শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৯

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৯
তাসনিম জাহান রিয়া

মুহিবদের গ্রাম থেকে সবাই ফিরে এসেছে আজ দুইদিন। মুহিব আসেনি। এক সপ্তাহ পরে বোনের বিয়ে। তার বাবা নেই সব দায়িত্ব তো তার কাধেই। সে তার বোনের বিয়েতে কোনো রকম ত্রুটি রাখতে চায় না। হয়তো ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই। কিন্তু নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করবে।

শ্রেয়সী একটা লাল রঙের জামদানি পড়েছে। ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক, চোখে মোটা করে কাজল পড়েছে। শুভ্র রাঙা পা দুটো আলতা দিয়ে রাঙিয়ে দেয়। উন্মুক্ত চুলগুলো খোপা করে বেলি ফুলের মালা গুঁজে দেয়। দুই হাত লাল রঙের কাঁচের চুরি। ফ্ল্যাটের দরজা খুলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় শ্রেয়সী।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজকে নাহিন ছাড়া আর কেউ বাসায় নেই। এদিকে অনুপমও একা। রূপম রূপাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছে। তাই তো এতো আয়োজন করে শ্রেয়সীর সাজা। অনুপমকে চমকে দেওয়ার জন্য আনাড়ি হাতে শাড়ি পড়েছে। রুপা যাওয়ার আগে শ্রেয়সীকে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে গিয়েছিল। সেই চাবি ইউস করেই ফ্ল্যাটে ঢুকে। পুরো ফ্ল্যাট অন্ধকার। বাইরে থেকে আসা আবছা আলোয় শ্রেয়সী এসে দাঁড়ায় অনুপমের রুমের সামনে। শ্রেয়সী পায়ের নূপুরের শব্দে মুখরিত ফ্ল্যাট। শ্রেয়সী অনুপমের রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। হাঁটতে হাঁটতে একদম অনুপমের মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়। অনুপম খালি গায়ে শুয়ে আছে। পিঠ অব্দি কাথা টানা।

এই শ্রেয়সী প্লিজ যাও। ডিস্টার্ব করো না আমাকে।
আজব। আমি আপনাকে কখনো ডিস্টার্ব করে করলাম। আমি তো জাস্ট দাঁড়িয়ে আছি। আমি যদি দাঁড়িয়ে না থেকে আপনার গায়ে এক বালতি পানি ঢেলে দিতাম তাহলে সেটা হতো ডিস্টার্ব।
প্লিজ আর জ্বালাতন করো না। দুদিন ধরে রাতে ঘুমানোর সময় পাচ্ছি না। তোমার নূপুরে শব্দে আমি ঘুমাতে পারছি না। এমনিতে তো জ্বালাও। এখন কল্পনায় এসে আর জ্বালাতন করো না।

অনুপমের কথা শুনে শ্রেয়সী ঠোঁট টিপে হাসে। অনুপম কথাগুলো যে ঘুমের ঘোরে বলছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না শ্রেয়সীর। বার বার জ্বালাতনের কথা কেনো বলছে সেটাও বুঝতে পারছে। এই তো গতকাল শ্রেয়সী তার এক মামাতো ভাইয়ের সাথে ফুচকা খেতে গিয়েছিল। যেটা অনুপমের মোটেও পছন্দ হয়নি। শ্রেয়সীর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে তাকে বলবে সে কেনো মামাতো ভাইয়ের সাথে ফুচকা খেতে যাবে? এটা নিয়ে রাগে অনুপম গতকাল থেকে কথা বলছে না। তাই তো শ্রেয়সী আজকে অনুপমের রাগ ভাঙাতে চলে আসছে। শ্রেয়সী জানে অনুপম তার ব্যাপারে ভীষণ পজেসিভ। শ্রেয়সী তো এমনি একজন মানুষ নিজের জীবনে চাইতো।

শ্রেয়সী আলগোছা জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মাঝেই রুমটা আলোকিত হয়ে যায়। অনুপমের মুখে আলোকরশ্মি পড়তেই মুখ কুঁচকে ফেলে। পরমুহূর্তেই লাফিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। শ্রেয়সীকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আশেপাশে তাকিয়ে শার্ট খুঁজে গায়ে দিয়ে দ্রুত হাতে বোতাম লাগাতে লাগাতে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
তুমি?

কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলেন বুঝি সোয়ামি?
শ্রেয়সী কথা বলতে বলতে একদম অনুপমের গা ঘেষে বসে পড়ে। অনুপমের গালে হাত দিয়ে রহস্যময় করে বলে,
এই মুহূর্তে আপনাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে সোয়ামি?
অনুপম ছিটকে শ্রেয়সীর থেকে দূরে সরে যায়। অনুপম বুঝতে পারছে না এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি।
তুমি এমন অদ্ভুত আচারণ কেনো করছো? এসব কেমন কথা?

আশ্চর্য! আমি অদ্ভুত আচারণ কোথায় করলাম? আপনিই তো বলেছিলেন আমার যা করতে ইচ্ছে করবে তা যেনো আপনাকে বলি। এই মুহূর্তে আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। তাই তো আপনাকে বললাম।
দেখো শ্রেয়সী তুমি বাচ্চা না। ফুচকা আর চুমু খাওয়া এক ব্যাপার না।
গতকাল তো আপনি এই কথা বলেননি। আপনি বলেছিলেন আমার যা করতে ইচ্ছে হবে।
ওটা তো জাস্ট কথার কথা।

কথার কথা হোক আর যাইহোক আমি আপনাকে আজকে চুমু খাবোই।
শ্রেয়সী যত অনুপমের দিকে এগোচ্ছে অনুপম ততো পিছনের দিকে হেলে পড়ছে। শ্রেয়সী ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ব্যর্থ। অনুপমের ভয়ার্ত মুখটা দেখে শ্রেয়সী আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো না। হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

আমাকে এতো ভয় পাবেন না। আমি আপনাকে রেপ করবো না। চুমুর কথা শুনেই এই অবস্থা। রেপ করবো বললে তো হার্ট অ্যাটাক করবেন।
হাসি বন্ধ করো। তুমি দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো শ্রেয়সী।
আচ্ছা তাই নাকি?
বলতে বলতে আবার হেসে দেয় শ্রেয়সী।

তুমি এখানে কেনো এসেছো? আজকে বাসায় কেউ নেই। তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি।
আপনি তো আস্ত একটা আনরোমান্টিক। প্রেমিকা বাসায় আসছে আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে। আপনি বলছেন তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি। বাসায় কেউ নেই। কই একটু রোমান্টিক কথা বলবেন তা না। আচ্ছা আজকে আমাকে কেমন লাগছে বলুন তো?

অনুপম অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,
শ্রেয়সী তুমি এখন যাও। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
শ্রেয়সী মুখ কালো করে অনুপমদের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসে। নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকার আগ মুহূর্তে শ্রেয়সীর ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। মেসেজ অপেন করতেই শ্রেয়সীর গাল জুড়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে। অনুপমও এমন অশ্লীল কবিতা তাকে পাঠাতে পারে শ্রেয়সীর বিশ্বাস হচ্ছে না।

আজকে মুহিব আসছে কিছু কেনা কাটা করার জন্য। তাই সবাই মিলে ঠিক করে ব্যাচেলর পার্ট করবে। মুহিবকে তো আর পাওয়া যাবে না। এদিকে তাদের বন্ধু অবিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে এটা তারা সেলিব্রেট করবে না এটা হতে পারে। পার্টির জন্য মিহানদের একটা ফার্ম হাউস ডেকোরেট করা হয়েছে। পার্টি হবে রাতে। শ্রেয়সী অনেক কষ্টে শ্রেয়া বেগমকে ম্যানেজ করেছে।

প্রিয়ন্তি আর নিতু হলে থাকে তাই তাদের তেমন একটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু বিপত্তি বাজে ইভাকে নিয়ে। ইভা দাদু তার ছোট ছেলের বাসা থেকে ইভাদের বাসায় এসেছে। ইভাকে তিনি এই রাতের বেলা কিছুতেই বাসা থেকে বের হতে দিবেন না। কড়া পাহাড়ায় রেখেছেন ইভাকে। দারোয়ানকেও বলে রেখেছেন ইভাকে যাতে বাসা থেকে বের হতে না দেয়। শ্রেয়সীরা সবাই বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
এই নিতু যাচ্ছিস না কেনো?

এই তন্ময় আমার ভয় করছে। ধরা খেলে ঐ বুড়ি হাড্ডি আর আস্ত রাখবে না।
মিহান নিতুর পিঠ চাপড়ে বলে,
ধরা খাবি না। তুই হচ্ছিস পাক্কা অভিনেত্রী। তোর অভিনয় বোঝার ক্ষমতা ঐ বুড়ির বাপেরও নাই। যদি ধরা খেয়ে যাস তাহলে অজ্ঞান হয়ে যাবি। ডাকলেও উঠবি না। একদম মঠকা মেরে পড়ে থাকবি।
মজা করবি না একদম। তোর জন্য কতো কষ্ট করতে হচ্ছে। বেচারি ইভাকে নিজের বাড়ি থেকে চুরের মতো বের হতে হবে।

নিতু বুকে ফুঁ দিয়ে গেইটের কাছে যায় আর বাকিরা সবাই আড়ালে দাঁড়ায়। নিতুকে দাঁড়োয়ান ঢুকতে দিচ্ছে না।
কী সমস্যা আপনার? ঢুকতে দিচ্ছেন না কেনো?
আজকে ম্যাডামের সাথে দেখা করা যাবে না। বড় ম্যাডাম কাউকে ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন।
নিতু কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

আপনি তাহলে ঢুকতে দিবেন না? আমি আংকেলকে ফোন দিয়ে বলবো আপনি আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তারপর আপনার চাকরি থাকবে?
দারোয়ান আর নিতুকে বাধা দেয় না। নিতু বাসার ভিতরে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। ইভার দাদু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

ইভাকে নিতো আসছো? ইভা কোথাও যাবে না।
আমি ইভাকে নিতে আসিনি। আমি তো আপনার সাথে দেখা করতে আসছি। ইভার মুখে আপনার কথা শুনে আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। তাই আজকে চলে এলাম।
তোমাদের পার্টিতে যাবে না?
বর নিষেধ করেছে। তাই যাব না। বরের কথা তো শুনতে হয়।
তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৮

বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমি হবু বরের কথা বলছিলাম।
নিতু সবাইকে কথায় ব্যস্ত রাখছে যাতে সেই সুযোগে ইভা বাসা থেকে বের হতে পারে। নিতুর সাথে কলে কানেক্ট ছিল বাকিরা। নিতুর কথা শুনে সবাই টাস্কি খেয়ে গেছে। মুখের ওপর কেমন অনর্গল মিথ্যা বলে যাচ্ছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩০