রাজনীতির রংমহল পর্ব ২৫

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২৫
সিমরান মিমি

রাত তখন বারোটা।চারপাশ নিস্তব্ধ। সব রুমের লাইট অফ থাকলেও রাহুলের রুমে তখনো আলো জ্বলছে।সারা দিন জার্নি করে এসে ভীষণ মাথা ধরেছে।বাইরে থেকে এসে খেয়েই রুমে এসেছে শুতে।খাটের মাঝখানে আর্শি শুয়ে আছে।রাহুল কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করলো।রুমে কোনো সোফা নেই যে সেখানে শোবে।এটা তো মুভি নয় যে সে ছুটে গিয়ে ফ্লোরে শোবে।

তার রুম,তার বাড়ি, তার খাট ঘুমোলে সে খাটেই ঘুমোবে।আর্শি চুলোয় যাক।তাতে তার কি?
ধীর পায়ে হেটে খাটের এক কোনায় গেল।আলতো করে বিছানায় পা উঠিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো যেন আর্শির গায়ে টাচ না লাগে।মাঝখানে শোওয়ার কারনে দুপাশে বেশ কম জায়গা।তার মধ্যেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো রাহুল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রায় পাচ মিনিট অতিবাহিত হতেই রাহুলের চোখ লেগে গেল।ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ ভেবে রাহুলের গায়ের উপর পা তুলে দিল আর্শি।মুহূর্তেই ৪৪৪ বোল্ডের ঝটকা খেয়ে লাফ দিয়ে উঠলো রাহুল।ফিরে তাকাতেই দেখলো একটা বাদামী রঙের পা তার গায়ের উপর।কাপা কাপা হাতে পা টা ধরে সরিয়ে দিয়েই লাফ দিয়ে খাট থেকে নামলো।গায়ের শাড়ি উপরে উঠে হাটু বেরিয়ে গেছে আর্শির।রাহুল ছুটে আলমারির কাছে গেল। পাতলা একটা চাদর হাতে নিয়ে দূর থেকেই ছুড়ে মারলো আর্শির গায়ের উপর।

পরপর কয়েকবার খাট নড়ায়,গায়ের উপর কিছু পড়ায় ঘুম আলগা হয়ে গেল আর্শির।বারকয়েক খুলতে গিয়েও চোখ বন্ধ করে নিল সে। মাথা টা প্রচুর ধরে আছে। বেশ কষ্ট করে তাকাতেই সামনের সাদা দেয়াল চোখে পড়লো।বারকয়েক চোখে ঝাপটা দিয়ে পলক ফেললো। পুরো অচেনা লাগছে সবকিছু তার কাছে।আশে-পাশে তাকাতেই ফ্লোরের উপর বুক ফুলিয়ে দন্ডায়মান রাহুলকে লক্ষ করলো।অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো আর্শি।মস্তিষ্কে চাপ দিতেই মনে পড়লো তার বিয়ের কথা।ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কবুল বলার কথা। তাহলে তার বিয়ে হয়ে গেছে বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে।মুহুর্তে’ই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ঢুকরে কেদে উঠলো।

রাহুল এতোক্ষণ ধরে আর্শির দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলেও হঠাৎ কান্না করায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।নিজেকে ধাতস্থ করে কন্ঠে জোর এনে হাক ছেড়ে মাকে ডাকলো-
ওমা,এদিকে আসো তো।ওর ঘুম ভেঙেছে।

শুয়েই ছিলেন বিপাশা।নানা চিন্তায় ঘুম ধরা দিচ্ছিলো না চোখে।মেয়েটা সেই যে ঘুমন্ত অবস্থায় এসেছে আর ওঠে নি।সে নিজেও আর্শির জন্য না খেয়ে বসে আছে।রাহুল আর রহমান সাহেব খেয়েছে মাত্র।মশারি তুলে খাট থেকে নেমে জুতো পড়লো বিপাশা।তারপর ধীর পায়ে রাহুলের রুমে আসতেই ঘাবড়ে গেলেন। আর্শি কাদছে।ছুটে খাটে বসলেন তিনি।দুহাত দিয়ে আর্শিকে আগলে বুকে নিয়ে বললেন-

এই আর্শি, কাদছো কেন মা?
আর্শি এবারে চাইলো বিপাশার দিকে।তারপর অবাক হয়ে বললো-
ভালো আনটি,আপনি এখানে কেন?
অবাক হয়ে গেল বিপাশা।হেসে বললো-

আমি তাহলে কোথায় থাকবো?পাগল মেয়ে এতোক্ষণ ঘুমিয়ে কি আবোল তাবোল বলছো।এতো ঘুমায় কেউ।ঘুমের ওষুধ খেলেও তো এতো ঘুম হয় না।
আর্শি অবাক হয়ে চারদিকে তাকালো।তারপর আবার বললো-
এটা আপনাদের বাড়ি?
হ্যা মা।
তাহলে আমি এখানে কেন?

অবাক হয়ে গেল বিপাশা।সাথে রাহুল ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।বিপাশা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলোলো-
তুমি এখানে কেন মানে কি?এটা তোমার স্বামীর বাড়ি,তোমার ও বাড়ি।রাহুল তোমার স্বামী।রাহুলের ঘর মানে তোমার ও ঘর।এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো। ভীত সন্ত্রস্ত কন্ঠে বললো-
না না,আপনার ভুল হচ্ছে।আমার সাথে তো ওই মন্ত্রীর ছেলের বিয়ে হয়েছে।
ভ্রু কুচকে ফেললো রাহুল।চটপটে কন্ঠে বলল-

এই মেয়ে, এতো ঢং করছো কেন?কবুল বলার আগে খেয়াল ছিলো না কাকে বিয়ে করছো?আরাফের সাথে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। তাই তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।এখন তুমি ঢাকায় আছো।
চমকে গেল আর্শি।এতোকিছু কখন হলো।মাথায় ই তো ঢুকছে না।শুধুমাত্র কবুল বলেছে সেটুকুই মনে আছে।উফফফ মাথা যন্ত্রনা করছে খুব।ঢুকরে কেদে উঠতেই বিপাশা দুহাতে চিন্তিত ভঙ্গিতে আগলে ধরলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো-

তোমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে তা তুমি জানো না?কার নামে কবুল পড়েছো তুমি তাও জানো না।এই রাহুল,এটা কেমন বিয়ে করেছিস,ওতো অন্যকারো নামে কবুল পড়েছে।এটা কেমন বিয়ে।লোকজন শুনলে তো ছি ছি করবে।এই আর্শি,তোমার কিচ্ছু মনে নেই নাকি?

আর্শি ফোপাতে ফোপাতে জড়িয়ে ধরলো ভালো আনটিকে।স্পর্শী আপুকে খুব ভালোবাসে এই মহিলা,তাহলে তাকে খারাপ কেন পাবে। তাকেও ভালোবাসবে।নিজেকে পুরোদমে নিংড়ে কাদতে লাগলো আর্শি। বললো-
আন্টি,ভাইয়া আর আব্বু জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছে ওই আরাফ নামে ছেলেটার সাথে।আমাকে মেরেছেও।ভয়ে রাজি হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আমার কিচ্ছু মনে নেই।আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো।মাথা যন্ত্রনা করছিলো সবার কথা শুনতে শুনতে।আমাকে সবাই কবুল বলার জন্য জোর করছিলো বারবার তাই বলে দিয়েছি।আমি কাউকে বিয়ে করবো না।আমি তো পাভেল ভাই………

কান্নায় ভেঙে পড়লো পুনরায়৷কিভাবে যোগাযোগ করবে সে তার পাভেল ভাইয়ের সাথে।একটু কথা বলবে সে।
বিপা শা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো-
আমি তোর বাবাকে বলছি কাজি নিয়ে বাড়ি আসতে। কালকেই বিয়ে পরাবো ঘরে বসে।এটা কোনো বিয়ে হলো,জোর জবরদস্তি করে কি বিয়ে হয়।পাড়া-প্রতিবেশী শুনলে হাসাহাসি করবে।

আর্শি নিশ্চুপ হয়ে দুহাত দিয়ে পেট চেপে ধরে আছে।চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।বিপাশা সেদিকে চাইতেই বুঝে গেল।জোর পায়ে হেটে বাইরে রান্নাঘরে এলো।প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে গেল আর্শির রুমে।আদুরে কন্ঠে বললো
খিদে পেয়েছে?

ঠোট ভেঙে কেদে দিয়ে বললো-হুম,
আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি(হেসে দিয়ে বললো বিপাশা)
রাহুলের মাথা ধরে এসেছে।চোখ ভেঙে ঘুম আসছে।শেষে কাউকে কোনোরুপ পাত্তা না দিয়েই দপদপ করে বিছানার একপাশে উঠে শুয়ে পড়লো।

পেটে খিদে থাকলে দিন দুনিয়ার হুশ থাকে না।আর্শির খাওয়া শেষ। প্লেট হাতে নিয়ে বিপাশা বললো-
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,আমি তাহলে যাই।সকালে কথা হবে।
আর্শি এবারে কান্নায় ভেঙে পড়লো পুনরায়। রাহুল বা আরাফ এদের দুজন’ই এক আর্শির কাছে।আরাফের সাথে বিয়ে হলে যতটা দুঃখ পেতো, রাহুলের সাথে বিয়ে হওয়ায় ও ঠিক ততটা দুঃখ পেয়েছে।এরা তো আলাদা নয়।দুজনই অন্য পুরুষ। কিন্তু সে তো তার পাভেল ভাইকে চেয়েছে।

কি করবে এবারে সে।এদের কাছে বলবে যে “সে পাভেল কে পছন্দ করে,রাহুল ভাইয়ের সাথে সংসার করতে পারবে না”। কিন্তু তাহলে তো এই খবর আবার সোভাম ভাই,বাবার কানে যাবে।তারা আবার আসবে।আর্শিকে জোর করবে,গায়ে হাত তুলে বাধ্য করবে এই সংসার করাতে।কিন্তু আর্শির যে এতো কিছু করার সাহস নেই।যদি থাকতো,তাহলে এই বিয়ে থেকেই মুক্তি পেতো।

পুনরায় মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পড়লো আর্শি।কি করা উচিত তার?আচ্ছা,সে কি এখান থেকে পালিয়ে যাবে তার পাভেল ভাইয়ের কাছে।হ্যা হ্যা,তাহলে আর কেউ খুজে পাবে না। এরকম টা ভেবেই হাসি হাসি মুখ নিয়ে বিছানার কাছে এলো।উঠে বসতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে রাহুল বলে উঠলো-

এই শাড়ি টাড়ি চেঞ্জ করে তারপর ঘুমাবে।সামলাতে জানে না আবার শাড়ি পড়তে এসেছে(বিরবির করে)
আর্শির নিজের ও অসস্তি লাগছিলো শাড়ি পড়ে।রুমের এক কোনায় ব্যাগ রাখা।ধীর পায়ে হেটে গিয়ে ব্যাগ খুললো।নিজের এক সেট থ্রি পিস বের করে আবার খাটের সামনে এলো।আমতা-আমতা করে বললো-
বাথরুম কোথায় ভাইয়া?

চমকে মাথা তুললো রাহুল। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো-
রুম থেকে বেরিয়ে ডান কোনায়।
মাথা হেলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর্শি।চেঞ্জ করে নাকে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।স্থির হয়ে কিছুক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো।কালকে যেভাবেই হোক আগে পাভেল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।তারপর পালাতে হবে।
অনেক কিছু ভেবে চিনতে শেষে রুমে গিয়ে বিছানার এক কোনায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।

সকালের স্নিগ্ধ আলো পুরো পৃথিবী টাকে শান্তিময় করে রেখেছে।আশে পাশে হাটলেই মুহুর্তের মধ্যে অন্তর জুড়িয়ে যাচ্ছে লোকেদের।স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সিড়ি দিয়ে নামলো প্রেমা।এখান থেকে সোজা সে প্রাইভেট পড়তে ম্যামের বাড়ি যাবে। টানা দু ঘন্টা পড়ে সেখান থেকে স্কুলে যাবে।

পিয়াশা বেগম দুপুরের টিফিন এবং সকালের নাস্তা ব্যাগে ভরে দিয়েছে।মায়ের রান্নাঘরের সামনে গিয়ে একবার উকি দিয়ে পুনরায় সদর দরজার দিকে গেল।প্রতিদিন মাকে ডেকে “আম্মু আমি স্কুলে যাচ্ছি” এটা বলা বাচ্চাদের কাজ।সে তো অলরেডি চৌদ্দ বছরের বালিকা।ভীষণ বুঝদার এবং বুদ্ধিমতী সে। তাইতো একঝলক দেখেই চুপচাপ চলে যায়।গেটের সামনে আসতেই দেখলো গাড়ি নিয়ে সুজন ভাই আগে থেকেই অপেক্ষা করছে।মিষ্টি করে অন্যদের মতো হাসলো না সে।এটা তার ব্যাক্তিত্বের বাইরে পড়ে।গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে গাড়িতে উঠে সুজনের উদ্দেশ্যে বললো-

রায় বাড়িতে চলুন সুজন ভাইয়া।
ছোটখাটো এই আদেশ শুনে গাল ভরে হাসলো সুজন।তারপর কোনোরুপ বাক্যব্যায় না করেই হাড়ি স্টার্ট দিল।পনেরো মিনিটের মধ্যেই ইংলিশ ম্যাডাম কিরণ প্রভা রায়দের বাড়ির সামনে হাজির হলো।দ্রুতপায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকে গেল প্রেমা।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং শব্দে দানবীয় ফোনটা বেজে উঠলো।পকেট থেকে ফোন বের করে সেদিকে তাকাতেই চওড়া হাসি ফুটলো সুজনের।রিসিভড করে লাউড স্পিকারে দিয়ে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে লোকটি বলে উঠলো-
ওরা জাফলং গেছে,আর তুই এখনো এখানে বসে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরছিস।এই জন্য মাস শেষে তোকে টাকা দেই আমি।
হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী এতোক্ষণে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।শান্ত কন্ঠে সুজন বললো-

ভাই,আমি যাইতে চাইছিলাম।আপনার বইনেই ক্যাচাল বাজাইছে।বডিগার্ড নেবে না।তারপর আর নিলো না আমারে।
দাতে দাত চেপে বিশ্রী এক গালি দিল সোভাম।সুজন পুনরায় বললো-
ভাই,এইবার আপনার হুকুম পাই আর না পাই ওই পরশ শিকদাররে সত্যি সত্যিই উপরে পাঠাইয়া দিব আমি।আর সহ্য হয় না।সারাক্ষণ বডিগার্ডের মতো খাটায়।আর দিনশেষে সবাইকে বলে ভাইয়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসে আমায়।বা*ল ভালো বাসে।মাসের শেষে আঠারো হাজার টাকা ধরাইয়া দেয়।নেহাত ভাই আপনি ছিলেন,নইলে এতো টাকা কোথায় পাইতাম।
তৃপ্তির হাসি হাসলো সোভাম। তারপর বললো-

কি ভাবে মারবি?ও এখন এমপি সামান্য তম ক্ষতি হইলেও পুলিশ প্রথমে আমারে সন্দেহ করবে।
বাকা হাসলো সুজন।বললো-
সেটা নিয়া আপনার ভাবতে হইবে না।বেশী কিছু করবো না।শুধুমাত্র এবার ঘুইরা ফিরুক।তারপর ঢাকা যাওয়ার সময়ই আসল কাজ টা করবো।
ওপাশ থেকে উত্তেজিত হয়ে সোভাম বললো
কি করবি তুই?

–ব্যাস বেশী কিছু না।ওর গাড়ি আছে তো আমার আন্ডারে।এমন ব্যাবস্থা করে দিব যাতে সবাই ভাবে রোড এক্সিডেন্ট করছে।
কথাটা বলে পিছনে ফিরতেই ঘাবড়ে গেল সোভাম।তার থেকে এক হাত পেছনেই চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমা।সুজনকে পেছনে ফিরতে দেখে আরো রেগে গেল সে।গাড়িতে মামপট ফেলে গেছিলো। সেটা নিতে এসেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হয় সে।রেগে চেচিয়ে উঠে বললো-

আপনার সাহস তো কম নয়।আমার ভাইয়ের খেয়ে পড়ে ওকেই মারার প্লান করছেন।আপনি জানেন, এটা ভাইয়াকে বললে ঠিক কি অবস্থা করবে আপনার।
ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা সূজনের। একটুর জন্য ভুল হয়ে গেল তার।গাড়ির ভেতর থেকে মাম পট আনতে ঢুকতেই ভয়ের চোটে দরজা বন্ধ করে সুজন।আতকে উঠলো প্রেমা।চিৎকার করতেই গায়ের ক্রোস বেল্ট টেনে খুলে মুখ বেধে দিল সুজন।দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে বেখেয়ালে গাড়ি চালাতে লাগলো।এখন ঠিক কোথায় যাবে,কি করা উচিত ভাবতেই সোভামদের ক্লাব ঘরের কথা মনে পড়লো।দ্রুত সেদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে চললো।

বিস্তীর্ণ এক জঙ্গল।বাজার থেকে অনেকটা দূরে মেইন রোড থেকে খানিকটা দূরে একটা টিনের ঘর। এদিকে লোকজনের আনাগোনা বেশ কম। রাত-দিন কিশোর-জোয়ান ছেলেরা এই ক্লাব ঘরে বসে জুয়া খেলে, তাস খেলে,মদ গাজা খায়।দশ মিনিটের মাথায় সেখানে আসতেই গাড়ি খুলে প্রেমাকে কাধে নিয়ে ক্লাবের দিকে হাটতে লাগলো। জোর -জবরদস্তি করে মুখ বাধায় বেশ ব্যাথা পাচ্ছে প্রেমা।যন্ত্রনায় চোখ টলমল করছে তার।এটা কি সেই সুজন ভাই। যাকে দেখে এই টুকু বয়সে হৃদয়ে আবেগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিলো প্রেমার। এটা কি সেই সূজন যাকে একপলক দেখার জন্য ভাইকে অন্য বডিগার্ড দের বাদ দিয়ে নিজের স্কুলে যাওয়া -আসার দায়িত্ব সুজন ভাইকে দিতে বলেছিলো। অন্তরের অদৃশ্য ব্যাথা,মুখের যন্ত্রনা সব মিলিয়ে ছোট্ট শরীর টা প্রায় নিস্তেজ হয়ে এসেছে।

দুই রুমের টিনের ঘরটার পেছন দিক দিয়ে সুজন প্রেমাকে নিয়ে উঠলো।কাধ থেকে মাটির উপর ছোট্ট শরীর টাকে একপ্রকার ছুড়ে মারলো।পাশেই খাটের উপর নিরব, সোভাম এবং আরো একটি ছেলে আধশোয়া অবস্থায় ছিলো। বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়ে রাগে দুঃখে কাল ক্লাব ঘরে এসেছে সে।প্রতি দিনের তুলনায় সারা রাত ধরে আরো বেশী নেশা করেছে।সোভামের সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে সুজন বললো-

ভাই এই সাপটায় সব শোনছে।ওর ভাইয়ের কাছে বইলা দিলে আমি তো শেষ ই আপনিও বাচতে পারবেন না।আপনার সাথে আমার যোগাযোগ আছে এইটা জানতে পারলেই এর আগে যতবার পরশের উপর আক্রমণ হইছে সব গুলায় আমাগো ধইরা নিবে।কি করবো এরে।
মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া প্রেমাকে এক ঝলক দেখে নিলো সোভাম।নেশাগ্রস্ত চোখ দুটো দিয়ে বারকয়েক তাকিয়ে সুজনকে বললো-

একবার কোনোমতে আমার উপর কেস হইলে সারাজীবনে আর ভোটে দাড়াতে হবে না।আমি তো আমার সপ্ন এভাবে নষ্ট করতে পারবো না।ওর শ্বাস টা বন্ধ করে দে।
আতকে উঠল প্রেমা।বাধা মুখ নিয়ে ভয় পেয়ে গোঙাতে লাগলো বারবার। কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিতেই সুজন দুহাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলো।নিরব নেশাক্ত চোখে প্রেমার দিকে তাকালো।গায়ে ক্রোস বেল্ট, স্কাফ কিচ্ছু নেই। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো-

ভাইইই,মাইরাই তো ফালাইবা।আগে আমি একটু খাই।
চোখ দুটোকে টেনে ভাইয়ের দিকে তাকালো।তারপর হেসে দিয়ে বললো-
যা তবে।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২৪

লাফিয়ে দাড়ালো পাশের ছেলেটি।কামনার চোখে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো-
নিরবের পরে কিন্তু আমার সিরিয়াল।ভাই,আমিও কিন্তু আছি।
বিষাক্ত চোখ দুটোকে কয়েকবার বন্ধ করে শুয়ে পড়লো সোভাম।বললো-
যার যার ইচ্ছা নিয়া নে।আমার বোন নিয়া ওরা দু ভাই খেলছে।এবার ওদের বোন নিয়া আমি খেলবো।আমিও দেখতে চাই পরশ শিকদারের ঠিক ধৈর্য কতটা।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ২৬