রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩০

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩০
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“সত্যি করে বল,তুই এতদিন ঐ বাড়িতে কেনো ছিলি?সুনেরার দেবরকে ফাঁসাতে?”
হাত থামে তাহুরার।কান জোড়া ভনভন করে।স্থির হাতের উপর পানির বর্ষণ।বামে ফিরে চাচীকে অবলোকন করে সে।মহিলার আঁখিতে ক্রোধ।হঠাৎ চাচী বাসায় আসলো?তাদের সাথে তাহুরাদের সম্পর্ক একেবারে ঠিক নেই।বাবাকে দেখতে এসেছে কি?আসলেও,এমন জঘন্য কথা বলার কোনো হদিস কি আদৌ আছে?
তাহুরা মৃদু সুরে বলে উঠে,

–“কি বলছেন চাচী?”
তাহুরা পানির পাইপ বন্ধ করে দ্রুত।হাতের পাতিল রাখে।
–“কি বলবো?বুঝিস না?বাবা,মা ইন্ডিয়া যাওয়ার পর আমাদের বাসায় থাকতে পারতি।কিন্তু গেলি কই?সুনেরার শশুর বাড়ী। ঐ বাড়ি থেকে কি আমাদের কম আছে কিছু?জাফর যা একটু পছন্দ করে তোকে,এক বাড়িতে থাকলে দুইজনের মধ্যে ভাব আসতো।তোদের যতো দেমাগ!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চাচী বক্তব্য শেষে ক্ষান্ত হয়নি।উল্টো আরো তেড়ে আসে।তাহুরা শঙ্কিত।দু’কদম পেছনে ফেলে।মা ব্যাংকে।প্রস্থান ঘটেছিল আধ ঘন্টা পূর্বে।এহেন সময়ে চাচীর আগমন কেমন অদ্ভুত লাগলো তাহুরার।তাদের বাড়িতে চাচী আসার সম্ভাবনা শূণ্য শতাংশ।মায়ের অনুপস্থিতি টের পেয়ে কি এসেছে তবে চাচী?
–“মা.. মা বাসায় নেই।আপনি বাবার রুমে চলুন, চাচী।”
তাহুরা কথাখানা বলে সুযোগ বুঝে চাচীর কিনারা ঘেঁষে দৌড় দেয়।এক দৌড়ে পৌঁছায় বাবার কক্ষে।বাবা ঘুমিয়ে।সটান শুয়ে রইলো।তাহুরা বাবার পায়ের দিকে দাঁড়ায়। ধীরে ডেকে উঠে,

–“বাবা, ও বাবা। চাচী এসেছে।”
মুন্সী আঁখির পাতা মেলে।মেয়েটা কেমন ভীত ভঙ্গিতে।বারংবার দরজার দিকে দৃষ্টি মেলছে।তবে,কাউকে আসতে না দেখে মুন্সী জিজ্ঞাসা করে,
–“আম্মা,কই কেউ তো আসেনি।”
তাহুরা কক্ষের দরজায় তাকায়।আসলেই কেউ নেই।বাবাকে কিছু না বলে সে প্রধান ফটকের পানে ছুটে।ধারণা ঠিক তাহুরার।চোরের মতো প্রস্থান ঘটে চাচীর।দরজার এক কপাট এখনো নড়ছে।
তাহুরা ভ্রু কুঁচকে চায় সেদিকে।পুনরায় বাবার কাছে ফিরে,

–“চলে গেলো চাচী।কেনো এসেছে কিজানি?”
বাবার ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করে তাহুরা পাতিল ধোঁয়ার কাজে উদ্যত হয়।কি অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিল চাচী। সুনেরার দেবরকে পটানোর কি আছে?তাহুরা আইনগত,ধর্মীয়গত উমাইরের অর্ধাঙ্গী।
উমাইরের কথা ভাবলে মেয়েটা অন্যমনস্ক হয়।লোকটার অবয়ব দেখলো,কত্ত আগে!অন্তত পুড়ে।শেষ বার অধর ছুঁয়ে দেওয়াটা এখনো শিহরণ জাগায় তনুতে।উমাইর ঢাকায় যাওয়ার পর প্রথম দুইদিন তেমন একটা ফোন করেনি।

কেবল মেসেজেই জিজ্ঞাসা করেছিলো (কেমন আছে, খেয়েছে কিনা) এতটুকু।পর মুহূর্তে উমাইর রাতের দিকে ভিডিও কল দেয়।কথা বলে অর্ধাঙ্গিনীর সহিত।প্রত্যেকটাবার উমাইর সোজা ভাষায় তাহুরাকে বুঝিয়ে বলে,একান্ত তাদের দুজনার সময়টাতে তাহুরা উমাইরের সম্মুখে খোলামেলা চলতে পারবে।উমাইর তাকে বাধ্য করে উমাইরের সাথে সহজ হতে।খুবই স্বস্তির সহিত এখন তাহুরা গলায় ওড়না ঝুলিয়ে উমাইরের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে।
বস্তুত,উমাইর তার সরল প্রেয়সীকে নিজের জন্যে গড়ে তুলছে নিজেরই নিয়মে।

–“বাবাকে ঔষধ খাইয়েছিস?”
শিউলি হাঁক ছাড়ে।সেই চিৎকারে তাহুরা নিজ দুনিয়ায় হাজির হয়।অধরে লেপ্টানো হাসি লুকিয়ে ফেলে গোপনে।মা ততক্ষণে রান্নাঘরে প্রবেশ করে।
–“খাইয়েছিলাম অনেক আগে।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“রান্না বসিয়েছিস?”
–“হ্যাঁ মা।”
মেয়ের উত্তর শুনে শিউলি যেতে নিলে তাহুরা থামায় মাকে,

–“জাফর ভাইয়ার মা এসেছিলো।বললো,উনার সাথে আমার বিয়ের কিসব…মা আমার এগুলো ভালো লাগে না।”
–“জাফরের মা?সাহস কম না মহিলার।আমি বাইরে গিয়েছি জেনে এসেছে।তোর বাপকে দেখলো?”
শিউলি ক্ষিপ্ত।
–“না।এসে আমাকে কিছু কথা বললো এখানে।এরপর না বলে চলে গেলো।”
নিঃশব্দে মেয়ের কথা শুনলো শিউলি।মেয়ের কথা সবসময় বিশ্বাসযোগ্য।তার মেয়েটা মিথ্যে বলে না। পরুন্ত,জাফরের দেওয়া সম্বন্ধ কেবল মুন্সী আর শিউলি ব্যাতিত কেউ জানে না।

–“টেনশন নিস না।উমাইর বাবা ফোন করেছিলো আজ?”
শিউলি শুধায় মেয়েকে।
–“হ্যাঁ,সকালে।”
–“উনাকে কিছু বলার দরকার নেই।আমি তোর চাচীকে ফোন করবো।”
বক্তব্য শেষে শিউলি গিজগিজ করে এগোয়।জাফরের মাকে আজ এমন কথা শুনাবে,যেনো কানে তালা দেয়।
রান্নার কাজ শেষে অনেকটা হাঁপিয়ে যায় তাহুরা।পুরো শরীর ঘামে চপচপে।যদিও বাহিরে আবহাওয়া শীতল।রান্নাঘরের উষ্ণতাকে তা ঠেকাতে পারেনি।টেবিলে ভাত গুছিয়ে নিজ কামরায় আসে সে।মোবাইল চেক করে।উমাইর না ফোন দিলো,না মেসেজ।উল্টো,তাহুরা তাকে মেসেজ করে,

–“এই লাঞ্চ করেছেন?”
মেসেজ ডেলিভার্ড হয়নি।তাহুরা সুতির ফতোয়া এবং ঢোলা প্যান্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে।জমে থাকা বালতির কাপড় ধুতে ব্যস্ত মেয়েটা।পরক্ষণে ঝটপট গোসল সারতে উদ্যত হয়।
মাঝ গোসলে মোবাইলের রিংটোনের সুর শুনে সে।উমাইর করেছে কি?দ্রুত কাজের ইতি ঘটাতে চাইলে বাথরুমের দরজায় টোকা দেয় মা,

–“উমাইর ফোন করেছে।জলদি নে।কখন থেকে মোবাইল বাজছে।ছেলেটা নিশ্চয় দরকারে ফোন দিচ্ছে,তাহুরা।”
বাথরুমের দরজা খুলে তাহুরা।ভেজা অবয়ব তার। তাওয়ালে আবৃত করেছে মাথা হতে পুরো শরীর।হাত টেনে মায়ের থেকে মোবাইল নেয়।রিং বন্ধ তখন।
–“রুমের দরজা বন্ধ করে যাচ্ছি।”
–“আচ্ছা, মা।”

তাহুরা জবাব দেয়।মনে মনে ঠিক করে উমাইরকে কলে রাখবে যতক্ষণ না সে রুমের বাহিরে যাচ্ছে।
মা যেতেই তাহুরা অডিও কল দেয় উমাইরকে।দুবার রিং বাজলে কল রিসিভ করে তাহুরার প্রাণপ্রিয় সুদর্শন জলদস্যু,
–“খবর থাকে না মোবাইলের?ফোন দিচ্ছিলাম কতক্ষণ ধরে?”
–“আমি গোসল করছি।”
তাহুরা বলে উঠে।

–“করছো মানে?তুমি ওয়াশরুমে?লাঞ্চ করোনি?”
অনেকটা তেতিয়ে উঠে উমাইর।
–“একটু কাজ ছিলো।করবো লাঞ্চ বেরিয়ে।আপনি খেয়েছেন?”
তাহুরা কথা বলা অবস্থায় আধোয়া কাপড় বালতির পানিতে রাখে,আবার তুলে।
–“ভেজা কাপড়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলছো?মাথামোটা তোমাকে এমনি ডাকি?সর্দি যদি হয় তোমার!”
ধমকে উঠে উমাইর।

–“নাহ,আমি তাওয়াল জড়িয়ে..”
কথাটা মুখ হতে বেরুলে তাহুরা মুখ চেপে ধরে নিজের।কি বললো সে?এটা বলার ছিলো?কাপড়ের দিকে মন দিয়ে মুখ ফস্কে না বলার গোপন কথাটা বলেছে লজ্জাবতী।

–“আই উইশ,আমি এখন হোটেলে থাকতাম।ভিডিও কলে নিশ্চয় দেখতাম তোমাকে। আহ,আমার আদর।উম,না এখন দেখতাম না। আদারওয়াইজ,চিটাগং ফিরলে তোমার রেহাই থাকতো না। দেরীর কাজটা সেরে ফেলতাম।যেটা খুবই অপরাধ হতো।আফটার অল,মুন্সী আংকেলের আদুরে মেয়েটা বিবাহিত,এটা এখনো জানেন না মুন্সী সাহেব।”
উমাইরের একেকটা কথা বুলেট।যেই বুলেটে ঝাঁঝরা হলো তাহুরার পুরো সত্তা।এমন ঠোঁট কাটার খপ্পরে পড়েছে সে!
–“চুপ কেনো জান?লজ্জা হচ্ছে?বাট আনফর্চুনেটলি, তোমার হাজব্যান্ডের কাছে তোমার জন্যে এক ফোঁটাও লজ্জা নেই। আই অ্যাম ক্রেজি ফর ইউ,জান।”

উচ্চস্বরে হাসে উমাইর।তাহুরার হৃদযন্ত্র অস্থির,চঞ্চল।মেয়েটাও ব্যাকুল তার প্রিয়তমের সন্নিকটে আসতে।কিন্তু,যা বুঝা যাচ্ছে লোকটা একেবারে নির্লজ্জ তার বেলায়।
–“আপনি কবে আসবেন?”
তাহুরা বিষয় এড়াতে বলে।
–“আসবো পরশু দিন। জাফরানদের বাসায় দেখা হবে তোমার সাথে।”
তাহুরার কথায় উমাইর জবাব দেয়।

–“টায়ার্ড থাকবেন না আপনি? ঐখানে যাবেন ঢাকা থেকে ফিরে!”
তাহুরা সকল কাপড় বালতিতে তুলে।
–“আমার বউকে দেখলে সব টায়ার্ডনেস চলে যাবে।একটা লং কিসের দরকার আছে।”
বালতি আলগাতে গেলে হাত অবশ হয়ে আসে যেনো।আবারও সেই অনুভূতি। পেটের মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তি।
–“আপনি লাইনে থাকুন।আমি একটু কাজ সারছি।

তাড়াহুড়ো করে তাহুরা জবাব দেয়।
–“এড়িয়ে যাচ্ছো বোকাপাখি?সামনাসামনি উমাইর তোমাকে একদম এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দিবে না।”
আড়ষ্ট তাহুরা টুকটাক উত্তর দেয় উমাইরের কথায়।উমাইর তার সরল প্রেয়সীকে নিজের মতো গড়ে তোলার সকল কার্যক্রম যেনো সাজিয়ে রাখলো নিজ মনে।

প্রভাত হতে প্রচুর বৃষ্টি।মুন্সীর শরীর মুটামুটি ভালো হলেও,শিউলি ডাক্তারের নির্দেশে সিদ্ধান্ত নেয় মাস ছয়েক দাওয়াত এড়িয়ে যাবে মুন্সী।সেই সুবাদে দাওয়াতে যাওয়া হবে না শিউলির।মুন্সী ঘরে হালকা হাঁটাচলা করে এখন।শিউলি দুপুরের খাবার তৈরিতে উদ্যত।মুন্সী এসে দাঁড়ায় রসুইঘরে।স্বাভাবিক সুরে আওড়ায়,
–“তাহুরার সাথে উমাইর কেমন ব্যবহার করে?সুনেরা বলেছে কিছু?”

শিউলি ঘাবড়িয়ে গেলেও সামলে নেয় নিজেকে।উমাইর কেমন ব্যবহার করবে তার মেয়ের সাথে?তার মেয়েকে নিজের নামে লিখতে ছেলেটা বিয়ে অব্দি সেরেছে।উমাইর নিঃসন্দেহে মেয়ের সাথে ভালো,বিনয়ী ব্যবহার করে!এছাড়াও মেয়ের সাথে কথা বলার পর উমাইর অবশ্য দুই তিনবার কথা বলেছে শিউলি সমেত।খবর নিয়েছে মুন্সীর।ফোন করেছিলো মুন্সীকে চারবার।
শিউলি গুণে রেখেছে সব।বিপদে যখন আপন মানুষেরা সাথে দেয় না,তখন এই ছেলেটা,জুবায়ের আগলে নিয়েছে তাদের।অথচ তারা ছিলো নতুন আত্মীয়।

–“কেমন ব্যবহার করবে?ছেলেটা বেশ ভালো,অমায়িক।আর একটা কথা শুনো,তোমার ভাইয়ের বউকে আমি শাসিয়েছি ফোনে।আমার মেয়ের দিকে যেনো আর হাত না বাড়ায়।বাড়ি এসে মেয়েকে জাফরের কথা বলেছে।”
–“এতো সাহস?জাফরের বাবাকে ফোন করো।”
উত্তেজিত হয় মুন্সী। বাদবাকি শিউলি সামলে নেয় জামাইকে,
–“আপনি এতো চিন্তা করবেন না।যা করার আমি করবো।”
শিউলি বলে উঠে।স্ত্রী তার স্বামীকে শান্তনা দিচ্ছে।

তাহুরা সুতির কারুকাজের থ্রিপিস পরিধান করে।চুলগুলো বাঁধে নতুন ডিজাইনে।মাথায় শিপনের ওড়না চাপে।হালকা প্রসাধনীতে সাজে।আজ অনেকদিন বাদে প্রিয়তম আসবে।নিজেকে অবশ্যই ফুটিয়ে তুলতে হবে প্রেয়সীর।
মেঘলা ফোন করেছে সকালে।গাড়ি পাঠাবে তারা।তাই আগেভাগে তাহুরা তৈরি হয়ে নেয়।উমাইর জানিয়েছে দুপুরের দিকে পৌঁছাবে সে জাফরানের বাসায়। আধ ঘন্টা অপেক্ষার পর গাড়ি আসে।বিদায় জানায় সে বাবা,মাকে।মুন্সী গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো ছাতা মাথায়,যতক্ষণ না গাড়ি দৃষ্টির অগোচরে যাচ্ছিলো।

তাহুরার অনুভূতিতে গলা অব্দি কাঁপছে। বিয়ের পর আজ আবারও উমাইরকে দেখবে সে।লোকটা কি করবে তাকে?গভীর চুম্বনে তাকে বেখেয়ালি করবে?হাতের স্পর্শে কাবু করবে?হাতের স্পর্শের কথা ভাবলে,বুকটা ভার হয়।সেবার উমাইরের ছোঁয়ায় মেয়েটার প্রচুর পীড়া হয়। যার স্থায়ীকাল ছিলো তিনদিন।তারপরও সুখ।উমাইর কাছকাছি থাকলেই যেনো সকল সুখের প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়ে।
লাজে রক্তিম হয় মেয়েটার সফেদ গালজোড়া।

বৃষ্টির বেগ অনেকটা কম।বলতে গেলে থেমেছে এখন।এই যা,হালকা বর্ষণ ক্ষণে ক্ষণে দোলা দিয়ে যায়।গাড়ি হতে নেমে তাহুরা হাঁটার বেগ বাড়ায়।সুনেরাকে বলেছিলো দরজায় দাঁড়াতে।করিডোরে হেঁটে যাওয়া অবস্থায় তুনাজের সাক্ষাৎ মিলে।তবে,তুনাজ এগিয়ে আসলে তাহুরা দৌড়ে ভেতরে যায়।উমাইর জানলে নিশ্চয় বকে কান ফাটাবে তার।
বোনকে অবলোকন করলে স্বস্তি মিলে তাহুরার।সুনেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

–“দৌড়ালি কেনো?”
–“জাফরানের কাজিন, তুনাজ ছেলেটা কথা বলতে চেয়েছিল।তোমার দেবর জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।”
তাহুরা জানায়।
সুনেরা হাসে।বোনের মাথায় হাত রাখে,
–“উপরে বসবি আয়।উমাইর ভাইয়া আম্মুকে বলে রেখেছে আগ হতে।”
–“কি বলেছেন উনি?”

তাহুরা প্রশ্ন করে চারিদিক তাকিয়ে।অনেক অচেনা মানুষের আগমন।দাওয়াত হয়তো ভারী আজ।
–“উনার বউয়ের জন্যে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিলে,উনি ঢোল বাজিয়ে সবাইকে জানাবেন তুই উনার বউ।তাহুরা নামের মেয়েটা বিবাহিত।”
হেসে উঠে দুই বোন।তাহুরা ভাবতে পারেনা,উমাইর তাকে নিয়ে এমন অহেতুক ভাবনায় মগ্ন কেনো হয়!পলে পলে সকলের সাথে আলাপ হয় তাহুরার।সে জাফরান এবং কয়েকজন বাচ্চার সাথে বসে।সেখানে ঝামেলার কিছু নেই,কেউ নেই।
তাহুরা মাথা হতে ঘোমটা ফেলে।জাফরানের সঙ্গে টুকটাক হাসাহাসি করে।আচমকা অবুঝ ছেলেটা তাহুরার বাম হাতের মধ্য দুই আঙ্গুল কামড়ে ধরে।তাহুরা চিৎকার দেয় মুহূর্তে,

–“জাফরান,আমি ব্যথা পাচ্ছি।”
বাচ্চারা ভাবলো এটা কোনো খেলা।পাশের বাচ্চাগুলো আরো উৎসাহ দিলে জাফরান মাথা নাড়ায়।ফলস্বরূপ দাঁত দ্বারা তাহুরার চিকন আঙ্গুলের চামড়া উঠে।তাহুরা সহ্য করতে না পেরে ধাক্কা দেয় জাফরানকে।সে মেঝেতে পড়া অবস্থায় আগমন হয় নম্রতার।মহিলা কেবল আন্দাজ করলো জাফরানকে তাহুরা ধাক্কা দিয়েছে।
অন্য বাচ্চারা ভয়ে চলে যায়।

তাহুরা ততক্ষণে বুঝে চামড়া ভেদ করে রক্তের আস্তরণ বেরুচ্ছে।ওড়না দিয়ে আড়াল করে তা।কিন্তু,আদরের ছেলের এমন অবস্থা অবলোকন করে নম্রতা চড় দেয় তাহুরার গালে।দুর্ঘটনা বশত সেই চড় তাহুরার কানে লাগলে কানের দুলের লম্বাংশ গেথে যায় তার স্কিনে।
আরো কু্ঁকিয়ে উঠে মেয়েটা।
যেতে যেতে নম্রতা জানায়,

–“আমার ছেলেকে ধাক্কা দেওয়ার ফল।ছোট বাচ্চাকে কিভাবে ধাক্কা দাও? এতো দেখতে পারে ছেলেটা তোমাকে।”
–“মামী আমি..কিছুই করিনি।”
তাহুরা কেঁদে উঠে ব্যথায়।
কিন্তু নম্রতা শুনলো না। কন্দনরত জফরানকে সামলাচ্ছে।ছেলেটা আবার তাহুরার কাছে আসতে চাচ্ছে। বিনিময়ে নম্রতা বকে দেয় জাফরানকে।তার ছোট দাঁতে রক্তের আবরণকে ভেবে নেয় জাফরানের রক্ত তা।বরংচ সেই রক্ত তাহুরার।

এমন অপদস্ত তাহুরা ইহকালে হয়নি।কানের পাশে হাত দিয়ে দুল ঠিক করে।গেথে যাওয়ার কারণে সেই জায়গা হতেও রক্ত বেরোয়।বাসায় তার এহেন অবস্থা জানলে নম্রতাকে সবাই কথা শুনাবে।বা হতে পারে তাহুরাকে ভুল বুঝবে।আঙ্গুলের ব্যথায় মেয়েটার হাত অবশ হয়।সিদ্ধান্ত নেয়,সকলের অগোচরে বের হবে বাসা থেকে।বোন বা শাশুড়ি জানলে কেলেঙ্কারি বাঁধবে।বাসায় গিয়ে মাকে বুঝিয়ে বললে তেমন সমস্যা হবে না।উমাইর আসার আগে বেরুতে হবে।উমাইর দেখলে নিশ্চিত হট্টগোল বাজবে।

তাহুরা কোনো ঝামেলা চায় না।তার উপর এতো মানুষ। পার্স হাতে নিয়ে দ্রুত সে বেরোয়। সুনেরাকে লক্ষ্য করলে অন্য দিকে পা বাড়ায় মেয়েটা।ঘোমটা টানে বড় করে।কেউ যেনো না দেখে তাকে,না চিনে। শ্বশুরবাড়ীর সকলে উপস্থিত আছে।কিন্তু,বড় ঘরে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে।কেউ কাউকে খোঁজার জো নেই।তবে, সুনেরাকে মেঘলা পাঠিয়েছে নিশ্চয়।
বাহিরের বৃষ্টি থেমে।পরিবেশ গুমোট।তাহুরা নিজের কান্না থামাতে অক্ষম।

বাড়ির বের হয় সে দ্রুত। আরো বামে এগিয়ে যায়।এলাকাটা সে চিনে।রিকশা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবে। পার্সে টাকা আছে।এইবার মাথার কাপড়টা খানিক সরায় সে।চারিদিকে রিকশার খোঁজ করে।আকাশে মেঘের দলের গর্জন শোনা যায়।নিজ অধর কামড়ে ধরে সে।সরল মেয়েটার সাথে কেনো এমন উদ্ভট কান্ড হয়?মোবাইল বাজছে।উমাইর কাছাকাছি এসেছে মনে হচ্ছে।বা সুনেরা ফোন দিতে পারে। পার্স বুকের সাথে আটকে ধরে সে।

রিকশা না পেয়ে হাতে ইশারা করে সিএনজি থামাতে।সিএনজি একটা থামে।তবে,হালকা দূরে।তাহুরা সেদিকে এগিয়ে গেলে বুঝতে পারে সিএনজি হতে বেরুচ্ছে কেউ।পরক্ষণে উমাইরকে দেখলে হাত হতে পার্স পড়ে রাস্তায়।
দ্রুত আসে উমাইর। পার্ট তুলে তাহুরার মুখে আঙুল চাপে,
–“এইখানে কি?”
–“আমি বাসায় যাবো।প্লিজ,আমি বাসায় যাবো।”
তাহুরা মাথার কাপড় টানলে,তার আঙ্গুলে ওড়না পেঁচানো আবার কানের দিকটায় ওড়নায় লেগে থাকে রক্তে উমাইরের বুক ভার হয়।

চিন্তিত দৃষ্টিতে ওড়না সরালে দৃশ্যমান হয়,আঘাত পাওয়া স্থানে এখনো রক্ত লেগে আছে।রাগী সুরে সে প্রশ্ন করে,
–“কে করেছে?কিভাবে হয়েছে?”
–“প্লিজ,কিছুই হয়নি।আপনি চিৎকার করবেন না।”
তাহুরা ভয়ে বলে।
উমাইর তার ওড়নায় পেঁচানো আঙুল দেখতে চাইলে তাহুরা হাত পেছনে সরায়,
–“ব্যথা করে।”
–“কি হয়েছে?বলো আমাকে?”

উমাইর দুহাত তার গালে ঠেকায়।তাহুরা কিভাবে কি বলবে?সে নম্রতার নাম বলতে চাচ্ছে না কোনোভাবে। না বললেও রেহাই নেই।
তাহুরা চুপ থাকলে উমাইর তার বাহু ধরে সিএনজিতে বসায়।তাহুরা এখন বেশি প্যানিক করলে উমাইর সহ্য করবে না।ধীরে সুস্থে নাম উগ্লাতে হবে মেয়েটা হতে।নিজ বাড়ির ঠিকানা বললে তাহুরা কিছু বলতে চায়।এর পূর্বে উমাইর তার মোবাইল বের করে।মাকে ফোনে জানায়,

–“আমি তাহুরাকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। ব্যথা পেয়েছে তোমার মাথামোটা বউ।কিন্তু,বলছে না কিছু।”
মেঘলা অপরপাশে চিন্তিত হয়,
–“কিভাবে?কিছু বলেনি কেনো মেয়েটা আমাদেরকে?সুনেরাও চিন্তা করছে।”
–“কিভাবে বলবে?মানব দরদী তোমাদের তাহুরা।তবে,যে ওকে হার্ট করেছে আমি তাকে ছেড়ে কথা বলবো না, মা।”
উমাইর ফোন রাখে।পাশে কেঁদে অস্থির তার বউ।
এতদিন বাদে ফিরে বউয়ের এহেন অবস্থা সহ্য হয়?তাহুরা কিছু বলার জন্যে হয়তো ফিরেছে।কিন্তু উমাইরের রক্তিম আঁখির ইশারায় আর বললো না কিছু।

উল্টো উমাইরের পানে সে এগোয়।বিনিময়ে উমাইর তার কোমর জড়িয়ে নিজ গায়ের সহিত ঘেঁষে বসায়।
সিএনজি থামলে উমাইর ভাড়া মিটায়।দারোয়ান তার ব্যাগেজ সকল ভেতরে নিচ্ছে।উমাইর নির্দেশ দেয় একেবারে রুমে রাখতে।দারোয়ান রুম হতে বেরুলে উমাইর তাহুরাকে নিয়ে ভেতরে আসে।দরজা বন্ধ করে।
তাহুরা মিনতি করে,

–“আমার বাসায় দিয়ে আসুন না,প্লিজ।”
–“এটাই তোমার বাসা। ঐ বাড়িতে তুমি মেহমান।”
উমাইর তাহুরাকে বিছানায় বসতে নির্দেশ দেয়,
–“বসো।”
তাহুরা বসে।পীড়ায় তার শরীর কুঁচকে আসছে।কানের নিচে ব্যাপক ব্যথা।উমাইর তার সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে।
তাহুরা অবলোকন করে দৃঢ় দৃষ্টিতে।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাকে।শেষমেশ তার সামনেই পড়তে হলো তাহুরাকে?
চুলগুলো এলোমেলো উমাইরের।সেথায় হাত বুলিয়ে উমাইর তাহুরার আঙুল হতে ওড়নার আবরণ সরালে,তাহুরা ব্যথায় নড়ে উঠে।চেপে ধরে উমাইরের কাঁধ,

–“এতো ব্যথা হচ্ছে!”
ওড়না খুললে উমাইর বুঝতে পারে কামড়ের দাগ এটা।সেথা হতে রক্ত বেরিয়েছে।কামড়ের পরিধি লম্বাটে।উমাইর আন্দাজ করে বললো,
–“জাফরান করেছে!”
তাহুরা জবাব দেয়নি।তার বিশালাকৃতির চমকিত আঁখি দেখে বুঝে নেয় উমাইর।মানবের অনুমান সঠিক।আলতো হাতে তাহুরার মাথার কাপড় ফেলে উমাইর।অতঃপর পুরো ওড়না টেনে বিছানায় রাখে।তাহুরার মুখশ্রীর পরিবর্তন ঘটে। লজ্জায়, ব্যথায় অন্যরকম আকর্ষণীয় ঠেকছে মেয়েটার অবয়ব। তাহুরার শ্বাস চলে দ্রুত।উমাইর তার পাশে বিছানায় বসে গালের কিনারায় অধর স্পর্শ করে,

–“জোরে শ্বাস নিও না,জান।রিল্যাক্স হও।আমি আগে অয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিই তোমাকে।”
–“কানের নিচেরটা মামী করেছেন?”
উমাইর প্রশ্ন করে।
–“আপনি কাউকে কিছু বলবেন না দয়া করে।সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।”
তাহুরা কেঁদে জবাব দেয়।
–“কেনো ভুল বুঝবে?”

উমাইর হাঁটে রুমে। ড্রয়ার হতে কিছু তুলা এবং এন্টিসেপটিক,অয়েনমেন্ট বের করে।
–“শুনুন,হঠাৎ আমাকে জাফরান এতো জোরে কামড় দিয়েছে,আমার সহ্য হয়নি। আমি ওকে ছুটালে শুধু নিচে বসে সে।মামী ভুল বুঝে,আমাকে চড় দেয়।আমার দোষ,কারণ আমি জাফরানকে …”
তাহুরার কান্না আটকে আসে।কিসের সাথে কি মেলাচ্ছে সে?দোষ তার না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে দোষী বানাতে অক্ষম মেয়েটা।

উমাইরের শান্ত,রাগী ভাব কিছুই প্রকাশিত হলো না।সে তার কাজ করছে। তুলা বসিয়ে রক্ত পরিষ্কার করলে তাহুরা মৃদু চিৎকার করে।আবার এন্টিসেপটিক লাগালে তাহুরা বলে উঠে,
–“আল্লাহ্!”
সমস্ত ক্রোধের বাঁধ ভাঙে উমাইরের।ঘর কাঁপিয়ে চিল্লিয়ে উঠে,

–“মামীর সাহস কিভাবে হয় আমার বউয়ের গায়ে হাত তোলার?এই তুমি ছোট মেয়ে?উনি না জানুক আমরা বিবাহিত।কিন্তু,এটা তো জানে আমাদের বিয়ে ঠিক করা আছে।তারপরও কিভাবে তোমার গালে থাপ্পড় দেয় উনি?সাহস কিভাবে পাই?তোমার অন্য হাত ছিল না?আটকাতে পারোনি উনার হাতকে?এই তোমার মুখ ছিলো না?বলতে পারোনি কিছু?”
উমাইর থামে।স্পষ্ট অবলোকন করে তাহুরা বেডের উপর পা তুলে পেছনে যাচ্ছে।
উমাইর গাল দ্বারা প্রশ্বাস বের করে।মেয়েটা ভীতু।সাহস যে নেই তার।পরক্ষণে উমাইর বেডে উঠে।তাহুরার পা টেনে কাছে টানে।বুকের মাঝে মাথা রাখে মেয়েটার,

–“খেয়ে,পেইন কিলার নিবে।এরপর আমি তোমার বুকে ঘুমাবো।”
–“আমি বাসায় যাবো।”
তাহুরা আকড়ে ধরে উমাইরের কোমরের দিকে শার্ট।
–“বাসায় আছো জান। ঐ বাড়িতে রাতে ফিরবে।আমি দিয়ে আসবো,আদর।”
উমাইর শান্ত করে তাহুরাকে।অথচ,সে ভেবে রাখলো কিভাবে নম্রতাকে শায়েস্তা করবে।তার বউয়ের গালে হাত দেওয়া!যেখানে মেয়েটাকে আঘাত করার কথা উমাইর দুঃস্বপ্নেও ভাবে না।সাথে সরল মেয়েটা ব্যথা
পেয়ে উল্টো শাস্তি ভোগ করেছে।

প্রবীণ আজিম তাদের জন্যে খাবার গরম করে দেয়।রুমেই নিয়ে আসে।আজিম সেদিন ব্যাপক খুশি ছিলো তাদের বিয়েতে।তাহুরা আজিমের সহিত কুশল বিনিময় করে। ব্যথার্থ মেয়েটার অধরে লেপ্টে থাকা হাসি উমাইরের মনের জ্বলনের কারণ।
উমাইর এক প্লেটে খাবার বাড়ে।অতঃপর তাহুরার সম্মুখে ধরে,
–“খাইয়ে দাও।তুমিও খাও।”

এহেন আবদারে তাহুরা অবাক হয়,সাথে খুশি।উমাইর প্লেট ধরে আছে,তাহুরা সেথায় হাত দিয়ে ভাত মাখাচ্ছে।হাতের ব্যথা,কানের নিচের ব্যথা কই হারালো! উঁকি দিচ্ছে কেবল একফালি সুখ।
–“ঠিকভাবে খেতে পারছেন?”
তাহুরা মৃদু সুরে প্রশ্ন করে।মলিন হয়ে আছে মেয়েটা। এতো আদুরে মেয়েটাকে মামী কিভাবে চড় দিলো!ভাবলে ক্রোধ চাপে মস্তিষ্কে।

–“হ্যাঁ,বউ।বেস্ট মিল।”
উমাইর বলে উঠে।
তাহুরা অমায়িক হাসে।সে বউ। উমাইরের বউ।কলেজের শান্ত,গম্ভীর স্যারের বউ।
আজিম এসে পুনরায় সকল কিছু নিয়ে যায়।
উমাইর ফোন চেক করে।মা কয়েকবার ফোন দিয়েছে।আবারও দিলে উমাইর মাকে মেসেজ পাঠায়,
–“ভাবীকে চিন্তিত হতে মানা করো।তাহুরা ঘুমানোর পর ফোন দিচ্ছি।”

তাহুরা বিছানার মাঝে শুয়ে পড়ে। কোলের উপর কম্বল।আজিম চলে যাওয়ার পর নিজ দায়িত্বে উমাইর তার ওড়না সরিয়ে রাখে ক্লথ হ্যাঙারে। হুট করে উমাইর তার শার্ট খুলে। নীরবে বাথরুমে যায়।তাহুরার নজর বিস্ফোরিত।গলা শুকিয়ে আসে।লোকটা উদোম শরীরে বড্ড মোহনীয়।গায়ের পাতলা কম্বল সে বুক পর্যন্ত টেনে নেয়।চোখে ভাসমান খাঁজে ভরপুর উমাইরের অবয়ব।খেলাধুলা,আর ব্যায়ামের দরুণ মানুষটার এমন দেহ!
পরপর কিছু ভাবনার পূর্বে উমাইর আসে।তাওয়াল দ্বারা চুল মুছে,তাওয়াল ব্যলকনিতে রাখে।তাহুরার আড়ষ্ট ভঙ্গিমা লক্ষ্য করে হাসে ফের।মেয়েটার লজ্জাগুলো কাটানো বেশ দরকার। পরে নাহলে উমাইরের বিপদ।উমাইর পাতলা কম্বলে টান দেয়,

–“এই-যে’র বউ, শুতে দাও তোমার বুকে।”
তাহুরা আঁখি মেলে। লোকটা এখনো উদোম শরীরে।ইস,লজ্জায় দম না আটকে আসে।
তাহুরার কিছু বলতে হয়নি।উমাইর নিজ দায়িত্বে তার নিকটে আসে। উচুঁ হয় তাহুরার উপরিভাগে। ওষ্ঠদ্বয়ের মিলন ঘটায়।পাতলা কম্বল নিজ গায়ের উপর টানে উমাইর।হাতের ছোঁয়ায় মাতাল করে মেয়েটাকে। বক্ষদেশের পীড়ায়,লাজে তাহুরা জর্জরিত।উমাইর থেমে নেই।তাহুরা তার কাঁধে নখ দাবালে গতি ধীর করে উমাইর,

–“ব্যথা পাচ্ছো?”
–“উম।”
–“অভ্যাস হয়ে যাবে,বউ।”
উমাইর মিষ্টি হাসে।লাজুক মেয়েটার রক্তিম অধরে আঙুল ছোঁয়ায়,
–“মিস করেছি অনেক,তোমাকে।”
–“আমিও,উমাইর।”
হাসি ফিরিয়ে দেয় তাহুরা।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৯

ললাটের মধ্যভাগে ঠোঁট ছুঁয়ে তাহুরার বুকে মাথা রাখে উমাইর। পরে,গলায় মুখ গুঁজে। এতটা ভারে তাহুরা হিমশিম হলেও অন্য হাতে উমাইরের ঘাড়ে,চুলে হাত বুলায় সে।উমাইর বিড়বিড় করে বলে,
–“ঘুমাও বউ।জেগে থাকলে তোমার লস,আমার লাভ।”
ইঙ্গিত বুঝে তাহুরা ঝটপট আঁখি বুঁজে।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩১