রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৮

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৮
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“মা,ওর জ্বর কমছে না কেনো?”
চিন্তিত সুর।আপনজনের অসুস্থতা নিজ মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর।চোখ বুঁজে থাকা জ্বরে সিক্ত তাহুরার মাথায় হাত বুলায় সুনেরা। বোনটা তার গতকাল হতে জ্বরে ভুগছে।ডাক্তার দেখিয়েছিল তাকে উমাইর।জ্বর কমে তো আবার উঠে।সুনেরা বোনকে আলতো আওয়াজে ডাকলে,তাহুরা কোনো প্রত্যুত্তর করে না।কেমন হাঁপিয়ে যেনো মেয়েটা।
সুনেরার কাঁধ জড়িয়ে ধরে মেঘলা। ছোট বোনের প্রতি ভালোবাসা দেখে আঁখি জুড়ায়।তার এক হাত তাহুরার হাতের মুঠোয়।ছেলে দায়িত্ব দিয়ে গেলো এই মেয়ের।মেঘলা ঠোঁট ছোঁয়ায় সুনেরার কপালের কিনারায়। আশ্বস্ত করে,

–“ঠিক হয়ে যাবে,বউমা।একটু সময় নিয়ে সাড়ে সিজোনাল জ্বর।চিন্তা করো না।”
–“উমাইর ভাইয়াকে বলবেন,আবারও যেনো ডাক্তার ডাকে বাসায়?”
সুনেরা অনুরোধ করে।মেঘলার ফোন বাজে তখন।মাথার ইশারায় “হ্যাঁ” জানিয়ে মোবাইল তুলে মেঘলা।উমাইর ফোন করছে।ছেলেটা তার প্রাণ ভোমরার অসুস্থতায় পাগল প্রায়।ফোন রিসিভ করলে মেঘলা অপর পাশ হতে থমথমে সুর ভেসে আসে উমাইরের,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“তাহুরা উঠেছে?খাচ্ছে কিছু?”
–“ওর জ্বর কমছে না, আব্বা।ডাক্তার আনবে কি আবার?”
মেঘলা প্রশ্ন করে।
–“এন্টিবায়োটিক ধৈর্য্যর সাথে খেতে হবে।বারবার ডাক্তার চেঞ্জ করলে ওর সমস্যা দেখা দিবে।ডেকে জিজ্ঞেস করো কি খেতে মন চায়।”

উমাইর জানায়।মেয়েটার জন্যে তার বুক ভার।গতকাল কাছের মুহূর্তটার পর গাড়িতে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে
রমণীর।এরপর থেকে আর কথা বলেনি। জ্বরে
নেতিয়ে আছে।কথা বলার সুযোগটুকু হয়নি তাদের।
উমাইর স্পষ্ট শুনে মেঘলা আহ্লাদ করে তাহুরাকে ডাকছে,
–“তাহুরা মা,কি খাবে?উমাইর জিজ্ঞাসা করছে কি আনবে তোমার জন্যে?”
তাহুরা জ্বরে আতঙ্কিত। উমাইরের নাম শুনে বুঁজা আঁখি হালকা খুলে। কাল হতে লোকটিকে দেখেনি মেয়েটা।অথচ কাল কি ভয়ংকর রোমাঞ্চকর মুহূর্ত পালন করলো তারা।উমাইর,তার নিকট ছিলো।কতটা গভীর ছিলো উমাইরের স্পর্শ!জ্বরের ঘোরে তাহুরা বলতে পারলো না কিছু।কেবল অস্ফুট সুরে আওড়ায়,

–“উমা..ইর..”
এরপর বিড়বিড় শব্দ।বুঝা যায়নি এক অক্ষর।মেঘলা হাসে আলগোছে। উমাইরকে জানায়,
–“তোমার নাম নিচ্ছে।”
সুনেরাও হাসে শাশুড়ির রসিকতায়।মনে মনে বড় বোন বড্ড খুশি।ছোট বোনটা নাজুক,ভয় পায় সবকিছুতে।তার ভাগ্যে উমাইর জুটেছে,এরচেয়ে সুখ আর কিছু নেই।উমাইর বোনের জন্যে একেবারে ষোলো আনা পরিপূর্ণ।
–“রাখছি।”
উমাইর ফোন কাটে।অধরে তার তির্যক হাসি।পরক্ষণে মেয়েটার চিন্তায় ব্যাকুল হয়,
–“বোকা মেয়েটাকে আমাকে দেওয়ানা করে ছাড়লো।”

উমাইর তার অফিস কক্ষ হতে মাত্র বেরুবে এমন সময় নির্দেশনা আসে,কলেজ কর্তৃপক্ষ মিটিংয়ের আহ্বান জানায়।দ্রুত উঠে সে।দোয়া করে অন্তঃস্থল হতে,যেনো মিটিং দ্রুত শেষ হয়।
মনের দোয়া পূরণ হলেও উমাইরের মুখশ্রীতে আঁধার নেমে আসে।তাকে ঢাকা যেতে হবে।টিচার্স ট্রেনিংয়ের কারণে।তাও এক সপ্তাহের জন্যে।ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট হতে উমাইর এবং বাকি সকল থেকে একজন করে শিক্ষক বাছায় করা হয়।উমাইর চুপচাপ মিটিংয়ে অংশ নিয়েছে। আওড়ায়নি একটা বাক্য।অথচ ক্রোধে উন্মত্ত তার কপালের রগ।

মিটিং শেষে রকির ফোন আসে।তারা নেভাল যাচ্ছে।মন খারাপ অতিক্রম করতে বন্ধুদের সহিত দেখা করা দরকার।বাড়িতে এইভাবে ঐ অসুস্থ মেয়েটাকে দেখলে তারা মাথা ঠিক থাকে না।জড়িয়ে ধরতে মন চায়।মেয়েটার উত্তাপে নিজেকে ভস্ম করার আকাঙ্খা জাগে।উমাইর ঘাড় কাত করে।ভেসে উঠে কালকের দৃশ্য।তাহুরার বক্ষদেশের নরম অংশের খেয়াল হয়।পুরুষালি মন ফের আনচান।নিষিদ্ধ ইচ্ছা ডানা মেলে উড়ে।অন্তরের আহ্বান একটাবার আদুরীর ফোলা অধরে নিজ অধরের অবস্থান জারি করা।
উমাইর তার কপালে আঙ্গুলে ঘষে।ভ্রু কুঁচকে নেয়,

–“আহ্ উমাইর,মেয়েটা সিক।”
পরপর উমাইর আবারও আওড়ায়,
–“আই জাস্ট লাভ ইউ, বেইবি।”

উমাইর দ্রুত গাড়ি হাঁকায়।মস্তিষ্ক দপদপে।কালকে ভোরে বের হওয়া লাগবে ঢাকার উদ্দেশ্যে।বাহিরের আবহাওয়া অগ্নিকুন্ডের লাহান।বিকালের শেষভাগ হওয়ার পরও পরিবেশ শীতল হচ্ছে না একদণ্ড।গাড়িতে বিদ্যমান এসির পাওয়ার আরো কমায় উমাইর।গরমের উষ্ণতা সহ্য হয় তার,কিন্তু তাহুরার জন্যে সৃষ্ট উষ্ণতা সহ্যের বাহিরে।মেয়েটাকে হুট করে ভীষণ পেতে মন চাচ্ছে তার।মেয়েটার সত্তায় নিজ অস্তিত্ব জারি করার কল্পনায় মস্তিষ্ক তার নানান কল্পনায় ব্যস্ত।
বন্ধুদের মোটর বাইক অবলোকন করে গাড়ি পার্ক করে সাইডে।উমাইর দ্রুত হেঁটে যায়।তার জন্যে মধ্যেখানে সিট বরাদ্দ ছিল পূর্ব হতে।উমাইর বসলে তার সহিত কুশল বিনিময় সাড়ে সকলে।থমথমে হয়ে থাকায় রনি এইবার মুখ খুলে,

–“কিরে,বেজার কেনো?কিছু হয়েছে?”
–“আমাদের উমাইর আংকেলের সমস্যা হয় আবার?সে তো সমস্যা করে।”
বাপ্পি বলে।
উমাইর বাঁকা চোখে অবলোকন করে বন্ধুদের। নেভালের পরিবেশ সদা শান্ত।সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসে মন ভরে যায়।উমাইর তার ফুল হাতা শার্ট কুনই পর্যন্ত বটে।শার্টের তিনটা বোতাম খুলে।জবাব দেয়,
–“আমি ঠিকাছি।”
কেশে উঠে রনি,

–“ভাবী কাছে আছে,সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে ধৈর্যবান পুরুষের!”
–“কি বলিস তাহুরা ভাবী ওদের বাসায়?”
বাপ্পি উত্তেজিত।
–“তা আর বলতে।দেখছিস না,শালার মাঝে কেমন হাহাকার ভাব।ইসস,কাছে থেকেও বউকে নিজের করতে পারছে না।”
রকি টিটকারী দেয়।
–“বলছি কি বিয়েটা করেই ফেল।”
উপদেশ দেয় রকি।
উমাইর সকলের কথা শুনে।মেজাজ তার ফের চটে,

–“ওকে টপিকের মাঝে আনিস না।বিরক্ত লাগছে।”
বাপ্পি পকেট হতে সিগারেট বের করে।এগিয়ে দেয় উমাইরের পানে,
–“টান দে।ভালো লাগবে।”
উমাইর নেয়।দুই অধরের মাঝে সিগারেট গুঁজে লাইটার হতে আগুন ধরায়।নিঃশ্বাস ফেললে নাকে,মুখের আড়ালে বেরিয়ে আসে ধোঁয়া।বন্ধুদের সাথে দেখা হলে সিগারেট ছাড়া তার চলে না।এইভাবে সে একা অবস্থায় কখনো সিগারেট ঠোঁটে লাগায় না।পূর্বে অভ্যাস থাকলেও,এখন অনেকটা কম।

–“বল কি হয়েছে?”
রকি জিজ্ঞাসা করে।
–“পুড়ছি আমি।এটা জেনে রাখ।”
উমাইর জানায়।
–“ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছে,আঙ্কেল?”
মশকরা করে রনি।
–“আই সয়্যার,রনি।তোকে আমি পানিতে ফেলবো।”

উমাইর মেজাজ দেখায়।একে তাহুরার প্রতি তার অবাধ্য ভালোবাসারা আহ্বান জানাচ্ছে বারংবার,দ্বিতীয়ত বন্ধুমহলের অদ্ভুত প্রশ্নগুলো।তার সরল প্রেয়সীকে নিয়ে অন্য পুরুষের আলোচনা করাটা উমাইরের পছন্দ নয়।
বন্ধুমহলে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না উমাইর।বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে।পথিমধ্যে তাহুরার জন্যে কিছু জুস এবং চকলেট নেয়।
বাসায় আসলে মেঘলার সহিত দেখা হয় তার নিচ তলায়। উমাইরকে দেখে মেঘলা এগিয়ে আসলে উমাইর তার হাতের জিনিসপত্র মাকে দেয়,

–“তাহুরাকে দিও।”
–“আচ্ছা বাবা।কিছু খাবে?”
প্রশ্ন করে মেঘলা।
আফিয়ার আগমন ঘটে তখন।মেঘলার পিছে দাঁড়িয়ে।চকলেট দেখে আফিয়া বলে উঠে,
–“আমি একটা খাই, বড় মা?”
–“কিছু খাবো না।আমার আদরের জন্যে আনা জিনিস সব ওর।আর কেউ যেনো না ধরে।”
উমাইর কথা খানা শেষ করে হনহনিয়ে হাঁটে।আফিয়ার নজর বিদ্ধস্ত।সাদা শার্টে আবৃত সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষটা কেনো তার হলো না?
পলক ঝাপটালে ফের ভাসে উমাইরের মুখশ্রী।অত্যধিক সুদর্শন।

মধ্য রাতের দিকে তাহুরার জ্বর কমেছে।মেঘলা তাহুরার গায়ে কম্বল টেনে শুয়েছে ঘন্টাখানেক আগে।তাহুরার শরীর বড্ড দূর্বল।বাথরুমে যাওয়া জরুরী।মেঘলাকে ডাকতে মনে সায় দিলো না।নাজুক পায়ে মেয়েটা উঠে দাঁড়ায়।মাথা ভনভন।পায়ের পাতা টাইলসে লাগলে যেনো বিদ্যুৎ চমকায় শরীরে।কক্ষে আলো জ্বলছে।তাহুরা ভয় পায় দেখে মেঘলা রুমের নীল রঙা ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখে।সেই আলোতে সব স্পষ্ট।তাহুরা নিজেকে সামলে ধীরে কদম ফেলে।বাথরুমের কাজ শেষে একইভাবে মন্থর গতিতে বেরিয়ে আসে।

মেঘলা গভীর ঘুমে।জ্বর ছাড়ার কারণে তাহুরার তনুর উত্তাপ কমে।ঘাম দেয় প্রচুর।তাহুরা তাওয়ালের সহিত নিজেকে মুছে। খাটে হেলান দিয়ে বসে।ড্রয়ারের উপর চকলেট,জুসের প্যাকেট। প্রচন্ড খিদে লাগায় একটু করে জুস নেয় মুখে।স্বাদ নেই।তাও খাওয়া অত্যাবশ্যক। পেটে প্রচুর খিদা।যতটুক তার মনে আছে,এইসব উমাইর এনেছে বলে মেঘলা জানিয়েছিলো।লোকটা তাকে রাতে দেখতে এসেছিলো কি?জানে না সরল প্রেয়সী।

লোকটাকে স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখার ঝড় উঠেছে মনে।
বহু কিছু না ভেবে তাহুরা বালিশের পাশ হতে মোবাইল উঠায়। উমাইরের নাম্বার বের করে।ফোন লাগায় বিনা সংকোচে।লোকটাকে দেখা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরী।কেমন যেনো বুকের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে।এই অস্থিরতা কেবল উমাইরকে দেখে কমবে।নয়তো,এহেন অস্থিরতায় হৃদ যন্ত্রের কার্য বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা।

ঘড়িতে রাত তিনটা। উমাইর আজ জলদি ঘুমায়।এগারোটার দিকে তাহুরাকে চেক করে বিছানায় পড়ে ঘুমে আচ্ছন্ন সে।অতঃপর এখন মোবাইলের শব্দে তন্দ্রা ছুটে।ফোন না দেখে রিসিভ করে ফিচেল কণ্ঠে শুধায়,
–“কে?”
তাহুরার বুক ধরফর।জবাব যেনো হাওয়ায় ভাসছে।তাও নিজেকে ধাতস্ত করে জবাব দেয়,
–“আ..মি।”
তাহুরা অস্থির।
উমাইর ধরফরিয়ে উঠে।অস্ফুট কন্ঠে বলে,

–“তাহুরা,ঘুমাওনি?খারাপ লাগে? মা কোথায়?”
উমাইর নামে বিছানা হতে। হ্যাংগারে রাখা টিশার্ট হাতিয়ে নেয়,
–“এই কথা বলো না।চিন্তা হচ্ছে তো।”
কল স্পিকারে রাখে সে।দুহাত গলিয়ে টিশার্ট প্রবেশ করায়।
–“আমি আপনাকে দেখতে চাই।”
অত্র ঘটনার পর তাহুরা বুঝেছে,উমাইর ঠিক কি অনুভব করে তাহুরার জন্যে!অতএব,
মেয়েটা নিঃসংকোচে আবেদন করে হিমশিম খায়।সঙ্গে সঙ্গে তাহুরা আবারও বলে,

–“আপনি…অন্য কিছু ভাববেন না।আমি গায়ে পড়া মেয়ের…”
–“তুমি আমার তাহুরা। তোমার সব আবদার মাথা পেতে নিবো আমি।আমার গুড গার্ল তুমি।”
কথা শেষ হলে তাহুরা শুনতে পায় দরজার হাতলের নড়চড়।মেঘলা উঠে যাবে তাহুরা পায়ের গতি বাড়ায়। এতোটুকুতে রমণী ক্লান্ত।লক খুললে উমাইরকে দেখতে পায় তাহুরা।দৃষ্টি প্রথমে উমাইরের পরিহিত হাঁটু সমান প্যান্টে বিদ্ধ হয়।পরক্ষণে উপরে মাথা তুললে,সেই সুদর্শন গম্ভীর অবয়বের উমাইরকে অবলোকন করে।আঁখিদ্বয় ফোলা,কেমন নেতিয়ে আছে। কাঁচা ঘুম ভেঙেছে তাই? তাহুরার জন্যে উমাইর তার ঘুমকে বিসর্জন দিলো।মনটা কেমন প্রশান্তিতে ভরে উঠে তাহুরার।
জ্বরে কাহিল মেয়েটার গলায় বিন্দু ঘামের ফোঁটা।জ্বর কমার বহিঃপ্রকাশ।উমাইর তাহুরার পিঠের পিছে হাত দিয়ে ঠেলে।নিজের কাছে টানে।উমাইর দরজা বন্ধ করে।তাহুরার গলায় হাত দ্বারা ঘাম মুছে।আলগোছে প্রশ্ন করে,

–“জ্বর পড়েছে?”
–“জ্বী।”
তাহুরার জবাব মিনমিন।
–“খিদা লেগেছে?”
উমাইর ফের জিজ্ঞাসা করে।
–“উহু।জুস খেলাম মাত্র।”
–“গুড।”
উমাইর তার মাথায় হাত রাখে।মেয়েটার মাথায় কাপড় নেই।লম্বা চুলগুলো এলোমেলো।খোঁপা করেনি কেনো?

–“ঘুমিয়ে যান।”
তাহুরা বলে উঠে।
উমাইর তার নিকট ঝুঁকে।এলোচুল আরো এলো করে,
–“আমাকে দেখা শেষ?কিন্তু,তোমাকে দেখা আমার শেষ হয়নি এখনো।”
উমাইর নিজের সাথে লেপ্টে রাখে মেয়েটাকে।তাহুরার আবরণ পরিবর্তিত হচ্ছে লাজে। উমাইরের বক্ষ দেশে হাত ঠেকায়,
–“আন্টি দেখবে। সরুন প্লিজ।”
–“ছাদে চলো।”

তাহুরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।মাত্র জ্বর ছেড়েছে।এতদূর কিভাবে হাঁটবে সে?গায়ে জোর আছে?
–“আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।হাঁটতে পারবো না।”
ভাঙা স্বর তাহুরার।এই সুরে বুঝা যায় মেয়েটা কতো ক্লান্ত।
এক দুই না ভেবে,উমাইর তাকে কোলে তুলে।তাহুরা ভীত।বুকটা ধড়াস শব্দ করে। উমাইরের ঘাড়ে হাত ঝুলায়,
–“আল্লাহ্,কি করছেন?”
–“শাট ইউর মাউথ!”

নেশা ধরে যায় উমাইরের সত্তায়।মেয়েটার সুঘ্রাণ সুমিষ্ট।কাছাকাছি থেকে রমণীর কথা বলার সময় নিঃশ্বাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে,যেটা উমাইরকে নিঃশেষ করছে।
তাহুরা কুঁকড়ে আছে।সে বুঝে না,পাষাণ লোকটা তাকে এমন বকলো কেনো।ছাদে চিলেকোঠার কিনরায় থামে উমাইর।ছাদে বসার মতো জায়গা থাকলেও গেলো না।চিলেকোঠার দুয়ারে বিস্তৃত চৌখাটে নামায় তাহুরাকে।ফুরফুরে বাতাসে ছুঁয়ে যায় সত্তা।

তাহুরা ওড়না শরীরে প্যাঁচায়।তার পাশে বসে উমাইর।একদম গা ঘেঁষে।হঠাৎই তার কাঁধে মাথা রাখে উমাইর।তাহুরার কাঁধ ভেঙে পড়ার উপক্রম।তাও চুপটি করে রইলো। জ্বর না থাকেল নিশ্চয় উমাইরের ভার তার সহ্য হতো।
–“তোমার হাত রাখো আমার গালে।”

নিঃসংকোচ আবদার।তাহুরা নুয়ে পড়ে।উমাইর কেনো এমন অপদস্ত করছে তাকে!হাত জোড়া কামিজে বিদ্যমান তার।উমাইর সেদিক হতে তার হাতের উপর হাত রাখে।পেশীবহুল উমাইরের হাত নড়বড় হলে স্পর্শ লাগে তাহুরার মেয়েলী বক্ষদেশে।বুক ভার হয় দুজনের।লাজে তাহুরা নিজ অধর কাটে দাঁত দ্বারা।দম বন্ধ অনুভূতি।
উমাইর তার ভেতরকার জ্বলন্ত রূপ বাহিরে প্রকাশ করলো না।অথচ,বাহুর সেই অংশ যেনো নিষ্প্রাণ হলো।প্রেয়সীর সত্তায় মত্ত হতে লুটপাট হচ্ছে অন্তঃস্থল।
তাহুরার হাত রাখলো উমাইর তার নিজ গালে।ধরে রাখলো সেই হাত,

–“কথা বললে সাথে সাথে শুনবে।”
তাহুরার শেষ প্রশ্বাস বাড়ে।উমাইর নজর আবারও নিষিদ্ধ জায়গায় বিদ্ধ হয়।মেয়েটাকে এইখানে এনে বিরাট ভুল করেছে। অনুভূতিরা অবাধ্য।সহ্য হচ্ছে না উমাইরের।এর মাঝে তাহুরা মিহি সুরে বললো,
–“শুনবো।”
উমাইর আঁখি বুঁজে।অনুভব করে পবনের সহিত প্রিয়তমার উত্তাপ।
–“কাল আমি ঢাকায় যাচ্ছি।এক সপ্তাহ পর ফিরবো।শরীর ভালো লাগলে কলেজে যাবে।আর নাহলে বাসায় থাকবে।”
উমাইর কঠোরতা অবলোকন করে।নাহলে,সামলানো দায় নিজেকে।

–“জ্বী।”
তাহুরা জবাব দেয়।
উমাইর তাহুরার হাত নিজ অধরের সামনে আনে। ছুঁয়ে দেয় সেথায় কিছু স্পর্শ।মাথা উঠায় উমাইর।তাহুরার গালে আঙুল বুলায়,
–“খবরদার,ক্লাসের কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না।ওরা বলতে আসলেও বলবে না।মাথায় ঢুকেছে?”
তাহুরা চোখ বন্ধ করে।অনুভূতির সঞ্চারে কথা বেরিয়ে আসে না। শুধু উপর নিচ মাথা দোলায়।উমাইর নরম ভঙ্গিতে তাহুরার গাল চাপে তার পানে ফিরায়,

–“চোখ খুলো।”
তাহুরা চোখ খুলে না।শক্তি দিয়ে উমাইরের দুই বাহু চেপে ধরে।ঠকঠক কাঁপছে তার দুই অধর।
উমাইর কিঞ্চিৎ বল প্রয়োগ করে,
–“ঠোঁট কাপানো বন্ধ করো,মাথামোটা!”
উমাইরের কথায় তাহুরা নিজ দুই অধর মুখের ভেতরে পুরে।
–“ঠিকভাবে চলবে,নিজের খেয়াল রাখবে।”

অনুনয়ের সুর উমাইরের। তাহুরা দৃষ্টি মেললে নজর মিলে দুজনার।মেয়েটার আঁখি ছলছল।তাহুরা এই বাড়ি হতে নিজ বাড়ি ফিরবে।তাদের রোজকার মতো দেখাও আর হবে না।দুই মানব মানবী অনুভূতিতে পুড়ে মরে।
তাহুরা মিহি সুরে আওড়ায়,
–“আপনিও খেয়াল রাখবেন।আমাকে ভুলে যাবেন না,এই-যে।”

মাথামোটা বলে কি?উমাইর তাকে ভুলবে?মরে যাচ্ছে উমাইর এখনি মেয়েটাকে নিজের করে নিতে।উমাইর তাহুরার কোমরে দুহাত জড়ায়।নিজ উরুতে উঠিয়ে বসায়।তাহুরা কেঁপে উঠে। উমাইরের বুকের দিকটায় টিশার্ট চেপে ধরে।
অনুভব করে নিজ ললাটে উমাইরের অধরের স্পর্শ। উমাইর অধৈর্য্য।বক্ষদেশে মিশিয়ে নেয় মেয়েটাকে।তাহুরার কপাল ঠেকিয়ে রাখলো উমাইরের অবয়বে। প্রেয়সীর গরম নিঃশ্বাসে উত্তপ্ত উমাইর ফের ঠোঁট ছোঁয়ায় তাহুরার মাথার উপরিভাগে।বিক্ষিপ্ত সুরে বলে,

–“কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবে।একদম কাঁদবে না কিছু নিয়ে।শুধু আমার জন্যে কাঁদবে।”
উমাইর হেসে আওড়ায়।
তাহুরার আঁখি ভিজে আসে।লোকটাকে খুব মনে পড়বে তার।প্রত্যেকটা জিনিসে সে লোকটাকে খুঁজবে।তাহুরার নাক টানার শব্দে উমাইর আঙুল ছোঁয়ায় তাহুরার পিঠে।আরো মিশিয়ে নেয় সে মেয়েটাকে,
–“কাঁদে না।তুমি অসুস্থ,বেবি।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৭

উমাইর অনুভব করে তাহুরার হাত তার বাহুতে আঁকড়ে।মেয়েটা সহজ হচ্ছে ধীরে ধীরে।মন ভার হয় উমাইরের।অতঃপর তাহুরার হাত নিজ পিঠের উপরিভাগে অনুভব করলে,উমাইর তার হুঁশ বুদ্ধি হারায়।তাহুরার চুল সরিয়ে ঘাড়ে দন্ত দ্বারা কাটে,সেথায় আবার চুমুতে ভরিয়ে দেয় উমাইর।তাহুরা মিহি কণ্ঠে “উফ” বললে উমাইর হাসে।আলগোছে বলে,
–“আই”ল মিস ইউ সো মাছহ,জান।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৯