ে গেলাম।
চমকে উঠলো পাভেল।বিছানায় বালিশ ঠেস দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো-
কোথায় পড়েছো?
ঠোট টিপে হেসে দিল আর্শি।মুখে বললো-

আপনার প্রেমে।এই যে আপনি ধমক গুলা দিচ্ছেন আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর পাভেল ভাই।এটা যদি রেকর্ডিং করে আপনাকে শোনানো যেতো তাহলে আপনি নিজেই প্রেমে পড়ে যেতেন।আমার কি দোষ বলুন?
পাভেল নিঃশব্দে হাসলো।মনে মনে বললো-

এই মেয়ে,আমিতো অলরেডি পটে আছি,এইসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আর পটাতে হবে না।
পরক্ষণেই ভাবলো সেটা বললেও বা ক্ষতি কি?ভাই নিজেই তো ও বাড়ির মেয়ে এনে বাসর করে নিয়েছে।সে প্রেম করলেই বা কি ক্ষতি।
শান্ত কন্ঠে বললো-আর্শিয়া।

–হুম,
–ভালোবাসো আমায়?
–খুউউউব!ভীষন!অনেএএএক!
পাভেল হাসলো।শান্ত কন্ঠে বললো-
বিয়ে করবে আমায়?

আর্শি হোচট খেলো।বার কয়েক নাম্বারের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখল এটা রঙ নাম্বার কি না।আজ এতো মধুর কন্ঠ যে হজম হচ্ছে না তার।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-
হ্যা হ্যা চাই।
পাভেল হাসলো।বললো-

তাহলে মন দিয়ে পরিক্ষা টা দাও।আরতো মাত্র পচিশ দিন বাকি।এএক্সাম দেওয়ার পরপরই নিয়ে আসবো আমার কাছে।
নুইয়ে গেল আর্শি।করুন কন্ঠে বললো-
কিন্তু আব্বু আর ভাইয়ারা যে..
বলার আগেই পাভেল বললো-
তোমার বড় বোনের মতো বাড়ি গিয়ে তুলে আনবো।

আর্শি খুশীতে উৎফুল্ল হয়ে নেচে উঠলো।তার পাভেল ভাই তাকে বিয়ে করবে।ভাবতেই ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে তো আবার উপরে উঠতে করছে।ইশশ।ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো পাভেল ফোন কেটে দিয়েছে।ফোন টাকে বুকের সাথে কিছুক্ষন চেপে ধরে নিচে চলে গেল।

শিকদার বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সরদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন বিপাশা।আসার সময় স্পর্শী খুব কেদেছে।বিপাশার ও ভীষণ কষ্ট হয়েছে স্পর্শীকে ছেড়ে আসতে।মনে হচ্ছিলো কলিজা টা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে।বাড়ি ফিরে কি করে ছেলের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে সে?

ছেলেটার প্রাণভোমরা টাকে নিজ হাতে অন্য ছেলের হাতে সপে দিয়ে গিয়েছে।যদিও রাহুল অনেকবার বলেছে সে সামলে নিয়েছে নিজেকে।কিন্তু বিপাশা তো জানে ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ঢুকরে মরছে।টাকা জমিয়ে স্পর্শীর জন্য আংটি কিনেছিলো রাহুল। সব সময় আংটিটা নিজের পকেটেই রাখে।

এই তো এখানে আসার আগে আংটিটা তার হাতে দিয়ে বলেছিলো, স্পর্শীর স্বামীকে উপহার দিতে।প্রথমে আনে চেয়েছিলো না বিপাশা।বাধ্য হয়ে এনেছে।ইশশ,ছেলেটা মনে করে না দিলে আত্নীয় স্বজনের সামনে মাথা কাটা যেত।হুট করে আসাতে তো কোনো উপহার’ই আনা হয় নি।
খুব শীঘ্রই ভালো একটা মেয়ে দেখে রাহুলের বিয়ে দিতে হবে। নইলে ছেলেটা তার মরেই যাবে স্পর্শীর শোকে।

ফ্লোরের উপর একটা পাটি বিছিয়ে, মাথার নিচে এক হাত দিয়ে অন্যহাত কপালে ঠেকিয়ে শুয়ে আছে পরশ। ভীষণ মাথা যন্ত্রনা করছে।পাশের সেল থেকে ভীষণ চেচামেচির আওয়াজ আসছে।আর শুতে পারলো না পরশ। থালাবাসন ফেলার শব্দ,মারামারি,গালাগালির শব্দে মাথা যন্ত্রনা বাড়ছে।উঠে বসে পাশের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করলো-
ওখানে কি হয়েছে?

–আর বইলেন না এমপি সাহেব। নতুন একটা খুনের আসামী আইছে।সারাদিন মারামারি করতেই থাকে।শুনছি,এই ব্যাটা নিজের বউয়ের গলা কাইট্টা খুন করছে তারপর জেলে আইছে।
থেমে,

এইসব খুনীগুলারে ফাসি না দিয়া সরকার জেলে পাঠাইছে আমাগো ভোগানোর লাইগা।
পরশ হাসলো।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-
সব খুনীরা খারাপ হয় না।এর স্ত্রীর মতো সমাজে কিছু বিষাক্ত মানুষের জন্য এরা খুন করতে বাধ্য হয়।এইসব বিষধর সাপ গুলোকে ইচ্ছে করে বারবার খুন করি।একাধিকবার জ্যান্ত করি আবার খুন করি।কিন্তু আফসোস!এদের একবার’ই খুন করা যায়।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২০

ঘাবড়ে গেলেন হাবিলদার।আমতাআমতা করে বললেন-
আপনে যেন কয়টা খুন করছেন?
পরশ আবারো হাসলো।যেন খুনের কথাগুলো বলতে তার ভীষণ ভালো লাগছে আনন্দ হচ্ছে।স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো-
তিনটা মার্ডার,আর দুটো পঙ্গু করে জেলে এসেছি।এক দুজন খুন করে পরশ শিকদার জেলে আসবে না।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২১