রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১০

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১০
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“তাহু বুকে কি হলো?খামচি লেগেছে নাকি?দেখি দেখি।”
মামীর চিন্তিত বাক্যে ঘাবড়ে যায় তাহুরা।এত সময় মাথায় কাপড় থাকার দরুণ বুকের অংশ ঢাকা ছিলো।রান্নাঘরের তীব্র গরম এড়াতে সে ওড়না ভি শেইপে সেট করে,আর এতেই মামী তার বক্ষস্থলের ক্ষত দেখতে পায়।
তাহুরা শুকনো ঢেঁকুর গিলে।নিচের অধর চেপে শ্বাস নেয়।মিনমিন কণ্ঠে জবাব দেয়,

–“জাফরান বাচ্চাটাকে বেঞ্চে বসাতে গিয়ে ওর নখ লেগেছে।”
–“জ্বলছে নাকি তাহু?কেমন লাল ডগডগে দেখাচ্ছে।যা তো মলম লাগিয়ে আয়।মেয়েটা এমন খামখেয়ালী করে সবসময়!”
আফসোসের বার্তা শোনা যায় মামীর। তাহুরা ইতস্তত হাসে। চুলায় বিদ্যমান তরকারি নাড়াচাড়া করে,
–“জ্বলছে না।এখন কাজ ফেলে নিজের সেবা করতে গেলে মায়ের বকুনি খেতে হবে।মেহমানদের দুপুরের খাবারে দেরী হচ্ছে।”
–“আচ্ছা কাজ শেষে লাগিয়ে নিস।হেলাফেলা করবি না নিজেকে নিয়ে।”
তাহুরা ঘাড় ঘুরায়।মুচকি হাসে,
–“আচ্ছা মামী।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাহুরার মামী তার মাথায় হাত বুলায়।এই লক্ষ্মী মেয়েটার জন্যে কেমন মায়া মায়া অনুভব করে সে।ইমনের নিজস্ব পছন্দ না থাকলে,শিউলির সাথে কোমর বেঁধে ঝগড়া করে হলেও এই লক্ষ্মী তাহুরাকে নিজের ঘরে তুলতো।নিজের মনের কথা মনে রেখে মামী সালাদ করতে বসে।

মেহেমানদের খাবারের জন্যে তোড়জোড় চলছে।প্রায় সকলে বাহিরে তাদের পুকুর ঘাটে।আলাপে মগ্ন,সৌন্দর্য দেখছে প্রাকৃতিক।অনেক আবার শোয়ার রুমে।তাহুরা রুমের সকলকে ডেকে বাহিরে যাচ্ছে অন্যদের ডাকতে।মায়ের নির্দেশনা।
ডাইনিং এরিয়া অতিক্রম করে বসার ঘরে গেলে সোফায় আধ শোয়া উমাইরকে দেখতে পায় তাহুরা।উমাইর কি ঘুম?লম্বা মানুষের লম্বা পা।সেগুলো কেমন বেঁকে রেখেছে। হয়তো অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও মুখ খুলছে না।নতুন আত্মীয়ের বাড়ি বলে কথা।বাহিরে যাওয়ার পূর্বে তাহুরা ধীর গতিতে উমাইরের ধারে যায়।

উমাইর একহাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা মাথা ঠেকিয়ে আছে। লাজে মুড়িয়ে গেলেও তাহুরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না উমাইরের খোঁজ নিতে।
উমাইরের পেছনে দাঁড়িয়ে সে বড্ড দ্বিধার সহিত প্রশ্ন করে,
–“আপনি কি ক্লান্ত?”
উমাইর ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে।ঘর্মাক্ত মেয়েটার কপালে কিছু চুল লেপ্টে।শ্বাস ফেলছে গভীর।ক্লান্ত বেশ?
সোজা হয়ে বসে উমাইর।গম্ভীর স্বরে বলে,

–“আমি কেনো ক্লান্ত হবো?ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”
–“নাহ,আমি ঠিক আছি।আপনি খেতে আসুন।সবাইকে ডেকে আনছি।”
তাহুরা হাসে।উমাইর স্পষ্ট বুঝে মেয়েটার ক্লান্তি।নিশ্চয় নাস্তা ঠিক মতো করেনি মেহমানদের সেবায়।
–“তুমিও একসাথে খেতে বসবে।”
উমাইর দাঁড়িয়ে পড়ে।ভেতরকার রুমের আত্মীয়দের কেউ কেউ বসার ঘরে আসলে তাহুরা বলেনি কিছু।কেবল দুদিকে মাথা নাড়ে।অর্থাৎ সে খাবে না।

রাগী দৃষ্টিতে উমাইর তাকে অবলোকন করলে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে তাহুরা।মেহমানদের অ্যাপায়ন না করে কিভাবে বসবে খেতে?লোকটা স্যার অথচ বিবেকে এই প্রশ্নটা আসেনি?
আপনমনে হাসে মেয়েটা।বাহিরে যায়।সকলকে বলে খাবার খেতে আসতে।এত মানুষের জায়গা না হলেও প্রধান অতিথিবৃন্দদের খাবার টেবিলে ব্যবস্থা করা আছে আর বাকি বাড়ির আত্মীয়রা শোয়ার ঘরে, বসার ঘরে মিলেমিশে বসবে খেতে।তাহুরার ডাকে সকলে সাড়া দেয়।ভেতরে যাচ্ছে হাসিমুখে।উমাইরের মা ভেতরে যেতে নিয়ে গেলো না।সটান দাঁড়িয়ে পড়ে তাহুরার সম্মুখে।তার চিবুকে হাত রেখে আদুরে সুরে বলে,

–“ইস,মেয়েটার সাথে দেখা হয়নি আজ তেমন।বেশি কষ্ট দিচ্ছি আন্টিরা এসে?”
তাহুরা বাম হাত তুলে ডানে বামে ঘুরায়।অধর প্রসারিত করে,
–“মোটেও না আন্টি।উল্টো আমি দুঃখিত,আপনাকে আজ পুকুর ঘাট দেখাতে পারিনি।আসলে আম্মুর হাঁটুর ব্যথা বাড়ে বেশি হাঁটাচলা করলে,তাই আমি যা একটু সাহায্য করি।”
–“সুনেরা মা দেখিয়েছে আমায় সব।তোমাদের এইখানে এলে আমার যেতে মন চায় না।কেমন সুখ আর শান্তি অনুভব করি।”
তাহুরার কপালের উড়ো চুল ঠিক করে জবাব দেয় মেঘলা বেগম।

–“যখন মন ছুটে চলে আসবেন আমাদের বাসায়। পরোয়া করবেন না কারো।”
মাথায় ঘোমটা ঠিক করে তাহুরা।
–“একদম আসবো।আমার ছোট ছেলে বসেছে?”
–“বলেছিলাম আন্টি।হয়তো বসেছে।চলুন।”
ভেতরে যাওয়ার ইশারা করলে মেঘলা সম্মুখে কদম বাড়ায়।পেছন পেছন আসে তাহুরা।

খাবারের পরিবেশ রমরমা। তাহুরার কাঁধে আবারও জাফরানের দায়িত্ব পড়ে।ছেলেটা তার হাতে খাওয়া ব্যতীত খাবে না জানাচ্ছে। উমাইর আরচোখে লক্ষ্য করে সব।তাহুরাকে বেশ নাজুক দেখাচ্ছে।এইভাবে সকাল হতে বসে নেই মেয়েটা।তার জন্যে ফুলের চারা কিনতে গিয়েও নিশ্চয় রোদে ঘুরেছে অনেকক্ষণ।তার উপর বাড়ির এতসব রান্না,কাজ।আর এখন জাফরান তার হাতে খাবে বলে বাহানা করেছে।
তাহুরার ক্লান্তি মুখের নাজুক নজরের হাসিটা উমাইর ঠিক উপলব্ধি করে।মেয়েটার এমন করুণ হাসিতে অন্তরে প্রশান্তি নেই উমাইরের।

জাফরানের খাবারের প্লেট নিয়ে তাহুরা বসার ঘরে যায়।উমাইর ক্রোধে বলেনি কিছু।মেয়েটার কান্ড-জ্ঞান তার পছন্দ না।নিজের খেয়াল রাখতে জানেনা তাহুরা। খাবার শেষে উমাইর উঠে পড়ে হুট করে।হাত ধুয়ে মাকে বলে,
–“তারিখ ফাইনাল করে বাসায় এসো।আমি বেরুচ্ছি।কাজ আছে।”
–“কি বলো?হঠাৎ চলে যাচ্ছো?”
মেঘলা বিস্মিত।
–“বললাম কাজ আছে।বাসায় যাবো না।এমনি বের হচ্ছি।”

উমাইর গটগট পায়ে সম্মুখে আগায়।মুন্সী এবং শিউলিকে কেবল মুখে সালাম দেয়।
বসার ঘরে বাঁকা নজরে পর্যবেক্ষণ করে পায়নি তাহুরা এবং জাফরানকে। ঘরের সদর দরজা হতে শব্দ আসছে জাফরান এবং তাহুরার।উমাইর সেথায় উপস্থিত হলে তাহুরা নিজের অট্টহাসি থামায়।অমায়িক হেসে বলে,
–“খেয়েছেন? এতো জলদি শেষ?”
–“না খেয়ে বসে থাকবো?তোমার মতো মানব দরদী না আমি।”
উমাইর তার মোটর বাইকের নিকট যায়।নিবরাস হেলমেট সিটের সাথে সেট করে রেখেছিলো।সেটা হাতে নিয়ে সিটে বসলে তাহুরা এগিয়ে আসে জাফরানকে নিয়ে।জাফরানের খাওয়া শেষ অতিদ্রুত।

–“আপনি চলে যাচ্ছেন?”
অবাকের সুর তাহুরার।
–“নাহ।আসলাম মাত্র।”
ভ্রু কুঁচকে জবাব দেয় উমাইর।
তাহুরা বুঝতে পারে লোকটা চটেছে।কিন্তু কেনো?ভেতরে কিছু হলো?
–“কি হয়েছে?বলুন আমাকে।”
আতংকিত মেয়ের।

–“কেনো?তুমি সব সমস্যা সমাধানের পথে কাজ করো?তাহলে নিজের সমস্যা সল্ভ করা উচিত তোমার।”
উমাইর হেলমেট পড়ে।তাহুরা বুদ্ধি হারিয়ে উমাইরের মোটর বাইকের সামনে হাত রাখে।ভ্রু যুগল সমান করে নরম কণ্ঠে বলে,
–“রেগেছেন কেনো?”
–“আমার কথা না শুনলে আমি এমন রাগী।কারণ জেনেছো!এখন বলো কি করবে?”
বাইক স্টার্ট দেয় উমাইর।তাহুরা বুঝতে পারে খাবারের ব্যাপার নিয়ে রেগেছে।কিন্তু,এমনটা করার কি দরকার ছিল?সকল আত্মীয় খেয়ে উঠলে তো খেতে বসতো সে।
তাহুরা কিছু বলার পূর্বে জাফরান তার ওড়নার অংশ ধরে টানে,
–“আপু,কোলে নাও!”

উমাইর তার হেলমেটের কাঁচ উচুঁ করে।জাফরানকে কোলে নিতে গেলে চিল্লিয়ে উঠে উমাইর,
–“জাফরান!মানা করেছি না কোলে উঠতে?যাও ভেতরে।”
ধমকে মুচড়ে যায় জাফরান।ভারী স্বাস্থ্য নিয়ে বাচ্চাটা কেঁদে ভেতরে দৌড় দেয়।
তাহুরার অন্তর ক্ষুণ্ণ হয়।জাফরানের জন্যে বরাদ্দ ধমকে তারও আঁখি ভরে আসে।ভাতের প্লেট এক হাতে ধরে অন্যহাতে আঁখি মুছে,

–“ওকে বকলেন কেনো?”
উমাইর তার ছিঁচকাদুনির পানে চেয়ে।পরক্ষণে হেলমেটের কাঁচ নামিয়ে দ্রুত ছুটলো সটান খুলে রাখা প্রধান গেইটের বাহিরে বিনা উত্তরে।
তাহুরার অন্তর যেনো ছিন্ন হলো।মেয়েটা মুষড়ে যায়।
মুখে আঁধার লেপে জাফরানের নিকট ফিরে।উমাইর থেকে উত্তর পাওয়ার আশাটা উচিত হয়নি তার।লোকটা কখনো তাহুরাকে দাম দিবে না।

বিয়ের তারিখ ঠিক হয় আগামী মাসের বিশ তারিখ। হাতে আর বাইশ দিন সময় আছে।এই সময়কালে অবশ্য জুবায়ের তার বাবার ব্যবসায় যোগ দিবে।সে আর প্রবাসে ফিরছে না।
যাওয়ার সময় তাহুরা এবং তার পরিবারবর্গকে দাওয়াত করে উমাইরের পরিবার।

শান্তিপূর্ণ মেয়ের বিয়ের তারিখ পড়েছে বিধায় আরাম অনুভব করে মুন্সী।তার হাসিতে আজ গোটা ঘর জ্বলজ্বল করছে।
উমাইর চলে যাওয়ার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যে ছেলেটার কথা ভুলেনি তাহুরা। কই আগে তো তাহুরা কখনো কারো ব্যাপারে ভাবেনি।কিন্তু,উমাইর তাকে নিজ ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য করে। উমাইরকে ভয় পাওয়া,তার কথা মান্য করা,প্রথমে তাহুরা স্যার হিসেবে মেনে চলতো। তবে এখন,ঘটনা ব্যতিক্রম।তারা উভয়ই আত্মীয়,কুটুম। এছাড়া উমাইর তার জন্যে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে,সেসব অন্য কাউকে দিয়েছে কিনা জানা নেই তাহুরার।মূলত উমাইরের কাজকর্ম,তাহুরার প্রতি তার সকল উপদেশ তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে তাহুরাকে।মনের মাঝে উমাইরের জন্যে অন্য এক অনুভূতি অনুভব করে মেয়েটা।

আজ উমাইর হুট করে চলে যাওয়া নিয়ে খুন হচ্ছে মেয়েটার অন্তর।তাহুরার জীবনে প্রথম,উমাইর থেকে সে নিজের জন্যে উপদেশ পেয়েছে,আবার সেটা পালনও করছে। তাহুরার মতো সরল মানুষের কাছে জীবনে প্রথম এহেন উপদেশ পাওয়া মনে অন্য অনুভূতি জাগানোর জন্যে যথেষ্ট।
উমাইরের আগে এমন কাজ কেউ করেনি বলে,সরল তাহুরা বারংবার উমাইরের সেই কথাগুলো ভেবে অস্থির হয়,বুকে অন্য রকম ব্যথা অনুভব করে।

বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকা তাহুরার হুট করে মনে আসে চারার কথা! উমাইর চারা নেয়নি। ঘাড় উচুঁ করে দেখে,রুমের এক কিনারায় যত্নে রাখা চারাটার অবস্থান।
তাহুরা উঠে ড্রয়ার হতে মোবাইল বের করে।সারাদিনের কাজে পায়ে ব্যথা তার।তাও মুখ ফুটে বললো না কাউকে।উমাইরকে মেসেজ দেয়,
–“আপনি রেগে চলে গেলেন।চারা নেননি।”
ভাবুক তাহুরার কেনো জানি কান্না পায়।উমাইর কেনো এমন রাগ করে ওর সাথে?মোবাইল বুকে চেপে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ে সে।মনের অবাস্তব অনুভূতিতে শান্ত মেয়েটা কেমন অশান্ত হয়ে পড়ে আচমকা।

উমাইর বাড়ি ফিরেনি।আফিয়ার কারণে তার বাড়ি ফিরতে ঘৃণা হচ্ছে।আগে বাড়ির সকলে একটা বিহিত করুক বেয়াদব মেয়েটার।ফের বাড়ি থেকে ফোন এলে,বাড়ি ফিরবে। সচরাচর সিগারেট দ্বারা অধর পোড়ায় না উমাইর।বন্ধুদের সাথে থাকলে বা নিজ ইচ্ছায় সে সিগারেট ফুঁকে।বিক্ষিপ্ত মেজাজে আজ নিয়ন্ত্রণ হয়নি তার। পুরুষালি অধরে চেপে ধরে সিগারেট। তাহুরার মেসেজ এসেছে দেখেও খুললো না বার্তা। সিআরবির ভেতরের দিকটায় একাকী মোটর বাইকে বসে আছে ।মনটাও কেমন দোটানায়।বিদায় বেলায় তাহুরাকে কাছে টেনে অদ্ভুত এক কাজ করতে ইচ্ছে করলো তার।মেয়েটাকে দেখলে তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে থাকতে চায় না।

হয়তো অনেকে বলবে,উমাইর তার স্টুডেন্টের প্রেমে পড়েছে,ভালোবাসে।কিন্তু,ব্যাপারটা এমন নয়।তাহুরা তার শিক্ষার্থী হওয়ার পূর্ব হতে ভালোবাসে সে মেয়েটাকে।অত্র কলেজে শিক্ষক পদে আসাটা উমাইরের ভাগ্যে ছিলো। এছাড়া তাহুরা তার কাছের আত্মীয় হবে হুট করে এমনটাও সে ভাবেনি ইহকালে।সব যেনো তাকদীরের খেলা।
উমাইর যেটা ভেবে রেখেছিলো তাহুরাকে নিজের জীবনে আনার, তার কিচ্ছুটি প্রকাশ হয়নি।বরং নিয়তি ওদের অন্য নিয়মে কাছে টেনেছে।নিজের পরিকল্পনার চেয়ে নিয়তির পরিকল্পনা উমাইরের বড্ড পছন্দ হলো।
ভবনায় ব্যাঘাত ঘটে মায়ের ফোনে।নিশ্চয় সবাই জেনেছে সবটা।ফোন কানে দিলে তার মায়ের আতংকিত কণ্ঠ শুনে সে,

–“বাবা,বাসায় আসো।এক্ষুণি!”
–“আসবো না।”
উমাইরের সহজ জবাব।
–“তুমি আমাদের আগে বলোনি কেনো কিছু?”
মেঘলা বেগম কেঁদে অস্থির।
–“কি বলবো?বেহায়াপনার কথা বলবো মা বাবাকে?চাচা চাচীকে?তাও ঘরের মেয়ের?”
শক্ত হচ্ছে তার কন্ঠ।
–“আচ্ছা শান্ত হ‌ও।আসো বাসায়।বাবা ডাকছে।”
–“আসবো দেরী হবে।একটু বাহিরে থাকি। ঐ মেয়েকে শাসাও ঠিকভাবে। পরেরবার আমি থেমে থাকবো না।গাল ফাটিয়ে দিবো।”

ক্রোধে ফোন কাটে উমাইর।
মেজাজ তার শীর্ষে।পরপর মেসেজ চেক করে সে তাহুরার। এতো ক্রোধেও তার অধর প্রসারিত হয়।মেয়েটা একনাগাড়ে তিনটা মেসেজ দিয়েছে,
–“আপনি রেগে চলে গেলেন।চারা নেননি।”
–“আমার সাথে রেগে আছেন?”
–“আচ্ছা সরি। সব কথা শুনবো আপনার।”
মেসেজগুলো তার হৃদয়ে শীতল পবনের হানা দেয়।তারপরও মেয়েটাকে জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নেয় উমাইর।গোটা অক্ষরে লিখে,

–“শুনতে হবে না। চারা তোমার মাথায় লাগাও।”
সিগারেটের শেষ অংশ মেঝেতে ফেলে। দেরীতে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা মরে যায়।মোটর বাইকে চেপে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় উমাইর।
সুনসান তাদের বাড়ি।ভেতরে গেলে নিবরাস তাকে বোনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে।উমাইর কিছু জানায় না। ঐ মেয়ের জন্যে ভাইয়ের দুঃখ প্রকাশ মানতে নারাজ।বিশাল বসার ঘরে বাড়ির গুরুজনেরা বসে।আফিয়ার মা কেমন লজ্জিত।উমাইর এক নজর দেখে আর ফিরেনি।নিজ কামরায় যায়।
মিনিট দশেক বাদে মেঘলা বেগম ছেলের রুমে আসে।উমাইর মাত্র ব্যালকনি থেকে কক্ষে ফিরে।
সোফায় বসে মেঘলা ছেলেকে কাছে ডাকে। উমাইর মায়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে।মেঘলা আহত সুরে ছেলেকে বলে,

–“আজ এই জন্যে কি ঐ বাড়ি থেকে কাজের বাহানা দিয়ে বেরিয়েছিলে?”
–“নাহ।”
উমাইরের সহজ জবাব।
মা তার দিকে প্রশ্নবোধক চেহারায় তাকালে পুনরায় জবাব দেয়,
–“আফিয়া আমার কাছে ম্যাটার করে না যে, ওর জন্যে আমি আমার লাইফে কোনো কাজ করবো!সি ইজ নাথিং টু মি।না আমার বোন না আমার কোনো সম্পর্ক।”
–“মাথা ঠাণ্ডা করো আব্বা।ছেলেমানুষী করে ভুল করেছে…”
–“ওর সাফাই গাইতে এসেছো?”
মাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে উমাইর।
–“নাহ।আসলে আব্বা…তাহুরার জন্যে চলে এসেছিলে আজ?”
মায়ের সরাসরি এহেন প্রশ্নে কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্থ হয় উমাইর।ঝেড়ে কাশে সে,
–“হুম।তুমি কিভাবে জানলে?”

–“তাহুরা ফোন দিয়েছিল।তুমি চারা নাওনি বললো। আমি ড্রাইভার দিয়ে আনিয়েছি চারা মেয়েটার থেকে।মেয়েটাকে এমন জ্বালাচ্ছো কেনো উমাইর?সে খুবই সরল একটা মেয়ে।”
মায়ের কথায় উমাইর কোনো অভিব্যক্তি দেখালো না।তবে,মনের গহীনে তার হরতাল চলে।সরল প্রেয়সীর প্রতি মনটা আন্দোলনে ফেটে পড়ে।
–“জানি মা।আমি এইভাবে কাল চারাটা নিতাম।”
–“মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ।কেমন মন জিরিয়ে যায় মেয়েটাকে দেখলে।দুই ছেলের বউ যদি সেই পরিবার থেকে আনা হয়!”

মেঘলা গাল ভরে হাসে।উমাইর মায়ের চালাকি বুঝে ঠিক।সে মায়ের সাথে সায় দেয়,
–“সরল মেয়েটাকে আমার অনেক আগে থেকে পছন্দ।যখন থেকে না আমি ওর স্যার ছিলাম,না ও আমার কোনো আত্মীয় ছিলো!শুধু আমার কাঁদুনে তাহুরা ছিলো ও।”
কয়েক সেকেন্ড থেমে আবারও উমাইর বলে,
–“তোমার ছোট ছেলের হবু বউ তাহুরা।দেখে শুনে রেখো। কারো নজর যেনো না পড়ে।”
পায়ের গতি বাড়ায় উমাইর।দরজার নিকট গেলে মেঘলা প্রশ্ন করে,

–“কই যাচ্ছো আব্বা?”
–“চারা নিয়ে আসি।”
উমাইর দাঁড়ায় না দ্রুত কদম ফেলে।
মেঘলা মোনাজাত তুলে।উপরে তাকায়।হাসিমুখে দোয়া করে,
–“আল্লাহ্ তুমি সব ঠিক রেখো।আমার দুই ছেলের মনের আশা পূরণ করো।”

সুনেরা মার্কেট যাবে। তাহুরাও সাথ দিবে বোনের।বিয়ের কেনাকাটা করতে দেরী আছে এখনো। সুনেরাকে দেখতে এসে এবং বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে এসে যে বকশিস দিয়েছে,সেই টাকায় আজ বোনকে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবে সুনেরা।বোনকে ছাড়া তার চলে না।মুন্সীকে আগে বলে রাখে তাহুরা।মুন্সী আবার তাহুরার কথা দাম দেয় বেশি।মেয়েটা বড্ড শান্ত ভাবে জিনিস বুঝাতে পারে।
অন্যদিকে একটু উনিশ বিশ হলে সুনেরা চিৎকার চেঁচামেচি করে। এতে শিউলি, মুন্সী ক্ষেপে উঠে দ্বিগুণ। তাই মা বাবাকে মানাতে হলে তাহুরা উত্তম।
কালো রঙের কামিজের সাথে লাল রঙের দোপাট্টা।সুন্দর সুতার কাজ।লাল ওড়না মাথায় দেয় তাহুরা।ইদানিং মাথায় কাপড় দেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত।অবশ্য এর পিছে উমাইরের হাত।লোকটার কড়া চাহনি মনে আসলেই মন পিঞ্জিরা অশান্ত হয়।

সন্ধ্যার পর বের হয় ওরা।বাড়ির কাছে মার্কেট।চকবাজারে অবস্থিত।এলাকা থেকে বেরিয়ে সুনেরা রিক্সা ডাকে।তাহুরা হাঁটতে অসঙ্গতি জানায়।
রিক্সায় উঠে হুড ঠিক করে রিক্সা চালক।তাহুরা এদিক সেদিক তাকিয়ে বোনকে প্রশ্ন করে,
–“জুবায়ের ভাইয়া আসবে?”
–“নাহ।সে অফিসে।কাজে নেমেছে বাবার সাথে।তোদের দাওয়াত দিবে এই সপ্তাহে।”
সুনেরা জবাব দেয়।
–“আমি যাবো না আপু। তোমাকে ছাড়া ঐ বাড়িতে গেলে কেমন লাগবে বলো!”

তাহুরা মুখ কুঁচকে বলে।তার আসল ভয় উমাইর।আজকাল উমাইর তাকে একটু বেশি শাসন করে,এটা সেটা সম্পর্কে হুশিয়ারি দেয়।তবে এসবের মাঝে সে উমাইরের বাণী হুমকির চেয়ে যত্ন হিসেবে গ্রহণ করে।ভয় পেলেও অন্তর গহীনে লোকটার হাস্যোজ্বল চেহারায় মন গলে।
–“যেতে হবে।আয়মা,শায়ন,ইমন ভাইয়া সবাই যাবে।চাচাতো ভাইবোনদের বলবো।গেলে যাবে না গেলে নেই।”
সুনেরার কণ্ঠে রাগ।সে বোনের জবাবে মিনমিন করে উত্তর দেয়,
–“আচ্ছা।”

চকবাজারে একসাথে অনেকগুলো মার্কেট।সুনেরা তার পরিচিত দোকানে যায়।মা,বোন আর নিজের জন্যে কেনাকাটা করে।তার আর তাহুরার জন্যে কেনা কামিজগুলো বেশ কারুকাজ খচিত।ব্যাপক সুন্দর।
তারা ফুচকার দোকানে এগিয়ে যাচ্ছে।সুনেরা ধীরে হাঁটছে তাহুরার জন্যে।মেয়েটার মান্থলি সার্কেল।বোনের কষ্ট বুঝে সুনেরা।একটু বেশি নুয়ে যায় তাহুরা অত্র সময়।কাপড় কিনে সেলানোর ব্যাপার থাকে,তাই আজ না গিয়ে পারলো না সুনেরা।সামনে নতুন বাড়ি হতে মেহমান আসবে ঢের বা তার বোনকেও যাওয়া লাগবে সেই বাড়িতে।কোনো অংশে কম থাকতে চায় না সুনেরা।সবসময় পরিপাটি একটা ভাব পছন্দ তার। সেই হিসেবে বোনকেও নিজের মতো বানিয়েছে মেয়েটা।দুইবোন বেশ পরিপাটি থাকে সদা।
ফুচকার দোকানের সামনে এলে ফোন বাজে সুনেরার।রিসিভ করে মেয়েটা গর্জে উঠে,

–“তোমাকে আসতে কে বলেছে?”
–“চিল্লাও কেনো?আমি তোমার পিছে।”
সুনেরা মাথা ঘুরিয়ে পেছন ফিরে।উমাইর,জুবায়ের,আফিয়া এবং নিবরাস উপস্থিত।সুনেরা রাগতে গিয়েও রাগলো না।
তাহুরা বোনের পাশে তার ওড়নার একাংশ ধরে দাঁড়িয়ে।এরা আবার কেনো আসলো?
–“আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া।কেমন আছেন?নিবরাস,আফিয়া কেমন আছো?”
সুনেরা ভদ্রতার সহিত বলে।
–“ওরা ভালো আছে।আমিও ভালো আছি।আসলে আমরা বের হচ্ছিলাম।ভাবলাম তোমাদের দুজনকে নিয়ে যায়।সারপ্রাইজ দিলাম আরকি।”
মাথা চুলকে হাসে জুবায়ের।

উমাইর ভাব বিনিময় করে।সুনেরার পিছে অনেকটা লুকায়িত তাহুরা।তার কি হলো?উমাইর লাল দোপাট্টায় আবৃত প্রেয়সীকে অবলোকন করে তাতেই ডুবে যায়।
ফুচকা খায় মেয়েরা।আফিয়া বেশি খায়নি।নষ্ট করেছে।জুবায়ের,নিবরাস অন্যকিছু খেলেও উমাইর কিছু খায়নি।সে এমন দোকানের খাবার কম খায়।।জুবায়ের,উমাইর ফোন করে মুন্সীকে।ম্যানেজ করে মেয়েদের রাগী বাবাকে।মুন্সী নারাজ হলেও পরে রাজি হয়।ছেলে দুজনকে চোখ বুঁজে বিশ্বাস করতে দ্বিধা নেই মুন্সীর।
তারা গন্তব্যে যাওয়ার পূর্বে জুবায়ের ফট করে বলে,

–“জান,তুমি আমাকে একটু সাহায্য করো।মার্কেট প্লেসে যখন এসেছি আমি চাই মা এবং তোমার মায়ের জন্যে সেম শাড়ি কিনি।”
সুনেরা বোনের পানে তাকায়।ইতিমধ্যে আতংক দেখা দিচ্ছে তাহুরার মুখে। মার্কেটে যেতে আরো গভীরে হাঁটতে হবে।
–“তাহুরা যেতে পারবি?”
বোনের প্রশ্নে ইতস্তত মাথা নাড়ায় তাহুরা,
–“পারবো।”
–“ওর সমস্যা হলে,থাকুক।আমি,উমাইর ভাইয়া,
আফিয়া আপু আছি।”
মন্দ লাগেনি প্রস্তাব খানা।তাহুরা আলগোছে হাসে।যাক বেশি হাঁটতে হবে না তার,
–“ঠিক আছে,নিবরাস।”

সুনেরা বোনের সাথে আলাদা কথা বলে জুবায়েরের সাথে যায়।
উমাইর আফিয়ার উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট নয়।শক্ত চোয়ালে সে ভাবলেশহীন। তাহুরা,আফিয়ার সাথে কথা বলছে এটাও যেনো সহ্য হচ্ছে না উমাইরের।নিবরাস ব্যাপারখানা লক্ষ্য করে আফিয়াকে বলে,
–“আপু,আমাকে অ্যাপেল ওয়াচ কিনে দিবে বললে তুমি।খবর নেই তার।আজ চলো দেখি।ভালো লাগলে কিনে দিবা।উমাইর ভাইয়া থাকুক।তাহুরা যাবি?”

–“হুম চল।তাহুরা চলো যায়।”
আফিয়া হাসিমুখে বলে।
–“ও যাবে না।তোমরা যাও নিবরাস।”
উমাইর কথা খানা বেশ ঘৃণার সহিত বলে।
–“ওকে ওকে ভাই।”
নিবরাস বোনকে নিয়ে যাচ্ছে।চেয়েও অপেক্ষা করেনি নিবরাস।হাজার হলেও আফিয়া তার বোন।আফিয়ার প্রতি উমাইরের ঘৃণিত দৃষ্টি সহ্য হয়নি ভাইয়ের।বাদ বাকি,উমাইর তাহুরাকে সামলে নিবে জানা আছে নিবরাসের।
–“পার্কিংয়ে আসো।”

বেশ দ্রুত হাঁটছে উমাইর।মানুষের ভিড় আছে মুটামুটি।তাহুরা উমাইরের লম্বা কদমে হিমশিম খায়।পাশ ফিরে তাহুরাকে না দেখলে নজর ঘুরায় উমাইর।লাল ওড়না,কালো কামিজে আবৃত মেয়েটা ভিড়ের মাঝেও তার নজের চকচক করছে।ইচ্ছে করছে, বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে তার লাজ কন্যাকে।
–“এনি প্রবলেম?শরীর খারাপ?”
তাহুরার পাশাপাশি ধীরে হেঁটে প্রশ্ন করে উমাইর।
–“গাড়ি দূরে বেশি?”
পাল্টা প্রশ্নে উমাইর বুঝে মেয়েটার হাঁটতে ভালো লাগছে না।সে কি কোলে নিবে আদুরে পুতুলকে?
–“সামনে।”

বলতে বলতে চলে আসে তারা গাড়ির নিকট।
গাড়ি পেয়ে হেলান দেয় তাহুরা।কোমর হতে পা অব্দি যেনো অবশ হয়ে আসছে।
হঠাৎ,উমাইর সর্বপ্রথম তাকে ধমকে উঠে,
–“সন্ধ্যায় মেসেজ দাওনি কেনো?”
কিঞ্চিৎ নড়ে তাহুরা।ভাঙা গলায় বলে,
–“আপুর সাথে ছিলাম।”
–“বাসায় গিয়ে দেখাবা আমাকে,কি কি কিনেছো।”
–“আচ্ছা।”
ধীর সুর তাহুরার।

উমাইর মোবাইল বের করে মনোযোগ দেয় সেথায়।
তাহুরার পা ভেঙে আসছে যেনো।একটু বসা দরকার তার।পাশ ফিরে উমাইরকে দেখে সে।লম্বাকৃতির মানুষটা কি অমায়িক লাগে নজরে।চুলগুলো কি সুন্দর করে সেট করা!বুকটা মুহূর্তে হরতাল শুরু করে।
নিজেকে দমিয়ে তাহুরা উমাইরকে বলে,
–“এই যে,আমি একটু বসবো।”
নিজ হতে আবদার কখনো করেনি তাহুরা।আজ হঠাৎ কি হলো মেয়েটার?
উমাইর গাড়ির চাবির সাথে অ্যাটাচ বাটনে ক্লিক করলে অটোমেটিক গাড়ির লক খুলে। সামনের দরজা টেনে ধরে বসতে নির্দেশনা দেয়,

–“আসো।”
উমাইর গাড়ির জানালার দিকে অনেকটা ঝুঁকে।তাহুরাকে প্রশ্ন করে,
–“পায়ে ব্যথা করছে?”
তাহুরা দুদিকে মাথা নাড়ে।যে সমস্যা তার সেই সমস্যা উমাইরকে কিভাবে বলবে?তাহুরার নিশ্চুপ নিরবতা,পেট চেপে বেঁকে বসে থাকা অবলোকন করে বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটার সমস্যা কি!উমাইর তো ছোট বাচ্চা নয়।অন্য সমস্যা হলে তাহুরা নিশ্চয় বলতো কিছু।গরম কিছু খাওয়া দরকার মেয়েটার।এমন সময়ে ফুচকা কে খায়? উমাইরের শিরায় উত্তেজনা হানা দেয়,

–“তুমি জানো তুমি সিক।ফুচকা খাওয়া দরকার ছিলো?এটা ভালো জিনিস?”
তাহুরার আঁখি ছানাবড়া।লোকটা বুঝে গেলো? এই শরমে মাটিতে ঢুকে পড়বে সে?
–“মাথামোটার মতো চেয়ে থাকো আর আমাকে অস্থির করো।বসো।আমি আসছি।”
গমগমে বাক্য বিনিময়ে প্রস্থান ঘটে উমাইরের।ফিরেও আসে দ্রুত। হাতে চায়ের ওয়ান টাইম কাপ।তাহুরার দিকে এগিয়ে দিলে তাহুরা জানায়,

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৯

–“খাবো না।”
উমাইরের মেজাজ চটে।সে কাপ কাত করে চা ফেলতে নিলে তাহুরা আঁতকে উঠে,
–“খাবো।দিন।”
উমাইর কাপ এগিয়ে দেয়। গাড়িতে বসে।তাহুরার পাশাপাশি।মেয়েটা সময় নিয়ে চা খাচ্ছে। করুণা হয় উমাইরের।তাহুরার কপালের সম্মুখে দোদুল্যমান চুল জ্বালাতন করলে সেগুলো কানে গুঁজে দেয় উমাইর বিনা প্রশ্নে।
তাহুরা চমকিত, হচকিত।বিস্মিত নজরে উমাইরের পানে চাইলে সে তাহুরার মাথায় হাত রাখে,
–“বেশি খারাপ লাগলে যেও না।বাসায় দিয়ে আসবো?”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১১