রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১১

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১১
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“না…হ।আপুকে রেখে বাড়ি ফিরলে বাবা খুব রাগ করবে।ভাইয়ার সাথে আছে আপু,থাকুক কিছু সময়।আপু খুশি হবে।”
ইতস্তত তাহুরার গলার স্বর।উমাইরের সহিত দৃষ্টি মিললে বামে ফিরে।লোকটার দৃষ্টি ক্ষিপ্ত।তাহুরার উত্তর তার পছন্দ হয়নি বুঝেছে।চায়ের ওয়ানটাইম কাপে চুমুক দেয় মেয়েটা।বুকটা তার দুরুদুরু।
সহসা সে শুনতে পায় উমাইরের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ,

–“আমি ভুলে গিয়েছিলাম,তুমি আবার মানব দরদী।”
কেমন ঠাট্টা এই কথায়।উমাইর ইয়ার্কি করলো মাত্র!তাহুরা কেনো মানব দরদী হবে?সে কেবল বোনের কষ্ট দেখতে পারবে না।বাবা বোনকে বকে অস্থির করবে যদি তাহুরা একা বাড়ি ফিরে।এছাড়া বোন মন খারাপ করবে ভালোবাসার মানুষের সহিত সময় কাটাতে চেয়েও বিঘ্ন ঘটলে।
তাহুরা সোজা হয়ে বসে। বাঁকা দৃষ্টিতে উমাইরকে অবলোকন করে।উমাইর সিটে হেলান দেওয়া।পরিপাটি চুলগুলো আজ কিছুটা হেলে আছে।
তাহুরা অন্তরে সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“মানব দরদীর জন্যে না।আসলে বাবা আমাদের দুবোনকে নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে সদা।আপু…”
–“চা শেষে ইজি হয়ে বসে থাকো।পা গুটিয়ে বসতে মন চাইলে তাও করো।আমি বাহিরে আছি।”
মাঝপথে তাহুরাকে থামিয়ে গমগমে বাক্য বিনিময় করে বেরিয়ে যায় উমাইর।বদ্ধ গাড়িতে প্রেয়সীর সহিত বসে থাকাটা হঠাৎ তার বোধগম্য হয়নি।মনে অজানা আবদার হাজির হচ্ছিলো।মেয়েটা কি বললো তাও শুনেনি উমাইর।মনটা তার ভেবে যাচ্ছিলো তার পাশে অবস্থানরত রূপসীর নরম সত্তাকে একটাবার স্পর্শ করতে।

নিষিদ্ধ আবদার,নিষিদ্ধ ইচ্ছে।দমে যায় সুঠামদেহী উমাইর।গলে যায় ধৈর্যশীল পুরুষটা।মেয়েটা তাকে আকর্ষিত করে সর্বদা।মস্তিষ্কের ভাবনা উমাইর অন্যদিকে নেয়।গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ফোন দেয় ভাইকে।
তাহুরা বিস্ফোরিত নজরে চেয়ে।কি হলো?লোকটাকে খারাপ কিছু বলেছি কি সে?আচমকা এমন ব্যবহারের হদিস খুঁজে পায়নি তাহুরা।যদিও উমাইরের সহিত একাকী বসে গাড়িতে সময় পার করাটা তার কাছে অস্বস্থির কারণ।বারংবার তাহুরার মনে হচ্ছিলো উমাইর,সে এক প্রেমিক যুগল কেবল গাড়িতে তাদের মধুর সময় পার করছে।
তবে বাম হাত ঢুকিয়ে দেয় উমাইর।হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ে।এইদিকে অবশ্য তাহুরাও স্বস্তি পায়।পরক্ষণে নিজের ভাবনায় তওবা করে মেয়েটা।ভীত মনে বুকের উপর হাত রাখে,

–“মনের অযথা ভাবনা একপাশে রাখ, গাঁধী।উমাইর স্যার জানলে এক ধাক্কায় গাড়ি থেকে বের করবে তোকে!”
হাতের খালি ওয়ান টাইম কাপ কই রাখবে তাহুরা?গাড়িতে রাখলে নিশ্চিত উমাইর তাকে বকবে।বাহিরে ডাস্টবিনে কোথাও ফেলতে হবে।সে কি গাড়ি থেকে বের হবে?নাকি উমাইরকে ডাকবে?উমাইর ড্রাইভিংয়ের পাশের দরজায়।কাঁচ বেশ খানিক নামানো।তাহুরা গলার আওয়াজ উচুঁ করার চেষ্টায় বলে,
–“এইযে শুনুন?”
উমাইর শরীর বাঁকিয়ে পেছন ফিরে।তাহুরার চিন্তিত মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে তার নিকট যায়।অনেকখানি ঝুঁকে জানালার ধারে,

–“বলো।”
–“কাপটা কই ফেলবো?”
হাতের কাপ দেখিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটা।
–“খেয়ে ফেলো।”
হেসে উঠে উমাইর। সংশয়ে তাহুরা।লোকটার হাসির হুংকার শোনা দায়।অথচ এখন এই হাসিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাহুরার অন্তর পিঞ্জিরা।লোকটা তাকে ঠাট্টার পাত্রী বানাচ্ছে আর বোকা মেয়েটা সেই মানবের হাসিতে কুপোকাত হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

–“কাপ কিভাবে খাবো?”
নাক কুঁচকে প্রশ্ন করে তাহুরা।
–“মুখে দিয়ে চাবাও।”
আবারও হাসে উমাইর।তাহুরা ভ্রু সমান্তরাল করে তাকালে উমাইর তার হাত থেকে কাপ নেয়,
–“একদম নাক কুঁচকাবে না। ভেঙে দিবো।”
ঠাণ্ডা গলার স্বর উমাইরের।অথচ ধমক এটা।উমাইর সম্মুখে গেলে তাহুরা নিজ নাকে হাত দেয়,
–“কেনো যে উনি এমন ধমক দেয়!”
দূর হতে তাহুরা দেখে,উমাইর ডাস্টবিন খুঁজে বেড়াচ্ছে।শেষে পার্কিংয়ের পিলারের দিকে একটা ছোট ডাস্টবিনে কাপখানা ফেলে।

মিনিট বিশেক পর চলে আসে জুবায়ের,
সুনেরা।নিবরাস,আফিয়াকে ফোন করলে ওরাও দ্রুত ফিরে গাড়ির নিকট।তাহুরা গাড়ি হতে বেরুতে নিলে জুবায়ের থামায় তাকে,
–“বসো বসো।বেরুতে হবে না।”
–“আপনি বসুন এইখানে ভাইয়া।”
তাহুরা ভাব বিনিময় করে।
–“ইয়ে মানে,তোমার আপুর সাথে বসি আজ!”
সুনেরা পেছন হতে খাঁমচে ধরে জুবায়েরের শার্ট।কি নির্লজ্জ লোক!ছোটবোনের সামনে কোনো সম্মান রাখতে দিচ্ছে না।
–“আরে বস,তাহু।রেস্টুরেন্ট কাছেই।”
নিবরাস বলে উঠে।

উমাইর কেবল ঘটনা উপলব্ধি করছে।মুখ খুললো না। নাটক কোথায় গিয়ে থামে সেটা দেখার অপেক্ষায় সে।
অবশেষে আফিয়া,সুনেরা মাঝে বসলে জুবায়ের এবং নিবরাস তাদের দুদিকে বসে সহজে। গাড়ি ছুটে চলে তার গন্তব্যে।
তাড়াহুড়োতে খাওয়া শেষ করে সবাই।মুন্সী মিয়া বারংবার ফোন করছে।ক্ষেপে যায় উমাইর।এক পর্যায়ে রেস্টুরেন্ট হতে বেরুনো অবস্থায় উমাইর সুনেরাকে বলে,

–“ভাবী,আপনার বাবা কি ভাবছে আমি আর ভাই আপনাদের দুই বোনকে কিডন্যাপ করছি?”
হাসে সুনেরা। উমাইরের রগচটা সভাব সম্পর্ককে অবগত সে। খেয়ালী জবাব দেয়,
–“বাবা একটু বেশি চিন্তা করে আমাদের নিয়ে।বিশেষ করে তাহুরার জন্যে।”
–“কিন্তু অহেতুক চিন্তা করার দরকার কি?আমরা উনাকে বলেছি বাড়ি দিয়ে আসবো আপনাদের।”
উমাইরের কণ্ঠে রাগ।মুন্সীর কর্মকাণ্ড তার মেজাজ বিগড়েছে।এতবার ফোন দেওয়ার কারণে অস্থির তাহুরা খেতে অব্দি পারেনি।বাবার ভয়ে তার আঁখি ছিল ভিজে।কিন্তু,মেয়েটা হাসিখুশি ছিলো রেস্টুরেন্টে আসার পর।প্রিয়তমার সুখের মুখ বিষাদে ঢেকে যাওয়ায় প্রেমিক পুরুষ ক্রোধে উন্মত্ত।মূলত এই কারণে উমাইর খুঁতখুঁত করছে।

–“ভাইয়া আপনি রাগ করবেন না।বাবা এমনই।”
সুনেরার বাক্যে উমাইর নিঃশব্দে অনিচ্ছাকৃত অধর প্রসারিত করে।তবে,তাহুরা বুঝে এমন হাসিটা উমাইরের মন থেকে আসেনি বরং রাগ লুকানোর হাসি।যাওয়ার বেলায় সুনেরার নির্দেশে তাহুরা পেছনে বসে বোনের সাথে।জুবায়ের ভোঁতা মুখে সম্মুখে বসে ভাইয়ের সহিত।
দূর হতে তারা দেখে মুন্সী মিয়া গেইটে দাঁড়িয়ে।পাঞ্জাবি,লুঙ্গি পরিহিত।গাড়ি থামলে তার দুই মেয়ে নামে।জুবায়ের সম্মান জানাতে বেরোয়। উমাইরকে ইশারা করলেও সে বের হলো না। ঠাঁই বসে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে।মুন্সী মিয়া জুবায়েরের সাথে কুশল বিনিময় শেষে উমাইর নিকট আসে,

–“একটু চা খেয়ে যান,উমাইর?”
–“নাহ আঙ্কেল।দেরী হচ্ছে।”
মুন্সীর কথার ঠেস যেনো তাকে ফিরিয়ে দিলো উমাইর।
মুন্সী বুঝেনি উমাইরের তেজ।সে সহসা ফের বলে,
–“আমি বলেছিলাম মেয়েদের আগে ফিরতে।দেরী হয়েছে আসলেই।”
–“কোথাও গেলে সময় মেপে তো ফিরে আসা যায় না,আঙ্কেল!”
উমাইর তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দেয়।

মুন্সী কিছুটা আভাস পাচ্ছে উমাইরের কথার ছল।ছেলেটা কি রেগেছে তার বারবার ফোন করায়?
মুন্সী কিছু বলতে নিলে তাহুরা উপস্থিত হয় সেথায়।বাবার পাঞ্জাবির হাতা ধরে বলে উঠে,
–“জুবায়ের ভাইয়া বললো,উনার কাজ আছে সকালে।অন্যদিন আসবেন।”
বাবাকে কোনোভাবে থামায় তাহুরা।দুইজন নাহয় কথা কাটাকাটিতে রাত পার করবে।

উমাইর ঠাণ্ডা গলায় সালাম দিয়ে প্রস্থান ঘটায় গাড়ির।যাওয়ার পূর্বে অবশ্য তার শীতল দৃষ্টিতে ছুঁয়ে দেয় তাহুরার সত্তা।মেয়েটা বাবার জন্যে চিন্তিত ছিলো,ভীত ছিলো।কি ভেবেছে সে?উমাইর তার বাবাকে কটু কথা শুনাবে?পাগল নাকি উমাইর?ভবিষ্যতের জন্যে হলেও উমাইর মুন্সীর সাথে কখনো দুর্ব্যবহার করবে না।কারণ তার পুতুলটা তো মুন্সীর মেয়ে।তবে এটা বুঝতে বেগ পাচ্ছে না সে,মুন্সীর ছোট মেয়েটাকে বিয়ে করতে তার একটু কাহিনী করতে হবে। নাক উঁচু মুন্সী ছোট মেয়ের বেলায় বড্ড নাজুক।

–“তোমার নাক উঁচু শ্বশুরটা কেমন ঘাড়ত্যাড়া ধরনের।”
উমাইরের সহজ ভাষা।
–“মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকে বেশি।আমি ভেবেছিলাম সুনেরার সাথে বিয়েতে বেশ ঝামেলা করবেন।কিন্তু,সহজে সব হলো।তাহুরার বিয়ে নিয়ে চিন্তা নেই।মেয়েটার নিজস্ব পছন্দ থাকবে,এমন মেয়ে সে নয়।মুন্সী আঙ্কেল যার সাথে বিয়ে ঠিক করে মেয়ের…”
ভাইকে অর্ধেক কথা বলতে দিলো না উমাইর।মাঝে ফোড়ন কাটে,

–“ব্যতিক্রম হবে দেখবে সব।তাহুরার বিয়েতে ঝামেলা হবে অনেক।আর মেয়েটাও কান্না করবে বেশ।জামাই,বাবা দুজনের প্যারা ভোগ করবে সে।তবে,শেষে সুখী হবে।”
–“তুই কিভাবে শিউর?”
জুবায়েরের প্রশ্নে উমাইর কাঁধ হেলিয়ে ভাব নেয়।অর্থাৎ, সে জানেনা।
মন তার উত্তাল।অধর বাঁকা হয়ে কিঞ্চিৎ প্রসারিত।ক্ষিপ্ত হাসিতে তার মনে ভাবনারা গান করে।তার অন্তরের গভীরের কথাগুলো চিৎকার করে যেনো,

–“তাহুরার ব্যাপারে শিউর আমি সবকিছুতে।বিয়ের প্রস্তাব আমি দিবো,আমার সাথেই ঝামেলা হবে।আর সেই ঝামেলায় মেয়েটাকে জয় করবো আমি।ততদিনে নিশ্চয় তাহুরা আমার প্রতি দেওয়ানা হবে।ওকে আমি বাধ্য করবো আমার প্রতি ভাবতে,আমাকে ভালোবাসতে।উমাইরের একমাত্র প্রাণ তাহুরা।কেউ সেই পাখির দিকে তাকানো নিষেধ,এই পাখিকে কেবল উমাইর দেখবে,ধরবে,ভালোবাসায় মুড়িয়ে নিবে।”

বাসায় এসে ফ্রেশ হয় তাহুরা।মনে হচ্ছে বোঝা হালকা হলো মেয়েটার। উমাইরকে মনে পড়ছে খুব।রেস্টুরেন্টে বাবা ফোন দেওয়ার পর হতে লোকটা কেমন নিভে যায়।বাবাও অতিরিক্ত করেছে।কখনো জুবায়েরকে ফোন দেয় তো কখনো উমাইরকে। নিজের কাপড়,জুতো বের করে মাকে দেখায়।মা পছন্দ করে ঢের।পরক্ষণে মনে আসে উমাইর তাকে ছবি পাঠাতে বলেছে কি কি কিনেছে সেসবের।
তাহুরা আলগোছে ছবি তুলে সকল কিছুর।লোকটাকে পাঠায়।শেষ বার্তায় লিখে,

–“রাগ করবেন না কিছু নিয়ে। বাবার পক্ষ হতে দুঃখিত আমি।”
মিনিট দশেক পর উমাইর মেসেজ সিন করে।জবাব দেয়নি।উৎসুক তাহুরা মোবাইল হাতে বসে।এই বুঝি মেসেজ দিলো রাগী লোকটা। আট মিনিট,পনেরো পার হয় দেয়নি মেসেজ উমাইর।অন্তরে কেমন চাপ অনুভব করে তাহুরা।ফের ভাবে,উমাইর সদা মেসেজ দেয় না।বেশিরভাগ সময় মেসেজ দেখে রাখে।তার একদিন পর উত্তর পাঠায়।সে তো আর তাহুরার মতো বাড়িতে বসে নেই।নানান কাজে ব্যস্ত।স্যার বলে কথা।

মন খারাপকে দূরে ঠেলে তাহুরা কাপড় জোড়ায় হাত বুলায়।এরমাঝে ফোন বেজে উঠে। গ্রুপকল।বহুদিন পর এই বাহিনী ফোন দিলো।সকলে বেড়াচ্ছে প্রচুর।
–“হ্যালো?কি অবস্থা তোদের? বেড়াচ্ছিস খবর নিচ্ছিস না।”
হেসে বলে তাহুরা।তার হাসিতে তাল দেয় স্বাগতা,
–“কি নিবো খবর।আমার জীবনের সেরা সময় পার করছি।পাবলিকে ভর্তির প্যারা নাই,এক্সামের প্যারা নাই।সোজা আমাদের কলেজে অনার্সের জন্যে এপ্লাই করবো।”
সায় দেয় চৈতালি,

–“একদম।আমরা তিনজন একসাথে অনার্সে ভর্তি হবো আমাদের কলেজে।”
–“ইন শাহ্ আল্লাহ্।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“তা,ঘণ্টা এক আগে কল দিলাম ধরিসনি।কই ছিলি তাহুরা?”
চৈতালির প্রশ্নে তাহুরা বলে,
–“মার্কেটে ছিলাম। পরে আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে বের হয়েছি।”
–“উমাইর স্যার ছিলো না?”
চঞ্চল প্রশ্ন চৈতালির।
–“থাকবে না কেনো বল?উনার ভাইয়ের সাথে বিয়ে হচ্ছে সুনেরা আপুর।গর্দভ।”

স্বাগতা বলে উঠে।
–“হুম,স্যার ছিলো।”
–“কি কি?এখনো স্যার?ভাইয়া এনা ডাকবি।তোর বেয়াই উনি এখন, তালতো ভাই।”
হেসে উঠে বাকি দুইজন।
তাহুরা লাজে মুড়ে।লোকটাকে ভাই বলা যাবে না।”এই যে” বলে ডাকে।এইসব শেয়ার করা যাবে না।একদম না।
তাহুরার জবাবের পূর্বে স্বাগতা ফের বলে,
–“স্যার কথা বলে তোর সাথে?”

কথা বলে মানে?এমন সব যত্ন,বকাবকি,ধমক দেয় তাহুরা এহেন ব্যাপারে মুখ খুলবে না কস্মিনকালে।এছাড়া লোকটার ব্যবহারে মনে অন্য অনুভূতির হানা দিচ্ছে তাহুরার।ভাবতেই পেটে মোচড় দেয়।নিজেকে সামলে উত্তর দেয়,
–“উনার কথা বাদ দে।আমি পরে কথা বলছি।খারাপ লাগছে।”
ফোন কাটে সে।বাকিরাও মত দেয় পরে কথা বলবে।
মোবাইল খানা আবারও চেক করে।উমাইর উত্তর দেয়নি এখনো।
এরমাঝে শিউলি গ্লাস ভর্তি দুধ এনে দেয় মেয়েকে।হুশিয়ারি বার্তা ছাড়ে,
–“পুরোটা শেষ করবি।নাইলে হাড্ডি ভাঙবো তোর।”

তাহুরা ভীত মুখে হাসে।অপ্রিয় খাবারটা তার এখন এক নিঃশ্বাসে খেতে হবে।
অগোছালো কাপড়গুলো বিছানায় বসে গুছিয়ে নেয় সে।মেসেজ বার্তা আসে তখন। হাতের কাপড় ছেড়ে দ্রুত মোবাইল দেখে।উমাইর মেসেজ দিয়েছে।তার দেওয়া কাপড়,জুতোর ছবিতে কিছু না বলে উত্তর দেয় তার বাবার পক্ষ হতে দেওয়া দুঃখ প্রকাশের মেসেজের জবাব,

–“সরি বলার দরকার নেই।আঙ্কেল তোমাদের বাবা,উনার চিন্তাও বেশি।ঘুমিয়ে যাও।”
তাহুরা চটপটে।তার আঙ্গুলগুলো নৃত্য পরিবেশন করে মোবাইলের স্ক্রিনে,
–“আপনি সত্যি রাগ করেননি তো?”
উমাইর অপর পক্ষে ঘাড়ে হাত বুলায়।মেয়েটা যেঁচে নিজের জন্যে ফাঁদ বানালো।বেশ ঝাঁঝালো মেসেজ পাঠায় সে,
–“করেছি রাগ।কি করবে?রাগ ভাঙ্গাও আমার।”
–“কিভাবে ভাঙাবো?আপনি তো সামনে নেই।”
–“সামনে থাকলে কি করতে?বড্ড পাকা হচ্ছো?কথা কম।ঘুমাও।”
উমাইর বার্তা দেয়।

–“সামনে থাকলে আবার সরি বলতাম।”
তাহুরা ফের মেসেজ পাঠায়।
–“উহু।এইসব সরি টরি কাজে দিবে না সামনে থেকে।তখন আমার রাগ ভাঙাতে হলে নিজে অজ্ঞান হয়ে যাবে।”
–“কেনো?”
–“কারণ তুমি মাথামোটা,স্টুপিড।”
কেমন আঁখি ভরে আসে তাহুরার।লোকটা অপমান করেছে তাকে?তবে তার অপমান হোক আর যায় হোক, উমাইরের মেসেজ পেলে,সে তাহুরার সহিত কথা বললে যেনো শান্তি অনুভব করে তাহুরা।দিনটা তার ভালো যায়।অন্তরে অনুভূতিটা নেচে গেয়ে বেড়ায়।

সেইসব কথা পাশে ঠেলে তাহুরা রিপ্লাই করে,
–“আপনি ঘুমাবেন না?”
–“নাহ। ফুটবল খেলতে যাবো এখন।”
তাহুরাকে এমন মেসেজ পাঠিয়ে হেসে উঠে উমাইর।মেয়েটাকে জ্বালাতন করা তার প্রিয় কাজ।নিশ্চয় মেয়েটা এখন দ্বিধায় ভুগবে।নখ কামড়াবে!
–“আমি যাচ্ছি।খোদা হাফেজ।”
তাহুরার শেষ মেসেজ অবলোকন করে উমাইর শুয়ে পড়ে বিছানায়।

তার পাঠানো কাপড় জোড়ার ছবিতে নজর বুলায়।সবকটা জামা বেশ সুন্দর।একেকটা পড়লে নিশ্চয় তাহুরাকে বড্ড মনোরম লাগবে।প্রেয়সীর পানে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে সে।অথচ মেয়েটা টের পাবে না।
তাহুরার একখানা ছবি বের করে উমাইর।আঙ্গুল বুলিয়ে অধর স্পর্শ করে সেথায়।তাহুরা যখন বারংবার রাগ করেছে নাকি জিজ্ঞাসা করে উমাইরের বেশ আরাম অনুভব হয় অন্তরে।খুব বলতে ইচ্ছা করে,
–“আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে তোমার সেই অধরকে বলো আমার গালে এসে হামলা করতে।”
উমাইর উঠে বসে।চুলের দুধারে হাত ঘষে,

–“আমার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে তোমার অর্ধেক সময় যাবে তাহু।অনিচ্ছাকৃত হলেও আমি রাগ দেখাবো তোমায়।কেবল তোমার অস্থিরতায় ঘেরা ছোঁয়া পেতে।”
পরক্ষণে মুন্সীর কথা মাথায় আসে উমাইরের।মুন্সী ঝামেলা করলে তার মেয়ে শেষ।উঠিয়ে বিয়ে করবে উমাইর।তার জীবনের অনেক সাধনার মেয়েটা। কতো বছর ধরে দেখে রেখেছে।তাহুরাকে বিয়ে করতে সব সীমা লঙ্ঘন করবে উমাইর।মুন্সী ঝামেলা করুক না করুক উমাইরের কিছু যায় আসে না।সে তাহুরাকে সারাজীবনের জন্যে আটকে নিবে বাহুডোরে এটাই জানে কেবল।

উমাইরকে স্যার হিসেবে ভদ্র ভাবলে ভুল করবে সকলে।ভার্সিটি লেভেলে বিগড়ে থাকা মেধাবী ছেলেদের অন্যতম ছিলো উমাইর।বাড়িতেও সকলের জানা উমাইরের,ক্রোধ,রাগ,জিদ সম্পর্কে।জয়ের ধারণা তার ছোট ছেলে তার বাবা অর্থাৎ উমাইরের দাদার মতো হয়েছে রগচটা।
উমাইর ঘাড় কাত করে ডানে বামে। চাপা ভঙ্গিতে অধর প্রসারিত করে।ফিচেল কণ্ঠ তার,
–“যায় কিছু হোক,দুনিয়া ধ্বংস হোক,আমার পাখিকে আমার মন পিঞ্জিরায় বন্ধী করবো কেবল আমি।বন্ধী হতে বাধ্য তুমি তাহুরা।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১০

পরপর সে ভারী,গম্ভীর,থমথমে সুরে আওড়ায়,
–“আমার জীবনে স্বাগতম তোমাকে,স্টুপিড রূপসী।এইবার কেবল হালালভাবে স্বাগতম জানানোর অপেক্ষায় রইলাম।আপাতত আমার রাগ অনুভব করো, পরে নাহয় রাগের সাথে আমার আদর-ভালোবাসা-স্পর্শ সবটা উপভোগ করবে!বিশ্বাস করো,তোমাকে ব্যাকুল করবো আমার প্রতিটা ছোঁয়ায়।বিনিময়ে তুমি লজ্জায় সেই আমার বুকে এসেই লুকাবে।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১২